শ্রাবণ খুরিয়ে খুরিয়ে আপন মনে সিগারেট টানছে আর হেটে হেটে সামনে আগাচ্ছে। তার পায়ে ইট গেথে যাওয়ায় পায়ে বেশ জোড়ে ব্যথা পেয়েছে। যার ফলে পায়ের ক্ষত স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তবুও নির্বিকার সে।
হেটে হেটে বেশ দূরে চলে আসল শ্রাবণ। তারপর একটা বস্তিতে ঢুকে পড়ে। বস্তির শেষ মাথায় গিয়ে থেমে যায় শ্রাবণ। তারপর একদম শেষের রুমটায় কাড়া বাজালো। বেশ কিছুক্ষন পর এক বৃদ্ধা গেট খুলে দিল।
বৃদ্ধার বয়স সত্তরের কাছাকাছি।
এক বৃদ্ধা নারীর সামনে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। বৃদ্ধার পরনে পুরাতন সাদা একটা শাড়ি। মনে হচ্ছে এক ধোয়া দিলেই শাড়ি থেকে সব সেলাই খুলে যাবে। বৃদ্ধার চুল সব পেকে গেছে। সামনের একটা দাত নাই। শ্রাবণ কে দেখে তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে। উনি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনে হচ্ছে ভুল দেখছে সে। এ।যে শ্রাবণ! সেই কবে শেষ দেখেছিল! আর আজকে এতো বছর পর তার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। বৃদ্ধা মহিলা ঘটনার আষ্মিকতা হজম করতে পারছেন না। তার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। তিনি কাপা হাতে শ্রাবণ কে ছুয়ে দেখল। নাহ তিনি কোন ভ্রম দেখছে না। ছেলেটা বাস্তবেই তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
তিনি উত্তেজিত হয়ে বলে, শ্রাবণ আব্বা তুই?কখন এলি আব্বা? আর এতো দিন কই ছিলি রে বাপ?
শ্রাবণ মুচকি হেসে বলে, আমাকে চিনতে পেরেছো সোনা দাদি?
শ্রাবণের কন্ঠ সোনা দাদি শুনে বৃদ্ধার চোখে পানি চলে এল। তিনি আচল দিয়ে চোখ মুছে শ্রাবণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, না চিনতে পারার কি আছে? ভেতরে আয় বাপ। কই ছিলি এতো বছর? এই বুড়ির কথা মনে পড়ত না?
শ্রাবণ মুচকি হেসে বলে, তার আগে বলো তুমি কেমন আছো?
বৃদ্ধা হেসে বলে, আর ভালো থাকা! শেষ বয়সে সারা শরীরে অসুখরা বাসা বাধছে রে। মরার আগে তোকে একবার দেখার ইচ্ছা ছিল। যাক আল্লাহ পাক ইচ্ছা পূরন করেছে।
শ্রাবণের মুখের হাসি আরো প্রসারিত হলো। সে মিস্টি করে বলে, লেবুর শরবত খাওয়াতে পারবে আমাকে?
বৃদ্ধা মুচকি হেসে দিল এবং বলল, এখনো লেবুর শরবত খাওয়ার অভ্যাস যাই নি তোর?
--নাহ। কিছু অভ্যাস কখনো ছুটে না। বাসায় লেবু আছে নাকি কিনে আনব?
বৃদ্ধা জবাবে বলে, বাড়ির পাশে লেবুর গাছ লাগাইছি। গিয়ে দেখ তিনটা টসটসে লেবু ধরছে। কাগজি লেবু। তুলে নিয়ে আয়।
--আচ্ছা। তুমি বস। আমি আসছি।
শ্রাবণ বাসা থেকে বের হতে ধরলে বৃদ্ধা বাধা দিয়ে বলে, তুই আবার ভাগবি না তো?
-- আরেহ না!
শ্রাবণ বের হলো। আশেপাশে তাকালো সে। তারপর লেবু তুলতে গেল। সোনা দাদি ভুল বলেছেন। তিনটা না গাছে দুইটা লেবু ধরেছে। কিংবা একটা লেবু কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। শ্রাবণ খুব সাবধানে লেবু ছিড়ল৷ গাছ টা খুব একটা বড় না। তেমন ডাল-পালা ও নেই। দেখে মনে হচ্ছে সোনা দাদির মতো তার গাছটাও অসুস্থ।
শ্রাবণ লেবু হাতে নিয়ে দাদির বাসায় ঢুকল। তারপর বিছানায় বসে পড়ে ধপ করে।
দাদি লেবু দুই টুকরা করে একটা গ্লাসে রস চিপে বের করছে। দাদি ভুল বলেছেন আবারো। এটা কাগজি লেবু না। কাগজি লেবুর গন্ধ আরও তীব্র হয়।অথচ শ্রাবণ লেবুর কোন গন্ধ ই পাচ্ছে না৷
সোনা দাদি চিনি মিশিয়ে গ্লাসটা শ্রাবণ কে দিল।
শ্রাবণ গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে শরবত খেয়ে ফেললো। খাওয়া শেষ করে বলে, এখানে কয়েকদিন থাকি? সমস্যা হবে তোমার?
দাদি যেন শ্রাবণের এই কথা বিশ্বাস করতে পারলনা। সে অবিশ্বাস্য গলায় বলে, তোর মতো রাজপুত্র আমার কুড়ে ঘরে থাকবে? তোর তো কষ্ট হবে রে বাছা।
শ্রাবণ হোহো করে হেসে দিল। সে দাদির দিকে তাকিয়ে বলে, আমি আর রাজপুত্র নেই। এখন আমিও তোমার মতো ফকির তবে মনের সবটা দিয়ে এক রাজকুমারীকে ভালোবাসি।
দাদি ভ্রু কুচকে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বিলে,ওই যে কি যেন নাম মেয়েটার? মনে আসছে না। ওকে এখনো ভালোবাসিস রে বাপ?
--হু। আমার ভালোবাসা একদিনের না কিংবা এক যুগের না। অনন্তকাল জুড়ে তাকে ভালোবাসি।
সোনা দাদি শ্রাবণের পাশে বসে বলে, শোন আব্বা। ভালোবাসার অপর নাম হলো বিষ। কেউ জেনে-বুঝে বিষ খায় না। কিন্তু এই বিষটা দেখতে মধুর মতো। তাই তো মানুষ ভ্রমে পড়ে মধুর মতো দেখতে ভালোবাসা নামক বিষ সমুদ্রে ঝাপিয়ে মরে।
শ্রাবণ দাত বের করে হাসা শুরু করল। তারপর বিড়বিড় করে বলে, কয়লার ভিন্নরুপ যেমন হীরা ঠিক তেমন ই আবেগের ভিন্নরুপ কষ্ট! তাই বলে কি আবেগ কয়লার মতো কালো? ভালোবাসা কি আসলেই বিষ যন্ত্রনা? কি জানি? যে ভালোবেসেছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে!
শ্রাবণ সোনার দাদির কোলে মাথা রেখে বলে, জানো দাদি আমি না পাগল।
দাদি শ্রাবণের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, কি বলছিস এসব? তুই কেন পাগল হবি?
শ্রাবণ নির্লিপ্ত গলায় বলে, সবসময় পাগল থাকি না। মাঝে মাঝে মাথা খারাপ হয়। অনেক চিকিৎসা করছি। লাভ হয় নাই। বছরে দুই-তিন বার পাগল হয়ে যাই। আবার আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যাই। সাত-আট দিন পাগল থাকি। সত্যি বলছি! বিশ্বাস করো। বাবার সব টাকা এই অসুখের চিকিৎসা করতে গিয়ে জলে ভেসে গেছে।
দাদি চিন্তিত গলায় বলে, এসব তুই কি বলছিস? তোর বাবা কই? মা কোথায় তোর?
শ্রাবণ মুখ চোখ শক্ত করে বলে, অন্য এক দিন বললো। আজকে না। আজকে অন্য কথা বলব৷ শুনবে তুমি?
--হ্যা। বল।
শ্রাবণের খুব ঘুম পাচ্ছে। দাদি চুল টেনে দিচ্ছে জন্য তার চোখ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও চোখ খোলা রেখে বলে, আমার মনে হয় এই অসুখটা সম্পূর্ণ আমার মস্তিষ্কের। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আলিয়া যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমি এই অসুখ কাটিয়ে উঠতে পারব! আচ্ছা, আলিয়া কি এই জীবনে আমার হবে?
দাদি চুপ করে আছেন।
ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে শ্রাবণের সামনে একটা মর্মান্তিক ঘটনা ভেসে আসছে। তাহলোঃ
সোনা দাদি বিছনায়া শুয়ে ছটফট করছে৷ নিশ্বাস নিতে পারছে না। আশেপাশে এক চিলকে আলো নেই। একটা ছোট টর্চ লাইট জ্বালানো আছে। হুট করে সেটা নিভে গেল।
শ্রাবণের তন্দ্রা ভাব এসে গিয়েছিল। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে সে কেপে উঠে কেদে দেয়। কারন শ্রাবণ জানে এটা স্বপ্ন না, ভ্রম ও না,কিংবা তার বানানো কল্পনা ও না। এক চিরন্তন সত্য এটা।
তাই তো দাদির শেষ ইচ্ছা রাখতে সে ছুটে এসেছে।
★★★
আলিয়া গাড় করে চোখে কাজল দিল। সাদা আর হলুদের সংমিশ্রণের একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে সে। চুল গুলো স্ট্রেইট করে ছেড়ে দিয়েছে। ভাইয়া তাকে জোড় করে বাইরে ঘুরাতে নিয়ে যাচ্ছে৷ আলিয়ার বাইরে যাওয়া মানে কোন রেস্টুরেন্টে যাওয়া। ঢাকা শহরে রেস্টুরেন্ট ছাড়া ঘোরার আর তেমন কোন জায়গায় নেই। রেডি হয়ে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিল আলিয়া। তার যেতে ইচ্ছা করছে না কিন্তু ভাইয়ের মন রাখতে সে যাচ্ছে।
ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে বের হলো রুম থেকে। আলিয়া যে ওড়নাটা পড়েছে সেটা হচ্ছে সাতরাঙ্গা ওড়না। বেনি আসহ কলা এই সাতটা রংধনুর রঙ নিয়ে ওড়নাটা বানানো হয়েছে।
সে গুটিগুটি পায়ে ড্রয়িং রুমে আসল। বাবা দোকান থেকে এসে পেপার পড়ছে। ভাইয়া মুজা পড়ছিল।
আলিয়াকে আসতে দেখে আরহান একটা হাসি দিয়ে বলে, হয়ে গেছে তোর?
--হুম।
--দেন বের হই?
,--আচ্ছা। বলে আলিয়া বাবার দিকে তাকিয়ে বিনীত গলায় বলে, বাবা যাব?
জসীম সাহেব পেপার রেখে বলে, দুই ভাই-বোন কই যাচ্ছিস?
আলিয়া স্মিত হেসে বলে, এইতো সামনে একটা রেস্টুরেন্ট নতুন খুলেছে সেখানে যাচ্ছি। তুমি যাবে আমাদের সঙ্গে?
জসীম সাহেব মেয়ের প্রস্তাব পেয়ে খুব খুশি হলো। তার ও মেয়ের সাথে বাইরে যেতে মন চাচ্ছে। পর মূহুর্তে ভাবল, বাচ্চাদের সাথে তিনি গিয়ে কি করবেন? তাই মানা করে দিল।
আলিয়া আরহানের সাথে বের হলো। কিছুক্ষন পর রেস্টুরেন্টে পৌছে গেল। রেস্টুরেন্টটা একদম নতুন। খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। একটা দেয়ালে পিংক কালারের অসংখ্য গোলাপ দিয়ে সাজানো। সেই দেয়ালের সামনে একটা সুন্দর কাজ করা চেয়ার রাখা আছে। মানুষ -জন লাইন দিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত!
আলিয়া আর আরহান একটা টেবিলে গিয়ে বসল। আরহান আলিয়ার হাতে মেন্যু কার্ড ধরিয়ে দিল। ধানমণ্ডির এই রেস্তোরাঁয় মানুষের ভীড় ভালোই। নতুন খোলায় রিভিউ গ্রুপ থেকে ভালো ভালো রিভিউ পেয়ে অনেকেই এদিকটায় এসেছে।
আরহানের মনে হচ্ছে এখানে আসা ঠিক হলোনা। কোন নিরিবিলি জায়গায় গেলে ভালো হত। তবে আলিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে, সে এখানে আসতে পারায় বেশ খুশি। বিরক্ত নয়।
আরহান প্রশ্ন করল, তোর জায়গাটা পছন্দ হয়েছে?
আলিয়া মাথা নেড়ে বলে, হ্যা। খুব পছন্দ হয়েছে৷
আরহান বলল, কিন্তু ভীড় বেশি?
আলিয়া বলে উঠে, আমার মানুষ-জন দেখতে খুব ভালো লাগে। দেখ, ওই পাশের টেবিলের বেবিটা কতো কিউট দেখতে! কি সুন্দর মায়ের কোলে বসে মায়ের কানের দুলটা নিয়ে খেলছে।ভীড় না হলে কি এই এতো সুন্দর দৃশ্যটা দেখতে পেতাম বল?
আরহান ও বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে হাসল এবং বলল, না পেতাম না ।
হুট করে তাদের কথা ফাকে আয়ান চলে আসল। আয়ানের ভাব-সাব দেখে মনে আরহান তাকে ডেকেছে। কেন যেন আজকে আয়ানকে দেখে আলিয়ার মোটেও ভালো লাগল না।
আলিয়ার পাশে এসে বসল আয়ান। আলিয়া অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তার হাস-ফাস লাগতে লাগলো। সে আরহানের দিকে তাকালো। আরহান ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আলিয়া ইশারায় জিজ্ঞেস করল আয়ান কেন এখানে এসেছে? উত্তরে কোন কিছু পেল না আলিয়া৷
আরহান আলিয়া আর আয়ানকে বসিয়ে রেখে খাবার ওর্ডার দিতে গেল।
আয়ান অনেক কথাই বলে যাচ্ছে। কিন্তু আলিয়া কিছুই শুনছে না। সে অন্যমনস্ক হয়ে আছে।
আলিয়ার চোখ রেস্টুরেন্টের বাইরে গেল। এবং সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ বড় হয়ে যায়।
শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে। তাও পরিপাটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুন্দর একটা আকাশি রংয়ের শার্ট পড়া। শার্টটাও খুব সুন্দর করে ইন করা। আবার হাতাও ফোল্ড করে রেখেছে। চুল গুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে। মনে হচ্ছে শ্যাম্পু করেছে চুলে। শ্রাবণ কে দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে ঢলে ঢলে গোসল করিয়ে দিয়েছে।সারা শরীর চকচক করছে।
আলিয়া শ্রাবণ কে দূর থেকে দেখেই চমকে গেল। শ্রাবণ কি তার খোজে এসেছে? কিন্তু কেন? আর সে কিভাবে জানলো আলিয়া এখন এখানে।
শ্রাবণ আলিয়াকে দেখে মুচকি হেসে হাত নাড়ালো।
আলিয়া ঢোক গিলে ইশারায় শ্রাবণ কে প্রশ্ন করে শ্রাবণ তাকে হ্যালো বলছে কিনা।
শ্রাবণ পুনরায় মুচকি হেসে সুন্দর করে মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বলল, তাকেই সে হ্যালো বলছে।
হুট করে আয়ান আলিয়ার বাম হাত ধরে ফেলে তখনো আলিয়ার দৃষ্টি শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণের চোখ-মুখের রং বদলে গেল। সে ভ্রু কুচকে ফেলে। মুখের হাসির ভাব মূহুর্তে উড়ে গেল শ্রাবণের। চোখে একধরনের বেদনা প্রকাশ পাচ্ছে তার যা কিছু দূরে থাকা কাচের ভেতর দিয়ে শূন্য মাধ্যমের সহায়তায় আলিয়ার কাছে সেই বেদনা ভাব চলে এলো।ফলে আলিয়ার মন জুড়ে বেদনা অনুভব হতে লাগলো।
আলিয়া এবারে আয়ানের দিকে তাকালো রাগী চোখে। তারপর এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় সে।
আলিয়া উঠে দাড়ালো এবং রেস্টুরেন্টের বাইরের দিকে পা বাড়ালো। তখনি আরহান এসে তাকে বাধা দেয়৷
আলিয়া বলল, তুই আয়ানের সাথে থাক। আমি যাই।
আরহান বিনীত গলায় বলে, তুই কি আয়ান আসায় রাগ করেছিস,?
আলিয়া ঝাঝালো কন্ঠে বলে, অনেক বেশি।
আলিয়া নিজেও জানে না সে কেন এতো রেগে যাচ্ছে? ব্যাপার টা কে সে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারত কিন্তু না তার গা বেয়ে রাগ বইছে।
আলিয়া তার ব্যাগ হাতে নিয়ে বাইরে চলে গেল।
★★★
রাস্তার ধারে একা একা হাটছে আলিয়া। ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আকাশে এক গুচ্ছ কালো মেঘ খেলা করছে। রাত হয়ে আসছে। তাও কালো মেঘ গুলো বোঝা যাচ্ছে। আলিয়া জোড়ে জোড়ে হাটা ধরল।
আচমকা কেউ তার হাত খুব আলতো করে স্পর্শ করল। আলিয়া চমকে গিয়ে দাড়ালো এবং পেছনে তাকালো।
শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে। মুখে একটা হাসি হাসি ভাব ঝুলিয়ে রেখেছে শ্রাবণ।
আলিয়া তাকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে এবং শ্রাবণের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়৷
শ্রাবণ মুচকি হেসে হাতটা ছেড়ে দেয়। তারপর বলল, চলো সামনে আগাই।
আলিয়া শ্রাবণের দিকে বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে থেকে বলে, তোমার না জ্বর ছিল?
শ্রাবণ মুচকি হেসে বলে, তোমার সেবায় সুস্থ হয়ে গেছি।
আলিয়া রাগী গলায় বলে, সকালে আমাকে না বলে চলে কেন গেলে?
--তোমাকে জানিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কি?
আলিয়া আর কিছু না বলে সামনে আগালো। তার বেশ বিরক্ত লাগছে। শ্রাবণ কেও অসহ্য লাগছে তার।
আবারো তার হাতে টান পড়ল। শ্রাবণ আবারো তার হাত ধরে ফেলেছে।
আলিয়া পেছনে ঘুরে তাকালো। শ্রাবণ তার কাছে এসে বলে, আলিয়া? জানো আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। আমি চাই তুমি আমার সাথে সবসময় থাকো। তোমার পাশে অন্য কাউকে দেখলে আমার রাগ লাগে না বরং কান্না পায়। ঠিক ছোট বাচ্চাদের কে তাদের মা থেকে আলাদা করলে তারা যেভাবে কান্না করে না? তোমার পাশে অন্য কাউকে দেখলে আমার ঠিক সেভাবে কান্না করতে মন চায়। কালকে একবার আসতে পারবে আমার বাসায়?
আলিয়া চোখ বড় করে বলে, তোমার নাকি নিজের বাসার ঠিকানা মনে নেই?
--আমার বাসা না। আমার এক দাদির বাসা। আসতে পারবে?
--না। (কঠিন গলায়)
শ্রাবণ আলিয়ার দিকে ঝুকে আলিয়ার হাতে একটা ছোট কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলে, আমি জানি কালকে দুপুরে তুমি বেগুনি রঙের একটা শাড়ি পড়ে আমার দেওয়া ঠিকানায় আসবে।
আলিয়া বিরক্ত হয়ে গেল এবং বলল, আমার বেগুনি রঙের কোন শাড়ি নেই৷
শ্রাবণ হাসল। কিন্তু কিছু বললো না তবে হুট করে রাস্তার দিক বদলে অন্য রাস্তা দিয়ে হাটা ধরল।
আলিয়া হতবিহ্বল হয়ে হাতে গুজে দেওয়া কাগজটার দিকে তাকিয়ে থেকে শ্রাবণের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।
.
.
.
চলবে...............................