বাবা শক্ত গলায় দারোয়ান নানাকে আদেশ দিলেন,
- আজ থেকে ও বাড়ির কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিবেনা।
কড়াকড়ি নির্দেশে এরপর যতবার মামারা এসেছেন ঢুকতে দেওয়া হলোনা। আমিও চোখ-কানা হয়ে রইলাম। তাদের কল বা ইঙ্গিত কানে নিলাম না। কেন নিতে যাব? তাদের ইঙ্গিত হচ্ছে, আমি রাস্তা করে দিতাম তার মেয়েকে এ বাড়ির বউ করার জন্য। অদ্ভুত।
তারা কী তন্ময় ভাইকে চিনেন না? হয়তো। নাহলে কখনও ভাবতেন না। সে হচ্ছে পৃথীবির সবচেয়ে বড় ঘাড়ত্যাড়া লোক। পৃথীবি এক যায়গায় আর সে এক যায়গায়। তার উপর কথা চাপানো অসম্ভব। সেখানে বিয়ের মতো একটা বিষয়। তাও আবার সুমনা। যা'কে তিনি আগে থেকে পছন্দ করেন না। নেহাতি আমার জন্য ঠেলত। এখন তো তাও নেই। একদম চুটকি দিয়ে সুটকি করে দিবে।
আজকে শুক্রবার। সকাল আটটায় তন্ময় ভাই বাড়ি ফিরেছেন। গত পুরো মাস তিনি ঢাকা ছিলেন। তার ফিরে আসার কারণও রয়েছে। কারণ হচ্ছে, আজ বড় চাচ্চু আর বড় আম্মুর এনিভার্সিরি। যেহেতু আগের বার চাচ্চুর ইলেকশন ছিলো, সে সময় ব্যস্ততায় এনিভার্সিরি পালন করা হয়নি। তো এবার পালন করা হবে৷ টেবিল গোছাচ্ছিলাম তখনই রুবি আপু রুমে আসল। মুখ গোমড়া। নির্ঘাত লেগেছে ইব্রাহিম ভাইয়ের সাথে।
আমি বললাম,
- আবার লেগেছ?
তার শক্ত গলার জবাবা,
- আমি লাগি? ওইতো লাগে। লাগালাগি বাদ। আর কথা হবেনা। বাবাকে বলব, বিয়ে ক্যান্সেল। সব ক্যান্সেল।
হাসলাম। এ নিয়ে হাজার বার বিয়ে ক্যান্সেলের কথা বলেছে। অথচ প্রত্যেকবারই সর্ট আউট হয়ে যায়। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ তার কথা আমরা ব্যিলিভ করিনা। বললাম,
- ছাঁদে যাবে?
রাজি হয়ে গেলো। ছাঁদে গিয়ে পড়লাম বিপাকে। তন্ময় ভাই পুশআপ করছে। দীপ্ত টানটান উত্তেজনা নিয়ে গুনছে। শুকনো গলায় বারবার প্রশংসা করে যাচ্ছে,
- বাহ, বাহ। চমৎকার। কী শক্তি। ইশ। আমি কবে পারবো।
চলে যাবো? লজ্জা করছে প্রচন্ড। উদোম শরীরে তাকে দেখার অভিজ্ঞতা একদম নেই। আঁড়চোখে একবার দেখে দ্রুত অন্যদিক ফিরলাম। বুকের স্রোত তীব্রতায় বয়ে চলছে। রুবি আপু টিটকারি মারলেন,
- ওহ। এই কারণে ছাঁদে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। ববললেই হতো। আমরা সব বুঝি।
ছাই বুঝে। মুখে বললাম৷
- না। বিশ্বাস করো। আমি জানতাম না তিনি এগুলো করছেন।
লজ্জয় গাল লাল হচ্ছে। আমাকে খেয়াল করতেই তিনি থামলেন।
উঠে দীপ্ত'কে ইশারা করলেন পানির বোতল টা দিতে। চোরা চোখে তাকালাম। তিনিও তাকিয়ে। কী সাংঘাতিক লাগছে। ঘামে ভিজে আছেন। কপাল হতে টুপটুপ ঘাম ঝরছে। ফরসা শরীর ঘাম বেয়ে চলেছে। আমি রুবি আপুর পেছনে চলে এলাম। দীপ্ত বোতল নিয়ে নিচে চলে যাচ্ছে। তন্ময় ভাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে। রুবি আপু হটাৎ দৌঁড় লাগালো। আহাম্মকের মতো তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে। এটা কী হলো? এমন কেন করলো? করলো'র উত্তর পেলাম তন্ময় ভাইয়ের কাছে। তিনি দিব্বি তার ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে আমাকে চেপে ধরলেন। অনুভূতির ভূমিকম্প বুঝি একে বলে? কাঁপা শরীর আর কন্ঠ নিয়ে বললাম,
- সরুন।
তার ঠোঁট কান বরাবর আনলেন।
- সরুন, সরুন। কোথায় সরব?
আমার নড়াচড়া আটকাতে আরও চেপে ধরল। ধীর কন্ঠে আবেদন করলো,
- আজকে শাড়ি পড়বি। যেটা দিয়েছিলাম।
- অসম্ভব।
শাড়ি আর আমি? আমার দ্বারা শাড়ি পড়া অসম্ভব। একদম মেইনটেইন করতে পারব না। দেখা যাবে শাড়ি ওখানে আমি এখানে।
কানের লতিতে কামড়ে বললেন,
- অসম্ভব?
- হু।
- মাইর খাইছস? থাপড়ে দাঁত ফালাই দিব। সুন্দর ভাবে তৈরি হবি শাড়ি পরে।
- পড়ব না।
- আচ্ছা? দেখা যাবে।
আমি কথা বলব তার পূর্বে বড় মা'র গলা। তিনি উপরে আসছেন।
পাগলের মতো ছোটাছুটি করতে লাগলাম। বড় মা দেখলে মানইজ্জত সব যাবে। একদম যাবে। তন্ময় ভাই কিছুক্ষণের বাদে নিজে ছাড়লেন। তারপর ছাঁদের দরজার সামনে মাত্র আসা বড় মা'র হাতে তাওয়াল ধরিয়ে দিলেন। পরপর বড়বড় পা ফেলে চলে গেলেন। লজ্জা নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বড় মা'র সামনে।সবসময় আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে চলে যায়। উফ।
ড্রয়িং রুমে বসে দেখছি, ছাঁদে জিনিসপত্র ট্রান্সফার হচ্ছে। নিশ্চয়ই সাজানোর জন্য। রবিন আর ইব্রাহিম ভাইয়া নিচ্ছেন। সাথে আছে তন্ময় ভাইয়ের কতগুলো চেলা। এভাবে শুনেছি আরিফ আর আইরিন আসবে। তন্ময় ভাইয়ের মামাতো ভাই বোন দুটা। দেরি করে আসবে। সারপ্রাইজ দিবে যে। হ্যাঁ, ওরা আসলে বড় মা খুশি হবে প্রচন্ড। ও বাড়ির বাচ্চাদের মাঝে, আরিফ আর আইরিন'কে বড় মা প্রচন্ড ভালবাসেন। আজ শুধু তার রিয়েকশন দেখার জন্য এক্সাইটেড আমি। দীপ্ত ছাঁদে উঠবার সময় ডাকছে,
- আপু। সাথে আসো, তন্ময় ভাই ডাকে।
ইশ, মানইজ্জত শেষ করার জন্য ডাকছে? জবাব দিলাম,
- যাবো না৷
- ওখেই।
বেশ ভাব নিয়ে বলে চলে গেলো। রুবি আপু কিছুক্ষণের মাঝে এসে ফোন আমার হাতে ধরিয়ে বলল,
- ধর, এই হাদার সাথে কথা বল।
তারপর টিভি ওন করে সিরিয়াল দেখয়ে বসলো। কাসাম তেরি প্যায়ার কী। ওপাশে ভাইয়া চেঁচাচ্ছে। একটু কেশে কথা বলতে শুরু করলাম,
- আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। তা একই বাড়িতে থেকে, কল কেন করতে হচ্ছে?
ভাইয়া নিশ্চয়ই চমকেছেন? পরপর নালিশ শুরু করলেন,
- অরু, আর বলিও না। ও আমায় পাগল করে ছাড়বে। কতক্ষণ যাবত একটু ছাঁদে আসতে বলছি। আসছেই না। এমন কেন?
বললাম,
- তুলে নিয়ে যান।
পাশ থেকে আপু চোখ রাঙাল। দ্রুত ফোন নিয়ে কেটে দিল।
রুবি আপু চমৎকার এক তাঁতের শাড়ি পড়েছে। আমি শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে। শাড়ি পরে তন্ময় ভাইয়ের সামনে যাব? আমি আজ লজ্জায় মরে যাব। কেন যেন শাড়ি আর তিনি ভাবতেই শরীরর রক্ত দ্বিগুণ বেগে চলতে শুরু করেছে। বড় একবার এসে জিজ্ঞেস করলেন,
- কীরে, কোথায় যাবি?
আপু বেশ আরামসে জবাব দিল,
- সিক্রেট। বলা যাবে না।
অথচ তখনও আমি শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে। এতো বুক কাঁপছে কেন? একটা শাড়িই তো? কিচ্ছু হবে না। তারপরও মন শান্ত হচ্ছে না।
আপু কী সুন্দর তৈরি হয়েছেন। আমায় শাড়ি পরতে না দেখে বলল,
- আচ্ছা, পড়তে হবে না শাড়ি। যা কামিজ পড়।
ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। শাড়ি পড়াটা আজ বাধ্যতামূলক। নাহলে আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। সাহস সঞ্চয় করলাম। বললাম,
- পড়িয়ে দাও।
আপু মাথায় ফুল গেঁথে আমায় পড়াতে সাহায্য করলেন।
অস্থির মন নিয়ে শাড়ি পরেছি। ঠিকঠাক সামলাতে পারলেই হয়। একবার আপুকে বলেও দিলাম,
- বেশি করে সেফটি পিন ব্যবহার করিও।
- আরে শান্ত হ। কিচ্ছু হবে না।
নাহলে ভালো। আলহামদুলিল্লাহ। শাড়ি পরিয়ে আপু কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলো,
- মাশাল্লাহ অরু। তোকে ত শাড়ি'তে দারুণ দেখতে লাগছে। তন্ময় পাগল নাহলেই হয়।
এইতো আমার বুকের স্রোত বাড়িয়ে দিল। যাও নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম নিমিষেই সেটার সমাপ্তি ঘটলো । দুর্বল কন্ঠে বললাম,
- চুপ থাক। প্লিজ।
আপুর হাসি আর কে দেখে।
সম্পুর্ন তৈরি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। চুল ভাজেভাজে কোমড়ে দুলে। সিল্কি শাড়ি'টা বেশ সুন্দ। অথচ অনুভূতি আমার ভিন্ন। কিছুক্ষন আমাকে ডেকে আপু নিজেই চলে গেলেন, ছাঁদে।
শুধু আমিই দাঁড়িয়ে। তন্ময় ভাইয়ের সামনে দাঁড়ানো শক্তি পাচ্ছি না। তাও শাড়িতে। যেটা তার সামনে কখন পড়েছি বলে মনে হয়না।
.
.
.
চলবে.................................