বন্ধুদের রেখে রুমে গিয়ে বসে? ড্রয়িংরুমে বসেও তো কফি খাওয়া যাচ্ছে, তাই না? ওহ হ্যাঁ। তাঁর তো আবার রোগ রয়েছে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার। বাহির থেকে এসেছেন যে ৷ আপাতত গোসল করবেন। তারপর বেরোবেন । কত কাহিনি। আমি কফি দিয়ে রফাদফা হয়ে যাব। এমন আনরোমান্টিক লোকের সাথে থাকব না। একটু হেসে মিষ্টি করে কথা বললেই হচ্ছে। সেটাও করেনা। উনি নাকি আবার আমাকে পছন্দ করেন। ইশ, ছাঁই করেন৷ তাঁর কোন অঙ্গভঙ্গী'তে মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করেন? মুখে তো কিছু বলেই না। আর ইশারা তো আরও আগে না। ওই একটু আধটু তাকিয়ে থাকেন। ব্যস। হয়ে গেলো তাঁর। অদ্ভুত ।
আপাতত তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে। ভাবছি, পারমিশন ছাড়া যাবো নাকি? পারমিশন লাগবে কেন? তাঁর আছে'টা কী? আমি ঢুকলাম। তন্ময় ভাই নেই৷ গোসলে। আমি ধীরে তাঁর রুমে পায়চারী শুরু করলাম।
টেবিলে বড়বড় বুকস পড়ে৷ এভাবেই কী তাকে ব্রিলিয়ান্ট বলা হয়৷
এগুলো'ই পড়েন বুঝি। বইয়ের মাঝে মাঝে ট্যাগ লাগানো ' ইউ হ্যাভ টু ফিনিশ ইট তন্ময় '। আমি হেসে ফেললাম। পারেও বটে।
কিছু স্কেচ পেলাম। বাড়ি,ঘর, দালান হাবিজাবি আর্ট করা। আমার কাছে তো হাবিজাবিই লাগছে। হয়তো তার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট ।
অবশ্য আর্ট করতে তিনি খুব ভালো পারেন। দীপ্ত, রুবি আপুর এসাইনমেন্টে আগে তন্ময় ভাই সাহায্য করতেন। কোনো কিছু আর্ট করতে হলে, তার কাছেই আসা হয়। আমি আসতাম না বাবা।
তাকে আমার যা অপছন্দ ছিলো, আসার প্রশ্নই উঠত না৷
লাস্ট স্কেচটি'তে নজর আটকালো। পৃথিবীর সকল আকর্ষণ আসলো স্কেচটি'র উপর। একটি মেয়ের স্ট্র্যাকচার আর্ট করা। উপরের কর্নারে ছোটছোট অক্ষরে লিখা ' প্রেয়সী '। ভালভাবে
নজর বোলালাম। কামিজে রয়েছে মেয়েটি। ওড়নার কোণা নিচে ছুঁয়ে। ঠিকঠিক যায়গায় কয়েকটা ছোটছোট তিল ব্যবহার করেছেন। যেমন কানের লতিতে। থুতনির নিচে। অদ্ভুত লাগলো গলার বিশেষ কিছুটা নিচের তিল দেখে। এমন ভাবে নজর রেখে আর্ট করেছে? লোকটা কোন মেয়ের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। হঠাৎ, দ্রুত স্কেচ নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ালাম। গলার জামাটা একটু নিচে করলাম। গলাটা শুঁকিয়ে আসছে। ঠিক ডান পাশে তিলটা। স্কেচেও তা। পরপর বাকি তিলগুলো ঠিকঠাক পেয়ে গেলাম। নিজের শরীরে এতো যায়গায় তিল তা আমি নিজেও জানি না। লজ্জায় শ্বাস আটকে আসছে। এ কেমন অদ্ভুত আচরণ? ছি। লোকটা তো বড্ড লুচ্চা। এটা যেখানে ছিলো, সেখানে রাখা'ই উত্তম। এটা নিয়ে তাঁর সামনে পড়ার মানে নেই কোনো। দৌঁড়ে যেতে গিয়ে স্কেচ হাতে ফ্লোরে পড়ে গেলাম। আমার চেঁচানো শুনে সে তৎক্ষণাৎ বেরিয়েছেন। তার পায়ের সামনে স্কেচটি৷ কী মারাত্মক অসুন্দর পরিস্থিতি। দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম। স্কেচ ধরার আগে তন্ময় ভাই তা ওঠালেন । সেটার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে, আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। হাতে স্কেচ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, তিনি চুল মুছতে ব্যস্ত৷ উনি কী এটার এক্সপ্লেইন ও করবেন না? এতবড় কান্ড করে ভাব নিচ্ছে কিছুই হয়নি। তার তো উচিৎ ছিলো একটু তোতলানো'র। তার সিক্রেট ফাঁস হয়ে গেলো। সেদিকে কোনো ধ্যান'ই নেই। আজকে তো তাকে আমি খেয়ে ফেলব। সংযত কন্ঠে প্রশ্ন করলাম,
' এটা কে? '
তিনি আমার দিক ঘুরলেন,
' তোর ভাবী। সুন্দর না? '
চোখ বড়সড় করে তাকালাম। ভাবী? কে কার ভাবী? আমি আমার নিজের ভাবী? এটা তো আমার স্ট্র্যাকচার। চোখ পিটপিট করে জবাব দিলাম,
' সুন্দর না। একদম না। এর থেকে সুন্দর মেয়ে আছে। আমার স্কুলের মেয়েগুলো তো আরও.. '
হাত তুলে ইশারা করলেন থামতে। মাঝ সেন্টেন্সে কেউ আমাকে থামায়'না। অথচ, এই লোক সেটাও করে ফেলল। তারপর ড্রেসিং থেকে ফোন নিয়ে, একটু টিপে আমার সামনে ধরলেন। মেসেঞ্জার এটা। চ্যাট ওপেন করেছেন কারও। প্রোফাইলে বোঝা যাচ্ছে, ওই পুলিশ অফিসারের মেয়েটা। প্রপোজ করেছে অলরেডি। তন্ময় ভাই রিপ্লাই দেননি। না চাইতেও মনে ঝর বয়ে যাচ্ছে। সে ফোন বিছানায় ফেলে বললেন,
' এ সুন্দর? এটা চলবে? করব প্রেম এর সাথে? নাহলে আরও
আছে সুন্দর! '
চোখ গুলো ছলছল করছে। আমি নাহলে এভাবেই বলেছিলাম। তাই বলে এমন কঠোর হবে? এভাবে বলতে পারলো? নির্দয় লোক।
একবুক সাহস সঞ্চয় করে, ধীর কন্ঠে জানালাম,
' আ..আমিও পারবো প্রেম করতে। আমিও করব। '
সে আমার দিক শান্ত চোখে তাকালেন। কিছুটা কাছে এসে বললেন,
' তাই? প্রেম করতে পেরেছিস কখনও? '
বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। আসলেই তো। এতবছরের জীবনে একটা প্রেম নিবেদন বিনেদন কিছুই নেই?
' পারিনি তাতে কী? অবশ্যই পারবো এবং করবোও ৷ '
তার মুখ আমার কান বরাবর আনলেন। শান্ত স্বরে জানালেন,
' না করতে পেরেছিস, না করবি আর না আমি করতে দিব। '
তার উপস্থিতি চলে গিয়েছে। অথচ তখনও আমি চোখ বন্ধ করে, শ্বাস আটকে দাঁড়িয়ে।
রুবি আপু ঘাপটি মেরে বসে। তার রুমে যেতেই, সে খপ করে আমার হাত চেপে ধরল। টেনে নিজের পাশে বসালো।
তার অদ্ভুত আচরণ দেখে প্রশ্ন করলাম,
' হয়েছে কী? ইব্রাহিম ভাই তোমার অপেক্ষায় বসে। নামবে না? '
রুবি আপুর মুখ লালচে হয়ে আসছে। সি'জ ব্লাশিং? কিছু হয়েছে না-কি? বলবে আমায়? একটু জোর দেওয়া যাক৷ তার হাত চেপে বললাম,
' আমাকে বলোনা। '
হালকা কাশল। চোখ নিচু করে, জবাবের বদলে এক প্রশ্ন করলো, যা শুনে আমি রীতিমতো বিছানা থেকে পড়তে নিচ্ছিলাম।
' তন্ময় কী তোকে চুমু খেয়েছে? '
বড় এক চিৎকার শুনিয়ে দিলাম,
' কীইইইইইইইহ। '
' দেখ অরু, রাগীস না। আমরা আমরাই তো তাই না? বল। তোকে চুমু খেয়েছে? ঠোঁটে? '
লাগাতার মাথা নাড়ালাম। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে,
' এগুলো কী উদ্ভট প্রশ্ন? '
রুবি আপু লজ্জায় লাল। অন্যদিকে ফিরে বলল,
' ও কাল না আমাকে নিতে এসেছিলো। তো দুজন ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। ফি..উহু। মানে ফিরবার পথে জোরপূর্বক চুমু খায়।
এখন, আমার অনেকে লজ্জা করছে, সামনে যেতে। '
' ও মাই গড। ওমাইগড। ওয়াও। তারপর, তারপর? '
' তারপর? তারপর আর কী। বাড়িতে এসে আমি আর ওর ফোন রিসিভ করিনি তাইতো চলে এসেছে বাড়ি'তে। '
' সো রোমান্টিক। ওয়াও, এটাই তোমার প্রথম কিস? '
লজ্জাসংকোচ ভেঙে জবাব দিলেন,
' হ্যাঁ। জীবনের প্রথম। আমাদের রিলেশন তো বছরের বেশি হচ্ছে। ও কখনও আমাকে স্পর্শ করেনি। মাঝে মাঝে কপালে চুমু খেতো। বা পাশাপাশি হাঁটলে কোমরে ধরতো। কিন্তু কাল রাত্রে কী হয়েছিলো ওর কে জানে। '
তারপর হাসলেন। আমাকে বললেন,
' এখন তুই বল। কিস করেছিস? '
নিচুস্বরে জবাব দিলাম,
' না। '
তার অবাক কন্ঠ,
' কীহ? এখনও হয়নি? তন্ময় তোকে চুমু খায়নি? ও যেভাবে
তাকায় তোর দিক। আমিতো ভেবেছি, পুরো খেয়ে ফেলেছে। '
' ছিঃ। নষ্ট কথা বার্তা। '
' আচ্ছা, আচ্ছা স্যরি। বল, সত্যি তোদের কিস হয়নি?'
' উঁহু, না। '
' কী করেছে তাহলে? '
আঁড়চোখে তাকিয়ে বললাম,
' কিছুই করেনি? '
' সত্যি? '
' হ্যাঁ, বাবাহ। '
মন খারাপ করে আবারও বললাম,
' সেতো কিউট ভাবে সহজে কথাও বলেনা। কিছু করার কথার
প্রশ্নই আসেনা। আনরোমান্টিক লোক। '
অথচ এ কিন্তু এক বড় লুচ্চা। সেটার প্রমাণ তো পেলামই আজ। আমার মানইজ্জত নিয়ে টানাটানি লেগে গেছে।
রুবি আপু দুষ্টু হাসলেন।
' হয়তো তোকে সময় দিচ্ছে। তুই তো আর বাইরের মেয়ে না। ওর নিজের প্রিয়। অবশ্যই তোর কথা প্রচন্ড ভাবে। নাহলে, ও খুবই বউ প্রিয় মানুষ। দেখবি, বিয়ের প্রথম তিন-চারদিন তোকে রুম থেকেই বেরোতে দিবেনা। '
বলেই রুবি আপু হাসতে লাগলেন। ছি। কী লাগামহীন কথা। রুবি আপুটা বড্ড আধুনিক। অথচ ইব্রাহিম ভাইয়ের এক চুমু'তে ঘায়েল। হিহিহি।
হঠাৎ দীপ্ত হাজির। অধিক বয়স্কদের আওয়াজ টেনে বলল,
' এইযে, সুন টু বি ব্রাইড। জিজু এসেছে। '
আমি দীপ্ত'র দিক তাকালাম। ছেলেটা এতো এডভ্যানস কেন?
সব বুঝে এবং বলেও ফেলে। এই ছেলে বড় হলে এর মাঝে লাজলজ্জা নামক বস্তু থাকবে বলে, মনে হয়না। রুবি আপুর জবাব,
' আমি কোথাও যাচ্ছি না। '
' যাচ্ছিনা মানে? আলবাত যাবে। জিজু তোমার অপেক্ষায়। আমার জিজুকে অপেক্ষা করানো যাবে না। '
রুবি আপু অবাক চোখে আমার দিক তাকালেন,
' দেখেছিস অরু? এখনই জিজু জিজু করছে এই ছেলে। '
আমি রুবি আপুর হাত ধরে তাকে ওঠালাম বিছানা হতে।
' চলো তো। '
আমি আর দীপ্ত তাকে এক প্রকার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছি।
দীপ্তর আবদারে ডিসিশন নেওয়া হলো, ঘুরতে যাওয়া হবে।
পাহাড়ের চড়ে। যেখানে আমার পিকনিক যাওয়ার কথা ছিলো।
বড় চাচ্চুও সহমত হলেন না। বললেন,
' মাস খানিক বাকি ওঁদের বিয়ের। এই সময় যাওয়াটা? '
ছোট চাচ্চু নিচু স্বরে বললেন,
' যাক ভাইয়া। তন্ময় তো থাকবে সাথে। '
দীপ্তর চেঁচামেচি'তে বড়রা মানতে বাদ্ধ প্রায়। এভাবে কেউ চাচ্ছিলেন না, প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের একসাথে যাওয়ার ব্যাপারটা ।
বড় মা উতলা কন্ঠে আর্জি করলেন,
' দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে যাস। দ্রুত চলে আসিস আবার। '
ইব্রাহিম ভাই' উঠতে নিচ্ছিলেন, ছোট চাচী থামিয়ে দিলেন,
' কোথায় যাচ্ছ বাবা? '
' ড্রেস কিছু প্যাক করতে হবেনা? '
আব্বু বললেন,
' ড্রাইভার পাঠিয়ে দাও? '
' উঁহু। পারসোনালি নিলে ব্যাটার হয়। আর টুকটাক কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হচ্ছে। '
' ঠিকাছে৷ '
ইব্রাহিম ভাই চলে যাচ্ছেন। তন্ময় ভাই ফোনে কথা বলছেন।
রুবি আপু প্যাকিং করতে দৌঁড়। দীপ্ত কী কী নিবে ভাবছে। আররে মাত্র দু'দিনের ব্যাপার। এতো প্যাকিং করে হবে কী?
.
.
.
চলবে................................