প্রেয়সী - পর্ব ১১ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


ইচ্ছে করছে ওর চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলি। এতটা রাগ লাগছে। উফ। কীভাবে পারলো মেয়েটা? কীভাবে পারলো আমাকে এগুলো বলতে? বেশরম। নিজেই তো তন্ময় ভাইয়ের পিছু ঘুরঘুর করে। 
কোন মুখে আমাকে কথা শোনাতে আসে? 
আমার সুন্দর ফুরফুরে মনটা। গুড়িয়ে দিয়ে গেলো। তোর মনও গুড়িয়ে যাবে। দেখিস। টুকরো টুকরো করে গুড়িয়ে যাবে। 
দুপুর পর্যন্ত ঘরে আটকে ছিলাম। একদমই বেরোলাম না। কি করতে বেরোবো? সুমনা চুন্নির মুখ দেখতে? ন্যভার এ্যভার। যতক্ষণ না এই মেয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ বেরোবো না। আজকের পর থেকে ও আমার কিচ্ছু লাগেনা। কিচ্ছু না। 
দীপ্ত আর রুবি আপু এসেছে। রুবি আপু পাশাপাশি বসলো,
' আশ্চর্য। তুই কী দিনদুনিয়ার খবর রাখবি না? হুঁ? '
' কি হয়েছে? '
দীপ্ত ধীরে বলল,
' কি হয়নি বলো। তন্ময় ভাই ছাঁদে। এখন সুমনা আপুও গিয়েছে সেখানে। পাঁচমিনিটের বেশি হচ্ছে। আর নামেনি ছাঁদ হতে। '
আমি বই বন্ধ করে দৌঁড় লাগালাম। দরজা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেলাম। জিহ্বা কামড়ে, গলা পরিষ্কার করলাম। ধুর। আমি কেন দৌঁড়ঝাপের প্রতিযোগিতা শুরু করলাম। যেটা ইচ্ছে করুক আমার কী। রুবি আপু হাসছে, 
' এখনই হিংসে হচ্ছে। হিহিহিহি। আর তো দিন পড়েই আছে।'
দীপ্ত হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়ালো। রোবটের অভিনয় করে বলল,
' চলো। আমরাও যাবো ছাঁদে। লেটস গো। '
একপ্রকার টেনেটুনে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। ওই সয়তান মেয়েকে আবারও দেখতে হবে। ভাবতেই মাথাটা ধরে আসছে। 
ছাঁদ বরাবর আসতেই বুক কাঁপছে। রাতের ঘটনা চোখে ভাসছে। সে কপালে চুমু খেয়েছিলেন। হেসেছিলেন। শান্ত, মিষ্টি আওয়াজে কথা বলেছেন। লজ্জায় মুখ গরম হয়ে উঠছে। ইশ। কিভাবে তার সামনে যাব? 
ছাঁদে উঠতেই চোখে পরলো, সুমনা পা ধরে নিচে বসে। তন্ময় ভাই ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে। তার পড়নে হাফপ্যান্ট, টি-শার্ট। সে বলছে, 
' স্ট্রেন্থ নেই শরীরে? সমান প্লেসে কিভাবে পড়ে যাও?'
আমাদের দেখতেই সে, রুবি আপুকে বললেন,
' রুবি ও ব্যাথা পেয়েছে। দেখ তো। '
 সে আবারও কোণে চলে গেলেন। খুবই গম্ভীরমুখে কথা বলছেন ফোনে। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। 
এদিকে সুমনার চেহরা দেখার মতো ছিলো। ফাজিল মেয়ে। নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে করেছে। যেন ভাইয়ার কোলে চড়তে পারে। উহ। এতই সোজা? 
রুবি আপু গিয়ে পায়ে দেখতে লাগলো, 
' কোথায় লেগেছে?'
সুমনার জবাব,
' ইটস ওকে৷ অতটা গুরুতর নয়। '
এখন গুরুতর নয়। একে এখন আমার সহ্যই হচ্ছে না। আমার সহ্যশক্তি প্রয়োজন। প্রচন্ড। 
দোলনায় বসে আশপাশে চোখ বোলালাম। ছাঁদে দোলনা, আর ছোট ছোট ফুলের প্ল্যান্ট ছাড়া কিছুই নি। পরিষ্কার ভাবে গোছানো। কোথাও একটু আবর্জনা নেই। 
দীপ্ত পেছন হতে, দোলনা দোলাতে লাগলো। হাসতে হাসতে বললাম, 
' দোলাতে হবেনা। থাম। '
কথা শুনলো না। সেই দোলাচ্ছেই। আমিও চুপচাপ চোখ বুঝে রইলাম। হঠাৎ শব্দে চোখ খুললাম। তন্ময় ভাই নেমে যাচ্ছেন। সাথে সয়তান সুমনাও নামছে। অবাস্তবিক মেয়ে। এ আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছে। রুবি আপু আশ্চর্য কন্ঠে বলল, 
' এ কোন দেশের বেহায়া। '
সত্যিই। মেয়েটা আসলেই অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। ও কি এমন অদ্ভুত ছিলো? নাকি আমারই চোখ আজ খুলল? 

দুপুরে খেতে বসলাম। তখন তন্ময় ভাই জানালেন, 
' বিকেলে চলে যাচ্ছি৷ '
বড় চাচ্চু বললেন,
' আর ক'টাদিন থেকে না হয় যেতে। '
তার জবাব, 
' গুরুত্বপূর্ণ। যেতে হবে। '
' আচ্ছা। কিছু লাগবে? '
' উঁহু। আম ফাইন৷ '
বিকেলে তন্ময় ভাই চলে যাবেন। আমার খারাপ লাগতে শুরু করলো। সে গেলে মাস ছাড়া আসেননা৷ এবার কয়মাস পর আসবেন? কামরায় গিয়ে ভাবনায় হারিয়ে গেলাম। 
ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে আসলো, জানা নেই। 
ঘুম ভাঙতেই, সময় দেখলাম। ছয়টা বিশ। দৌঁড়ে নিচে নামলাম।
গিয়ে শুনলাম, তন্ময় ভাই চলে গেছেন। 
চোখ জলে চিকচিক করছে। যাবার সময় দেখাও হলো না? 
ঘুম আসার সময় পায়নি? এতো রাগ লাগছে নিজের প্রতি। বলার বাহিরে। চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। 
সেদিন রাতটা শুধু তার কথা ভেবেই শেষ করেছি। এতদিনের মুহুর্ত গুলো, কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটে দিতে লাগলো। ভিষণ জ্বলছে। আবার কবে দেখব তাকে? সে'তো গেলে আর আসার নামই নেন না। 
মাসের পর মাস চলে যায়। তার নামগন্ধ থাকেনা। এখন তো তার দ্রুত ফেরা প্রয়োজন তাইনা? মাসের মাঝে দু'তিনবার তো এসে থাকা যায়। 

কলেজ গিয়ে লেগেছে সুমনার সাথে। এভোয়েড করছি, তাও ও ইঙ্গিত মেরে কথা বলছে। ওর বন্ধুদের নিয়ে আমাকে অপদস্ত করলো। ব্যস। আমিও জবাব দিয়েছি। আমাকে যেভাবে বলেছে, সেভাবে ওকেও বলেছি। 
ঝগড়াঝাটির জন্য আরও জানতে পারলাম, ও সকলের কাছে আমার নামে অভিযোগ করতো। আমি নাকি ভালো না। অনেক ছেলেদের সাথে মেলামেশা আছে। ছেলেদের টাকা খাই, তাদের পিছু ঘুরাই। তাদের সাথে ঘুরতে যাই। ফ্যিজিকাল কতো করেছি, তার গুনুন হবেনা। আমাকে নাকি ও প্রায়ই দেখতো ছেলেদের সাথে। মারজি থেকে এগুলো শুনে, আমি কেঁদে ফেললাম। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেছে। ও আমাকে এতো খারাপ ভাবে? এতটা? 
কলেজে সারাক্ষণ মাথা নিচু করেছিলাম। লজ্জায় মরতে ইচ্ছে হচ্ছে। এখন সবাই এগুলো ভাববে আমাকে নিয়ে?
টিফিন টাইমে মারজি আমাকে না জানিয়ে বাড়িতে কল দিয়েছে। রুবি আপু কল ধরায় সে তখনই গাড়ি নিয়ে কলেজ হাজির। সে ভয়ানকভাবে সুমনা'কে বলে দিয়েছে,
' আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখলে, পা কেটে হাতে ধরাই দিব। আর অরুর আশেপাশে যদি আরও আগে না দেখি। 
সস্তা মেয়ে। '
কলেজে বাকি ছিলো তিন ক্লাস৷ আপু ছুটি নিয়েছেন। বাড়ি ফিরে আমি কামরায় আটকে। 
যে আমার বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলো। যার সাথে সব শেয়ার করতাম।  
সকল কিছুর ভাগ দিতাম। সে কিনা পেছন পেছন আমাকে নষ্টা পরিচয় করাচ্ছিল? ভাবতেই চোখ ভিজে আসছে। 
সেদিন আমি আর ঘর থেকে বেরোই নি। মা, বড় মা, চাচ্চু, বাবা সকলেই ডেকেছেন। আমিই বের হইনি। এতো বড় ধাক্কা একদম নিতে পারছিলাম না। সুমনা এমন করেছে? সেই আমার ছোট বেলার খেলার সাথী সুমনা? একসাথে খেলার সঙ্গি। বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। কিভাবে পারলো? 

কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুম ভেঙেছে ফোনের রিংটোনে। ঘড়িতে দেখলাম রাত বারোটা পঁয়তাল্লিশ। আমি উঠে বসলাম। 
স্ক্রিনে দেখাচ্ছে, তন্ময় ভাই। 
রিসিভ কী করব? নিশ্চয়ই সব তার কানে গিয়েছে। বকা দিবে আমাকে? কিন্তু আমি কিছুই করিনি। করলো তো সুমনা। 
.
.
.
চলবে..................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন