নয়নতারা - পর্ব ২৭ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


তারার তো এক বার লজ্জা পাচ্ছে বিকেলের কথা ভেবে।আবার ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে নাফিজের হুমকি শুনে।

----আচ্ছা সন্ধ্যার সময় কি ঘটাতে চাইছেন উনি?এভাবে হুমকি কেন দিলেন?ওনাকে কোনো বিশ্বাস নেই।

চিন্তায় তারা কপালে ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে।হুট করে শীতকালের কথা মনে পড়তেই তারা আবার লজ্জায় গাল দুটো টমেটো বানিয়ে ফেললো।

----ছি ছি।কি কথার ছিরি।ওনাকে কি ভেবেছিলাম।আর এখন কি দেখছি!অসভ্য লোক একটা।কোন ধরনের কথা বলে।

;;;;;

সন্ধ্যা বেলা।মাহমুদা বেগম ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে আছেন।মূলত তিনি অপেক্ষা করছেন নাফিজের জন্য।

----কি চাচিমা এখন থেকেই মেয়ে জামাই এর জন্য অপেক্ষা করছো?অথচ দু দিন আগেও কি সুন্দর কথা শুনিয়েছিলে তাকে।

সৈকতের কথা শুনে পেছনে ঘুরলেন মাহমুদা বেগম।সৈকতের একটা কান টেনে ভালো মতো মুলে দিলেন।

----আআআ লাগছে তো।

----আর পাকনামি করবি বল?

----পাকনামি কি করলাম।সত্যি বললাম তো।

----হ্যাঁ খুব সত্যি বলেছিস।এলেন আমার সত্যি বাদী।

এর মধ্যেই হঠাৎ করে কলিংবেলের আওয়াজ হলো।মাহমুদা বেগম সৈকতের কান ছেড়ে দরজার দিকে তাকালেন।

----চাচিমা দাড়িয়ে দেখছো কি।যাও দরজা খোলো।

----কে এলো বলতো?

----দরজা না খুললে কিভাবে বুঝবে?

মাহমুদা বেগম মাথার কাপড়টা আরো ভালো করে টেনে দিলেন।তারপর দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।

দরজা খুলতেই  নাফিজ হাসি মুখে বললো, 

----আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

----ওয়ালাইকুম আসসালাম।

নাফিজের দিকে একবার চোখ বুলালেন মাহমুদা বেগম।হলুদ রঙের পানজাবি পড়ে এসেছে নাফিজ।পেছনে চোখ যেতেই মাহমুদা বেগম দেখেন তার বয়সী একজন মহিলা বোরখা পরিহিত অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।মহিলাটিকে চিনতে অসুবিধা হলো না তার।সিএম এইচ তিনি একবার দেখেছিলেন নাফিজের মাকে।নাফিজের মায়ের পাশেই আব্রাহাম সাহেবের চেয়ে হয়তো বয়সে বড় হবে এমন একজন লোক দাঁড়ানো।তিনি নাফিজের বাবা হবেন।আন্দাজটা সহজেই করে ফেললেন মাহমুদা বেগম।

এর মধ্যে সৈকত ছুটে এলো।

----কে এলো চাচিমা?

দরজার বাইরে নাফিজকে দেখে সৈকতের মুখেও হাসি ফুটলো।

----চাচিমা ওনাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছো কেন?চলো ভেতরে নিয়ে চলো।

----ও হ্যা হ্যা।আসুন আপনারা।

লতিফা নাফিজের বাবা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সালাম দিলেন মাহমুদা বেগমকে।তিনিও উওর দিলেন।

;;;;;

----ছেলেরা এতো সহজে কাদে না তারা।সেদিন নাফিজ ভাই যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল সে সময় তো আমিও আইসক্রিম নিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিলাম।সেখানেই কথা হয় ওনার আমার সাথে।জানিস কেঁদে কেঁদে আমার হাত ধরে কি মিনতি করেছিল?বারবার শুধু এটুকুই বলেছিল,"বুকভরা নিঃশ্বাস নিতে চাই আমি।আর আমার অক্সিজেন হলো তারা।আমাকে কেন ফিরিয়ে দিচ্ছেন আপনারা।ওকে ছাড়া আমি ভালো থাকব না।অনেক ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।দয়া করে আমার থেকে ওকে কেড়ে নেবেন না।আমি ওকে কষ্ট দেব না ভাইয়া।তারাও যে আমাকে ভালোবাসে।আমি আমার ইহকাল পরকাল দুই জীবনের সঙ্গী হিসেবে ওকে চাই।"তুই বল তারা এরকম করে কোন ছেলে বর্তমানে কিছু বলতে পারে।

সৈকতের কথা শুনে মাথা নিচু করে বসে আছে তারা।নাফিজের পরিবার আসার পরেই সৈকত উপরে এসে তারার পাশে বসে আছে।তারা কে বিভিন্ন ভাবে বোঝাচ্ছে।

----তার মানে তুমি এতো কিছুর নাটের গুরু তাই তো?

----সে তুই যাই বলিস।আমার নিজের আপন বোন নেই।তোকে কখনো আমি চাচাতো বোনের চোখে দেখিনি।তোর জন্য এটুকু করতে পারব না।তবুও কিন্তু আমি নাফিজের কথায় গলিনি।

----মানে?

----এ কদিন ধরে নাফিজের চোদ্দ গোষ্ঠীর খোঁজ খবর নিয়েছি।

----তারপর কি জানলে?

----ব্যাটা একদম সিঙ্গেল যাই বলিস।সব সময় একটা ভাব নিয়ে চলে। মেয়েদের প্রপোজাল ও তিনি ঢু মেরে উড়িয়ে দেয়।আর,,।

----আর কি?

----সব ই ভালো পেয়েছি।শুধু,,,।

----শুধু কি?

----শুধু এটুকু তেও থামিনি।আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুই কতোটা নাফিজকে নিয়ে ভাবিস।তাই তিন বেলা তোর ওপর ও নজর রেখেছি।আর রেখে দেখি বাপরে আমি নাফিজকে কি বলবো,আমার বোন করবে না করবে না শেষমেশ নিজে একটা অফিসারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।আর অফিসারকেও আচ্ছা মতো নাকানি চুবানি দিচ্ছে পানিতে।

সৈকতের কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেল তারা।

----আহ!ভাইয়া।শুধু একটু বেশি বলছো তুমি।

----ও এখন তো আমি বেশি বলি।পরীক্ষা তেও ফেল্টু মারতে গেছিলি।একটুর জন্য বেচেছিস।ভাইরে ভাই তোর মতো মেয়ে যে এরকম প্রেমে পড়ে দেবদাসী হয়ে যাবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি সত্যি বলছি।

----তুমি থামবে?

----আচ্ছা থামলাম।

----আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলোতো।

----কি?

----না থাক।তুমি আবার পচাবে আমাকে।

----আরে না।বল তো।

----সত্যি তো?

----হ্যাঁ সত্যি।

----আচ্ছা উনি ও কি এসেছেন?

----কোন উনি?

----ইয়ে মানে ক্যাপ্টেন।

----যাক বাবা।আরে বর ছাড়া কি বিয়ে হয়।নাফিজ ভাই না আসলে হয় নাকি।উনিও তো,,,,,।

হঠাৎ করেই তারার দিকে তাকিয়ে থেকে গেল সৈকত।তারাকে একবার ভালো করে দেখে তারার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো।

----কি?

----কিসের কি?তুমি কি দেখছো তাই বলো।

----এই তোদের দুটোর কাহিনী কি বলতো?

----কিসের কাহিনী?

----এই যে।আপনি নীল রঙের গাউন জামা পড়ে বসে আছেন ।আর আপনার উনি নিচে হলুদ পানজাবি পড়ে বসে আছে।

----তো?

----হিমু আর রূপা হওয়ার প্লান করেছো।আবার বলো তো?

----ভাইয়া।তুমি যাও তো।খালি উল্টা পাল্টা বলো তুমি।

তারা হাতে থাকা কুশন ছুড়ে মারলো সৈকতের দিকে।সৈকত তো তারার কান্ড দেখে হেসে কুটি কুটি।

;;;;;

----দেখুন আপা,আপনি তো দেখেছেন আমার মেয়ে টা সুস্থ নয়।

মাহমুদা বেগমের কথা শুনে লতিফা মাহমুদা বেগমের হাতে র ওপর হাত রাখলেন।

----আমি সবকিছু জেনে বুঝে তবেই আমার ছেলের জন্য প্রস্তাব এনেছি।আমি কিছু চাই না।আমার ছেলের সুখ আমার কাছে বড়।সন্তানের সুখের কাছে মা বাবার আর কি আপত্তি থাকতে পারে বলুন?আর তারা যদি আজ আমার মেয়ে হতো আমি কি পারতাম ওকে ফেলে দিতে?কখনো পারতাম না।ওকে আমি নিজের মেয়ে করেই নিয়ে যেতে চাই।

মাহমুদা বেগম এবার আবেগে কেদেই দিলেন।

----ও আমার অনেক আদরের আপা।ওকে কখনো কোন কষ্ট দেইনি আমি।আমার কলিজা টাকে নিয়ে ভয় হয় আমার।

----আপনি কেন চিন্তা করছেন?আমি তো বললাম ওকে আমি আমার মেয়ে করেই রাখব।

----আপা বোঝেন তো আমরা মা বাবা।চিন্তা হওয়া টা স্বাভাবিক।

আব্রাহাম সাহেবের কথা শুনে তার কাঁধে হাত রাখলেন নাফিজের বাবা।

----হ্যাঁ অবশ্যই।মেয়ের জন্য চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক।আমার কতো ইচ্ছে ছিল আমার একটা মেয়ে থাকবে।ওকে নিয়ে সাইকেলে করে আমি ঘুরিয়ে নিয়ে বেরাব।কিন্তু আল্লাহ তো সেই ইচ্ছে পূরণ করলেন না।তাতে কি হয়েছে?আমি না হয় এবার আমার বৌমা কে দিয়ে মেয়ের শখ পূরণ করব।

আব্রাহাম সাহেব আবেগে নাফিজের বাবা কে জড়িয়ে ধরলেন।

----আচ্ছা আসল লোক তো এখানে নেই।তারা কোথায় আপা?

----ওহ।আমার তো খেয়াল ছিল না।দাঁড়ান আমি ওকে আনছি।ও ঘরে আছে।

----না না।আপনার যেতে হবে না।এই পা নিয়ে মেয়েটা নামবে।কোনো দরকার নেই।আপনি ওর ঘরটা দেখিয়ে দিন আমি নিজেই যাচ্ছি।

----কিন্তু!

----কোনো কিন্তু না।আপনি বলে দিন আমি নিজেই যাব।

----আচ্ছা চলুন।

মাহমুদা বেগম লতিফাকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।

----নাফিজ তুই ও চল।

----আমি!

----হ্যাঁ নাফিজ।তুমিও এসো।তোমরা দুজন তো একটু আলাদা কথা বললে না।

নাফিজ মাথা চুলকিয়ে একটু লাজুক ভাব নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।কিন্ত আসলে সে মনে মনে এটার ই অপেক্ষা করছিল।সেই কখন থেকে বার বার এদিক ওদিক ঘুরছিল সে তারা কে একটু দেখার জন্য ।

;;;;;

----এই নাও।এটা আমার শাশুড়ির দেওয়া রুলি।তোমাকে দিয়ে গেলাম আজ।এরপর খুব শিগগিরই কিন্ত আমার বাড়ির চাবি আমার ছেলের দায়িত্ব ও তোমাকে নিতে হবে।

লতিফার কথা শুনে খানিকটা লজ্জা পেল তারা।লতিফা তারার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিলেন।তারা বার বার শুধু লতিফা কে দেখছে।

----কিছু বলবে মা?

----আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে।

----লাগবেই তো।কদিন আগে সি এম এইচ এ না দেখলে।

----না।তখন তো ওতোটা খেয়াল করিনি।কিন্তা আপনাকে সত্যি খুব চেনা চেনা লাগছে।

----তুই কোথায় দেখবি ওনাকে মা?উনি তো আজ ই এলেন এখানে।

মাহমুদা বেগমের কথাতে তারা মাহমুদা বেগমের দিকে তাকালো।

----আমি ই ওনাকে আগে দেখিনি মা।তুই কোথ থেকে দেখবি।

----ও।তাহলে হয়তো ভুল হয়েছে।

লতিফা তারা মাথায় আবার হাত রাখলেন।

----আসি মা।ভালো থেকো।

----জি।আল্লাহ হাফেজ।

----আল্লাহ হাফেজ।

মাহমুদা বেগম লতিফাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।এর মধ্যে ঘরে সৈকতের আবির্ভাব।সৈকত টানতে টানতে নাফিজকে নিয়ে এসেছে ভিতরে।নাফিজকে দেখে তারা যেন আরো লজ্জা পেল।এদিকে নাফিজ তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে তারার দিকে।

----কি জামাইবাবু।আমাকে ট্রিট দিতে হবে কিন্ত।

----তা তো অবশ্যই।তোমার মতো শালা ঘরে ঘরে থাকা উচিত।তুমি না সাহায্য করলে না আজকে ওর কলেজে সময় মতো যেতে পারতাম।না আজ বিকেলে ছাদে।

নাফিজের কথা শুনে তারা হা হয়ে তাকিয়ে আছে নাফিজের দিকে।

----মানে?আপনি কিভাবে এসেছিলেন?

----আরে তোরা সব ঘুম।ও সদর দরজা দিয়ে ঢুকেছিল।আবার সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল।

----কিন্তু আমাকে যে বললো আর্মি ট্রেনিং এর কথা!

----ওটা তো ঢপ ছিল।

তারা আড়চোখে নাফিজের দিকে তাকাচ্ছে।নাফিজ তারার দিকে আর পাত্তা না দিয়ে সৈকতের সাথে বক বক করছে।

বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে।সৈকত আর নাফিজ তারার সামনে বসে বকবক করেই যাচ্ছে।কিন্ত নাফিজ না তারার দিকে একবারের জন্য তাকাচ্ছে না দুজনের কেউ তার সাথে কথা বলছে।

হঠাৎ করেই নাফিজ উঠে দাঁড়ালো,

----সৈকত আসি তাহলে।পরে দেখা হবে।

----হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।

তারা হা হয়ে নাফিজের দিকে তাকিয়ে আছে।তারা মনে মনে একটা কথাই বিড়বিড় করছে,

----এটা কি হলো?ভাব দেখাচ্ছে আমাকে !এক টু কথাও বললো না।অথচ দেখো বিকেল বেলা কি নাটক করলো।

সৈকত ও উঠে দাঁড়ালো।

----চলো তাহলে।অন্যদিন না হয় আবার আড্ডা হবে।

সৈকত নাফিজকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।তারা অবাক চোখে নাফিজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

নাফিজ দরজার আড়াল হতেই তারা বললো,

----যাহ ব্যাটা!খাব না তোর বিয়ে।ভাব দেখাল।এক টু কথা বললে কি হতো।

----বাববাহ।এসব তোমার কি নিত্য নতুন রূপ দেখছি তারা।আপনি থেকে ডিরেক্ট তুই।ভালোই ভাষা আমদানি করেছো দেখছি।

নাফিজের  গলা পেয়ে তারা চমকে গেল।দরজার দিকে তাকাতেই দেখে নাফিজ বুকের সাথে হাত দুটো বেধে তারা দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।

----আপনি যাননি!

নাফিজ কিছু না বলে পকেট থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করে তারা র দিকে ছুড়ে মারলো।গোলাপ টা তারার কোলের ওপর গিয়ে পড়লো।তারপর একটা চিরকুট ছুড়ে মেরে নাফিজ চলে গেল।

নাফিজ চলে যেতেই তারা চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে দেখলো।

তাতে লেখা আছে-"I ❤ U,জানালার কাছে দাঁড়িয়েও থেকো একটু।যতদূর দেখা যায় ততদূর অবধি দেখতে দেখতে যাব।"

চিরকুট টা দেখেই তারার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তারা আর দেরী না করে ক্রাচ নিয়ে খাট থেকে নেমে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো।দেখাই যাচ্ছে নাফিজ বাবা মার সাথে গাড়িতে উঠছে।তারা বাইরে তাকাতেই এক টু পর নাফিজ গাড়িতে বসে জানালা খুলে তারার জানালার দিকে তাকালো।

তারা মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো নাফিজকে।নাফিজ দূর থেকে ইশারায় ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিল তারার দিকে।নাফিজের এমন কাজে তারার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।গাড়িটা চলে যেতেই একটু পর তারার ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠলো।জানালা থেকে সরে গিয়ে তারা ফোন নিয়ে মেসেজ টা ওপেন করলো।

তাতে লেখা আছে-"প্রেয়সী,

হিমুর রূপা সাজতে হলে নীল শাড়ি পড়তে হবে।এসব গাউনে চলবে না।আর হ্যাঁ শাড়িটা অবশ্য ই আমার নিজ হাতে পড়ানো হতে হবে।তৈরী থেকো।

কোনো এক বিকেলে,আমরা দুজনে,

হব কপোত-কপোতী।"

                                 -----ক্যাপ্টেন 

;;;;;

মেসেজ টা পড়েই তারা যেন লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।হুট করে নাফিজ কি শুরু করেছে টা কি!নাফিজের এরকম রূপ তারা মেনে নিতে পারছে না।চুপচাপ গম্ভীর স্বভাবের মানুষটি যখন হুট করে এরকম পরিবর্তন হয়ে যায় এমন তো মনে হওয়ার ই কথা।

তারার ভাবনার মাঝেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।তারা এক মুহূর্ত দেরী না করে ফোন হাতে নিল।"ক্যাপ্টেন "নাম দেখেই তারার মুখে আরো একবার হাসি ফুটলো।ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো তারা।

----হ্যালো।

----কি?এতক্ষণ লাগে কেন ফোন ধরতে?

----আজব!আপনি ফোন করার সাথেই তো রিসিভ করলাম আমি।

----কল দেওয়ার আগে রিসিভ করা যায় না?

----আপনি কল না দিলে আমি কিভাবে রিসিভ করব শুনি?

----কিভাবে আবার!উল্টা করে।

----এই আপনি কি বলছেন বলুন তো?

----নিজে একটু কল করা যায় না।সব সময় আমি কল করি।এ তো নিষ্ঠুর কেন তুমি?হ্যাঁ।একটু কল করলে কি বেশি টাকা খরচ হয় নাকি?

নাফিজের কথার মধ্যে বেশ অভিমানী সুর।তারা এবার হেসেই দিল জোরে জোরে।

----এই তুমি হাসছো কেন?

----হাসার মতো কথাই তো আপনি বললেন।

----তারা।

----হুম।

----শোনো।

----বলুন।

----ও তারা।

----আরে কি হয়েছে?

----শোনো না।

----কি?

----এই।

----বলুন।

----এইইই।

----এই আপনি বলবেন নাকি ফোন কাটবো আমি!

----আই লাভ ইউ।

তারা থ মেরে দাড়িয়ে আছে নাফিজের কথা শুনে।হুটহাট করে এমন কথা কেউ বলে?ফোনের দিকে তাকাতেই তারা দেখে নাফিজ কল কেটে দিয়েছে।তারার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে নাফিজের কথা মনে করে।

;;;;;

জানালা ধরে দাড়িয়ে বাইরে উঁকি দিচ্ছে তারা।চারিদিক পরিষ্কার হয়ে গেছে।ঘড়ির কাটাও সাতটা বেজে ছুইছুই।কিন্তু নাফিজের কোনো খোঁজ নেই।

----কি হলো?আজ কেন আসেননি উনি?তবে কি উনি এখনো রেগে আছেন আমার উপর?না না তাহলে কাল কথা বললো কেন?উনি কি ব্যস্ত!না।আজ তো শুক্রবার।তাহলে?

তারার মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

----ঐ নাফিজের বউ কি করিস?

সৈকতের কথা শুনে পেছনে ফিরলো তারা।

----এসব কি ভাইয়া?কি সব বলছো হ্যাঁ?

----কি বলেছি?যা সত্যি তাই বলেছি।

----এখনো বিয়ে হয়নি।

----তো?তারা রে তারা তোর জন্য যে আজ কতো ভোল্টের শক অপেক্ষা করছে জানিস ও না তুই।

----কেন?কি হয়েছে?

----বাইরে হাঁটতে যাবি না?

----আগে কি হয়েছে সেটা বলো?

----আরে পরে শুনবি।চল একটু হাওয়া খেয়ে আসি।

----না।

----কেন?

----যেতে ইচ্ছে করছে না।

----তা করবে কেন?উনার পেয়ারি ক্যাপ্টেন তো আর নেই তাই না।

----উহ!ভাইয়া।

----চল বলছি।নাইলে কিন্তু তোর বিয়ে খাব না বলে দিলাম।

----খেও না।

----তুই যাবি?

----চল চল যাচ্ছি।

তারা সৈকতের সাথে বের হতে যাবে তার আগেই গাসুর আগমন।

----ও সকিনার বাপ।

গাসুর কথা শুনে বিস্ফারিত চোখে তাকালো সৈকত।আর তারা তো দাড়িয়ে দাঁড়িয়েই যেন হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

----এই তুমি আমাকে কি বললে?

----সাকি ভাই।

----গাসু তুমি কিন্তু প্রচন্ড ফাজিল।

----আই জানি।আই ভালা মানুষ।

----ফাজিল মানে ভালো তোমাকে কে বললো?

----ম্যাডাম কইছে।ফাজিল মানে ভালা মানুষ, বজ্জাত মানে আস্ত ভালা মানুষ,বদমায়েশ মানে ফলমালিন মুক্ত ভালা মানুষ ।আই জানি।

----কিহ!এগুলো তোমাকে চাচিমা বলেছে?

----হ এক্কেরে।

সৈকত তারার দিকে ইশারা করলো।

----এই তারা তোর মা পাগল হয়েছে জানিস?

----না ভাইয়া।এই পাগলকে থামানোর জন্য এসব শিখিয়েছে।

----তাই বল।

----সাকি ভাই।

----কি?

----কন আমি ভালা মানুষ না?

----হ্যাঁ তুমিই তো ভালো মানুষ।

----আই নো আই এক্সিডেন্ট গার্ল ।

----এক্সিডেন্ট!

----হ তারা আফা।

----এক্সিডেন্ট মানে দুর্ঘটনা।তুমি কি বলতে চাইছো গাসু?

----উরি।আফা ঐ তো ঐ যে।খাতায় ভালা করলে গুডুর পাশে আরেকখান যেন কি লেহে স্যার!

----ওরে।ওটা এক্সিলেন্ট।

----ঐ তো।হ ঐখান।

----নেও থামো।আমরা হাঁটতে যাচ্ছি।তুমি যাবে?

----হ সাকি ভাই।আই ও যাইতাম মরনিং টক করতি।

----গাসু ওটা টক না ওয়াল্ক।

----ঐ হলি হলো একখান।আইচ্ছা আফা একখানা কতা কন দেহি।

----কি?

----ঐ কানাকুমড়ো ফুলচোরডারে আপনে কেন বিয়া করতেছেন?দুনিয়াতে এতো চুন্নি সাকচুন্নি থাকতে ঐ গাছবান্দরডা আপনের গলাতে কেন ঝুলতেছে?

গাসুর কথা শুনে তারা সৈকত দুজনেই হেসে উঠলো।

----গাসু এসব কি কথা?

----না আফা মুই মানতি পারলাম না।

----কেন গাসু?নাফিজ তোমার কি ক্ষতি করছে?

----হে মোরে কইছে আফার বাগান থেইকা সব থেইকা সুন্দর ফুলডারে ডাকাতি করব।তাইলে বুঝেন কততোবড় ঢেপাকল ঐ গাছবান্দর ডা।

----গাসু ঢেপা কল কি?

----অপরাধী। বুঝেন সাকি ভাই।

----হ খুব বুঝলাম।তা ঐ গাছবান্দরডা সেই কাজ ই করছে।তিনি সত্যি সত্যি তোমাদের বাগানের সুন্দর ফুলটা ডাকাতি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

----হায় হায় কি কন?আমি আইজকে ই থানায় মামলা করুম ঐ গাছবান্দরডার নামে।তারা আফা আপনে কিন্ত সাক্ষী দিবেন?

----তারা!তারা দেবে সাক্ষী?

গাসুর কথা শুনে সৈকত হা হয়ে গাসুর দিকে তাকিয়ে আছে।তারা মিটমিট করে হাসছে।গাসু সৈকতের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।

----গাসু তুমি দেখছি চোরের ঘরে চুরি করতে যাচ্ছো?

----কেমনে?

----আহ গাসু।ভাইয়া তুমি যাবে?নাহলে এর কথা জীবনে শেষ হবে না।

----আচ্ছা চল।গাসু তুমিও চলো।

;;;;;

মাহমুদা বেগম ফটো অ্যালবাম খুলে বসে আছেন।একটার পর একটা ছবি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন।

----কি হলো?সকাল থেকে এগুলো নিয়ে বসেছো কেন?

----অতীতের স্মৃতির পাতা উল্টাচ্ছিলাম।তারা কতো বড় হয়ে গেল না?

----হুম।আমার তারা পাখিটা বেশি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল।

----আমার ভয় হচ্ছে ওকে নিয়ে।

----কেন?

----ও সুখি হবে তো?

----মাহমুদা!এতো কেন চিন্তা করো তুমি?তুমিই না দুদিন আগে বলতে আমার না থাকলে ওকে কে দেখবে?

----বলতাম তো।কিন্তু ভয় হয় যে।

----ভয় কি আমার কম হয় মাহমুদা?আমার মামোনির জন্য আমার ও খুব চিন্তা হয়।নাফিজ কে যতোটা দেখেছি খুব ভালো ছেলে।দেখো ও ভালো রাখবে তারা কে।

----তাই যেন হয়।

মাহমুদা বেগমের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।আব্রাহাম সাহেব মাহমুদা বেগমের কাঁধে হাত রেখে চিন্তা করতে নিষেধ করলেন।

;;;;;

----আরে সৈকত ভাইয়া দাঁড়াও না।গাসু।

তারা ক্রাচ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে।সৈকত আর গাসু খুব দ্রুত পা চালিয়ে সামনে চলে গেছে।তারা তো আর ওদের মতো সুস্থ স্বাভাবিক না।তারা আর পেরে উঠেনি।

---- যাহ!কেউ দাঁড়ালো না।এরা কেন বোঝে না আমি এতো দ্রুত যেতে পারি না।কেউ অপেক্ষা করল না আমার জন্য।

তারার খুব কষ্ট হচ্ছে।চোখের কোনে পানি চলেই এসেছে।আসলেই তো যেই মানুষটা একা ঠিকভাবে চলতে পারেনা তার কষ্ট কতোটা।

----তোমার অপেক্ষা শুধু আমার জন্য,

ওরা তো যাবেই, 

যেতে দেও,

পিছে দেখো,

কেউ তো আছে হাত বাড়িয়ে,

মনের দরজা খুলে

তোমার অপেক্ষায়।

কন্ঠস্বর টা তারার কাছে খুব পরিচিত।তারা পেছনে ঘুরে দেখে নাফিজ মুচকি হেসে তারার দিকে হাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে আছে।

----ক্যাপ্টেন!

----হুম আমি।এজন্য ওরা আগে চলে গেছে।

----আপনি কখন আসলেন?

----অনেকক্ষণ আগে।হাতটা ধরো।

তারা একবার নাফিজের দিকে তাকাচ্ছে একবার নাফিজের হাতের দিকে।তারার বড্ড সংকোচ হচ্ছে  নাফিজের হাত টা ধরতে।তারার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নাফিজ ই তারার হাত ধরলো।

----চলো।

----কোথায়?

----আপাতত ঐ দিকে।পরে না হয় হারিয়ে যাব তোমাকে নিয়ে অনেক দূরে।

নাফিজের কথায় তারার মুখে লজ্জা মাখা হাসি ফুটে উঠলো।

----তারা,এখন লজ্জা পেও না।তোমার জন্য রাতে এমন কিছূ অপেক্ষা করছে যেটা কল্পনাও করতে পারবে না।খুব বেশি ভয়ানক সেটা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন