নয়নতারা - পর্ব ০৬ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


----আআআ দাদু ছাড়ো।
----এই।চুপ একদম চুপ কর।

শেখর বুড়ো মিষ্টির মুখ চেপে ধরলো।মিষ্টির ছোটার জন্য ছটফট করছে।

----তোরে ভালো করে বললাম শুনলি না।দাঁড়া আমিই খুলছি তোর জামা।

শেখর বুড়ো মিষ্টির জামা ধরে টানাটানি করছে।মিষ্টি ছটফট করতে করতে বুড়োর হাতে কামড় বসিয়ে দিল।

----এই ছুড়ি দাঁড়া।

মিষ্টি আর এক মূহুর্ত দেরী করলো না।ছুট দিল জঙ্গলের বাইরের দিকে।

----এই এই মিষ্টি দাঁড়া।
----না না।আমি যাব না তোমার সাথে।তুমি খুব পচা।

মিষ্টি কথা বলতে বলতে দৌড়াতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।

----আআআ।মা,,,।
----নে এবার পালা।

শেখর বুড়ো সাথে সাথে গিয়ে মিষ্টিকে খপ করে ধরে বসলো।

;;;;;

----দেখেছেন মা আপনার নাতনির কান্ড।সেই কোন সকালে বেরিয়েছে এখন ও আসার নাম নেই।
----তুমি আইজ হঠাৎ মিষ্টিরে লইয়া ভাবতাছো ক্যান।ও বুঝছি।ফজলে আইছে না হেই জন্যি।
----এই যে আপনি কোথায় গেলেন?আপনার মায়ের চেঁচামেচি শুনতে পারছেন না।আমার কথা তো কখনো বিশ্বাস করেন না।আসেন এসে দেখুন আপনার মা কি ব্যবহার করে আমার সাথে।

তানিয়ার কথাতে রাহেলা বেগম ভড়কে গেলেন।তানিয়া যে সামান্য বিষয় নিয়ে এরকম তুলকালাম করবে সেটা তার মাথাতে ও আসেনি।

----আরে ও বউ আমি কি কইলাম যে তুমি হামার ছেলেরে ডাকতিছো।

তানিয়ার গলা শুনেই ফজলে শেখ মায়ের ঘরে চলে আসলেন।

----কি হয়েছে তানিয়া ?চেচাচ্ছো কেন?
----কি হয়নি তাই বলুন।আপনি তো সব সময় বলেন আমি মিষ্টির খেয়াল রাখি না।এই দেখুন কেবল এসে শুধু এইটুকু বলেছি আপনার নাতনিকে দেখছি না।ব্যস ঐ খোঁটা শুরু। আমি না কি আপনাকে দেখানোর জন্য এসে মিষ্টির খোঁজ নিচ্ছি।
----মা তুমি এরকম ব্যবহার করছো কেন তানিয়ার সাথে?ও তো মিষ্টির খেয়াল একদম নেয় না এমন তো নয়।

ফজলে শেখের কথা শুনে রাহেলা বেগম বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।

----তোর পায়ে ধরছি বাপ।হামারে মাপ কইরা দে।তোর বউরে কিছু কওন ই হামার ভুল হইছে। 
----এভাবে কথা বলছো কেন মা?
----তা কি কইরা কতা কইবো।তোর বউয়ের কতায় তুই উঠিস আর বসিস।হামার কতা শুইনা তুই কি করবি।বউ কইলো আর বাক বিচার না কইরা তুই হামারে জিগাইতে চইলে আইলি।থাক তুরা।হামি গিলাম হামার পুতিনরে খুজতি।

রাহেলা বেগম আঁচল টা মাথায় দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেলেন।

----দেখলেন আপনার মায়ের আচরণ।
----তুমি কি একটু চুপ করতে পারবে।মাথা খারাপ করে দিচ্ছো আমার।যাও মিষ্টিকে নিয়ে এসো।যাও।
----যাচ্ছি।

ফজলে শেখের ধমক খেয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে রাহেলা বেগমের পিছু পিছু গেল।

;;;;;

----আমাকে ছেড়ে দেও দাদু।আমার ভয় করছে।আমি বাড়ি যাব।
----দাঁড়া যাওয়াচ্ছি তোকে।

মাটিতে পড়ে কান্না করছে মিষ্টি।শেখর বুড়ো মিষ্টির পরনের জামাটা টেনে ছিড়ে ফেলেছে।লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে শেখর বুড়ো মিষ্টির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

----শয়তান বুড়ো লজ্জা করে না নিজের নাতনির বয়সের মেয়ের সাথে নোংরা কাজ করতে গেছিলে।

মাটিতে পড়ে গিয়ে কাতরাচ্ছে শেখর বুড়ো।নাফিজ বুড়োর অন্ডকোষ বরাবর আবার জোরে লাথি দিল।

----এবারের মতো ছেড়ে দিচ্ছি।এরপর কিছু করলে পুরো এলাকার লোক দিয়ে পিটিয়ে মেরে কুকুর দিয়ে খাওয়াবো আপনার লাশ।

নাফিজ বুড়োর সাথে কথা বলে মিষ্টির দিকে এগিয়ে গেল।ভয়ে কুঁকড়ে গেছে মিষ্টি।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

নাফিজ মিষ্টির সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।

----মিষ্টি পাখি কাঁদছিস কেন?আমি এসে গেছি না।
----জানো নাফিজ ভাইয়া শেখর দাদু খুব পচা।আমি এখানে আসতে চাইনি বলে আমাকে খুব মেরেছে।
----কাঁদে না মিষ্টি কুমড়ো।দেখি কোথায় লেগেছে।

মিষ্টি হাঁটুতে হাত দিয়ে নাফিজকে দেখালো।হাঁটু তে অনেক খানি ছিলে গেছে।মিষ্টির গায়ে ও মাটি লেগে আছে।নাফিজ হাত দিয়ে ভালো করে ঝেড়ে পরিষ্কার করে দিল।মাটির ওপর থেকে মিষ্টির জামাটা নিল।

----দেখি এবার জামাটা পড়ে নে।
----দাদু আমার জামা ছিড়ে ফেলেছে নাফিজ ভাইয়া।নতুন মা তো আমাকে খুব বকবে।
----আচ্ছা এই হাতার দিক থেকে তো ছিড়েছে।তুই পড়ে নে।কাল মা কে বলবো তোর জামাটা সেলাই করে দিতে।
----দেও।

মিষ্টিকে জামা পড়িয়ে দিয়ে নাফিজ মিষ্টির চোখ মুছে দিল।

----শোন আর কখনো কেউ ডাকলে যাবি না।
----আচ্ছা।তুমি ডাকলেও যাব না?
----আমি!আমি কি করে তোর ক্ষতি করতে পারি বল।আর শোন বাড়ি গিয়ে এসব বলবি না।বলবি খেলতে গিয়ে তুই পড়ে গেছিলি।
----কেন?মিথ্যা বলব কেন?
----তোকে যেটা বলেছি সেটা শুনবি।কিছু কিছু সময় সত্যির চেয়ে মিথ্যা বলাতে দোষ নেই।নে চল এবার।তোকে বাড়ি দিয়ে আসি।

নাফিজের হাত ধরে মিষ্টি হাঁটা শুরু করলো।

----আমি চাই না মিষ্টি পাখি আজকের এই ঘটনা কখনো তোর জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলুক।যেটা তোর আমার আর শেখর বুড়োর মধ্যে ঘটেছে সেটা শুধু আল্লাহ আর আমরা পর্যন্ত ই সীমাবদ্ধ থাক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন