আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অতঃপর তুমি - পর্ব ৩৯ - ইশরাত জাহান সুপ্তি - ধারাবাহিক গল্প


#অতঃপর_তুমি
#পর্ব-৩৯
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

!!৪৭!!

জীবনটা কতগুলো অধ্যায়ে বিন্যস্ত থাকে।একেকটা অধ্যায়ে লুকিয়ে থাকে আমাদের জন্য একেকটা চমক।এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে যেতে জিবন পরিবর্তিত হয়,পরিবর্ধিত হয়।কিন্তু আগের থেকে কেউ বলতে পারে না সেই পরিবর্তনটা ভালোর দিকে হবে নাকি খারাপের দিকে।আমার জীবনে অভ্র নামের যেই অধ্যায় শুরু হয়েছিলো তখন শুরুতে কতোটাই না শঙ্কিত হয়েছিলাম,কতোটা ভয় পেয়েছিলাম।কিন্তু কে জানতো!এই অধ্যায়টাই হবে আমার জীবনের সবথেকে সুন্দর অধ্যায়।মহান আল্লাহ তা'আলা আমার জন্য ইহজীবনেই অভ্র নামের একটুকরো জান্নাত লুকিয়ে রেখেছিলেন এই অধ্যায়ে।অভ্র'র সাথে কতোগুলো দিন কিভাবে যে এতো দ্রুত কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না।আর এখন আমার এই অধ্যায়ে আরো একটি সুন্দর অংশের সূচনা হতে চলেছে।অভ্র'র ভালোবাসার একটি ক্ষুদ্র অংশ আমি আমার মধ্যে ধারণ করেছি।যে প্রতিনিয়ত ধীরে ধীরে একটু একটু করে আমার ভেতর বেড়ে উঠছে।যেমনটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে অভ্র'র ভালোবাসা।
আমি মা হতে চলেছি।ইয়েস,আই এম প্রেগন্যান্ট।কথাটা নিজের মধ্যে বারবার উচ্চারিত করতেও আমার ভালো লাগে।বেশ ভালো লাগে।আনমনে চোখের কোণায় পানি চলে আসা।যেমনটা এসেছিলো সেদিন,যেদিন আমি প্রথম জানতে পারি আমার প্রেগন্যান্সির কথা।

হুট করেই একদিন রাতে অভ্র রুমে এসে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে হাতের ফাইলটা টেবিলের উপর রেখে বাইরে চলে গেলেন।আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।তার হয়েছেটা কি?মুখটা এমন করে রেখেছেন কেনো?পরক্ষণেই মনে পড়লো দু দিন আগে শরীর অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে যে চেক আপ করিয়েছিলাম তার রিপোর্টই এই ফাইলে না তো!এর জন্যই কি উনি এমন অদ্ভুত আচরণ করছেন।হুট করেই আশঙ্কা হলো আমার কোনো বড় রোগ হয়নি তো!
বিছানা থেকে নেমে টেবিলের দিকে এগিয়ে যেই হাত বাড়িয়ে ফাইলটা স্পর্শ করবো তার আগেই আমার ফোন বেঁজে উঠলো।ফোনের স্কিনে অভ্র'র নাম দেখে আমি বেশ অবাক হলাম।এই কিছুক্ষণ আগেই তো রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন আর এখনই ফোন করছেন কেনো?
উদ্বিগ্ন মুখে ঝটপট ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে বললাম,
'আপনি কোথায়?'
'আমি একটি ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে।'
'অভ্র কি হয়েছে?সব ঠিকাছে তো?'
উনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,
'অনেক বড় কিছু হয়ে গেছে অরু।'
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।বললাম,
'কি?'
'অরু,এই পৃথিবীতে আমাদের মাঝে একটি নতুন প্রাণ আসতে চলেছে অরু।'
আমি স্থির হয়ে গেলাম।অভ্র বলতে লাগলো,

'অরু,ট্রাস্ট মি,তোমার পিরিয়ড স্কিপ হবার কথা শুনে আমার প্রথমেই একটু সন্দেহ হয়েছিলো।কিন্তু আমি চাই নি তুমি এখন প্রেগন্যান্ট হও।তোমার এখনো বয়স অল্প,পড়ালেখা বাকি।রিপোর্ট পাওয়ার আগ পর্যন্তও আমি মনে মনে দোয়া করছিলাম যেনো রেজাল্ট নেগেটিভ আসে।কিন্তু যখন ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললো,'কনগ্রেচুলেশন,ইওর ওয়াইফ ইজ প্রেগন্যান্ট।আপনি বাবা হতে চলেছেন।'
তখন আমি বোঝাতে পারবো না আমার কি হয়ে গেলো।হুট করেই চরম আনন্দে আমার মনটা ছেঁয়ে গেলো।কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো।এতোটা খুশি লাগছে যে আমি তোমাকে কথাটা সামনাসামনি বলতে পারছি না।আমি নিজেই বেসামাল হয়ে পড়েছি।অরু,আমাদের একটা ছোট্ট বাবু হবে।তার আধো আধো বুলি দিয়ে তোমাকে মা বলে ডাকবে আর আমাকে বাবা।তোমার বিশ্বাস হয় অরু?তোমার বিশ্বাস হয়?'

ফোনের এপার থেকেই বুঝতে পারলাম উনি নিরবে কাঁদছেন।আমিও কখন যে মেঝেতে বেডের সাথে ঠেস দিয়ে বসে অশ্রু ঝরিয়ে অভ্র'র মুখ থেকে সেই সুখ শ্রবন করছি,টেরই পেলাম না।একটা হাত আনমনে পেটে ছুঁয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।ফোন কানেই রইলো কিন্তু দুজনের কেউই আর কথা বললাম না।নিরবতায় আমাদের অব্যক্ত কথাগুলো চলতে লাগলো।ফোনের এপার থেকে আমি কাঁদতে লাগলাম।আর ওপার থেকে অভ্র।

ব্যস সেদিনের পর থেকে উনার যত্নের অত্যাচার আমার প্রতি দ্বিগুণ হয়ে গেলো।এটা করো না,ওটা করো না,এটা খাও,সেটা খাও চব্বিশ ঘন্টা তার মুখ থেকে এই বেরোতে থাকে।আমিও কি তাকে কম জ্বালাচ্ছি।হুটহাট মুড সুয়িং,রাত বিরাতে দুষ্প্রাপ্য জিনিস খেতে চাওয়া,যখন তখন তার উপর বমি করে ভাসিয়ে দেওয়া সব...সবকিছু হাসি মুখে সহ্য করেছে।কখনো একটুও বিরক্তিসূচক শব্দ অব্দি করেন নি।মাঝরাতে ঘুম ভেঙে আর না আসলে আমার সাথে সাথে উনিও জেগে বসে থাকেন।যাতে আমার একা একা খারাপ না লাগে।মাথায় হাত বুলিয়ে দেন,ঘুম পাড়িয়ে দেন আরো কতো কি।তার পুরো পৃথিবীটাই যেনো এখন আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।অফিস,কাজ,আত্মীয় সব বাদ দিয়ে সারাদিন আমার কাছেই বসে থাকেন।প্রতিদিন একপ্রকার ঠেলেঠুলেই আমাকে তাকে অফিসে পাঠাতে হয়।ঘুমের মধ্যেও যেনো আমাকে নিয়েই চিন্তা করেন।আমার জন্য এতোটা করেন বলে বোঝাতে পারবোনা।আমি কিছু বললেই বলেন,

'অরু,আমাদের একটা অংশকে এই পৃথিবীতে আনার জন্য তুমি একাই যেই কষ্টটা করতে যাচ্ছো তার কাছে আমার এসব কিছুই না।খুব অসহায় লাগে জানো! যদি একটু তোমার এই কষ্টটাকে ভাগ করে নিতে পারতাম।একটু!বাচ্চাটা আমাদের দুজনের অথচ পুরো কষ্টটা তুমি একা করবে।সেই কষ্টটায় যেহেতু আমি কিছু করতে পারছি না তাই বাদ বাকিটা আমাকে করতে দাও।প্লিজ।'

তার কথা শুনে আমি মুচকি হাসি।ভাবি আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা পূরুষই যদি অভ্র'র মতো হতো।তাহলে আর কোনো প্রেগন্যান্ট মেয়েকে সাত আট মাসের ভরা পেট নিয়েও রান্না করতো হতো না,ঘর সামলাতে হতো না।স্ত্রীর সেবা করবে কি উল্টো স্বামীর সেবা করতে হতো না।কোনো মেয়েই তো এই ভাগ্যটা পায় না তবে আমি পেলাম কেনো?
ছোটোবেলা থেকেই সবাই বলতো আমি খুব লক্ষ্মী মেয়ে।আমি খুব ভালো বর পাবো।কিন্তু তাকে দেখে মনে হয় আমি কি আসলেই এতোকিছুর যোগ্য?
আমার মনে হয় এই বেবীটা আমার জন্য একটা ব্লেসিং।কারণ এই বেবী আমার গর্ভে আসার পরই ইরা আপুর সাথেও আমার সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেছে।আপুর সাথে আমার দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো ধরণের যোগাযোগ ছিলো না।তারপর একদিন হুট করেই আপু ফোন করে আমার থেকে ক্ষমা চায়।সে তার ভুল সত্যিই বুঝতে পেরেছে আর সবকিছুর জন্য সে অনুতপ্ত।আপু এখন একটা স্কুলে টিচারের জব করে।আর সেখানে তার এক কলিগ সোহেলের সাথে তার ভালো পরিচয় হয়েছে।আগামী মাসে তাদের এনগেজমেন্ট হবে।আপু যে সত্যিই বদলে গেছে এটাই তার উদাহরণ।সে এখন নিজে কর্মঠ হয়েছে এবং সামান্য চাকরি বড় চাকরির ব্যবধান ভুলে জীবনে সঠিক মানুষ বাছাই করতে পেরেছে।সোহেল ভাইয়া আসলেই ভালো মনের মানুষ।

!!৪৮!!

অভ্র আমার গালে একটি চুমু দিয়ে বলল,
'প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে তোমাকে আরো কিউট লাগে।একদম গুলুমুলু।দেখলেই শুধু আদর করতে ইচ্ছে করে।'

আমি চোখ সরু করে বললাম,
'হুম বুঝেছি,আমাকে খাইয়ে খাইয়ে এমন বানিয়ে এখন গুলুমুলু বলে ইনডাইরেক্টলি মোটা বলা হচ্ছে।'

'আরে না বাবা!প্রেগন্যান্সির সময় এতোটুকু স্বাস্থ্য তো সবারই হয়।আর তুমি এতেও এতো সুন্দর লাগো!তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।এখন খাবে?'

'এই না একদম না।একটু আগেই এক বাটি ফ্রুটস খেয়েছি।আমি এখন আবার মোটেও খাবো না।'

'আগে কি এনেছি দেখে তো নাও।পড়ে কিন্তু পস্তাবে।আর তুমি এক বাটি খেয়েছো কখন?অর্ধেকের বেশি তো বাটিতে এখনো পড়ে আছে।'

কথাটা বলে উনি আমার সামনে ফুচকা তুলে ধরলেন।আমি চোখ বড় বড় করে খুশি হয়ে বলে উঠলাম,
'ফুচকা!'
'কি খাবে নাকি রেখে দেবো।'
'জ্বি না।আমি এক্ষুণি খাবো।'

অভ্র মুচকি হেঁসে প্যাকেট থেকে ফুচকা বের করে আমাকে প্লেটে তুলে দিলেন।আর আমি বিছানায় বালিশের সাথে ঠেস দিয়ে আনন্দে গিলতে লাগলাম।সব খাওয়া হয়ে গেলে মুখটাকে যতোটা সম্ভব করুণ বানিয়ে বললাম,

'আরো খাবো।'

'একদম না।আজ অনেক খেয়েছো।এসব আনহাইজেনিক খাবার বেশি খাওয়া ভালো না।'

'আমি তো এতক্ষণ আমারটা খেলাম এখন তো বাবু খেতে চাইছে।আপনিই তো বলেন এই সময় দুইজনের খাবার খেতে হয়।আমি এখন একা না।'

'এই কথাটা তো অন্য সময় একদমই মাথায় থাকে না।ফ্রুটস খাওয়ার সময় তো একজনেরটাও খাও না।আর আমার বাবু আমার মতোই এসব খাবার পছন্দ করবে না।'

কথাটা বলে উনি আমার পেটের কাছে ঝুঁকে এসে হাত রেখে বললেন,
'তাই না জুনিয়র!একবার বের হয়ে এসো তারপর আমি আর তুমি মিলে তোমার পিচ্চি আম্মুকে সোজা করবো।'

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,'আপনি খুব পঁচা।আমার একটাও কথা শুনেন না।অথচ নিজের কথা আমাকে সব শুনিয়ে ছাড়েন।'

উনি আমার চোখের সামনে মুষ্টিমেয় হাত এনে একটা একটা করে আঙ্গুল খুলে বলতে লাগলেন,
'আমি তোমার থেকে এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ,ছয় বছরের বড়।তাহলে কে কার কথা শুনবে?'

'হয়েছে এখন আমাকে এক দুই তিন না শিখিয়ে অফিসে যান।আপনি না বললেন আপনার সন্ধ্যের পর মিটিং আছে।'

এবার আমার মতোই উনি মুখটা করুণ করে বললেন,
'তেমন ইম্পর্টেন্ট না।অন্য স্টাফরাও সামলাতে পারবে।আজকে না যাই।'
আমি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রইলাম।
'প্লিজ!'
'আপনি যাবেন!'
'যাচ্ছি।'
মলিন মুখে দরজা অব্দি গিয়ে তিনি আবার চোখের ইশারায় না যাওয়ার রিকোয়েস্ট করলেন।আমি চোখ রাঙিয়েই হাত দিয়ে ইশারায় যেতে বললাম।শুকনো মুখে তিনি চলে যেতেই তার করুণ মুখটির কথা মনে করে আমি পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগলাম।যাকে বলে গলা ফাটিয়ে হাসি।



চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।