মেয়েলী কন্ঠ শুনে নাফিজ যতোটা না অবাক হলো তার থেকে বেশি অবাক হলো এটা শুনে যে এটা তার পরিচিত মায়াবিনীর কন্ঠ।
----এখনো কি কাকতাড়ুয়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি উওর দেবেন!
নাফিজ লজ্জায় শেষ।পারলে মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেত।তবুও বুকে সাহস জুগিয়ে চোখ মুখ খিচে পেছনে তাকালো।
সাদা রঙের ফুল হাতা লং গাউন,উপরে সাদা হিজাব,গায়ে কালো রঙের শাল পরিহিত অবস্থায় তারা নাফিজের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ক্রাচের ওপর ভর করে দাড়িয়ে আছে।
তারাকে দেখে নাফিজ খুশি হবে নাকি ভয় পাবে নাকি লজ্জা পাবে এটাই তো বুঝতে পারছে না নাফিজ।
----তারা আপনি?
----হ্যাঁ আমার বাড়ির সামনে তো আমি ই থাকব।
----তা তো থাকবেন ই।
নাফিজ এক হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে, একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তারার দিকে।চোর চুরি করে ধরা পড়লে যে অবস্থা হয় তার থেকেও বেজায় বেগতিক অবস্থায় নাফিজ নিজের চেহারা করে রেখেছে।
----আপনি তো এটা বললেন না অন্যের বাড়িতে উঁকি দেওয়ার ট্রেনিং কোথ থেকে শিখেছেন?
----আরে কি বলছেন আমি কেন উঁকি দেব।আসলে আজ শুক্রবার তাই ভাবছিলাম সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
----তাই বলে এতো সকালে!সকাল বললে ভুল হবে এতো ভোরে!
----হ্যাঁ।
----ক্যাপ্টেন আপনি কি জানেন কথা একটা ভয়ঙ্কর রোগ।কথা যদি মিথ্যা হয় তবে আপনি তাতে জ্বলতে বাধ্য।আর কথা যদি সত্যি হয় আপনি জিতবেন।ইহকালে সত্যি র জন্য হাজারো বিপদের সম্মুখীন হলেও ঐ পরকালে আপনিই জিতবেন।আপনিই বলুন সত্যি কি কথা একটা ভয়ঙ্কর রোগ নয়?
নাফিজ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।তারার প্রত্যেকটি কথা যে বুলেটের মতো তাকে ঘায়েল করে দিয়েছে।
----আপনি কি জানেন ক্যাপ্টেন,আমাদের দু কাঁধে দুই ফেরেশতা থাকে।বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে তখন এই মিথ্যার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা দূরে চলে যায়।এতোটাই জঘন্য একটা মিথ্যা।একটা মিথ্যার জন্য হাজার টা মিথ্যার জন্ম নেয়।
----তবে কি আমি সত্যি টা বলব?
----অবশ্যই।
----আপনি সহ্য করতে পারবেন তো?
নাফিজের কথা শুনে তারার ভেতর যেন এক অজানা শিহরণ বয়ে গেল।সে তো এটাই ভেবে পারছে না কি এমন কথা বলবে নাফিজ যে সে সেটা সহ্য করতে পারবে না।
----তারাননুম আপনি কি ভাবছেন?
----কিছু না।
----সহ্য করার ভয় পাচ্ছেন?
নাফিজের কথা শুনে তারা এক পলক নাফিজের দিকে তাকালো।নাফিজের মুখে রহস্যময় হাসি।
----আপনি নিশ্চয়ই এখন বন্দুক হাতে নিয়ে আমাকে গুলি করবেন না?
----মানে!আমি কেন আপনাকে গুলি করতে যাব!
----তাহলে সহ্য না করার প্রশ্ন আসছে কেন?
----আসলে কি জানেন তারা কিছু কথা আছে যেটা বুলেটের থেকে ও শক্তিশালী একদম হৃদয় ভেদ করে চলে যায়।কিন্তু তার চিহ্ন থাকে না।
----আপনি কি বলবেন?
----সৌন্দর্যকে দেখার অধিকার খুঁজছিলাম।সৌন্দর্য যে প্রকৃতির অপরূপ লীলা।বারবার টানে।কি করব বলুন?
নাফিজের এইটুকু কথাতেই তারা যেন ভেতর থেকে কেঁপে কেঁপে উঠছে।"অধিকার"!এই অধিকার শব্দ টা তারার কানে বাজছে। কেন আসছে এই অধিকারের কথা?তারা বুঝতে পারছে না।
----আমি তো সামান্য একটা কথা বললাম তারা আপনি এতেই কেঁপে উঠছেন?
নাফিজের কথায় তারা ঈষৎ কেঁপে উঠলো আরো একবার।কাপা কাপা দৃষ্টিতে তাকালো সে নাফিজের দিকে।নাফিজের ঠোটের কোনে এক বাকা হাসি।
----কই না তো?ঠান্ডা বাতাস বইছে।
----তারাননুম আপনি কি জানেন মিথ্যা একটা ভয়ঙ্কর রোগ?
নাফিজের কথাতে এবার তারা নিজেই ফেসে গেল।যেন সে নিজেই খাল কেটে কুমির কে দাওয়াত দিয়েছে।
----কি হলো তারা কথা বলবেন না?
----আমি আসি।
তারা আসতে আসতে ঘুরতে গেলেই নাফিজ বাধা দেয়।
----আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন?
তারা থেমে গেল।পেছনে ঘুরলো আবার।
----সকালে হাঁটা চলা করতে পছন্দ করি।এটাকে এড়িয়ে যাওয়া,,,,,,,,,,,
"মার ঝাড়ু,মার ঝাড়ু ,
মেরে ঝেটিয়ে বিদেয় কর,
যত ধুলো ময়লা
আকাল ছোবলা
ঝেটিয়ে বিদায় কর"।
তারার কথা শেষ করার আগেই গাসু গান গাইতে গাইতে ঝাড়ু নিয়ে হাজির।এতক্ষণ সে বাগান পরিষ্কার করছিল।
----আরে তারা আফা এই সেই হ্যান্ডলুম ফুলচোর অফিসার ডা না?
গাসুর কন্ঠ শুনে তারা পাশ ফিরে তাকালো।
----এই এলেন আরেকজন।কথা টা শেষ করতে দিল না।
নাফিজ গাসুকে দেখে মনে মনে বিড়বিড় করছে।
----আহ গাসু সম্মান দিয়ে কথা বল।ফুলচোর এটা কোন কথা?
----আফা যাই কন আমি এই অফিসার রে ফুলচোর ই বলমু।
----গাসু তুমি,,,,,,,,
----থাক না।উনি যা বলবে বলুক।
তারাকে থামিয়ে দিল নাফিজ।
----আপনি আমাকে কিভাবে দেখলেন এটা তো বললেন না তারা।
----আয়না।
----আয়না!
তারা নাফিজ কে হাত দিয়ে ইশারা করে বাড়ির নিচ তলার বাম পাশের দিকে জানালার থাই গ্লাসের দিকে তাকাতে ইশারা করলো।নাফিজ তাকিয়ে দেখে সেখান থেকে স্পষ্ট এই মেহগনি গাছটা দেখা যাচ্ছে।তার পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেটাও। নাফিজ আরো লজ্জা তে পড়ে গেল।
----বুঝলেন তো?
----জি।
----কাজটা ঠিক করেননি।আমি বেপরদা অবস্থায় কারোর সামনে যাই না।
তারার কথায় নাফিজ আরেক ধাপ লজ্জা পেল।সে আসলেই কাজটা ঠিক করেনি।
----আমি দুঃখিত তারা।
নাফিজের কথায় তারা আর কিছু বললো না।
----গাসু চলো।এবার আমরা হাঁটতে যাই।
----আমিও আপনার সাথে যেতে চাই।
নাফিজের কথা শুনে তারা আরো চমকে গেল।
----আমার সাথে?
----মানে আপনাদের সাথে।সকালের আবহাওয়া।একা একা হাঁটতে কি ভালো লাগে।তাছাড়া আপনারা দুজন আছেন। সমস্যা হবে না নিশ্চয়ই?আর আপনারা দুজন এতো সকালে হাটবেন।বিপদ আপদ বলে ও তো একটা জিনিস আছে।
----বিপদ আপদ!
----তা নয় তো কি।এরকম একটা সিনড্রেইলা যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়ায় না জানি কোথ থেকে কে দেখে ফেলবে।না একদম মানব না আমি।আপনাকে অন্য কেউ কেন দেখবে?
শেষ কথা গুলো নাফিজ আর জোরে জোরে না বরং বিড়বিড় করে বললো ।
----কি বিড়বিড় করছেন ক্যাপ্টেন?
----আমি কি যেতে পারি আপনার মানে আপনাদের সাথে?
তারা নাফিজের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।
----এই যে অফিসার আইজকে যদি ফুল চুরি করতে আসেন আপনারে কিন্তু ঝাটার বাড়ি দিমু বলে দিলাম।
গাসুর কথা শুনে নাফিজ রহস্যময়ী হাসি দিল।
----হাসতেছেন কেন?
----আপনাদের বাগানের যে সে ফুল না।সবচেয়ে সুন্দর ফুলটাকে নিয়ে যাব।তাও চুরি না জনসম্মুখে ডাকাতি করে।
নাফিজ গাসু কে কথা বলেই তাকিয়ে দেখে তারা বেশ দূরে চলে গেছে।নাফিজ ও দৌড় দিল তারা পেছনে।
----আচ্ছা এই ফুলচোর টা কি কইলো?
গাসু সামনের দিকে তাকিয়ে ঝাড়ু ফেলে নিজেও দৌড় দিল।
----আরে তারা আফাআআ,খাড়ান আমি যামু।
;;;;;
মাহমুদা বেগম চায়ের কাপে কেটলি থেকে চা ঢালছেন। পাশে আব্রাহাম সাহেব খবরের কাগজে মুখ গুঁজে বসে আছেন।
----তারা মা এখনো আসছে না কেন?সেই কোন সকালে বেরিয়েছে।
----চিন্তা করো না।চলে আসবে।গাসু তো আছে সাথে।
----সেটাই। গাসু ওর অনেক খেয়াল রাখে।কম দিন কি হলো বলোতো।আদিবাসী হয়েও কি সুন্দর আমাদের সাথে মিলে থাকে।দেশের বাড়ি ও যেতে চায়না।কতো বছর ধরে আছে ও।
----তোমার মেয়ের ভালোবাসা পেয়ে যে কেউ ওর কাছে থাকতে চাইবে।
----তা ঠিক বলেছো।
----ও তোমাকে তো বলা হয়নি।
----কি মাহমুদা?
----কাল রাতে রাশেদা আপা ফোন করেছিল।
----ও।কি বললো?
----আপার ছোটো মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
----ছেলে কি করে?
----ইঞ্জিনিয়ার।ভালো পরিবার।
----যাক ভালো হলেই ভালো।
----আমার চিন্তা হচ্ছে অন্য বিষয় নিয়ে।
----কি?
----তারা কে নিয়ে।
----ওকে নিয়ে কিসের চিন্তা?
----আমার ফুটফুটে মেয়েটা।কি সুন্দর নিষ্পাপ মুখটা।অথচ দেখো ওর একটা পায়ের সমস্যা র জন্য আর পাঁচটা সুস্থ মেয়ের মতো চলতে পারে না।খুব কষ্ট হয় জানো তো।ও ওতো বড় হচ্ছে।আমি তুমি বা কদিন বাচবো। আমাদের তো বয়স হচ্ছে।আমাদের কিছু হলে ওকে কে দেখবে।
----চিন্তা আমার ও হয় মাহমুদা।ওর কতো ভালো ভালো প্রস্তাব এসেছিল বলোতো।সেই ছোট থেকে।ওর স্কুল লাইফ থেকে তাই কতো জনে ওর জন্য প্রস্তাব দিত।শুধু ওর অসুস্থ তার জন্য সবাই,,,,।বাদ দেও।আল্লাহ্ দেখবেন।
----আমার মেয়ে টা কতো কষ্ট পাবে বলোতো।সেই ছোট থেকে না জানি কতো কষ্ট পেয়েছে ও।তারপর গাড়ি এক্সিডেন্ট এর পর ও পা টা তেও অসুবিধা হলো।আল্লাহ্ কি ওকে এভাবে রাখবেন বলো?
কেদেই দিয়েছে মাহমুদা বেগম।
----কেঁদো না মাহমুদা।দেখো আমাদের তারাকে আল্লাহ্ নিশ্চয়ই অনেক অনেক ভালো কিছু দেবেন।
----তাই যেন হয়।
;;;;
নামাজের পাটিতে বসে চোখের পানি ফেলছে তানিয়া।
----আল্লাহ্ মাফ করে দেও তুমি আমাকে।মিষ্টিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেও।অনেক অন্যায় করেছি ওর সাথে।আল্লাহ্ যেখানে রেখো ওকে ভালো রেখো তুমি।আমার কোলে ওকে ফিরিয়ে দেও।
;;;;;
মানুষের জীবনটা একদম কচু পাতার ওপরে থাকা বৃষ্টির পানির মতো।এই আছে এই নেই।হোক সে জীবন বা সুখ বা দুঃখ।
আজ তানিয়ার জীবনটা ঠিক সেই পানির ফোঁটার মতো।তার জীবনের সুখটা এভাবেই কচু পাতা থেকে ঝড়ে পড়ে গেছে।
----তোর ঐ ন্যাকা কান্না আর কাদবি না।আমার মিষ্টির আর কতো খারাপ চাইবি তুই!
নামাজের মধ্যে ফজলে শেখের কথা শুনে আরো ডুকরে কেঁদে উঠলো তানিয়া।
;;;;;
----শীতের আকাশটা দেখেছেন?কুয়াশা ঢাকা।সব কিছু কেমন ঝাপসা। যেন রঙতুলিতে আঁকা ছবি।
নাফিজের কথায় আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল তারা।খোলা জায়গায় তারা দাড়িয়ে আছে।একপাশে নাফিজ তার একটু দূরত্ব বজায় রেখে তারা।গাসু এদিক ওদিক ঘুরছে আর মেহগনি ফল খুটছে।
----এতে দেখার কি আছে?শীতকালে তো কুয়াশা থাকবেই।
----আমিও সেটাই ভাবছি এতে দেখার কি আছে?
নাফিজের কথায় আরো বিস্মিত হলো তারা।তারার অবাক চাহনি দেখে নাফিজ মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো।
----আপনি হাসছেন কেন ক্যাপ্টেন?
----আপনি সেই কখন থেকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে।এজন্য বললাম।
----ওহ।
----কি দেখছিলেন এতো মনোযোগ দিয়ে?
----দেখছিলাম না।
----তাহলে?
----খুঁজছিলাম।
----কি খুঁজছিলেন?
----রংধনুর রেখা।
----রংধনু এরকম কুয়াশার মধ্যে!
----সম্ভব না তাই তো।
----অনেকটা।
----আমার জীবনটা না এই কুয়াশার মতো ঝাপসা।কিছুই পরিষ্কার নয়।আমি অপেক্ষা করি এক রংধনুর।যেটা এই কুয়াশা ভেদ করবে তার সাত রং এর রেখা তুলবে।
----পেয়েছেন কি সেই রংধনু?
----না পাইনি।তবে কেন জানি মনে হয় পেয়ে যাব।আল্লাহ খালি হাতে আমাকে ফেরাবেন না।
----বুঝলাম না আপনার কথা।
----এক রংধনুর দেখা পেয়েছি।কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না এটা সেই রংধনু কি না যার আলো দেখবার অপেক্ষা আমি করি।আমি যে হারিয়ে ফেলেছি সব কিছু।শুধু একটা শব্দ ই মনে আছে।রংধনুর রং।আর সব ভুলে গেছি।জানি না চিনতে পারব কি না।আর সে ও আসবে কি না।
তারার কথা শুনে নাফিজের ভেতরে একটা চিন চিন ব্যথা অনুভব হলো।কার অপেক্ষা করে তারা?কোন রংধনু?নাফিজ কি আরেকবার হারাবে নয়নতারা বাগানের রানীকে!
----আপনার কথা বুঝতে পারছি না তারাননুম।
----জীবন।আমার না অনেক স্বপ্ন আছে জানেন।স্কুলে সবাই যখন দৌড় প্রতিযোগীতা তে নাম দিত আমার ও ইচ্ছে হত আমি ও দৌড়ে যাই ওদের সাথে।ছিনিয়ে আনি ট্রফি।কিন্তু দেখুন আমি তো তা পারব না।হাঁটতেই পারিনা ঠিকমতো দৌড় তো বাদ ই দিলাম।এরকম ইচ্ছের কথা বলছি।রংধনুর মতো আমার জীবনের সব কুয়াশা কাটিয়ে যদি এই স্বপ্ন গুলোকে ছুঁতে পারতাম।
----ওহ!আমি ভাবলাম!
----কি?
----কিছু না।
----হুম।
----আপনার আর কি কি স্বপ্ন আছে?
----স্বপ্ন তো অনেক আছে।প্রশস্ত রাস্তা হবে।চারপাশে ধানক্ষেত।আমি সাইকেল চালাব।সামনে থাকবে ছোট্ট ঝুড়ি।ঝুড়ি ভর্তি ফুল থাকবে।
----আর?
----আপনি বাসায় যাবেন না?
----যাব।কিন্তু যেতে মন চাইছে না।
----নয়টা বেজে গেছে।সেই কোন ভোরে এখানে এসেছেন।
----নয়টা?এতো সময় হয়ে গেছে।
----হ্যাঁ।
----এতো তাড়াতাড়ি সময় টা যাওয়ার কি খুব দরকার ছিল?
নাফিজের কথায় ভড়কে গেল তারা।
----মানে?
----কিছু না।চলুন আপনি ও বাসায় যাবেন না?
----হুম।
----তারা একটা কথা ছিল।
----বলুন।
----আপনি কি প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হবেন?মানে এ কদিন তো শুধু বাড়ির সামনে ঘুরতেন।
----হ্যাঁ।ডাক্তার বলেছে হাঁটাহাটি করতে।ধীরে ধীরে পায়ের আরো ইমপ্রুভ হবে।এজন্য মা ও আর নিষেধ করেনি।
----আমি কি আপনার সাথে আসতে পারি?
----আপনি?কেন?
----এমনি।হাঁটতে ভালো লাগবে।আর একা হাঁটতে কেমন লাগে তাই।
নাফিজের কথার উওরে তারা শুধু নাফিজের দিকে এক পলক তাকালো।আর কিছু বললো না।তারা গাসুকে ডাক দিল।
----গাসু, গাসু,,,।
----হ্যাঁ আফা।
----চলো আমরা বাসায় যাই।
----আইতেছি।
গাসু তারার কথায় দৌড়ে চলে এলো।
----আপনি কিন্তু বললেন না তারা?
----কি বলবো?
----আমি কি আসতে পারি আপনাদের সাথে?
----এতোদিন কি বাড়ির সামনে অনুমতি নিয়ে উঁকি দিতেন?
তারার কথায় নাফিজ ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেল।তারা মুচকি হেসে গাসু কে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
;;;;;
রাতের বেলা খাওয়ার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে নাফিজ আর তার পরিবার।
----নাফিজ।
----বলো বাবা।
----এবার কি করবে ভেবেছো?
----কিসের কি?
----দেখো আমাদের বাড়ি টা তো পড়ে আছে।কেউ থাকি না।এভাবে কোয়াটারে থাকতে আমার ভালো লাগে না।তুমি তো জানো আমি এতোদিন বাইরে বাইরে চাকরি করেছি।অবসরের সময় টা খোলা হাওয়ায় কাটাতে চাই।
----বাবা তোমার কথা বুঝছি না?
----তুমি এইবার একটা বিয়ে কর।সংসার শুরু কর।তোমাকে রেখে তাহলে নিশ্চিন্তে আমি আর তোমার মা আমাদের ভিটে তে ফিরে যেতে পারব।বুঝেছো?
----হ্যাঁ বাবা।
খাওয়া শেষ করে নাফিজের বাবা উঠে চলে গেলেন।নাফিজ বসে বসে প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করছে।লতিফা আড়চোখে দেখছে ছেলের কান্ড।
----নাফিজ।
----বলো।
----খাচ্ছিস না কেন?
----খাচ্ছি তো।
----একটা কথা বল তো।
----কি?
----ঐ সিএম এইচ এ তোর এক স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল না।
----হ্যাঁ।
----ওনার মেয়ে নাম কি যেন?
----তারা।
----তারার প্রতি তোর দৃষ্টি আমার স্বাভাবিক লাগল না।
মায়ের কথা শুনে ধরফরিয়ে নড়েচড়ে বসলো নাফিজ।
----মানে?
----মানে তুই ভালো করে জানিস।যাই করবি ভেবে করবি।শুধু বলব তোর অতীত টাকে আর আঁকড়ে থাকিস না।একটা সামান্য আশা নিয়ে নিজের জীবনটা এভাবে কাটিয়ে দিস না।
----আমি কি করছি জানিনা মা।শুধু এইটুকু বলতে পারি আমি নতুন পথের সন্ধান খুজছি।আমি সেই পথেই পা দিয়েছি।জানিনা কি হবে।নিয়তি কি আমাকে আবার পিছলে ফেলে দেবে নাকি দাঁড় করাবে।
;;;;;
টেবিলে বইয়ের ওপর মুখ গোমড়া করে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে তারা।
----কি হয়েছে তারা?
মাহমুদা বেগমের কথাতে মাথা তুললো তারা।
----কিছু না মা।
----সকাল থেকে দেখছি অন্যমনস্ক হয়ে আছো।
----কিছু না।
----শোনো সামনের শুক্রবার বিনোদিয়া পার্কে পিকনিক ইউনিট থেকে।
----ও।সবাই থাকবে।
----হ্যাঁ ফ্যামিলি ম্যানদের তো সবাই থাকে।
----ও।
----খেতে এসো।আমি কি এখানে খাবার দেব?
----না তুমি যাও। আমি আসছি।
----আচ্ছা।
মাহমুদা বেগম চলে গেলে তারার মাথায় অন্য প্রশ্ন ঘুরছে।
----আচ্ছা ক্যাপ্টেন ও কি থাকবে ? উনি আসবে তো?