নয়নতারা - পর্ব ১২ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


আজ শুক্রবার।ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে এসেছেন ফজলে শেখ।তানিয়ার জন্য ই মূলত এতো বাজার।গতকাল ডাক্তার জানিয়েছেন তানিয়া মা হতে চলেছে।ফজলে শেখের খুশি আর দেখে কে।এদিকে রাহেলা বেগম ও মনে মনে এটা ভেবে খুশি হচ্ছেন এবার যদি তার বংশ রক্ষার জন্য কেউ আসে।

----শোনো জামাই,মুই তো চইলা যাইতেছি।তুমি কিন্তু তানির খেয়াল লইয়ো।হেইবার যদি আল্লাহ একখান পোলা দেয় তয় তো তুমার ই লাভ।শত হলিও বুড়া বয়সে তুমার লাঠি ধরবার কাউরে পাইবা।
----আচ্ছা মা।আপনি আর কটা দিন থেকে যেতেন।
----নাহ।আর কি থাকুম।এই দুটোদিন ছিলুম তাই তোমার মায়ে মুরে খুটা দিয়ে ধুইয়া ছাড়ছে।
----কিহ!মা আপনাকে খোঁটা দিয়েছে?
----তা নয়তো কি!

কথাটা বলেই রাবেয়া বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে নাক টেনে একটু কান্নার ভান করলেন।ফজলে শেখ বেজায় লজ্জাতে পড়েছেন।তার শাশুড়িকে তার মা এমন অপমান করেছে শুনেই তার মুখ লজ্জায় রক্ত বর্ন ধারণ করেছে।

----না আপনি মায়ের কথা কেন কানে নিচ্ছেন।বয়স্ক মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলেছে।আপনি আর কটা দিন থেকে যান।
----তুমি কইতাছো জামাই!
----হ্যাঁ।
----আইচ্ছা।তুমি যহন কইতাছো মুই আর যাইতাম না।

ফজলে শেখ রাবেয়া বেগমের সাথে কথা বলে রাহেলা বেগমের ঘরের দিকে গেলেন।

----মা এগুলো কি?
----আরে ফজলে তুই?
----তুমি তানিয়ার মাকে খোঁটা দিয়েছো কেন?
----ও তুই বুঝি এহন বউয়ের সাথে সাথে শাশুড়ি লইয়া ও সালিশ করতে আইছোস?
----তুমি খোঁটা দিয়েছো কেন ওনাকে?
----দিছি বেশ করছি।ঐ কালনাগিনীর মা তো আরেক কালনাগিনী।দিন রাত মোর পোলার ঘাড়ের ওপর বইসা গান্ডে পিন্ডে গিলতাছে।আর হামারই সংসারে আইসা হেতি কলকাঠি নাড়তাছে।কুটনি একখান।
----মা আর দ্বিতীয় বার যদি শুনি তুমি ওনার সাথে এমন ব্যবহার করেছো,,,,,
----হুনলে তুই কি করতি ক দেহি?বাইর কইরা দিবি!এই ভয় দেহাইতাছোস হামারে।হুইনা রাখ মোর সোয়ামীর বাড়ি জমি সব এহন মোর নামে।হামি বাইচা থাকতি তোর ক্ষেমতা নাই মুরে বাইর করার।তুই যদি বেশি বাড়াবাড়ি করোস তোরে আর তোর ঐ বউরে হামি ঘাড় ধাক্কা দিয়া বাইর করুম।হামার পেটের পোলা হইয়া দুদিনের শাউড়ি রে এহন চিনো।মারে গুনতিতি নেও না।তাই না।

ফজলে শেখ রাহেলা বেগমের সাথে আর কথা বাড়ালেন না।বিরক্তি নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

;;;;;

----আর ভালো লাগছে না।এবার আমাদের মিষ্টির কপাল টা সত্যি সত্যি বোধ হয় পুড়লো রে নাফিজ।

নাফিজ অঙ্ক কষা বাদ দিয়ে লতিফার দিকে তাকালো।দরজা লাগিয়ে ভেতরে ঢুকলো লতিফা।

----কি হয়েছে মা?
----তানিয়া মা হতে চলেছে।
----ও।
----এরকম সুখবর শুনে খুশি যে কেউ হবে।কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে মিষ্টিটার জন্য।
----আসলেই মা।এখন ও একা।তাই তানিয়া কাকি ওকে কি অত্যাচার দুরছাই করে।এরপর যদি ওনার নিজের একটা বাচ্চা হয়,,,,,,,,,

মিষ্টির কথা ভেবেই নাফিজ লতিফা দুজনের ভেতর থেকেই এক অজানা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

----ও তোকে তো বলতে ভুলে গেছি তোর বাবা ফোন করেছিল।
----বাবা কবে আসবে মা?কতোদিন দেখি না বাবাকে।
----সামনের সপ্তাহে বিশ দিনের ছুটিতে ঢাকা থেকে আসবে।
----যাক।কতোদিন পর বাবাকে দেখব।
----আরেকটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছি।
----কি?
----সামনের সপ্তাহে তোর ছোটো মামার বিয়ে।তোর নানু একটু আগে ফোন করেছিল।আমাদের আগে আগে যেতে বলেছে।
----কবে যাবে?
----কাল পরশু।আচ্ছা তুই পড়।আমি রান্না বসাই গিয়ে।

নাফিজের আর পড়াতে মন বসলো না।না তার মনে মামার বিয়ের আনন্দ।তার মনে শুধু একটাই চিন্তা এখন তার মিষ্টি পাখিকে রেখে সে থাকবে কি করে এতোদিন।

;;;;

----ও নতুন মা নতুন মা আরেকটা আপেল দেওনা।

মিষ্টির কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তানিয়ার।বসার ঘরে বসে সে আপেল কেটে খাচ্ছিল।এর মধ্যে মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে হাজির।রাহেলা বেগমকে দেখতে পেয়ে সে যা মিষ্টিকে এক টুকরো আপেল দিয়ে ছিল।এখন মিষ্টির এই আবদারে বড্ড রাগ হচ্ছে তার।

----যা তো এখান থেকে।সব সময় খালি খাই খাই।
----ও নতুন মা দেও না।খুব খিদে পেয়েছে।আর আপেল গুলো কি মিষ্টি।কতোদিন পর বাবাই আপেল এনেছে।দেও না একটা।

তানিয়া মিষ্টির কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো খেয়েই যাচ্ছে।মিষ্টি গিয়ে তানিয়ার আঁচল নিয়ে টানাটানি শুরু করলো।

----ও নতুন মা।একটা দেও না।
----শয়তান মেয়ে একটা।দূর হ এখান থেকে।

বলেই তানিয়া মিষ্টিকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিল।

----আআআআ মা,,,,

ব্যথা পেয়ে মিষ্টি জোরে কান্না শুরু করে দিয়েছে।মিষ্টির কান্না শুনে রাহেলা বেগম ফজলে শেখ দুজনেই ছুটে এলো।

----কি হয়েছে কি মিষ্টি?
----আরে ও মিষ্টি কি হইছে?আরে আরে।ওঠ উঠ।

রাহেলা বেগম মিষ্টিকে দাঁড় করিয়ে দেখে মিষ্টি বারবার হাঁটুতে ঘষছে আর জোরে কাদছে।

----ও মিষ্টি ব্যথা পাইছোস।কেমনে পড়লি?
----নতুন মা আমাকে ব্যথা দিয়েছে।একটু আপেল চেয়েছি বলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।দাদীমা আমার হাঁটুতে খুব ব্যথা করছে।

মিষ্টির কথা শুনে ফজলে শেখ বেশ চটে গিয়ে তানিয়ার দিকে এগিয়ে গেলেন।তানিয়া ঢোক গিলছে বসে বসে।

----তুমি ওকে ধাক্কা দিয়েছো কেন তানিয়া?
----কি করব।আঁচল ধরে টানাটানি করছিল।ছাড়তে বলছি তাও ছাড়ে না।
----ওকে একটা আপেল দিলে কি হতো তোমার?
----একটা কেন।এসে খেতে বসে পারলাম না ও এসে খেয়েই যাচ্ছে।আমার জন্য কিছু রাখছে নাকি।এইটুকুন মানুষ অতো খাই খাই কেন সব সময়।আমার বাচ্চার জন্য এখন পুষ্টি প্রয়োজন।আমি নিজে কি কিছুই খাব না।সব কি আপনার মেয়েকে গিলাবেন আপনি।
----এসব কোন ধরনের কথা তানিয়া?

তানিয়া আপেলের বাটিটা মিষ্টির সামনে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।

----মিথ্যাবাদী মেয়ে একটা।নে জন্মের গিলা গেল।গিলে মর।মরে শান্তি দে আমায়।তোর জন্য একটু খেতে ও পারব না।যখন তখন এসে শুধু নজর দেবে।আর এর বাপ এসে আমাকে শাসাবে।কি পেয়েছেন কি হ্যাঁ।আজ ই আমি বাপের বাড়ি চলে যাব।আপনি বসে বসে আপনার ঐ মেয়েকে নিয়ে থাকেন।আর ওকেই জনমের গেলান গিলান।

তানিয়া ন্যাকা কান্না করতে করতে ঘরের দিকে গেল।ফজলে শেখ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মিষ্টি কে রাহেলা বেগমের থেকে ছাড়িয়ে এলো পাথাড়ি থাপ্পড় দিতে লাগলেন।

----তোর জ্বালায় একটু শান্তি নেই আমার।মরতে পারিস না।জ্বালিয়ে খাচ্ছিস তুই।তোর জন্য আমার সংসারে একটু শান্তি নেই।অলক্ষী একটা।

;;;;;

দুপুরের কাঠফাটা রোদে রাস্তার কাছে দাড়িয়ে আছে মিষ্টি।মুখ উঁচু করে সূর্যের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে।মুখ দিয়ে টপ টপ করে ঘাম বেয়ে পড়ছে।ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট।

----ও সূর্য মামা তুমি একটু আমার মাকে এনে দেবে।আমি মায়ের কাছে যাব।ও মা মা তুমি কোথায় মা?কোথায় গেলে তুমি? বাবাই আমাকে একটুও ভালোবাসে না।কতো ব্যথা দিয়েছে আজ আমাকে।মা মা আমার গা হাত পা খুব ব্যথা করছে।দেখো আমি না খেয়ে বাইরে চলে এসেছি।কেউ আমাকে ডাকতে এলো না।তোমার সাথে দুষ্টুমি করলে তুমি তো বকা দিতে।পরে তো আবার আমাকে খুঁজতে আসতে।ও মা মা তুমি কোথায়?

মিষ্টি হাঁটতে হাঁটতে কখন যে রাস্তার মাঝের দিকে চলে এসেছে তার খেয়াল নেই।এর মধ্যে একটা মালবাহী ট্রাক এগিয়ে আসছে মিষ্টির দিকে।

;;;;;

দুপুর বেলা না খেয়ে বিছানায় উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে আছে তানিয়া।সেই কখন থেকে রাবেয়া বেগম তাকে খেতে ডাকছে কিন্তু তার ওঠার নাম নেই।না পেরে ফজলে শেখ নিজেই আসলেন তানিয়াকে ডাকতে।

----এগুলো কি শুরু করেছো কি তানি?এই শরীরে এই ভরদুপুরে না খেয়ে শুয়ে আছো কেন?তুমি আমাকে একটু শান্তি তে থাকতে দেবে না।

ফজলে শেখের কথা শুনে উঠে বসলো তানিয়া।

----আপনার শান্তিরই তো ব্যবস্থা করছি।আমি মাকে বলে দিয়েছি ব্যাগ গোছাতে।আজ বিকেলেই চলে যাব আমি বাপের বাড়ি।আমার জন্য তো আপনার যতো অশান্তি ।থাকবো না আমি।

তানিয়া বেশ অভিমানী কন্ঠেই ফজলে শেখকে কথাগুলো বললো।ফজলে শেখ মাথা ঠান্ডা করে তানিয়ার পাশে গিয়ে বসলেন।

----দেখো তানিয়া দোষ তোমার ও ছিল।
----কিসের দোষ ছিল হ্যাঁ।আপনার ঐ মেয়ের জন্য দু বেলা শান্তিতে খেতেও পারিনা আমি।আর আপনি আর আপনার ঐ মা সব সময় শুধু আমাকে অপমান করেন।কথা শোনান।আমি কেন কথা শুনতে যাব হ্যাঁ।সব সময় আমাকে কথা শোনাবেন আপনারা।
----আচ্ছা ভুল হয়েছে।বাদ দাও।তুমি এই শরীরে না খেয়ে থেকে কি আমাদের সন্তানের ক্ষতি চাও বলো।
----না।তা কেন চাইবো?
----তাহলে।
----আমাকে খাইয়ে দিতে হবে।না হলে আমি খাব না।
----কিহ!কে খাইয়ে দেবে এখন তোমাকে?
----কেন আপনি আছেন না।

তানিয়ার আঁচলের কোন ধরে আঙুলে পেচাতে পেচাতে বেশ লাজুক ভাবেই কথাটা বললো।ফজলে শেখ মুচকি হেসে তানিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

----আচ্ছা বসো।আমি খাবার আনছি।

;;;;;

রাস্তার পাশের ফুটপাতে মিষ্টির এক হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে নাফিজ।যেন ছেড়ে দিলে এখনি পালিয়ে যাবে।মিষ্টি শুধু অবাক হয়ে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।কি ঘটেছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না।

ট্রাকের ড্রাইভার সলেমান মিয়া ট্রাক থামিয়ে নেমে নাফিজদের দিকেই আসলেন।

----আরে ছোটো মেয়ে,তুমি এইভাবে মাঝরাস্তায় কি করছো?আমি যদি আগে থেকেই ব্রেক না কষতাম কি হতো বলোতো।আর এই যে ছেলেটা তুমি ও সঠিক সময়েই এসে ওকে পাশে সরিয়ে নিয়েছো।কি যে হতো!আল্লাহ মালুম।
----কাকু ও খেলতে খেলতে চলে এসেছে বুঝতে পারেনি।আসলে রাস্তার পাশে বাড়িতো ওদের।
----সে ঠিক আছে।তুমি ই বলো এই দুপুর বেলা মানুষজন কম থাকে।রোড ফাঁকা থাকে।আমিও তাই একটু জোরেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম।দূর থেকে ওকে দেখে তাড়াতাড়ি ব্রেক কষলাম।না হলে তো,,,,
----আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কাকু।ও ছোটো মানুষ।বুঝতে পারেনি।
----আচ্ছা সাবধানে চলাফেরা করবে কেমন।এই মেয়েটা তোমার কে আছে?বোন নাকি।

ট্রাক ড্রাইভারের কথাতে নাফিজ একবার মিষ্টির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ট্রাক ড্রাইভারের দিকে।

----না।প্রতিবেশী।বিশেষ কেউ।আমার বাগানের নয়নতারা ফুল।

নাফিজের কথাটা ড্রাইভার ঠিক বুঝতে পারলেন না।উনি মিষ্টির মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলেন।

----যাই বলো এতো সুন্দর বাচ্চা আমি আজ অবধি দেখিনি।সাক্ষাত পরী।তুমি মা বড় হলে সেই সুন্দর হবে।মাশাল্লাহ।আল্লাহ তোমাদের ভালো করুক।আসি ঠিকাছে।আর কখনো রাস্তায় এভাবে চলাফেরা করবে না।
----আচ্ছা।

নাফিজের মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।ড্রাইভার মিয়া তার ট্রাক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলেন।

----আজকে তোকে আমি সত্যি সত্যি মারব মিষ্টি।তুই কখনো আমার কথা শুনিস না।কতোবার বলি রাস্তায় আসবি না।

নাফিজের গরম চোখ দেখে মিষ্টি ঠোট ফুলিয়ে কেঁদে দিল।

----তুমিও আমাকে মারবে নাফিজ ভাইয়া!জানো বাবাই না আমাকে আজ খুব মেরেছে।খুব ব্যথা করছে।

মিষ্টির কান্না দেখে নাফিজ মিষ্টির সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।

----কি হয়েছে মিষ্টি পাখি?কাকু তোকে মারলো কেন?
----একটু আপেল খেতে চেয়েছিলাম বলে।আচ্ছা নাফিজ ভাইয়া ট্রাকের সামনে পড়লে কি মানুষ আকাশের তারা হয়ে যায়?
----কেন?
----বলোই না।
----হ্যাঁ হয়ে যায়।
----তাহলে আমাকে ট্রাকের সামনে আবার দিয়ে আসবে।আমি ও আকাশের তারা হয়ে যাব।তারপর মায়ের কাছে থাকবো।

মিষ্টির কথা শুনে নাফিজের চোখ ছলছল করে উঠলো।

;;;;;

নাফিজের বিছানার ওপর বসে পা দোলাচ্ছে মিষ্টি।আর আপেল খাচ্ছে।

---- আহ মিষ্টি এতো নড়িস না।আমি তো তোর চুল ঠিকভাবে বাঁধতে পারছি না।কতোদিন চুল বাধিস না বলতো।
----দুদিন আগে দাদীমা বেধে দিয়েছিল।তারপর আর দেয়নি।

মিষ্টি আপেল খেতে খেতে উওয দিলে।এর মধ্যে লতিফা ছাদ থেকে শুকনো কাপড় এনে ঘরে ঢুকলো।

----মিষ্টি আর খাবি আপেল?
----না কাকিমা পেট ভরে গেছে।
----এই নাফিজ তুই কি করছিস?
----ওর চুল বাধছি।এবার ওকে বউ সাজাবো।
----বউ সাজাবি কেন?
----ওর নাকি ওর বউ পুতুলের মতো সাজার খুব শখ।
----ও নিজেই তো একটা পুতুল।সাজালে আরো বেশ লাগবে।বিকেল হতে চললো ওর বাবা তো একবার ও খোঁজ নিতে এলো না রে।
----ওদের কথা বাদ দেও মা।আমি তো ওদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম।তাই দেখতে পেলাম।না হলে তুমি বলো আজ কি অঘটন ঘটতে পারতো।একটু খেয়াল নেই কারোর ওর প্রতি।
----এতো সুন্দর ফুটফুটে মেয়েটা।ফজলে র কি মায়া হয় না নাকি।মারতে কি একটু কষ্ট হয় না ওর।

নাফিজ চুল বাঁধা সেজে মিষ্টিকে বসিয়ে সাজাতে লাগল।লতিফার ঘর থেকে লিপস্টিক এনে মিষ্টির ঠোঁটে লাগিয়ে দিল।কাজল দিয়ে মিষ্টির ডান দিকের ঠোঁটের নিচের তিলটা আরো গাড়ো করে দিল।তারপর লতিফার লাল রঙের একটা ওড়না এনে মিষ্টির মাথায় বউদের মতো করে ঘোমটা দিয়ে দিল।সবশেষে চুলের সাথে ক্লিপ লাগিয়ে কপালে একটা টিকলি ঝুলিয়ে দিল।

----মা দেখে যাও।মিষ্টি বুড়িকে কতো সুন্দর লাগছে।

লতিফা নাফিজের ডাকে ঘরে এলো।

----বাপরে।ও মিষ্টি তোকে তো পুরো ছোট্ট বউ লাগছে।মাশাল্লাহ।

মিষ্টি বসে আছে।নাফিজ বিভিন্ন এংগেলে মিষ্টির ছবি তুলছে ফোন দিয়ে।মিষ্টি খিলখিলিয়ে হাসছে।

----এই দাঁত বন্ধ কর।তোর ফোকলা দাঁত বের করিস না।
----নাফিজ তুই ও যা।ওকে কোলে নিয়ে বস।আমি তোদের ছবি তুলে দেই।

মায়ের কথা মতো নাফিজ মিষ্টিকে কোলে নিয়ে কতগুলো ছবি তুললো।

;;;;

সন্ধ্যা বেলা লতিফা মিষ্টি কে ওর বাড়ি নিয়ে এসেছে।

----কাকিমা ওরা না হয় ভুলে গেছে।আপনি তো একবার ওর খোঁজ নিতে পারতেন।কি অঘটন ঘটতো আজ বলুন তো।

লতিফা দুপুরের সব ঘটনা রাহেলা বেগমকে খুলে বললো।পাশে বসে তানিয়া ও সব শুনেছে।

----এমন ভাবে বলছেন যেন মরে টরে রাস্তায় পিচের সাথে পিষে আছে।ও দিব্যি সুস্থ আছে।
----তানিয়া তোমার মুখের লাগাম নেই।এতো বড় কথা বলতে বাধছে না।
----এই যে শুনুন।বাইরের মানুষ বাইরের মানুষের মতো থাকবেন।আমাকে ধমকানোর আপনি কে হ্যাঁ।সব সময় আমাদের সংসারে নাক গলাতে আসেন।
----মুখ সামলে কথা বলো তানিয়া।আমার খেয়ে দেড়ে কাজ নেই তোমার মতো অসভ্য বেয়াদব একটা ডাইনির সংসারে নাক গলাতে আসবো।সেই মিষ্টির জন্ম থেকে ও আমাদের কোলে কোলে মানুষ হয়েছে।আজ রুবি ভাবী নেই।তাই ওর খেয়াল রাখি।ও না থাকলে তোমার সংসারে পায়ের ধুলো তো দূরে থাক থু ফেলতেও আমি আসতাম।
----আপনার সাহস,,,,,
----একদম আমাকে চোখ গরম দেখাতে আসবে না।অসভ্য মহিলা একটা।তোমার মতো মেয়ে নারী জাতির কলঙ্ক।মনে রেখো তুমি ও কিন্তু মা হবে একদিন।এখনো হওনি।পরের বাচ্চাকে নিয়ে এতোটাও কথা বলতে এসো না।আল্লাহ চাইলে যা কিছু করতে পারেন।
----আপনি,,

তানিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে লতিফা রাহেলা বেগমের কাছে গেলেন।

----কাকিমা আসি।কাল বিকেলে আমি বাপের বাড়ি যাব।মিষ্টিকে একটু দেখে রাখবেন।
----হামার হইছে যতো জ্বালা।দুপুরে ফজলে রে কইলাম যা মাইয়াডারে ধইরা আইনা গা গোসল দিয়া।কে হুনে কার কতা।হে তো এ হন বউ পাইছে বউ।ও কি কইছে জানো,মিষ্টি মরলে মরুক।ওর দেহার দরকার নাই।হামারে ও ঘর থেইকা বাইর হতি দেইনি।

রাহেলা বেগমের কথা শুনে ঘৃনাতে বুক ফেটে যাচ্ছে লতিফার।তার শুধু একটাই ভাবনা একজন বাবা হয়ে ফজলে কিভাবে এই কথা বলতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন