রংধনু - পর্ব ৩০ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


বাসায় অনেকদিন পর মুড়ি বানানো হয়েছে।ছাদে বসে আছে ওরা সবাই। নিশাদ মুড়ি মাখাচ্ছে মাংসের ঝোল, চানাচুর, সরিষার তেল, পেয়াজ আর মরিচ দিয়ে।ওদের বাসায় আজ লোডশেডিং হচ্ছে।নিশাদ মুড়ি মাখাচ্ছে আর লাবনী হাত পাখা দিয়ে ওকে বাতাস করছে।পাশে বসে আছে আদনান সাঁঝ আর কুঞ্জন।নিশাদ পাশে তাকিয়ে বলল,
''আব্বা আম্মা কই?"
সাঁঝ বলল,
''আব্বা নামাজ পড়ে।"
''এটা কোন কথা? গরমে পড়ে কেন?"
''পড়ুক না ভাইয়া।মাখানো হয়নি ভাইয়া?"
কুঞ্জন দেখার চেষ্টা করতে করতে বলল।নিশাদ বলল হলে কি হবে?আব্বা আম্মা আর হুমায়রা না আসলে খাবিনা কেউ।কুঞ্জন বলল,
''ভাইয়া ত্যানায় যাবে।"
''যাবেনা।শসা আর টমেটো দেয়া হয়নি।"
কুঞ্জন হাতের পেপার দিয়ে নিজেকে বাতাস করছে।আদনান ওকে বলল,
''একা বাতাস খাওয়ার মানে কি বড় দুজন ভাই বোন আছে আমাদের ও কর।"
লাবনী হাসছে।কুঞ্জন রেগে বলল,
''লাবনী কিরে ভাইয়া আপুকে ও কর সাথে আমাকে ও।"
''পারবোনা।তুমি করো।আমার হাত এটা টেবিল ফ্যান না।"
লাবনীর নিশাদ গলা পরিষ্কার করে বলল,
''লাবু কলিজা এগুলো কেমন কথা বার্তা?"
সাঁঝ চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো।আদনান বলল,
''কুঞ্জন তুই বাতাস কর আমাদের।লাবু দেখ তো আম্মা আব্বা কি করে।আর পাখাটা আমাকে দিয়ে যা।"
লাবনী হেসে আদনানের হাতে পাখা দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।তবে যাওয়ার আগে কুঞ্জনের মাথায় চাঁটি মেরে গেলো।কুঞ্জন পিছনে তাকিয়ে বলল,
''এই বেয়াদব মেয়ে দাঁড়া।"
নিশাদ এবার রেগে ধমক দিয়ে বলল,
''কুঞ্জন এগুলো কেমন বিহেভ?তোর ছোট বোন না?আমাদের কাউকে দেখছিস এগুলা ইউজ করতে?"
নিশাদের ধমক শুনে কুঞ্জন মাথা ঘুরিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
''সরি ভাইয়া।"
কেউ আর কিছু বললনা।লাবনী নিচে এসে দেখলো হুমায়রা ফোনের টর্চ দিয়ে কেটলিতে চা ঢালছে।আম্মা তজবিহ গুনছেন আর বাবা লুঙ্গী শক্ত করে বেঁধে লাবনীকে দেখে হাঁক ছাড়লেন।জোর গলায় বললেন,
''লাবনী কই রে মাইয়া।এক গ্লাস পানি দিয়া যা।"
জি আব্বা আনি।"
জোরে বলে উঠে লাবনী। জুলেখা বানু তজবিহ গুনতে গুনতে ছোট মেয়ের দিকে তাকান।হঠাৎ ওনার চোখ ভরে আসে।লাবনী বলল, 
''আম্মা কি হইছে?"
''চুপ থাক।তোর আব্বা শুনলে রাগবো।"
লাবনী গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলল, 
''আম্মা বলো না কান্দো কেন?
''তোর আপার লাইগা কান্দোন আইয়েরে।আইজ মাইয়াডার সাইত্রিশ বছর হইয়া গেছে।বয়স হইয়া গেলো মাইয়াডার।আল্লাহ এহনো বাইচ্চার মুখ দেখাইলোনা।কি পাপ করছিলো মাইয়াডা আমার।"
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেন জুলেখা বানু।লাবনী ফিসফিসিয়ে বলল,
"আম্মা আব্বা আছে।কাইন্দোনা।"
''কি করুম ক।কান্দোন আইয়েরে।"
''আম্মা ভাই অনেক ভালো।আপা অনেক ভালো আছে।"
''মাইয়াডার কপালডা আসলেই ভালা।এমন ভালো জামাই পাইছে।এহন সাঁঝরে নিয়া চিন্তা।মাইয়াডার বিয়া হইতাছেনা। নিশাদের ও বয়স হইতাছে।"
''হুম।"
মন খারাপ করে বলল লাবনী।হুমায়রা এসে বলল,
''ছাদে চলো ভাইয়া কল দিছে।"
জুলেখা বানু বললেন,
''চল।কই নিশাদের আব্বা আহো।"
ইকরাম রাহমান বললেন,
''যাও আইতাছি।"
''আইচ্ছা।"
বলেই দুইবোন কে নিয়ে জুলেখা বানু ছাদে যাওয়ার জন্য বের হলেন।একটু পর বাবা ও হাজির সবার সাথে।সবাই গোল হয়ে বসলো বড় বোলটার পাশে।নিশাদ নিজে ও খাচ্ছে আর ভাইবোনদের লোকমা ধরে খাওয়াচ্ছে।আদনানকে প্রথমে দিলো।আদনান কিছুটা লজ্জা পেলে ও খেয়ে নিলো।সাঁঝকে ও খাওয়ালো।তারপর হুমায়রা কুঞ্জন লাবনী।লাবনী নাক শিটকে  বলল,
''ভাইয়া এলাচি‌!!!ইয়াক।
''ফেলে দে।এমন করার কি হলো?
রেগে বলল হুমায়রা।সাঁঝ আরেক লোকমা মুখে নিয়ে দেখলো নিশাদকে কেমন যেন দেখাচ্ছে।ওর চোখের কোনে পানি।হঠাৎ ইকরাম রাহমান হেসে বললেন,
''বুড়া গুলারে লোকমা ধইরা খাওয়ানোর মানে কিরে নিশাইদ্দা?"
''আব্বা কি কও?এগুলা আমার কাছে এখন বাচ্চা।"
জুলেখা বানু একগাল হেসে বললেন,
''এগুলা বাইচ্চা কোন দিক থেইক্কা?বুইড়া খাসি একএকডা।"
সবাই হেসে উঠলো কিন্তু একমাত্র নিশাদ মলিন হেসে বলল,
''আসি আমি। বসো তোমরা।"
নিশাদ উঠে টাঙ্কির পিছনে চলে এলো।চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ও।চোখজোড়া আস্তে আস্তে ঘোলা হয়ে আসতে থাকে।নাকটা ফুলে ফুলে উঠছে ওর।চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু করলো।আজ আপা থাকলে নিজ হাতেই খাওয়াতো যেমন টা আগে খাওয়াতো।সেদিন গুলো আজ ও চোখে ভাসে ওর।সেদিন ও ওরা ছাদে এসেছিলো।আপা মুড়ি মাখিয়ে ওদের খাইয়ে দিচ্ছিলো।নিশাদকে খাইয়ে বলছিলো,
''আমি বুড়া হয়ে গেলে খাওয়াবিনা এভাবে?"
নিশাদ মুখে মুড়ি নিয়ে হেসে বলল,
''না খাওয়ামু না।"
বেলা ভ্রু কুঁচকে হালকা হেসে বলল,
''কেন?"
''তখন তোর দাঁত থাকলে তো।"
বলেই হেসে দিয়েছিলো নিশাদ।বেলা আলতো করে চাপড় মেরে বলছিলো ফাজিল।সেদিন আপা ওদের পাঁচজন কে খাইয়ে দিয়েছিলো নিজ হাতে।
আজ তো আপার জন্মদিন ছিলো।নিশাদ গুঁমড়ে কেঁদে উঠে।এদিকে ইকরাম রাহমান বললেন,
''কিরে নিশাদ আইলো না তো।লাবনী যাইয়া খুঁজ ভাইয়ারে।"
হঠাৎ কুঞ্জন বলল,
''আমি ও যাই চল লাবু।"
লাবনী উঠে কুঞ্জনের সাথে হাঁটতে হাঁটতে টাঙ্কির কাছে এলো।নিশাদের গুঁমড়ে কান্নার শব্দে দুজন অনেক ভয় পেয়ে যায়।কারন এভাবে কখনো কাঁদতে দেখেনি।ওরা দুজন এসে নিশাদের পাশে দাঁড়ায়।নিশাদ বুঝতে পেরে চোখ মুছে বলল,
''আসতেছি যা।"
লাবনী বলল,
''ভাইয়া কি হইছে?কান্দতেছো কেন?"
কুঞ্জন ভাইয়ের পিঠে হাত রেখে বলল,
''কি হইছে?"
নিশাদ নাক টেনে বলল,
''কুঞ্জন খুব ছোট ছিলি।তোর হয়ত খেয়াল নেই আপা আমাদের এভাবে মুড়ি খাওয়াতো।আমি যখন আরো ছোট ছিলাম তখন থেকেই।"
লাবনীর মন খুব খারাপ হয়ে গেলো।কাল নাকি বড় আপার জন্মদিন কিন্তু ওরা আজ বারোটার পর কেউ উইশ করতে পারবেনা।কুঞ্জন ভাইকে জড়িয়ে বলল,
''ভাই আব্বা জানলে রাগ করব আসো।"
''কবে যে মানবো আব্বা?কম চেষ্টা করিনি।ওনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল।"
নিশাদ চোখ মুছে বলল।
.........................এদিকে সাইমন অনেকটা সময় নিয়ে সাঁঝকে কল দিয়ে চলেছে।মেয়েটার ফোন বন্ধ কেন আসছে সেটাই বুঝতে পারছেনা।ও ঠিক আছে তো?
ওদের বাসার আর কারোর নম্বর নেই সাইমনের কাছে।ফোনটা রেখে খাটে শুয়ে পড়লো সাইমন। অসহ্য লাগছে ওর।কেমন মেয়েটা?ফোন বন্ধ ওর খেয়াল নেই?রাত বারোটা সাইমনের ফোন কেঁপে উঠে।চোখ আধো খুলে ফোন সামনে নিয়ে দেখলো সাঁঝের নম্বর উঠে আছে।কল টা কেঁটে পরক্ষনে আবার ব্যাক করলো সাইমন।সাঁঝ কল রিসিভ করতেই সাইমন চেঁচিয়ে উঠলো।বলল, 
''কই ছিলা?"
''চিৎকার কেন করছেন?"
''তো কি করবো?কই ছিলা?কতোটা টেনশন হচ্ছিলো।"
আরো দ্বিগুন জোরে ধমক দিলো সাইমন।সাঁঝের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।লোকটা কেন এমন করছে।সাঁঝ গলায় ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
''না জেনে এভাবে রাগারাগীর মানেই হয়না।"
''কেন আপনি কি করছিলেন?"
''আপনি ঠিকমতো কথা বলেন।নাহলে কল কেঁটে দিতে বাধ্য হবো।"
সাইমন এবার একটু চুপ হলো।ওর এভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হচ্ছেনা।শান্ত হয়ে এলো সাইমন বলল, 
''কই ছিলে?ফোন কেন অফ ছিলো?"
''কারেন্ট ছিলো না সারাদিন।"
সাঁঝের গলার ঝাঁঝ অনুভব করতে পারছে সাইমন।সাইমন আবার বলল,
''সরি।এভাবে রেগে যাওয়া ঠিক হয়নি।সত্যি বলতে চিন্তা হচ্ছিলো।"
''হুম।কি করেন?"
''ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।তোমার অপেক্ষা করতে করতে।"
''ওহ।আসলে আমরা কারেন্ট ছিলোনা বলে ছাদে গিয়েছিলাম।"
''ওহ।সাঁঝ কাল দেখা করতে পারবে?"
সাঁঝ কে কিছুটা চিন্তিত লাগলো তারপর ও বলল,
''কখন?"
''রিদ্ধিকে পড়াবে?"
''জি। তিনটায় যাবো।"
''ওহ।তাহলে আমি পাঁচটায় থাকবো।"
''আচ্ছা।"
''হুম।শুনো!! "
''জি।"
''আবার ও সরি।মন খারাপ করোনা।"
সাঁঝ মুচকি হেসে বলল,
''ইটস ওকে।আমিও রেগে গিয়েছিলাম।ইটস ওকে।"
সাইমন হালকা হাসলো।
...................এদিকে বেলার মন টা বেশি একটু ভালনা।সাড়ে এগারোটা বাজে সবে।লোকটা এখনো এলোনা।গোসল সেড়ে চুল মুচ্ছিলো বেলা।শাড়ীর আঁচল ঠিক করে খোঁপায় বাঁধা গামছা টাকো চিপড়ে বারান্দায় মেলে দিলো।শাড়ীর পিছন দিকটা চুলের পানিতে একটু ভিজে গেছে।বেলা সেটা ঢাকার চেষ্টা করতে থাকলো।তখনই রুমে ঢুকলো বিভান  পিছনে কিছু নিয়ে।বেলা ভ্রু কুঁচকে আয়নায় তাকিয়ে  বলল,
''আর ঘরে এলেন কেন?"
বিভান হেসে একটা প্যাকেট খাটে রেখে বেলার কাছে আসতে আসতে বলল, 
''খুব দেরি করলাম?"
''অনেক।কি করলেন এতক্ষন?"
বেলার কোমড় পিছন থেকে জড়িয়ে ওর কাঁধে ঘাড়ে অনবরত চুমু খেয়ে বলল,
''তোমাকে মিস। "
''ফাজলামো কথা বার্তা।মিস করছিলেন বলেই এত জলদি ঘরে এলেন।"
''বেলা বাচ্চামো করোনা।কাজ ছিল।তুৃমি তো বুঝো।"
''হুম।"
বেলা নিজের পেটের ওপর রাখা বিভানের হাত স্পর্শ করলো।বিভান বলল,
''শুনো কাল আমার একটা বিজনেস পার্টি আছে।অফিসের ত্রিশ বছর পুর্তিতে।"
''হুম।"
বিভান হঠাৎ সরে গিয়ে খাটের ওপর থেকে প্যকেটটা এনে বেলাকে দিয়ে বলল,
''দেখো।"
''কি এটা?"
প্যাকেটটা স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করে বেলা।বিভান বলল,
''দেখো আগে।"
বেলা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে সেটার ভেতর ঢুকিয়ে বিভানের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে একটা চকচকে নীল বক্স বের করলো।সেটা খুলে দেখলো একটা ডায়মন্ড নেকলেস।বেলার মুখ থেকে হাসি চলে যায়।মুখ হা হয়ে যায় আর চোখ বড় করে বলল,
''বিভান এটা আমার?"
''হুম।হ্যাপি বার্থডে বেলা।"
বেলার চোখে পানি চকচক করছে।দৌড়ে এসে বিভানকে জড়িয়ে ধরে। বিভান বলল,
''কি হলো কাঁদছো তুমি?"
''উহুম।থ্যাংক ইউ।" 
বিভান ওকে সামনে এনে ওর কপালে ঠোঁট বুলিয়ে দেয়।তারপর ওকে সামনে ফিরিয়ে গলায় হারটা পরিয়ে দেয়।বেলা হাসছিলো সেটা দেখে।বিভান আবার পিছন থেকে জড়িয়ে বলল,
''থ্যাংক ইউ আমার জীবনটাকে পরিপূর্ণ করার জন্য।"
''আপনাকে ও ধন্যবাদ এতো ভালোবাসার জন্য।"
বিভান হেসে বেলার গালে চুমু খায়।বিয়ের পর ভাইবোন মা বাবা থেকে আলাদা হওয়ার পর বেলা কখনোই জন্মদিন পালন করেনি।তাই বিভান ও কিছুনা কিছু উপহার দেয়ই।

!!!!

ইদ্রির ফোন আধঘন্টা যাবৎ বেজে চলছে।ঘুমন্ত চোখ জোড়া যেন খোলার ইচ্ছাপ্রকাশই করছেনা। উপড় হওয়া থেকে সোজা হয়ে শুয়ে চোখজোড়া দুহাতের পাতা দিয়ে ডলে ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টায় ইদ্রি।এরই মাঝে শুনলো ম্যাসেঞ্জার টোন।চোখ আধো খুলে পাশের টিটেবিলটা হাতড়ে ফোন হাতে নেয় ইদ্রি।তারপর স্ক্রীন সোয়াইপ করে ম্যাসেঞ্জারে ঢুকলো।ওর বান্ধুবীর কিমতির ম্যাসেজ দেখে হাই তুললো ইদ্রি।কিমতির আরো একটি একটি ম্যাসেজ আগমনের পথে।ইদ্রি উঠে বসে প্রথম ম্যাসেজটা দেখার চেষ্টা করলো।সেটা ছিলো,
''কই তুই?কল ধরিস না কেন?পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।"
ইদ্রি ম্যাসেজ টাইপ করতে যেতেই দ্বিতীয় ম্যাসেজ ও চলো এলো।তা ছিলো,
''কল দিবো?"
ইদ্রি চটজলদি রিপ্লাই দিলো আমি দিচ্ছি।ওয়েট!!!"
কিছুক্ষনপরই অপরপাশ থেকে কিমতির রাগী কন্ঠ শুনে ঘুমন্তু মুখে হাসলো ইদ্রি।মেয়েটা পারেও আসলে।এত রাগার কি হলো।অনেকটাসময় নিয়ে ঝাড়াঝাড়ি করার পর ইদ্রির কোন জবাব না পেয়ে একটু বিরক্ত হলো কিমতি।তারপর ঝাঁঝালো গলায় বলল,
''কিরে ভোম্বলদাস হয়ে আছিস কেন?চিৎকার করছি একা একা।কেমন বিরক্ত লাগে।"
ইদ্রি হেসে ফেলল।তারপর বলল,
''কুকুরে ঘেউ ঘেউ করলে আমি ও কি কুকুরের মতো করবো?"
কিমতি রেগে বলল,
''কি আমি কুকুর?"
ইদ্রি হাসি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করতে বলল,
''আরে না কথা হলো পাশে একটু কুকুর ডাকছে।তুই কেন কুকুর হতে যাবি?"
''হুম।আচ্ছা শুন ওরা তোর বয়ফ্রেন্ড দেখতে চাইছে।কবে আনবি ভাইয়াকে?"
ইদ্রিকে কিছুটা চিন্তিত মনে হলো।কি করবে ও?কি করে জানাবে ওনাকে? ওনি তো রেগে যাবেন বুঝতে পারলে।ইদ্রি বলল,
''দেখি।ওনি বিজি থাকে তো।"
কিমতি আবার বলল,
''ওরা বলছে কাল পরশুর মধ্যে দেখাতে।সাজিয়ার বাহিরে যাওয়ার সময় হয়ে আসতেছে। ভাইকে দেখা ছাড়া যাবেনা।"
ইদ্রি কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলো।কি করবে ও?না দেখাতে পারলে বড় কেলেংকারী হবে।ইদ্রি বলল,
''আমি দেখা করাবো।দেখি ও কখন ফ্রি হয়।"
''ওকে।শোন জানাবি কিন্তু।"
''আচ্ছা বায়। আমি ফ্রেশ হবো।"
''আচ্ছা বায়।"
ইদ্রি খাট থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।প্রচন্ড দুশ্চিন্তা ওর মনে উঁকি দিচ্ছে। কি করবে ও?ওনাকে নিয়ে বান্ধুবীদের সামনে কিভাবে যাবে ও?কি করবে ও?কেন যে বান্ধুবীদের সামনে ওনাকে নিয়ে যাবে?কি বলে নিয়ে যাবে?ইদ্রির মন চাইছে থাপড়ে নিজের গাল ফাঁটিয়ে ফেলতে।শেষ পর্যন্ত কিনা ওনার নাম নিতে গেলি?কেনরে ইদ্রি?সিঙ্গেল হয়ে থাকতি।মিঙ্গেল হতে কে বলেছিলো তোকে?ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে ইদ্রি।নাস্তার টেবিলে বসতেই দেখলো মা মন খারাপ করে বসে আছে।ইদ্রি বুঝতে পেলোনা মায়ের হলো টা কি?কিছুক্ষন পর মা জিজ্ঞেস করলেন,
''হ্যারে ইদ্রি তোর নিশাদ ভাই আসে না কেন রে?"
ইদ্রি কি বলবে বুঝতে পারছেনা।তখনই ইমতিয়াজ বেরিয়ে এলো।ইদ্রি ভাইকে একবার দেখে মাথা নিচু করে নিলো।মা আবার বলল,
''আমি কি ভুল করলাম ছেলেটার সামনে এভাবে বলে?"
ইমতিয়াজ রুটি মুখে নিয়ে বলল,
''মা বাদ দাও তো।যা হওয়ার হয়েছে।ওকে বুঝাবো আমি।তুমি মা তাই এমন বলেছো।তোমার জায়গায় জুলেখা আন্টি হলে ও এমন বলতো।"
জুলেখা বানুর কথা মনে হতেই ইমতিয়াজের সাঁঝের কথা মনে পড়লো।মেয়েটা এতোটা মিষ্টি।সেদিন বৃষ্টি ভেজা শরীরে অসাধারন লাগছিলো মেয়েটাকে।চুল গুলো মুখের ওপর কেমন এলিয়ে পড়েছিলো।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে ইমতিয়াজের।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ইদ্রির দিকে তাকায় ইমতিয়াজ।তারপর বলল,
''ক্লাশ আছে?"
মাথা নাড়ায় ইদ্রি তারপর বলল,
''ভাইয়া কম্পিউটার শেখা মাঝপথে আটকে গেছে।"
''হুম।ওকে বুঝাবো নে।"
''আচ্ছা।"
ইমতিয়াজ উঠে অফিসের পথে রওনা হয়।
........................সাঁঝ সাইমনের পাশে বসে আছে ওর গাড়িতে।গাড়িটা থেমে আছে সংসদ ভবনের একটু সামনে।ওরা ঘুরতে ঘুরতে এখানে চলে এসেছিলো।পাশে ঝালমুড়ি দেখে সাঁঝ তাকিয়েছিলো সেদিকে।সাইমন কিছুটা বুঝতে পেরে বলল,
''খুব আনহাইজেনিক এগুলো সাঁঝ।"
''আমার না খুব পছন্দ।আমি খেতে চাই।"
''সত্যি খাবে?
সাঁঝ সেদিকে তাকিয়েই মাথা ঝাঁকায়।সাইমন বেরিয়ে বলল,
''চলো আমার সাথে।"
সাঁঝ মৃদু হেসে বেরিয়ে গেলো।দুজনে ঝালমুড়ি কিনে ফিরে আসে গাড়িতে। 
সাইমন আড়চোখে তার সাঁঝমনিকে দেখছে।সাঁঝ ঝালমুড়ি খেয়ে ঠোঁটজোড়া কিছুটা গোল করে নিলো।সাইমন বলল,
''কি হলো বেশি ঝাল?"
সাঁঝ ওর দিকে তাকায়। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
''অনেক।বোম্বায় মরিচ দিয়েছে তো।"
সাইমন হাতের বোতলটা সাঁঝের দিকে বাড়িয়ে বলল,
''ফান্টাটা খেয়ে নাও।ঝাল কমে যাবে।"
সাঁঝ বোতলটা হাতে নিয়ে সেটাকে উপড় করতে  একটু খেয়ে নিলো।সাইমন দেখতে পাচ্ছে সাঁঝের ঠোঁটজোড়া একদম লাল হয়ে আছে।কপালের ওপর ফোঁটাফোঁটা ঘাম জমে আছে।সাইমনের ইচ্ছে হচ্ছে সাঁঝের কপালের ঘাম গুলো হতে পারতো।তাহলে ওর ছোঁয়াতো অন্তত পেতো।কিংবা ওর হাতের টিস্যুটা যা ওর কপাল গাল মুখ স্পর্শ করছে।সাইমন বলল,
''ইস কতো ছাড় পাচ্ছো তুমি!!!"
সাঁঝ বোতলের মুখ লাগাতে লাগাতে পাশে তাকিয়ে বলল,
''কি বললেন?"
''নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করছি চিন্তাও করতে পারবেনা।এতো সুন্দর কেন তুমি?তোমার ঠোঁট তোমার চোখ পাগল করে দিচ্ছে যে আমায়।"
সাঁঝ প্রচুর লজ্জা পেয়ে সামনে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল,
''আপনার মুখ টা এতো অসভ্য কেন?"
সাইমন হেসে বলল,
''তোমার শরীরের ঘ্রান তোমার সৌন্দর্য আমাকে এতো টানে কেন?কেন ইচ্ছে হয় তোমার কাছে আসতে?কেন ইচ্ছে হয় তোমাকে কাছে পেতে?ভালবাসি বলেই তো।"
সাঁঝ কিছু না বলে সাইমনের দিকে একটু তাকিয়ে মুচকি হাসলো।সাইমন হাত বাড়িয়ে আলতো সাঁঝের গাল স্পর্শ করলো।সাঁঝের মুখ থেকে হাসি হারিয়ে গিয়ে একরাশ লজ্জা ভর করলো।সাইমন যেন স্পষ্ট সাঁঝের লজ্জা দেখতে পাচ্ছে ওর মুখে।অজান্তেই সাঁঝের দিকে এগিয়ে এলো সাইমন।সাঁঝ মাথা ঘুরিয়ে নেয়।সাইমনের মুখ সাঁঝের চুলে ডুবে গেলো।"
সাঁঝের চোখজোড়া বুজে গেলো।সাইমনের গরম নিশ্বাস সাঁঝের কানে ঘাড় ওর গলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে।সাইমন ওর কানে চুমু দিয়ে বলল,
''সাঁঝ তুমি তো শেষ বিয়ের পর।আমি এখনই উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি তোমার ঘ্রানে।"
সাঁঝ সাইমনের বুকে হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
''প্লিজ সাইমন এভাবে কাছে আসবেননা।"
সাইমন কিছুটা সরে এলে ও ওর কপালের কোণায় কপাল ঠেঁকিয়ে বলল,
''আমাদের কথা পরিবারকে জানিয়ে দেয়া উচিৎ।"
সাঁঝের বুক ধুপ করে উঠে।কি বলবে ও?ভাইয়া বাবা!!! কি করবে ও?সাইমন এখন ও সাঁঝের দিকে তাকিয়ে ওর জবাবের অপেক্ষায়।সাঁঝ বলল,
''আমার সময় লাগবে।"
সাইমন সাঁঝের হাত আলতো করে ছুঁয়ে বলল,
''যতোটা চাও নাও।তবে আমি তোমাকে চাই যতো দ্রুত সম্ভব।"
সাঁঝ সাইমনের দিকে তাকিয়ে ছিলো তবে শেষ কথাটায় এতোটাই লজ্জা পেলো যে আর তাকাতে পারেনি।মাথা ঘুরিয়ে লজ্জামাখা হাসি দিলো।
.........................হৃদয় ছেলেটার সাথে যতোই কথা হচ্ছিলো হুমায়রা যেন ততোটাই প্রেমে পড়ে যাচ্ছিলো। ছেলেটা ভীষন ভালো,ওর খুব খেয়াল রাখে,ওকে খুশি রাখতে পারে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হুমায়রার ফোন বেজে উঠে।ফোন তুলে ওর মুখের হাসি আরো প্রশ্বস্ত হলো।আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখে কল রিসিভ করে হুমায়রা।তারপর ফিসফিস করে বলল,
''কই ছিলে?"
''ম্যাডাম আমার অপেক্ষায় ছিলে বুঝি?"
''কিছুটা।"
''তা এতো ফিসফিস করছো কেন?"
''আরে বড় ভাইয়া বাসায়।সমস্যা আছে।"
''ওহ।তা জনি বুঝি প্রেম করেনা?"
''একদম না।ভাইয়ার অফিসে গিয়েই টাইম পায়না।"
''হুম।কি করো?"
''রুমে বসে তোমাকে ভাবছিলাম।"
''বাহ ম্যামতো বেশ রোমান্টিক মুডে আজ?"
''জানিনা যাহ!!"
লজ্জা পেয়ে হালকা হেসে বলল হুমায়রা।হৃদয় হেসে বলল,
''কই যাবো বলো? তোমার মাঝেই তো শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।"
হুমায়রার মুখের হাসি চলে গেলো।ও রেগে বলল,
''এমন বললে কল কেঁটে দেবো কিন্তু।আর কথা বলবোনা।"
''না জান রাগ করোনা।বাবু তোমাকে খুব ভালবাসি তো।"
''এসব বাবু টাবু ডাক ভালো লাগেনা।"
''ওকে আর ডাকবোনা।"
হঠাৎ হুমায়রার পিছন থেকে কেউ বলল,
''কিরে পেত্নী ফোনে কার সাথে গপ করিস?"
হুমায়রা ভয় পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো কুঞ্জন দাঁড়ানো।হুমায়রা ফোন কেঁটে বলল,
,''কই?"
''ঐযে বললি এসব ডাক পছন্দ না।"
''সব জায়গায় নাক গলাবি না।"
কুঞ্জন দুষ্টু হেসে বলল,
''আপু ছেলে নাকি রে?"
''একদম না।"
রেগে গেলো হুমায়রা।গলায় ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
''ছেলে হোক মেয়ে হোক তোর কি?নিজের পড়াশুনা নিয়ে থাক।"
''আমার কি মানে?বোন ছেলেদের সাথে কথা বললে ভাই হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে।"
হুমায়রা রেগে বলল,
''যা কিন্তু ভাল্লাগেনা তোর এসব।"
কুঞ্জন উঠে দরজার কাছে গিয়ে পিছে ফিরে বলল, 
''তোর থেকে তো পিচ্চিটা বেশি বুঝের।কর প্রেম কর।ধরা খাইলে বুঝবি আরকি।"
ঘ্যানঘ্যান করতে করতে কুঞ্জন বেরিয়ে গেলো।
......................সেদিন দুপুরে লাঞ্চের পর বিভান বর বেলা রুমে চলে আসে।কিছুটা সময় রেস্ট করে রেডি হতে হবে আবার। সকালে মাকে জানিয়ে দিয়েছিলো পার্টির কথা।মা জানিয়েছিলেন যাবে।রুমে এসে বিভান ওয়াশরুমে চলো যায়।বেলা শুয়ে চোখের ওপর হাত রেখে ঘুমানোর চেষ্টায় ব্যাস্ত।বিভান বেরিয়ে এসে মুখ তোয়ালে দিয়ে মুছে বেলার দিকে তাকায়।বেলাকে অদ্ভুত মায়াবী লাগছে।আজকের শাড়ীটা জর্জেট পড়েছিলো যার কারনে শরীরের আঁকাবাঁকা জায়গা গুলো শাড়ীর ওপর থেকেই বুঝা যাচ্ছে।ছত্রিশ বছর বয়সে ও বেলার পরিবর্তন নেই।না আছে শরীরে আর না চেহারায়।বিভান হাতের তোয়ালেটা মেলে বেলার পাশে এসে বসে।বেলার কোন খবর নেই।বিভান বেলার পেটে হাত রাখতেই বেলা চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে বিভানের দিকে তাকায়।বিভান মুখ বাড়িয়ে বেলার কপালে চুমু দিয়ে বলল, 
''শাড়ীটাতে খুব মানিয়েছে বেলা।"
''থ্যাংক ইউ।হঠাৎ আজ এমন কমপ্লিমেন্ট? "
''সবসময়ই সুন্দর তুৃমি বেলা।তবে আজ নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তোমাকে দেখে।"
বেলা কিছুটা আঁচ করতে পেরে বলল, 
''এখন না বিভান।আর একটু পর তো রেডি ও হতে হবে।"
বিভান কিছু না বলে বেলার পাশে শুয়ে ওর কোমড় চেঁপে ধরে বেলাকে কাছে নিয়ে আসে।বেলা বিভানের হাত সরিয়ে দিতে দিতে বলল,
''প্লিজ এখন না।"
বিভান কিছু না বলে বেলার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।বেলা বলছিলো,
''একদম না বিভান।সরুন।"
বেলার গলায় চুমু খেতে খেতে বিভান বেলার হাত চেঁপে ধরে বলল,
''চুপ থাকো।কোন কথা শুনতে ভালো লাগছেনা।"
বেলা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো।বিভান এবার ওকে একদম জড়িয়ে ধরে বেলার ওপর নিজের ভর কিছুটা ছেড়ে দিয়ে ওর অধর যুগল শুষে নিতে শুরু করে।বেলা ও আর সরাতে পারেনা।নিজেই বিভানের ছোঁয়া মিশে যেতে থাকে।সেদিন বিকেলে দুজনে ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে থাকে।বেলা কমলা বর্নের কাতান শাড়ী পরেছে।শাড়ীটা ওর জন্য বেশ স্মৃতি বহুল কারন ওদের দশম বিবাহবার্ষিকীতে বিভান উপহার দিয়েছিলো।ওদের সেই বিবাহ বার্ষিকী কেঁটে ছিলো ছাদে। সেদিন বিভান ছাদটাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছিলো।বিভান সেদিন ওকে আবার ও প্রপোজ করেছিলো সারাজীবনের জন্য তার হয়ে যেতে।কিন্তু বেলা তো প্রথম থেকেই তারই ছিলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন