-- এখন প্রেশারের কথা বলিস না রুশান,ও প্রেগন্যান্ট।
-- এটা প্রেশার কোথায় ভাইয়া,এটাই কি ভালো না?
আমি সেটেল হতে চাচ্ছি।
-- এত সোজা সেটেল হওয়া?তোর চাকরি নেই এখন।সবচেয়ে বড় কথা....মা এখনো কিছুই না,জাস্ট নাথিং!
-- দেরি করতে পারবো না।একদমই না।পসিবল না ভাইয়া।
-- যত যাই হোক,বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত বাসায় কোনো বড় অনুষ্ঠান হতে দিতে পারছিনা।
-- ভাবির মাত্র ফাইভ উইক্স চলছে।আর ডেলিভারির পরপরই তো অনুষ্ঠান সম্ভব না।তুমি আমাকে আরো এক বছর অপেক্ষা করতে বলছো ইনডিরেক্টলি?
-- বুঝে নে।প্রিতি অনেক ইমোশনাল,এমনিই ওর শরীরের অবস্থা ভালো না।বিয়ের কথা তুললেই বাসায় অনেক অশান্তি হবে।
-- হুমম...
-- এত তাড়াহুড়ো কেন?কোনো সমস্যা হচ্ছে?
-- হুম....
-- স্যরি ম্যান।আই হ্যাভ নাথিং টু ডু।আই এম ম্যারিড এন্ড ইফ আই এম লাকি এনাফ,দেন গনা বি এ ফাদার সুন।স্যরি এগেইন।
রুশান বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে চলে আসলো।বুক ভর্তি অভিমান জমে আছে।যার কাছেই একটু সাপোর্টের জন্য যাচ্ছে,ফিরিয়ে দিচ্ছে।এমনকি ফারুক সাহেবের কাছেও যখন গিয়েছিলো,তখন উনি গম্ভীরভাবে একটা কথাই বলেছিলেন,'তোর মাকে এখন বলাই যাবে না,আরো সময় নে।'
কেউ বুঝতে পারছে না,শুধু রুশান বুঝতে পারছে ভিনা অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।ভিনা কখনো মুখ ফুটে কিছুই বলেনা,শুধু সঙ্গোপনে খেয়াল করে যায় সবকিছু।রুশান পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথা আগাতে না পারায় ভিনা ধীরে ধীরে বিশ্বাস করছে রুশান আবারো আবেগে কোনো ভুল করেছিলো।এটা সত্যি না।এবার ভুলের প্রশ্নই আসে না।কিন্তু কর্মই যেখানে কথা বলে,সেখানে নিরুপায় হওয়া ছাড়া উপায় নেই।ফলাফল হচ্ছে,ভিনা আরো দৃড়ভাবে যাবিরের খোঁজ করছে।রুশান যখনই বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে,নিরাশ হয়েছে। ভিনা অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছে,এখনই যদি বিয়ে করে ফেলা যায়,ভিনা জীবনে একটা পাড় খুঁজে পাবে যেখানে সারাজীবন পরম ভালোবাসায় আগলে থাকবে।সেদিন ভার্সিটি শেষে দুইজন লেকের পাড়ে হাঁটতে বের হয়েছিলো।ভিনা কোনো কথা বলছিলো না,বিকেলের নরম আলোতে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছিলো।
-- নতুন শুরু করা যায় না?
-- একা? আবারো ভুল করেছিস নাকি?বাবাকে না বললেও পারতি।
-- কখনোই না।আমরা এখন বিয়ে করতে পারি।এরপর পারিবারিক ভাবে অনুষ্ঠান করবো যতদিন লাগে।
-- ভালো,খুবই রোমান্টিক থ্রিলিং প্ল্যানিং।কিন্তু ওসবের ফাযলামির বয়স আমার পার হয়ে গেছে।
-- আমি কখনো মুখ ফেরাবো না যাবিরের মতো।আমি কথা দিয়েছি,কথা রাখবোই।
-- যাবিরের ব্যাপারে আমি প্রথমে কিছুই জানতাম না। হুট করে সব হয়েছে।আমি নিজেই একটা উপসংহার টেনে নিয়েছিলাম।কিন্তু এখন সবই ধোয়াশা।তাই কিছুই বলবো না আমি ওর ব্যাপারে।আজকে মাহভিন না থাকলে ওর কথা কেউই জানতে পারতো না হয়তো।কিন্তু ভাগ্য বলেও কথা আছে রুশ।কেউ বিয়ের পর বছরের পর বছর একটা বাচ্চার জন্য হাহাকার করে।আর কারো একটা ভুলেই সারাজীবন অন্যরকম হয়ে যায়।
-- এক...একবারই হয়েছিলো?
ভিনা বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে সরাসরি রুশানের দিকে তাকালো,ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি রেখে।
-- কেন?বেশিবার হলে ছি ছি করবি?ভালোবাসা উবে যাবে?যদি যায়,তাহলে বলবো হাজারবার হয়েছে!
রুশানের বুকে কথাটা তীরের মতো বিধলো।আবারো নিজের ভালোবাসা প্রশ্নবিদ্ধ হলো।ভিনার প্রথম কথাতেই স্পষ্ট মাহভিনের জন্ম নেয়া সম্পূর্ণ 'একবার' ভুলের মাশুল।সেখানে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করাটা উচিৎ হয়নি।ভিনা সবসময়ই নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলো।রুশান সত্যিটা জানার পর নিঃশর্তে ভালোবাসার জন্যই এগিয়ে এসেছিলো।ভিনা কখনোই চায়নি জড়াতে।নিজেই ভরসা দিয়ে নিজেই জাজমেন্টাল হলে সেটা আর ভালোবাসা থাকে না,হিপোক্রেসি হয়ে যায়।
ভিনা দিন দিন আরো ব্যস্তই হয়ে যাচ্ছে।নিজের ব্যবসা বাড়াচ্ছে,সাথে স্কলারশিপ এর জন্য জানপ্রাণ দিয়ে খাটাখাটনি করছে।ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য মুনার জন্য কিছু করে যাওয়া।এত কষ্ট করে দাঁড় করানো ব্যবসার মূল লক্ষ্য মুনাকে স্বাবলম্বী করে দেয়া যেন পরবর্তীতে সোহেলের শরীর খারাপ হয়ে গেলে বা আর্থিক কোনো সমস্যা আসলেও মাহভিনসহ সবার একটা খেয়ে পরে থাকার ব্যবস্থা থাকে। বর্তমানে ভিনা বিয়ের ব্যাপারে সন্দিহান।যে বিষয়ে দ্বন্দ্বে ভুগিয়ে মানসিক শান্তি নষ্ট করে ফেলে,সেটা থেকে দূরে থাকাই ভালো।বৈষয়িক ব্যস্ততা দুই ধরনের সাহায্য করে থাকে।এক হলো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি,দুই হলো সাফল্য।
যাবির নিজেকে বাঁচিয়ে রাখছে ভিনার কাছ থেকে।কোনোভাবে হয়ত বুঝতে পেরেছে ভিনা ওর খোঁজ করছে।এমন কোনো সোর্স বাকি রাখেনি ভিনা,সেটা থেকে যাবিরের খোঁজ পাওয়া যায়।দিনের পর দিন পার করেছে অপেক্ষায়।একসময় বুঝতে পেরেছে যাবির নিজেকে সামনে আনছেনা।ভিনার কখনো মনে হয়,প্রতারণা করার কারণে যাবির সামনে আসছে না,ভালো হলে অবশ্যই সামনে এসে দাঁড়াতো,সুযোগ লুফে নিতো নিজেকে প্রমাণ করার। শহরের বুকে এই জ্বলজ্যান্ত মানুষ হারিয়ে যাবে?হতেই পারেনা।বুকের ভেতরের শূন্যতা যায় না ভিনার।হাজার হোক কৈশোরের ভালোবাসা!যাবির আসবে,মুখোমুখি হবে।কবে হবে সেটা ভিনা জানে না।মনে মনে এটাই দোয়া করে,কারো সাথে জড়ানোর আগেই যেন আসে।যদি সারাজীবনের জন্য কারো হাত ধরার পর যাবির আসে,সেটা ভালো কিছু হবে না।কিছুদিন আগে ভিনা খোঁজ পেয়েছিলো যাবিরের নতুন ঠিকানার।মাস তিনেক আগেই সেখান থেকে চলে গিয়েছিলো।অনেক কষ্টে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে জানতে পেরেছে যাবির থাকা অবস্থায় একজন মেয়ে এখানে প্রায়ই আসতো।সেই মেয়ের পরিচয় জানা যায়নি।ভদ্র সমাজে বিষয়টা নেহায়েত দৃষ্টিকটু লাগে দেখে চলে যেতে বলছেন।ভিনা যখন প্রশ্ন করেছে ব্যাচেলর কেন ভাড়া দিলেন ফ্যামিলি বাসায়,তখন বাড়িয়ালা আমতা আমতা করে এতটুকুই বলেছে যে মোটা অঙ্কের এ্যডভান্স দেয়ায় ধরে নিয়েছিলেন চাকরি করা ভালো ছেলে।ভিনা যখন বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসলো,তখন ভেতর অন্তঃসারশূন্য হয়ে গেছে।কাকে অন্ধভাবে ভালোবেসে সব উজার করে দিলো?কাকে ভালোবাসলো,যার পরিচয় এখন ধোয়াশা?মামলা হয়ে থাকলে,গ্র্যাজুয়েশন কম্পলিট না করে কীভাবে হাতে টাকা আসছে?সব প্রশ্নের উত্তর লাগবে।নাহলে অপূর্ণ থেকে যাবে সব।হোক সত্য ভয়ানক কঠিন,তবু সেটা সত্য।
______________________
-- আমি কথা দিয়েছি না?আমার কথা ভাঙি কখনো?
-- রেহান কিন্তু কথা ছিলো আপা।
-- রেহানের চেয়ে রুশান ভালো।ও আমার বাধ্য ছেলে।রেহানের মাথা তো নাবিহা খেয়েই ফেলেছিলো।সংসার কি ভালোমতো করতো নাকি।সুরাইয়া আমার ভাগ্নি,ওর উপর এত বড় অন্যায় করতাম কীভাবে।
-- একটু তাড়াতাড়ি কথা চালায়েন আপা।সেয়ানা মেয়ে,এর উপর দেখতে ভালো।ঘরে রাখা দায় হয়ে গেছে।
-- আমি জানাবো।এখন রাখি একটু।
জেবা ফোন রেখে পার্স গোছাতে লাগলেন।প্রিতি প্রেগন্যান্ট, তাই দেখতে যেতেই হয়।প্রথমবার দাদি হওয়া সত্ত্বেও আলাদা কোনো উত্তেজনা কাজ করছে না।রেহান তার মতামত নিয়ে বিয়ে করেনি,তাই তার ঘরের সন্তানের জন্য আলাদা কোনো টান নেই মনে।সেখান থেকে সায়বার বাসায় যাবেন।সুরাইয়া আর রুশানের বিয়ে নিয়ে কথা বলার জন্য।
ফারুক সাহেব এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।জেবা এখনই তাকে জানাতে চাচ্ছেন না এ ব্যাপারে।ফারুক সাহেব কখনোই মেজবাকে পছন্দ করতেন না,তাই সুরাইয়া কে পছন্দ না করার সম্ভাবনাই বেশি।এ নিয়ে জেবা ভাবেন না,ছেলের বউ এমন আনবেন যাকে নিজের কথা শোনানো যায়,হুকুম চালানো যায়।সুরাইয়া ভাইয়ের মেয়ে,মেজবা নিজেই জেবার অনুগত,খুব লেহাজ করে চলে। মেজবা জেবার কাছ থেকে অনেক টাকা এভাবে ওভাবে নিয়েছে।তাই চাইলেও কোনো কারণে গলা উঁচু করতে পারবে না।এই আনুগত্য,এটাই তো জেবা চান সবসময়।সবাই তাকে মেনে চলবে,সব তার পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে। তার জীবন হবে তার মনমতো,তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিবেন কোন চরিত্র কীভাবে থাকবে তার জীবনের অংশ হয়ে।এর বাইরে কোনোকিছু মেনে নিবেন না তিনি।রেহান তার পরিকল্পনা মাফিক চলেনি,এর জন্য তিনি মন থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছেন।নিজের রক্ত হওয়া সত্ত্বেও সন্তানের প্রতি কোনো টান নেই,এমনই শীতল তার হৃদয়।
-- এখনো রেডি হওনি?তাড়াতাড়ি রেডি হও।শোনো,ব্রেসলেট ব্যাগে রেখেছো?
-- কোনটা?
-- আহা,ভুলে গেলে?ঐযে রেহান হওয়ার সময় তোমাকে বানিয়ে দিয়েছিলাম,আমরা ঠিক করেছিলাম রেহানের বাচ্চা হওয়ার সময় ওর বউকে দিবো?
-- না,নেইনি।
-- নিয়ে নাও তাহলে।
-- জানি না কোথায় রেখেছি।এখন খুঁজতে পারবো না।যেয়ে গাড়িতে ওঠো।
জেবার দিকে তাকিয়েই ফারুক সাহেব বুঝে গেলেন জেবা এই ব্রেসলেট প্রিতিকে দিবেন না।এই ব্রেসলেট জেবা খুব সাবধানে রেখেছিলেন,এমন হতেই পারে না যে তিনি জানেন না।ফারুক সাহেবের আফসোস হলো ভীষণ। কাকে নিজের সঙ্গিনী করেছিলেন তিনি?
ফারুক সাহেব পুত্রবধূর জন্য ফলমূল,আচার,নতুন কাপড় প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে নিয়েছেন।তিনি নিজেই ঘুরে ঘুরে এসব কিনেছিলেন।জেবা একবার উপহারসামগ্রীর দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন বিরক্তিতে।ফারুক সাহেবের চোখেমুখে দাদা হওয়ার উত্তেজনা কাজ করছে,এদিকে জেবা বিরস বদনে শুধুমাত্র 'করতে হয় তাই..' কারণে যাচ্ছেন।সবই ঠিক ছিলো,কিন্তু বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌঁছালেন যখন ভিনাকে দেখলেন প্রিতির পাশে বসা অবস্থায়।ঘরের বাইরে কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন।প্রিতি ভিনার হাত ধরে গল্পে ব্যস্ত,গেট খুলেছে রুশান তাই খেয়াল করেনি কে এসেছে।
ফারুক সাহেব জেবার অপেক্ষা না করেই ভেতরে গেলেন।ভিনাকে দেখে তার খুশি দ্বিগুণ হয়ে গেলো।
-- আমার দুই মা দেখি একসাথে।
প্রিতি ফারুক সাহেবের উষ্ণ সম্বোধনে কেঁদে ফেললো।এখন অল্পতেই কান্না আসে,অল্পতেই খুশি লাগে প্রিতির।ভিনা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম করলো।ফারুক সাহেব প্রিতি এবং ভিনা দুইজনের মাথায়ই হাত বুলিয়ে দিলেন।জেবা তখনও বুঝতে পারছেন না কী হচ্ছে।ভিনা রুশানের সাথে একসাথে পড়ে এটাই জানতেন,কিন্তু তাই বলে এতটাই খাতির যে প্রিতিকে দেখতে আসবে এটা জানতেন না।তার উপর ফারুক সাহেবের এত আবেগি প্রতিক্রিয়া এবং সম্বোধন শুনে আরো প্রশ্ন মাথায় আসতে লাগলো।সব বাদ দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে জেবা প্রিতির কাছে বসলেন।
-- কেমন আছো তুমি?
-- ভালো আছি মা,আপনি ভালো আছেন?
-- হ্যাঁ, এইতো।
সংক্ষিপ্ত কথোপকথন শেষে জেবা ভিনার দিকে হাসিমুখে তাকালেন।
-- তোমাকে এখানে দেখে অবাক লাগছে,কেমন আছো তুমি?
-- বেশ ভালো আছি।প্রিতি আপু আমার বোন হয়,এর জন্যই এখানে আমি।
ফারুক সাহেব পাশ থেকে বললেন--
-- ভিনার জন্যই রেহানের আজকে সংসার হয়েছে।বয়স কত কম,কিন্তু বুদ্ধি একেবারে বড়দের মতো।ছোটবোন হয়ে বড় বোনের বিয়ে দিয়েছে।আজকে দাদা হচ্ছি ওর কারণে।
ফারুক সাহেব উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারছেন না।যে ছেলে মনোকষ্টে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকীত্বে ডুবেছিলো,সেই ছেলের আজকে সংসার হয়েছে,বাবা হবে।এই আনন্দ তিনি ভাষায় বোঝাতে পারছেন না।এর জন্য তিনি ভিনার কাছে নিজেকে ঋণি মনে করেন।এই চমৎকার মেয়ে রুশানের বউ হবে ভাবতেই তার আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়।কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন জেবা এই ব্যাপার ভালোমতো নিবেন না,এর পরিণতিও ভালো হবে না।
জেবা যতক্ষণ প্রিতি রেহানের বাসায় ছিলেন,একদম নিষ্প্রভ হয়ে ছিলেন।কারো সাথে কথা বলেননি।খাবার টেবিলে মেহমানের মতই এসেছিলেন। ভিনা আর রুশান মিলে টেবিলে খাবার সার্ভ করছিলো।রেহান প্রিতিকে নিয়ে রান্নাঘরে ছিলো।টেবিলে ভিনার প্রতি রুশানে আগ্রহ দেখে জেবার বুক ভয়ে খালি হয়ে গেলো।রুশান ভিনাকে কোনো কাজই করতে দিচ্ছে না,নিজেই আগ বাড়িয়ে আসছে।কাজের ফাঁকে ভিনাকে অন্যরকম মুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে আছে।খেতে বসেছেও ভিনার পাশে।এমনভাবেই ভিনাতে মগ্ন যে জেবা যে এখানে আছে,এর কোনো হুশ নেই।কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভিনার প্রতি জেবার দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধারণা পালটে গেলো।যে মেয়েকে খুব প্রতিবাদী বুদ্ধিমতী ভালো ঘরের মেয়ে ভাবতেন,আজকে তাকেই দুশ্চরিত্রা ঘর ভাঙানি মনে হচ্ছে।অজানা ভয়ে তার পুরো শরীর অসাড় হয়ে আসছে।এক ছেলেকে হারিয়ে ফেলেছেন,আরেক ছেলেও হাতছাড়া হওয়ার আগমনী যন্ত্রণায় ভেতর ছাই হয়ে গেলো তার।এর জন্যই কোনোরকমে খেয়ে বিদায় না নিয়েই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলেন সায়বার বাসার উদ্দেশ্যে।
___________________
-- কাইফ,ঘরে যা।এভাবে দাঁড়িয়ে থাকিস না এখানে।
কাইফ মুখ কালো করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।সায়বা নিজে ভয়ে আঁটসাঁট হয়ে আছেন।জেবাকে এরকম অগ্নিমূর্তি অবস্থায় আগে দেখেননি।
-- পানি খাও আপা।
-- গ্লাস রেখে দে। কিছু খাবো না আমি।
সায়বা বাধ্য মেয়ের মতো গ্লাস রেখে জেবার পাশে বসলো।একে তো জেবা বহুদিন পর এসেছে,এর উপর এমন চুপ হয়ে আছে।সায়বার দুশ্চিন্তার অন্ত থাকছে না।জেবা কে চুপ থাকতে দেখে নিজের দমন করতে না পেরে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো-
-- কী হয়েছে আপা?
অনেক্ষণ চুপ থাকার পর জেবা উত্তর দিলেন।
-- রেহানের বিয়ে সম্পর্কে তুই কী জানিস?
-- আ...আমি কী জানবো?
-- কেন?বিয়ের পর রেহান তোর কাছেই সবার আগে আসেনি?
-- ও তো একবারে বিয়ের পর এসেছে।আমাকে জানিয়ে বিয়ে করেছে নাকি।
-- ঠিকাছে মানলাম তুই কিছু জানিস না।তাহলে আমাকে রুশানের ব্যাপারে বল,রুশান কাউকে পছন্দ করে?
-- কই,না তো।কখনো বলেনি আমাকে।
সায়বা কাঁপা কাঁপা গলায় কথাগুলো বললেন।জেবা সেটা লক্ষ্য করে পরের প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।
-- কেন?ও ভিনাকে পছন্দ করে তোকে বলেনি?
-- তোমার কথা হয়েছে ওর সাথে? ও জানিয়েছে তোমাকে?
জেবা উত্তর দিলেন না।শীতল দৃষ্টিতে সায়বার দিকে তাকালেন,সায়বার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো।জেবা খুবই চালাক মানুষ,ঠিকি ধরা পরে গেছে।
-- কবে থেকে এসব চলছে?
-- আমি জানি না।
-- উত্তর দে সায়বা।
-- দেখো আপা,আমি তোমাকে সম্মান করি তার মানে এই না যে সবসময় আমার উপর জোড় খাটাবে।তোমার ছেলে,তুমি বুঝো।
-- আমি সুরাইয়ার সাথে রুশানের বিয়ে দিবো।যদি এইবার আমার ছেলে আমার বিরুদ্ধ হয়,তোকে আমি বোন মানবো না।সময় থাকতে বলে দে আমাকে।
-- আমি জানিনা কিছু।
জেবা চলে গেলেন ঘর থেকে।কাইফ দরজার সামনেই কান পেতে ছিলো।যাওয়ার সময় কাইফকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে জেবা হনহন করে বের হয়ে গেলেন।অতিরিক্ত রাগে তার চোখ ভিজে যাচ্ছে,তার জীবন বৃথা হতে চলেছে এক সর্বনাশীর হাতে।কেউ সেটা বুঝছে না।
.
.
.
চলবে.........................................................................