নয়নতারা - পর্ব ২০ - সুবহান আরাগ - ধারাবাহিক গল্প


অন্ধকারে পার্কের বিভিন্ন জায়গায় ছোটো ছোটো বাতি জ্বালানো হয়েছে।ঐ আলোয় নাফিজ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার মূল্যবান জিনিস এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

তারাকে দেখে নাফিজ এগিয়ে গেল।

----তারা আপনি এখানে?

নাফিজের কথা শুনে তারা যেন দেহে প্রান ফিরে পেল সেরকম অবস্থা।

----ক্যাপ্টেন আপনি কি চেকিং করছেন?
----হ্যাঁ।কিন্তু আপনার তো আরো আগে বাড়ি তে যাওয়ার কথা।এখনো এখানে কি করছেন আপনি?
----আমি গাসুকে খুঁজতে গেছিলাম।
----গাসু কে মারিয়ার সাথে যেতে দেখলাম।
----সবাই চলে গেছে!
----হ্যাঁ।আমি ওতো যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম।
----আমি ওকে খুঁজতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছি।অন্ধকার হয়ে গেছে।আর ছবি তুলতে তুলতে আমার ফোনের ও চার্জ শেষ।অন্ধকারে ভয় করে আমার।

তারার কথায় তারার চোখের দিকে তাকালো নাফিজ।আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে চোখের কাজল টা একটু ঘেঁটে গেছে।নাফিজের তো বড্ড ইচ্ছে করছে তারার কাছে গিয়ে কাজল টা ঠিক করে দিতে।কিন্তু আপাতত নাফিজ সেটা পারছে না।তারার চোখে ভয়টাই দেখতে পাচ্ছে।

----ক্যাপ্টেন আপনি শুনছেন আমার কথা?
----জি।
----আমার বাপিকে একটু কল করবেন।বাপি এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
----কল তো করব।কিন্তু স্যারের আসতে দেরী হবে।আর পার্ক থেকে তো সেই কখন বের হতে চলেছে।আমরা ছিলাম বলে আমাদের কিছু বলেনি।আর রাত বাড়তে আছে।আপনাকে কোন নিশ্চয়তায় রেখে যাব আমি।আপনি আমার সাথে চলুন।
----আপনার সাথে!
----হ্যাঁ কোনো সমস্যা?

তারা আরো ভয়ে মাথা নিচু করে আছে।ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।একা একটা মেয়ে এতো রাতে একজন ছেলের সাথে যাওয়া কম রিস্কের না।

----প্রতিদিন সকালে একসাথে হাঁটতে যাই।তখন ও কিন্তু রাতের মতো চারপাশে কেউ থাকে না।শুনশান পরিবেশ।আপনার ক্ষতি করার কথা আমি কি করে ভাবতে পারি তারা!

নাফিজের কথা শুনে তারা করুন দৃষ্টিতে নাফিজের দিকে তাকালো।সে তো এটাই বুঝতে পারছে না নাফিজ তার মনের কথা কিভাবে বুঝলো।

----যাবেন তো আমার সাথে?
----জি।চলুন।
----আসুন।

নাফিজ ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে দিল।তারা সেই আলোয় ধীরে ধীরে সামনে এগোচ্ছে।আর নাফিজ পেছনে।

----যদি সারা জীবন আপনার পেছনে এভাবে ছায়া হয়ে থাকতে পারতাম!আপনি কি আমাকে সেই সুযোগটা দেবেন তারা।

মনের কথা গুলো মনে মনে ই থেকে গেল।মুখ ফুটে আর বলা হলো না নাফিজের।

;;;;;

----তুমি খবর নেও।আমার মেয়ে কোথায়?আমার মেয়েকে এনে দেও।তারা কে এনে দেও।

মাহমুদা বেগম কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন।গাসু তাকে সামলাচ্ছে।আব্রাহাম সাহেব তারার ফোনে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করছেন কিন্তু প্রতিবারের মতো ফোন বন্ধ।

----ম্যাডাম কাইনদেন না।তারা আফা ঠিক চলে আইবো।
----তুমি কেন ওকে রেখে গেছিলে গাসু!
----ওকে দোষ দিয়ে লাভ নেই মাহমুদা।ও তো জানতো তারা আমাদের সাথে চলে এসেছে।আর আমরা ও।আমি পার্কে খোঁজ নিতে বলেছি কিন্তু পুরো পার্ক ফাকা।ওখানকার কর্মচারী ছাড়া আর কেউ নেই।
----আমার মেয়ে কোথায় গেল তাহলে।ওর সাথে তো পারস ও নেই।ও আসবে কি করে।কোথায় ও?
----শান্ত হও মাহমুদা।আমি বের হচ্ছি।
----তুমি কোথায় যাচ্ছো?
----আমি পার্কে যাচ্ছি।আমি নিজে খুঁজতে যাব ওকে।

আব্রাহাম সাহেব ড্রাইভার কে নিয়ে বের হয়ে গেলেন।

;;;;;

----আপনার কি শীত করছে তারা?

গাড়ির ভেতর ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে।তারা শীতে কাঁপছে।বার বার হাত ঘষছে।

----একটু।
----আচ্ছা দাঁড়ান আমি জানালা লক করে দিচ্ছি।
----না খোলা থাক।দমবন্ধ লাগবে আরো।
----ঠিকাছে।

তারা র চোখ শুধু রাস্তার দিকে কখন রাস্তা ফুরাবে আর সে বাড়ি যাব।আর নাফিজের চোখ শুধু তারা র দিকে।আজ পথ টা যেন শেষ না হয় এটাই নাফিজ চাইছে।

হঠাৎ করেই গাড়ি থেমে গেল।

----স্টাফ কি হলো?
----স্যার দেখতে হবে।

একজন সৈনিক নেমে গাড়ি চেক করলো।

----স্যার তেল শেষ হয়ে গেছে।
----কিহ!তোমরা চেক করে গাড়ি আনোনি।ফাজলামি পেয়েছো নাকি।
----স্যার চেক করে এনেছিলাম।আসলে স্যার যাওয়ার পর কয়েকবার ইউনিটে এই পিকাপ টা নিয়ে খাবার আনা নেওয়া করতে হয়েছিল।বুঝতে পারিনি এমন হবে।
----তোমাদের নামে কাল রিপোর্ট দেব।
----স্যার আমি এক্ষুনি কন্ট্রোল রুমে কল করছি।ওরা আরেকটা পাঠিয়ে দেবে।
----হ্যাঁ এবার আরো রাত কাটাও।আজকে পুরো রাত তো রাস্তায় কেটে যাবে দেখছি।

নাফিজ সৈনিকদের বেশ কড়া করে কথা শোনালো।তারা চুপচাপ বসে নাফিজের কান্ড দেখছে।এর আগে কখনো নাফিজকে এভাবে রাগতে দেখেনি সে।

----ক্যাপ্টেন আপনি আমাকে নামিয়ে দিন।আমাকে হেঁটে চলে যাব।বিশ মিনিটের রাস্তা আছে আর।
----কিন্তু আপনার পায়ে সমস্যা। 
----কিছু হবে না।

তারা দরজা খুলে ক্রাচ নিয়ে সাবধানে নামলো।নাফিজ ও নেমে পড়লো।

----আপনি নামলেন কেন?
----আপনাকে একা ছাড়ব ভাবলেন কি করে!
----এখন ও কি আপনি আমার সাথে যাবেন!
----আপনি না চাইলেও যাব।আপনাকে একা ছাড়ছি না।তোমরা গাড়ি এলে চলে যাও।আমি চলে যাব।
----ওকে স্যার।

তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে নাফিজের কান্ড দেখছে।তারার তাকানো দেখে নাফিজ মুচকি হাসি দিল।

----এভাবে তাকিয়ে থাকবেন।নাকি যাবেন?

নাফিজের কথাতে বেশ লজ্জা পেয়ে গেল তারা।তারা মুখ ঘুরিয়ে রাস্তা ধরলো।

দুজনে শুনশান রাস্তায় হাটছে।ফুরফুর করে বাতাস বইছে।রাস্তার ধারে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে নাফিজ কথার মাঝে আড়চোখে দেখছে তারাকে।

তারা ও আজ আড়চোখে দেখছে নাফিজকে।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে যেন আজকে অন্যরকম লাগছে নাফিজকে।ফর্সা শ্যামলা বর্ন। যেমন হাইট তেমন বলিষ্ঠ শরীর।চুলগুলো আর্মি কাট দেওয়া।চোখের মনি হালকা ঘোরা।ডান সাইডের ভ্রুর কাছে একটা কাটা দাগ।ঠোঁটের বাকা হাসি।ব্যস আর কি চাই।এতেই যেন নাফিজ যে কোন মেয়ের ক্রাশ হতে বাধ্য।

----আআআ আ,,,,,,।

বেখেয়ালি ভাবে হাঁটতে হাঁটতে গাউনে বেধে হোঁচট খেয়ে পড়লো তারা।

----তারা,,,,।

নাফিজ সাথে সাথে নিচু হয়ে তারাকে ধরলো।

----কি হয়েছে?বেশি ব্যথা লেগেছে?খুব কষ্ট হচ্ছে।কি হলো?কথা বলছেন না কেন?

নাফিজের বিচলিত চোখ দেখে তারা বেশ অবাক হলো।হোঁচট খেয়ে পড়াতে সে হয়তো একটু ভয় পেয়ে চেচিয়েছে।কিন্তু ব্যথা তেমন লাগে নি।অথচ নাফিজকে দেখে মনে হচ্ছে হোঁচট তারা না নাফিজ খেয়েছে।

----আমার তেমন লাগেনি ক্যাপ্টেন।
----লাগেনি মানে!কিভাবে পড়লেন আপনি!

তারা একটু মুচড়াতে থাকলো।এতক্ষণে নাফিজের খেয়াল হলো হুতোশে সে তারার দুই বাহু ধরে রেখেছিল।নাফিজ সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিল।

----সরি।আসলে আপনি পড়ে গেছিলেন।আমি খেয়াল করিনি।আমি খুব দুঃখিত তারা।

তারা কোনো উওর দিল না।নিজে ওঠার চেষ্টা করতে গেলে নাফিজ তারাকে সাহায্য করে।তারার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়।

----ধন্যবাদ।
----ধন্যবাদ কেন দিচ্ছেন?
----আপনি সাহায্য করলেন তাই।
----ওহ।তারা একটা কথা ছিল।
----বলুন।
----আপনার ফোন নাম্বার টা দেবেন?

নাফিজের কথা শুনে তারা যেন আকাশ থেকে পড়লো।

----না আপনি না দিতে চাইলে সমস্যা নেই।আসলে আপনি বাড়ি পৌছেছেন কি না এজন্য।
----আপনি ই তো বাড়ি দিয়ে আসছেন।তাহলে পৌছেছি কিনা এটা জানার কি দরকার?

তারার কথা শুনে নাফিজ নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারার মতো কাজ করেছে সে।

----০১,,,,,,,,,,,,,।আমার নাম্বার।

তারার কথা শুনে নাফিজের খুশি আর দেখে কে।নাফিজ চট করে ফোন বের করে নাম্বার টা সেভ করেনিল।এদিকে তারা মুচকি হাসছে নাফিজের কান্ড দেখে।

----আচ্ছা তারা একটা কথা বলবেন?
----কি?
----আপনি এতো নয়নতারা ফুল কেন পছন্দ করেন?
----কাল বলি।
----আজ নয় কেন?
----ক্যাপ্টেন আপনার কি হয়েছে বলুন তো?
----মানে!

নাফিজ ভ্রু কুচকে তারা র দিকে তাকালে তারা সামনে তাকাতে ইশারা করে।নাফিজ তাকিয়ে দেখে তারা তারাদের বাড়ির গেটের সামনে চলে এসেছে।

----ওহ আমি খেয়াল করিনি।
----চলুন ভেতরে চলুন।
----না।আপনি যান।
----এতো দূর এগিয়ে দিলেন আর যাবেন না?
----আসলে আমার মা অপেক্ষা করছে।না খেয়ে বসে থাকবে।
----ওহ।আমার জন্য,,,,,,।
----আর দ্বিতীয় বার এই কথাটা শুনতে চাই না।
----আপনি বড্ড অদ্ভুত আচরণ করেন।
----করলে কি।আপনি তো বোঝেন না।

নাফিজ মুখ ফসকে কথাটা বলেই নিজেই নিজের জিভ কামড়ে ধরলো। আর তারা তো পুরো অবাক।

----আমি আসি।

নাফিজ আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে জোরে হাঁটা শুরু করলো।

;;;;;

তারা কলিংবেল বাজাতেই গাসু এসে দরজা খুললো।তারাকে দেখেই তো গাসু সেই চিৎকার দিল।

----ম্যাডাম,কোনে আপনে?শিগগিরই আইয়া পড়ুন।তারা আফা তো আইছে।

গাসুর কথা শুনে ভেতর থেকে দৌড়ে ছুটে এলেন মাহমুদা বেগম।তারাকে দেখেই জোরে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

----কোথায় ছিলি তুই?আমার চিন্তা হয়না।তুই সব সময় আমাকে এতো চিন্তায় ফেলিয়ে দিস কেন!

মাহমুদা বেগম আব্রাহাম সাহেব কে ফোন দিলে একটু পর তিনিও বাড়িতে চলে আসেন।দুজনের মাঝখানে বসে আছে তারা।মাহমুদা বেগম আর আব্রাহাম সাহেব তারাকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলেই চলে যাবে।

----তুমি জানো মামোনি আমি তোমার জন্য কতো চিন্তায় ছিলাম?
----বাপি এখন তো তোমরা কান্নাকাটি বন্ধ করো।আমি গাসুকে খুঁজতে গেলাম আর গাসু ভেবেছে আমি চলে গেছি।ব্যস ওখানেই তো প্যাচ লাগলো।
----নাফিজ ই তোকে দিয়ে গেছে?
----হ্যাঁ বাপি।আমি তো জানি যে পিকনিক শেষে কেউ না কেউ চেকিং এর জন্য থাকবে।তাই তো আমি ঐ এরিয়ার দিকে আবার গেছিলাম।আর ক্যাপ্টেন নাফিজ আমাকে বাড়ি অবধি দিয়ে গেছে।
----কিন্তু উনি ভেতরে এলো না কেন?
----মা ওনার মা ও ওনার অপেক্ষা তে আছেন।আমি বলেছিলাম ভেতরে আসতে কিন্তু উনি আসেননি।
----যাই বলো মাহমুদা ছেলেটা অনেক দায়িত্ব বান।আমাকে ফোন নিয়ে আবার বিভ্রান্ত করার প্রয়োজন মনে করেনি।নিজ দায়িত্বে ওকে দিয়ে গেছে।
----হ্যাঁ।ছেলেটা অনেক ভালো।

মাহমুদা বেগম আর আব্রাহাম সাহেব নিজেদের মতো কথা বলেই যাচ্ছেন।তারার মনে অন্য কিছু ঘুরছে।মা বাবার মুখে নাফিজের প্রশংসা শুনে ভেতরে ভেতরে সে বেশ খুশি।

;;;;;

রাত ১১:০০ টা বাজে।

নাফিজ বিছানায় এসে ফোনটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়লো।

ফোনের স্ক্রিনে মিষ্টির ছবিটার ওপর হাত বুলালো কিছুক্ষণ।

----মিষ্টি পাখি, কোথায় তুই?তুই তো এলি না।কিন্তু আমার বাগানে যে আরেকটা রানী এসে ঢুকে পড়েছে।সে তো বের হওয়ার নাম ও করছে না।আমি কি করব বলতো?

মিষ্টির ছবিটা বুকের ওপর রেখে চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো নাফিজ।তারার কথা মনে পড়তেই নাফিজ ফোনটা আবার হাতে নিল।তারার নাম্বার টা দেখে মুখে হাসি ফুটলো নাফিজের। "আমার নয়নতারা " এই নামেই তারার নাম্বার টা সেভ করেছিল তখন সে।

----আচ্ছা এখন ফোন দেওয়া কি ঠিক হবে?উনি ঘুমিয়ে পড়েনি তো!কি করব?একবার দিয়েই দেখি।
ভেবে চিন্তে নাফিজ তারার নাম্বারে কল দিল।

;;;;;

রাতের খাওয়া শেষে নিজের ঘরে আসলো তারা।চার্জ থেকে ফোন খুলতে গেলেই দেখে ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।

----এখন ?এতো রাতে আমাকে কে কল করলো!

তারা ফোনটা হাতে নিয়ে খাটের ওপর গিয়ে বসলো।তাঁরপর রিসিভ করে কানে ধরলো।

----হ্যালো।

ফোনের ওপাশের কন্ঠ টা শুনে তারা একদম কেঁপে উঠলো।কন্ঠ টা চিনতে কষ্ট হচ্ছে না তার।

----হ্যালো তারা!

তারা কোনো উওর দিচ্ছে না।চুপ করে ফোন কানে ধরে চোখ বুজে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।নাফিজ যে সত্যি সত্যি তাকে কল করবে এটাতো তারা ভাবতেই পারে নি।
ফোনের এপাশে নাফিজ ফোন কানে নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে।তারার নিঃশ্বাসের শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পারছে।তার ফোন পেয়ে তারার কি অবস্থা হবে এটাই কল্পনা করে নাফিজের মুখে হাসি ফুটলো।

----আফা,,,,।
----কে?

হঠাৎ করে গাসুর গলা শুনে কেঁপে উঠলো তারা।ফোনটা হাত থেকে পড়ে গিয়ে বিছানার ওপর পড়লো।

----আফা আমি।আই গাসুয়া সিমসাং।
----ও গাসু।
----হ।আপনে ভয় পাইছেন নাকি?
----হঠাৎ করে ডেকে উঠলে তো তাই একটু চমকে গেছিলাম।
----ও।আফা এতো রাত্তিরে কার সাথে কথা বলতে ছেন?
তারা কি উওর দেবে সেটাই ভেবে পারছে না।
----কি হলো কন?
----ঐ মোবাইল কোম্পানি আছে না।এদের তো ঠিক নেই ।হুট হাট করে কল দেবে এ অফার সে অফার বলা শুরু করবে।
----তা ঠিক কইছেন আফা।আমার তো মাঝে মাঝে মন চায় ফোনের কাচ খান ভাইঙা ভেতরে ঢুইকা ওগো কান টাইনা ধইরা মুড়ো ঝাটা দিয়া বাইরোই আসি।
----আহ গাসু।এতো কথা যে বলো না তুমি।কি বলতে এসেছো?
----আফা আপনের বিছানা করতে আইছিলাম।
----না থাক।তুমি যাও।আমি করে নেব।
----না আফা।আপনের কই পায়ে ব্যথা লাগব।
----কিছু হবে না গাসু।তুমি যাও আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
----না আফা আমি বিছানা ঠিক করে তয় যামু।
----আহ গাসু।আমার কিন্তু এবার রাগ হচ্ছে।
----আইচ্ছা ঠিকাছে গেলুম।সমস্যা হলে ডাক দেবেন।
----আচ্ছা।

গাসু চলে যেতেই তারা ক্রাচ নিয়ে উঠে তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা লক করে লাইট অফ করে দিল।
মাহমুদা বেগমের আবার বেশি রাত জাগা অভ্যাস।ঘুম না আসা অবধি তিনি বাড়িতে হাঁটা চলা করতে থাকেন।তাই তারা গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো।বালিশটা মাথার ওপরে দিয়ে নিল।যাতে আওয়াজ না বাইরে যায়।

----আচ্ছা উনি কেন ফোন করছিলেন?কেটে দিয়েছেন বোধ হয়।

ভাবনা চিন্তা করতে করতে তারা ফোন হাতে নিয়ে দেখে নাফিজ এখনো লাইনে আছে।সে ফোন কাটে নি।তারা কাপা কাপা হাতে ফোনটা কানে ধরলো।

----হ্যালো।
----যাক অবশেষে তাহলে আপনার ফোনটা ধরার সময় হলো!
----আপনি এখনো লাইনে আছেন!
----হুম ছিলাম।শুনছিলাম আপনাদের কথা।
----ওহ।
----বাসায় পৌঁছানোর পর স্যার কিছু জিজ্ঞাসা করেনি।এতো দেরী করলেন কেন?
----করেছিল।সব বলেছি।আপনি কখন বাসায় পৌছেছিলেন?
----ঐ আপনাকে দিয়ে আসার আধা ঘন্টা পর।
----ওহ।
----তারা।
----বলুন।
----এখনো ঘুমাননি কেন?
----ঐ আজকে ডিনার করতে দেরী হয়ে গেছিল।
----প্রতিদিন কি এই সময়ে ঘুমান?
----না।মাঝে মাঝে আরো রাত জাগি।পড়া থাকলে দেরী হয়।কেন?
----না এমনি।ফোন দিয়ে আপনাকে বিরক্ত করলাম না তো?
----উহুম।
----তারা।
----হুম।
----আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।
----বলুন।
----আমার বাগানের রানী হবেন?
নাফিজের কথা শুনে তারার শরীরের কম্পন আরো বেড়ে গেল।এসির মধ্যে ও পুরো ঘেমে যাচ্ছে তারা।
----তারা চুপ করে আছেন কেন?
----আমার ঘুম পাচ্ছে ক্যাপ্টেন।শুভ রাত্রি।

তারা সাথে সাথেই ফোন কেটে দিল।কি একটা ভয়ঙ্কর অনুভূতির শিকার হয়েছে সে আজ।এই প্রথম ফোনে কোনো ছেলের সাথে কথা বলা তাও বালিশের নিচে লুকিয়ে।আর নাফিজের ঐ রকম ভয়ঙ্কর কথা।তারার চোখ থেকে ঘুম কেড়ে নিয়েছে আজ।

ফোনের এপাশে নাফিজের মুখে বাকা হাসি ফুটে উঠলো।

----লজ্জাবতী লতিকা,তুমি যতোই লজ্জায় নুয়ে পড়ো,আমার কাছে তোমাকে হার মানতেই হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন