আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

প্রেয়সী - পর্ব ২৯ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


এনিভার্সিরির রাতের সেই ভয়ানক ঘটনার পর আমি তন্ময় ভাইকে এভোয়েড করতে শুরু করলাম। কিন্তু বেশিদিন করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা যাবার পূর্বের দিন তিনি জোরপূর্বক রুমে আসলেন। সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
- গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। এবার ফিরতে দেরি হবে। সাবধানে
 থাকবি। 
তিনি যখন নিজে বলে গেলেন, ফিরতে দেরি হবে। তারমানে সেটা সাধারণ দেরি নয়। হলোও সেটা। মাসের পর মাস যাচ্ছে তিনি ফিরছে না। এদিকে আমি দু'দিন ফোনে কেঁদে ফেলেছি। বারবার বলার পরও তিনি ফিরেনি। খাওয়া দাওয়া কমে গিয়েছে। ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না। কত রাত কেঁদেকেঁদে ঘুমিয়েছি
 হিসেব নেই। 
অথচ, এতো কষ্টের মাঝে কলেজ যেতে হয়েছে প্রতিদিন। সেখানে গিয়েও শান্তি নেই। সুমনার নতুন নতুন বাজে কথা। আমাকে দেখলেই নানান স্ল্যাং ব্যবহার করবে। জবাব দিতে পারছিনা কারণ ইংগিত করে বলে। সরাসরি বললে ওর চুল ছিঁড়ে হাতে ধরাই দিব।সেবার ওর বন্ধুবান্ধব নিয়ে টিটকারি মেরে বলছিল, 
- কিছু বেশ্যা আছে না? যেগুলো অন্যের জিনিস নিয়ে নেয়। এমন একটাকে আমি চিনি। মা*বাজ। আমার যা পছন্দ তাই ওর লাগবে। উপর দিয়ে ভীতু সেজে ছেলে ধরে। সেগুলো'কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। 
ঘেন্নায় শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। মারজি ভিষণ রেগেছিল। চুল টেনে ধরেছিল সুমনার। আমি দ্রুত ছাড়িয়ে আনি। তাতে কী? সুমনার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। ঝগড়া করার জন্য মেয়েটা সর্বদা তৈরি থাকে। 
প্রচুর ঝগড়াটে। এই কাহিনি রুবি আপু জানতে পারে। চলে আসে কলেজ। ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে সুমনা'কে। তারপরও মেয়েটার শিক্ষা হয়নি। এই মেয়ের লাগবে তন্ময় ভাইর শক্ত হাতের শক্ত চড়। ঠিক এবার আসুক ফিরে তিনি। এই সুমনা'কে তার শক্ত হাতের চড় না দিলে তার সাথে কথা নেই। 
নির্লজ্জ মেয়ে মানুষ। 

আজ বিকেল দিকে কানাকানির মাধ্যমে জানলাম, তন্ময় ভাই বাড়িতে আমাদের বিয়ের বিষয়ে জানিয়েছেন। যেদিন আমাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেদিন তিনি বাড়ি ফিরবেন। এতদিন এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না আমার। এমনকি দীপ্ত, রুবি আপু তাদের ও ধারণা নেই। গোপন বিষয় ছিলো। তিনি যখন জেদ ধরেছেন তারমানে, যেই বিষয়ে জেদ ধরেছেন তা পূর্নতা পাবে। 
বৃহস্পতিবার রাত দশটা'র দিক বড় চাচ্চু ডেকে পাঠালেন। আমিতো শিয়র বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। যখন ড্রয়িং রুম পৌঁছালাম সকলে উপস্থিত। চাচ্চু ইশারা করলেন তার পাশে বসতে। বসলাম। আমার বাম পাশে বাবা বসে। আঁড়চোখে বাবা'কে দেখে নিলাম। তিনি হাসছেন। চাচ্চু আমাকে সোজাসাপটা প্রশ্ন করলেন, 
- অরু? বিয়ে নিয়ে তোমার কোনো চিন্তাভাবনা আছে? 
চুপ রইলাম। আসলেই বড় চাচ্চুর সামনে জবান বন্ধ হয়ে আসে।
রুহ কাঁপে। একটি শব্দ উচ্চারণ করার সামর্থ্য থাকে না। রুবি আপু ত ঠিকই বলেছিল। জবাব না পেয়ে চাচ্চু হাসলেন। 
আবারও বললেন, 
- তোমার সিদ্ধান্ত শেষ সিদ্ধান্ত হবে। তুমি যা বলবে সেটাই হবে।
তন্ময় তোমায় পছন্দ করে, তাই তাকে বাধ্যতামূলক বিয়ে করতে হবে, তারমানে নেই কোনো। বা আমরা তোমার আপনজন সেটা ভেবে রাজি হবে যে সেটাও না। তোমার যদি তন্ময়'কে পছন্দ না হয়, নির্ভয়ে জানাতে পারো। বা অন্যকাউকে পছন্দ করো কী-না? সেটাও জানাতে পারো। তোমার সুখ সর্বপ্রথম আমাদের জন্য।
 বোঝা গেল? 
মাথা দোলালাম। গলা শুঁকিয়ে আসছে। এই কোথায় ফাঁসলাম। 
বাবা মাথা হাত রাখলেন। ধীরে প্রশ্ন করলেন, 
- তন্ময়'কে কেমন লাগে তোমার? তুমি তাকে শুধু একজন ভাইয়ের নজরে দেখ? 
কী জবাব দিব? আমার চুপ থাকা দেখে ছোট চাচ্চু ছোট শ্বাস ফেললেন। 
- জবাব দিতে হচ্ছে অরু। নাহলে সিদ্ধান্ত কিভাবে নিব? 
আমতাআমতা স্বরে জবাব দিলাম, 
- আপনারা যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই। 
বড় চাচ্চু শান্ত কন্ঠ। অথচ সেই কন্ঠে আমার হার্টবিট একশো বেগে দৌঁড়াচ্ছে, 
- সারাজীবন তুমি যার সাথে থাকবে তার সিদ্ধান্ত আমরা কীভাবে নিব? তারমানে তোমার কোনো আপত্তি নেই তন্ময়'কে মেনে 
নিতে? তুমি তাকে বিয়ে করতে রাজি? 
অনেকক্ষন ঠাঁই বসে রইলাম। লজ্জায় জবাব দিতে পারছিনা। 
বিশ্বযুদ্ধের শেষ পদক্ষেপ নিয়ে নিলাম। চোখ বুঝে ক্রমগত মাথা দোলালাম। কী করলাম সেটা নিজেও বুঝলাম না। সকলের হাসি'তে কিছুটা লজ্জা পেলাম।

রাতে তন্ময় ভাই'কে কল করলাম। তারউপর আমি প্রচন্ড রেগে। বদমায়েশ লোক। আমাকে একা ফাঁসিয়ে দিল। কে বলেছে তাকে এমন তাড়াহুড়ো করতে? এইযে আজকে বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি। আর তিনি? দিব্যি আয়েস নিয়ে আছে। তার যেহেতু বিয়ে করার তাড়া তাহলে তিনি নিজে সকল সমস্যা নিতেন ঘাড়ে। শুধু শুধু যন্ত্রণা দিলেন কতগুলো মাস। একটা রাতও ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। তাকে একবার দেখার জন্য কতটা যন্ত্রণায় ভুগেছি। অথচ তার তো কোনো সমস্যা নেই। আমাকে না দেখলে তার কষ্ট হয়না। কিচ্ছু হয়না তার। 
তিনি ফোন ধরতেই মনের সব কথা ঝেরে ফেললাম, 
- আপনি এমন কেন করলেন? হ্যাঁ? কোনো কাজ নেই আপনার। শুধু শুধু ঢাকা পড়ে আছেন। আমি সব জানি। 
তার হাসির শব্দ। ইশ, এটা হাসার সময়? তিনি কী জানেন না আমি সিরিয়াস? কতটা রেগে আছি তার উপর? 
তার আবেদনময়ী কন্ঠ, 
- খেয়েছিস? 
তার কথার জালে আজ পড়ব না। 
- জবাব দিন। এগুলো করা কী দরকার ছিলো? বিয়ে তো হবে। এই কারণে আপনি বাড়ি আসবেন না? জানেন কত মাস যাবত আপনি ফিরছেন না? পুরো পাঁচমাস ছয়দিন যাবত ফিরছেন না। আপনি, '
গলা ধরে আসছে আমার। কতটা মিস করেছি তার কোনো ধারণা আছে? তিনি কী অন্ধ, অবুঝ? আমার অনুভূতি কী তিনি বুঝেন না?  
তন্ময় ভাইয়ের হাসি বন্ধ হয়েছে। বরং ধীরে ধমক দিলেন, 
- চুপ। কাঁদলে আর ফিরব না একদম। 
কত্তবড় সাহস। খেয়ালই করলাম না যে আমি অলরেডি চুপ হয়ে গিয়েছি। লুকিয়ে লুকিয়ে হেঁচকি তুলছি। তার শান্ত কন্ঠ, 
- এতো ইমোশনাল তুই। তা ত আমি জানতামই না। 
চুপ থাকলাম। তিনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। ধীরে বলতে শুরু করলেন। 
- কাউকে ছোট থেকে পছন্দ করাটা সুন্দর অনুভূতি হলেও সেটার পরিনতি ভিন্ন। কাউকে পছন্দ করা মানে, তাকে সর্বদা দেখতে চাওয়া, ছুঁতে চাওয়া। এই আকাঙ্খা গুলো পূর্নতা না পেলে মন শক্ত হয়ে যায়। আমারও হয়েছিলো। এতবছরের শক্ত মন ইদানিং ভেঙে যাচ্ছে। তোকে দেখলে নিজের প্রতি যেই কন্ট্রোল ছিলো, তা আজকাল আর নেই। দেখলি তো সেদিন কী করে বসলাম। একই বাড়ি, পাশাপাশি রুম এই বিষয়'টা কষ্টদায়ক। 
কিছু মাসের দুরত্বে যদি তোকে সারাজীবনের জন্য পাই, তাতে ক্ষতি কী? 
শেষপর্যন্ত তিনি শিকার করলেন। আমাকে পছন্দ করেন সেটা নিজের মুখে বললেন। আর কী লাগবে? লজ্জা পাব? নাকি হাসব? খুশি হব? না, শুধু ফোন কান গুঁজে বসে রইলাম। 

রুবি আপু এসেছে। তাকে এতো খুশি আমি আগে দেখিনি। আমাকে নিয়ে নেচে-কুঁদে বাড়ি আনন্দে ভোরে তুলেছে। কয়েকবার প্রশ্ন করতে গিয়েও পারছিনা না তার তীব্র গানের কন্ঠে। হলো কী? তিনি থেমে চেঁচাচ্ছে, 
- অরু'রেএএএএএএএএএ '
কান চেপে ধরলাম। বসে পড়লাম বিছানায়। আপুর সাথে আমি।পারবো না। শান্ত হলে নিজেই সব খুলে বলবে। হলোও সেটা। কিছুটা শান্ত হতেই বিচলিত কন্ঠে বলল,
- জানিস হয়েছে কী? বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে। ত্রিশ তারিখ। 
- ওয়াও। 
আপু মাথায় থাপ্পড় দিলেন আমার। 
- বোকা। তোর আর তন্ময়ের বিয়েও সেদিন হবে। একই কাজি
 দ্বারা।  
এবার আমার হাসি হারিয়ে গেল। জানতাম বিয়ে হবে। কিন্তু এতটা জলদি হবে সেটার ধারণা ছিলো না। আপু আবারও আমাকে নিয়ে নাচতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মাঝে দীপ্ত এসেও যোগ হলো। 
দুষ্টু গলায় বলছে, 
- ভাবী বলব না আপু? অরু আপুর যায়গায় বলব ভাবীপু। 
ছেলেটা এতো পাঁকা যে বলার বাহিরে। ও ঠিক আমাকে ভাবীপু ডাকতে শুরু করেছে। ড্রয়িং রুমে যখন টিভি দেখছিলাম, সকলের সামনে বলল,
- ভাবীপু আইসক্রিম আনব? 
কেমন টা লাগে? বড় মা হাসতে হাসতে বলছে, 
- এই ফাজিল। এগুলো কী ধরন ডাকার? 
দীপ্ত বড়দের মতো সোফায় বসে, বড় মা'কে বোঝাতে লাগলো, 
- অরু আপু হচ্ছে আমার আপু। তেমনই তন্ময় ভাই হচ্ছে আমার ভাইয়া। যদি তাদের বিয়ে হয়। তাহলে অরু আপু হবে ভাবী, তাই না? 
তো ভাবী আর আপু। দুটো মিলিয়ে ভাবীপু। তেমনই তন্ময়ের ভাইয়ের ক্ষেত্রে হবে, জীজুভাই। কিন্তু তাকে শুধু ভাইয়া বলব। নাহলে তন্ময় ভাই দিবে এক চড়। 

তাহলে কী সত্যি আমি খুব শীগ্রই দীপ্তর ভাবীপু হয়ে যাব? 
.
.
.
চলবে..................................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।