নয়নতারা - পর্ব ২৯ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


----তারা পাখি।তোমাকে পাওয়ার জন্য অনেক অনেক সময় পাব আমি বেঁচে থাকলে।আর এখন তো তুমি আমারই।হারানোর ভয় নেই।সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোমার।তুমি শুধু বিশ্রাম নেবে আজ।

তারা অবাক হয়ে গেল নাফিজের কথাতে।আসলেই তো এরকম কোন স্বামী বাসর রাতে ভাবে।নাফিজ তারাকে খাটের ওপর বসিয়ে দিল।

----তোমার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।তুমি বসো।আমি আনছি।

নাফিজ যেতে নিলেই তারা নাফিজের হাত ধরে বসে।নাফিজ সাথে সাথে পেছনে ঘুরে তাকায়।একবার তারার দিকে একবার তারার হাতের দিকে।

----কি হয়েছে ?

----এখানে আমার ওষুধ কোথ থেকে আসবে?

----সৈকত কে বলে রেখেছিলাম।ও সব কিছু রেডি করে গাড়িতে তুলে দিয়েছিল।

----ওও।

----হুম।হাত কি এখনো ধরে থাকবে নাকি ছাড়বে!

নাফিজ দুষ্টু হাসি নিয়ে কথা টা বললো।তারা সাথে সাথে নাফিজের হাত ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।নাফিজ ওষুধ এনে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে তারার পাশে এসে বসলো।

----নেও খেয়ে নেও।

----আমি এই দুটো এখন খাই।আপনি কিভাবে জানলেন?

----সব সৈকত বলেছে।তোমার দায়িত্ব যখন নিয়েছি এগুলো ও তো আমার দায়িত্ব।

তারা ওষুধ খেয়ে নেওয়ার পর নাফিজ গ্লাস টা পাশের ছোটো টেবিলে রেখে উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিল।তাঁরপর বিছানার দিকে এগিয়ে আসলো।

----কি হলো?ঘুমাবে না?

----হুম।

----তুমি ঐ দিকে শুয়ে পড়ো।

তারা পা তুলে গিয়ে বিছানার দেওয়ার ঘেষা দিকটাই শুয়ে পড়লো।নাফিজ ধীরে ধীরে উঠে তারার কাছে চলে গেল।অন্ধকারে যেন ডিম লাইটের আলোতে তারার মুখ জ্বলজ্বল করছে।নাফিজ নিজের চোখ সরাতে পারছে না।নাফিজ একদম তারার কাছে চলে।এদিকে তারার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত ওঠা নামা করছে।সব সময় একাই শোয়ার অভ্যাস তার।আর আজ তারপর আবার নাফিজ এতো কাছে।নাফিজ নিজের একটা হাত তারার মাথায় রাখলো।আরেকটা হাত তারার পেটের ওপর।তারপর তারার কপালে চুমু দিল।

----নেও।ঘুমিয়ে পড়ো।

----হুম।

তারা চোখ বুজতেই নাফিজ তারার পাশে শুয়ে তারাকে বুকে জড়িয়ে নিল।অবাক হওয়ার আরেক ধাপ উপরে উঠলো তারা।তারা চুপ করে আছে কিছু বলছে না।তারার ভেতর যে আজ কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা শুধু তারাই জানে।

"নিয়তি 

আগে কেন বলোনি?

তার প্রান্তের সাথে মিশে যাব আমি।

আমরা দুজন সমান্তরাল নই।

আমরা মিলব, 

আমাদের যে মিলতে হবে,

দুটো সরল রেখা

ধীরে ধীরে নিজ নিজ রাস্তায় চলছিল,

কেন বলোনি যে তারা বাক নেবে,

দুজনে মিলিত হবে 

একদম শীরষবিন্দুতে।

আমার তোমার প্রান্ত টাও এক হবে।"

;;;;;

চারিদিকে এখনো অন্ধকার।রাতের আধার কাটেনি যেন।প্রভাতের শুরু হতে চলেছে।ফজরের আজান শোনা যাচ্ছে দূর থেকে।

আজান শুনতেই আড়মোড়া দিয়ে উঠলো নাফিজ।দেরী করা যাবে না।তাকে আগে মসজিদে যেতে হবে।তারপর আবার তারার কাছে।না হলে যে তার দিন ই কাটবে।ইশ কি কঠিন কাজ তার।ভাবতে ভাবতে নাফিজ চোখ খুললো।নাফিজ চোখ খুলেই যেন শক খেল।সে আর তারা দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।নাফিজের হাতের ওপর তারার মাথা।

গতকালকের কথা মনে পড়তেই নাফিজ নিজের জিভ কামড়ে ধরলো।সে তো ভুলেই গিয়েছিল যে তারা এখন স্ত্রী।এখন আর সাইকেল চালিয়ে তারাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে যেতে হবে না।তারার মুখের দিকে তাকাতেই নাফিজের মুখে হাসি ফুটলো।গভীর ঘুমে মগ্ন তারা।ঘুমানোর কারণে চোখ মুখ ফোলা ফোলা লাগছে।মুখটা অনেকটা রসগোল্লার মতো লাগছে নাফিজের কাছে।নাফিজ তারার দু চোখের পাতায় ঠোট ছোয়ালো।সাথে সাথেই তারা নড়ে উঠে নাফিজকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

নাফিজ আবার একই কাজ করলো।তারা আবার একটু নড়েচড়ে আবার শুয়ে রইলো।নাফিজের বেশ মজা লাগছে তারাকে জালাতে।নাফিজ এবার আরো ভয়ঙ্কর কাজ করলো।একদম তারার ঠোট যুগলের ওপর হামলা।গভীর হামলা।

ঘুমের মধ্যে ই তারা কেঁপে উঠলো।দম বন্ধ হয়ে আসছে তারার।তারা চোখ খুলতেই অবাক পুরো।তার ঠোঁটের ওপর এমন হামলা চলছে তারা তো একে লজ্জায় শেষ,তারপর পুরো কেপে যাচ্ছে তারা।তারা লজ্জা য় চোখ বুজে নিল।

একটু পরে নাফিজ তারাকে ছাড়লো।উপুর হয়ে তারার মুখের দিকে চেয়ে রইলো।নাফিজের আর কোনো রেসপন্স না পেয়ে তারা ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো।নাফিজ উপুর হয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

----বউ সোনা,চাঁদের কনা।উঠবে না?নাকি আরো কিছু থেরাপি দেব?

নাফিজের কথায় এদিকে তারা লজ্জায় শেষ।নাফিজ আর কিছু না বলে তারাকে কোলে নিয়ে খাট থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে গেল।

;;;;;

নামাজ শেষ করে বসার ঘরে সোফায় বসে তারার ছবিতে মুখ গুঁজে বসে আছেন মাহমুদা বেগম।মনটা তার একদম ভালো নেই।আব্রাহাম সাহেব ও চায়ের কাপ সামনে নিয়ে বসে আছেন।তারাকে যেদিন থেকে নিজের কাছে পেয়েছিলেন কখনো তারাকে দূরে রাখেননি নিজের থেকে।আর আজ পুরো একটা রাত গেল।

এর মধ্যে গাসু নিচে নেমে এলো।দুজনকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে গাসুর ও ভালো লাগছে না।গাসু নিজেও তারাকে খুব মিস করছে।

----মেজর সাব।

গাসুর কথায় মাথা উঁচু করলেন আব্রাহাম সাহেব।

----কিছু বলবে গাসু?

----আপনে চা খাইতেন না?ঠান্ডা হয়ে যাইবোগা।

----খেতে ইচ্ছে করছে না গাসু।

----আপনেরা যদি এইরাম কইরা পইড়া থাকেন আমার তো ভালো লাগতো না।

----তুমি বুঝবে না গাসু।কেন এতো কষ্ট হচ্ছে আমাদের।

;;;;;

নামাজ পড়ে এসে নাফিজ তারাকে বোরখা পরিয়ে দিল।

----বোরখা কেন পরাচ্ছেন ক্যাপ্টেন?

----ঘুরতে যাব তাই।

----এখন!

----হুম এখন।সব ভুলে গেছো নাকি?সকালে হাঁটতে বের হব না?

----দেরী হয়ে গেছে তো।আপনার অফিস?

----আজ শনিবার।আর এমনিতেই তো আমি তিনদিনের ছুটিতে আছি।

----ওও।

----চলো চলো।

----কিন্তু বাইরে সবাই তো দেখে ফেলবে।

----সবাই ঘুমিয়ে।কেউ দেখবে না।আর দেখলে বা কি?আমি আমার বউকে নিয়ে ঘুরতে যাব।তাতে কার কি?ক্রাচ নিয়ে হাটো এখন।চলো।

নাফিজ তারাকে নিয়ে বাইরে আসলো।গ্যারেজ থেকে সাইকেল বের করলো।তারার চোখ দু টো ছাড়া আপাদমস্তক ঢেকে দিয়েছে নাফিজ।নাফিজ এসে তারার হাত থেকে ক্রাচ নিয়ে সাইকেলের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল।

----আমি হাঁটব কি করে এখন?

----চুপ।শুধু দেখে যাও।

নাফিজ নিজে সাইকেলে উঠে একদম তারার সামনে সাইকেল এনে থামালো।তারাকে উঠতে ইশারা করলো।তারাও উঠে বসলো নাফিজের পেছনে।

----নেও এবার পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসো।

----কাকে জড়িয়ে ধরব?

----রাস্তার ঐ তেরো নম্বর পাগলটাকে।

----কিহ!

----আমি ছাড়া এখানে কে আছে?আর আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে জড়ানোর কথা ভাবলে না তোমার ঠ্যাঙ ভাঙব আমি।

----পারব না।

----কেন?

----কৈ কে দেখে ফেলবে।

----তো?

----আমার লজ্জা করে।

----ওরে আমার লজ্জা রে।সকাল বেলা ছাড়াতে গেছি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন উনি।সারারাত আমার বুকের ওপর ঘুমিয়েছো।আর এখন বলছো লজ্জা করে!

নাফিজ মাথা টা পেছনে ঘুরে তারার দিকে তাকালো।তারা চোখ নামিয়ে বসে আছে।

----ধরবে।নাকি ফেলে দেব?

----ধরছি তো।

তারা ধীরে ধীরে দুটো হাত দিয়ে নাফিজ এর পেট অবধি পৌঁছাতেই নাফিজ তারার হাত দুটো আরো টেনে নিজের সাথে মেশালো।তারা এবার একদম নাফিজের গায়ের সাথে লেগে গেছে।

----এই বার ঠিকাছে।চলো যাওয়া যাক।

;;;;;

কলিংবেলের শব্দ হতেই মাহমুদা বেগম সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।

----এতো সকালে আবার কে?

----দেখো তো গিয়ে।

----দাঁড়াও দেখছি।

দরজা খুলতেই মাহমুদা বেগম চিৎকার দিয়ে উঠলেন,

----তারা,,,,!

ক্রাচ নিয়ে তারা দাড়িয়ে আছে।পেছনে নাফিজ দাঁড়ানো।মাহমুদা বেগম আর দেরী না করে তারাকে জাপটে ধরলেন।তারার চোখে মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলেন।যেন কত যুগ পর দেখছেন তারাকে। 

----আমার সোনা।আমার পাখি।

----মা আস্তে আস্তে ।ভেতরে যেতে দিবে না?

----আয় আয়।নাফিজ ভিতরে এসো বাবা।

মাহমুদা বেগম মেয়ে জামাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।আব্রাহাম সাহেব ও তারাকে দেখে কেঁদেই ফেললেন।বুকে জড়িয়ে নিলেন তারাকে।

----তারার ও মন ভালো ছিল না।তাই ভাবলাম এখান থেকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে যাই।

----তোমরা আজ থাকবে না?

----আসলে মা বাড়িতে তো এখনো আত্মীয় স্বজন আছে।আজকেই চলে যাবেন।কাল তারাকে দিয়ে যাব আমি।

----কেন?তোমাকে ও তো আসতে হবে।আমার মেয়ে একা কেন আসবে?

----না না।আমিও আসব।

;;;;;

বিকেল বেলা।

চায়ের কাপ নিয়ে ছেলে ছেলে বউকে পাশে নিয়ে বসেছে লতিফা।

----এই দেখ।এটা তোমার ছোটো খালা শ্বাশুড়ি ছবি।

----বাহ।আপনার সাথে তো ওনার অনেক মিল আছে!

----হ্যাঁ।আমাদের দুজনকে তো জমজ বলতো সবাই ছোটো বেলায়।

লতিফা ছবির অ্যালবাম নিয়ে তারাকে একে ওকে দেখাচ্ছেন।পাশে নাফিজ ও বসা।মাঝে মাঝে টি টেবিলের আড়াল থেকে তারার পায়ে পা ঘষে দুষ্টুমি করছে।তারা কিছু বলতেও পারছে না।কথা বলতে বলতে একটা ছোট্ট বাচ্চার ছবি বের করলো লতিফা।

----এটা কে মা?

----কে আবার !তোমার বর।ওর পাঁচ মাস বয়সের ছবি এটা।

----এতো গুলুমুলু ছিলেন উনি!

----হুম।আরো আছে।দেখো।

তারা এবার অ্যালবাম টা নিজে হাতে নিয়ে নাফিজের ছোটো বেলার ছবি গুলো উল্টে পাল্টে দেখছে।

----তারা।

----হুম।

----তোমার ছোটো বেলার ছবি আছে?

----আছে তো।কেন?

নাফিজ এর কথার উওর টা তারা বেশ ভয়ার্ত কন্ঠে দিল।

----কেন আবার।দেখতাম।ছোটো বেলায় কেমন ছিলে?

----এখন যেমন একটা পুতুল।আমার বৌমা ছোটো বেলায় নিশ্চয়ই ওরকম ই একটা পুতুল ছিল।

----তারা আমাকে দেখালে না তো তোমার ছবি।

----কিভাবে দেখাব?ফোনে তো নেই।বাড়ি তে অ্যালবামে আছে।

----তাহলে কাল গিয়ে দেখব।

----কাল!

----হ্যাঁ।অবাক হচ্ছো কেন!আর তুমি,,,,,।

নাফিজের কথার মাঝেই নাফিজের ফোন বেজে উঠলো।

----অফিসের কল।তোমরা দেখ।আমি কথা বলে আসি।

নাফিজ ফোন হাতে নিয়ে চলে গেল।তারা যেন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

;;;;;

----মা তুমি কাঁদছো কেন?

----কাদব না কি করব।তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেছিস।

----কাল যাব তো।আর তুমিই তো বলেছো পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি তোমার কাছে থাকব।

----তাড়াতাড়ি আয়।আমার বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেছে।

----এভাবে বলো না।গাসু আছে না।গাসুকেও তো তুমি তোমার আরেক মেয়ে বলো।

----ওতো আছেই।সারাদিন টোটৌ কোম্পানি করে নিজের ভুলভাল ইংলিশ বলে হাসাচ্ছে।

----হা হা।এটাই তো ওর কাজ।খালা মনিরা সবাই চলে গেছে?

----হ্যাঁ।শুধু সৈকত আছে।ও চাইছিল ওর বাবা মার সাথে চলে যেতে।আমিই যেতে দেইনি।কটা দিন থাকুক ছেলেটা।তোর শ্বাশুড়ি শ্বশুর কেমন?

----খুব ভালো।জানো আমাকে মা গালে তুলে খাইয়ে দিয়েছে।

----তাহলে খুব ভালো।আমি একটু নিশ্চিন্ত হতে পারব।

----ওনারা তো তিন চার দিন পর নাকি দেশের বাড়ি চলে যাবেন।

----আমাদের ও তেমন বলেছিল।কি করবে বল।ভিটে মাটি সব ছেড়ে আর কতোদিন।তোর পরীক্ষা হয়ে গেলে ওখানেই তোদের বিয়েটা বেশ বড় করে দেওয়া হবে।না হলে আমার মেয়ের বিয়ে কি এতো ছোট করে করতাম না কি!

----আর কি দরকার মা।হয়েই তো  গেছে।

----তুই থাম তো।ওষুধ খাচ্ছিস তো ঠিক মতো?

----হ্যাঁ।ক্যাপ্টেন মনে করিয়ে দেয় ভুলে গেলে।

----শোন এখন থেকে ওটাই তোর পরিবার।ওদের নিয়ে ভালো থাকবি।ওদের সুখে তোর সুখ ওদের কষ্টে তোর কষ্ট।ঠিকাছে?

----আচ্ছা।

----রাখছি।তোর বাপির জন্য রুটি বানাতে যাব।

----আল্লাহ হাফেজ।

----আল্লাহ হাফেজ।

তারা ফোন কেটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।সন্ধ্যা হতেই মাহমুদা বেগমের কথা বড্ড মনে পড়ছিল তার।কখনো মায়ের অভাব পায়নি সে মাহমুদা বেগমের থেকে।প্রতি সন্ধ্যা বেলা বাবা মায়ের সাথে বসে চা খাওয়া গল্প করা তার নিত্য দিনের অভ্যাস।আজ তো বিকেল বেলা শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে বসে গল্প করেছে।নাফিজ কি কাজে বাইরে গিয়েছিল।তারার একটুও ভালো লাগছে না।সকালেই ঘুরে এসেছিল ও বাড়ি থেকে।তবুও কষ্ট হচ্ছে।

তারা মুখ গোমড়া করে খাটের ওপর বসে পা দোলাচ্ছে।

"প্রেয়সীর মন খারাপের কারণ হওয়ার জন্য তো আমি আসিনি,

তার ছিটেফোঁটা হাসি টাই যে আমি বড্ড ভালোবাসি।

প্রতি মূহুর্তে চাই তার এই হাসির কারণ হতে"।

নাফিজের কন্ঠ পেতেই মাথা তুললো তারা।তারার সামনে ধোয়া ওঠা চায়ের কাপ ধরে আছে কেউ।তারা হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসিরহে দিল।নাফিজ দাঁড়িয়ে আছে।

----আপনি কখন এলেন?

----এসে ফ্রেশ হয়ে চা ও বানিয়ে এনেছি।

----কই।আমি তো টের পেলাম না।

----ফোনে কথা বলাতে ব্যস্ত ছিলে তুমি।

----ওওও।

----হুম।নেও কাপটা ধরো।

তারা নাফিজের কথাতে চায়ের কাপটা হাতে নিল।নাফিজ এসে তারার পাশে গা ঘেষে বসলো।তারা কাপে ঠোট ছুঁইয়ে চুমুক দিচ্ছে।নাফিজ আড়চোখে সেটা দেখছে।

----আপনি তো ভালোই চা বানান ক্যাপ্টেন।

----হুম।হয় তো।

----আপনি খাবেন না?

----খাব তো।আগে তুমি খাও।

----আপনার কাপ কোথায়?

----তোমার হাতে।

নাফিজের কথায় তারা একবার নিজের হাতের দিকে তাকাচ্ছে।আরেকবার নাফিজের দিকে।

নাফিজ তারার চাহনি দেখে হো হো করে হেসে উঠলো।হাসি থামিয়ে বললো,

----স্বামী স্ত্রী একই পাত্রে একসাথে খেলে মহব্বত বাড়ে তারা পাখি।

নাফিজ নিজের কথা শেষ করেই তারার থেকে কাপটা নিয়ে নিজেও চুমুক দিতে লাগল।

----ক্যাপ্টেন।

----হুম।

----একটা কথা বলবেন?

----কি?

----কেন আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করে নিজের জীবনটা নষ্ট করলেন।

তারার কথা শুনে বেশ রেগে গেল নাফিজ।খাটের পাশের ছোট্ট টেবিলের ওপর কাপটা রেখে রেগে তারার দুই বাহু শক্ত করে ধরলো।

----এই সমস্যা কি তোমার হ্যাঁ?কি সমস্যা?বার বার এই কথা কেন বলো তুমি?

নাফিজের ঝাকুনিতে তারার হাল বেহাল হয়ে যাচ্ছে।নাফিজের ক্রোধান্বিত চোখ দেখে তারা ভয়ে ঢোক গিললো।নিজের প্রতি নিজেরই রাগ লাগছে তারার।আগে জানলে সে ভুলেও নাফিজকে এমন প্রশ্ন করত না।

----কি হলো বলো?

----আমমমি তো,,,।

----কি আমি তো আমি তো করছো হ্যাঁ?সব সময় আমাকে কষ্ট দেও কেন বলোতো।

নাফিজের রাগ দেখে তারা বুঝতে পারছে না কি করা উচিত তার।কিছুটা ভেবে চট করে নাফিজের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো তারা।লোমশ বুকে মুখ গুজলো।নাফিজ হতভম্ব হয়ে গেছে তারার এমন কাজে।কিছুটা সময় পর নাফিজ ও ঠান্ডা হয়ে তারাকে জড়িয়ে নিল।

----সরি।

----আর কখনো যেন এমন না শুনি।

----কি করব বলুন?আমার বার বার মনে হয় আমি আপনার বোঝা হয়ে থাকব হয়তো।

----তারা।যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে বোঝা শব্দ টা থাকে না।দায়িত্ব কর্তব্য থাকে।

----আর কখনো বলব না।

----বললে তোমার সাথে কথাই বলব না আমি।

----হুম।

----কাল সকালে কিন্তু তোমাদের বাড়ি যেতে হবে।মনে আছে?

----হ্যা।

---- কাল তোমাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যেতে হবে আমার।

----কেন?

----আর বলো না।একটা কাজ আছে।মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে কয়েকজন স্টাফ আসবে।ওনাদেরকে নিয়ে কাজ আছে।

----ও।

----হুম।

;;;;;

সকাল হতেই রান্নাঘরের সাথে এটে আছেন মাহমুদা বেগম।আজ তার মেয়ে জামাই আসবে।কতো কাজ তার।কত পদের রান্না।আবার নাস্তা বানানো।

কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে এলো।আওয়াজ শুনেই যেন মনটা উত্তেজিত হয়ে গেল মাহমুদা বেগমের।তরকারি তে একটু পানি দিয়ে জ্বাল টা কমিয়ে দিয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে ছুটলেন দরজার দিকে।

----গাসু ,সৈকত কোথায় তোরা?এই দেখ তারা এসেছে বোধ হয়।তারা র বাপি কোথায় তুমি?

আব্রাহাম সাহেব ও তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে এলেন।মাহমুদা বেগমের আগেই গাসু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো।

----আফাআআ।

গাসু তারাকে জাপটে ধরলো গিয়ে।তারাও গাসুকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।গতকাল ও দেখা হয়েছে গাসুর সাথে।কিন্ত তবুও যেন গাসু এমন করছে যেন তারাকে সে কতো যুগ পরে দেখছে।

----আফা ওয়েলডান।

গাসু মাথা উঠিয়ে দাঁত কেলিয়ে কথাটা বললো।নাফিজ তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল গাসুর কথাতে।

----গাসু।তারা কি ভালো কাজ করেছে তুমি ওয়েল ডান বলছো?

----ও ফুলচোর দুলাভাই।আপনে দেখতেছি ইংলিশ পারেন না।হুনেন।কেউ বাড়িতে আইলে তাকে ওয়েলডান কইতে হয়।

----গাসু।ওটা ওয়েলকাম।ওয়েলডান না।

----ইহি রে।ইয়ে মানে আফা ভুল হইয়া গেছে গা।

পেছন থেকে মাহমুদা বেগম বলে উঠলেন,

----ওর কথা বাদ দে।সারাদিন এসব বলে আমার মাথা ব্যথা বাড়িয়ে দিচ্ছে।গাসু সরে দাঁড়াও।ওদের ভেতরে আসতে দেও।

----আক্কাস ম্যাডাম।

----আক্কাস!এইটা আবার কি গাসু?

----ও আফা আপনেরে তো কওন হইনাই এইডা হলো গিয়া ওকের নিউ টেলিভিশন।

----ও আল্লাহ।ভারসন হয় রে গাসু।

সৈকতের কথা শুনে পেছনে তাকিয়ে গাসু মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,

----ঐ তার মানে তাই।আক্কাস।

গাসুর কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

;;;;;

সকালের খাবার শেষে সোফায় বসে গল্প করছেন সৈকত,আব্রাহাম সাহেব আর নাফিজ।হুট করেই নাফিজের চোখ যায় টি টেবিলের ওপর রাখা ফটো অ্যালবাম এর দিকে।

----এটা কিসের অ্যালবাম স্যার?

----ও।আর বলো না।এটা তারার ছোটোকরে বেলার ছবির।কাল থেকে ওর মা মন খারাপ করে সারাদিন একবার ফোন ঘেটে দেখছে।একবার অ্যালবাম ঘেটে।

----তারার ছোট বেলার ছবিও আছে নাকি?

----হ্যা আছে তো।

সৈকত অ্যালবাম টা নিয়ে নাফিজের কাছে দিল।

----দেখ তোমার বউ এর ছবি।ছোট বেলায় ছোট্ট পুতুল ছিল যেন।

----দেখি তো।

নাফিজ হাতে নিয়ে পাতা উল্টাচ্ছে।প্রথম দিকে তারার এই সময় এর কিছু ছবি।আস্তে আস্তে ছোট বেলার ছবি আসছে।দু পাশে বিনুনি করে ক্রস বেল্ট পড়ে স্কুল ড্রেস পরে অবস্থায় ছবি।নাফিজ দেখছে।আব্রাহাম সাহেব এটা ওটা বলছেন।কখন তুলেছিলেন।কেন তুলেছিলেন।অনেক পাতাই দেখে ফেলেছে নাফিজ।

হঠাৎ করেই নাফিজের চোখ আটকে যায় একটা পাতায়।নাফিজের হাত কাঁপতে শুরু করলো সাথে সাথে।এটা কি দেখছে সে?চোখ ও যেন ছলছল করে উঠলো।

----স্যার এটা কার ছবি?

----এটা?এটা ও তো তারার ছবি।ঐ পাঁচ ছয় বছরের ছবি হয়তো।

নাফিজ ঘেমে যাচ্ছে পুরো ছবিটা দেখে।এটা কিভাবে হতে পারে?তার হারিয়ে যাওয়া পাঁচ বছরের ছোট্ট মিষ্টি তারার ছবির অ্যালবাম এ কিভাবে আসতে পারে।নাফিজ এর শ্বাস ও যেন দ্রুত ওঠানামা করছে।

----স্যার।তারার এর থেকে ছোট বয়সের ছবি কোথায়?আর তো দেখছি না।

নাফিজের কথায় বেশ দমে গেলেন আব্রাহাম সাহেব।সৈকত আর তিনি পরস্পর এর দিকে তাকাচ্ছেন।আব্রাহাম সাহেবের মনে হচ্ছে কেন তিনি দেখাতে গেলেন এটা নাফিজকে।

----স্যার বলুন না।

----নাফিজ।আমাকে ক্ষমা করে দিও।তোমার থেকে একটা কথা লুকিয়ে ছি আমি।

কথা লোকানোর কথা শুনে আরো উৎসুক হয়ে উঠলো নাফিজ।বুকের বা পাশটা ও যেন চিনচিন করে উঠলো।

----কি কথা স্যার?

----আমি মাহমুদা তারার বায়োলজিকাল বাবা মা নই।

----মানে?তাহলে ও?প্লিজ স্যার খুলে বলুন।

----সে অনেক বড় ঘটনা।

আব্রাহাম সাহেব বলতে শুরু করলেন,

আজ থেকে অনেক বছর আগে।আমার চাকরির তখন সবে শুরু।মাহমুদার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার পর খুব সুখে ছিলাম দুজন।না ভালোবাসার কমতি না সুখের ।কমতি ছিল একটা সন্তানের।ছয় বছর বিয়ের বয়স হয়ে যায়।অনেক চেষ্টার পরেও কনসিভ করতে পারেনি মাহমুদা।অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি।সমস্যা মাহমুদা র ছিল।এই নিয়ে আত্মীয় স্বজন সবার থেকে কথা শুনেছি ।আমার মা বাবাও আমার আবার বিয়ে দিতে চেয়েছিল।কিন্ত আমি পারিনি।সন্তান এর জোর কি এতোটাই বলো?একটা সন্তান এর জন্য আমি আমার স্ত্রীকে ছাড়ব।আমার কাছে মনে হতো এটা কাপুরুষ এর কাজ।এটা ভাবতাম আজ যদি আমার এমন হতো মাহমুদা কি ছেড়ে যেত আমাকে?তাই সন্তান ছাড়াই না হয় থাকব।এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোয়াটারে চলে আসি মাহমুদা কে নিয়ে।মাহমুদা স্টাবলিশ একটা মেয়ে।তবুও ওকে কম কথা শোনায় নি আমার পরিবার।এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা বাচ্চা দত্তক নেব।কিন্তু অনেক চেষ্টা করেছি পাইনি।

আমার ছোট বোন রংপুর থাকে।ওখানে ওর শ্বশুর বাড়ি।ওর দেবরের বিয়েতে যাওয়ার সময় ওর গাড়িতে একটা বাচ্চা এক্সিডেন্ট করে।ও সাথে সাথে নিয়ে যায় সদর হাসপাতালে।কিন্তু বাচ্চাটার একটা পায়ের ওপর গাড়ির চাকা পড়েছিল।অবস্থা ভালো ছিল না।আমার তখন ঢাকায় পোস্টিং।ছুটির দিন।ইমিডিয়েট ওকে ঢাকায় আনতে হবে বলে ও আমাকে খবর দেয়।বাচ্চাটার অবস্থা খুব ক্রিটিকাল ছিল।ওকে ঢাকার নাম করা হসপিটাল এ ভর্তি করা হয়।ওর কোনো পরিচয় জানতাম না আমার কেউ।ওর বড্ড চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।আমি মাহমুদা কে নিয়ে যাই হসপিটালে।বাচ্চাটাকে দেখে মাহমুদা বড্ড আবেগি হয়ে পড়ে।আমি তো অবাক হয়েছিলাম ঐ টুকু বাচ্চার গায়ে এতো মারের কালশিটে দাগ দেখে।মাহমুদা বলে খোঁজ না নিয়ে আগে ওর চিকিৎসা করাতে।ওর কথা শুনে আমি ওর সমস্ত চিকিৎসার ভার নেই।এদিকে আমার বোন খোঁজ নিতে থাকে ওর নামে কেউ ডাইরি করেছে কি না পুলিশে।অদ্ভুত ব্যাপার এক সপ্তাহের বেশি হয়ে যায়।অথচ কেউ ওর নামে খোঁজ নেয়নি।এর মধ্যে ও ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে।কিন্তু ডাক্তার বলে হয় তো হাঁটতে পারবে না কখনো।হাড়ে খুব বাজে ভাবে ফ্রাকচার হয়ে ছিল।ওর পরিচয় না পাওয়ার পর মাহমুদা বলে ওকে দত্তক নেব আমরা।আমি তবুও অপেক্ষা করি।এক মাস কাটে।কারোর খোঁজ পাই নি।অবশেষে আমি সব ব্যবস্থা করি।ওকে দত্তক নেই।তারা সুস্থ হবার পর কথা বলতো না।হঠাৎ করেই চিতকার করে উঠতো।নতুন মা,বাবাই আরো কিছু নাম বলতো ঘুমের ঘোরে।ভয় পেত প্রচন্ড।ডাক্তার বলেছিল ও ট্রমার মধ্যে চলে গেছে।আর এখন ওর ভালো চিকিৎসা করালে হয়তো পা ঠিক হতেও পারে।ওকে নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেই।মাহমুদা আর ওকে ওখানে রেখে দেশে চলে আসি।ওদিকে ওর চিকিৎসা হতে থাকে।সব ই চলে কিন্তু হুইল চেয়ার হয় ওর জন্য সীমাবদ্ধ।ও আমাকে মাহমুদা কে ও ভয় পেত।কখনো বলতো বাড়ি যাব।কখনো বলতো আমাকে মেরোনা নতুন মা।ওর কথা শুনে বুঝতাম হয়তো ওর সৎ মা ছিল।না হলে কেন নতুন মা বলবে আর এরকম চিৎকার করবে ভয় পাবে।এরপর ওর পরিবারের কোন খোঁজ নেইনি আমি।যে পরিবার এরকম ফুটফুটে বাচ্চাকে এভাবে মারতে পারে তাদের কাছে আর ফেরত দিতে চাইনি ওকে।তারা আস্তে আস্তে একটু স্বাভাবিক হতে থাকে।আমার আর মাহমুদা র সাথে ও ফ্রি হতে থাকে।তবুও মাঝে মাঝে ঐ যে বিভিন্ন  নাম ধরে ডাকে।মাহমুদা ওকে বলতে শেখায় মা ডাক আমাকে বাপি ডাক।ও কিছুই বলতো না।প্রায় দু বছর পর ও প্রথম মাহমুদা কে মা ডাকে।আমাকেও বাপি ডাকতে শুরু করে।সেই থেকে আমার পাখিটা কে নিয়ে আমার সব।

আব্রাহাম সাহেব থামলেন।নাফিজের চোখ পানিতে ভরে এসেছে।

----স্যার।তারার কিছু মনে নেই?

----আছে হয়তো।ও যত বড় হয়েছে আমরা কখনো বুঝতে দেইনি না অতীত নিয়ে ভাবতে দিয়েছি।ঐ নাম ডাক হয় তো যা মনে আছে।ছোট বাচ্চা ছিল। চেহারা মনে আছে কি না বলতে পারব না।অনেক বছর তো হয়ে গেছে।আর আমি চাই ও না ও ওসব মনে রাখুক।কতো না জানি কষ্ট পেয়েছিল আমার পাখিটা।

----স্যার।আপনি যেমন বললেন ও তো যথেষ্ট বড় ছিল।নাম বলতে পারবে তো নিজের।

----বলেছিল তো।ওর মাথায় ও চোট লেগেছিল।আল্লাহর রহমত তেমন বেশি লাগে নি।তাই হয়তো এর ও র নাম বলতে পারত।

----কি নাম ছিল ওর?

----ও দেখতে যেমন তেমন।মিষ্টি।মাহমুদা পরে চাইনি এই নাম থাক।ও ঠিক করেছিল আমাদের অন্ধকার আকাশের তারা ও।এজন্য ওর নাম তারা রেখেছিল।

নাফিজের সামনে সবকিছু কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে।এতো বড় সত্যি আজ তার সামনে।সে ভাবতেই পারছে না।

----নাফিজ ।তারা আর যাই হোক এখন আমার মেয়ে।তুমি এই নিয়ে ওকে কিছু বলো না।

----না স্যার।স্যার আমাকে বের হতে হবে।আমি তারার সাথে দেখা করে আসি।

আব্রাহাম সাহেব কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাফিজ একদম দৌড়ে উঠলো সিঁড়ি বেয়ে।তার বুকের ব্যথাটা যে আজ আরো বেশি।সে তো তারাকে সব কিছু বলেছিল।তবুও কেন তারা সেদিন কিছু বলেনি।কেন?উওর পাচ্ছে না নাফিজ।চোখ মুছতে নাফিজ তারার ঘরে গেল।আজ অতীত বর্তমান সবকিছু যেন একাকার হয়ে যাচ্ছে নাফিজের কাছে।

নাফিজ ঘরে ঢুকতেই তারা দরজা খোলার শব্দ পেয়ে পেছনে ফিরলো।তারা ক্রাচ নিয়ে উঠে দাড়িয়ে নাফিজের দিকে এগিয়ে গেল।

----ক্যাপ্টেন আপনাকে একটা জিনিস দেখাব।জানেন আমি একটা ছবি এঁকেছি।আমার ইচ্ছে আমাদের ঠিক ঐ রকম ছোট্ট একটা বাড়ি হবে।ক্যাপ্টেন আপনি,,,,।

তারা দমে গেল নাফিজের কোন সাড়া না পেয়ে।নাফিজের দিকে তাকিয়েই তারা যেন আঁতকে উঠলো।নাফিজ কাদছে।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে বড্ড রেগে আছে আজ সে।

----ক্যাপ্টেন আপনি কথা বলছেন না কেন?

নাফিজ তারার দিকে একবার তাকিয়ে দরজাটা লক করে দিল।নাফিজের এমন কাজে ভয় পেয়ে গেল তারা।নাফিজ দরজা লাগিয়ে একটু একটু করে এগোতে এগোতে একদম তারার মুখোমুখি গিয়ে দাড়াল।

----ক্যাপ্টেন কি হয়েছে আপনার?কিছু বলছেন না কেন?

----কি বলব?কি বলে ডাকব তোমায়?

----কি বলে ডাকবেন মানে?

তারার কথা শুনে নাফিজ তেড়ে এসে তারার দুই বাহু শক্ত করে ধরলো।

----কি বলব তারা নাকি মিষ্টি?নাকি মিষ্টি নাকি তারা?

নাফিজের কথা শুনে চোখ বড়বড় হয়ে গেল তারার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন