নয়নতারা - পর্ব ১৪ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


বিকেল বেলা ক্যান্টনমেন্টের মধ্য দিয়ে হাঁটাহাটি করছে নাফিজ।এটা স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্টই আলাদা আলাদা ভাবে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।ভেতরে ছোটো ছোটো রাস্তা গুলো একদম দেশে বিদেশের রাস্তা গুলোর মতো দেখা যায়।আর সকাল হোক বা বিকেল হাঁটার জন্য একদম মনোরম পরিবেশ।নাফিজ হাঁটতে হাঁটতে এগুলোই ভেবে চলেছে।

হাঁটার মধ্যেই এক জায়গায় এসে দাড়িয়ে গেল নাফিজ।এ আর নতুন নয়।যে জায়গায় সে এই ফুল দেখে সে জায়গায় তাকে দাঁড়াতেই হবে।এ যেন নাফিজের জীবনের চরম বাধ্যবাধকতা।পাশের সারিবদ্ধ নয়নতারা ফুলের গাছের ওখানে এক পায়ের ওপর ভর করে হাঁটু গেড়ে বসলো নাফিজ।গাছের ফুলগুলোর ওপর পরম আদরের সাথে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।যেন তাদের সাথে তার আত্মার আত্মীয়তা।

----কেন এভাবে পোড়াস তোরা আমাকে?আমি যে দগ্ধ হয়ে যাই প্রতি মূহুর্তে।ঝলসে যাই বার বার।নিজেকে যে ক্ষমা করতে পারিনা।কেন সেদিন আমি মায়ের সাথে চলে গেছিলাম!কেন?

ক্যান্টনমেন্টে প্রথম ট্রেনিং এর জন্য আশার পর থেকেই নাফিজের দম বন্ধ হয়ে আসতো।প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্টে গাদা ফুলের সাথে এই ফুলের গাছ থাকবেই থাকবে।আর এই গাছগুলো নাফিজকে বার বার ভেতরে ভেতরে দগ্ধ করে দেয়।

----স্যার স্যার,,,,,

কারোর ডাকে নাফিজের ঘোর কাটলো।পিছনে ঘুরে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখে একজন সৈনিক।নাফিজ তাকাতেই সৈনিক টা তাকে এক হাত কপালের ডান পাশে উঠিয়ে এক পা একটু তুলে আবার নামিয়ে দিয়ে স্যালুট করলো।

----হুম বলো।
----স্যার আপনি একজন অফিসার।আপনি এভাবে এখানে বসে থাকবেন না।খারাপ দেখাবে।
----অফিসার বলে কি আমি মানুষ না?
----না স্যার সেটা নয়।
----একজন অফিসার হওয়ার আগে আমি একজন মানুষ।আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে।আমি যেখানে খুশি বসতেই পারি।এর জন্য খারাপ লাগার তো কোনো বিষয় নেই।
----আসলে স্যার এভাবে তো কেউ বসেন না।এজন্য বলছিলাম।
----আপনি কি বলতে এসেছেন স্টাফ?
----স্যার মেজর ইমরান স্যার আপনাকে ডাকছেন।
----ওকে।চলো।

নাফিজ উঠে দাড়ালো।তাঁরপর মেজরের অফিসের দিকে গেল।

;;;;;

----হ্যালো কোথায় তোমরা?
----আরে কেন কি হয়েছে?আমরা বাপ বেটি মিলে মজা করছি তোমার হিংসে হচ্ছে।
----হবে না।আমি এসেই হসপিটালে জয়েন করে কাজের চাপে শেষ হয়ে যাচ্ছি।আর তুমি দিব্যি মেয়েকে নিয়ে উইকেন্ড কাটাচ্ছো।
----আহা।দেখো দেখো।তুমি দেখবে আর লুচির মতো ফুলবে।
----ওহ।ভালো কথা মনে করেছো।মামোনি তো আমার কাছে লুচি খেতে চেয়েছিল।
----যাক।তবুও ভালো।তোমার মনে পড়েছে।
----তোমরা দুজন খেয়েছো তো?
----হ্যাঁ।
----খাবার নিজে গরম করেছিলে?নাকি আবার আমার মেয়েটাকে খাটিয়েছো?
----আরে না।আমিই করেছিলাম।
----আচ্ছা রাখছি।রোগী আসছে।
----শোনো।
----তাড়াতাড়ি বলো।
----আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো।
----কেন?
----আমি আজ তুন্দলের রুটি আর বারবিকিউ বানাব।
----তুমি বানাবে?কেউ খেতে পারবে তো?নাকি আমাদের মা মেয়েকে আজ না খাইয়ে রাখবে।
----হুহ।পারব দেখে নিও।ভুলে যেও না আমি একজন মেজর।আমি কোনো অলরাউন্ডারের থেকে কম নাকি।
----দেখা যাবে।রাখছি।
----আল্লাহ হাফেজ।
----আল্লাহ হাফেজ।

ডা:মাহমুদা বেগম মুচকি হেসে ফোন কেটে দিলেন।বুড়ো বয়সে ও তার স্বামীর এরকম ভালোবাসা সত্যি তার কাছে খুব হাস্যকর লাগে।

----ম্যাম নেক্সট ডাকব।
----আর কতজন আছে?
----পনেরো জনের মতো।
----আচ্ছা ডাকো।আমাকে আবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।

;;;;;

সকাল হয়ে গেছে।

শীতের কেবল শুরু।কুয়াশায় ঢেকে গেছে সবকিছু।কাছের জিনিস ও ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না।এই ঠান্ডা আমেজে সকাল দশটার সময় টাও যেন সকাল মনে হয়না।কম্বলের নিচ থেকে কেউ ই বের হতে চায়না।

মোটামুটি ঠান্ডায় নাফিজের ঘুমটা বেশ হয়েছে।ভোর রাতে নামাজের পর ঘুমটা যেন আরো বেশি জেকে বসে।আড়মোড়া দিয়ে উঠে পড়লো নাফিজ।তৈরী হয়ে রওনা দিল অফিসের উদ্দেশ্যে।

----ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনাকে আজকে মেজর আব্রাহামের বাড়িতে যেতে হবে।উনি সামনের বছরেই অবসরে যাচ্ছেন।ওনার থেকে ম্যাপের কাজগুলো নিয়ে আপনি বুঝে আসবেন।উনি এক সপ্তাহ হলো নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরেছেন।এখন ও ছুটিতে আছেন।
----স্যার ওনার ঠিকানা।
----উনি অফিসার্স কোয়াটারে থাকেন।কিন্তু সেটা খুব কম।উনি যশোরের স্থায়ী বাসিন্দা।তাই ওনার পরিবার ওনার নিজস্ব বাড়িতেই থাকে।ওনার বাসা এয়ারপোর্ট রোডের ঐ এলাকাতে।আমি ক্যাপ্টেন মারিয়া কে আপনার সাথে পাঠাচ্ছি।উনি আপনাকে কিছু কাজ দেখিয়ে দেবেন।আর মেজর আব্রাহামের বাসা ও।
----ওকে স্যার।

যশোর এয়ারপোর্টের রাস্তায় ঢুকেছে গাড়ি।সামনে ড্রাইভার ড্রাইভিং করছেন।ক্যাপ্টেন মারিয়া গোথাম আর নাফিজ পেছনে বসে আছে।

----ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনার কথা অনেক শুনেছি এতোদিন।
----ওহ।আপনি কি খ্রিষ্টান?
----কেন?
----মারিয়া গোথাম।নামটা শুনে মনে হলো।
----জি।ঠিক ধরেছেন।

মারিয়ার সাথে কথা বলে নাফিজ জানলা দিয়ে আবার বাইরের প্রকৃতি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

----ক্যাপ্টেন নাফিজ,আপনি কখনো জ্বলন্ত পরী দেখেছেন?হুরপরী।একদম যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে।যেন আকাশের তারা খসে এসে পৃথিবীতে পড়েছে।

;;;;;

ক্যাপ্টেন মারিয়া গোথামের কথায় নাফিজ বেশ বিরক্তি নিয়ে ঈষৎ ভ্রু কুঁচকে মারিয়ার দিকে তাকালো।

----ক্যাপ্টেন মারিয়া আপনার কি মতিভ্রম হয়েছে?
----না।কখনোই না।সত্যি বলছি।আপনি একটা হুর পরীকে দেখতে পারবেন।বিশ্বাস করুন আমি স্কুল কলেজ চাকরি জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি।অনেক সুন্দরী মেয়ে।কিন্তু আমি নিজেই একটা মেয়ে হয়ে বলছি এতো সুন্দর পরী আমি কখনো দেখিনি।

মারিয়ার কথাতে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল নাফিজ।

----আমি দেখেছি।ছোট বেলায়।একটা বেবি সিনড্রেইলা।আর কাউকে দেখার প্রয়োজন মনে করিনা।
----ক্যাপ্টেন নাফিজ,আপনি কি জানেন সৌন্দর্য বরাবরই সুন্দর।সৌন্দর্যর প্রশংসা করতে আপনি বাধ্য।
----এখন কোনো বাধ্য বাধকতা দেখছি না।আমরা কাজে এসেছি।আপনার কথার মর্মার্থ আমি বুঝতে পারছি না।
----একটু পর ঠিক পারবেন।তবে কি জানেন গোলাপ সৌন্দর্যের এক প্রতীক।কিন্তু এর যে কাটা থাকে।ঠিক যেমন চাঁদের কলঙ্ক থাকে।
----ক্যাপ্টেন মারিয়া,আর কতো দূর বলতে পারবেন?
----বিরক্ত হচ্ছেন।সমস্যা নেই।চলেই এসেছি।ড্রাইভার সামনে গাড়ি দাঁড় করাও।

গাড়ি দাঁড় করানোর কথা শুনে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো নাফিজ।মুহূর্তেই তার চোখ দুটো যেন সেখানেই স্তব্ধ হয়ে গেল।

দোতলা বাড়ি।বাড়ির নকশা টাও একদম অন্যরকম।বিদেশি স্টাইলে।তার চেয়ে বড় কথা বাগান।বাড়ির সামনে দুপাশে ফুলের বাগান।মাঝখান দিয়ে ছোট্ট রাস্তা।বাড়ির গেট অবধি পৌছেছে সেটি।নাফিজ বেশি অবাক হলো এটা দেখে সামনে পুরো বাগানটা নয়নতারা ফুলের।বিভিন্ন রঙের নয়নতারা।সাদা,গোলাপী, বেগুনি।সারিবদ্ধ ভাবে খুব সুন্দর করে সাজানো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ খুব যত্ন করে নিজ হাতে সাজিয়েছে।ড্রাইভার এসে দরজা খুলে দিতেই নাফিজ নেমে দাঁড়ালো।এয়ারপোর্টের চারপাশের এলাকাটা বেশ খোলামেলা।বাতাসের তীব্রতা ও খুব বেশি।হালকা বাতাসে নয়নতারা গাছ গুলো দুলছে।আর এদিকে ঝড় বয়ে যাচ্ছে নাফিজের ভেতর।

----ক্যাপ্টেন নাফিজ।
----,,,,,,,,,,
----ক্যাপ্টেন নাফিজ।

মারিয়ার কথায় এবার ধ্যান ভাঙলো নাফিজের।

----জি।
----আপনি হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন যে?
----ও কিছু না।আচ্ছা এটাই কি মেজর আব্রাহাম স্যার এর বাসা?
----জি।অনেক সুন্দর না?
----হুম।কিন্তু অদ্ভুত?
----অদ্ভুত!
----ভারী অদ্ভুত।নয়নতারা ফুলের বাগান করা কি কারোর শখ হতে পারে?
----আমিও অবাক হয়েছিলাম।আচ্ছা চলুন।

ক্যাপ্টেন মারিয়া সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।নাফিজ ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে গাছের সারির মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালো।

"ও মিলাপু,দবা খাই জুমে যাইবানি,
মোর হরানে যে তুমাকে তারা লগে লগে।
হু বাড়ির পাশে বাগুন গাছ কেমনে হুতাইমু
মোর হরানে যে তুমাকে তারা লগে লগে।
হৈ ও মিলাপু দবা খাই,,,,,,,, ,,,,,,,"

নিজের গান থামিয়ে গাসুয়া বাগানের দিকে তাকালো।উর্দি পরিহিত লোকটাকে দেখে তার তেমন কোনো মাথা ব্যথা হয়নি।কিন্তু তার মেজাজটা বিগড়ে গেল নাফিজের ফুল ছিড়তে যাওয়া দেখে।তড়িৎ গতিতে গাসুয়া ঝাড়ু হাতে নিয়ে গিয়ে নাফিজের সামনে ধরলো।

----ঐ মিয়া,আপনে কন হে?

হঠাৎ করেই সামনে শলার ঝাড়ু দেখে মাথা তুলে তাকালো নাফিজ।ফুল দেখে অতি আবেগে সে একটা ফুল ছেঁড়ার জন্য সবে বসে একটু হাত বাড়িয়েছিল।মেয়ে কন্ঠ শুনে মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়ালো নাফিজ।

মেয়েটিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো।কেমন উদ্ভট ধরনের পোশাক পড়েছে।যেমন টা আদিবাসী রা পড়ে।মাথায় গামছা পেঁচানো।চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে উপজাতি।

----আমি ক্যাপ্টেন নাফিজ।মেজর আব্রাহাম স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছি।আপনি কে?
----আমি কে মানে?আই হইলাম গিয়া ময়মনসিংহের গারো মাইয়া গাসুয়া সিমসাং।আই তারা আফার ট্যাসিসট্যান্ট।
----ট্যাসিসট্যান্ট?
----হুর মিয়া।ইংলিশ বুঝে না।সহকারী বুঝবারছেন?
----হুম।
----আই আফার বাগান দেহা শুনা করি।আপনের সাহস দেহি কম না আমার আফার বাগানের থেইকা ফুল নিতে আইছেন।এই গাসুয়া থাকতে এটা নো হওয়া। আংআ নাংখো নাম্মিনিগ্গিংআ আফা।

গাসুয়ার শেষ বাক্যটা শুনে নাফিজের মাথা চক্কর দিচ্ছে।বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটি তার নিজস্ব ভাষায় কথা বলছে।

----আপনার শেষ কথার মানে একটু বলবেন?
----উহ রে হট এ জালাতন।এর মানে হচ্ছে আমি আফাকে খুব ভালোবাসি।
----ওহ।
----এহন আপনি এইখান থেকে বেরোন।নাইলে তারা আফা আসলে আমি কমপ্লান দিমু।
----আমার নামে অভিযোগ?
----হ।তাই।আই না চিনতাম মেজর সাব রে,না বড় ম্যাডাম রে।আই খালি চিনি মুর তারা আফারে।নেন বাইর হন।নাইলে ঝাটার বাড়ি দিয়ে পগার পাড় করুম।

গাসুয়ার গলা শুনে ভেতর থেকে মাহমুদা বেগম আর মারিয়া বেরিয়ে এলেন।

----গাসু কি হলো চেচামেচি করছো কার সাথে?
----ম্যাডাম হেই যে এই লোক আফার বাগানের ফুলে হাত দিছে।
----ওহ।তাই বলে এতো চেচামেচি করবে।
----ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনি ভেতরে আসুন।

ক্যাপ্টেন মারিয়ার কথা শুনে গাসুয়ার সাথে কথা না বাড়িয়ে নাফিজ ভেতরের দিকে গেল।

গাসুয়া মুখ ভেংচি দিয়ে আবার গান গাইতে গাইতে নিজের কাজ করছে।

;;;;;

বসার ঘরে এসে নাফিজ এখনো হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ক্যাপ্টেন মারিয়ার কথা সত্যি সত্যি এখন তার কানে বাজছে।আসলেই তো সে এক হুরপরী কে দেখছে।

মেজর আব্রাহামের বসার ঘরের দেয়ালে একটা অনেক বড় ছবি টাঙানো।একটা মেয়ের ছবি।টোল পড়া গালে মিষ্টি হাসি বেখেয়ালি চাহনি বাতাসে উড়ন্ত লম্বা ঘন চুল।নাফিজ চোখ সরাতে পারছে না ছবি থেকে।স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

----গাসু গাসু কোথায় তুমি?

মাহমুদা বেগমের কন্ঠ পেয়ে গাসুয়া দৌড়ে বসার ঘরে আসলো।নাফিজের ও ধ্যান ভাঙলো।

----বলুন ম্যাডাম।
----তারার ছবির ওপর যে কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে সেটা সরিয়েছো কেন?

মাহমুদা বেগমের কথা শুনে গাসুয়া জিভ কামড়ে ধরলো।

----ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম।আসলে সকালে ওপরের ময়লা পরিষ্কার করতে ছিলাম।পরে ভুলে গেছি।শরি ম্যাডাম।
----যাও।কাপড় দিয়ে দেও।

মাহমুদা বেগমের কথা শুনে গাসুয়া দৌড়ে গিয়ে টুল নিয়ে দাড়িয়ে ছবিটির ওপর সাদা কাপড় দিয়ে দিল।

----আমার মেয়ে পর্দা ছাড়া কারোর সামনে যায় না।তাই ওর ছবির ওপর সব সময় কাপড় দেওয়া থাকে।যাতে হঠাৎ করে কেউ আসলে দেখতে না পায়।

মাহমুদা বেগমের কথায় ঘুরে তাকালো নাফিজ।তার মনে একটাই প্রশ্ন নাফিজের মনের কথার উওর মাহমুদা বেগম কিভাবে দিলেন।

----আপনার মেয়ে?
----হ্যাঁ আমার একমাত্র মেয়ে।তারাননুম তারা।
----ওহ।
----আপনাদের স্যার ওকে নিয়ে ওর কলেজে গেছেন।ফর্ম ফ্লাপ করতে।আপনারা অপেক্ষা করুন।

মারিয়া আর নাফিজ দুজনেই বাইরে এসে দাড়িয়ে আছে।নাফিজ বাগান দেখাতে মনোযোগ দিয়েছে।এর মধ্যে সামনে এসে একটা গাড়ি থামলো।

গাড়ি খুলে প্রথমেই ড্রাইভার বেরিয়ে আসলেন।সে গিয়ে পেছনের দরজা খুলে দিতে একজন মোটামুটি বয়স্ক লোক বেরিয়ে আসলো।

----ঐ তো।উনি মেজর আব্রাহাম স্যার।

মারিয়ার কথা শুনে নাফিজ সামনের দিকে তাকালো।তার চোখ যেন আরেকবার স্থির হয়ে গেল।গাড়ির ভেতর একটা মেয়ে বসা।সেই ছবির মেয়েটি।মুখ আর হাতের কিছু অংশ ছাড়া সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা।মেজর আব্রাহাম নেমে মেয়েটির কাছ থেকে ফাইল ব্যাগ নিয়ে ধরলেন।

----ইনিই কি স্যারের মেয়ে?
----হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন।উনিই তারা।

আচমকা নাফিজের মনটা খারাপ হয়ে গেল।তাহলে কি এজন্য ঈ ক্যাপ্টেন মারিয়া তাকে বলেছিল চাঁদের ও কলঙ্ক থাকে।মেয়েটি গাড়ি থেকে নামার সময় এক পা বাইরে দিয়ে আরেক হাত থেকে ক্রাচ নামিয়ে ডান পা নামালো।তারপর ক্রাচের ওপর ভর করে নেমে দাঁড়ালো।

----কি ফুটফুটে একটা মেয়ে।অথচ সে ঠিকভাবে হাঁটতে পারে না।যতদূর শুনেছি ছোটো বেলায় একদম হাঁটতে পারত না।হুইল চেয়ারে চলাফেরা করত।চিকিৎসা হওয়ার পর থেকে ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে পারে।ওর ডান পায়ে অনেক বড় অপারেশন করা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন