পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়েছে তারা। আজ বড্ড খুশি সে।এতোদিনে তার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো।তার চেয়ে মূল কথা আজ নাফিজ তাকে নিতে আসবে। পরীক্ষার সময় তারার সাথে থাকতে পারেনি নাফিজ।এক্সারসাইজ এ গেছিল সে।এই নিয়ে তারার মন খারাপ হলেও কিছু করার নেই।আব্রাহাম সাহেব কেও সে এমন যেতে দেখেছে।এখন নাফিজ ও।একজন সৈনিকের পরিবারকে অনেক ত্যাগ যে স্বীকার করতে হয়।
সবকিছু ভাবতে ভাবতে গেটের কাছে চলে এসেছে তারা।গেটের থেকে একটু দূরে নাফিজের গাড়ি দেখে মুখে হাসি ফুটলো তারা।ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় নাফিজ হাতে দুটো ডাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে।তারাকে দেখেই নিজেও এক টু হাসি উপহার দিল।তারা দ্রুত গতিতে নাফিজের দিকে এগিয়ে গেল।
তারাকে দেখেই নাফিজ হাত থেকে ডাব দুটো সরিয়ে গাড়ির ওপর রাখলো।তারার দিকে দু হাত আর নিজের প্রশস্ত বুক বাড়িয়ে দিল।তারা এসেই ফাইল গাড়ির ওপর রেখে নাফিজের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।নাফিজ ও পরম আদরে জড়িয়ে নিল তারাকে।আজ কতোদিন পর দুজন দুজনকে দেখছে।এতোদিন ভিডিও কলে কথা হলেও নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য বেশির ভাগ সময় তেমন কথাই হয়নি দুজনের মধ্যে।
----আমার বউ সোনা চাঁদের কনা।
----তুমি কখন এসেছো?
----এসেছি সকালে।ইউনিটে কিছু গোছগাছ করে তারপর এখানে এলাম।
----হুম।
----নে।ওঠ এবার।সবাই দেখছে।
তারা তাড়াতাড়ি মাথা তুলে নাফিজকে ছেড়ে দিল।আসলেই তার খেয়ালই ছিল না আশেপাশে ও মানুষ আছে।নাফিজ একটা ডাব নিয়ে তারার দিকে এগিয়ে দিল।
----খেয়ে নাও।
----হুম।
----পরীক্ষা কেমন হলো?
----আলহামদুলিল্লাহ।
----খারাপ রেজাল্ট হলে কিন্তু খবর আছে।কি বলেছিলাম মনে আছে তো?
নাফিজের প্রশ্ন শুনে তারা মুখ গোমড়া করে জবাব দিল,
----আছে।তুমি বলেছিলে তোমার কথা ভেবে ভেবে যদি পরীক্ষা তে খারাপ করি তুমি আবার আমাকে কলেজে ভর্তি করবে।
----এইতো গুড।
----তুমি এমন কেন?
----কেন?আমি আবার কি করলাম!
----তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।খালি বকা দেও।তুমি আগে এমন ছিলে না।এখন খুব পচা হয়ে গেছো।
তারার বাচ্চা বাচ্চা ফেস থেকে আর এমন ছেলেমানুষি কথা শুনে হেসেই দিল নাফিজ।
----আরে পাগলি!তুই যদি খারাপ রেজাল্ট করিস আমার কি ভালো লাগবে বল।আমি চাইনা আমার জন্য তুই নিজের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হোস।আমি চাই তুই আমার পরিচয় না নিজের পরিচয়ে পরিচিত হোস।বুঝলি?
----হুম।
----আর কে বলেছে ভালোবাসি না?
নাফিজ ভ্রু কুচকে তাকালো তারার দিকে।তারা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে পাইপ দিয়ে চুকচুক করে ডাবের পানি খাচ্ছে।
----ভালোবাসি না।আজ চল।তোর খবর আছে।এমন ভালোবাসবো নিজেই পাগল হয়ে অতিষ্ঠ হয়ে যাবি।
----মানে!কি করবে তুমি?তুমি কি আমাকে মারবে নাকি লাঠি দিয়ে?
----বউ সোনা চাঁদের কনা।রাতের প্রাইভেট আলাপগুলো কি সব রাস্তায় সেরে ফেলবে নাকি?
নাফিজ ভ্রু নাচিয়ে কথাগুলো বললো।এদিকে তারা তো লজ্জায় শেষ।নাফিজের মুখে কিছু আটকায় না।আস্ত বেহায়া লোক নাফিজ।তারার কাছে নাফিজকে বেহায়াই মনে হচ্ছে।
হুট করে কেউ দৌড়ে এসে তারাকে জড়িয়ে ধরলো।তারা টাল সামলে তাকিয়ে দেখে গাসু।
----আফা।
----তুমি কোথ থেকে এলে গাসু?
----ঐ ফুলচোর দুলাভাই স্কুল থেকে আনছে আমারে আপনার কাছে।
----ও আচ্ছা।এতক্ষণ কোথায় ছিলে?
----সাকি ভাই আর আমি ঐখানে দাড়াইয়া ফুচকা খাইতেছিলাম।আহা কি ট্যাঁশশ।
----ইই ফুচকা!ওর যে কি খাও তোমরা?হুর।একটুও ভালো লাগে না।
----আফা গো আফা।আপনে মাইয়া মানুষ হইয়া ফুচকা দু চোক্ষে দেখতে পারেন না।আই শিহরিত।
----সৈকত ভাইয়া কবে এলো?
----এই একটু আগে আইছে।বেড়াতে যামু না সব।ট্রেন কইরা।
----বেড়াতে!কোথায়?
তারা নাফিজের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
----ক্যাপ্টেন।আপনি তো কিছু বললেন না আমাকে?
----ওটা সারপ্রাইজ ছিল।আজ আমরা সবাই রংপুর যাব।রাতে ট্রেন।
----আজ!
----হ্যা আজ।সেই রংপুর।সেই অলিগলি।যেখানে মিষ্টি আর নাফিজের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
;;;;;
রাতের বেলায়।ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে অনেকক্ষণ আগে।পাশা পাশি সিটে বসে আছেন মাহমুদা বেগম আর গাসু।ট্রেনে উঠতেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে।মাহমুদা বেগম আলতো করে গাসুর মাথাটা নিজের কাঁধে রাখলেন।ট্রেনের ছোট্ট জানালা টা বন্ধ করে দিলেন।পাশের সিটে সৈকত আর আব্রাহাম সাহেব বসা।নাফিজ আর তারার সিট দু সিট পরে।নাফিজ ইচ্ছে করে এভাবে টিকিট নিয়েছে।যাতে তারার সাথে সময়টা ভালো করে উপভোগ করতে পারে সে।
ট্রেনের ছোট্ট জানালা দিয়ে ফুরফুর করে বাতাস ঢুকছে।তারা অন্ধকারে ও সেটা দিয়ে প্রকৃতি দেখার বৃথা চেষ্টা করছে।হুট করে নাফিজ জানালাটা অর্ধেক বন্ধ করে দিল।তারা পাশ ফিরে তাকালো।
----বন্ধ করলেন কেন?
----ঐ অন্ধকারে কি তোমার বর আছে?ভূত সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
----আজব!আপনি তো এখানে।
----তাহলে এদিকে একটু নজর দেও।বউ নিয়ে ট্রেনে উঠেছি না অপরিচিতর পাশে বসে জার্নি করছি বুঝতেই পারছি না।
নাফিজ কথা শুনে নিচু স্বরে হেসে উঠলো তারা।নিজের এক হাত নাফিজের হাতের ভাজে ঢুকিয়ে নাফিজের কাঁধে মাথা রাখলো।
----হয়েছে?
----এক টু।
----তাও একটু!
----আহা রে!কিভাবে আজকের রাতটা কাটাতে চেয়েছিলাম।আর কি হলো?ধুর।কতোদিন পর আমার বউটাকে একটু কাছে পেয়েছি।কই একটু নিজেও ইয়ে করব তার থেকে ও একটু ইয়ে নেব।তা না।
তারা নাফিজের মুখ চেপে ধরলো।পাশের সিটের দিকে তাকালো।দুজন বয়স্ক মহিলা বসা।দুজনেই ট্রেনে উঠে সিটে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে গেছেন।নাফিজ মুখ থেকে তারার হাত সরিয়ে দিল।
----কি হলো?তুমি আমাকে চুপ করালে কেন?
----বিন্দুমাত্র লজ্জাশরম একটু রাখুন।পাবলিক প্লেস এটা।নিজের টা না হলেও আমার টা একটু রাখুন।
----আমি আবার কি করলাম?
----কি করলেন!কি সব ইয়ে টিয়ে বলা শুরু করেছেন হ্যাঁ?আশেপাশে তো লোকজন আছে নাকি।
----সোনাবউ।
----আপনি শোধরাবে ন না?
তারা আফসোস নিয়ে আবার জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।এর মধ্যে নাফিজ বাদাম বেছে তারার মুখের সামনে ধরলো।
----বাদাম কোথ থেকে এলো?
----তুমি জানালার দিকে সে সময় তাকিয়ে ছিলে।একটা লোক বিক্রি করছিল।নেও হা করো।
তারা হা করছে।নাফিজ বাদাম বেছে বেছে তারার মুখে তুলে দিচ্ছে।মাঝে মাঝে নিজের মুখে দিচ্ছে।
রাত ৩টা বাজে।তারা নাফিজের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।নাফিজ তারার মাথাটা টেনে আরো কাছে নিয়ে আসলো।নিজের বুকের কাছে রাখলো।তারার কপালে চুমু দিয়ে তারাকে জড়িয়ে ধরে নিজে ও পাড়ি দিল ঘুমের দেশে।
;;;;;
রিকশায় নাফিজ আর তারা বসা।বাকিরা অটোতে করে যাচ্ছে।
----কিছু কি মনে পড়ে?
----আমার কিছুই মনে পড়ছে না নাফিজ ভাইয়া।কি করে পড়বে বলো।অনেক ছোট ছিলাম আমি।
----জানি তো।আর পড়বে ও না।এই শহর যে আগের শহর নেই।আজ উন্নত হয়েছে।গাছ গাছালি সব কাটা পড়েছে।সেখানে মস্ত বড় বড় কল কারখানা। Urbanization হয়েছে।সব ই হয়েছে।শুধু আমার আর তোর মতো কিছু মানুষের স্মৃতি গুলো আটকা পড়েছে ইট পাথরের নিচে।
----সেটাই।গ্রাম তো এখন খুঁজেই পাওয়া যায় না।
----ঐ বাড়িটা চিনতে পারছিস?
নাফিজ তারাকে আঙুল দিয়ে একটা বাড়ির দিকে দেখাল।দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বাড়িটা।বেশ পুরাতন হয়ে গেছে।মেরামত করা হয়নি হয় তো।একতলা র ওপর ছাদ দেওয়া।বাড়িটার দিকে এগিয়ে চলছে রিকশাটা।
----ঐ টা তোর বাড়ি।আজ দেখ আল্লাহ শাস্তি ঠিকই দিয়েছেন।যে ফজলে শেখ ঠাটবাট ছাড়া চলতো না আজ তার কি অবস্থা।
বাড়ির কথা শুনে তারার চোখে পানি চলে এলো।শুধু সেই শব্দ টা ই ভেসে আসছে কানে।যেই শব্দ টা কতো গুলো বছর আগে সে উচ্চারণ করেছিল,"নতুন মা আমাকে ছেড়ে দেও"।
----তোকে ওখানে কাল যেতে হবে।যেতে হবেই।প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়েছে মিষ্টি।তুই দেখবি না সেটা হবে না।
;;;;;
বিকেল হয়েছে।লতিফা তো অনেক ব্যস্ত আজ।এটা ওটা রান্না বান্না করা।এর মধ্যে কলিংবেল বেজে উঠলো।
----নাফিজের বাবা।কোথায় তুমি?সবাই এসে গেছে হয়তো।শিগগিরই এসো।
নাফিজের মা শাড়ির আঁচল ঠিক করে মাথায় কাপড় দিয়ে তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।
দরজার সামনে গাসু,সৈকত,তারা সবাই দাড়িয়ে আছে।
----তারা।তোমাকে এখন যেতে দেব না।
----কেন মা?
----তুই চুপ কর নাফিজ।সবাই এখানে দাঁড়ান।এক্ষুণি আসছি আমি।
সবাই অবাক হয়ে গেলেন লতিফার ব্যবহারে।আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগমের কপালেও চিন্তার ভাজ।এর মধ্যে মাহমুদা বেগম ট্রে নিয়ে হাজির হলেন।ট্রে তে মিষ্টি দুধের গ্লাস,আরেক গ্লাসে শরবত রাখা।
----আমার মেয়ে কে মিষ্টি মুখ না করিয়ে তো আমি ঘরে ঢুকাব না।
লতিফার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।লতিফা নাফিজের বাবা দুজনেই তারাকে মিষ্টি মুখ করিয়ে শরবত মুখে দিয়ে ঘরে আনলেন।তারাকে ভেতরে এনেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন লতিফা।
----আমার মিষ্টি।এজন্য তুই বলেছিলি না আমাকে তোর চেনা চেনা লাগছে।তোর জন্য কতো কেদেছি আমি।আমার কতো কষ্ট হতো।কেউ এসে আঁচল ধরে ডেকে বলতো না কাকিমা শোনো।
----আমি তো এখন আছি।আর কেঁদো না কাকিমা।এখন তো আরো তুমি আমার মা।
;;;;;
দরজা খুলে বেশ অবাক হলো তানিয়া।মাথার কাপড় টা একটু টেনে দিল।গলা বাড়িয়ে ডাক দিল ফজলে শেখকে।
----কোথায় গেলেন আপনি?শিগগিরি এদিকে আসুন তো।
ও ঘর থেকে ফজলে শেখ চেঁচিয়ে উওর দিলেন,
----আসছি।কি হয়েছে কি?এতো চেচাচ্ছো কেন?
----আসুন না একবার।
ফজলে শেখকে ডেকে তানিয়া দরজা থেকে একটু সরে দাড়ালো।মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
----লতিফা আপা।কেমন আছেন?
----এই তো।ছেলের বিয়ে দিয়েছি।বউ দেখাতে এলাম তোমাকে।
----আমি কাল ই শুনেছি।যাব যাব করে যাওয়া হয়নি।ভেবেছিলাম বিকেলে যাব।আপনারা চলেই এসেছেন।আসুন আসুন ভেতরে আসুন।
লতিফা প্রথমে ঘরে ঢুকলো।তারপর নাফিজ।তারা নাফিজের দিকে তাকাচ্ছে।ঘরে ঢুকতে ইতস্তত বোধ হচ্ছে তার।নাফিজ ইশারায় তারাকে আসতে বললো।তারা ক্রাচ নিয়ে ঢুকছে।তানিয়া বেশ অদ্ভুত ভাবে চেয়ে আছে তারার দিকে।
----ওমন করে কি দেখছো তানিয়া?
লতিফার প্রশ্ন শুনে পাশ ফিরে তাকালো তানিয়া।
----এটাই কি তবে নাফিজের বউ?
----হ্যা ।কেন?
----এতো পা কেমন,,,।
----জানি।সব জেনেই ওকে বিয়ে দিয়েছি নাফিজের সাথে।
----ওহ।চলুন তো আপা।ভেতরে চলুন।
তানিয়া দরজা লাগিয়ে সবাই কে নিয়ে বসার ঘরে বসতে দিল।এর মধ্যে ফজলে শেখ বসার ঘরে আসলেন।সবাইকে দেখে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে নিজেও আরেক সোফাতে বসলেন।
----নাফিজ,এখন কোথায় পোস্টিং?
----কাকু যশোরে আছি এখন।
----ওহ।আচ্ছা আচ্ছা।
ফজলে শেখ কথার মাঝে তারার দিকে ঘনঘন তাকাচ্ছেন।তারা মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।মাঝে মাঝে মাথা উঠিয়ে ঘরের কোনে কোনে চোখ বুলাচ্ছে।ফজলে শেখের বেশ লাগছে তারার মায়াবী মুখটা দেখতে।
----তোমার নাম কি মা?
ফজলে শেখের কথায় তারা কিছুটা চমকে গেল।
----জি।
----তোমার নাম কি?
----তারা।
----বাহ!বেশ ভালো নাম তো।তোমাকে দেখে বড্ড শান্তি লাগছে মা।
ফজলে শেখের প্রশ্নে চমকে গেল তারা।তিনি কি তাকে চিনতে পেরেছে তবে?
----আমাকে!
----হুম।মাশাল্লাহ।কি সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে তুমি।তোমাদের বাড়ি কোথায়?
----যশোরেই।
----ওহ।বাবার নাম কি?
বাবার নাম কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেল তারা।ফজলে শেখের দিকে তাকিয়ে আছে সে।মুখটা পুরোপুরি ভুলে যায়নি সে।বাবাই বলে ডাকতো।এতো সহজে কি ভোলা যায়?আবছা হলেও তো মনে আছে।ফজলে শেখের চোখে চশমা।মুখ ভর্তি দাড়ি।দাড়িতে পাক ধরেছে।চুল গুলো র কিছু কিছু অংশ সাদা দেখা যাচ্ছে।
তারার বড্ড ইচ্ছে করছে জিজ্ঞাসা করতে,বাবার নাম কি বলবো?তুমিই তো আমার বাবাই।দেখো তোমার এই সুন্দর চেহারার আড়ালে এরকম একটা নিষ্ঠুর লোক লুকিয়ে আছে কেউ কি জানে?
তারার চাহনি দেখে নিজের মধ্যে কেমন একটা বোধ হচ্ছে ফজলে শেখের।ভাসা ভাসা চোখ।ঘোলাটে চোখের মণি।তার মিষ্টিটার চোখ দুটোর মতো।ঠোঁটের কোনে আবার তিল ও আছে।মিষ্টির মুখটা বড্ড মনে পড়ছে ফজলে শেখের।
----কিছু বলবে মা?
----না।
----ওমন করে তাকিয়ে আছো যে?
----কিছু না।
নাফিজ আর লতিফা চুপ করে আছে।তাদের কথা বলার সময় এখনো হয়নি হয়তো।
----তোমার বাবার নাম বললে না যে?
----আব্রাহাম।সৈয়দ আব্রাহাম।
----ও।বাবা কি করেন?
----মেজর।
----ও।তাই তো বলি নাফিজ যশোরে গিয়েই বিয়ে করে আসলো এতো অল্প দিনে।
এর মধ্যে চায়ের ট্রে নিয়ে চলে এসেছে তানিয়া।চায়ের সাথে বিস্কুট ও এনেছে।সবাইকে চা দিয়ে তারার সামনে চা ধরলো তানিয়া।
----নেও মা।
----জি।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তানিয়াকে অদ্ভুত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা।কি সুন্দর ব্যবহার,চুপচাপ একটা ভদ্র মহিলা।অথচ এই মহিলা দা নিয়ে তাকে তাড়া করেছিল।এই মহিলার জন্য ই আজ তারা নিজের পায়ে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারে না।হারাতে হয়েছে তারাকে নিজের শৈশব টা।
তানিয়া নিজে একটা কাপ নিয়ে ফজলে শেখের পাশে গিয়ে বসলো।
----তোমার পায়ে কি হয়েছে?জন্ম থেকেই এমন নাকি?
তারা কি উওর দেবে?তারা নাফিজের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।তারার চাহনি দেখে নাফিজ বললো,
----এক্সিডেন্ট এ এমন হয়েছে কাকিমা।
----ওহ।তাও ভালো মায়ের সন্তান মায়ের কোলে আছে।মা ডাক শোনার জন্য হলেও মায়ের কোলে সন্তান থাকাটা ভাগ্যের।সবাই তো আর,,,।
থেমে গেল তানিয়া।কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার।আবেগে চোখেই পানি চলে এসেছে তার।ফজলে শেখ খেপে গেলেন এটা দেখে।
----থামবে তুমি!নিজের দোষে সব হারিয়েছো।এখন এই ন্যাকা কান্না বন্ধ করো।
----দোষ তোত শুধু তানিয়ার একার নয় ফজলে ভাই।আপনি কি বাবা হয়ে পেরেছিলেন ঐ টুকুন বাচ্চাকে আগলে রাখতে?মা মরে গেছে।তাতে কি হয়েছে?আপনি কি পারতেন না মিষ্টির মা বাবা দুটোই হয়ে উঠতে!
----থাক না ভাবী।আর কতো?পাপের শাস্তি তো পাচ্ছি আমি।
----থাক বললেই সব কিছুর সব সমাধান হয়ে যায় না ফজলে ভাই।আজ আপনার জন্য তানিয়ার জন্য আপনাদের দুজনের কাছে যেটা সামান্য ভুল ছিল সেই সামান্য ভুল টা ঐদিন ছোট্ট মিষ্টিটার জীবন থেকে কত কিছু কেড়ে নিয়েছে জানেন আপনি?হয়তো জানে বেচে গেছে।আল্লাহ বাচিয়ে রেখেছে ওকে।কিন্ত ও কি পেরেছে একটা সুস্থ সাধারণ জীবন যাপন করতে?পেরেছে?আপনাদের সামান্য ভুলের জন্য ঐটুকুন বাচ্চাটা আজীবন ধরে ভুগে যাচ্ছে।
লতিফার কথা শুনে ফজলে শেখ তানিয়া দুজনেই দুজনের দিকে তাকালো।দুজনেই বড্ড উতলা হয়ে উঠেছে।
----আপা।আপনি কিভাবে জানলেন মিষ্টি বেচে আছে?আপা আপনি কি ওর খোঁজ পেয়েছেন ?আপা বলুন না।
----পেয়েছি শুধু তাই না কাকু।মিষ্টিকে সাথে করেই আজ এই বাড়িতে পা রেখেছি আমি।নাহলে মিষ্টি হারিয়ে যাওয়ার পর আপনাদের বাড়িতে আজ অবধি কখনো পা রাখিনি আমি।
নাফিজের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল দুজনেই।তানিয়া ফজলে শেখ দুজনেই একবার নাফিজের দিকে তাকাচ্ছে একবার লতিফার দিকে।দুজনের নজর গেল এবার তারার দিকে।মায়াবি মুখটা বড্ড টান ছিল ফজলে শেখকে।তানিয়ার ও যে বড্ড চেনা মনে হচ্ছিল।শত হলেও ঝাটা লাথি দিলেও কটাদিন তো মিষ্টি তার কাছেই থেকেছে।
তারার ছলছল দৃষ্টি,দৃষ্টি ভরা ক্ষোভ,যন্ত্রনা সব কিছু ভেসে উঠেছে চোখ দুটো তে।
;;;;;
কান্নায় ভেঙে পড়েছে তানিয়া আর ফজলে শেখ।তাদের দুজনের নিষ্ঠুরতা আজ যে মিষ্টিকে কোন অবস্থায় ফেলেছে।
নাফিজ আর লতিফার সব কথা শুনে মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না দুজনে।ফজলে শেখ চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।তারা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।তার চোখে পানি নেই।সে অনেক বেশিই পেয়েছে জীবনে তার পাওনার থেকে।ফজলে শেখ তারার কাছে ছুটে গেল।
----আমার মিষ্টি মা।
তারা দূরে সরে বসলো।
----খবর দার।আপনি একদম আমার কাছে আসবেন না।
----এমন করে বলিস না মা।তোর জন্য কতো কেদেছি এতোগুলো বছর।একবার বাবাই বলে ডাকবি না?
----কিসের বাবাই?কে বাবাই?আমার বাবা একজন।সে আমার বাপি।মেজর আব্রাহাম।আর একজন ছিলেন।যিনি জন্মদাতা।তিনি সেদিন ই আমার কাছে মরে গেছেন যেদিন সবকিছু হারিয়েছি আমি।দু মুঠো ভাতের জন্য ও হাত পেতেছি। তাও কার কাছে!যে কিনা আমার বাবা হয়!আমার মা দুজন।একজন যিনি মারা গেছেন।আর একজন ডা মাহমুদা ।এরাই আমার মা বাবা।আর কেউ নেই আমার।আর এখন এই বাড়িতে আমার পরিচয় আমি নাফিজের স্ত্রী হয়ে এখানে এসেছি।মা চলো।ক্যাপ্টেন চলুন।আর থাকতে চাই না আমি এখানে।
তানিয়া দৌড়ে গিয়ে তারাকে জড়িয়ে ধরলো।
----আমাকে ক্ষমা করে দে মা।ক্ষমা করে দে।আর শাস্তি দিস না।দেখ জীবনে মা ডাকটাই শোনা হলো না আমার।
তানিয়া কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল তারা।নিজেও ক্রাচ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
----কিসের ক্ষমা?আমি কি বুঝতাম বলতে পারেন আপনি?কি দোষ করে ছিলাম আমি?আমার মা ছিল না।কখনো কি দেখতাম আপনাকে সৎ মায়ের চোখে ?আরে মা সৎ নাকি আপন কি বুঝতাম আমি?মা ই তো ডাকতাম।একটু মায়া হতো না?আজ আপনার জন্য আমি নিজের পায়ে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারিনা।কয়েক বছর আগে তো এখন যা আছি সেটাও পারতাম না।হুইল চেয়ারে বসে থাকতে হতো আমাকে।দৌড়ে দৌড়ে বেরিয়েছি এক সময়।আর আজ?আপনার ক্ষমা চাওয়াতে কি ফিরে পাব আমি আমার সব কিছু?
তানিয়া নিঃশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখের পানি ফেলা ছাড়া আজ আর তার কিছুই করার নেই।
ফজলে শেখ এগিয়ে গিয়ে তারার হাত ধরলো।
----আমাকে ক্ষমা করে দে মা।তুই বল এক্ষুণি এই তানিয়া কে আমি বাড়ি থেকে বের করে দেব।
ফজলে শেখের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল তারা।
----কাকে তাড়াবেন?এনাকে?আজ এতো তাড়ানোর কথা বলছেন।এতোই যদি বাবার দায়িত্ব বোধ থাকতো আজ কেন আমি এখানে?কেন ঐরকম ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল আমাকে?আপনারা কেউ হন না আমার।আপনাদের ক্ষমা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ।তার কাছে কি জবাব দেবেন সেটা তৈরী রাখবেন।আমার মা না হয় অকালে ছেড়ে গেছিল আমাকে।আমার কি বাবা ছিল না?আপনাদের সাথে বিন্দুমাত্র কথা বলতে চাইনা আমি। আজ আমার সব আছে।পরিবার স্বামী সংসার সব।আমি আজ খুব সুখে আছি।আপনাদের মতো লোকের নিষ্ঠুরতা আমাকে শেষ করতে পারে নি।হ্যাঁ সব মিষ্টির জীবন টা তারার মতো হয় না।সবাই মেজর আব্রাহাম ডা মাহমুদা র মতো মা বাবা পায় না।কোনো কোনো মিষ্টি হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে,নয়তো পথে ভিক্ষা করে,পাচার হয়ে যায়,শিকার হয় জানোয়ারদের।আলহামদুলিল্লাহ।আমি অনেক ভালো আছি।অনেক।
তারা চোখ মুখে সরে দাড়ালো।
----মা।তুমি আমার মায়ের ছবিটা আমাকে এনে দিতে পারবে?আর আমার ছোট বেলার সব ছবি।এখানে যা আছে।আমার কোনো স্মৃতি এই বাড়িতে থাক আমি তা চাই না।
----চল।
লতিফা এই বাড়ির সবকিছুই মোটামুটি চেনে।কতবার আসা যাওয়া হতো তার।তারাকে নিয়ে খুঁজে খুঁজে একটা শো কেসের মধ্যে কয়েকটা ছবি পেল।রাহেলা বেগমের ছবিও ছিল সাথে।
----কাকিমা তোকে বড্ড ভালোবাসতো রে।তুই হারিয়ে যাওয়ার পর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।বেশিদিন আর তার এই পৃথিবীতে থাকা হলো না।
----দাদীমার ছবি গুলো ও নিয়ে চলো।
ঘর গুলো খুটিয়ে খুটিয়ে নিজের সব কিছু নিয়ে নিল তারা।তানিয়া ফজলে শেখ অনেকবার আটকাতে এসেছে।নাফিজ বাধা দিয়েছে।সবকিছু নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে তিনজন।তারা পেছন ঘুরে পুরো বাড়িটাকে আরেকবার দেখে নিল।একটা সময় ছিল তার সব কিছু কাটতো এই বাড়িতে।আর আজ সে অতিথি।অতিথি হয়েই চলে যেতে চায় সে।
----মিষ্টি মা যাস না আমায় ছেড়ে।
----কাল আমার বউভাত।এলাকার সবাই আসবে।আপনারা বিশেষ অতিথি সেখানে।অবশ্য ই যাবেন কিন্ত।আপনার সামনে দাড়িয়ে আমি আমার বাপিকে বাপি বলে ডাকব,আর আপনার সামনে দাড়িয়ে আমি আমার মা কে মা বলে ডাকব।আপনি আমার আপন মা নন।সৎ।তবুও দেখব আপনাদের জ্বলন টা কেমন হয়।আর আপনি ফজলে শেখ।জন্মদাতা আমার।আপনার সামনে আমি যখন আমার বাপি কে বাপি বলব না সেটাই হবে আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ শাস্তি।আপনি বাবা হয়েও বাবা ডাক শুনবেন না,আর আপনি মা হয়ে।
ফজলেও শেখ আর তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলে বাইরে পা রাখলো তারা।নাফিজ আর লতিফা ও সেই সাথে বেরিয়ে গেল।ফজলে শেখ আর তানিয়ার আর্তনাদ ভেসে আসছে।কিন্ত তারা র কানে আজ কিছুই ঢুকছে না।
ছোট্ট মিষ্টি টাকে যে তারা অনেক আগেই মেরে ফেলেছে।কোমল হৃদয় টা যে আজ পাথরে পরিণত হয়েছে।আজ যে শুধুই তারা।
;;;;;
----এমা!লতিফা নিজের ছেলেকে কেউ এই পঙ্গু মেয়েটার সাথে বিয়ে দেয়?
----তাই তো।রূপ থাকলে কি হবে।আমাদের নাফিজের জন্য কি মেয়ের এতোই অভাব পড়েছিল!
বউ সাজে তারা বসে আছে।পাশে নাফিজ বসা।বাড়ি ভর্তি লোকজন।আজ তারার বউভাত।বেশ বড় করে আয়োজন করেছে নাফিজের পরিবার।দূরে দাড়িয়ে তানিয়া ফজলে শেখ ও দেখছে তারাকে।তারা লজ্জায় আর সামনে যেতে চায়না তারার।
দুজন প্রতিবেশী মহিলার কথা শুনে চোখের কোনে পানি চলে এলো তারার।এমনিতেই সে পঙ্গু এই নিয়ে আশেপাশে অনেকেই অনেক কথা বলছে বউ দেখে।কেউ তো বলছে তারার রূপ আর বাপের সম্পত্তি দেখে হয়তো নাফিজ বিয়ে করেছে।
এবার আর সইতে পারল না নাফিজ।উঠে দাড়ালো।
----সমস্যা কি আপনাদের?আমার বউ হাঁটতে পারে না ঠিকমতো।তো?আমার তো সেই নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই।আমার সংসার আমার স্ত্রী।আমার যদি সমস্যা না হয় আপনাদের এ তো চিন্তা কিসের?আর কি বলছেন সম্পত্তি !আমি নিজে একজন আর্মি অফিসার।আমার বাবাও একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।জমি জমা যাই বলুন আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে এতোটাই কমতি পড়েনি যে আমার টাকার জন্য বিয়ে করতে হবে।আমি যদি আমার জীবন নিয়ে সুখে থাকি আপনাদের কি?দাওয়াত দিয়েছি।আসবেন খাবেন মজা করবেন।চলে যাবেন।আপনাদের কি খোচা মারার জন্য এখানে ডাকা হয়েছে?আর এই যে আপনারা দুই কাকিমা যে এমন কথা বলছেন, আপনাদের দুজনের দিকটা একটু দেখুন।
দুজনের মধ্যে একজনকে উদ্দেশ্য করে বললো নাফিজ,
----আপনার মেয়ে না পালিয়ে বিয়ে করেছিল শুনেছিলাম।তাও নাকি বিয়ের আগে অঘটন ও ঘটিয়েছিল।তা সেই বিষয় টা সবাই জানে তো?সবাইকে বলুন না।সবাই শুনুক।
দ্বিতীয় জনের দিকে তাকালো নাফিজ,
----আপনার ছেলের বউ এর কি গুন আছে বলুন তো কাকিমা।আমার মায়ের কাছে তো বেশ এসে এটা ওটা বলতেন,দেখতে খারাপ,এটা পারেনা ওটা পারেনা।লেখাপড়ার কথা বাদ ই দিলাম।
নাফিজের কথা শুনে মাথা নিচু হয়ে গেছে অনেকেরই।পুরো বাড়িতে যেন স্তব্ধতা বিরাজ করছে।
----অন্যের ব্যাপারে নাক গলিয়ে এটা দেখানোর প্রয়োজন নেই যে আপনার নাক কত লম্বা।অন্যের মেয়ের সমালোচনা করা বন্ধ করুন।আপনারা অনেকে নিজে মেয়ে হয়েও কিভাবে অন্য একটা মেয়েকে অপমান করেন বলুন তো?আজ যদি আপনার সন্তানের সাথে কোন দুর্ঘটনা ঘটে।সে যদি পঙ্গু হয়ে যায়।তখন কি নিজের সন্তানকে ও এমন কথা বলবেন?
নাফিজের কথা শুনে আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগমের চোখের কোনে পানি চলে এসেছে।তারা যে ভুল মানুষকে বাছেনি তারার জন্য এটা যেন আজ প্রমাণিত।সবার সামনেই হুট করে নাফিজ তারাকে কোলে তুলে নিল।তারা তো অবাক।সাথে বাকিরাও।
----তিন কবুল বলেছি নিজের স্ত্রীর অপমান সহ্য করার জন্য নয়।আমার স্ত্রী।সে সুন্দর হোক অসুস্থ হোক অসুন্দর হোক যাই হোক সে আমার স্ত্রী।সে একান্ত ই আমার।তার সবকিছু আমার।তার দিকে কেউ আঙুল তোলা মানে আমার দিকে আঙুল তোলা।আজ এখানে যারা আছে সবাই কে বলছি আর যদি কখনো আমার স্ত্রীকে অপমান করার মানসিকতা নিয়ে আসেন তো বলে রাখছি আপনি যেই হোন আত্মীয়তার সমাপ্তি ঘটিয়ে দেবেন।আমার সংসার আমি করব।আপনারা না।আপনাদের থাকা না থাকাতে আমার কিছু যায় আসে না।আমার স্ত্রী র থাকাটাই আমার কাছে বড়।
;;;;;
রাত নেমেছে।তারাকে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে নাফিজ।উদ্দেশ্য ছাদ।সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে।
----কি করবে বলোতো?এতো রাতে ছাদে কেন?
----চুপ কর।কথা বলবি না।
তারা চুপ হয়ে গেল।একটু আগে ফুলে সজ্জিত বাসর ঘরে দ্বিতীয় বারের মতো বসে ছিল সে।পুরো বাসর ঘরটা আজ নয়নতারা ফুল দিয়ে সাজিয়েছিল নাফিজ।আজ নিজে হলুদ পানজাবি পড়ে তারাকে নিজ হাতে নীল শাড়ি পড়িয়ে ,সাজিয়ে নাফিজ ছাদের দিকে এগোচ্ছে।অবশেষে যাত্রা শেষ হলো।তারাকে নিয়ে ছাদের ওপরের দোলনাটাতে বসালো নাফিজ।
তারা অবাক হয়ে পুরো ছাদ টা দেখছে।পুরো ছাদ টা ই যেন নয়নতারা বাগান।সব নয়নতারা ফুলের গাছ।
----কি দেখছিস?
----এতো ফুল!
----হুম।মিষ্টি তুই ছোট বেলায় একবার বলেছিলি নয়নতারা বেশি ভালো লাগে তোর।তার পর থেকে অন্য সব গাছ উপড়ে ফেলে এগুলোই লাগাতাম।
----অনেক সুন্দর।
----একটু দাড়াও।
নাফিজ উঠে গিয়ে ছাদের কর্নারের দিকে গেলো।সেখান থেকে ফিরলো হাতে দুটো নয়নতারা ফুলের মালা নিয়ে।নাফিজ এনে তারা সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।একটা মালা তারার গলায় পড়িয়ে দিল।আরেকঁ টা তারার মাথায় দিল।তারা অবাক হয়ে দেখছে নাফিজের কান্ড।
----আমার নয়নতারা রাজ্য আজ পরিপূর্ণ হলো।আমার রাণী আজ আমার।শুধু আমার।
তারার হাতে চুমু খেল নাফিজ।
----ভালোবাসি বউ সোনা চাঁদের কনা।
----ভালোবাসি ক্যাপ্টেন নাফিজ ভাইয়া।
"নিশি রাতের চাঁদের ছায়া,
তোমার মাঝে আমার মায়া,
ভালোবাসার এই রজনী,
কাটাব দুজন বুলবুল বুলবুলি,
আমার হলুদ পানজাবির মাঝে
তুমি লজ্জা মাখা মুখটা লুকাবে,
আর আমি তোমার নীল শাড়ির আঁচলহব
জড়িয়ে নেব এই বুকেতে।
আমি হিমু,
তুমি রূপা"।
নাফিজের কবিতা ছুটে হেসে উঠলো তারা।