নয়নতারা - পর্ব ০৮ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


সকাল বেলা

নাফিজ ঘুমিয়ে আছে।লতিফা এসে নাফিজের ঘুম ভাঙালো।

----ওঠ বাবা।অনেক বেলা হয়ে গেছে।
----মা আরেকটু ঘুমাই না।
----আর ঘুমাবি না।ওঠ।জানিস এলাকার খবর।আমার তো শুনেই কেমন মাথা ঘোরাচ্ছে।

লতিফার কথা শুনে নাফিজ লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

----কেন?কি হয়েছে মা?
----আরে কাল রাতে ঐ শেখর বুড়ো নাকি বাজারে গেছিল।তারপর রাতে বাড়ি ফেরে নি।সকালে তো বুড়োকে জঙ্গলের মধ্যে বাধা অবস্থায় পাওয়া গেছে।ইশ কিভাবে মেরেছে।
----কারা মেরেছে মা?কিছু জানতে পেরেছো?
----শেখর বুড়ো তো জ্ঞান ফিরতেই বললো কাল রাতে নাকি জঙ্গলে এক দল ডাকাত ছিল।ওদের নাকি বুড়ো দেখে ফেলে।এজন্য ডাকাতরা ঐ অবস্থা করেছে তার।
----ও আচ্ছা।

নাফিজ তো মনে মনে গভীর চিন্তায় মগ্ন।

----যাক বুড়োর ডোজ ঠিকঠাক পড়েছে।যা শিখিয়ে দিয়েছি তাই বলেছে।

নাফিজের ভাবনার মাঝে লতিফা নাফিজকে হালকা ধাক্কা দিল।

----কি রে কি ভাবছিস?
----কিছু না মা।
----এই শোন।তুই কাল রাতে অতো দেরী করে বাড়ি ফিরছিলি কেন বলতো?
----মা বলেছিলাম না নিলয়দের বাড়ি যাব।ওখানে গিয়ে দেখি রাফিন আর কজন ও এসেছে।কয় বন্ধু মিলে আড্ডা দিতে দিতে দেরী হয়ে গেছে।
----ও আচ্ছা।যাই বল আমি কিন্তু খুব খুশি হয়েছি।
----কেন?
----ঐ ডাকাত গুলো শেখর বুড়োকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে।কাল মিষ্টির সাথে যা করতে গেছিল।ঠিক সাজা পেয়েছে বুড়ো।
----তা যা বলেছো।
----নে উঠে পড়।আমি তোর খাবার দিচ্ছি।

লতিফা ছেলের সাথে কথা বলে বাইরে চলে গেলেন।এদিকে নাফিজের মুখে রহস্যময়ী হাসি ফুটে উঠেছে।

----আমার বেবি সিনড্রেইলার কেউ ক্ষতি করবে আর তাকে আমি এতো সহজে ছেড়ে দেব!অসম্ভব।

;;;;

ফজলে শেখ খাবার টেবিলে বসে আছেন।একটু পর অফিসের জন্য রওনা হবেন।

----কি হলো?খাচ্ছেন না কেন?

তানিয়ার প্রশ্ন শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন তিনি।

----মিষ্টি উঠেছে?

মিষ্টির নাম শুনতেই তানিয়ার মুখে একঝাক বিরক্তি এসে জমা হলো।

----উঠেছে।আপনি খেয়ে নিন।
----ওকে ডাকো তো।ওকে খাইয়ে দিয়ে যাই।
----কেন?খাইয়ে দিতে হবে কেন?ও কি ছোট বাচ্চা।পাঁচ বছর বয়স হয়েছে।এখন অতো আদিখ্যেতা করে গালে তুলে খাওয়ানোর কি আছে?
----আমার মুখের ওপর এতো বেশি বকবক করতে এসো না।যা বলেছি তাই করো।আমার মেয়েকে আমি গালে তুলে খাওয়াবো না কোলে তুলে খাওয়াবো তোমার ভাবতে হবে না।যাও ওকে ডেকে নিয়ে এসো।
----যাচ্ছি।

তানিয়া ভাতের থালাটা ধরাম দিয়ে টেবিলের ওপর রেখে মিষ্টিকে ডাকতে গেল।

----দেখি।এই তো হইয়া গেছে।
----দাদীমা দুটো ঝুঁটি না।একটা ঝুঁটি করে দেও।নাহলে নাফিজ ভাইয়া দেখলে বলবে আমার মাথায় শিং গজিয়েছে।
----আরে পাগল মাইয়া।হে তো তোর লগে মজা করে।বুঝোস না।

রাহেলা বেগম চিরুনি দিয়ে মিষ্টির কপালের ওপর থাকা ছোট চুলগুলোকে আচড়ে দিলেন।

----এই যে নবাবের বেটি।চল তোকে তোর বাপ ডাকছে।

তানিয়ার কন্ঠ শুনে রাহেলা বেগম পেছনে তাকালেন।

----তুমার মা বাপ কি তুমারে কিছু শিখায় নাই নাকি।সাত সকালে উইঠা মাইয়াডার লগে এ কিরাম আচার।
----অতো ভালো ব্যবহার আমি করতে পারব না ।মিষ্টি এদিকে আয়।তোর বাবা ডাকছে।

তানিয়া রাহেলা বেগমের কোল থেকে মিষ্টিকে নামিয়ে নিয়ে ফজলে শেখের কাছে নিয়ে গেলেন।

----বাবাই তুমি ডেকেছো আমাকে?
----হ্যাঁ।বাবাহ আমার মিষ্টি বুড়ি তো একদম ফিটফাট হয়ে আছে।কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি।
----কোথাও না।বিকেল বেলা নাফিজ ভাইয়ার সাথে খেলতে যাব।এখন কোথাও না।
----ও আচ্ছা।
----বাবাই শোনো না।
----বলো।
----বাবাই নাফিজ ভাইয়া কি সুন্দর স্কুলে যায়।আমি কবে যাব?

মিষ্টির কথা শুনে ফজলে শেখের টনক নড়লো।আসলেই তো এতোদিন সে এটা মাথায় রাখেনি।

----স্কুলে যাওয়ার কি দরকার?মেয়ে মানুষ পড়াশোনা করে হবে টাকি?
----আর যাই হোক পড়াশোনা করলে তোমার মতো বেয়াদব হবে না।
----কি বললেন আপনি!
----ঠিক বলেছি।এইটুকু বাচ্চার সাথে সব সময় এভাবে কথা বল কেন তুমি।শোনো তানিয়া আজ থেকে কান খুলে শুনে রাখো ওর সাথে যদি এরপর তুমি এরকম খারাপ ব্যবহার করেছো না তোমার খবর আছে।

ফজলে শেখ তানিয়াকে ধমকিয়ে মিষ্টিকে তুলে পাশের চেয়ারটা তে বসালেন।

----দেখি হা কর।তাড়াতাড়ি খেয়ে নিবি।আমার অফিসের দেরী হয়ে যাবে।
----আচ্ছা বাবাই।

বাবা আর মেয়ের এই দৃশ্য তানিয়া সহ্য করতে পারছে না।তাই গটগট করে নিজের ঘরে চলে গেল।

;;;;;

----আচ্ছা নাফিজ ভাইয়া এই ফুলটার নাম কি?দেখতে খুব সুন্দর।
----এটার নাম নয়নতারা।তুই এটা দেখছিস কেন।এর থেকে তো ঐ যে গোলাপ দেখছিস না সেটা বেশি সুন্দর।

নাফিজদের ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে মিষ্টি আর নাফিজ ছাদের গাছগুলো কে দেখছে।

----না গোলাপ ভালো না।জানো নাফিজ ভাইয়া আমাকে মা একবার গোলাপ ফুল কিনে দিয়েছিল।ওর কাটাতে লেগে না আঙুল ফুটো হয়ে রক্ত বের হয়েছিল।খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।গোলাপ একটুও ভালো না।পচা।
----আচ্ছা বাবা ঠিকাছে।নয়নতারাই ভালো ফুল।হয়েছে?

মিষ্টি খিলখিলিয়ে হেসে দিল নাফিজের দিকে চেয়ে।

----জানিস মিষ্টি গোলাপের অনেক সুগন্ধ আছে।আর এই সুগন্ধে যে কেউ মাতোয়ারা হতে বাধ্য।কিন্তু এই যে নয়নতারা দেখছিস এর কোনো সুগন্ধ নেই।তুই ঠিকই বলেছিস।নয়নতারা ই ভালো।আমি চাই নয়নতারা ফুলের গন্ধ শুধু আমি শুকবো আর কেউ না।

নাফিজের এতো প্যাঁচালো কথার অর্থ মিষ্টি বুঝতে পারলো না।ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে নাফিজের দিকে।

----কি রে কি দেখছিস?
----তুমি কি বললে নাফিজ ভাইয়া।আমি তো কিছুই বুঝলাম না।
----থাক এখন আর বুঝতে হবে না।
----আমাকে একটা নয়নতারা ফুল দেবে নাফিজ ভাইয়া।
----একটা কেন?আমার পুরো বাগানটা তোকে দিয়ে দেব।

নাফিজ একটা নয়নতারা ফুল ছিড়ে মিষ্টির কানে গুঁজে দিল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন