----সৈকত এখন এসব বাদ দেও।রাত অনেক হয়েছে।
----আচ্ছা কাকিমা।তারা যা ঘুমোতে যা।
----আচ্ছা।গাসু চলো।
গাসু আর তারা নিজেদের ঘরে যেতে নিলে আরেক বিপত্তি ঘটে গেল।
তারা কোলের ওপর ফোন রেখে বসেছিল।তারা উঠে দাঁড়াতেই ফোনটা কয়েক ড্রপ দিয়ে একটু দূরে গিয়ে পড়লো।
----আমার ফোন!
----আরে আফা আপনে দেখে লইবেন না।দাঁড়ান আমি তুলে আনতেছি।
গাসু সামনে গিয়ে তারার ফোনটা তুললো।
----আরে আফা।আপনার ফোনের ওপর তো খরা হয়ে গেছে একদম।
----মানে?এদিকে নিয়ে এসো।
গাসু তারার কাছে ফোন দিতেই তারা দেখে সামনের স্ক্রিনটা ফেটে চৌচির হয়ে গেছে একদম।
----তারা মা দেখ অন হচ্ছে কি না?
----বাপি অন তো হচ্ছে কিন্তু স্ক্রিন দেখা যাচ্ছে না।বাপি আমার ফোন।
তারা তো এবার কেঁদেই দিল।
----তারা কাঁদছিস কেন?তোকে নতুন কিনে দেব আবার।এটা তো এমনিতেও তিন বছর ধরে ব্যবহার করছিস।
----মা আমার ফোনের স্ক্রিন ঠিক করে দিও শুধু।
----ধুর বোকা মেয়ে তুই।তোর জায়গায় আমি হলে নাচতাম ফোন ভাঙার আনন্দে।আরে নতুন পাবি সেটাই নে।পুরানো টা ঠিক করার কোনো দরকার নেই।
----তুমি বুঝতে পারছোনা সৈকত ভাইয়া ফোনটা আমার কতো প্রিয়।
----তারা মা রাখো এসব।এই শুক্রবার আমি তোমাকে নিয়ে যাব।নিজের পছন্দ মতো আবার আরেকটা নিও।এ কটাদিন একটু ফোন ছাড়া থাকো।
----আচ্ছা মা।
----যাও ঘুমিয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।
----ঠিকাছে বাপি।
তারা ব্যথিয় মন নিয়ে হাতে ফোন নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
তারা বার বার ফোনটাকে দেখছে।সে তো এটাই বুঝতে পারছে না কেন সামান্যতে এতো কষ্ট হচ্ছে তার?আদৌ কি ফোন বলে নাকি ফোনের ভেতরে থাকা মানুষ টির ছোট্ট ছোট্ট বার্তা, কল ,ফোনে তার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলোর জন্যে।
;;;;;
বাইরে আজ বড্ড কুয়াশা পড়েছে।ঠান্ডা হাওয়া যেন শীত টাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।নাফিজ শীতের সোয়েটার, তার ওপর জ্যাকেট পড়ে দাড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ যাবৎ।
বার বার হাত ঘড়ি দেখছে।
----ওহ নো।সাতটা বেজে গেছে।কেন আসছে না এখনো?তারা কি অসুস্থ?না কাল তো কথা হলো।তাহলে?
তারার পথের দিকে এক নজরে চেয়ে আছে নাফিজ।তবুও তারার দেখা নেই।
নাফিজের বুকটা যেন এবার কষ্টে ভারী হয়ে আসলো।ঘড়িটাও থামছে না।দেখতে দেখতে সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।তাকে আবার ইউনিটে যেতে হবে।
----আপনি কাজটা ঠিক করলেন না তারা।আমি আপনার পথ চেয়ে চেয়ে দিন কাটাই,আর আপনি শুধু ফাকি দেন আমাকে।সত্যি বলছি একবার যদি আপনাকে আমার খাচাতে পুরতে পারি না দেখবেন কি করি আপনাকে?সব কষ্ট দেওয়ার ওষুধ নিয়ে নেব,না থাকলে উৎপন্ন করব।
নাফিজ আর দাঁড়ালো না।সাইকেল টা উঠালো।রওনা দিল নিজের রাস্তায়।
;;;;;
আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লো তারা।চোখ মুখ হাত দিয়ে ডলছে।আজকে বেশ শীত পড়েছে।আর ঘুমটাও বেশ হয়েছে তার।
তারা আস্তে করে খাট থেকে নামলো।পাশে খাটের পাশে থাকা ক্রাচ টা নিল।ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই তারা চমকে গেল।
----নয়টা বাজে!এতো সকাল অবধি ঘুমিয়েছি আমি!হায় আল্লাহ,ফজরের নামাজ যে কাজা হয়ে গেল আমার!
নামাজের জন্য আফসোস করতে গিয়ে আরেকটা বিষয় মনে পড়তেই তারা আরো চমকে গেল।
----ক্যাপ্টেন,ক্যাপ্টেন আজ আসেনি তো।দেখি তো।
তারা একটু তাড়াহুড়ো করে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ালো।বাড়ির সামনে টা পাশের মেহগনি বাগান ভালো করে উঁকি দিচ্ছে সে।কিন্তু কোথাও নাফিজকে দেখতে পাচ্ছে না।না ঘাসের ওপর কাত হয়ে থাকা তার লাল রঙের সাইকেল।
----নিশ্চয়ই অফিসে চলে গেছেন উনি।এখন তো ওনার অফিস টাইম।আচ্ছা উনি কি এসেছিল?নিশ্চয়ই এসেছিল।কিন্তু আমাকে তো একবার কল দিতে,,,,,,,।
নিজে নিজেই আবার থেমে গেল তারা।তার তো এতক্ষণ খেয়ালই ছিল না তার ফোনের কি হাল হয়েছে গতকাল।
----ধ্যাত ভালো লাগে না।ঘটের মড়া ফোনটাও স্ট্রোক করার আর সময় পেল না।
মন খারাপ করে তারা জানালা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল।
;;;;;
----ক্যাপ্টেন নাফিজ,কাজ রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনলে হবে!
মেজর ইমরানের কথা শুনে হালকা কেঁপে উঠলো নাফিজ।তার কেবিনে মেজর ইমরান এসে দাড়িয়ে আছে আর সে খেয়াল ই করেনি।
নাফিজ তো আরো এটা ভেবে যাচ্ছে,সে যে তারাকে খুঁজছে এটা ইমরান সাহেব কিভাবে জানলো!
----নাফিজ আরো কতো আকাশের তারা গুনবে ? নাকি আকাশ ফেলে এবার মঙ্গল গ্রহ ঘুরতে যাচ্ছো ?
ইমরান সাহেবের কথা শুনে এতক্ষণে নাফিজের ধ্যান ভাঙলো।তড়িঘড়ি করে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে।সাথে সাথে স্যালুট করলো ইমরান সাহেব কে।
----সরি স্যার।আমার অন্যমনস্কতার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত।
----ইটস ওকে।শোনো পরশু তোমাকে দুদিনের জন্য ঢাকা যেতে হবে।
----স্যার কারণ জানতে পারি?
----হ্যাঁ কিছু কাজে মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে তোমাকে।তোমার সাথে দুজন সার্জেন্ট ও যাচ্ছে।
----ওকে স্যার।
----আমি ওদের পাঠিয়ে দিচ্ছি।ওরা এসে তোমার সাথে কথা বলবে।
----ওকে স্যার।
----বি এটেনটিভ ইন ইউর ওয়ার্ক।ওকে।
----ইয়েস স্যার।
ইমরান সাহেব চলে গেলেন।নাফিজ দাড়িয়ে দাড়িয়ে কলম কামড়াচ্ছে।আজ কতোটা লজ্জায় পড়লো সে।
----সবকিছু আপনার জন্য তারা।আপনি মৌমাছির মতো সব সময় শুধু আমার মাথার ভেতর ভন ভন করেন।কিন্তু কেন আসলেন না আজ!যাক রাতে দেখব কথা বলে।
নাফিজ এবার নিজের চেয়ারে বসে পড়লো।কাজে মন দিল।
;;;;;
----কি রে তারা বুড়ি মন খারাপ কেন তোর?
----কিছু না ভাইয়া।
----দুদিনের জন্য এসেছি আর তুই এখন মুখটা এমন হনুমানের মতো করে রেখেছিস কেন?
----সৈকত ভাইয়া, একদম হনুমান বলবে না বলে দিলাম।
"তোর মন খারাপের দেশে,
ফাটাবো এটম বোমা হেসে,
তোর মুখে ঝামা ঘসে,
মুখ টা দেব হাড়ি কালি করে"।
গাসু গান গাইতে গাইতে তারার ঘরে হাজির।
----আফা আই গাসুয়া সিমসাং আইয়া পড়ছি।
----নে তারা তোর ইন্টারন্যাশনাল অস্কার প্রাপ্ত এসিসট্যান্ট এসে পড়েছে।
----অস্কার!হেইডা আবার কি?ও বুঝছি ঐ তো ব্রাজিলে ফুটবল প্লানার। হেব্বি লাগে আমার ট্রাশ।ওরে আমারে আইনা দিবেন বুঝি?
গাসুর কথা শুনে সৈকত হো হো করে হেসে উঠলো।
----গাসু ওটা ট্রাশ না ক্রাশ।আর অস্কার হলো একটা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার।মূলত অভিনয়ের জন্য প্রদান করা হয় ক্যালিফোর্নিয়া থেকে।বুঝেছো?
----আই নো বুঝতাম ।
----তারা তুই কাকে কি বলছিস?ওর মাথায় কি এ সব ঢুকবে?দুনিয়ার অকাজ ওর মাথায়।দেখলি না গান একটা গাইলো গানের গায়ক ও ভয় পেয়ে লজ্জায় গান গাওয়া ছেড়ে দেব যদি ওর গান শুনে।
----এই সাকি ভাই আপনি মোরে কি কইলেন?
----এই তুমি আবার আমাকে সাকি বলছো?
----বেশ করছি।সাকি সকিনা আরো কমু।
সৈকত এবার রেগে দাড়িয়ে গাসুর সাথে ঝগড়া শুরু করলো।
তারা ওদের কান্ড দেখে হাসছে।হুট করেই সৈকতের ফোনে মেসেজ টোন বেজে ওঠে।ফোনটা বিছানার ওপর ই ছিল।
তারা সৈকতের ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের ছবি দেখে পুরো অবাক।এটা কি দেখছে সে?
;;;;;
হুট করেই সৈকত খপ করে তারার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল।
----সৈকত ভাইয়া তুমি!
----এই গাসু তুমি যাও তো এখন।
----কেন যাইমু!আই নো গো।
সৈকত তারাকে ইশারা দিয়ে বললো গাসুকে যেতে বলতে।
----গাসু তুমি এখন যাও।
----কেন আফা?
----আমার না খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছে।তুমি একটু কফি করে নিয়ে আসবে।তোমার হাতের কফি আমার খুব ভালো লাগে।
----সত্যি!
----হ্যাঁ সত্যি।
গাসু তো খুশিতে যেন পারলে দুই লাফ দিয়ে একবার আকাশ একবার পাতাল ঘুরে আসে।
----এক্ষুণি যাইতেছি।
গাসুকে আর পায় কে।সে তো লাফাতে লাফাতে চলে গেল।তারা এবার সৈকতের দিকে তাকালো।
----এসব কি সৈকত ভাইয়া?
----ইয়ে মানে,,,,,।
সৈকত এক হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।সে যে এভাবে হুট করে কারোর সামনে ধরা পড়বে জানা ছিল না তার।
----একটা ছেলের ফোনের ওয়ালপেপারে কখন একটা মেয়ের ছবি থাকে বলোতো?
----দেখ তুই তো সব বুঝেই গেছিস।
----এটা হাফসা আপু না?ঐ যে তোমাদের এলাকাতে থাকে।তোমাদের বাড়িতে ও তো বেশ আসতে দেখেছিলাম ।
----হ্যাঁ হাফসার ছবি।
----কেন শুনি?
----দেখ তুই কিন্তু কাউকে বলবিনা।
----ঠিকাছে বলব না।
----আমি হাফসাকে অনেক আগে থেকেই ভালো বাসি রে।এখন ও ও আমাকে ভালোবাসে।
----তাহলে বিয়ে করছ না কেন?
----চাকরি টা এখনো ভালো করে সেটেল হয়নি।এজন্য অপেক্ষা করছি।আর দু মাস পরেই প্রস্তাব দেব।দেখ তুই কিন্তু চাচুকে কিছু বলবিনা।
----ঠিকাছে।কিন্তু আমার ট্রিট চাই।
----কিহ!
----হ্যাঁ।
----এই তোদের বোনগুলোর কি সমস্যা বলতো।খালি ভাই গুলোর পকেটের পেছনে লাগিস।
----কোনো কথায় কাজ হবে না।তুমি না দিলে সবাই কে বলে দেব।
----আচ্ছা চল।কি খাবি?
----আমি তো বাইরের খাবার খেতে পারি না।তুমি বরং বাজার করে নিয়ে আসবে।তারপর রেঁধে খাওয়াবে।
----কিহ!
----হ্যাঁ।না করলে বুঝব তুমি অকর্মণ্য।
----ঠিকাছে দেখিয়ে দেব।হুহ।
এর মধ্যে গাসু কফি নিয়ে হাজির।
----আফা দেখেই আই নিয়ালাইচি।
----চলো এবার তিনজনে কফি খেতে বসি।
----চল।
;;;;;
আজকের সকালটাও আরেকবার যেন নাফিজকে ব্যর্থতার সুর শুনিয়ে দিল।আজ ও তো সে অপেক্ষা করেছিল।কিন্তু কালকের মতো আজ ও তারা আসেনি।
----কি রে মন খারাপ কেন তোর?
লতিফা দরজা লাগিয়ে দিল।নাফিজ ভেতরে গিয়েই সোফাতে গা এলিয়ে দিল।
----নাফিজ।
----বলো।
----কি হয়েছে বাবা?
----কিছু না।মা আমার ব্যাগ পত্র একটু গুছিয়ে ছো?
----হ্যাঁ।তোর গাড়ি কখন?
----সন্ধ্যা তে ছিল।কিন্তু ক্যানসেল করে কাল ভোরে দিয়েছি।
----কেন?
----ভোর বেলাতেই যাব।একটু চা দেবে।
----আচ্ছা বস।চুলায় পানি বসাচ্ছি।
ছেলের বিষন্ন চেহারা দেখে লতিফার বড্ড খারাপ লাগল।
নাফিজ চোখ বুজে আছে।মনে তার ক্ষোভ বাসা বেঁধেছে।
----কেন তারা?আপনি আমার সাথে এমন কেন করছেন?এতো কষ্ট কেন দিচ্ছেন আপনি?ঠিকাছে অনেক অপেক্ষা করেছি।কাল আর কেউ আপনার পথ চেয়ে বসে থাকবে না।সকালেই চলে যাব আমি।
নাফিজ অভিমানের সুরে মনে মনে কথা গুলো বললো।
----তোর চা।নে ধর।
লতিফার গলা শুনে নাফিজ একটু উঠে বসলো।লতিফার হাত থেকে কাপটা নিয়ে ধোয়া ওঠা কাপে চুমুক দিল।
----শোন।
----বলো মা।
----আমাদের দেশের বাড়িটা তো পুরো শূন্য হয়ে পড়ে আছে।তোর বাবা ও এখন আর এই চার দেয়ালের মাঝে থাকতে চান না।দেশের বাড়িতেই প্রান খুলে নিঃশ্বাস নিতে চান।
---- কি হয়েছে মা?
----তোর তো চাকরি।তুই তো আর এখন আমাদের সাথে থাকতে পারবি না।তোকে ও বা একা রেখে কি করে যাই।এবার একটা বিয়ের সম্বন্ধ দেখি তোর।তোর জীবনটা একটু গুছিয়ে দিতে পারলে আমরাও দেশে চলে যেতে পারব।
----মা আমাকে একটু সময় দেও।
----সময় নে।কিন্তু যা করবি ভেবে চিন্তে তাড়াতাড়ি করিস।
----আচ্ছা।
----শোন তোর জন্য রুটি আর আলুভাজা করে দেব ভাবছি।পথ চলতে চলতে খেয়ে নিবি।আর কিছু কি করব?
----মা এই সামান্য রাস্তা।আমি বাইরে কিছু খেয়ে নেব।
----একদম না।বাইরের খাবারে ইদানীং যা সমস্যা হচ্ছে মানুষের।
----আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা দিও।
----আজ কখন ফিরবি?
---- আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারি।গোছগাছ করতে হবে।স্যার বলেই দিয়েছেন তাড়াতাড়ি এখানকার কাজ শেষ করে যেতে।
----তোর ফিরতে কদিন লাগবে রে?
----দু দিন।তাড়াতাড়ি হয়ে গেলে তার আগেও আসতে পারি।আর দেরী হলে তো আরো দেরী।
----ওহ।
----চিন্তা করো না।
----হুম।তুই বস।আমি খাবার দিচ্ছি ।আর তাড়াতাড়ি চা টা শেষ কর।তোর অফিসের সময় হয়ে গেল।
----আচ্ছা।
লতিফা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে উঠে চলে গেল।
;;;;;
----এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুজছিস তারা?
সৈকতের কথায় ধ্যান ভাঙলো তারার।
----কৈ কাউকে না তো?
----সেই তখন থেকে দেখছি।আমরা হাঁটা হাটি করছি।কিন্তু তোর মন অন্য দিকে।
----আই জানি আফা কারে খুজতেছে।
গাসু এতক্ষণ মেহগনি ফল নিয়ে খেলছিল।সৈকতের কথা শুনে ফল কুড়ানো বাদ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
----কাকে খুঁজছে?
----ঐ যে ঐ ফুলচোর গাছবান্দর,,,,,,।
----গাসু উ!
গাসু কথা শেষ করার আগেই তারার চোখ গরমে চুপ হয়ে গেল।
----আই কিছু জানতাম না।আই ভালা মানুষ।মোর নো ভেজাল।আই ফলমালিন মুক্ত।মাঝে মধ্যে পেয়াজ খাই একটু।তাও দেশী পিয়াজ।আই কান মুলছি।ফুলচোর গাছবান্দর হেইডা তো আমি।
গাসুর কথা শুনে তারা হা হয়ে গাসুর দিকে তাকিয়ে আছে।আর সৈকত তো হেসে কুটিকুটি।
----গাসু এসব কথা কোথ থেকে পাও তুমি।
----ভেরি পিম্পিল ।
----পিম্পিল!মানে।
গাসুর কথা শুনে সৈকতের মাথা চক্কর দেওয়ার উপক্রম।তারা গাসুর দিকে মনোযোগ না দিয়ে এদিক ওদিক শুধু নাফিজকে খুঁজছে।
----আরে সাকি ভাই বুঝেন না ঐ তো সাধারন কয়।মানে হলো গিয়া ফরমাল।
----গাসু ওটা সিম্পল।আর তুমি কোথ থেকে পিম্পল এনে বসিয়েছো।আর ফরমাল না নরমাল।
----ঐ হলো।
----আচ্ছা গাসু এই পড়াশোনা নিয়ে তুমি জেএসসি কিভাবে পাশ করলে বলোতো?
----ঐ ডা তো মোর বা হাতের খেল।
----কেমনে?
----জানেন সাকি ভাই স্কুলে আমি হেব্বি ফেইমাশ।
----ও।কিভাবে?
----সব চিটার রা আমারে চেনে।
----চিটার!
---- ঐ যে স্যার ম্যাডাম রা।
----ও টিচার।তা তোমাকে এতো চেনে কেন?
----পরীক্ষার হলে একটু নাচ করি তো তাই।
----মানে?
----ঐ আমার সামনে পিছনে ডানে বামে উপরে নিচে কেডা কি লিখতেছে তাই একটু তদারকি করি তো এজন্য।সবার থেকে বেশি নড়ি তাই চিটার রা আমাকে খুব ভালো চেনে।
----বুঝেছি।এই করে তুমি পাশ করছো?
----ঠিক কইয়া লাইচেন। দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি লাজ নাহি।ওরা তো আর কাজ করবে না।তাই আমি একটু সবার খাতা তদারকি কইরা দশে মিলে সবার পরীক্ষা একাই দেই।
----আল্লাহ।গাসু তোমার থিওরি শুনলে স্বয়ং আইনস্টাইন ও নিজের মাথা খুলে বোধ হয় দুই বার ধুয়ে নিতেন।ভাগ্যিস তিনি বেচে নেই।
----হ।
সৈকত এর এবার খেয়াল হলো তারার দিকে।তারা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
----তারা কি হয়েছে তোর?
----ভাইয়া তোমার কাছে ফোন আছে?
----হ্যাঁ কেন?
----কয়টা বাজে?
----দাড়া।ও সাড়ে দশটা।
তারার মনটা খারাপ হয়ে গেল।কাল রাতে ও সৈকত গাসু আর তারা মিলে অনেক রাত ধরে গল্প গুজব করেছে।আজ ও দেরী করে উঠতে হয়েছে তাকে।আর আজ ও সে এসে নাফিজের দেখা পেল না।
তারার খুব কষ্ট হচ্ছে।কেন হচ্ছে নিজেও বুঝতে পারছে না।
----আপনি কি রাগ করেছেন ক্যাপ্টেন?আমি নিশ্চিত আপনি ঠিক এসেছিলেন।রাস্তার এইখানে এখনো সাইকেলের চাকার দাগ আছে।আমার সত্যি সকালে ঘুম ভাঙেনি ক্যাপ্টেন।
বুক ভরা চাপা কথা গুলো মনেই রয়ে গেল তারার।