নয়নতারা - পর্ব ১৭ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


এক ঝাঁক বিষন্নতার ছাপ চেহারায় নিয়ে নাফিজ সাইকেল ঘুরিয়ে নিল।রওনা হলো কুয়াটারে র উদ্দেশ্যে।

যাবার সময় যতদূর অবধি দেখা যায় ততদূর অবধি বার বার পিছু ঘুরে দেখছিল নাফিজ।যদি একবার তারার দেখা পায়।

কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললো লতিফা।

----কি রে মুখটা এরকম পেঁচার মতো করে রেখেছিস কেন?
----কই মা।নাতো।
----ঠিক দেখতে পাচ্ছি।তুই তো বেশ হাসিখুশি মুখ নিয়েই বের হয়েছিলি।তাহলে?
----কিছু না।তুমি তৈরী হয়ে নেও।নাস্তা করে আমরা সিএম এইচ এ যাব।
----আচ্ছা চল।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পোশাক ঠিক করছে নাফিজ।যেহেতু আউটপাশ নিয়েছে তাই ইউনিফর্ম না সাধারণ পোশাকেই তৈরী হচ্ছে সে।

----আপনি কেন এলেন না তারা?আমার সারাদিন বিধ্বস্ত করার কি খুব দরকার ছিল?আমাকে এভাবে হতাশ করে কি আপনি ঠিক করলেন?আপনি যে আমার লেডি লাক হয়ে গেছেন।আপনি বোঝেন না।

আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল নাফিজ।

----বুঝবেন বা কি করে?আমি কি বোঝার মতো কিছু করেছি?কিন্তু আমি কি করব?আমার কি সত্যি বোঝার মতো কিছু করা উচিত?

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন ছুড়েছে অথচ নিজেই সেই প্রশ্নের উওর সাজাতে পারছে না নাফিজ।

;;;;;

----স্যার এবার আশা করছি আর সমস্যা হবে না।ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি।
----আপনাকে ধন্যবাদ।আসলে মেয়ে টা কাল রাতে এতো ছটফট করছিল ব্যথায়।
----আসলে স্যার এতো বড় অপারেশন হয়েছিল তারার পায়ে এজন্য সামান্য আঘাত টাও ওর জন্য অনেক বড় কিছু।আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছি।আবার যদি ব্যথা বাড়ে তবে ইনজেকশন টা দিলেই কমে যাবে আশা করি।
----আচ্ছা আসি তাহলে।
----ওকে স্যার।

ডাক্তারের সাথে কথা বলে বাইরে বেরিয়ে এলেন মেজর আব্রাহাম।

----আফা দেহেন ঐ ফুলখান কততো সুন্দর।
----হ্যাঁ চলো ওখানে একটা ছবি তুলি।
----চলেন চলেন।

গাসু তারা কে নিয়ে সামনের ফুলের বাগানে ছবি তুলছে।মাহমুদা বেগম দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।

----আহ।মেয়েটাকে নিয়ে পারিনা।এতো বড় হয়েছে তাও দুষ্টুমি গেল না।কাল কতো ব্যথা পেয়েছে।ইনজেকশন দিয়ে সুস্থ হতেই ব্যস ওনার দুষ্টুমি শুরু।তারা তারা,, ,,,।

সিএমএইচ এর একদম সম্মুখে বিশাল বাগানের মতো।অনেক ধরনের ফুলগাছ খুব সজ্জিত ভাবে লাগানো।মধ্যিখানে একটা বিশাল গোল চৌবাচ্চার মতো।ভেতরে একটা ভাস্কর্য এর মতো।পানিতে ভাসমান শাপলা,শাপলাটিকে ঘিরে আছে একটি সাপ।কমবাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল(সি এম এইচ) এর লেগো এটা।শাপলার চারপাশে পানির ফোয়ারা বইছে।ভেতরে কিছু মাছ ছেড়ে দেওয়া।পানির স্রোতের তালে তালে মাছগুলো খেলছে।

উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে গাসু আর তারা সেই দৃশ্য দেখায় ব্যস্ত।এপাশে মাহমুদা বেগমের কথা তাদের কানে আসছে না।

----আফা দেহেন ঐ মাছখান, এক্কেরে নাগিন ড্যান্স দিতেছে।
----আহ গাসু।তুমি কোথ থেকে কি এনে মিশাও বুঝি না।এখন কথা বলো না আমাকে ভিডিও করতে দেও।

আব্রাহাম সাহেব বেরোতে যাবেন হঠাৎ করেই বেখেয়াল বশত কারোর সাথে ধাক্কা লাগল তার।

----আহ সরি সরি।
----স্যার আপনি।
----আরে নাফিজ।

আব্রাহাম সাহেব সামনে তাকিয়ে দেখেন যার সাথে তার ধাক্কা লেগেছে তিনি আর কেউ নন ক্যাপ্টেন নাফিজ।নাফিজ ও বেশ অবাক হয়েছে আব্রাহাম সাহেব কে দেখে।

----স্যার আপনি সি এম এইচ এ?
----আমার ও তো সেই একি প্রশ্ন।তুমি এখানে?
----স্যার আমার মা অসুস্থ।তাই আজ আউটপাশ নিয়েছিলাম।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লতিফার দিকে ইঙ্গিত করলো নাফিজ,

----স্যার ইনি আমার মা।মা উনি মেজর আব্রাহাম স্যার।
----আসসালামু আলাইকুম।
----ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আব্রাহাম সাহেব লতিফার সাথে সালাম বিনিময় করে নাফিজের দিকে তাকালেন।

----স্যার আপনি এখানে?আপনি কি অসুস্থ?
----না আমি না।আমার মেয়ে তারা।
----তারা!কি হয়েছে ওনার?

তারার কথা শুনে যেন বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো নাফিজের।জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে নাফিজ আব্রাহাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে।

----কাল রাতে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছিল।আর তারপর পায়ে ব্যথা।তাই সকালেই এখানে এনেছি।
----ওহ।এখন কি অবস্থা ওনার?
----এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।ইনজেকশন দিয়েছে ডাক্তার।সে দিব্যি টুকটুক করে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
----ওহ।
----তোমার কাজ শেষ?
----হ্যাঁ স্যার।মাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসের জন্য তৈরী হব।তারপর যাব।
----চলো আমাদের সাথে চলো।
----না স্যার থাক আপনি,,,,
----আরে চলোতো।

নাফিজ আর কথা না বাড়িয়ে লতিফা কে নিয়ে আব্রাহামের সাথে বের হলো।মুখে না বললেও তার ভেতর টা যে হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত ই দিচ্ছিল এতো ক্ষন।

----তারা কোথায় মাহমুদা?

আব্রাহাম সাহেবের গলা শুনে পাশে তাকালো মাহমুদা বেগম।নাফিজ আর লতিফাকে কুশল বিনিময় করে আবার আব্রাহাম সাহেবের দিকে তাকালেন।

----আর বলো না।তোমার মেয়ে কি কম দুষ্টু।যেই পা ভালো হয়েছে ব্যথা কমেছে সেই শুরু হয়ে গেছে।
----কেন?কোথায় গেছে ও?

মাহমুদা বেগম আব্রাহাম সাহেব কে সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করলেন।নাফিজ ও মাহমুদা বেগমের ইশারা অনুযায়ী সামনের দিকে তাকালো।

সামনের ছোটো রাস্তা দিয়ে ক্রাচ নিয়ে ধীরে ধীরে হেটে আসছে তারা।পাশে গাসু।

----নাফিজ ঐ মেয়েটা কে রে?
----কোন মেয়ে টা?
----ঐ যে হাতে ক্রাচ।
----স্যারের মেয়ে তারা।

লতিফা এক নজরে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।তারার দিকে সে মহিলা হয়েও এক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

----এতো সুন্দর একটা ফুটফুটে মেয়ে।হায় আল্লাহ!এর পা যদি ঠিক থাকতো আজ!এ ঠিক যেন আমাদের মিষ্টির মতো।একদম পরী।

লতিফা মনে মনে এসব ভেবে চলেছে।এদিকে তারা কে দেখে নাফিজের মনে আরেক ঝড় বইছে।

----এতো সংযোগ কেন আমাদের তারা?আপনাকে যেখানে খুঁজি সেখানে না হলেও অন্য খানে আপনি ঠিক আমার মনের আঙিনায় এসে উপস্থিত হন।কেন এতো সংযোগ আপনার সাথে আমার?কৈ দু একদিন তো কথা হয়েছে।আর দূর থেকে দেখা!সেটি তো আমার এক তরফা।তবু কেন আপনার থেকে দূরে যেতে মন ছোটে না আমার।

এক দৃষ্টিতে তারার দিকে তাকিয়ে নাফিজ মনে মনে ভাবনার মালা গেঁথে চলেছে।

----আফা ঐ দ্যাহেন।এই সেই ফুলচোর অফিসার ডা না।

গাসুর কথা শুনে সামনের দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করলো তারা।

----ক্যাপ্টেন!
----আফা এই ফুলচোর ডারে আইজকে তো সেই হিরো লাগতেছে।সাদা শার্ট কালা প্যান্টালুন।
----আহ!গাসু আবার সেই পেন্টালুন বলছো।
----যাই কন আফা ফুলচোর ডারে এক্কেরে হ্যান্ডলুম লাগতেছে।
----হ্যান্ডলুম!সেটা আবার কি?
----ঐ তো ঐ যে বলে না।

তারা একটু ভেবে উওর দিল,

----ও হ্যান্ডসাম।
----হ ঐখান।
----তুমি জীবনে শোধরাবে না।

দেখতে দেখতে তারা নিজের মা বাবার সামনেই চলে এলো।

----বাপি।
----মা তুমি একটু সুস্থ হয়েছে।এর মধ্যে এতো হাঁটাহাটি কেন করছো?
----ঐ একটু তে কিছু হবে না।গাসু তো ছিল সাথে।
----তারপরেও।এই দেখো নাফিজের সাথে দেখা।

নাফিজ কে দেখে তারা সালাম দিল,

----আসসালামু আলাইকুম ক্যাপ্টেন।
----ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছেন?
----আলহামদুলিল্লাহ।
----আপনি নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?
----ঐ একটু ছিলাম।এখন ঠিকাছি।

লতিফা দাড়িয়ে দাড়িয়ে তারার প্রতি নাফিজের দৃষ্টি দেখছে।একটা কথা আছে,"সব ফাকি দেওয়া যায়,কিন্তু মায়ের চোখ না"।

----ইদানীং শুধু আরেক পরী আরেক পরী করে নাফিজ।আচ্ছা এই কি সে?

নিজের প্রশ্নের উওর ভেবে চলেছে লতিফা।

;;;;;

----কেমন আছেন ক্যাপ্টেন নাফিজ?
----জি ভালো।

তানহার প্রশ্ন শুনে একটু সৌজন্য মুলক উওর দিল নাফিজ।অফিসে এসেই তানাহাকে নিজের কেবিনে দেখে যথেষ্ট বিরক্ত সে।কিন্তু ঐ যে সৌজন্য বোধ।তাই চুপ করে আছে নাফিজ।

----আপনাকে কিছু বলতে চাই আমি।
----বলুন।
----জানি আপনার হয়তো বিশ্বাস হবে না।এমনকি আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি।কিন্তু পরে দেখি সব মিলে গেছে আমার সাথে।
----কি বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা বলছেন আপনি?
----আমিই সেই মিষ্টি ক্যাপ্টেন নাফিজ।যাকে এতো বছর ধরে আপনি খুঁজে চলেছেন।
----কিহ!
----হ্যাঁ এটাই সত্যি।আমি সেই দিন থেকে আপনাকে বলার চেষ্টা করছি কিন্তু আপনাকে বলার সুযোগ পাইনি।আমি আপনার সেই মিষ্টি নাফিজ।যাকে নয়নতারা ফুল দিয়ে আপনি সাজাতে চেয়েছিলেন।

;;;;;

তানহার কথা শুনে নাফিজের কপালে ভাঁজ পড়েছে।বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে।নাফিজ তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না সত্যি সত্যি কি তবে মিষ্টিকে সে অবশেষে ফিরে পেলো।

----ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনি কি শুনছেন আমার কথা?
----শুনছি।
----আমিই আপনার সেই মিষ্টি নাফিজ।
----সত্যি আপনি ই মিষ্টি!
----হ্যাঁ আমিই মিষ্টি।

তানহার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলো নাফিজ।না তেমন তো বোধ হচ্ছে না।হচ্ছে না কোনো অনুভূতি।তার বেবি সিনড্রেইলা যে চরম সুন্দরী ছিল তার তো এখন আরো সুন্দর কোনো পরী হওয়ার কথা।মিলছে না তো।

----আমি সেদিন ওরিয়েন্টেশনে আপনার কথা শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম।আমি তো এটাই ভেবেছিলাম সত্যি সত্যি কি এতো অপেক্ষার পর আমি আমার নাফিজ ভাইয়া কে পাব।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।
----সব মিথ্যা ও একটা সত্যি থাকে।আপনি কি জানেন ক্যাপ্টেন তানহা?মিথ্যার পরিচয় দিতে গিয়ে আমরা কখন নিজেরাই যে সেই মিথ্যার সত্যি টা কে সামনা সামনি প্রকাশ করে নেই আমরা নিজেরা ও বুঝতে পারিনা।একে বলা যায় একদম সাদামাটা গ্রাম্য ভাষায় গানজাখুরে কথা।তাও যে সে গানজা না ভুনা করা লাল রঙের মাঝে আকাশি শ্যাডো দেওয়া পিংক কালারের গানজা।কোল্ড ড্রিঙ্কসের সাথে খেলে হয়তো আরো জমবে কি বলেন ক্যাপ্টেন তানহা।

তানহার দিকে তাকিয়ে নাফিজ এক রহস্যময়ী হাসি দিল।

;;;;;

----আফা আপনে খাইবেন না?
----খাব।এখন ইচ্ছে করছে না।
----আফা হেই কথা বলেন না।ম্যাডাম জানলে আমাকে আস্তো রাখবে না।একদম নুন তেল ছাড়া কাচা ভুনা করে খাইবে।
----হা হা গাসু কি যে বলো না তুমি।
----ওষুধ খাইবেন কেমনে?
----একটু পরে খাই গাসু।
----আইচ্ছা।

গাসু খাবারটা টেবিলের ওপর রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে নিচে চলে গেল।

তারা জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।বিকেলের আংশিক রোদ জানালা ভেদ করে বাকা হয়ে ঘরে ঢুকেছে ।তারার দৃষ্টি বাড়ির সামনের বাগানের দিকে।তাও ঠিক নয় তার থেকে একটু দূরে কোনাকুনি ঐ গাছটার দিকে।মোটাসোটা মেহগনি গাছ।বেশ ঝাপটানো।অনেক লম্বা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন গাছের বয়স।গাছটার পাশে আরো অনেক গাছ ই রয়েছে।কিন্তু তারার দৃষ্টি একমাত্র ঐ গাছটার দিকে।নিচের দিকে ঢালু হয়ে যাওয়া ঘাসের দিকে।

----সে কি আজ ও এসেছিল?অপেক্ষা করেছিল কি?কিন্তু কেন আসে সে এখানে?কিসের অপেক্ষা তার?কার জন্য?

;;;;;

নাফিজের কথা শুনে তানহা নিজেই এবার ঘেমে যাচ্ছে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তানহার। ঢোক গিলছে সে বারবার।

----আপনি এতো ঘামছেন কেন ক্যাপ্টেন তানহা?
----কই না তো।
----তানহা আপনি চাকরি তে আমার সেম ব্যাচেই ছিলেন ট্রেনিং এ তাই না।
----হ্যাঁ।
----যতদূর জানি আমার বয়স ২৯ বছর।আপনি সর্বোচ্চ গেলে আমার থেকে দু তিন বছরের ই ছোট হতে পারেন তাই না?
----হ্যাঁ কেন?
----এটাই তো আপনার মিথ্যার সত্যি ক্যাপ্টেন তানহা?
----মানে!
----আমার মিষ্টির যখন পাঁচ বছর বয়স আমি তখন নবম শ্রেনীতে পড়ি।আমার আর ওর বয়সের পার্থক্য অনেক।দশ বছরের।আর এখন যদি আমার বয়স ২৯ হয় তো ওর বয়স ও ১৯ হবে।বুঝতে পারছেন তো?

তানহা আরো ঘেমে যাচ্ছে নাফিজের কথা শুনে।

----এখন ওর যতদূর ধারনা করি এইচএসসি লেভেল আই মিন কলেজে পড়া উচিত।তো আমার মিষ্টি কলেজে না পড়ে রাতা রাতি কি এতোটাই বড় হয়ে যাবে যে ট্রেনিং শেষ করে আরো কয়েক বছর চাকরি করে প্রমোশন পেয়ে সে একদম ক্যাপ্টেন হয়ে যাবে!কি হলো কথা বলুন।

তানহা মাথা নিচু করে বসে আছে।তানহাকে চুপ থাকতে দেখে নাফিজ টেবিলে জোরে বাড়ি দিল।তানহা কেঁপে উঠলো।

----এখানে এসে ধরেই দেখছি আপনি শুধু আমার কেবিনের সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করেন।আর এই নিয়ে দুদিন হলো একদম কথা বলতে চলে এসেছেন।ভদ্রতার খাতিরে এতোদিন কিছু বলিনি তার মানে এই না যে কিছু বলব না।আপনার সাহস কি করে হয় আমার মিষ্টিকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলার?
----আমি,,,,,
----আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।কেন এসব করছেন বলুন?
----আপনি বললেন না সব মিথ্যার পেছনে ও একটা সত্যি থাকে।এর ও একটা সত্যি আছে ক্যাপ্টেন নাফিজ।
----কি সত্যি?
----এটা সত্যি যে আমি ঐ মিষ্টি না।কিন্তু আমার অতীত টি মিষ্টির থেকে কম না।জানেন আমি যখন ক্লাস টু তে পড়ি আমার মা মারা যায় আমার ছোট বোনকে জন্ম দিতে গিয়ে।জানেন যেদিন আমার মা মারা যায় তার পরের দিন ই আমার বাবা নতুন বিয়ে করে আনে।আমি ভেবেছিলাম হয়তো নতুন মা ও আমাদের মায়ের মতো আদর করবে।কিন্তু না তার উল্টো হলো।দিন দিন নতুন মায়ের অত্যাচার বাড়তেই লাগলো।কৌটোর দুধ শেষ হলে বাবা দুধ ও এনে দিত না আমার বোনের জন্য।ওকে কতো ভাতের মাড়, চিনির পানি এসব খাইয়েছি।বাবা যেন আমাদের ভুলেই গেছিল।এরকম করতে করতে আর সহ্য করতে পারি নি।আমার মামা এসে আমাদের নিয়ে যায়।সেখানে কদিন যেতে না যেতেই মামীর অত্যাচার।মামী মারতো না কিন্তু প্রচুর খাটাতো।আধপেটা হয়ে কতো থেকেছি।অনেক কষ্টে এইচএসসি পরীক্ষার র পর অফিসার পদের পরীক্ষা তে অংশগ্রহণ করি।টিকে যাই।আর তারপর,,,,,,জানেন ঐ যে বাবার কাছ থেকে এসেছি এরপরেও আজ অবধি একদিন ও বাবা খোঁজ নেয়নি আমাদের বেচে আছি নাকি মরে গেছি।

তানহা কেঁদেই দিয়েছে নাফিজের সামনে।নাফিজের ও বড্ড খারাপ লাগছে তানহার কথা শুনে।

----এজন্য প্রথম দিন আপনার কথা শুনে মনে হয়েছিল আমি যেন অনেকটা আমার প্রতিচ্ছবি ই দেখছি।
----আপনার অতীত শুনে খারাপ লাগল ক্যাপ্টেন তানহা।কিন্তু আপনি যেটা করেছেন সেটা আমি ক্ষমা করবো না।এটাই শেষ সুযোগ।এরপর যদি আপনি এমন কিছু করেন আমি ওপর মহলে জানাতে বাধ্য হব।
----আপনি এমন করবেন না।এই চাকরি টা করে আমি আর আমার বোন সুখের মুখ দেখেছি।
----তাহলে আর কোন কথা না ।বেরিয়ে যান।

তানহা আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।নাফিজ বসে বসে আরেক চিন্তা করছে।

----সত্যি তো।তানহাকে তো না হয় আমি লক্ষ্য করেছি।এরকম তো যে কেউ এসে আমার কাছে নিজেকে মিষ্টি বলে দাবি করতে পারে।

নাফিজের মনে হঠাৎ অন্য চিন্তা জাগলো।

----তারা কেমন আছে এখন?

;;;;;

রাত পেরিয়ে গেছে।সূর্য উঁকি দিচ্ছে।আজ বেশ ঠান্ডা পড়েছে।নাফিজ তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে।দু হাতের তালু বার বার ঘষে তার ভেতর ফু দিচ্ছে গরম করার জন্য।

শুক্রবার।তবুও সকালে না ঘুমিয়ে নাফিজ ছুটে চলে এসেছে এক নজর দেখে তার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।

নাফিজের দৃষ্টি তারাদের বাড়ির দরজার দিকে।

----আজ ও কি আসবেন না তারা।উনি কি এখনো সুস্থ হন নি?

ভাবতেই নাফিজের মুখে একরাশ বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠলো।

----আর্মি তে ট্রেনিং এর সময় অনেক কিছু ই সেখানো হয়।দড়ি বেয়ে ও পরে ওঠা থেকে উঁচু দেয়াল থেকে ঝাঁপ দিয়ে নামা অনেক কিছু।কিন্তু আর্মি তে অফিসার্স ট্রেনিং এ যে কারোর বাড়ির সামনে উঁকি দেওয়া শেখানো হয় সেটা সত্যি আমি জানতাম না ক্যাপ্টেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন