প্রেয়সী - পর্ব ১৫ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


সকলেই বেশ অপ্রস্তুত। বড় চাচ্চু বললেন, 
' কোন বাড়ির ছেলে? এদিকেই থাকে তো? '
' হ্যাঁ। '
' একটু এক্সপ্লেইন কর তন্ময়। '
' তারা আসলে জেনে নিও৷ '
' আজীব। তুমি একটু খুলে বলবে না পরিবার সম্পর্কে? '
' রুবি'কে জিজ্ঞেস কর। '
ব্যস। আঁড়চোখে দেখলাম রুবি আপু ফুঁসছেন। ওইযে দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে। এবার সে দ্রুত উপরে চলে গেলেন। তন্ময় ভাই'টা কি দিয়ে তৈরি? এ'রে দিয়ে কোনো ভরসা নেই। একদম ফাঁসিয়ে দিবে নগদে। 
বড় চাচ্চু শ্বাস ফেললেন, 
' তাহলে আসতে বলিও। '
তন্ময় ভাই মাথা নাড়ালেন। তারপর উঠে চলে যাচ্ছিলেন। 
তখনই বড় মা রান্নাঘর থেকে, চেঁচাতে চেঁচাতে আসছেন,
' তুই খেলি কী? এই খাওয়া হয়ে গেলো? '
সে টেবিল হতে পানির গ্লাস নিয়ে, বড় মা'র হাতে ধরিয়ে দিলেন।
' পানি খাও। '
 এবং দ্রুত পায়ে চলে গেলেন। বড় মা আবারও চেঁচাতে চেঁচাতে রান্নাঘরে যাচ্ছেন,
' হ্যাঁ। আমার মাথা তো গরম। '
আমি ভাবছি, চাচ্চুরা, বাবা সকলেই পারমিশন দিয়ে দিলেন? এতো সোজা? এই তন্ময় ভাই কী বাড়ির? বাব্বাহ। এক কথায় সবাই চুপ করে, মেনে নিল। একেই না বলে পাওয়ার। দ্যি গ্রেট তন্ময় শয়তানের পাওয়ার। আমার মতো ভালো মানুষের দামই নেই বাড়িতে। রাজত্ব থাকে শয়তান'দের। হু। 

ড্রয়িং রুমে সকলে বসে। রুবি আপুকে বড় চাচ্চু'র পাশে বসানো হয়েছে। তার চেহরার দিক তাকানো যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে কেউ ভিষণ ভাবে তাকে বকেছে বা বকবে। বড় চাচ্চু আদুরে হাতে, রুবি আপুর মাথায় স্পর্শ করলেন। শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন, 
' তোমার কী সেই ছেলেকে পছন্দ? '
রুবি আপু চুপ। ছোট চাচ্চু ধমক দিলেন, 
' কথা বলছিস না কেন? ভাইয়া প্রশ্ন করছে। '
বড় চাচ্চু ছোট চাচ্চু'কে চোখ রাঙালেন, 
' তোমাকে বাম হাত ঢুকাতে বলিনি। বলেছি না বাচ্চাদের সাথে চেঁচামেচি করে কথা বলতে না? '
ছোট চাচ্চু চুপ হয়ে গেলেন। আমি মুখ চেপে ধরলাম। হাসি পাচ্ছে প্রচন্ড। এখনও আমার বাবা আর ছোট চাচ্চু বড় চাচ্চু'কে বাঘের মতো ভয় পান। মুখের উপর কখনও কথা বলেননি। আমাদের দাদা মারা যান অল্প বয়সে। আর দাদী তো তারও আগে। তো বলা যায়, তাদের বড় চাচ্চু নিজ হাতে মানুষ করেছেন বিয়ে দিয়েছেন। 
রুবি আপু ধীরে জবাব দিলো, 
' জ্বি চাচ্চু। '
' তুমি কী শিয়র? '
' জ্বি। '
' তাহলে কথা কী আগাবো? '
রুবি আপু লজ্জা পেলেন। চাচ্চু হাসছেন। 
' বাহ। আমাদের মেয়ে বড় হয়ে গেছে। '
তারপর তন্ময় ভাইকে বললেন,
' কথা বলেছিলে? '
তন্ময় ভাই ওপর পাশের সোফায় বসে। চা খাচ্ছেন, 
' হু। কাল বিকেলে আসবে। '
' তাহলে তুমি কাল ঢাকা যেও না। বাড়িতে থেকো। '
' আমি থেকে কী করতাম? '
বড় চাচ্চু হাসলেন। 
' বোন'কে দেখতে আসবে, আর তুমি বলছ থেকে কী করবা? '
এবার শব্দ করে হাসতে হাসতে বললেন, 
' অরু'কে দেখতে আসলেও এটা বলবা নাকি? '
আমি প্রচন্ড লজ্জা পেলাম। রবিন ভাইয়ের পিছু লোকালাম। তন্ময় ভাই এবার চায়ের কাপ টেবিলে রাখলেন।
' মজা করছ আমার সাথে?'
' মজা কেন? অরুকে তো বিয়ে দিতে হবে। তাই না? আর প্রপোজাল ও অনেক আসছে। মেয়ে বড় হয়েছে। '
তন্ময় ভাই উঠতে নিচ্ছিলেন। বড় চাচ্চু হেসে আবারও বললেন, 
' জবাব দিবেনা? '
' কী শুনতে চাচ্ছো এক্সাক্টলি? '
' তুমি জানো আমরা কী শুনতে চাচ্ছি। '
' তুমি থাকতে আমার বলতে হবে কেন? বিয়েটা দিয়ে দাও অরুর আমার সাথে। '
বোমা ফাটিয়ে তন্ময় ভাই চলে গেলেন। বড় চাচ্চু হাসছেন। 
আমি দ্রুত সাইড কেটে চলে এলাম। সকলেই আপাতত এই বিষয়ে কথা বলছেন। কীভাবে বলে দিলেন? লোকটা কি আদৌও আমাদের মতো রক্তে তৈরি মানুষ? 

এদিকে রুবি আপুর নাচ কে দেখে। কামরায় ঢুকে তার আধুনিক নাচ। সেই নাচে আমাকে নিয়েও দুললো৷ বারবার বলছে, 
' অরু। উফ। সবাই মেনে নিল। এই তন্ময় তো আমার খুশির জীন বেরোলো। '
 আর দীপ্ত'কে তো কোলেই নিয়ে ফেলল,
' নামাও আমাকে। কী লজ্জাজনক। আমার কী বয়স আছে 
এখনও কোলে চড়ার? '
রুবি আপু হাসছেন, 
' আমার খুশিতে, তোরাও নাচবি। '
' নাচবো। আগে নামাও। '
দীপ্ত'কে নামিয়ে দিতেই, ও চোখ গরম দেখিয়ে চলে যাচ্ছে আর ধীরে ধীরে কি কি যেন বলছে। সেদিকে খেয়াল নেই রুবি আপুর। তিনি দিব্বি নাচতে ব্যস্ত। হঠাৎ রবিন ভাই আসলো। সে আসতেই রুবি আপু নাচা বন্ধ করে দিল। 
' বাহ? এতো সুখ? '
' ওই তুর কমনস্যন্স নেই? দেখছিসস মেয়েরা-মেয়েরা ঘরে? '
' মেয়েদের দেখছিনা। বোনের নামে গরুর মাংসে তৈরি দুই গরু দেখছি। '
আমি অবাক চোখে তাকালাম। এইটা বলতে পারলো? আমি কী বলব, তার আগেই রুবি আপু রবিন ভাইয়ের চুল টেনে ধরলেন। শুরু হলো দ্বিতীয় যুদ্ধ। এদের লেগেই থাকে। আর আমার লাগে তন্ময় ভাইয়ের সাথে। অবশ্য এমন চুল টানাটানি না। খোঁচা মেরে কথা বলা। সেটাও তন্ময় ভাই মারেন। আমিতো তার সাথে কথা বলেই পারিনা। আমি একশো কথা বলব, অথচ সে এক সেন্টেন্স বলে আমাকে কাঁদিয়ে চলে যাবে। ভাবতেই হাসতে লাগলাম। 
রবিন ভাইয়ের কন্ঠ, 
' ইব্রাহিমের মতো শিক্ষিত ভদ্র ছেলে, তুরে পছন্দ করলো? আস্তাগফিরুল্লাহ। এই ছেলের চোখে কী পড়েছে? '
' আচ্ছা? তোর গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার আছে। দাঁড়া। '
' এহ। এগ্লা সব টাইম পাস। কল দিলে কিচ্ছু আসবে যাবেনা। '
রবিন ভাইয়ের সাথে না পেরে, রুবি আপু বিচার দিতে চলে গেলো। 
রবিন ভাই যেতে যেতে বলল,
' তন্ময় ডেকেছে তোকে। '
' এখন? '
' হু। '
এখন? এতো রাত্রে। আমার ধরেছে ঘুম। মারাত্মক ধরনের। 
' কই সে? '
' ছাঁদে। '

 ছাঁদে উঠলাম। রাতের আকাশ চমৎকার দেখাচ্ছে। তারাদের মেলায় একদম পরিপূর্ণ। সেই পরিষ্কার চমৎকার আকাশের নিচে একজন চমৎকার যুবক দাঁড়িয়ে। মারাত্মক সুন্দর দেখাচ্ছে। কথা বলছেন আর এদিক-সেদিক হাঁটছেন। কথা হচ্ছে এমন, 
' হ্যাঁ - দ্যাটস ওকে। গুড। ইউ আর ডুয়িং ওয়েল। ওয়াও। ইজ ইট ট্রু। আচ্ছা। '
কথা বলতেই জানেন না লোকটা । অবশ্য আমার সাথে তো এটুকুও বলেন না। যাও বলেন সেটুকু হলো ধমক। উম, সেদিন রাত্রে কত কিউট ছিলেন। একদম কিউট তন্ময়। ওমন থাকলে কী হয়? ইশ। 
তা'কে আর কখনও কী সেই ভাবে দেখতে পাব? আবার ড্রাংক হয়ে যাক। যাক, যাক, যাক। তন্ময় ভাই ফোন রাখতেই, আমার দিক ফিরলেন। ইশারা করলেন তার দিক যেতে। আমি ধীরে এগোলাম। 
বুকের এই রোগ কী কখনও যাবেনা? তার কাছে যাওয়া'টা একটা অসুখ মনে হয়। যেটার মেডিসিন নেই। 
সে আমার চুল পেঁচিয়ে ধরলেন। 
' চুল ছাড়া কেন? '
নিচুস্বরে জবাব দিলাম, 
' খুলে গিয়েছে। '
এবার একটু শক্ত করে ধরলেন। কানের কাছে মুখ এনে বললেন, 
' বিয়ে করবি তো আমায়?'
.
.
.
চলবে....................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন