বৃষ্টি সবে একটু ছাড়িয়েছে।দূর থেকে আযানের ধ্বনি কানে আসছে তারার।প্রতিটা বৃষ্টির রাত সে বেশ জব্বর ঘুম দেয়।কিন্তু আজ এর ব্যতিক্রম ঘটলো।এই প্রথম বোধ হয় এমন হলো।এমনিতেই শীত।তার মধ্যে শীতের ভেতর হুট করে বৃষ্টি।মেঘের গর্জন।এসব থাকলেও ফ্যানটা ফুল স্পিডে চালিয়ে কোম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস তারার।কিন্তু সব যে এলোমেলো হয়ে গেল।কাল সারারাত শুধু এপাশ ওপাশ করেই কেটেছে তারার।তাই তো সকালে আজ আর এলারমের অপেক্ষা করতে হয়নি তারার।প্রকৃতি যখন ঘুমিয়ে তখন দূরের ঐ মসজিদের মুয়াজ্জিনের আহ্বান ও তারা কানে ঢুকে গেছে আজ।
বিছানা থেকে উঠতে গেলেই একটু পিছু ঘুরলো তারা।ফোনের দিকে নজর গেল।কাল প্রায় আধ ঘন্টা পরপর নাফিজ দশ বারোটা র মতো কল করেছিল তারাকে।রাত প্রায় আড়াইটার সময় হয়তো নাফিজ ক্লান্ত হয়ে যায়।সেটা বেশ বুঝতে পেরেছিল তারা।কারণ একটু পর পর ফোন সাইলেন্ট মুডে থাকলেও স্ক্রিনের আলোটা বার বার জ্বলে উঠছিল।আর তারা বার বার শুধু নামটার দিকে চেয়ে ছিল।
"ক্যাপ্টেন"।শব্দটা যে তারাকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে রেখেছে।তার যে যেতে ইচ্ছে করে না এই বাধন থেকে ছাড়া পেতে মন সায় দেয় না তার।
নামাজ শেষ করে বিছানা টা ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিল তারা।বসে পড়লো পড়ার টেবিলে।
----উহ ভালো লাগে না কিছু। এখনো ঘুম আসছে না।ঘুমের সাথে কি শত্রুতা আমার বুঝি না।
মাথাটা ধরে আসছে তারার।এরকম বিদঘুটে অনুভূতি কখনো হয়নি তার।
তারার ভাবনার মাঝেই আবার ফোনের বাতি জ্বলে উঠলো।তারার চোখ গেল ফোনের দিকে।
"Captain is Calling "
নামটা দেখে আরো ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে।রাতটা যাও কষ্টে পার করেছিল সে,কিন্তু এখন?সাত সকালে আবার তীব্র অনুভূতি টা জাগানোর কি খুব দরকার ছিল!
তারার ভাবনার মাঝেই কল কেটে গেল।তারা ফোনটা হাতে নিতেই নাফিজের অনেক গুলো মেসেজ দেখতে পেল।সব গুলো রাতের ।শুধু একটা সকালের।
তাতে লেখা আছে----
"নয়নতারা আপনি কি আসবেন না আজকে?বৃষ্টি তে সিক্ত হয়ে আমি দাড়িয়ে আছি আপনার পথ চেয়ে।আপনি যদি না আসেন তবে সেটা ঘোর অন্যায় হবে আমার প্রতি।আমি কিন্তু এটা মেনে নিতে পারব না।এমন কিছু ঘটাব যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।"
----ক্যাপ্টেন
মেসেজ টা পড়ে তারা কেপে উঠছে বারবার।নাফিজের ঐ টুকুন মেসেজের প্রতিটি শব্দ একদম কম্পন লাগানোর মতোই।
"নয়নতারা "! তারা তো ভাবতেই পারছে না নাফিজ কেন এই নয়নতারা শব্দ টাকে মাঝে ডেকে আনলো।নাফিজ তো আর এটা জানেনা এই শব্দ টা তারাকে পোড়ায় প্রতিদিন।অতীতে ডুব দিতে বাধ্য করে।
এর মধ্যে ই আবার কল এলো তারার ফোনে।তারা এবারো রিসিভ করলো না।
সাথে সাথে আবার নাফিজের মেসেজ----
"পানি যতোটা তরল হয়,যতোটা সরল হয়,ততোটাই কিন্তু কঠিন হয় বরফে।পানিতে ডুবে ও আপনি মরতে বাধ্য।সাতার না জানলে আপনি পানির কাছে আমড়া কাঠের ঢেকির মতো।আপনি কি চাইছেন তারা আমি পানি থেকে বরফ হয়ে যাই।"
----ক্যাপ্টেন।
তারা তো এবার ফোনটা কাপা কাপা হাতে রেখেই দিল।এ যে স্পষ্ট থ্রেট যাকে বলে।নাফিজ আকারে ইঙ্গিতে থ্রেট দিল তারাকে।
----এই লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে!না সম্ভব না নিচে যাওয়া।আমি আর ওনার সাথে কোন সম্পর্ক রাখব না।
আবার নাফিজের ফোন।তারা এবার না পেরে ফোনটা রিসিভ করলো।যা সমাধান করার বলে করাটাই ভালো।তাই তারা আর কল না রিসিভ করে থাকতে পারল না।
----হ্যালো।
----সমস্যা কি আপনার হ্যাঁ?কেন ফোন করছেন বারবার?
তারার কন্ঠ শুনে নাফিছ বেশ অবাক হলো।তবে এটুকু তার বোধগম্য হলো তারা তার লেখাটা নিশ্চয়ই পড়েছে।
----কি হলো বলুন?
----কেন করি এখনো বোঝেন না আপনি?
----না বুঝি না।আর কোনোদিন ফোন করবেন না আমাকে।আমি আপনাকে চিনি না চিনি না চিনি ,,,,,,,,,।
----I love you.
----কিহ!
নাফিজ যে হুট করে তারাকে এরকম একটা কথা বলবে তারা কল্পনাও করতে পারেনি।তারার তো বুকের ভিতর থেকে হ্রদপিন্ড বেরিয়ে আসার উপক্রম।এদিকে নাফিজ নিজেও হুট করে কথাটা বলেছে।সেও অতো ভেবে বলেনি।কিন্তু তারার নিরাবতা নাফিজের মুখে বাকা হাসির রেখা টেনে দিয়েছে।
----তারা আপনি শুনছেন আমার কথা?
নাফিজের ডাকে ধ্যান ভাঙলো তারার।
----হুম।
----শুনছেন আমার কথা?
----কি বললেন আপনি!
----যাক আপনার মনে হচ্ছে কথাটা খুব পছন্দ হয়েছে।এজন্য আবার শুনতে চাইছেন।
----কখনো না,,,,আপনাকে তো,,,,,।
----ফোন কাটলে খবর আছে।আপনার বাড়ির ভিতর ঢুকে আপনার ঘরে চলে আসব বলে দিলাম।
তারা নাফিজের কথা শুনে ঢোক গিললো।নাফিজের গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে নাফিজ যথেষ্ট সিরিয়াস ভাবে কথাটা বলছে।তারার তো ভয় হচ্ছে।এরকম কিছু ঘটলে মাহমুদা বেগম তো তারাকে না বরং নাফিজকেই চিবিয়ে খাবে।ভয়ে আর ফোনটা কাটলো না তারা।
----আপনার সাহস তো কম নয়?
----সাহসের কিছু দেখেননি।চুপচাপ নিচে আসুন।আমি কখন থেকে বৃষ্টিতে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি আপনার জন্য।
----কখনো না।আমি আর কখনো সকালে হাঁটতে যাব না।আর আপনার সাথে জীবনেও না।
----হাঁটতে হবে না।কিন্তু আজ একবারের জন্য হলেও আপনাকে নিচে আসতে হবে তারা।না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।
----আপনি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন!মা ঠিকই বলেছিল আপনি ভালো না খারাপ লোক।
----মা কি বলছিল সেটা পরে শুনবো।আগে আপনি আসুন।
----আপনার সাহস কম না।আমার মাকে মা বলছেন।
----তো শাশুড়ি আম্মাকে কি আন্টি বলব।
তারা এবার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে।নাফিজের কথার ধরন এর সাথে তারা আজ বড্ড অপরিচিত। কোন ধরনের কথা বলছে নাফিজ!তারা তো লজ্জা য় শেষ।
----দেখুন আপনি,র,,,।
----আচ্ছা ফোন রাখছি।নিচে আসুন।বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করছি।আর এক মিনিট ও যেন দেরী না হয়।
----আরে, রর।
তারা কিছু বলার আগেই নাফিজ ফোন কেটে দিল।তারা ফোন হাতে নিয়ে বসে দাত কিড়মিড় করছে।তার তো মনে হচ্ছে নাফিজের সাথে কথা বলাটাই তার ভুল হয়ে গেছিল।না হলে এরকম কিছু আজ ঘটতো না।কোথাকার জল কোথায় গড়িয়েছে আজ।
দশ মিনিট হয়ে গেছে।তারার আসার নাম গন্ধ নেই।নাফিজ এমনিতেই বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে।আর তারার কান্ড দেখে আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে নাফিজের।না পেরে নাফিজ তারাকে আবার মেসেজ করলো ।
----"প্রেয়সী,
আমি জানতাম তুমি খুব ই নমনীয় প্রকৃতির।একদম আপেল ফ্রেভারের জেলির মতোন।এখন তো দেখছি তুমি আচ্ছা ঘাড় ত্যাড়া।তুমি কি আসবে নাকি আমি এসে কিউট করে তোমার দরজায় কড়া নাড়ব।আমি আসছি।"
----ইতি তোমার হবু জামাই
নাফিজের মেসেজ দেখে তারা লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো।ক্রাচ নিয়ে জানালার কাছে গেল তারা।তারার চোখ তো ছানাবড়া।নাফিজ সত্যি সত্যি তাদের বাড়ির গেটের দিকে আসছে।তারা তাড়াতাড়ি ফোন দিয়ে নাফিজকে কল করলো।
----হ্যালো।
----প্লিজ আপনি আসবেন না ক্যাপ্টেন।
----তাহলে আপনি নিচে আসুন।দশ মিনিটের জন্য হলেও আসতে হবে।
----বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
----এখন বৃষ্টি নেই।একটু আগেও হচ্ছিল।
----আকাশ আবার কালো হয়ে আসছে।আবার বৃষ্টি আসবে।
----আচ্ছা ঠিকাছে শ্বাশুড়ি মাকে বলুন বরণ ডালা সাজাতে।জামাই বরন করবে না।আর হ্যাঁ গরম গরম ভুনা খিচুড়ি রান্না করতে বলুন।প্রথম বার শাশুড়ি মায়ের হাতের খিচুড়ি খাব ভাবতেই তো কেমন লাগছে।আচ্ছা ইলিশ মাছ আছে তো আপনাদের ফ্রিজে।খিচুড়ি র সাথে ইলিশ ভাজা বেশ লাগে।
----আপনি থামবেন।লিমিট ক্রস করছেন আপনি।
----তাহলে নিচে আসুন।
----আসছি।
তারা ফোন কেটে দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে মাথায় হিজাব পেঁচিয়ে নিল।জামা কাপড় ঠিক করে ক্রাচ নিয়ে ধীরে ধীরে নেমে এলো নিচে।
;;;;;
নাফিজ রাস্তার কোনে অন্য দিকে ফিরে ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাড়িয়ে আছে।তারা আসতে আসতে নাফিজের কাছাকাছি চলে এসেছে।
নাফিজের গায়ের টি শার্ট টা ট্রাউজার সব কিছু ভেজা।তারা দেখেই বুঝতে পারছে নাফিজ সত্যি সত্যি বৃষ্টিতে ভিজে এখানে এসেছে।
----কেন ডেকেছেন হ্যাঁ?
তারার গলা শুনে নাফিছ পেছনে ঘুরলো।তারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল।
এদিকে আবার মেঘের ডাক।তারা ভয়ে চিৎকার করে কানে হাত দিল।হাত থেকে ক্রাচ টা পড়ে গেল।তারা ভয়ে কাঁপছে।নাফিজ তাড়াতাড়ি গিয়ে তারার দুই বাহু ধরলো।
----তারা তারা ভয় নেই।আমি আছি।
তারা এখনো ভয়ে চোখমুখ খিচে কানে দু হাত দিয়ে রেখেছে।নাফিজের ইচ্ছে করছে তারা কে বুকে জড়িয়ে নিতে।তাহলে হয় তো তারার ভয় টা কাটতো।কিন্তু তার যে এই অধিকার নেই।ভেবেই নাফিজ তারার বাহু থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিল।এদিকে তারা চোখ খুলেছে।নাফিজ ক্রাচ টা উঠিয়ে তারার দিকে এগিয়ে দিল।
----নিন ধরুন।
তারা ক্রাচ নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।
----ফাজলামি করছেন আপনি?বার বার বললাম বাইরে মেঘ ডাকছে।
এর মধ্যে ফিসফিসিয়ে আবার বৃষ্টি শুরু হলো।তারার তো আরো রাগ হচ্ছে নাফিজের প্রতি।ছাতাটাও সে নাফিজের তাড়ায় আনতে পারেনি।
----কি সমস্যা আপনার?
----এই গাছ তলায় আসুন।না হলে বৃষ্টিতে আরো ভিজবেন।
----যাব না।কি বলার বলুন।আর হ্যাঁ এটাই শেষ বার।আর কখনো আমার সাথে কথা বলবেন না আপনি।
----শেষ না শুরু সেটা কে বলতে পারে তারা।
----মানে?
----আপনি প্রচন্ড লেভেলের ঘাড়ত্যাড়া।
----কি বললেন আপনি!
নাফিজ তারার কথার দিকে পাত্তা না দিয়ে তারার একটা হাত ধরেই বসলো।তারা অবাক হয়ে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।তারা হাত ছাড়াতে গেলে নাফিজ আরো শক্ত করে তারার হাত ধরে বসলো।
----এদিকে আসুন।না হলে হাত ছাড়ব না বলে দিলাম।
নাফিজ তারাকে নিয়ে একটা বড় সড় মেহগনি গাছের নিচে দাঁড়ালো।বৃষ্টির বেগ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।গাছের নিচে থাকার কারণে দুজনের গায়ে একটু কম ই বৃষ্টির ফোটা লাগছে।
নাফিজ তারার হাত ছেড়ে দিল।তারপর তারার দিকে ঘুরলো।
----কাল রাতে ফোন কেন ধরেননি?
----আপনাকে আমি কি ভেবেছিলাম।আর আপনি এরকম একটা জঘন্য কাজ করলেন আমার সাথে।আমি আপনাকে কতো সম্মান করতাম ক্যাপ্টেন।আর আপনি?
তারার কথা শুনে নাফিজের মাথা নিচু হয়ে গেল।তারা এবার কেঁদেই দিয়েছে।
----কাল আপনার জন্য শুধু আপনার জন্য মা আমাকে বকেছে।বাপি বকেছে।অথচ আজ এতো বছরে আমি কখনো তাদের বকা খাইনি।আমি আপনাকে কতোটা শ্রদ্ধা করতাম আর আপনি!আপনার একবার ও হাত কাপলো না।আপনি আমার খাতাতে ঐ রকম কথা বার্তা লিখেছেন!আপনার সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না আমি।আমি ভুলে যাবা আজ থেকে ক্যাপ্টেন নাফিজ নামে কেউ ছিল।যাকে আমি বন্ধু না ক্যাপ্টেন ভাবতাম।একজন অন্য রকম ক্যাপ্টেন।আপনি খুব খারাপ ক্যাপ্টেন।
তারার কান্না দেখে নাফিজের ও চোখে পানি চলে এলো।
----আচ্ছা তারা আমার ভুল কোথায়।আমি কি কখনো আপনাকে খারাপ কথা বলেছী নাকি কোনো খারাপ আচরণ করেছি।এই যে রোজ সকালে নিরিবিলি পরিবেশে আপনি আমার সাথে আসতেন আমি যদি চাইতাম আপনার সুযোগ কি নিতে পারতাম না বলুন।আমি আপনার ভরসা হতে চেয়েছিলাম তারা।আপনার ছায়া হয়ে থাকতে চেয়েছি।আপনার সাথে নিজের পথ চলতে চেয়েছি তারা।তারা আমার জীবনটা পুরো বেরঙিন ছিল কিন্তু সেই রঙহীন জীবনটাকে আপনি এসে রঙিন করে ফেলেছেন।কেন করেছেন কিভাবে করেছেন তা আপনি নিজে ও জানেন না।তারা সবকিছু র মধ্যে আরেকঁটা ঘটনা ঘটে গেছে।আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি তারা।
তারার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো নাফিজের কথা শুনে।নাফিজের চোখের পানিটা ও যেন কেন যেন তারা কে কষ্ট দিচ্ছে।
নাফিজ পকেট থেকে একটা নয়নতারা ফুলের মালা বের করে তারা র সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।তারা আরো অবাক হয়ে গেল।
----"তারা আজ এই বৃষ্টির ফোঁটাকে ছুঁয়ে বলছি
আমি আপনাকে ভালো বাসি,
বৃষ্টির মতোন আমিও আপনাকে আমার ভালোবাসার ফোটাতে ফোটাতে ভিজিয়ে দিতে চাই,
শীতের এই সকাল টাকে আমি আরো মধুর করে তুলতে চাই,
ভালোবাসার চাদর দিয়ে জড়িয়ে নিতে চাই আপনাকে,
আপনার প্রতিটি কম্পন কে নিজের বুকের ভেতরের কম্পনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই,
কোনো এক গ্রীষ্মেল নিঝুম বিকেলে আপনার চায়ের সঙ্গী হতে চাই,
আপনার প্রতিটি হেমন্তের সরিষার মাঠ হতে চাই,
যেখানে শুধু আপনার বিচরণ ঘটবে,
আমি বসন্তের কোকিলের মতো ডাকতে চাই,
আপনার কানে কানে গিয়ে বলতে চাই একটা ছোট্ট কথা,
ভালোবাসি তারা,অনেক বেশি ভালোবাসি,
তোমার প্রতিটি চোখের চাহনিতে,
তোমার হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকা কারনকে,
তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাস কে ভালোবাসি আমি,
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তারা,
তুমি কি হবে আমার নয়নতারা বাগানের ছোট্ট রাণী"।
নাফিজ তারার উওরের আশায় তারার মুখের দিকে চেয়ে আছে।
----একটা কথা কি জানেন।পৃথিবীর সব কিছু সৌন্দর্যের কাছে হার মানায়।আপনি ও দেখি তার ব্যতিক্রম নন ক্যাপ্টেন।দুদিন এলেন,দুটো কথা হলো একটু চেহারা ভালো বলে বললেন ভালো বাসি। ভালোবাসা টাকে এতোটাই সহজ মনে করেছেন আপনি।
----মানে?
----দয়া দেখাতে আসবেন না আমাকে।আমি ঠিকমতো চলতে পারি না। তাই বলে কি ভেবেছেন আপনি বলবেন আর আমি ও সব কিছু মেনে নেব?আপনি রূপের মোহে পড়তে পারেন।আমি না।
----তারা তুমি,,,র,,,,,।
----ব্যস আর কোন কথা বলবেন না আপনি।এতো বড় কষ্ট টা না দিলেও পারতেন আমাকে।আপনাকে অনেক ভরসা করতাম কাছের মানুষ মনে করতাম।আর আপনি শুধু সেটার সুযোগ নিলেন।
নাফিজ এবার উঠে দাড়ালো।
----তারা ভুল বুঝেছো আমাকে।
----আর ঠিক ভুল বুঝতে চাই না আমি।আমি অসহায় বলে কেন আমার সুযোগ নেন আপনারা।স্কুল কলেজে ও এরকম করে কত জন সুযোগ নিয়েছে। হাসি ঠাট্টা করেছে।আমি ও মানুষ ক্যাপ্টেন।দয়া করে এভাবে অপমান করবেন না।যখন দেখবেন ঠিকমতো চলতে পারিনা একদিন দুদিন তারপর সব ভালোবাসা র কথা না উবে যাবে কপূররের মতো।প্লিজ আর কখনো আমার সামনে আসবেন না আপনি।এখানেই শেষ আপনার আর আমার মধ্যকার ছোট্ট সম্পর্ক টা।
তারা যেতে নিলে নাফিজ তারার পথ আটকে দাঁড়ায়।
----আমাকে ভুল বুঝতে পারো না তুমি।
----সরুন এখান থেকে।আমি কোনো ঠাট্টার বস্তু নই বুঝেছেন আপনি!আমার মতো প্রতিবন্ধী একটা মেয়েকে ভালোবাসেন!এতো বড় ঠাট্টা না করলেও পারতেন।
তারা নাফিজের পাশ কেটে সামনের দিকে চলে গেল।নাফিজ চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।
----কেন আমার সাথে এমঁনটা হবে।আর হতে দেব না আমি।আপনাকে আমার কাছেই আসতে হবে তারা।শুধু আজ সন্ধ্যার অপেক্ষা করুন।
নাফিজের কোনো কথায় তারার কানে ঢুকছে না।তারা চোখের পানিতে একাকার হয়ে এ গিয়ে চলেছে নিজের পথে।অসহায়ত্ব আজ আরো বেশি অনুভব হচ্ছে তার।
নাফিজ শুধু চেয়ে আছে তার বৃষ্টিতে সিক্ত হেঁটে চলা প্রেয়সীর দিকে।
;;;;;
বাড়ির ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দিল তারা।বৃষ্টিতে বেশ ভিজে গেছে সে।দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে দাড়িয়ে বার বার নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে।চোখের পানি যেন বাধ মানছে না।
----এই সকালে তুই কোথ থেকে বৃষ্টিতে ভিজে এসেছিস?
মাহমুদা বেগমের কন্ঠ শুনে তারা চোখ মেলে সামনে তাকালো।এতক্ষণ সে খেয়াল ই করেনি তার সামনে মাহমুদা বেগম দাড়িয়ে আছেন।
----মা তুমি উঠে গেছো?
----হ্যাঁ অনেক আগেই উঠেছি।গাসু ওপর থেকে টাওয়েল নিয়ে এসো তো।
----আইচ্ছা ম্যাডাম।
মাহমুদা বেগম গাসুকে বলতেই গাসু দৌড় দিয়ে উপরে চলে গেল টাওয়েল আনতে।মাহমুদা বেগম এগিয়ে গিয়ে তারাকে ভেতরে আনলেন।সোফায় নিয়ে বসালেন।এর মধ্যে গাসু টাওয়েল নিয়ে হাজির।গাসুর হাত থেকে টাওয়েল নিয়ে মাহমুদা বেগম তারার মাথা থেকে হিজাব খুলে তারার মাথা মুখ মুছে দিচ্ছেন ভালো করে।তারা শুধু মাহমুদা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।মাহমুদা বেগম কিছুই বলছেন না মুখে।
তারার মনে একটাই চিন্তা হচ্ছে,তবে কি মাহমুদা বেগম কিছু দেখে ফেলেছেন।না হলে তিনি এতো শান্ত কেন হয়ে আছেন।
তারার ভাবনার মধ্যেই মাহমুদা বেগম বলে উঠলেন,
----তারা উপরে গিয়ে জামা পাল্টে ফেল মা।
----মা শোনো তুমি কি,,,,,?
----এখন কোন কথা না।ঠান্ডা এমনিতেই লাগিয়ে ফেলেছো।যাও আগে উপরে যাও।জামা কাপড় সব পাল্টাবে।আমি তোমার জন্য আদা চা করে নিয়ে আসি।
----মা।
----উপরে যাও মা।গাসু গাসু।
----এই যে আই এবসেন্ট ম্যাডাম।
----কিসের এবসেন্ট?
----মানে উপস্থিত।দেহেন ম্যাডাম আপনেও দেহি ইংরেজি ভুলে গেছেন।
----কিছু ভুলিনি।প্রেজেন্ট মানে উপস্থিত আর এবসেন্ট মানে অনুপস্থিত।বুঝেছো।
মাহমুদা বেগমের কথা শুনে গাসু নিজের জিভ নিজেই কামড়ে ধরলো।
----থুরি থুরি।উল্টাইলা গেছিগা ম্যাডাম।
----যাও তারাকে নিয়ে উপরে যাও।আর তোমার স্কুল আছে না?
----হ ম্যাডাম।
----ওকে ঘরে দিয়ে গিয়ে পড়তে বসো।আমি তোমার ঘরে খাবার দিয়ে আসব।
----আইচ্ছা ম্যাডাম।তারা আফা উঠেন উঠেন ঘরে চলেন।
গাসু তারার হাত ধরে উঠিয়ে নিয়ে তারাকে নিয়ে উপরে চলে গেল।মাহমুদা বেগম তারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।
----আমি তোমাকে জন্ম দেইনি ঠিকই কিন্তু মা বলে ডাকো আমাকে।আমার চোখকে তুমি কিভাবে ফাকি দিতে পারবে মা?আমার তোমার প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে।আমি জানি তুমি নিজেই সত্যি কথা বলবে আমাকে।এবার আর আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করব না মা তুমি নিজেই সব বলবে আমাকে।
;;;;;
দরজা খুলেই চমকে উঠলো লতিফা।ছেলেকে এরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় আগে কখনো দেখেনি সে।
একে বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে নাফিজ।তারপর আবার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।মায়ের চোখ দেখেই বুঝতে পারছে নাফিজ আজ কেদেছে।
----নাফিজ!এ কি অবস্থা তোর?
মাকে দেখে আর নিজেকে চেপে রাখতে পারল না নাফিজ।লতিফাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো।লতিফা নাফিজের পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
----বাবা কি হয়েছে তোর?কাঁদছিস কেন?কি হলো বল।তোকে কাঁদতে দেখলে কি আমার ভালো লাগে বল?
----মা আমার সাথে কেন এমনটা হয় বলোতো?কেন হয়?সব সময় শুধু আমাকেই কষ্ট পেতে হয়।এই দেখোনা মিষ্টিটা কষ্ট দিয়ে চলে গেল।আর যাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাইলাম সেও আমাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেল।কেন এমন হয় বলো না মা?
----কি হয়েছে সোনা আমাকে বল।এভাবে কাদিস না তুই।
----মা আমি কি নিয়ে বাঁচব বলো না মা।
নাফিজ কেদেই যাচ্ছে মা কে জড়িয়ে ধরে।সচারচর ছেলেরা এতো সহজে কাদে না।কিন্তু নাফিজ এর যে চোখ বাধ মানছে না।
;;;;;
"তারা আজ এই বৃষ্টির ফোঁটাকে ছুঁয়ে বলছি
আমি আপনাকে ভালো বাসি,
বৃষ্টির মতোন আমিও আপনাকে আমার ভালোবাসার ফোটাতে ফোটাতে ভিজিয়ে দিতে চাই,
শীতের এই সকাল টাকে আমি আরো মধুর করে তুলতে চাই,
ভালোবাসার চাদর দিয়ে জড়িয়ে নিতে চাই আপনাকে,
আপনার প্রতিটি কম্পন কে নিজের বুকের ভেতরের কম্পনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই,
কোনো এক গ্রীষ্মেল নিঝুম বিকেলে আপনার চায়ের সঙ্গী হতে চাই,
আপনার প্রতিটি হেমন্তের সরিষার মাঠ হতে চাই,
যেখানে শুধু আপনার বিচরণ ঘটবে,
আমি বসন্তের কোকিলের মতো ডাকতে চাই,
আপনার কানে কানে গিয়ে বলতে চাই একটা ছোট্ট কথা,
ভালোবাসি তারা,অনেক বেশি ভালোবাসি,
তোমার প্রতিটি চোখের চাহনিতে,
তোমার হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকা কারনকে,
তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাস কে ভালোবাসি আমি,
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তারা,
তুমি কি হবে আমার নয়নতারা বাগানের ছোট্ট রাণী"।
সকালের কথা মনে পড়তেই বুকের ভেতরটা কেমন খা খা করে উঠলো তারার।নাফিজের আবেগাপ্লুত চোখ দুটো যেন এখনো তারার চোখের সামনে ভাসছে।
বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আনমনে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে তারা।একটু আগেও সে এই জানালা দিয়ে দেখেছিল নাফিজকে।আর এখন।সবকিছু কেমন শেষ হয়ে গেল।
----আচ্ছা ক্যাপ্টেন কি সত্যি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছিল?ওনার কথা গুলো কি সত্যি ছিল?না না এটা কি করে সম্ভব।আমি তো ধরতে গেলে একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে।এটা নিছক ক্ষণিকের আবেগ ছাড়া কিছু নয়।আমি কেন আবার ক্যাপ্টেনের কথা ভাবছি।আর ভাববো না।কখনো না।যা হয়েছে সব শেষ হয়েছে।ভালোর জন্য হয়তো হয়েছে।
দরজা খোলার শব্দে পাশ ফিরে তাকালো তারা।মাহমুদা বেগম ভেতরে এসেছেন।হাতে ধোয়া ওঠা চায়ের কাপ।তারাকে দেখে মাহমুদা বেগম মুচকি হেসে চায়ের কাপটা নিয়ে গিয়ে তারার হাতে দিলেন।
----আদা চা টা তাড়াতাড়ি শেষ কর মা।অনেক ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলেছিস।তুই চা শেষ কর।আমি গাসুর খাবার দিয়ে তোকে খাবার দিচ্ছি।
মাহমুদা বেগম উঠে যেতে গেলে তারা মাহমুদা বেগমের হাত ধরে বসে তার এক হাত দিয়ে।মাহমুদা বেগম পেছনে ঘুরে তাকালেন।
----মা শোনো না।
----কিছু বলবি?
----একটু আমার কাছে বসবে?
মাহমুদা বেগম তারার আবদার শুনে মুখে হাসির রেখা টেনে তারার পাশে বসে তারার মাথায় হাত রাখলেন।
----নে বসেছি।কি হয়েছে মা?মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন?
----মা তোমাকে কিছু বলার আছে।
----কি বলবি?
----মা আজ সকালে উনি এসেছিলেন।
----কে?
----ক্যাপ্টেন।
তারা ক্যাপ্টেন কথা টা বলেই মাথা নিচু করলো।মাহমুদা বেগমের মুখে আবার যেন হাসি ফুটে উঠলো।তার বিশ্বাস সফল হয়েছে।তিনি জানতেন তারা তাকে মিথ্যা বলবে না।
;;;;;
সন্ধ্যা বেলা।
পড়ার টেবিলে বসে অঙ্ক কষছে তারা।একের পর এক অঙ্ক কেটেই চলেছে কলম দিয়ে।কোন ভাবেই উওর মেলাতে পারছে না তারা।পারবে কি করে?মন টেবিলে থাকলে তো?
এর মধ্যে ই গাসু এক প্রকার দৌড়ে তারার ঘরে প্রবেশ করলো।
----তারা আফা ,তারা আফা।
গাসু কন্ঠ শুনে তারা পেছনে ঘুরলো।গাসুকে হাঁফাতে দেখে তারা বেশ অবাক হলো।
----কি হয়েছে গাসু?এভাবে হাপাচ্ছো কেন?
----কি হয়নি তাই কন আফা।
----কি হয়েছে বলবে তুমি?
----আফা ঐ ফুলচোরডা আইছে।
----কিহ!
----হ আফা।আইসা মেজর সাবের সাথে বকবক করতেছে।
"আপনাকে আমার কাছেই আসতে হবে তারা।শুধু আজ সন্ধ্যার অপেক্ষা করুন।"
কথাটা মনে পড়তেই তারার বুক কেপে উঠলো।সকাল বেলা নাফিজ চেঁচিয়ে এই কথাটা বলেছিল।স্পষ্ট মনে আছে তার।তবে কি এজন্য নাফিজ বলেছিল ঐ কথা?
তারা আর দেরী না করে মাথায় কাপড় দিয়ে ক্রাচ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
----গাসু শিগগিরই নিচে চলো।
----কেন আফা?আপনে গিয়ে কি করতেন?
----কথা কম বলো আর চলো।
গাসু তারার কথা মতো তারা কে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
;;;;;
----তুমি কোন সাহসে আমাকে এই কথা বলো নাফিজ?তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি কে?
----না স্যার কিছু ভুলিনি।কিন্তু আপনি ভুলে যাচ্ছেন এটা ইউনিট না।ইউনিটের বাইরে আপনি যেমন একজন সাধারণ মানুষ তেমন আমিও।আর এখন আপনি একজন মেয়ের বাবা হয়ে কথা বলছেন।আর আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই সেটা বলতে কথা বলছি।
----তুমি কি বুঝতে পারছো তোমার চাকরি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি আমি?
----কখনোই না।আমি নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি।সরকার আমাকে দিয়েছি।আপনি আমার চাকরি নেওয়ার কে স্যার?আর আমি যতদূর জানি আপনি অত্যন্ত সৎ একজন অফিসার।ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা আপনার মুখে মানায় না।
নাফিজের কথা শুনে মাথা নিচু হয়ে গেল মেজর আব্রাহামের।নাফিজ সোফায় বসে আছে।নাফিজের বিপরীতে মাহমুদা বেগম আর আব্রাহাম সাহেব বসা।
----তারার বাবা তুমি এসব কথা বাদ দেও।উনি কি বলতে এসেছেন সেটা বলতে দেও?
----বলো নাফিজ কি বলবে তুমি?
নাফিজ এবার একটু দম নিল।বার বার উপরের দিকে তাকাচ্ছে সে।একবার ও কি পাবে না তারার দেখা?
----স্যার আমি এতো পেচিয়ে কথা বলতে পারিনা।সোজাসুজি বলছি।আমি তারাকে ভালোবাসি।
নাফিজের কথাতে উত্তেজিত হয়ে আব্রাহাম সাহেব কিছু বলতে যাবেন তার আগে মাহমুদা বেগম ইশারায় চুপ করতে বললেন।
----তো তুমি কি বলতে চাইছো?
----স্যার আমি তারাকে বিয়ে করতে চাই।আপনি যদি রাজি হন তবেই আমি আমার মা বাবাকে পাঠাব।
----তুমি কি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো?আমার মেয়ে ঠিকমতো চলতে পারেনা নাফিজ।
----স্যার এখানে বোঝাবুঝির কিছুই নেই।আমি তারা কে তার অসুস্থতা জেনেই ভালোবেসেছি ।আর টাইম পাস করার জন্য ভালোবাসিনি।পুরো লাইফ তারার সাথে পাস করব বলে ভালোবেসেছি।স্যার আমি তারাকে বিয়ে করতে চাই।
নাফিজের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন আব্রাহাম সাহেব।
----আমি কারোর দয়া চাই না বাপি।আল্লাহ আমাকে এতো টা অসহায় করে দেননি যে কারোর দয়া দেখতে হবে আমাকে।
তারার গলা পেয়ে সবার চোখ গেল সিঁড়ির দিকে।তারা ধীরে ধীরে নেমে এলো।এসেই আব্রাহাম সাহেবের পাশে দাঁড়ালো।তারাকে দেখে নাফিজ ও উঠে দাঁড়ালো।
----তারা।
----আপনি কেন এসেছেন?কি ভেবেছেন টাকি আপনি?সকালে নিষেধ করেছি এখন আপনি আমার বাপির কাছেও চলে এসেছেন।
----তারা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।আমি কোনো দয়া দেখাই নি।
----এরকম ভালোবাসা দুদিন থাকে ক্যাপ্টেন নাফিজ।দুদিন পর যখন দেখবেন আর পাঁচটা হাসবেন্ড ওয়াইফের মতো আপনি থাকতে পারছেন না,একটা কমপ্লিকেটেড মানুষ কে নিয়ে সব সময় থাকতে হচ্ছে নিজেই তখন বলবেন এটা সম্পূর্ণ ভুল ছিল আপনার।
----তারা তুমি আমার কথাটা শোনো।
----আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।আর বাপি মায়ের থেকে কি অনুমতি নিবেন আপনি?যেখানে আমি নিজেই আপনাকে পছন্দ করিনা।
----তুমি সত্যি কি আমাকে একদম পছন্দ করো না তারা?
নাফিজের চোখ ছলছল করে উঠলো।নাফিজের এমন প্রশ্নে তারার মুখে যেন আড়ষ্ঠতা চলে এলো।কিভাবে উওর দেবে সে এই প্রশ্নের?
----কি হলো তারা বলো?
----আপনার সাথে কোনো ভালো লাগার সম্পর্ক আমার ছিল না ক্যাপ্টেন।আমি আপনাকে অন্যভাবে দেখেছি।আপনার মতো না।আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।এই মূহুর্তে আপনি বেরিয়ে যাবেন আমাদের বাড়ি থেকে।আর কোনো কথা না।আপনার মুখটা আর দেখার ইচ্ছে নেই আমার।
তারার শেষ কথাটা নাফিজের বুকে একদম তীরের মতো বিধলো।মূহুর্তেই অভিমানের ছাপ ফুটে উঠলো নাফিজের মনে।
----ঠিকাছে তারা চলে যাব।কিন্তু একটা শেষ কথা বলে যেতে চাই।
----কি বলবেন?
----আমি আর আসব না তারা।কিন্তু তুমি নিজেই আমাকে ডাকবে।
----কখনো না।
----ডাকবে তারা।তোমার মুখের কথায় না হলেও তোমার অনুভূতির ডাকে আমি আসব তারা।আরেকটা কথা বলে যাচ্ছি আমি সত্যি ভালোবেসেছি।আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় আর কোনোদিন যদি একবারও আমার জন্য আপনার মনে একটুও অনুভূতি র সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে জেনে রেখো তোমাকে আমার হতেই হবে।
"আমি তোমার অনুভূতির আহ্বানে আসব,
তোমার রাত জাগা স্বপ্নকে সত্যি করতে আসব,
কোন এক দিন শেষে দুজনে পাশাপাশি চলার জন্য হলেও আসব।কথা দিচ্ছি তার আগে আমার মুখ তুমি দেখতেও পারবে না।আসি তারা।আল্লাহ্ হাফেজ।"
নাফিজ চোখ মুছে আর কোনো দিকে না তাকিয়েই বেরিয়ে গেল।তারা নাফিজের পথের দিকে চেয়ে আছে।