শ্রাবণ একবার আলিয়ার দিকে তাকালো। সে থেকে থেকে মৃদ্যু কেপে উঠছে। শ্রাবণের হাতটাও কাপছে। কাপা হাতে রিংটা শক্ত করে ধরে আছে। আলিয়ার দৃষ্টি শ্রাবণের দিকে। আলিয়া শ্রাবণের চোখে কিছু একটা দেখতে পাচ্ছে। এই "কিছু একটা" কি সে জানে না! বেদনা? নাকি রাগ? বুঝে উঠতে পারছে না আলিয়া।
শ্রাবণ আলিয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে রিংটা অনেক জোড়ে বাইরের দিকে ছুড়ে মারে৷
আলিয়া ভাবতেও পারেনি এমন কিছু করে বসবে শ্রাবণ! সে ঘটনার আস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় এবং মুখ দিয়ে আপনি-আপনি বেরিয়ে আসে "আল্লাহ কি করলা এটা?"
শ্রাবণ করুন চোখে আলিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, ওটা পচা। ভালো না। তাই ফেলে দিয়েছি৷
আলিয়া বলল, কে বলেছে ওইটা পচা?
--আমি জানি।
আলিয়া আর কিছু বললো না।
শ্রাবণ পুনরায় বলে উঠে, আমাকে খেতে দাও। অপেক্ষা করছি আমি।
আলিয়া মসিবতে পড়ে গেল। সে শ্রাবণ কে নিয়ে দারোয়ানের রুমে আসল। দারোয়ান চাচা জেগে ছিল।
আলিয়া প্রায় ফিসফিস গলায় দারোয়ান কে বলে, চাচা। ওকে আপনার সঙ্গে কিছুক্ষন রাখেন। আমি আসছি৷
দারোয়ান সাহেব কিছুক্ষন শ্রাবণ কে দেখে বলে,এটা ওই ছেলেটাই না যে প্রোগ্রামে এসে ঝামেলা করছিল?
--জি। তারপরও শ্রাবণ এখন আপনার সঙ্গে থাকবে। আমি আসছি।
আলিয়া যেই না পা বাড়াবে শ্রাবণ খপ করে তার হাত ধরে ফেলে। আচমকা শ্রাবণের বরফ শীতল হাতের ছোয়া পেয়ে কেপে উঠে আলিয়া। সে অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
শ্রাবণ বলে উঠে, আমাকে রেখে যেও না প্লিজ৷ আমি একা থাকতে চাই না আর।
আলিয়া করুনার চোখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে, কোথাও যাচ্চি না তো। জাস্ট দুই মিনিট দাও। খাবার আনতে যাচ্ছি আমি।
শ্রাবণ হাসল।
আলিয়া আর দেরি না করে বাসায় ঢুকে পড়ে। তারপর চোরের মতো কোন প্রকার জোড়ে শব্দ না করে খুবই সাবধানে ভাত বসালো। দুপুরের রান্না করা গরুর মাংস গরম করে, পনের-বিশ মিনিট পর বাসার বাইরে এসে দারোয়ানের রুমে ঢুকে পড়ল সে।
শ্রাবণ মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে আছে। আলিয়াকে আসতে দেখে সে মুচকি হাসল৷
আলিয়া অবাক হলো। কি সুন্দর শ্রাবণের হাসিটা। হাসলে মনে হয় তার চোখও হাসছে।
শ্রাবণ আলিয়াকে প্রশ্ন করল, কি এনেছো আমার জন্য?
আলিয়া বিনীত গলায় বলে, ভাত আর গরুর মাংস।
তারপর প্লেটটা বাড়িয়ে দেয়। শ্রাবণ প্লেট হাতে নিয়েই খাওয়া শুরু করতে চাইল। আলিয়া আটকে দিয়ে বলে, হাত ক্লিন করো আগে।
শ্রাবণ আলিয়ার কথা না বুঝে তার দিকে তাকিয়ে রইল। আলিয়া পরম যত্নে শ্রাবণকে বেসিনের সামনে দাড় করিয়ে হাত ধুইয়ে দেয়।
তারপর শ্রাবণ খেতে বসল। শ্রাবণ বেশ তৃপ্তি করেই ভাত মাখিয়ে খাচ্ছে। শ্রাবণ খুব সুন্দর করে খাচ্ছে। চারপাশ ভাত ছড়াচ্ছে না কিংবা নষ্ট ও করছে না খাবার। তবে খুব দ্রুত খাচ্ছে সে। যেন খুব তাড়া তার!
আলিয়া আস্তে করে বলে, ধীরে ধীরে খাও।
শ্রাবণ আলিয়ার কথা শুনে আস্তে খাওয়া শুরু করল। আলিয়া মুচকি হাসল।
শ্রাবণ খাওয়া শেষ করল। তারপর আলিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, গরুর মাংসটা খুব মজা হয়েছে৷
কথাটা একদম আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো করেই বলল সে। আলিয়া এজন্য কিছুটা হতভম্ব হলো।
শ্রাবণ নিজ থেকে উঠে গিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে নিয়ে আলিয়ার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আলিয়ার ওড়না দিয়ে হাত ও মুখ মুছল।
তারপর বললো, আমার ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাব আমি।
আলিয়া চিন্তিত গলায় বলে, বাসায় যাও তুমি।
শ্রাবণ ভ্রু কুচকে বলে, আমার বাসা নাই।
--মানে?
--আমার তো বাসা নাই।
আলিয়া অবাক হয়ে গেল এবং বলল, তুমি কোথায় থাকো?
শ্রাবণ মাথা চুলকে বলে, জানি না তো!
আলিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। কি করবে সে?
শ্রাবণ দারোয়ানের রুমের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে, আমার বোধহয় জ্বর এসেছে। চেক করে দেখো!
আলিয়া শ্রাবণের কথা অনুযায়ী তার কপালে হাত রাখে। সত্যি ভীষণ জ্বর যাচ্ছে শ্রাবণের গা বেয়ে।
আলিয়া ঘাবড়ে যায়। এই মূহুর্তে কি করা উচিত তার?
শ্রাবণ আলিয়ার হাতটা তার কপালে চেপে ধরে বলে, ভালোবাসি তোমাকে আলিয়া! তুমি কি আছো আমার কপালে?
একজন ভারসাম্যহীন মানুষের কাছ থেকে এমন কিছু শুনবে আশা করেনি আলিয়া।
.
.
.
চলবে.............................