আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নয়নতারা - পর্ব ৩০ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


----কি হলো?কথা বলছো না কেন?

তারার দুই বাহু ধরে জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো নাফিজ।তারা মাথা নিচু করে ফেলেছে।কি উওর দেবে সে?সে কি তবে বেশি দেরী করে ফেলেছে?

তারার হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো নাফিজ।নিজের চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে জোরে চুল টানছে।এদিকে অঝোরে চোখের পানি তো পড়ছেই।

----এটা কিভাবে করতে পারলি তুই কিভাবে?তুই জানিস আমার যন্ত্রণা টা!জানিস তুই?দম বন্ধ হয়ে যাওয়া যন্ত্রণা,নিরঘুম রাতের যন্ত্রণা!তুই সব সময় শুধু কষ্ট দিয়েছিস আমাকে মিষ্টি সব সময়।আজ দেখ তুই তারা হয়েও সেই কষ্ট আমাকে দিলি।কি করে পারলি আমাকে নিয়ে এভাবে খেলতে?আমার চোখের পানি গু লো কি একবার ও তোর চোখে পড়েনি?এতোটাই নিষ্ঠুর তুই।একবার ও কি তোর হৃদয় ভেজে নি!আমাকে আজ এভাবে ক্ষতবিক্ষত করে দিলি তুই।এইভাবে!

নাফিজ হাউমাউ করে দাতে দাঁত চেপে কাঁদছে।তার ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে।কিন্তু ঐ যে শব্দ টা বাইরে যাবে যে।কি দরকার মানুষকে সেটা শোনানোর?বাইরের শব্দটা সকলকে শোনানো যায়।কিন্তু ভেতরের রক্তক্ষরণ টা কাউকে কি দেখানো যায়?

নাফিজের কান্না দেখে তারাও কেঁদেই ফেলেছে।তার ছোট্ট একটা ভুল যে এভাবে নাফিজকে কষ্ট দেবে এটা জানলে তারা হয়তো সেদিন কিছুই লুকাতো না।নাফিজ আবার তারার দিকে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গেল।তারাকে জাপটে ধরলো নিজের সাথে।

----আমি কতো অপেক্ষা করেছিলাম।এমন একটা দিনের অপেক্ষা করতাম।যেদিন আমার মিষ্টি আসবে আমার কাছে।আমি বুকে জড়িয়ে নেব ওকে।আর ছাড়ব না।কিন্ত এতো বড় কষ্ট টা আমাকে কিভাবে দিলে তারা?বলো।

নাফিজ তারাকে ছেড়ে দিল।খাটের ওপর গিয়ে বসলো।

----তুই একটা বিশ্বাস ঘাতক।প্রতারক।মিথ্যুক তুই।তুই কখনো আমাকে ভালো বাসিস নি।বড্ড স্বার্থপর তুই।ছোট বেলায় আমার কাছে আশ্রয় পেতি।এই জন্য আমি ছাড়া কিছু চিনতিস না।আর আজ বড় হয়েও,,,,,তুই একটা স্বার্থপর।

তারা এবার আর চুপ থাকতে পারল না।তারা বললো,

----বাহ!তুমি আমাকে এভাবে স্বার্থপর বলতে পারলে নাফিজ ভাইয়া!

নাফিজ ভাইয়া ডাকটা শুনেকখন আরো যেন ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে নাফিজের।এ তো গু লো বছর পর সেই ডাক।যার জন্য তার এতো অপেক্ষা,এতো চোখের পানি এতো রাত সাক্ষী ছিল।

----খবরদার!একদম ঐ নামে ডাকবি না তুই আমাকে।একদম না।

----একশ বার ডাকব।কি করবে তুমি?

----বাহ!খুব ভালো কথা বলতেনা শিখেছিস।এখন এটা বল কেন করলি এমন?কেন?

----কি করতাম আমি?বলে দিতাম আমি সেই মিষ্টি।তোমার কি আদৌ তোমার মিষ্টি পাখির কথা মনে আছে নাফিজ ভাইয়া?

তারার প্রশ্নে বিস্ফারিত চোখে তাকালো নাফিজ।

----মানে?

----তুমি তারা কে নিয়ে ভেবে বসেছিল।নিজের সব কিছু তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলে।মিষ্টি নামে যে কেউ ছিল সেটা কিভাবে ভুলে গেছিলে?আর তুমি কি বলেছিলে মিষ্টিকে ভালোবাসো?আমি না হয় কিছু বুঝতাম না।তুমি তো সব বুঝতে।এখনো বোঝো।এটা বলোতো ভালোবাসলে তুমি এই তারাকে নিয়ে স্বপ্ন কিভাবে দেখলে?তুমি কখনো মিষ্টিকে ভালোই বাসোনি।সব তোমার আবেগ।

তারার প্রত্যেক টা কথা যেন নাফিজের হৃদয় ছিদ্র করে দিয়ে যাচ্ছে।অবাক হয়ে যাচ্ছে নাফিজ।তবে কি সে ভুল করেছিল!তার অপেক্ষা করাই কি উচিত ছিল।আজ তারা তার এতো বছরের অপেক্ষা কে মিথ্যা বলে দিল!

----কি হলো কথা বলো?আমি না হয় ভুল।নাফিজ ভাইয়া ছোটো ছিলাম আমি।কি বা মনে আছে আমার?বড় হতে হতে তোমাদের চেহারা গুলো ও ঠিক মতো মনে নেই আমার।আর তুমি তো সেই ছোট নাফিজ নেই।নিজেই দেখ।আমি কিভাবে চিনব তোমাকে?আমি নিজেও তো জানতাম না তুমি আমার সেই নাফিজ ভাইয়া আমার সেই বন্ধু যার নামটা আজো মনে আছে আমার।বাপির মুখে যেদিন থেকে শুনতাম ক্যাপ্টেন নাফিজ নামে একজনের সুনাম আমার বার বার মনে হতো তুমি কি যেন একটা হতে চেয়েছিলে।আর্মি অফিসার।আমি তো তোমাকে চিনতেই পারি নি।আর যতবার তোমার সাথে কথা হয়েছে কখনো একবার ও তুমি বলোনি মিষ্টি নামে কেউ ছিল তোমার জীবনে।কেন বলোনি বলো?মিষ্টি র প্রতি এতো টান থাকলে কেন বলোনি তখন?আর রইলো সেদিন জানানোর কথা।কি জানাতাম আমি?তুমি নিজেই তো বললে এর আগে ও একজন তোমাকে এই পরিচয় দিয়েছিল।তার পর থেকে তুমি বিশ্বাস করো না কাউকে।আমি সেখানে কিভাবে বলতাম।কি প্রমাণ দিতাম?ছবির কথা টাও মাথায় আসেনি আমার।এতো কিছু আমি ভাবিনি।আমি তখন শুধু এটা ভেবেছিলাম একবার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়েছিলাম,আজ সেই কাছের বন্ধু,আরো ভালোবাসার মানুষ তার চেয়ে বড় কথা স্বামী।তাকে হারাতে চাইনি আমি।তোমাকে যদি বলতাম তুমি যদি বিশ্বাস না করতে তখন?এজন্য তারা হয়েই থাকতে চেয়েছি আমি।আর থাকব নাই বা কেন?তুমি কি চেনো মিষ্টিকে?তুমি ভুলে গেছো মিষ্টিকে?মিষ্টিকে যদি তুমি ভালোই বাসো বিয়ে করলে কি করে তারাকে?আর তুমি নিজেই বলেছো তোমার জীবন জুড়ে এর পর শুধু তারা থাকবে।মিষ্টির অস্তিত্ব তুমি নিজেই মুছে দিয়েছো।

তারার কথাতে দম মেরে বসে আছে নাফিজ।তারা চুপ হয়ে গেছে।নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।নাফিজ এবার চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।তারার একদম মুখোমুখি দাঁড়ালো।

----ঠিক ই বলেছো তারা।ভুল আমার।পরিবার এর কথা ভেবে নিজে এক টু স্বস্তির সাথে বাঁচতে আমি আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল করে ফেলেছি।তার থেকেও বড় ভুল করেছি মিষ্টির অপেক্ষা করে এতোগুলো বছর কাটিয়ে।এতো চেষ্টা চালিয়েছি ওকে খোজার।খুঁজতে খুঁজতে আজ যেই নদী কিনারায় এসে পৌছালাম সেই শুনছি নদীটাই আমার নয়।অপেক্ষা করাটাই ছিল আমার ভুল।

----তুমি আমার কথা শোনো।তুমি ভুল বুঝছো।

----কিভাবে পারলি তুই মিষ্টি?এতো বড় কথা গুলো বলে দিলি!আমি আজ ও সকালে উঠে ফোনের সামনে থেকে একবার দেখে যাই ছোট্ট মিষ্টি পাখিকে।আমি যতবার তারার কথা ভাবি তার থেকে দুবার বেশি ভাবি মিষ্টির কথা।ঐ নামটা আমার রক্তে মিশে আছে যেন।আমি এতোগুলো বছর অপেক্ষা করেছি।এতো গুলো বছর।তাও কিনা একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের জন্য।সে বড় হয়ে কি হয়েছে কেমন হয়েছে সেটা না দেখেই।আজ যখন ক্লান্ত পথিকের মতো একটু বিশ্রামের জন্য তারার খোঁজে গেছি তখন তুই এটা বলে দিলি আমি মিষ্টিকে ভুলে গেছি!অনেক কষ্ট দিয়েছিস আজ অবধি আমাকে।কিন্ত এই কথা গুলো বলে এতোটা কষ্ট না দিলেও পারতি।কাটা জায়গায় মরিচ লবণ ছিটিয়ে দিয়েছিস একদম।

নাফিজ চোখ মুছে চলে যেতে নিলেই তারা নাফিজের হাত ধরে বসে।

----আমার কথাটা শোনো তুমি।

তারা নাফিজের দিকে এগুতে গেলেই নাফিজ ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তারাকে।

----আআআহ।

এতোটাই জোরে দিল নাফিজ তারা ছিটকে ফ্লোরে পড়েছে একদম।ব্যথায় উহ করে উঠলো তারা।চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে।

নাফিজ দরজা খুলতে যাবে তার আগে তারাকে ঐ অবস্থায় দেখে থেমে যায়।দ্রুত কোলে তুলে নেয় তারাকে।খাটে এনে শুইয়ে দেয়।নাফিজ তারাকে ছেড়ে দিতে গেলে তারা নাফিজের শার্টের কলার ধরা বসে।নাফিজ মলিন হাসি দিয়ে কলার টা ছাড়িয়ে নেয়।

----আমার কথাটা শোনো নাফিজ ভাইয়া।

----ভালো থাকিস।তোর পায়ের ব্যথার কাছে আমার বুকের ব্যথাটা কিছুই না।আজ থেকে সব শেষ।না তারা না মিষ্টি।কেউ থাকবে না নাফিজের জীবনে।তোর আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ।আর কোন দিন তোর সামনে আসব না।কখনো না।ভালো থাকিস যন্ত্রণা।

নাফিজ তারার কপালে চুমু দিয়ে চোখ মুছে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।

----ক্যাপ্টেন ক্যাপ্টেন শুনুন আমার কথাটা।

তারা আর উপায় না পেয়ে উঠে বসে কষ্ট করে ক্রাচ টা আরেক পা দিয়ে ফ্লোর থেকে টেনে আনলো।সেটা উঠিয়ে হাতে নিয়ে নিজেও বাইরে গেল।তারা নিচে নামতেই দেখতে পেল না নাফিজকে।আব্রাহাম সাহেব বসে আছেন।

----বাপি।

----হ্যা মা বলো।

----ক্যাপ্টেন কোথায়?

----ও তো চলে গেছে।ইউনিট থেকে ওকে ডেকেছে।আবার ওর মা বাবাকে নাকি তোদের গ্রামের বাড়িতে দিতে যাবে।এই সপ্তাহ আসতে পারবে না।তোকে কিছু বলেনি।

----না না বলেছে।

----আচ্ছা উপরে গিয়ে রেস্ট নে।দুদিন অনেক চাপ গেছে তোর।

----হুম।

আব্রাহাম সাহেব কে মিথ্যা বললো তারা।নাহলে তিনি চিন্তা করবেন।

নিজের ঘরে গিয়ে নাফিজের নাম্বারে কয়েকবার ফোন করলো তারা।কিন্তু নাফিজ ফোন তো তুললো ই না।উল্টা সুইচ অফ করে দিল শেষে।

;;;;;

এক সপ্তাহ কেটে গেছে।

ঘরে শুয়ে কাঁদছে তারা।নাফিজ এ কদিনের এক বার ও তার সাথে যোগাযোগ করেনি।তারার ইচ্ছে করছে ও বাড়ি ছুটে যেতে নাফিজের কাছে।কিন্তু কি বলে যাবে সে।

এর মধ্যে মাহমুদা বেগম আর আব্রাহাম সাহেব ঘরে এলেন।

----তারা।

মাহমুদা বেগমের কথা শুনে তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে উঠে বসলো তারা ।

----মা কিছু বলবে।

----হুম।

আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগম দুজনে তারার দু পাশে গিয়ে বসলেন।

---- কি হয়েছে তারা?নাফিজ চলে যাওয়ার পর থেকে এমন ঘর বন্দী হয়ে থাকো।নাফিজ এর ফোন ও বন্ধ।কিছু কি হয়েছে তোমাদের মধ্যে?

----বাপি মা।

তারা কেঁদেই দিল দুজনের সামনে।একে একে সব কিছু খুলে বললো।মাহমুদা বেগম আব্রাহাম সাহেব অবাক হয়ে গেছেন সব শুনে।

----তারা।মা তুমি কি তোমার পরিবারের কাছে যেতে চাও?

----কিসের পরিবার?তোমারাই আমার পরিবার।আর কেউ না।মা আমি ওখানে যেতে চাই না।আমি ক্যাপ্টেন কে হারাতে চাই না মা।মা আমি নাফিজের কাছে যাব মা।ও বাপি আমাকে নিয়ে চলো না।আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ওনাকে।

দুজনকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তারা।

;;;;;

দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেল নাফিজ।বাইরে তারা হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে।পাশে আব্রাহাম সাহেব দাঁড়ানো।

----স্যার আপনি?

----হ্যাঁ।মেয়ের শ্বশুর বাড়ি চলে আসলাম।

----দাড়িয়ে আছেন কেন স্যার?ভেতরে আসুন।

নাফিজ আব্রাহাম সাহেব কে পাশ কেটে ভেতরে যাওয়ার জায়গা দিলেন।তারা যে পাশে দাড়িয়ে আছে।সেটা যেন পাত্তাই দিল না নাফিজ।তারার ভেতরটা যেন বড্ড জ্বলছে।নাফিজের এমন আচরণ সইতে কষ্ট হচ্ছে তার।

আব্রাহাম সাহেব ভেতরে যেতেই তারা এই সুযোগে নাফিজের হাত টেনে ধরলো,

----ক্যাপ্টেন।

তারার ডাক শুনে নাফিজ একবার ঘুরে হাতের দিকে তাকালো।আরেকবার তারার দিকে।তারার থেকে চোখ নামিয়ে নিয়ে নিল।আলতো করে নিজের হাতটা তারার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ভেতরে চলে গেল।তারার যেন কান্না পাচ্ছে।চোখে পানি টলমল করছে।তবুও নিজেকে সামলে নিল তারা।নিজে দরজা লাগিয়ে ভেতরে গেল।

সোফায় গিয়ে বসলেন আব্রাহাম সাহেব।নাফিজ ওনার পাশে বসলেন।তারা গিয়ে অন্য সোফাতে বসলো।

----নাফিজ।তোমার বাবা মা কোথায় ?

----স্যার আসলে বাবা মা তো পরশু গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।আমি দিয়ে এসেছি।

----ও আচ্ছা।আজ তো শুক্রবার।বাড়ি তে একা না থেকে আমাদের ওখানে তো যেতে পারতে।

----স্যার।তারার সামনে পরীক্ষা।অসুবিধা হবে এজন্য।

নাফিজের কথা শুনে তারা যেন আসমান থেকে পড়লো।মনে মনে বললো, 

----মিথ্যুক লোক একটা।পরীক্ষা র সময় বিয়ে করতে পেরেছেন।এখন ঢঙ করে।খালি রাগ দেখাচ্ছে আমাকে।বোঝে না আমার কষ্ট হচ্ছে।

নাফিজ উঠে দাঁড়াতে গেল।

----কোথায় যাচ্ছো?

----স্যার বসুন।খালি মুখে যাবেন নাকি।

----বসোতো।মেয়ের বাড়ি এসেছি।এসব কিছু না।আর তুমি আমাকে এখনো স্যার বলছো কেন?

----অভ্যাস হয়ে গেছে স্যার।সম্পর্ক এখন হয়েছে তাতে কি।সম্মান টা আগের থেকে আরো বেড়েছে।স্যার বলাতে কি আসে যায়।

----তাও ঠিক।আচ্ছা শোনো।তারা বললো কদিন এখানে ঘুরে তার পর যাবে। আর আমিও তোমার শ্বাশুড়ি কে নিয়ে ঢাকা যাব।ও তোমার কাছেই থাক।

----কেন স্যার?ওকে ও নিয়ে যান।

নাফিজের কথা শুনে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তারার।নাফিজ এখন তাকে তাড়াতে ও চাইছে।

----না না।নতুন বিয়ে হয়েছে তোমাদের।তুমিও বাড়িতে একা।আর এখন জার্নি করলে পরীক্ষা র আগে তারা অসুস্থ হলে সমস্যা।আর তোমার স্ত্রী ও।তোমার কাছেই তো থাকবে।

----আচ্ছা স্যার।

----তোমরা দুজনে থাক।আমাদের আজ রাতে ফ্লাইট।

----স্যার।আরেকটু বসবেন না?

----অন্য একদিন।আসি ঠিকাছে।

আব্রাহাম সাহেব তারার কাছে এগিয়ে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে তারার কপালে চুমু দিলেন।

----আসি মা।নিজের খেয়াল রেখো।নাফিজের খেয়াল ও রেখো।

তারা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল আব্রাহাম সাহেবকে।নাফিজ আব্রাহাম সাহেবকে দরজার দিকে এগিয়ে দিতে গেল।আব্রাহাম সাহেব থেমে গিয়ে নাফিজের হাত দুটো ধরলেন।

----কি হলো স্যার?

----তোমাকে কিছু কথা বলব।

----বলুন স্যার।

----জানো।তারা কে আমার কাছে আনার পর থেকে আজ অবধি কখনো নিজের থেকে দূরে রাখিনি।আজ দেখ তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি।কারণ তোমার কাছে আমি আমার কলিজাটা তুলে দিয়েছি।

----আমি জানি তো স্যার।

----নাফিজ।মানুষের জীবন সমান নয়।সমান্তরাল।জীবনে অনেক কষ্ট দুঃখ থেকেই থাকে।কিন্তু অতীত আঁকড়ে ধরে দুঃখকে বরণ করে নিও না।বর্তমানে যেটা পেয়েছো সেটাকে নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করো।এক বছর দু বছর না হোক।অন্তত দু মিনিট।তবুও এই সময় টাই যথেষ্ট অনেক বেশি বরং।প্রিয়জনের সাথে কাটানো একটা সেকেন্ড ও মূল্যবান।

আব্রাহাম সাহেবের কথা শুনে অবাক হচ্ছে নাফিজ।কেন আজ তিনি এসব কথা বলছেন?তবে কি  তিনি ও সব জেনে গেছেন?মনে মনে প্রশ্ন আওড়াতে থাকে নাফিজ।

----স্যার।আজ কেন এসব বলছেন?

----আমার মেয়েটা কম কষ্ট পায়নি জীবনে।ছোট বেলাটা ওর কেটেছে কষ্ট এ।আমার কাছে এসে তারপর ও কষ্টের শেষ নেই ওর।তুমিই বলো একটা ফুটফুটে মেয়ে নিজে চলতে পারে না,হুইল চেয়ারে আবদ্ধ থাকে।এমন তো নয় সে জন্ম থেকে এমন।তবুও মেনে নেওয়া যায়।কিন্ত তারা তো দুর্ঘটনার শিকার!ছোট বেলায় আর পাঁচটা বাচ্চার মতো ও খেলাধুলা করে মজা করে বেরাতে পারেনি।কোন বন্ধু পায়নি।সবার থেকে তাচ্ছিল্য বেশি পেয়েছে।যখন বড় হলো।আত্মীয় স্বজন শুরু করলো এই মেয়ে কে কোথায় খাটাবে।আমার তারা মুখে কিছুই বলতো না।আমি জানি গভীর রাতে ও মুখ লুকিয়ে কাদতো।নাফিজ সব সময় নিজের টা দেখতে নেই।সেটা এক তরফা।সব সমীকরণ গুলোকেও মেলাতে হয়।এমন ও হতে পারে দিক বেদিক সব দিক দিয়ে তোমার চেয়ে তারার কষ্টের পাল্লা ভারী।অনেক কিছু বলে ফেললাম।আমি এই হাতে তোমার হাতে ওকে তুলে দিয়েছি।তুমি একদিন চেয়েছিল ওকে আমার কাছে।শেষ বার তোমাকে ফেরাই নি আমি।আমার কলিজাকে কোন কষ্ট দেবে না।মনে রেখো ওর একটা ফোটা চোখের পানিও আমার বুকে রক্তক্ষরণ করবে।আমি ওর বাবা।এই হাতে ওকে বড় করেছি।ও কখন কোন পরিস্থিতিতে ছিল।আমার থেকে ভালো তুমি জানবে না।হতে পারি জন্মদাতা না।পালক পিতা।তবুও আমি পিতা।ভালো থেকো।আল্লাহ তোমাদের সুখে রাখুক।আল্লাহ হাফেজ।

কথা বলতে বলতে আব্রাহাম সাহেবের চোখে কখন পানি চলে এসেছে তিনি টের ও পাননি।চোখটা মুছে নিয়ে নাফিজের কাঁধে হাত রেখে চলে গেলেন।নাফিজ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আব্রাহাম সাহেবের যাওয়ার দিকে।

;;;;;

আব্রাহাম সাহেব চলে যেতেই ফোন বেজে উঠলো নাফিজের।ট্রাউজারের পকেট থেকে ফোনটা বের করলো নাফিজ।স্ক্রিনের ওপর সৈকত এর নাম ভেসে উঠেছে।নাফিজ তো আবার অবাক হচ্ছে।এরা কি শুরু করেছে?ফোনটা রিসিভ করলো নাফিজ।

----হ্যালো।

----জামাই বাবু ভুলে গেছেন কি আমাকে?

----আরে না।আমার শালা বাবু আরো বিয়ের ঘটক।তোমাকে কি ভোলা যায়?

----ওসব বাদ।আসল কথায় আসি।

----কি কথা?

----কি কথা দিয়েছিলে আমাকে?

----মানে?

----বিয়ের আগে।তুমিই তো বলেছিলে আমার বোনকে কখনো কষ্ট দেবে না।তোমার সব কিছু শুনে তবেই আমি আমার বোনকে তোমার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

----হ্যা।বলেছিলাম তো।

----তো? তো আমার বোন এর চোখে কেন পানি?তুমি জানো এই সপ্তাহ ধরে ও শুধূ কেদেছে।সব তোমার জন্য।তুমি কিভাবে পারলে ওকে কষ্ট দিতে?ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।মিটিয়ে কেন নেও নি?

----শুধু বোনের টাই দেখলেন।আর আমার টা!

----দেখো নাফিজ।তোমার বয়সে ছোট হতে পারি।সম্পর্কে বড় আমি।সব ই শুনেছো তুমি।আজ ও জ্বরের ঘোরে তারা কিছু নাম আওড়াতে থাকে।তার মধ্যে একটা নাম থাকেই।কি জানো?নাফিজ ভাইয়া। ওর খাতার পেছনে ছোট্ট করে লেখা থাকে নাফিজ ভাইয়া।ও হয়তো বুঝত না।ভালোবাসা কি জানতো না।কিন্তু আজো ও মনে করে ওর একটা বন্ধু ছিল।ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।সেটাও সেই নাফিজ ভাইয়া।জানো তোমার নাম শুনে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি যদি সেই নাফিজ হতে?বুঝি নি ভাবনাটা আজ সত্যি হবে।ও তোমাকে ভালোবাসে।ক্যাপ্টেন নাফিজকে।কিন্তু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড কিন্ত সেই নাফিজ ভাইয়াই ছিল।আজ ও আছে।

----সব জানেন আপনারা!

----হুম।তোমার কষ্ট টা কম না।তুমি তো ছোট বেলায় পরিবার পেয়েছো।ভালোবাসা পেয়েছো তাদের।একজন সুস্থ সবল মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করতে পেরেছো।আমার বোন কিন্তু এসব পারেনি।ওর জীবনে পূর্ণতার থেকে শূন্যতার আধিক্য বেশি।না বুঝে অনেক কথাই হয়তো তোমাকে বলেছে।এটা বোঝার চেষ্টা করবে কি বলছে।অভিমান দূরত্ব আনে নাফিজ।ভালোবাসা না।ভালো থেকো।

সৈকত ও ফোন কেটে দিল।নাফিজ এবার কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।নাফিজের মন যে মানছে না।সে কষ্ট পেয়েছে।খুব কষ্ট।সোফার দিকে তাকালো নাফিজ।তারা কে দেখতে পেলো না।

----গেলো কোথায়?ঘরে নেই তো?

;;;;;

নাফিজ ঘরের দিকে গেল।ঘরে গিয়েও তারাকে পেলো না নাফিজ। হঠাৎ ই পানির শব্দ ভেসে আসলো নাফিজের কাঁনে।ওয়াশরুমের দরজা লাগানো।তারা হয়তো ফ্রেশ হচ্ছে।নাফিজ আর দাঁড়ালো না।বসার ঘরে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল।তারার আসাটা মেনে নিতে পারছে না নাফিজ।যদিও এ কদিন নিজেও ভালো নেই সে।ছটফট করেছে।ছটফটানি আরো বেড়ে গেছে তার।যখন তারা বাগানের দুই রাণী যে একই ব্যক্তি এটা জেনেছে সে।সামনে র টেবিলের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো নাফিজ।অনেক গুলো নয়নতারা ফুল।কিন্তু এগুলো এখানে কে আনলো?নাফিজ তো আনেনি।নাফিজ উওর খুঁজে পাচ্ছে না।

----ক্যাপ্টেন।

তারার গলা পেয়ে মাথা উঁচু করে তাকালো নাফিজ।

সাদা রঙের কুর্তি,প্লাজু সাদা ওড়না পরে ক্রাচ  হাতে দাড়িয়ে আছে তারা।চুল থেকে এখনো পানি পড়ছে।তারা যে গোসল করে এসেছে সেটা বুঝতে পেরেছে নাফিজ।তারাকে পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিল নাফিজ।সাদা রঙে আরো বেশি সুন্দর লাগছে তারাকে।বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো নাফিজ।ঘরে যেতে নিলেই তারা পথ আটকে দাড়ালো।

----ক্যাপ্টেন কথা বলুন না আমার সাথে।এমন কেন করছেন?

----হাত ছাড়ো।

----ছাড়ব না।ক্যাপ্টেন শুনুন না আমার কথা।

----কি শুনব?কেন এসেছো এখানে?তোমাকে বলেছি না তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।তুমি শোনো নি আমার কথা।বাবা ভাইকে দিয়ে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করাচ্ছো।

----আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ক্যাপ্টেন।আপনি এসব বলবেন না।

----এখানে তোমার বাবা রেখে গেছে ভালো কথা।যে কদিন ইচ্ছে থাকো।আমার সামনে আসবে না।তোমার মুখ ও দেখতে চাইনা আমি তারা।

নাফিজ তারার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিল।উল্টো দিকে ঘুরে ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

----আমি না হয় নাই বা গেলাম।তুমি থাকতে পারবে তো নাফিজ ভাইয়া?ফোনের ওয়ালপেপারে কিন্তু একদম তাকাবে না।আমার ছবি ডিলিট করে দিও।আপনি থাকতে পারবেন তো ক্যাপ্টেন?নাকি সৈকত ভাইয়াকে ফোন করে আবার খোঁজ নেবেন।বিনোদিয়া পার্কে ঝাউ গাছের পাশে দাড়িয়ে থাকা আমার ছবিটা আবার দেখবেন।তুমি কি থাকতে পারবেন,ক্যাপ্টেন নাফিজ ভাইয়া?

তারার প্রশ্ন শুনে থমকে গেল নাফিজ।চোখের পানি ও বাধ মানলো না।বেহায়া র মতো গড়িয়ে পড়লো।বুকের বা পাশটা ঠিকই চিন চিন করে উঠলো।

তারা আবার বলতে শুরু করলো,

----আমি না হয় ভুল করেছি।কষ্ট দিয়েছি তোমাকে।একবার ও তো শুনলে না আমার কথা।সাধে কি জিজ্ঞাসা করেছি?আজ যদি আমি মিষ্টি না হতাম।সত্যি সত্যি কখনো মিষ্টি চলে আসতো!আমি মরে গেলেও কখনো তোমাকে অন্য কারোর সাথে দেখতে পারতাম না।বেচে থাকার কথা বাদ ই দিলাম।আমার তো এটাও মনে হয় তুমি মিষ্টিকে বেশি ভালো বাসো।আবার বলো আমাকেও ভালোবাসো।কি ভুল বলেছি আমি?

নাফিজ উল্টো দিকে ফিরেই বললো, 

----চোখের আড়াল হলেই সবাই মনের আড়াল হয়ে যায় না।কোন এক কোনে ঠিকই থেকে যায়।ভালোবাসা যদি সত্যি হয় অনেক সময় দ্বিতীয় বার আসলেও প্রথম টাকে ভোলা যায় না।প্রথম জন মনের এক কোনে ঠিক থেকে যায়।রাতের গভীরতা ও কখনো মনে করিয়ে দেয় তার কথা।দুজনকে এক সাথে ভালোবাসা যায় না,কিন্তু সময়ের ব্যবধান অনেক সময় বাধ্য করে,কিন্ত একি ভাবে ভালোবাসা যায় না।মিষ্টিকে তারার থেকে বেশি ভালোবাসি আমি।নাহলে এতো অপেক্ষা করতাম না।কিন্ত পরবর্তীতে কি হতো জানো?তারা র সাথে থাকতে থাকতে ঐ ভালোবাসা টা একটু একটু করে কমে যেত।বর্তমানের পাল্লা ভারী হতো একটু।কিন্ত অতীত তবুও মুছতো না।সময় ই ভারী করে।সবাই গড়তে কষ্ট করে।ভাঙতে সময় নেয়না।ভাঙা জিনিস গড়তে ভাঙার পূর্বে গড়ার থেকেও বেশি কষ্ট করতে হয়।প্রকৃতিই বাধ্য করে প্রাপ্যটা দিতে।ভাঙা জিনিস সবাই গড়তে পারে না তারা।তারা সেই ভাঙা জিনিস টাকে গড়িয়েছিল আমার জন্য।আর মিষ্টি সে তো গড়ে ভেঙে দিয়ে গেছিল।আমার কাছে মিষ্টি তারা দুজনের ভালোবাসার ব্যখা এটাই।কার কাছে কি জানিনা।আমি কাউকে ঠকাইনি।শুধু ভালোবেসেছি।

নাফিজ ঘরে চলে গেল কথাগুলো বলে।তারা এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফুলগুলো এক হাতে নিল।নিজে ও ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।বিছানায় বসে আছে নাফিজ।খাটের বাইরে পা ঝুলিয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে সে।তারা ধীর পায়ে গিয়ে নাফিজের মাথার ওপর দিয়ে সব ফুল ছড়িয়ে দিল।হঠাৎ করে ফুল দেখে অবাক হয়ে গেল নাফিজ।মাথা তুললো।

----আমাকে ক্ষমা করে দেও নাফিজ ভাইয়া।আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।শুধু হারানোর ভয় করেছি।তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না।তুমি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না।তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি আমি।দ্বিতীয় বার হারাতে চাই না তোমাকে।ছাড়তেই যদি চাও তো নিজ হাতে মেরে ফেল।কষ্ট হবে না।

তারার শেষ কথা শুনে ধম করে দাঁড়িয়ে পড়লো নাফিজ।একটানে তারাকে বুকে জড়িয়ে নিল।চোখের পানি ছেড়ে দিল।তারার মুখে চোখে চুমু খেয়ে আবার বুকে জড়িয়ে নিল।

----ওরে।তোকে কিভাবে ছাড়ব রে?বলবি আমাকে!এতোগুলো বছরেও ছাড়তে পারিনি।চোখের আড়ালে ছিলি তবুও।আজ দেখ তোর চাওয়াটার জোর এতো বেশি ছিল পেয়েই গেলাম তোকে।তোকে আর ছাড়তে পারব না।হারাতে পারব না।এ জীবনে তোকে ছাড়ব না আমি।তুই আমার নয়নতারা।

;;;;;

রাতের বেলা।

তারাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে নাফিজ।না নিজে নড়ছে না তারাকে নড়তে দিচ্ছে।অনেক বছর পর আজ মন ভরে শ্বাস নিচ্ছে নাফিজ।

----ছাড়ো না।

----চুপ করে শুয়ে থাক।

----এভাবে জড়িয়ে ধরলে আমি ভর্তা হয়ে যাব গো ।

----হোস গে।আমার কি।তোকে তখন ভাত দিয়ে মেখে খেয়ে ফেলব।

----তুমি আচ্ছা খারাপ।

----মিষ্টি শোন।

----কি?

----তারা পাখি।

----আরে!কি শুরু করেছো?

----তোকে কি নামে ডাকব রে?

----যা ইচ্ছা ডাকো।

----তারা বলা অভ্যাস হয়ে গেছে।

----হুম।

----মিষ্টি ডাকটা বেশি ভালো লাগে।

----আজব!

----I ❤ U.

----I ❤ U too.

----তোমার পরীক্ষা কবে শেষ হবে গো?

----শুরুই তো হয়ে পারলো না।কেন?

----অনেক কাজ আছে তারা।কিছু মানুষ কে জবাব দিতে চাই।

----কাকে?

----মিষ্টির সেই অপদার্থ মা বাবাকে। 

----না নাফিজ ভাইয়া।আমি ওদের দেখতে চাইনা।

----কোনো কথা না।সন্তানহীন কেমন আছে দেখাব না ওদের।অবশ্য ই।তোর পরীক্ষা শেষ হতে দে।

----কিন্তু?

----কোনো কিন্তু না।আর এই আমাকে ভাইয়া বলছিস কেন?আমি তোর বর।

----ক্যাপ্টেন।

----বউ সোনা চাঁদের কনা।

----এতো কথা কোথ থেকে পাও ?

----একটা জায়গায় যাবে তারা?

----কোথায়?

----আমি নিয়ে যাব যেখানে।

----আরে কোথায়?

----এই জায়গার নাম নেই।তবে বর্ণনা আছে।

----মানে?

----এক মুঠো সুখ।ছোট্ট চাওয়ার ফল।যখন পুরো পৃথিবী মনে হবে থমকে গেছে,শীতল হাওয়া এসে ছুঁয়েছে,বৃষ্টির ফোঁটার ছিটেফোটা গায়ে লাগতে শুরু করেছে,অবশেষে বৃষ্টি।অঝোর বৃষ্টি।সে এক অদ্ভুত ভূকম্পন।মাঝখানে আমি তুমি।
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।