বিকেলে ইনশিতা সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। আকাশে বৃষ্টি নেই, তবে যখন তখন এসে পড়তে পারে। কেউ দেখলে বলবে না যে এখন বিকেল, একদম সন্ধ্যার মতো সময়টা। বাতাসে কেমন মিষ্টি গন্ধ। ঝিরিঝিরি বাতাস গায়ে মাখিয়ে নীলচে কালো আকাশের নিচে বসে থাকতে মন্দ লাগছে না। গতকালই জেহের এই রিসোর্টে নিয়ে এসেছিল তাকে। ইনশিতা জানে না কেন। পুরোটা ভাড়া করেছে সে। এখান থেকে সমুদ্রের গাঢ় নীল পানি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। বড় বড় ফেনীল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। আকাশ আর সমুদ্র মিলন দৃশ্য দেখে ইনশিতার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
মনটা ছটফট করছে এক্ষুনি ছুটে গিয়ে সমুদ্রের বুকে ঝাঁপ দিতে। তবে যেতে পারছে না সে। জেহেরের কড়া আদেশ সে ছাড়া যাতে সমুদ্রের দিকে পা বাড়ানোর ভুল না করে। তাই পুলের নীল পানিতে পা ডুবিয়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করছে সে।
ইনশিতা মাথা বাড়িয়ে একটু উঁকি দিলো। কালো চশমা আর শার্ট প্যান্টে ফিমেল গার্ড তাকে দূর থেকে নজর রাখছে এখনো। ইনশিতা আরো কিছুক্ষণ থেকে রুমের ভেতর চলে গেল। রুমটাও বেশ বড়। বিছানা থেকে দেয়াল সব সাদা রঙের। এতক্ষণ বসে থেকে কী করবে? জেহের আবার কোথায় গেল?
বসে থেকে কোনো কাজ না পেয়ে রুমে অ্যাটাচড করা টিভি চালিয়ে দিলো। চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে হুট করে একটা চ্যানেলে চোখ আটকে গেল। ইনশিতার হৃৎস্পন্দন দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। সে দৌড়ে এসে টিভির সামনে দাঁড়াল। চোখ বড় বড় করে দেখতে লাগল সে। টিভির বড় পর্দায় দেখাচ্ছে Chris Hemsworth কে। ইনশিতা বলে বোঝাতে পারবে না এই লোকটাকে সে কত্ত পছন্দ করে। এই একটা সিরিয়াস ক্রাশ খেয়েছিল সে জীবনে। একটা মুভিও সে বাদ দেয়নি তার, সবগুলাকে কতবার যে রিপিট করে দেখেছে সে নিজেও জানে না।
Chris Hemsworth এর পরিধানে একটি হাফ প্যান্ট ব্যতীত কিছুই নেই। তার সিক্স প্যাক বডি দেখে ইনশিতা বারবার লজ্জিত হচ্ছে। সে বারবার চোখ বন্ধ করে লাজ রাঙা মুখ নিয়ে আড় চোখে দেখছে আবার। যেন সে এখন তার সামনেই দাঁড়ানো। ইনশিতা দিন দুনিয়া ভুলে টিভির পর্দায় একধ্যানে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে ঐ হ্যান্ডসাম বডিটা। পারে না তো টিভির মধ্যে ঢুকে যায়। সে ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু চাহনিতে তাকিয়ে বলল,
-“উফফ! মাহ্ হটিনটি বয়!”
এক পর্যায়ে সে টিভির পর্দায় চুমু দেওয়া শুরু করে দিলো। জেহের মাত্রই রুমে ঢুকেছে। রোজের বলা কথাটিও সে শুনে নিয়েছে। সামনের দিকে তাকাতেই সে হতভম্ব হয়ে যায়। রোজ টিভির সামনে দাঁড়িয়ে চুমু খেয়ে যাচ্ছে কৃত্রিম কাঁচের ওপারে হলিউড অভিনেতার উপর। চকিতেই তার চেহারায় হতভম্ব ভাব ছাপিয়ে ফুটে ওঠে তীব্র ক্রোধ আর রাগ। এতদিন রোজকে চোখে চোখে রেখেছে যাতে কোনো ছেলের দিকে ফিরেও না তাকায় আর এখন তো দেখা যাচ্ছে ঘরেই শত্রু অবস্থিত। নিমিষেই জেহেরের কপালের রগ দপদপ করে জ্বলে উঠল। ফর্সা মুখ হয়ে উঠল লাল। মাথার চুল টেনে ধরল। নিজেকে যতই বুঝ দিচ্ছে যে এটা সাধারণ ব্যাপার ততই ভেতরের মনটা হিংস্র হয়ে উঠছে। কিছুতেই মানতে চাইছে না। রোজ সে ছাড়া আরেকটা ছেলেকে চুমু খাচ্ছে? যতই কৃত্রিম কাঁচ হোক। সামনে পেলেও নিশ্চয় এমন করতো? হটিনটি বলেছে? সে ছাড়া অন্য কোনো ছেলের দিকে তাকাবে কেন? হোক সে অভিনেতা। ছেলে তো! জেহের আর নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারল না।
দরজা আটকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ইনশিতাকে কোলে তুলে সোজা খাটে ছুঁড়ে ফেলল। আচমকা আক্রমনে ইনশিতা হতভম্ব। সে বুঝতে পারল না তার সাথে এই মাত্র কী হলো। জেহের শান্ত দৃষ্টিতে একবার টিভিটার দিকে তাকাল। তারপর হুট করেই ফ্লাওয়ার ভেস নিয়ে টিভির মুখোমুখি মারতেই মুহুর্তেই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। ইনশিতার পুরো বিষয়টা বুঝে উঠতে খানিক সময় লাগল। জেহের ফোঁস ফোঁস করতে করতে ইনশিতার সামনে এসে দাঁড়াল। ইনশিতা উঠতে চাইলে তাকে আবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলো।
-“কী করছেনটা কী?”
জেহের উত্তর না দিয়ে পরনের হোয়াইট শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল। তার চোখমুখে রাগ উপচে পড়তে চাইছে। শার্ট খুলে ছুঁড়ে মারল দূরে। ইনশিতা চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে রইল শুধু। জেহের কী করতে যাচ্ছে? খাটে উঠে ইনশিতার সামনে নিজের সিক্স প্যাক বডিকে মেলে ধরল। গজরাতে গজরাতে বলল,
-“কী বলেছিলে? হটি? দেখো, আমাকে দেখো? হট মনে হচ্ছে? হু? কী, মনে হচ্ছে না হট?”
জেহের ইনশিতার দুগাল ধরে নিজের শরীরের সামনে ধরল। ইনশিতা চোখ বড়বড় করে রইল। এতক্ষণে সবটা বুঝেছে সে। তৎক্ষণাৎ সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ইনশিতার বলতে লজ্জা পেলেও সে স্বীকার করতে বাধ্য যে জেহের আসলেই হট। তবুও জেহেরের খোলা দেহ দেখতে তার প্রচণ্ড লজ্জা করে। ইনশিতার শ্বাস দ্রুত ওঠানামা করছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। টিভিতে তো লাজ শরম ভুলে দেখা যায়, কিন্তু সামনাসামনি? তার সামনে জেহেরের হ্যান্ডসাম আর ফর্সা বডি মেলে থাকলেও সে তাকাতে পারছে না লজ্জায়। কান দিয়ে মনে হচ্ছে তার ধোঁয়া বের হবে। একবার আড়চোখে তাকিয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলল। জেহের তো...আসলেই...বেশি হ্যান্ডসাম। এতদিনে ভালোভাবে লক্ষ্য করল সে। এত হ্যান্ডসাম তার হাজব্যান্ড! তা ভাবতেই আরো লজ্জারা পেয়ে বসল তাকে। চারপাশে কী আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে? নাহলে এত গরম লাগছে কেন? সো হটটটট!
-“চোখ খোলো রোজ।”
ইনশিতা তাও চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। জেহের দাঁত কিড়িমিড়িয়ে আবার বলল,
-“আই সেইড ওপেন ইওর আই'জ ড্যাম।”
তবুও ইনশিতার নড়চড় নেই। জেহের ইনশিতার মুখ ছেড়ে দিলো। ইনশিতা তখনো চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ তার চোখে মুখে ঘাড়ে ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই চোখ খুলল সে। তাকিয়ে দেখল জেহের তার দুহাত শক্ত করে ধরে তাকে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে। বহু কষ্টে ইনশিতা বলল,
-“জ-জ-জেহের...”
জেহের মুখ তুলে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,
-“এটা তোমার শাস্তি। যতক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখবে ততক্ষণ এই শাস্তি ভোগ করতে হবে।”
ইনশিতা আশ্চর্যান্বিত হয়ে থেমে থেমে বলল,
-“চোখের পলক তো এমনিও পড়ে।”
-“বললাম না, যতবারই চোখ বন্ধ ততবারই...”
কথা শেষ না করেই সে আবারো একই কাজ করতে লাগল। ইনশিতা চোখ খুললেও লজ্জায় পড়বে, চোখ না খুলেও লজ্জায় পড়ছে। তবুও...তার ভালোই লাগছিল জেহেরের উষ্ণ ছোঁয়া পেতে। এমন করে অনেক সময় কেটে যাওয়ার পর জেহের আকস্মিক ইনশিতাকে ছেড়ে তার সামনে হাটু গেঁড়ে বসল। ইনশিতার মুখ তখন লজ্জায় লাল। চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সে। জেহের বাঁকা হেসে বলল,
-“হট তো হলাম। এবার নাহয় নটি হয়ে দেখাই। হটিনটি বয়?”
বলেই সে প্যান্টের বোতামে হাত দিলো। চকিতে তাকাল ইনশিতা। তার মনে হয় নিঃশ্বাসটাও আটকে গেছে। জেহের কী করবে বুঝতে পেরে দ্রুত জেহেরকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে সে দৌড়ে বাথরুমে চলে গেল। বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে তার। ইশ! জেহের পাগল হয়ে গেল নাকি? কী করতে যাচ্ছিল? ইনশিতা দ্রুত মুখ ঢেকে ফেলল।
ইনশিতাকে চলে যেতে দেখে জেহের বাঁকা হাসল। সেই বাঁকা হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে রেখেই বাথরুমের দিকে এগোতে এগোতে বলল,
-“ইওর হটিনটি বয় ইজ কামিং বেবিগার্ল। গেট রেডি ফর পানিশমেন্ট।”
.
.
.
চলবে............................