অন্তর্দ্বন্দ্ব - পর্ব ৬৩ - সাবরিনা ইমরান - ধারাবাহিক গল্প


-----এসময় আমার কাছে পানির মতো সব পরিষ্কার হয়ে যায়।তোমার সাথে আমার সম্পর্ক আছে জেনেই তিনি টাকা দেয়া বন্ধ করেছিলেন।কথায় কথায় জানতে পারি মামি আগে থেকেই তোমাকে সন্দেহ করতো।তোমার সৎ মার বাবা যেদিন মারা গেছে,সেদিন মামি তোমার বাসায় ছিলো।তোমার মোবাইলে আমার নাম দেখে তার খটকা লেগেছে কিন্তু আমলে নেননি।তুমি নিখোঁজ হওয়ার পর যখন তোমার বাবা মামিকে জানায়,তখনই উনি জানতে পারেন ঐ যাবির আমিই।এরপরই আমাকে ফোন দিয়েছিলেন আননোন নাম্বার থেকে।যখন দেখেছে তোমাকে ফেরৎ পাঠাচ্ছিনা,তখন সে আমার হাতে টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে,যার ফলাফল আমি তোমাকে বাসায় পাঠাতে বাধ্য হয়েছি।মামি আমাকে বলে এখনই তোমাকে কিছু না জানাতে। এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় চাপ সৃষ্টি না করতে।তোমার পরীক্ষার পর দুই পরিবার বসে একটা ব্যবস্থা করা যাবে।তার কথায় আমি আশ্বস্ত হয়ে তোমার কাছ থেকে সময় চেয়ে নেই।আমি মনে প্রাণে চাচ্ছিলাম তুমি অন্তত ইন্টার পাশ করে ফেলো।আদার ওয়াইজ তোমার পড়াশোনা থেমে গেলে আর উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হতো না।এমন অনেক রাত গেছে,আমি ছটফট করেছি তোমার চিন্তায়,কিন্তু ফোন দিতে পারিনি।ভীতু ছিলাম।তোমাকে ভরসা দেয়ার মতো অবস্থা আমার ছিলো না।

তোমার পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে আমি মামির সাথে যোগাযোগ করি।সে আমাকে জানায় বিয়ে করা সম্ভব না।সৎ মা এবং তোমার বাবার সাথে তোমার সম্পর্ক ভয়াবহ খারাপ,তখন তোমার সৎমা তার নিজের সন্তান ও হারিয়েছে।এসময়ে এভাবে বিয়ে করা ভালো দেখায় না।তার চেয়েও বড় কথা উনি চাননা আমাদের এখানে বিয়ে হোক,কারণ আমার নিজের জীবনই চলে না,সেখানে তোমার দায়িত্ব নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব না আমার পক্ষে।আমি তখনো জানতাম না মায়ের সম্পত্তি এই মহিলা সাবাড় করে ফেলেছে।তাকে খারাপ মানুষ কখনো মনে হয়নি।উলটো ভাবতাম যে,নানা এবং মামা না থাকা সত্ত্বেও সে আমাদের দায়িত্ব পালন করছে।এটাই অনেক বেশি।তার মুখের উপর কথা বলার সাধ্য আমার ছিলো না,তার তথাকথিত দয়ার টাকায় আমার মায়ের চিকিৎসা চলতো।ফিজিওথেরাপি এবং ডায়ালাইসিস এ সপ্তাহে পনের হাজার টাকা লাগতো।অথচ স্টুডেন্ট পরিয়ে আর কোচিং এ ক্লাস নিয়ে আমি মাস শেষে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা পেতাম।বুঝতেই পারছো এমন অবস্থায় তোমাকে বিয়ে করা কত কঠিন ছিলো আমার জন্য।মাঝে তোমাকে ফেরৎ না পাঠানোর কারণে যে দুই মাস টাকা পাইনি,তখন চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।ধার করে চলেছি।তানভিরের কাছেও সাহায্য চেয়েছিলাম।পাইনি....কেউই দাঁড়ায়নি আমার পাশে।তখনই আমি বুঝেছিলাম বাস্তবতা কত কঠিন হতে পারে। 

মামি আমাকে দুইটা শর্ত দেয়।এক,এই বাচ্চা এ্যবোর্ট করে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলা।দুই তিনি এই বাচ্চার দায়িত্ব নিজে নিবেন কিন্তু আমি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবো না।অভিভাবক হিসেবে তার কথা আমার কাছে অনুচিত মনে হয়নি।কে দিবে নিজের মেয়েকে এই অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দিতে?নিজের মেয়ে বলছি কারণ মামি সেভাবেই তোমাকে প্রোটেইট করেছিলো।তোমাকে সে কত ভালোবাসে বারবার বলেছিলো।তার দুটো কথার সারমর্ম হলো বর্তমানে আমি কোনোভাবেই তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবো না।নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তোমাকে বিয়ে করে এই ঘরে বউ করে আনা অসম্ভব।এই শহরে আমার স্থায়ী ঠিকানা নেই,বাবার কোনো সম্পত্তি নেই।নিজে আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট এর উপর মা ভীষণ অসুস্থ।কিন্তু একি সাথে আমি আমার বাচ্চা এবং তোমাকে চাচ্ছিলাম।বিবেকের সাথে অন্তর্দ্বন্দ্ব লেগে গিয়েছিলো আমার।এত চাপ সহ্য করতে পারছিলাম না।সারাজীবনে যত না কেঁদেছি,এক রাতে তার চেয়ে বেশি কেঁদেছিলাম।তেইশ বছর বয়সে এত নির্মম পরিস্থিতি সামলানো আমার ক্ষমতার বাইরে ছিলো।আমি মামির দ্বিতীয় কথায় রাজি হই।কারণ এতে আমার বাচ্চাও ঠিকঠাক পৃথিবীতে আসতো,তুমিও যত্নে থাকতে।আর আমিও নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার সময় পেতাম।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমার মানসিক চাপ কমানো খুব দরকার ছিলো।সেই বয়সে আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে,করেছি।আমার জানানো উচিৎ ছিলো তোমাকে সবকিছু।কিন্তু তুমি রাজি হতে না মামির কাছে আমার বাচ্চা নিয়ে যেতে।আমি নিজেও তোমার সাথে যোগাযোগ রেখে তোমাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারতাম না।এমন হলে সব অগোছালো হয়ে যেত।বয়স কম থাকায় দুইজনই ভুল করেছি,কিন্তু বাস্তবতা টের পেয়েছি পরে।

পরীক্ষার সময়ে মোবাইল আমি ঘরেই রেখে যেতাম।সেদিন আমার লাস্ট ইয়ারের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিলো।পরীক্ষা শেষে কোচিং এ ক্লাস নিয়ে বাসায় আসতে অনেক দেরি হয়ে যায় আমার।বাসায় এসে দেখি জেরিন আর ওর মা বসে আছে।জেরিনের হাতে আমার ফোন।এই মেয়ের আগে থেকেই আমার ফোন চেক করার বাজে অভ্যাস ছিলো।টিউশনির সময়েও এই কাজ করতো।আমি বাসায় আসার পরই তারা চলে যায়।মাকে জিজ্ঞেস করি,জানতে পারি জেরিনের সাথে নাকি মামি আমার বিয়ে ঠিক করতে বলেছে।এর জন্য জেরিন আর ওর মাকে ডাকা হয়েছে।আমি ধরতে পারি মামি তোমার কাছে ফিরে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করছে।আমি মামিকে ফোনে পাইনা।তোহা আমাকে ফোন দেয় তখন।আমাদের কথোপকথন অনেকটা এমন ছিলো-

-- 'দেখো যাবির,ভিনাকে বাচ্চা এ্যবোর্ট করে ফেলতে বলো।এই বাচ্চা নিয়ে গিয়ে কিন্তু ওকে যন্ত্রণা দেয়া হবে অনেক।তুমি নিজেও এখন ভিনার দায়িত্ব নিতে পারবা না।ভিনাকে অন্তত বাঁচতে দাও।একা জীবন চলে যাবে কোনোমতে। বাচ্চা নিয়ে পারা যাবে না।ভুলেও ম্যামের কথা ভিনাকে বলো না।ভিনা বেঁকে বসলে ম্যাম ও বসে থাকবেন না।আমার চেয়ে ভালো উনাকে কেউ চিনে না।বেশি ঝামেলা করলে ভিনা নিজের বাচ্চাসহ জীবন হারাতে পারে।সিম্পলি এ্যবোর্ট করে ফেলতে বলো,ম্যামকে বলবা মিস্ক্যারেজ হয়ে গেছে।ওকে রাজি করাও,বাকীটা আমি দেখবো।'

-- অসম্ভব,আমি নিজের বাচ্চা এ্যবোর্ট করে ফেলতে বলবো?প্রতারণা করবো ভিনার সাথে?
--ও নিজের সৎ মা কে মেনে নেয়নি,বাসা থেকে বের করে দিয়েছে ফিরে যায়নি।ম্যামের কথা জানার পর ও ম্যামের কাছে তো ব্যাক করবে না জীবনেও,করা উচিত ও না,চুপ করে বসেও থাকবে না।এদিকে তুমিও কি দায়িত্ব নিতে পারবা?সেটা তো পারবা না। পরে কী হবে?ও রাস্তায় বাচ্চা জন্ম দিবে?আর যদি ম্যামের কাছে যায়,ওর বাচ্চা নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পর ভিনা ঠিক থাকবে?বলো কী করবে?
-- আমি পারবো না!অসম্ভব। 
-- এমাসের তোমার মার ঔষধ কীভাবে কিনছো শুনি?

আমি নিরুত্তর হয়ে থাকলাম।

-- তুমি এখন ওকে ফোন দাও।কোনো কথা বলবা না বাড়তি।বাচ্চা এ্যবোর্ট করে ফেলতে বলো।এখন ও নিজের বাসায় আছে।বাচ্চা না থাকলে ভালোমতো থাকতে পারবে।
-- আমার কাছে তো কখনো ফিরে আসবে না।
-- আমি ভিনাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিবো সময় হলে।কথা দিলাম।এই মুহূর্তে ভিনা অনেক আবেগি কথা বলবে।সবে টিনেজ শেষ করা মেয়ের কথায় ভেসে যেওনা।বাস্তবতা তো তুমিও জানো,তাইনা?ম্যাম যদি জানে ভিনা তার ইন্টেনশন জেনে গেছে,তুমি কিন্তু ভিনাকে আর কখনো দেখতে পারবে না।
-- আমার বাচ্চা....আমি...আমি কীভাবে বলবো?
-- ভিনা নাকি বাচ্চা?কোনটা চাও তুমি?
-- ভিনা.....

হ্যাঁ ভিনা।মাহভিনের চেয়েও প্রিয় ছিলে তুমি।আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি।আমি জানতাম না কেন তোহা মামির ব্যাপারে বলেছিলো যে সে তোমার ক্ষতি করতে পারে।কিন্তু সে মামির সেক্রেটারি ছিলো,তার চেয়ে ভালো মামিকে কেউ চিনতো না।আমি বিশ্বাস করেছিলাম তাকে।সেদিন রাতে ছিলো তোমার আমার শেষ কথা।আমি অনুরোধ করেছিলাম বাচ্চা এ্যবোর্ট করে ফেলতে।আর জেরিনের ভুল ও ভাঙাইনি ইচ্ছা করে।অন্তত প্রতারিত হয়েও যদি বাচ্চা এ্যবোর্ট করো।কিন্তু তুমি আবারো নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা প্রমাণ করেছিলে।আমাদের বাচ্চাকে তুমি মেরে ফেলোনি শত প্রতিকূলতায়।

আমি আর যোগাযোগ করতে পারিনি,তুমি ফোন ফেলে দিয়েছিলে খুব সম্ভবত।অনেক চেষ্টা করে বুঝেছিলাম লাভ নেই।নিয়তির হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম সব,ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম যন্ত্রণায়।তখন মাও মারাত্বক অসুস্থ।

কয়দিন পর তোহা আমাকে জানায় তুমি বাচ্চা পেটে মামির বাসায় এসেছো,এ্যবোর্ট করোনি।তোহা আমাকে কথা দেন এই বাচ্চার খেয়াল সে নিজে রাখবে যতদিন পারে।আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তোহা দেননি।কারণ সত্যি জানার পর আমার কাছে ফিরে আসতে চাইলে না আমি পারবো তোমার দায়িত্ব নিতে,না মামি তোমাকে যেতে দিবে।

আমি যে পরবর্তীতে তোমার খোঁজ নিবো,সেটার ও সুযোগ পাইনি।তোহা নাম্বার বদলে ফেলেছিলেন।এদিকে জেরিনের সাথে আমার বিয়ে দেয়ার কথা দিয়েছিলেন মামি।জেরিন আশায় ছিলো বিয়ের যেহেতু পারিবারিক ভাবেই কথা এগিয়েছে।কিন্তু কয়েক মাস পর আমি জানিয়ে দেই বিয়ে সম্ভব না।জেরিন নিজেও বুঝতে পারে সেটা।এরপর আমার নামে মিথ্যা মামলা করে দেয়।আর জেরিনকে সাহায্য করে কে জানো?আমার মামি।সে এমন করেছিলো কারণ তুমি তখন মাহভিনকে তার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলে।সে কোনোভাবেই চায়নি আমরা এক হই।জেলে যাওয়ার পর আমার মা মারা যায়।প্রতিবেশিরা লাশ উদ্ধার করে।আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয় মাকে।আর আমি?আড়াই বছর জেলে ছিলাম।এদেশের জেলে এমন বহু মানুষ আছে উচ্ছিষ্ট হিসেবে।এদের কেউ জেলেই মারা যায়।আড়াই বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলাম তোহার কারণে।তিনি বিভিন্ন জ্যাক এর মাধ্যমে আমাকে জেল থেকে বের করে এনেছিলেন মামির অগোচরে। প্রথম ছয়মাস আমি কাউন্সেলিং এ ছিলাম।জেইলের ভয়াবহ পরিবেশ আমাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিয়েছিলো।আমার খরচ তোহাই দিতেন।এরপর আমাকে আলাদা বাসা ও তিনিই ভাড়া করে দিয়েছিলেন।
 

ভিনা নীরবতা ভাঙলো।কান্নাজড়ানো কন্ঠে বললো-

-- তখন তো আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারতে।পারতে না?নাকি তখনো তোমার ইচ্ছে হয়নি?
-- যোগাযোগের উপায় ছিলো ভিনা?তুমি বাসা সহ বদলে ফেলেছিলে।তোহা নিজেও জানতেন না তোমার নতুন বাসার ঠিকানা।তোমার বাবা তার নাম্বার ও বদলে ফেলেছিলেন মামির সাথে ঝামেলা হওয়ার পর।নওমি,তানভির সবার কাছে গিয়েছি।নওমির সাথে তোমার যোগাযোগ ছিলো না।আর তানভির?ঐ হারামজাদার কথা নাই বললাম।আমি জেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমার খোঁজ করেছি।পাইনি তোমাকে।দোষ তোমারো ছিলো না।তোহা তার পুরোনো নাম্বার এক্টিভ করেছিলেন এই যদি তুমি যোগাযোগ করো!এবং সত্যিই তুমি যোগাযোগ করেছিলে,তোমার আর রুশানের বিয়ের খবর জানানোর জন্য।

ভিনা চোখ মেলাতে পারলো না যাবিরের সাথে।যাবির কিছুক্ষণ থেমে আবার বলা শুরু করলো।

-- হায়রে সাহায্য!জানো ভিনা,মানুষের সাহায্য ছাড়া বাঁচতেই পারলাম না।যেটা ঘৃণা করেছি,সেটাই কাঁধে নিতে হলো।
-- আমাকে জানাতে পারতে না তখন?পারতে না?কেন বিশ্বাস করলে না আমাকে?কেন জানালে না রুপিন আন্টির কথা!
-- আমি সত্যি বললে কী করতে ভিনা?আমার কাছে ছুটে আসতে?না আসতে না।কারণ তুমি আমার উপর বোঝা চাপিয়ে দিতে না।তাহলে কোথায় যেতে?
-- যেতাম কোথাও!
-- সেটাই তো।কোথায়?রাস্তায়?

ভিনা উত্তর দিতে পারলো না।

-- আমিও এভাবে আটকে গিয়েছিলাম।সবে টিনেজের শেষ প্রান্তে ছিলে।ধারালো আত্মসম্মান নিয়ে কোথাও যেতে পারতে না ভিনা।আমার দূরাবস্থায় আমার কাছে আসতে না।রুপিনের আসল রূপ জানলে তার কাছেও যেতে না।তোমার বাবা তো বেরই করে দিয়েছিলো তোমাকে।পরিণতি করুণ হতো।রাস্তায় অমানুষ ভরা।আমি অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগেছিলাম।তোমার আর মাহভিনের মাঝে একজনকে বেছে নিতে কী পরিমাণ কষ্ট হয়েছে জানো?
-- টাকার কারণে আমার জীবন বদলে গেলো এভাবে?এই টাকা দিয়ে আমি কী করবো!
-- রুশান তোমাকে অনেক ভালোবাসে ভিনা।পাঁচ বছর আগে তোমাকে জানিয়েছিলাম না?
-- প্লিজ...এসব এখন বলো না।
-- তুমিও ওকে ভালোবেসেছিলে।মিথ্যা বলো না।
-- আমি তো তোমাকেও ভালোবেসেছিলাম।তাহলে কেন এমন হলো?
-- কারণ আমি কাপুরষ ছিলাম।রুপিনকে ভয় পেয়েছি,বাস্তবতা এবং দায়িত্বকে ভয় পেয়েছি।চাপ নিতে পারিনি।তুমি ভেবো না আমি তোমার উপর ভরসা করিনি।কিন্তু তোমার বয়স কতইবা ছিলো ভিনা?মাত্র কলেজের গন্ডি পেরিয়েছিলে।আমার তোমার পাশে থেকে লাভ কী হতো যদি আমি দায়িত্বই না পালন করতে পারলাম?এর জন্যই রুপিনকে বিশ্বাস করেছিলাম।আমি চেয়েছিলাম তুমি আমার বাচ্চাসহ ভালো থাকো।বুকে হাত রেখে বলো তো,রুপিনের কথা তোমাকে জানলে তুমি রাজি হতে তার সাথে যেতে?আমার সাথে যোগাযোগ রেখে তুমি রুপিনের কাছে যেতে?আমার বাচ্চা অন্যের ভরসায় জন্ম দিতে?
-- কখনো না।
-- আমি জানতাম এটা।
-- আমি এখন কী করবো?বলো কী করবো আমি!
-- জীবন সাজাবে।তোমার মতো সাহসী মেয়ে হয় না।আমি বাস্তবতাকে অজুহাত বানিয়ে সরে এসেছি।বাস্তবতা তোমার ও ছিলো,হার মানোনি।আমি তো ভয় পেয়ে হার মেনে নিলাম।আমি জানি না হার না মানলে তোমার জীবন কেমন হতো।তবে এতটুকু নিশ্চিত আজকের মতো স্ট্যাবল লাইফ পেতে না।মাহভিন সুন্দরভাবে বড় হচ্ছে।তুমি পড়াশোনা করছো,তোমার বিয়েও সামনে।আমি তোমার জন্য খুশি ভিনা।আমার মতো কাপুরুষের সামনে তোমার মতো দেবিকে মানায় না।নতুন জীবন সুন্দর করে সাজিয়ে নাও।তুমি মাহভিনকে জন্ম দিয়ে যে ভালোবাসা দিয়েছো আমাকে,সেই ভালোবাসার ঋণ শোধ হবে না কখনো।জীবন থেকে আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার।আমি শুধু মাহভিনকে একবার দেখতে চাই,কোলে নিতে চাই।
-- তোহা আপু আমার জন্য এতকিছু কেন করেছিলো?তোমরা কেন আমার কথা এত ভেবেছিলে।
-- আমি তোহার ব্যাপারে জানিনা।হয়ত ভালো মানুষ দেখেই আমাদের জন্য এত করেছেন।
-- আজকে একটা মাত্র মৃত্যু সব শেষ করে দিলো যাবির।আজকে আমার মা বেঁচে থাকলে সেদিন ঘর থেকে বের হতে হতো না আমাকে।আমরা একসাথে থাকতে পারতাম আজকে!
.
.
.
চলবে..........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp