প্রেয়সী - পর্ব ০৯ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


তন্ময় ভাইয়ের নানু এসেছেন। কন্ঠে মধুরতা, 
--' সমস্যা হচ্ছে না তো কোনো? '
রুবি আপু উঠে, হেসে জবাব দিলেন, 
--' সমস্যা হচ্ছেনা নানু। '
--' মাশাল্লাহ। দীপ্ত বড় হয়েছে দেখছি৷ বিয়ে-শাদি দিতে হবে নাকি ছোট সাহেবের? '
দীপ্তর বড় গলার জবাব, 
--' এহ। এখনও অনেক দেরি। আরও বড় হতে হবে। তন্ময় ভাই, রবিন ভাইদের মতো। তখন বিয়ে করবো। '
--' আচ্ছা? আর প্রেম? প্রেম কয়টা করবে? '
দীপ্ত লজ্জা পেলো। আমতাআমতা করলো, 
--' করতে তো এখনই ইচ্ছে হয়। '
নানু আবারও প্রশ্ন করলেন, 
--' আটকাইছে কে? '
দীপ্তর অসহায় কন্ঠ,
--' আমি ছোট। মেয়ে ভালো লাগে বড়। '
রবিন ভাইয়ের থাপ্পড় পড়লো দীপ্তর ঘাড়ে। হঠাৎ ভাইয়াকে দেখে দীপ্ত ভরকে যায়। দ্রুত নানুর পেছনে চলে যায়। নানু আর রুবি আপু হাসছে। আর আমার তো হাসতে হাসতে ব্যালেন্স হারিয়ে গিয়েছে।ছেলেটা এতো পাকনা। 
রবিন ভাই চোখ রাঙালেন, 
--' এগুলো কই শিখেছিস? '
--' তোমার থেকে। তুমি না প্রেম করো। বড়বড় আপুদের সঙ্গে। '
মানইজ্জত খেয়ে দিল। আমি আর রুবি আপু আঁড়চোখে তাকালাম। এটাই হচ্ছে কারণ, যে কেউ দীপ্তর সাথে লাগতে যায়না। এই ছেলে সকলের সব জানে। এবং হুট করে সব বলেও দেয়। নানু তন্ময় ভাই'কে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার আগেই রবিন ভাই রফাদফা। হাহা। 

আরিফ, তন্ময় ভাইয়ের বড় মামার বড় সন্তান। এর সাথে কথা আমার ইহকালেও হয়নি। কখনও চোখে-ই পড়েনি। পড়বে কীভাবে? আমার অর্ধেক বয়স গিয়েছে, তন্ময় ভাইকে বকতে বকতে। আশপাশ পর্যবেক্ষণ করার, সময় কোথায় পেলাম?
অথচ, সেই আরিফ আজ কথা বলতে এসেছে। 
--' কী অবস্থা অরু? '
ইতস্তত গলায় জবাব দিলাম,
--' আলহামদুলিল্লাহ, ভাইয়া। আপনার? '
--' ভালো নেই। কিন্তু ভালো থাকব। যদি তুমি আমাকে একটা সাহায্য করো। '
--' সামর্থ্য থাকলে..'
--' বাবাহ, এতো কঠিন কিছু না। সিম্পল। লিসেন, ওইযে হোয়াইট ড্রেসের মেয়েটি দেখছ? সি'জ মাই গার্লফ্রেন্ড। রেগে আছে। ফোন রিসিভ করছেনা। আর ওখান থেকে নড়ছেও না। আর তুমিতো জানো, আমার চাচারা আশপাশে। ওর সাথে এখানে কথা বলা ইম্পসিবল। নাউ, ইউ হ্যাভ টু ডু ইজ, ওকে গিয়ে একটা ম্যাসেজ দিবে। পারবে? '
সিম্পল তো। কারও কাজে আসা ভালো। হেল্প করা সওয়াব। 
--' আচ্ছা। কী বলব? '
আরিফ ভাইয়া একটু কাছে আসলেন। ধীরে বললেন, 
--' আরিফ বাড়ির পেছনে, অপেক্ষা করছে। দ্রুত না আসলে সে চলে আসবে। এভাবে বললেই হবে। '
লাগাতার মাথা দোলালাম। সাহস নিয়ে 8প সেই সাদা ড্রেসের দিক। সামনে সুমনা হাজির। 
--' তন্ময় ভাই কোথায় অরু? '
--' আমি তাকে নিয়ে বসে? সে কী আমায় বলে যাওয়ার মানুষ? এখন যা, কাজ আছে। '
বলতে বলতে ওঁকে চাপিয়ে, মেয়েটির দিক আসলাম। আমাকে দেখে অবাক হলো। পরক্ষণে হাসলো, 
--' হেই। ইউ আর? '
--' আরাবী। হাও এবাউট ইউ? '
--' লিজা। নাইস টু মিট ইউ। '
--' ইয়েস। আমি একটি ম্যাসেজ নিয়ে এসেছি, আরিফ ভাই হতে। '
সাথে সাথে আপুটা মুখ ফোলালেন। চোখ কুঁচকে নিজ মনে বকতে লাগলেন, 
--' শালা সয়তান। নাইজেরিয়ার উগান্ডা। ভীতু বিলাই। নিজে আসেনি। এতো ভয় পেলে প্রেম করতে বলেছে কে, ওকে? বলদা একটা। কী দেখে এর সাথে আজ, পাঁচ বছর যাবত রিলেশনশীপে আছি? আল্লাহ মালুম। '
আমার দিক চোখ পড়তেই হাসলেন। তারপর অভিমানী কন্ঠে জবাব দিলেন,
--' বলো। দেখি সয়তানের কী বলার আছে। '
--' বলেছেন, সে বাড়ির পেছনে। এখনই আপনার যেতে হবে। নাহলে সে চলে আসবেন এখানে। '
--' তাও মাফ চাইবে না। দাঁড়াও যাচ্ছি। আজ ব্রেকআপ হবেই। বাড়িতে গিয়ে ব্রেকআপ ড্যান্স দিব। '
মেয়েটা চলে গেলো। দেখতে মাশাআল্লাহ। ব্যবহারও সুন্দর। আরিফ ভাইয়ের সাথে খুবই সুন্দর মানাচ্ছেন। 

 ডাক শুনতেই পেছনে ফিরলাম। রুবি আপু। সে আমার হাত ধরলেন শক্ত করে। কড়াকড়ি কন্ঠে বলে দিলেন, 
--' আমার হাত থেকে গেলেই, মাইর। যতক্ষণ থাকব। আমার সাথে থাকবি। '
--' এখানেই আছি। কোথায় যাব। আজীব। '
 নিজের পাশে বসিয়ে, তারপর হাত ছাড়লেন। আমি আবারও বললাম, 
--' হঠাৎ। হয়েছে কী? '
দীপ্ত আইসক্রিম খাচ্ছে। লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,
--' তন্ময় ভাই বলেছেন তোমাকে রুবি আপুর সাথে সাথে থাকতে।
আরেকবার এদিকসেদিক দেখলে, সোজা ড্রাইভার দিয়ে পাঠাই দিবে বাড়ি। '
--' তো পাঠাক। এভাবেও আমি থাকতে চাচ্ছিনা। '
হাহ। কই এই নবাবজাদা। কোথার থেকে দেখছে। আশপাশে চোখ বোলালাম। এতো মানুষের মাঝে, কই সে তো নেই। 
দীপ্তকে ধীরে প্রশ্ন করলাম, 
--' সে কীভাবে দেখলেন আমায়? '
--' তোমার বাম সাইড ফিরে, মাথা উঁচু করে ফেলো। '
আমি দ্রুত সেদিক তাকালাম। তন্ময় ভাই দাঁড়িয়ে। হাতে গ্লাস। সাথে তার কাজিন আরও কে কে। সে এদিকই তাকিয়ে। আমার দিক। সে কী এতক্ষণ এভাবে তাকিয়ে ছিলো? আমার গলাটা শুঁকিয়ে আসছে। চুপচাপ নড়াচড়া বন্ধ করে ফেললাম। শক্ত হয়ে বসে রইলাম। রুবি আপু হাসলেন,
-- চাপ নিস না। কিছু বলবেনা তোকে। '
বলবেনা? হ্যাঁ, কিছু বলবেনা। কিন্তু করবে। হাড্ডিগুস্ত আলাদা করে দিবে। পুরো অনুষ্ঠানে আমি বসে রইলাম। মাঝেমধ্যে গানের সঙ্গে নিজেও তাল মেলালাম। 

যখন জন্মদিনের কেক কাঁটা হলো। তখনও তন্ময় ভাই নিচে নামেননি। সেখান থেকেই কেক কাঁটার জন্য বললেন। আইরিন জানে, সে আসবে না। তাই অনুরোধ তেমন করেনি। বরং নিজে গিয়ে খাইয়েছে আবার খেয়েছে। 
এখানে আমি ভাবছি, কখন এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব। রুবি আপু অবশ্য এঞ্জয় করছেন। আমারই ভালো লাগছেনা। লাগবে কীভাবে? আমাকে তো এঞ্জয় করতেই দিলো না। কীভাবে তাকিয়ে তখন থেকে। কেউ তাকিয়ে থাকলে, নিজেকে নিয়ে ফুর্তি করা যায় ? আমার তো মনে হয়না। অস্বস্তিকর চাপে আমি শুধু দাঁড়িয়ে হেসেছি। 
কিছুক্ষণের মাঝে, বড় মা আসলেন। সকলকে আলাদা নিলেন, ভেতরের ডাইনিং এ। রুবি আপু, রবিন ভাইয়া, সুমনা, দীপ্ত। আমাদের একাই বসিয়েছেন। সুমনা প্রশ করলো, 
--' তন্ময় ভাইয়া? সে ডিনার করবে না? '
--' ওর কথা বলিও না। ডেকে এসেছি। খাবে না। কি আবর্জনা খাচ্ছে কখন থেকে। ' 
সুমনার জবাব, 
--' আমি যাবো? '
--' আসবেনা। তুমি খেতে শুরু করো। '
খাওয়া শেষ হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নেওয়া হলো। আপাতত যাবার পালা। কখন বেরোবো , সেই চিন্তায় মাথাটা ভার। খুবই ক্লান্ত লাগছে। ঘুমাবার জন্য চোখ লাফাচ্ছে। বাড়ি গিয়ে আগে হবে এক ঘুম। তারপর অন্যকিছু। 

যাবার পথে তন্ময় ভাইয়ের নানু বাড়ির, কেউই যেতে দিবেন না।

সকলেই বারবার বলছেন, 
--' কাল যা। রাত হইসে অনেক। '
বড় মা বললেন, 
--' আমিতো থাকতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু, বাড়ি খালি। বাচ্চারা সব সাথে। তন্ময়ের বাবা রাগবেন। খালি বাড়ি সে একদম পছন্দ করেন না। '
রবিন ভাইয়ের জবাব, 
--' তাহলে থেকে যাও। কাল বড় চাচ্চু এসে নিয়ে যাবে। '
--' আসবেন না৷ '
তন্ময় ভাইয়ের মুখ খুলল, 
--' আসবে কাল। যাচ্ছি আমরা। '
তন্ময় ভাই বেরিয়ে গেছেন। সে যেহেতু বলেছে, বড় চাচ্চু আসবেন। তাহলে সত্যিই আসবেন। নানু সকলের হাতে বড়বড় বাড়ি ধরিয়ে দিলেন। বড় মা বললেন, 
--' সাবধানে যাস। '
আমি মাথা দোলালাম। 
--' আচ্ছা। আসি। '
গাড়িতে উঠতে গিয়ে আরেক ঝামেলা। রুবি আপু সুমনা'কে উদ্দেশ্য করে বলল,
--' সুমনা, তুমি কি ভীতু? মানে অন্ধকার ভয় পাও? '
--' আররে না। '
--' আহ, বাঁচা গেলো। আমি আর রবিন প্রচন্ড ভীতু। সাহসী, তুমি থাকলে ভয় কম পাব। '
বলতেই সে সুমনা'কে এক প্রকার, জোরপূর্বক গাড়িতে বসিয়ে দেন।
তন্ময় ভাইকে দুষ্টু হেসে বলল,
--' সাবধানে আসিস। '
আমার শ্বাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হওয়ার জোগাড়। রবিন ভাই সেই গাড়িতে ঢুকছেন। তারমানে, তারা আমাকে একা পাঠাচ্ছেন? তন্ময় ভাইয়ার সাথে? পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে, আমি রুবি আপুর হাত ধরলাম।  
--' না। প্লিজ। সবাই মিলে ভাগাভাগি করে যাই। 
তাই না? প্লিজ। '
রুবি আপু বড়সড় না করে দিলেন। 
--' প্লিজ। '
এতো ভয় পাচ্ছিলাম বলার বাহিরে। পছন্দের ব্যাপারটা নিয়ে, আমি এখনও ঝটকায়। তারউপর তন্ময় ভাইয়ের সাথে থাকলে, আমি পর্যাপ্ত শ্বাস নিতে অক্ষম। নির্ঘাত শ্বাস আটকে মরে যাব। নাহলে হার্টঅ্যাটাক । 
রুবি আপু আমার দিক মাথা আনলেন। ধীর আওয়াজে বললেন,
--' সুমনা'কে একা তন্ময়ের সাথে পাঠাই দি? তোর যেহেতু এতো সমস্যা। '
ধীরে বলেছেন? উঁহু। এতটা ধীরে বলেননি। নির্ঘাত তন্ময় ভাই শুনেছেন। আমার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে, বিরক্তিকর শ্বাস ফেললেন আপু, 
--' আজীব অরু। দু ঘন্টার রাস্তা। আর আমরা আগপাছ যাব। পাশাপাশি। '
ব্যস। আপু চলে যাচ্ছে। আমার এতো অনুরোধ, কিছুই গায়ে নিলেন না। আমারও দিন আসবে। জ্বালিয়ে মারব। 
এদিকে তন্ময় ভাই কোনো কথা বলছেন না। একভাবে দাঁড়িয়ে। 
তার কী ইচ্ছা অনিচ্ছা কিছুই নেই? সে বললে কি এমন করতো? 
সাহস পেতো? 
ওদিকে ভেতর থেকে সুমনার আওয়াজ, 
--' ওদের সাথে যাই। তিনজন তিনজন হবে। '
রুবি আপুর মিষ্টি জবাব, 
--' অরুর সাথে আমার লেগেছে। আর তোমাকে আমার অনেক ভাললাগে। তা তো জানোই। একটু কথা শেয়ার করব।
 শুনবে না? '
সুমনা'র না বলার রাস্তা আপু রাখলেনই না। 

এতো ঝামেলা যাকে নিয়ে, তার মাথা ব্যাথা নেই। একদম শান্ত। অথচ সুমনা তো তার জন্যই এমন করছে। তার দ্বায়িত্ব নেই?
.
.
.
চলবে.................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন