আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

প্রেয়সী - পর্ব ২৬ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


সোনালী আলোয় পরিবেশ মন মুগ্ধকর। আশেপাশে নির্জনতা নেই। 
মানুষের কোলাহল চলছে। তন্ময় ভাই আর আমি হাঁটছি। বড়বড় গাছগুলো ফেলে চলে যাচ্ছি। তার ডান হাত আমার কাঁধ পেরিয়ে পিঠের দিক পেঁচিয়ে। আরেক হাতে ফোন নিয়ে, দিব্বি কথা বলছেন আর হাঁটছেন আমাকে নিয়ে। এক প্রকার তার সুরক্ষার মাঝে আঁটকে। কয়েকবার ছাড়ার জন্য বললাম। তার কোনো রিয়েকশন নেই। ছাড়বে বলে মনে হয়না, তাই মাথা এলিয়ে চললাম। বাতাস এসে তার কালো ঘন ছোট চুলগুলো আউলে দিচ্ছে। আঁড়চোখে তাকে দেখতে বেশ লাগছে। পৃথিবীর সোনালী আলোয় তাকে আরও ভয়ংকর সুন্দর দেখাচ্ছে। তার চোখ গুলো আমার দিক। অথচ আশেপাশে আমার থেকেও সুন্দর মেয়েরা আছে। কিন্তু তিনি আমাতে বিভোর। 
 কথা শেষ হতেই, ফোন রেখে বললেন, 
- ফুচকা খাবি? 
- উঁহু। 
- কেন? আমিতো দেখতাম, স্কুল-কলেজ বরং বাড়িতেও এই হাবিজাবি খেতিস। 
- আজ ইচ্ছে করছে না। 
- করছে না? চল খাবি। 
আঁড়চোখে তাকে দেখে নিলাম, 
- আপনি খাবেন সাথে? তাহলে খাব। 
তিনি এগুলো একদম খেতে পারেন না। নিশ্চয়ই না করবেন। তার দ্বারা টক-ঝাল খাওয়া অসম্ভব। তার উত্তর ও একই ছিলো, 
- এগুলো খাওয়া ইমপসিবল। তুই খা। 
- উঁহু। আপনি খেলে খাব। 
- আচ্ছা, তুই খাওয়াই দিবি। 
হাসলাম, বললাম,
- তাহলে খাব না। 
তিনি কথা বাড়ালেন না। টেনে নিয়ে গেলেন সেদিকে। অর্ডার ও করলেন। আমি বললাম, 
- ঝাল-টক বেশি। 
তন্ময় ভাই চোখ রাঙালেন। 
- পেট খারাপ হবে। 
- তাহলে বললেন কেন খেতে? 
- তুই কীভাবে তাকিয়ে ছিলি, তাই না বললাম। 
- ইশ, মিথ্যুক। 
দেখা গেলো তন্ময় ভাইকে খাওয়াতে গিয়ে, আমায় কামড় খেতে হয়েছে কয়েক। তিনি হাসছেন। অথচ তার নাক লাল হয়ে আছে ঝালে। খাওয়া শেষে আমার নিজেরও প্রচন্ড ঝাল লাগছে। 
কিছু পুঁচকে ছেলেরা পানি বিক্রি করছে, ডেকে ডেকে। বোতলে সুরক্ষা নেই কোনো । আমি সেখান থেকে নিতে চাচ্ছিলাম। তিনি দিলেন এক ধমক, 
- এভাবেই এই হাবিজাবি খেয়েছিস। এখন এই পানি খেয়ে ডাইরিয়া বাধানোর ধান্দা। 
টেনে সামনে নিতে লাগলেন। সামনে বড় দোকান। পৌঁছে প্রশ্ন করলেন, 
- পানি নিবি না আইসক্রিম? 
অথচ, আমার জবাব শুনলেন না। আইসক্রিম, পানি দুটোই নিলেন। আগে বোতলের মাথা খুলে দিলেন। পানি খেয়ে শান্ত হলাম। 
ঝাল-টক খেতে তো ভালো লাগে। কিন্তু, তারপরের মুখ জ্বলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কষ্ট। পরপর আইসক্রিম ও খেতে দিলেন। 
সামনে ফ্যামিলি ঘুরতে এসেছে হয়তো। গাড়ির সামনে ছোট-ছোট বাচ্চারা বেলুন হাতে দাঁড়িয়ে। নিশ্চয়ই ওই দম্পতির সন্তান। আমার তাকিয়ে থাকা দেখে সেও তাকালেন। দুষ্টু স্বরে বললেন, 
- আমাদের ও হবে। 
কী লজ্জা। 
- ইশ, সরুন। 
তিনি হাসছেন। 
- সরুন কী? ভবিষ্যৎ আসছে, তখন আমাদের ও হবে। 
ছাঁই। লজ্জায় আমি দ্রুত হাঁটা ধরলাম। পেছনে তাকালাম। তিনি এখনও দাঁড়িয়ে। আমি গিয়ে তার হাত টেনে আনতে চাইলাম। কিন্তু, একটুও নড়াতে সক্ষম হলাম না। তার হাসির শব্দ। শক্তি বাড়িয়ে আবারও চেষ্টা করলাম। হচ্ছে না। তিনি কী পাথর? তিনি কী মানুষ নন? পরপর নিজেই আসলেন স্বেচ্ছায়। গাল টেনে দিলেন, 
- লিলিপুট। তোর শরীরে শক্তি আছে আমাকে নড়ানোর? 
ভেঙালাম, 
- এহ। এখন একটা উইক আছি। ঠিক হতে দিন। আঙুল দিয়ে উঠিয়ে ছুড়ে মারব ওপারে। 
এবার তার প্রচন্ড শব্দের হাসি। হাসতে হাসতে আমাকে তার বাহুতে চেপে ধরলেন। 
- নিজেকে দেখেছিস? এক কেজি মাংস ও তো নেই শরীরে। 
জবাব দিলাম না। অথচ আমার দিক তাকিয়ে তিনি হেসেই যাচ্ছেন। 
উহ। লোকটা হাসলে, তাকে মারাত্মক সুন্দর দেখায়। 

যখন বাড়ি ফিরেছি তখন সন্ধ্যা। মাগরিবের আজান দিচ্ছে। ড্রয়িংরুম থেকে শোরগোল আসছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে, নানু বাড়ির সকলে এসেছে। সামনের সোফায় চাচ্চুরা বসে। বাবা শক্ত চোখে তাকিয়ে। তাকে এতটা শক্ত হয়ে থাকতে আমি আগে দেখিনি। চোখ গেলো সুমনার দিক। আমাকে দেখতেই দাঁড়ালো। সকলের উদ্দেশ্যে বলল,
- ওইতো অরু এসেছে। 
উফ। এখন মায়া-মমতা আমার নিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। যাও একটু মাইন্ড ফ্রেস হয়েছিল, তা এদের দেখে চলে গেলো। মামা ডাকলেন। 
বাবা এবার শক্ত গলায় বললেন, 
- আমার মেয়ে হতে দূরে। 
মামাও আওয়াজ তুললেন, 
- এমন কথা কীভাবে বলেন? অরু আমাদেরও মেয়ে। 
বাবা হাসছেন, 
- তাই? 
কিছু বুঝছিনা। সকলেই থতমত হয়ে আছে। তখনই তন্ময় ভাই আসলেন। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, প্রশ্ন করলেন, 
- এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? 
তারপর তিনি সামনে তাকালেন। মানুষজন দেখে, রুবি আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 
- রুবি, অরুকে নিয়ে যা উপরে। 
বাবা থামালেন। বললেন, 
- না, ও থাকুক। জানুক, ওর নানু বাড়ির মানুষদের আসল রুপ। কতটা লজ্জাহীন এরা। 
ছোট মামা হুংকার করে উঠলেন, 
- সাবধানে কথা বলুন। 
বড় চাচ্চু বাবা'কে চুপ থাকতে বললেন। বাবা চুপ হলেন না। তিনি এসে আমার হাত ধরলেন। সামনে নিয়ে গিয়ে আঙুল তুলে মামা'কে দেখালেন। শক্ত গলায় বলতে শুরু করলেন, 
- এই হচ্ছে, তোর মায়ের আপন ভাই। তোর আপন মামা। 
 সেই মামা যে তার মেয়েকে এই বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার জন্য, তোর মা'কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। তোর মা'কে সোজাসাপটা বলে দিয়েছে, সুমনার বিয়ে তন্ময়ের সাথে নাহলে তারা তোর মায়ের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না। তোর এই আপন মামাদের প্রেশারে আজ তোর মা নেই। এখন আবার আসছে আরেক কাহিনি নিয়ে। 
তোর মায়ের ও নাকি ইচ্ছে ছিলো, সুমনা'কে এ বাড়ির বউ করার। তন্ময়ের জন্য নাকি সুমনা'কে বেছে রেখেছিল। এক মৃত মানুষকে নিয়ে আজগুবি কথা বানানোর ক্ষেত্রেও এরা থেমে নেই। 
 এখন, তুই কী বলিস? এদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাস? বল আমায়? 
মামা আমার দিক তাকালেন। 
- অরু? আম্মু আমার। তুই এগুলো বিশ্বাস করছিস? আমি আমার বোনের সাথে এমনটা করব তোর মনে হয়? আমি শুধু, সুমনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তুই নাকি জানিস যে, সুমনা কতটা ভালবাসে তন্ময়কে? ও তো সুইসাইড ও করতে গিয়েছিল, নির্ঘাত সময় মতো বাঁচাতে পেরেছি। আর তোর মা নিজে বলেছিল, সুমনা কতটা গুনি মেয়ে। ও তন্ময়ের জন্য সুমনাকে চেয়েছিল। বিশ্বাস না হলে, তোর ছোট মামা'কে জিজ্ঞেস কর।
বাবা থামিয়ে দিলেন, 
- আপনাকে আমি নিজে জানিয়েছিলাম, তন্ময় আর অরুর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আপনাকে শান্ত গলায় বুঝিয়েছি, ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে। সেখানে আপনি কীভাবে এতটা নির্লজ্জ হতে পারেন? 
আমার চোখ গেল সুমনার দিক। মেয়েটা কেমন হিংস্র চাহনি নিয়ে আমার দিক তাকিয়ে। দিনদিন মেয়েটাকে একদম অচেনা লাগছে। একদম অচেনা। এক ভিন্ন সুমনা। যে সবচেয়ে নিচে নামতে পারবে। 
তন্ময় ভাই বেশ বিরক্ত হয়ে উঠছেন। ধীরে ধীরে বিরক্ততা রাগে পরিনত হচ্ছে। কতক্ষণ চুপ ছিলেন। এবার বেশ শক্ত 
কন্ঠে বললেন, 
- কিসব আজব কথাবার্তা। মা-বাবা আছে আমার। অনাথ নই যে চাচী আমার জন্য বউ খুঁজে বেড়াবে। এসব আজগুবিকথা না বলেন প্লিজ। আর ভাবেন কীভাবে আপনাদের সাথে আমাদের যায়? নির্ঘাত আমার চাচ্চু ভালবেসে বিয়ে করেছিলো। নাহলে আপনাদের মতো পরিবার থেকে আমরা হাজারগুন দূরে থাকি।
 দেখুন, আমাদের অবস্থা তো জানেন? আপনাদের পুরো পরিবার হাজতে সারাজীবনের জন্য আটকে রাখতে সক্ষম। তাই অযথা সিনক্রিয়েট না করে, সোজা সারাজীবনের জন্য বেরিয়ে যান। আল্লাহ হাফিজ। 
পরপর রুবি আপুকে ডাকল, 
- রুবি, অরুকে নিয়ে যা। 
বাবার ঘাড়ে হাত রাখলেন। ধীর কন্ঠে বললেন, 
- কথা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। 
তারপর দ্রুত পায়ে চলে গেলেন বাড়ি থেকে। মামা বেশ কয়েকবার ডাকলেন। শুনলাম না। আমি জানি, আমার বাবার কথা সত্য। জিনিসটা এতদিন বুঝতে না পারলেও, এখন সম্পুর্ণ ক্লিয়ার। বাবা আরও শক্ত গলায় তাদের সাথে কথা বলছেন। এক প্রকার দু পরিবারের চিল্লাচিল্লি চলছে। দীপ্ত নাক কুঁচকালো, 
- ভাইরে ভাই, তোমাদের নানু বাড়ির লোক তো বড্ড নির্লজ্জ। এমন কেন তোমার মামারা? আর এই সুমনা আপু? 
জবাব দিলাম না। রুবি আপু, দীপ্তর মাথায় টোকা মারল, 
- চুপ। শুধু পাকাপাকা কথা। 
আমি জানি চাচ্চুরা, বাবা তারা ভয়ংকর স্টেপ নিতো মামাদের ক্ষেত্রে। শুধু আমার আর মায়ের কথা ভেবে কিছু করছেনা। আমার মা যে অনেক ভালবাসে তার ভাইদের। পাগলের মতো ভালবাসত। সেই ভাইদের কিছু করার মনোবল সয়ং বাবারও নেই। আর তারা তো আমার মামা। ছোট বেলায় কোলে নিয়ে বেড়াতো। থাক না সব। 
যার জন্য এতকিছু। সেই তো নেই। 
.
.
.
চলবে..................................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।