প্রেমবিলাস - পর্ব ০১ - আরিশান নূর - ধারাবাহিক গল্প


বাসায় উপস্থিত সবার সামনে শ্রাবণ ভাইয়া এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । আজকে আমার এনগেজমেন্ট৷ আয়ানের হাতে মাত্র হাতে রিং পড়য়েছি এখন ও আমাকে রিং পড়াতে যাবে ঠিক সেই মূহুর্তেই শ্রাবণ ভাইয়া হুটহাট করে কোথা থেকে দৌড়ে এসে আমার হাত আয়ানের হাতের বন্ধন থেকে আলাদা করে আমাকে সরিয়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরে কেদে দেন।

  বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন আব্বু। কিন্তু উনি এসে সব ভেস্তে দিলেন। কোন মেয়ের এনগেজমেন্টের দিন যদি অন্য কোন ছেলে এসে এভাবে এতো এতো লোকের সামনে এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে জড়িয়ে ধরে তবে বাংলাদেশের মতো দেশে কেলেংকারি উঠে যাবে। তাও তিনি আমাকে যেমন-তেমন ভাবে জড়িয়ে ধরেন নি বরং খুব শক্তপোক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন। 

উনি আমাকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছেন। আর এদিকে আমার হবু বর আয়ান পাশেই বসে ছিল। সে শ্রাবণ ভাইয়ের এই কান্ড দেখে রেগে ফেটে যাচ্ছে। আয়ানের মতো আমিও হা হয়ে গেলাম। শ্রাবণ নামক ছেলেটার কি লাজ-লজ্জা নাই। কি অসভ্য রে বাবা! 

 আব্বু আমার দিকে রক্তাক্ত চোখে তাকালো। ভাইয়া, মা, দাদি চাচ-চাচি আমার হবু শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি এমনকি আমার কাজিনরা সবাই অবাক। হচ্ছেটা কি? কথা নেই বাতা নেই হুট করে শ্রাবণ এসে এহেন কান্ড কেন ঘটালো? 

আমার হাত-পা ফ্রিজড হয়ে আসছে। এভাবে এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরায় আমার নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। আমি তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু এতে আরো বিপদ হলো। উনি সবার সামনেই আমার কোমড় চেপে ধরে আর আমার কাধে মুখ রেখে কি যেন ফিসফাস করে বলতে লাগলেন।তার মুখের গরম বাতাস আমার কাধে পড়তেই আমার হাত-পা কাপতে লাগলো। উনার বলা কথা গুলো আমার কানে কিছু ই ঢুকছে না। আমি বরফ হয়ে গেছি। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার৷ কান মনে হয় কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। 

আমার হবু হ্যাসবেন্ড আয়ান এসে তাকে আমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু উনি তো উনিই! এক চুল ও নড়বে না। বরং আমাকে আরো শক্ত ধরে দাড়িয়ে আছেন৷ যেন ছেড়ে দিলেই আমি ছুট লাগাব। 

ইতিমধ্যে চারপাশে ফিসফাস, কানঘুষা যা আছে সব শুরু হয়ে গেল! আমার লজ্জায় মাটির ভেতর ঢুকে যেতে মন চাইছে। উনি কেন এমন করছেন? আজব! ম্যানারলেস কোথাকার! 

এবার আমার হবু বর আয়ান ওনাকে আমার থেকে সরিয়ে ফেলে সবার সামনেই ওনাকে মারতে লাগলেন। এক ঘুষি খেয়েই ওনার ঠোঁট কেটে গেল৷ কিন্তু উনি উফ পর্যন্ত করলেন না। 

উনি না করলেও আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। 

রাহাত চিল্লিয়ে বলে, বেয়াদব ছেলে! তোর সাহস কিভাবে হয় আমার ফিওয়ান্সের গায়ে হাত দেওয়ার? 

শ্রাবণ নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে রক্ত মুছতে মুছতে বলে, আলিয়া আমার স্ত্রী হয়। 

একথা শুনে আমি নিজেই বিমৃঢ় হয়ে যাই। আমি কবে ওনাকে বিয়ে করলাম? 

আব্বু রেগে গিয়ে বলে, এসব কি বলছো শ্রাবণ? বিহেইভ ইউরসেল্ফ। 

শ্রাবণ মাথা নিচু করে বলে, আলিয়া আমার ওয়াইফ। 

এবার আরহান ভাইয়া রেগে গিয়ে তার দিকে তেড়ে এসে বলে, দেখ শ্রাবণ! ইনাফ ইস ইনাফ! আর একটা বাজে বকবি না। বের হ আমার বাসা থেকে। তুই আমার বন্ধু হস বলে তোর আজেবাজে কথা আমি সহ্য করব না।ভালোই ভালো বলছি যা এখান থেকে। 

শ্রাবণ জোড়ে আওয়াজ করে বলে, অবশ্য ই যাব৷ কিন্তু একা যাব না। আমার বউকে নিয়ে যাব। 

আমি শ্রাবণের দিকে তাকালাম। কি নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলছে! বার বার আমাকে তার বউ বলে কি প্রমাণ করতে চাইছে সে? 

আব্বু রেগে গিয়ে বলে, আমার মেয়ে তোমাকে কেন বিয়ে করতে যাবে? ওর তো আয়ানের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা৷ 

শ্রাবণ মাথা নিচু করেই উত্তর দেয়, আমি আর আলিয়া একে অপরকে ভালোবাসি। তিনমাস আগেই কাজি অফিসে দুই হাজার টাকা দেনমোহর রেখে আমার সাথে আলিয়ার বিয়ে হয়েছে। 

আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। তাকে তো দুই মাস আগে চিনতাম ও না আমি। আর উনি কত সুন্দর করে বলে দিলেন আমি নাকি তাকে বিয়ে করেছি তিনমাস আগে। যাকে।তিনাস আগে চিনতামই না, সেই ব্যক্তিকে বিয়ে করব কেমনে? 

আরহান ভাইয়া আর আয়ান মিলে শ্রাবণ কে পিটাতে লাগলো। সাথে আমার আরো কিছু কাজিন এসে সঙ্গ দিল৷ একা হওয়ায় শ্রাবণ পেরে উঠতে না পেরে কেবল মাইর খাচ্ছে৷ কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও করছে না। ওর নাক ফেটে গেল। শার্টের এক অংশ ছিড়েও ফেলেছে ভাইয়ারা। 

ওনাকে এভাবে মারতে দেখে আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো তাই আমি আর সহ্য না করতে পেরে শব্দ করে কেদে দিয়ে বলি, প্লিজ স্টপ৷ 

সবাই আমার দিকে তাকালো। সবার মনে একটাই প্রশ্ন শ্রাবণ কে মারছে তো আমার কি? আসলেই তো আমি কেন থামাতে বলব? ওর ব্যথা লাগলে আমার কি? আমার কিছু না তবুও আমার ই সব! কি আজব? 

শ্রাবণ অদ্ভুত হাসি হেসে বলে, আমার বউ আমাকে মারতে দেখতে পারবে না কোন দিনই ও আমার কষ্ট সহ্য করতে পারে না তাই চুপ থাকতে পারেনি আমার বউটা। 

ওনার মুখে বউ আমার শব্দ শুনে আমার মনে হীম শীতল হাওয়া বয়ে গেল। 

আমি অঝোর ধারায় কান্না করেই যাচ্ছি। কেন কাদছি জানি না। 

আব্বু কঠিন গলায় বলে, আমার মেয়েকে নিজের বউ বলার আগে প্রমাণ দেখাও যে আলিয়ার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে৷ কাবিননামা দেখাও। 

শ্রাবণ ভীষণ ব্যথা পেয়েছে। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আয়ান পেটে ঘুষি মেরেছে। ব্যথা করছে সেই জায়গায়। শ্রাবণ হাপাতে হাপাতে বলে, আংকেল প্রমাণ তো নেই আমার সাথে।কাবিননামা ও আলিয়ার কাছেই আছে। 

আমি হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। আব্বু আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে, আলিয়া? শ্রাবণ সত্য বলছে? ওর সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে? 

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলি।

আব্বু এবারে নরম গলায় বলে, ভয় পেয়ে না। সত্যটা নিজ থেকে বলে দাও। শ্রাবণ তোমার স্বামী হয়? 

আমি মাথা নিচু করে রেখেই কেদে উঠে অস্ফুটে গলায় বলি, হু৷ 

শ্রাবণের মুখে তখন তৃপ্তির হাসি বিরাজ করছে।
.
.
.
চলবে..............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন