প্রেয়সী - পর্ব ১২ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


সময় নিয়ে কল ধরলাম। তার মন তো আবার পাথরের। একদম শক্ত। দেখা যাবে আমাকেই কথা শোনাচ্ছেন। সুমনার দোষ দেখবেন না। উল্টো আমাকে আরও কষ্ট দিয়ে, কল কেটে রফাদফা হবেন। 
ভাঙ্গা কন্ঠে বললাম,
' হ্যালো? '
' খেয়েছিস? '
' উঁহু। '
' কেন? এতটুকু কারণে এভাবে ঘর আটকে, না খেয়ে থাকতে হবে কেন? '
' এতটুকু কারণ? '
বলতে বলতে আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম। সে ধমক দিলেন, 
' সামনে থাকলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিতাম। 
ও কে? ওর কথায় কাঁদতে হবে কেন? '
' সকলের সামনে বলেছে কলেজের। আমি নাকি বাজে। ছ..ছেলেদের সাথে মেলামেশা করি। অনেকের সাথে ফ..ফিজিক্যাল করেছি। '
কথা শেষ করতেই পারছিলাম। কি জঘন্য ল্যাংগুয়েজ। এইসব কথা কি কাউকে বলা যায়? ভাববে যে সত্যি হয়তো মেয়েটা এমন। তন্ময় ভাই রেগে, তা তার কন্ঠে স্পষ্ট। এবার তো আমি তীব্র শব্দ পেলাম ওপাশে। কান থেকে ফোন সরালাম। কিছুক্ষণের পর তার কন্ঠ, 
' কি খাবি? বিরিয়ানি? '
' এতো রাত্রে? '
' আলি আসবে দিতে। সর্বপ্রথম খেয়ে নিবি। '
' হু। '
সে কল কেটে দিলেন। এই শেষ তার কথা। একটু সুন্দর ভাবে কথা বলতেও জানেন না। রসিকতা নেই মনে একদম। মানুষটা এমন কেন?
কলেজ থেকে ফিরে, কাপড়ও পরিবর্তন করিনি। গোসল খাওয়া দাওয়া তো দূরের বিষয়। দ্রুত গোসলে ঢুকলাম। গোসল শেষে চুল শোঁকালাম। পরপরই কলিং বেল বাজছে। আমি দ্রুত নিচে নামলাম। দরজা খুলে দেখলাম দারোয়ান নানা। সে হেসে বললেন, 
' মোল্লা হোটেল থেকা আইছে৷ কইলো তন্ময় বাবা পাঠাইতে 
কইছে। ' 
' হ্যাঁ। ধন্যবাদ নানা৷ '
' আইচ্ছা। '
দরজা আটকে রুমে দৌঁড় লাগালাম। মোল্লা হোটেল পরে আমাদের কলেজে যাবার রাস্তায়৷ সাধারণত তাদের হোটেল মিডনাইট পর্যন্ত ওপেন থাকে। সেদিন রেস্টুরেন্ট হতে, ফেরবার পথে দেখেছিলাম তখনও ওপেন ছিলো । আর তন্ময় ভাই তো সবাইকে চেনেন। তার তো এ জীবনে কোনো সমস্যা হবার কথাই না। 
আগে খেলাম। খিদে পেয়েছে প্রচন্ড। সারাদিন খাওয়া হয়নি। উফ। 
ভাগ্যিস তার সাথে কথা হয়েছে। নাহলে না খেয়েই ঘুমাতে হতো। 
ভাবতেই হাসি পেল। সে খুবই অদ্ভুত। 

ঘুম আসছে না। বিরক্ত লাগছে। ছাঁদে যেতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা। কি করা যায়? তন্ময় ভাইকে ম্যাসেজ দেওয়া যায়, তাই না? তাকে তো জিজ্ঞেস করা হলো না, সে খেয়েছে কীনা? বা কি করছে? কিছুক্ষণ ভেবে টেক্সট করলাম। 
' খেয়েছেন? '
তার টেক্সটস আসলো না। বরং কিছুক্ষণ পর কল করলেন। অদ্ভুত স্বরে বললেন, 
' খাওয়া হয়েছে? '
' হু। আপনি খেয়েছেন। '
সে থেমে থেমে জবাব দিলেন। যেমন ভাবছেন, 
' না৷ '
' কেন? কেন খাননি? '
' এভাবেই। '
' কি হয়েছে? এভাবে কথা বলছেন কেন? '
তার কথা থেমে থেমে আসছে৷ একটু বলে, থেমে যাচ্ছেন। 
সে এবার খুব ধীরে প্রশ্ন করলেন, 
' কিভাবে অরু? '
হার্টবিট দীর্ঘ সময়ের জন্য স্তব্দ হয়ে গেলো যেন। সে সদা আমার নাম ডাকেন না। মাসে একবার হবে এমন। সে নিশ্চয়ই ড্রাংক। খেয়েছেন। সেদিন জন্মদিন থেকে ফেরবার পথেও, এভাবে কথা বলছিলেন। 
' আপনি হাবিজাবি গুলো আবার খেয়েছেন? '
' তো? তোকে খাব? '
আমার ফেইস গরম হয়ে উঠছে। সে কখনও এভাবে কথা বললেনি। হঠাৎ এধরনের ব্যবহার আমার ঠিক হজম হচ্ছেনা। পেট মুচড়ে আসছে। কি হয়েছে তার?
' খেতে দিবি তোকে? '
লজ্জায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি। এগুলো খেলে নাকি মানুষের মাথা ঠিক থাকে না, তা শুধু শুনেছিলাম। আজ তা সরাসরি শুনছি৷ সে সত্যি আর হুঁশে নেই। মাথা ঠিক নেই তার। থাকলে নিশ্চয়ই এগুলো বলতেন না। 
' তুই তো দিবিনা। তুই পারিস, আমার থেকে ভাগতে। কাছেই আসতে চাস না। '
মনে হচ্ছে, আমার সামনে এক নতুন তন্ময় ভাই। যাকে আমি আগে কখনও এভাবে দেখিনি। আচ্ছা, সে কী সারাজীবন এমন মাতাল থাকতে পারবে? সে এমনই থাকুক। দুষ্টু থাকুক। গোমড়ামুখো থাকার প্রয়োজন নেই।
এখন ভয়ংকর এক ইচ্ছে জাগছে। সেটা হচ্ছে তাকে দেখার। এই মুহুর্তে তাকে কেমন দেখতে লাগবে? নিশ্চয়ই অদ্ভুত সুন্দর? খুবই কিউট ? সে তো এভাবেই মারাত্মক দেখতে। এখন নিশ্চয়ই কাউকে পাগল করার মতো, দেখতে লাগছেন৷
এই মুহুর্তে তাকে দেখতে চাই। খুব করে চাই। 
সে ডাকলেন,
' অরু? '
মুখ দিয়ে যেন, আনমনে চলছে , 
' হু? '
' আমাকে কেমন লাগে তোর? ভালো লাগে? '
বুকে তীব্র স্রোত বইছে। এই স্রোত থামবে বলে মনে হয়না। 
কি বলব? আমার তো তাকে ভালো লাগে? না মানে। কেমন লাগে? আহ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ধুকপুক বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। সে কি আমাকে আজ মারার প্ল্যান করেছে? 
' অবশ্যই আমাকে তোর ভালো লাগে৷ লাগবেনা কেন? না লাগলেও লাগাতে হবে। এই পৃথিবীতে তোর জন্য শুধু আমি। তাই না? হ্যাঁ। '
আর কিছুক্ষন হলে আমি মারা যাব। দ্রুত বললাম,
' আপনি কোথায়? '
' রুমে। '
' ঘুমিয়ে পড়ুন। গুড নাইট। '
সে মিনমিনিয়ে ডাকলেন,
' অরু। '
' জ..জ্বি। '
তার জবাব নেই৷ নেই কোনো আওয়াজ। শুধু তার শ্বাস নেওয়ার শব্দ। সে কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? আমি ডাকলাম, 
' হ্যালো? '
কথা নেই। ঘুমিয়ে পড়েছেন হয়তো। ফোন বুকে চেপে বসে রইলাম৷ তীব্র শ্বাস নেওয়ার প্রচেষ্টার মাঝে, ঠোঁটে আমার বড় হাসি। মন এখনও শান্ত হয়নি, খুবই আওয়াজ করছে। বালিশে মুখ গুঁজে ফেললাম। 
' সে আমাকে সত্যি পছন্দ করেন। আমাকে নিয়ে ভাবেন। তন্ময় ভাই এই বোকা অরুকে পছন্দ করেন। আমাকে পছন্দ করেন। '
ভাবতেই বুকের স্রোত দ্বিগুণ বেগে বইছে। 

ভোরবেলা বড় মা'র ডাকে ঘুম ভাঙলো। চারপাশে চোখ বোলালাম। 
বড় মা তাড়া লাগালেন, 
' যা মুখ ধুয়ে আয়। তোর পছন্দের বড় চিংড়ি রান্না করেছি। নিজে হাতে খাইয়ে দিব। '
আমি দ্রুত ফ্রেস হলাম। চিংড়ি আর বড় মা'র হাত। একদমই মিস দেওয়া যাবেনা৷ বড় মা খাওয়াতে বসে পড়লেন। আসলেই তার রাঁধার কোনো জবাব নেই। খুবই সুন্দর রাঁধতে জানেন সে৷ 
' দারুণ হয়েছে? '
' তাই? সব দারুণ লাগে? '
' তুমি মানুষটাই দারুণ। '
' হয়েছে রসিকতা। তাড়াতাড়ি শেষ কর। কাজে আছে বহুত।'
 খাওয়া শেষ হতেই, বড় মা আমার মাথা ছুঁয়ে দিলেন। মিষ্টি কন্ঠে বললেন, 
' মন খারাপ করবিনা। হু? সুমনা যা বলেছে, তা তো আর সত্যি হয়ে যাচ্ছেনা। তুই আমাদের মেয়ে। আমরা জানি আমাদের মেয়ে কেমন। 
ঠিকাছে? ',
আমি হাসলাম, 
' হ্যাঁ। '
' লক্ষি একদম। যাচ্ছি আমি। '
বড় মা চলে গেলেন। আমি দ্রুত ফোন ধরলাম কাল রাত্রের সব তাহলে সত্যি। ভালোলাগায় শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। অনেক সকাল। এখনও নিশ্চয়ই তন্ময় ভাই ঘুমিয়ে। সে'তো আটটার আগে উঠবেন না৷ একদম সময় মতো বিছানা ছাড়বেন। 

দীপ্ত এসেছে। হাতে ড্রয়িং বুক।
' আজ এমন পিকচার আর্ট করেছি, তুমি দেখলে, এখান থেকে লাফ মেরে বুড়িগঙ্গায় চলে যাবে। '
  এহ? এটা কোনো কথা? আমি বললাম,
' তাই নাকি? দেখি। '
ও বাঁকা হাসলো। আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখালো। সাথে সাথে আমার চেহরা লালে পরিবর্তন হয়ে গেলো । এই ফাজিল ছেলে। 
ও সেই রেস্টুরেন্টের ছবিটি এঁকেছে। যেটা তন্ময় ভাইয়ের লকস্ক্রিনে৷ 
' দীপ্তর বাচ্চা। এটা আমাকে দে। '
' উঁহু। সবাইকে দেখাব৷ '
' ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। '
ভেঙিয়ে ছবিটা নিয়ে নিচে চলে যাচ্ছে। ও যদি সত্যিই দেখায় কি হবে? ছেলেটা তো আস্ত অবাস্তবিক। 
.
.
.
চলবে..................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন