এমন প্রশ্নের কী জবাব দিব? সত্যি কি এই প্রশ্নের জবাব দিতে আমি প্রস্তুত? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তার প্রতি আমার অনুভূতি রয়েছে। যার নাম আদৌও আমি খুঁজি'নি। সে হঠাৎ এক নতুন পৃথিবী আমার সামনে খুলেছেন। যার অস্তিত্ব যে ছিলো একদমই জানতাম না। না জেনেও সেই পৃথিবী ভ্রমণ শুরু করেছি। এই ভ্রমণ আর শেষ না হোক। একদম শেষ না হোক। একটু ধীর কন্ঠে বললাম,
' যদি না বলি? '
বলেও আমি ঢোক গিললাম। থাপ্পড় না মারলেই হচ্ছে। সে ভ্রু উঁচু করলেন,
' আচ্ছা। দেখি না বলে দেখা। '
' অবশ্যই আমি না করতে পারবো। আমার ডিসিশন। '
' অবশ্যই। আম ওয়েটিং। '
সে সত্যিই অপেক্ষা করছে না শোনার জন্য? আমি চেষ্টা করলাম। কিন্তু না'টা মুখে আসছেই না। তাকে না করার ক্ষমতা কী আমার নেই? আমি আঁড়চোখে অন্যদিকে তাকালাম,
' এভাবে তাকিয়ে থাকলে হচ্ছেনা । '
' এটা কেমন কথা। না'তো আমার মুখের উপর বলতে হবে। চোখে চোখ রেখে। কামওন ইউ ক্যান ডু ইট। '
গোমড়া মুখে বললাম,
' না শোনার জন্য এমন উতলা হলেন কেন? '
সে হাসলেন।
' কারণ তুই পারবি না। '
' এতো আত্নবিশ্বাস ভালো না। '
' ভেঙে দেখা আত্নবিশ্বাস। '
মাথা নিচু করে রইলাম। আমিতো সত্যিই পারবো না। সে আমার গাল টেনে ধরলেন। তারপর ধীরে আমার নিশ্চুপ ঠোঁটে তার আঙুল
ছোঁয়ালেন,
' জবাব নিয়ে সামনে আসবি আমার। '
চুল ছাড়লেন এবং কাঁপতে থাকা আমাকে রেখে চলে গেলেন।
কী ধরনের শয়তান এটা? জবাবের জন্য লাফাচ্ছে। সে কী আমাকে প্রপোজ করেছে, যে জবাব দিব। আজীব। সকলের সামনে বলেছেন বিয়ের কথা। আর আমাকে? বিয়ে করবি? এটাই তার প্রপোজ?
আমাকে পছন্দ করেন নাকি ভালবাসেন সেটাতো বলেননি। হুহ। আমিও কিচ্ছু জবাব দিবনা। যাব ও না সামনে।
বাড়িতে আজ ভিন্ন আমেজ। সকলে এদিকসেদিক ছোটাছুটি করছে৷ কেউ ঘর পরিষ্কারের কাজে, তো কেউ রান্নাঘরে। ছোট চাচী সবকিছু পরিবর্তন করছেন। চাদর, পর্দা আরও হাবিজাবি। বড় মা রান্নাঘরে। মা কাটাকুটি করছেন। রুবি আপু ঘুম থেকে উঠে রূপ চর্যায় অত্যন্ত ব্যস্ত। দীপ্ত ড্রয়িংরুমে টিভি দেখছে। আমিও সেখানে গেলাম। আলগোছে পা তুলে বসে পড়লাম। কোলে বালিশ চেপে দীপ্ত'কে হুকুম দিলাম,
' যাহ, আইসক্রিমের বক্স নিয়ে আয় ফ্রিজ থেকে। '
ও ভ্রু কুঁচকাল,
' আইসক্রিম ফ্রিজে? পরশু না শেষ হয়ে গেলো? '
আশপাশ তাকিয়ে বললাম,
' তন্ময় ভাই'কে দেখেছি রাত্রে আনতে। '
দীপ্ত দৌঁড়ে গেল। সাথে চামিচ আর বক্স আনলো৷
দুজন বেশ খাচ্ছি আর মুভি দেখছিলাম। মাহেশ বাবু'র ভারাত চলছে। আহা, যখন প্লেন থেকে নামার সিন'টা আসে। আমার মনের দরজা সবদিক দিয়ে খুলে যায়। তারপরের অ্যাকশঅন গুলোর কথা আর কী বা বলব, লা'জাবাব। একদম লা'জাবাব। আঁড়চোখে দেখলাম, চাচ্চুরা, আব্বু, রবিন ভাইয়া আর তন্ময় ভাই আসছেন।
চাচ্চু আব্বু নিজেদের রুমে চলে গেলেও, তন্ময় ভাই গেলেন না। সে অপজিট সোফায় পা তুলে বসলেন। ফোনে কি যেন টেপাচ্ছেন। অথচ, সে আসায় এখন আমার আর মাহেশ বাবুর থামাক্কা এন্ট্রি'তে মন নেই। আঁড়চোখে তাকে দেখতে ব্যস্ত। কিছুতেই পছন্দের মুভি'তে আর মন বসাতে পারলাম না। এটা কোনো কথা?
একসময় আমার আঁড়চোখে তাকানো হাতেনাতে ধরে ফেললেন সে। আমি দ্রুত টিভির দিক ফিরলাম। লজ্জায় মুখে গরম ভাব।
দীপ্ত বলল,
' মুভি দেখবে নাকি তন্ময় ভাইকে টিভির সামনে আনব? '
এবার লজ্জায় বোবা বনে গেলাম। মানইজ্জত আর রাখল না এই
ছেলে৷ তন্ময় ভাই বাঁকা হাসলেন। তারপর উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ ঠাঁই বসে রইলাম। তারপর বালিশ দিয়ে দীপ্ত'কে মারলাম। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম,
' ফাজিল। দাঁড়া আজ চাচী'কে বিচার দিব। '
' এহ। তুমি করলে দোষ নেই, আমি বললে দোষ। '
কী বেদ্দপ হয়েছে ছেলেটা। চোখ-মুখ অন্ধকার করে বসে রইলাম।
আর তাকাবা না এই তন্ময়ের দিক। জাহান্নামে যাক। আর তাকাবা না। একদম না।
গোসল শেষ করে বিছানায় বসলাম। আজ তন্ময় ভাইয়ের দেওয়া কামিজের মাঝে একটা পড়েছি। খুবই সুন্দর। আর আমাকে মানিয়েছেও। আয়নার সামনে কতক্ষণ দুললাম। ভাবলাম একটা ছবি তুলা যাক। নাহ। ছবি তুলে কী হবে? ধুর।
ফোন রেখে রুমের বাহিরে উঁকি দিলাম। কেউ নেই।
কিছুটা এগোলাম। হ্যাঁ, তন্ময় ভাই রুমে। কী করছে? নিশ্চয়ই গোসলে ঢুকেছে। আঁড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে, তার রুমে উঁকি দিলাম। ওইতো দাঁড়িয়ে। গোসল করে ফেলেছে। চুল মুছছে তাওয়ালে। তখনই পেছন থেকে কেউ আমার ঘাড়ে টোকা দিল। ভয় নিয়ে পেছনে ফিরলাম। দীপ্ত। এই বিয়াদপ ছেলে। বুকে ফুঁ দিলাম। এখনই আমার জান উড়ে যাচ্ছিলো। গলা শুঁকিয়ে আসছে।
হঠাৎ দীপ্ত ধাক্কা দিলো ভেতরের দিক। পরপরই চেঁচাতে লাগলো,
' অরু আপু, তুমি উঁকি দিয়ে কি দেখছিলে। '
দৌঁড় দেওয়ার ও রাস্তা নেই। তন্ময় ভাই এগিয়ে আসলেন। আমি আমতাআমতা করে বললাম,
' উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলাম না। ভাইয়া আছে নাকি দেখছিলাম। আ..আসলে ফোনে প্রব্লেম দিচ্ছিলো। '
তন্ময় ভাই আমার দিক তাকিয়ে। কিছুক্ষণ মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলেন। হয়তো বিশ্বাস করেছেন আমার কথা। বললেন,
' ফোন'টা নিয়ে আয়। '
দীপ্ত হাসছে,
' মিথ্যে বলছে। '
এই শয়তান ছেলের জন্য শান্তি নেই বাড়িতে। দ্রুত সেখান হতে চলে এলাম। এটাকে প্যাকেট করে, পানিতে চুবাতে হবে। আমাকেও ছাড়ছে না। কতবার লজ্জাকর পরিস্থিতি তে ফেলল?
কী ভাবছেন সে?
আমি আর বেরোলাম না। কী বেরোবো? ফোন তো ঠিকাছে।
আমাকে দেখলেই ফোন দেখতে চাইবেন। তখন?
ইব্রাহিম ভাইয়ের পরিবার আসলো বিকেল দিকে। মোট ছয়জন। ইব্রাহিম ভাইয়ের মা-বাবা, ছোট ভাই, মামা আর মামার মেয়ে। তার ছোট ভাই আর মামার মেয়ে আমাদের বয়সী। মিনিটে আমার সাথে মিশে গেল। ব্যবহার মারাত্মক চমৎকার। কথা বলার ভঙ্গি খুবই সুন্দর। তার ছোট ভাই'টার নাম হচ্ছে মাহিম আর মামার মেয়ের নাম রাইসা। রাইসা অনেকটা চাইল্ডিশ। কথা'তেই বোঝা যাচ্ছে। আর মাহিম খুবই ম্যাচুয়ার্ড। শান্ত কন্ঠ। আর বড্ড মিশুক।
রাইসা দীপ্ত'কে বেশ পছন্দ করলো। ঝাকড়া চুলগুলো দেখিয়ে বলল,
' কি কিউট দেখাচ্ছে। তাই না?'
মাহিমের জবাবা,
' ছেলেদের কিউট বলতে হয়না। '
' ও বাচ্চা এখনও। '
' কীসের বাচ্চা? তুই না বাচ্চা। '
আবার এলো। তাহলে কী সব পরিবারে কাজিনদের ঝগড়া লেগেই থাকে? কোথাও শান্তি নেই।
রাইসা, মাহিম ওদের নিয়ে এলাম উপরে। রুবি আপু ওদের দেখে হাসলেন। বিছানায় বসিয়ে সে আমার সাথে দাঁড়ালেন। রাইসা কিটকিটিয়ে হাসছে,
' আজ তো ইব্রাহিম ভাই গ্যায়ি কামসে। কী সুন্দর লাগছে ভাবীকে। '
রুবি আপু লজ্জা পেলেন। ' যাহ ' বলে সে অন্যদিকে ফিরে গেলেন। আমি হাসলাম। আসলেই এই অনুভূতি খুব সুন্দর। অদ্ভুত সুন্দর।
ইব্রাহিম ভাইরা গেলেন রাত দশ'টার দিক। তাদের আর আমাদের বাড়ির গুরুজনদের রিয়েকশনে বোঝা যাচ্ছে, তারা মেনেছেন। কিন্তু এখনও সঠিক জানা নেই। আমিতো ছিলাম না নিচে। যাও একবার শোনার জন্য নিচে নেমেছিলাম। তন্ময় ভাই ধমকে পাঠিয়ে দিলেন।
রুবি আপু বিছানায় বসে।
' হ্যাঁ নাকি না? কিছু বলেছে? '
আমি বললাম,
' না কেন বলবে? '
' আমার ভয় হচ্ছে। তন্ময় কই? '
' আমি জানি? '
আপু নিজেই তন্ময় ভাই'কে কল লাগালেন। তাকে বললেন উপরে আসতে। সে আসলেন খানিকক্ষণ পর। রুবি আপু অস্থির কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
' কী কথা হলো? '
' কী হবে? '
' উফ। তন্ময়। '
সে হাসলেন হালকা। রুবি আপুর মাথায় হাত ছোঁয়ালেন।
' এতো তাঁড়া চলে যাওয়ার? '
ব্যস। রুবি আপু মন খারাপ হয়ে গেলো। তন্ময় ভাই বললেন,
' কিছুদিনের মাঝে বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে। '
দীপ্ত তো লাফাতে শুরু করেছে।
' এই, বিয়ে খাবো। '
ওয়াও। তাহলে আমাদের বাড়ি বিয়েবাড়িতে খুব জলদি রুপান্তরিত হচ্ছে।
.
.
.
চলবে..................................