রংধনু - পর্ব ৩২ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


নিশাদ শুয়ে ফোন হাতে নিয়েছে।বিভান ভাইয়ের মা বন্দনা আন্টির বদনাম আপা কখনোই করেনি এমনকি কখনো নিজের কষ্ট বুঝতে দেয়নি।তাহলে আজ কি বলল এগুলো সাঁঝ।নিশাদ বেলার নম্বর বের করে।কি করবে?কল দিবে এখন?এখন হয়ত কল দিলে সমস্যা হতে পারে।নিশাদ কল লগ থেকে বেরিয়ে এসে ফোন রেখে দেয় পাশে। বড্ড অস্থির লাগছে আপার কথা শোনার পর থেকে।কি যে হচ্ছে ওখানে কে জানে?বিভান ভাই জানলে নিশ্চয়ই ভীষন কষ্ট পাবেন।আপার সাথে কথা বলতে চায় নিশাদ।তবে সময়টাকে উপযুক্ত মনে হচ্ছেনা।তারপর ও ছোট্ট একটা কল দেয়া যায়।এই ভেবে আবার ও কল লগে ঢুকে বেলার নম্বরে কল দেয় নিশাদ।রিং হচ্ছে তবে কিছুক্ষন পর কেঁটে গেলো।শোয়া থেকে উঠে বসে নিশাদ।আবার ও কল দেয় বোনের নম্বরে।খানিক বাদে কল রিসিভ ও হলো।অপরপাশ থেকে বেলা গলা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে করতে বলল,
''ন....নিশাদ আমি তোকে পরে কল করছি।"
''আপা সব ঠিক আছে?"
''হ্যা।"
নিশাদ অবাক হয়।বোন এখনো বলছে সব ঠিক আছে।অথচ ওর জানামতে ঠিক নেই।কারন বোন যতো নিজেকে স্বাভাবিক রাখুক নিশাদ বুঝতে পারে।
......................বেলা গুঁমড়ে কেঁদে উঠে।লাগেজ সামনে নিয়ে বসে আছে।কাপড় গুছাতে মন টানছেনা ওর।লোকটা ও রুমে নেই।বেলা দরজার দিকে তাকিয়ে বড় নিশ্বাস ফেলে এগুতে থাকে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য।কিন্তু দরজা খোলা মাত্রই বিভান ভিতরে প্রবেশ করলো।বেলা কিছুটা সরে ক্রন্দনরত কন্ঠে বলল,
''কিছু তো খান নি।খাবার রেডি করছি।"
বেলা দাঁত খিঁচে বলল,
''আমার চিন্তা বাদ দিয়ে যা করতে বলেছিলাম জলদি করো।এখানে আর এক মুহূর্ত ও থাকতে পারবোনা।খাওয়া তো দূরের কথা।"
''রাতটা পার হোক।বৃষ্টি হচ্ছে।"
বিভান জোরে চিৎকার করে বলল,
''বেলা আর একটা কথাও না।জলদি প্যাক করো।"
বেলা কিছুটা কেঁপে উঠে তার চিৎকারে।হাতের পিঠ মুখে চেঁপে গুঁমড়ে কেঁদে উঠে।কাপড় গুছাতে শুরু করে।বিভান
বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে।মা কিভাবে পারলো এমন করতে?তেরটা বছর যাবৎ ওর বুকে ক্রামগত ছুরির আঘাত কারছিলো আর বুঝতে পারলোনা।মাকে ও তো খুব ভালবাসতো।কিন্তু মা ওর ভালবাসা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলো। ওর সন্তান সব ছিনিয়ে নিয়েছে।মায়ের কাছে তার সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ কিন্তু বিভান নিজের মায়ের কাছেই মরে যাচ্ছিলো নিজের অজান্তেই।আর বেলা!!!ও কিভাবে পারলো না বলতে?কিভাবে পারলো নিজের সন্তান হারিয়ে চুপ থাকতে?বেলা ওকে মেরে ফেলেছে।ওকে দিনের পর দিন মিথ্যা বলে এসেছে।বিভান ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারে বসে পড়ে।চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে।ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।আজ মরে গেলে হয়ত শান্তি পেতো।যতোদিন বাঁচবে এই কষ্ট গুলো বয়ে বেড়াতে হবে।বিভান বেরিয়ে রুমে আসে।বেলা লাগেজ গুছিয়ে খাটে বসে আছে।গায়ে এখনো ভেজা কাপড় জড়ানো।বেলা বিভানের দিকে তাকায়।চোখজোড়া অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে।বেলা বলল,
''বিভান সরি।মাফ করে দিন প্লিজ।"
''বেলা তোমার কথা শুনতে চাইনা।ভেজা কাপড় পাল্টে নাও।বের হবো।"
বেলা কথা না বাড়িয়ে শাড়ী নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।বাথরুমে গিয়ে কাঁদতে লাগলো বেলা।বিভান শুনতে পাচ্ছে বেলার কান্না তবে এখন ওর কোন অনুভূতিই কাজ করছেনা।পুরো দুনিয়াটাকে নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে ওর।বেলা রেডি হয়ে বেরিয়ে আসে।গায়ে ক্রিম কালারের একটি শাড়ী আর চুল খোঁপা করা।এতক্ষনে বিভান গায়ে পাঞ্জাবী জড়িয়ে নিয়েছে ভেজা কোট পাল্টে।বেলা বের হতেই বিভান ওকে একবার দেখে লাাগেজ দুটো নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।পিছু পিছু বেলা ও বেরিয়ে আসে।ড্রয়িংরুমে বন্দনা আখতারকে দেখতে পেলো ওরা।ছেলেকে লাগেজ সমেত দেখে ওনি উঠে এসে ওর হাত চেঁপে বললেন,
''কই যাস তুই?"
''যেখানে তের বছর আগে যেখানে যাওয়ার দরকার ছিলো।"
বলেই মায়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় বিভান।বন্দনা আখতার পিছন থেকে এসে ছেলের হাত ধরে বললেন,
''পাগল হয়ে গেছোস?কোথা ও যাবিনা।তোর বৌ চলে যাবে।তুই আমার ছেলে।"
বিভান প্রচন্ড রেগে পিছনে ফিরে বলল, 
''আপনার ছেলে আমি?বিশ্বাস হচ্ছেনা।আপনি নিজেই মা হওয়ার যোগ্যতা রাখেননা মিসেস শেখ তাহলে আমি কিভাবে আপনার ছেলে হবো?আর আপনি আমার সন্তানকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছেন।হয়ত আপনি এখনো বুঝবেন না সন্তান হারানোর যন্ত্রনা।কিন্তু একদিন ঠিকই বুঝবেন।তখন বুঝবেন কতোটা নোংরা কাজ করেছিলেন আমার বাচ্চাকে খুন করে।আপনার জন্য আমি বেঁচে ও মরে গেছি।কথা রইলো বেলার চলে যাওয়ার।আমার সাথে এসেছিলো আমার সাথেই যাবে।আজ আপনি ও নিঃসন্তান হয়ে গেলেন যেভাবে আমাকে করেছিলেন।এটাই আপনার জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি।"
বিভান বেলার হাত শক্ত করে ধরে টেনে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।বন্দনা আখতার অনেক ডাকলেন ছেলেকে কিন্তু বিভান ফিরে তাকায়নি।এদিকে বেলার কান্নার গতি বেড়ে গেছে।কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে।গাড়ির দরজা খুলে বেলা কে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে বিভান ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।বেলার খারাপ লাগছে বিভানের এমন আচরন।বিভানের মুখে বাচ্চার কথায় বেলার সেদিন গুলোর কথা মনে আসে।ওরা কতো খুশি ছিলো নতুন মেহমান আসার খবরে।কিন্তু বাচ্চাটা চলে গেলো নিয়ে গেলো সব।বিভান একটা কথাও বলছেনা। গাড়ি চালাচ্ছে অনেক স্পীডে।ভীষন রেগে আছে বিভান।
বেলা জিজ্ঞেস করলো,
''আমরা কই যাচ্ছি?"
বিভান কোন কথা বলছেনা।বেলা বলল,
''কথা বলুন প্লিজ।"
''জাস্ট চুপ থাকো আল্লাহর দোহায়।আমাকে শেষ করে দিয়ে কথা বলতে চাইছো?বহৎ খুব বেলা।"
বেলা কাঁদতে থাকলো।বিভান ওর দিকে তাকাচ্ছে ও না কথা ও বলছেনা।
.............................
সকাল আটটায় নিশাদ কাপড় পাল্টাচ্ছিলো।অফিসে যেতে হবে ওর।তখনই ফোন বেজে উঠে ওর।নিশাদ টাই রেখে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো বেলার কল।নিশাদ কল রিসিভ করতেই শুনলো বেলা কাঁদছে।নিশাদ বুক শীতল হয়ে এলো।দরজা লাগিয়ে বলল,
''কি হলো আপা?"
''নিশাদ আমার সাথেই কেন এমন হয় বলতপ পারবি ভাই?"
''কি হলো আপা?কাঁদছিস কেন?"
বেলা সব খুলে বলল।তারপর বলল, 
''আমরা এখন ওর আরেকটা ফ্ল্যাটে আসছি।বিভান ভেঙ্গে পড়েছে খুব।সে আমার সাথে কথাও বলছেনা ঠিক মতো।তুই ওনার সাথে কথা বলিস প্লিজ।বুঝাস ওনাকে।কিছু খায়নি এখনো।এমন হতে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে ওনি।"
''আপা চিন্তা করিসনা।অফিসের লাঞ্চটাইমে কল দিবো আমি।তুই খেয়েছিস তো?"
''খাওয়া গলা দিয়ে নামবেনা।তুই নাস্তা করে অফিসে যা।"
''জি আপা।"
''নিশাদ!!"
''জি আপা!"
''আব্বা আম্মা ভালো আছে?"
''আলহামদুলিল্লাহ। "
বেলা কল কেঁটে দেয়।নিশাদ নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে যায় অফিসের জন্য।রিক্সায় উঠার পর ইমতিয়াজের কল আসতে থাকে নিশাদের নম্বরে।নিশাদ কল রিসিভ করে বলল,
''বল।"
''তুই আজ ইদ্রিকে কম্পিউটার শিখাতে আসবি।"
''তোকে বললাম না সমস্যার কথা?তারপর ও কেন জোর করিস?"
''দেখ আমি জানি তুই সেদিন মিথ্যা বলছিলি আমার কাছে।আম্মার কথায় কষ্ট পাস না দোস্ত।ওনি তো মা তাই না?আন্টি  হলে ও এই একই কাজটাই করতো তাইনা?দোস্ত প্লিজ ভুলে যা।মনে কষ্ট নিসনা।তুই তো এমন না।তুই তো এতো সহজে কষ্ট পাসনা।"
''ইমতিয়াজ আমার খারাপ লাগেনি আন্টির কথা।ওনি মুরব্বি মানুষ।"
''তাহলে কেন আসছিস না?"
''জানিনা।"
''কোন কথা শুনবো না।আজকেই আসবি তুই।"
''দেখি।"
''দেখিনা।আসতে হবে।কথা আছে তোর সাথে।"
''ওকে।"
ইমতিয়াজ কল কেঁটে দেয়।নিশাদ চিন্তিত মুখে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে নেয়।ওর একেবারেই ভালো লাগছেনা।একদিকে আপা আর অপরদিকে ইদ্রি।মেয়েটার জন্য ওর এমন অনুভূতির কারন আজ পায়নি খুঁজে।ও চায়নি এমন অনুভূতি।কিন্তু অজান্তেই ইদ্রির প্রতি ওর এমন অনুভূতি বড় ভাবায় নিশাদকে।অফিসে পৌছে কাজে মন দেয় নিশাদ।লাঞ্চ আওয়ারে বিভানের নম্বরে কল দেয় নিশাদ।কয়েকটা রিং হওয়ার পর বিভান কল রিসিভ করে বলল,
''হ্যা নিশাদ কেমন আছো?"
''আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা?"
''এইতো আছি।তুমি কই?"
"'অফিসে।অনেকদিন কথা হয়না আপনার সাথে তাই ভাবলাম কল দেই।"
''থ্যাংক ইউ।"
''খাওয়া দাওয়া করছেন?"
''সত্যি বলতে খেতে মন চাইছেনা।"
''কেন ভাই শরীর ভালো না?"
''ভালো তবে জানো কাছের মানুষ থেকে কষ্ট পেলে তখন কিছু করতেই মন চায়না।"
''ভাই কি হয়েছে বলবেন?"
''তুমি জানোনা?সাঁঝ কিছু বলেনি তোমাকে?"
''বলেছে ভাই।আসলে কি বলবো বুঝতে পারছিনা।"
''জানো সবচেয়ে কষ্ট লাগে এটা ভেবে তোমার বোন একটাবার ও জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।"
''ভাই আপা সবসময় বলতো আপনার বাবা নাই।আন্টিকে আপনাকে খুব ভালবাসতেন।"
''নিশাদ যেখানে মা আমার ভালবাসাকে ভালবাসতে পারেনি আমাকে কি ভালবাসবে?"
''ভাই আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।সব ঠিক হয়ে যাবে।আন্টি ও বুঝতে পারবেন শীঘ্রই।"
''নিশাদ আমি ঠিক হওয়ার আশা করছি না।আর বাকি রইলো সব ঠিক হওয়ার কথা।সব শেষ হয়ে গেছে আমি শেষ হয়ে গেছি কি ঠিক হবে?"
''ভাই আসলে সান্তনা দেয়া ছাড়া কিছু করতে পারবোনা।আশা করি খুব শীঘ্রই এই কষ্ট কাঁটিয়ে উঠতে পারবেন।"
''দোয়া করো।বাবা মা আর বাসার সবাই ভালো আছেন?"
''আলহামদুলিল্লাহ। নিজের খেয়াল রাখবেন।"
''হুম।রাখছি নিশাদ।পরে কথা হবে।"
নিশাদ কল রেখে খেতে থাকে।বিভানের কষ্ট কিছু টা হলে বুঝতে পারে নিশাদ।মা বাবা তো সবচেয়ে আপনজন।কিন্তু ওনার মা কিভাবে পারলো।আপাকে তের বছর পর ও ভালবাসতে পারেনি।বিভান ভাইতো নিজের ছেলে ছিলো।অন্তত ওনার জন্য আপাকে মেনে নিতে পারতেন ওনি।কিন্তু নিজ হাতে ছেলেকে শেষ করে দিয়েছেন।আপনার তেরটা বছর নরকে পরিনত করে দিয়েছেন।নিশাদ আর ভাবতে পারেনা।খুব খারাপ লাগছে পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করে।চারিদিক শূন্য লাগছে।নিশাদ চোখ মুছে খেতে থাকে।
..........................ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসতেই সাইমনকে দেখতে পায় সাঁঝ।আজ সে একদম অন্যরকম গেট আপে।গায়ে আকাশী রং এর একটা শার্ট।হাতা গুলো কুনুই পর্যত গুঁজে দেয়া।সাঁঝ ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে।সাঁঝকে কাছে আসতে দেখে সাইমন দুটো হাত বুকে আড়াআড়ি ভাবে বেঁধে নেয়।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটিয়ে বলল,
''কেমন আছো?"
সাঁঝ কাছে চলে আসতেই সাইমন ওর ব্যাগ হাতে নেয়।সাঁঝের চোখ মুখ ভীষন ফুলে আছে।বুঝাই যাচ্ছে কেঁদে ছিলো।সাইমন ওর চেহারা কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলল,
''কেঁদেছিলে কেন? কি হয়েছে?"
''আমরা কি একটু হাঁটতে পারি?বাহিরের বাতাসটা খুব দরকার।গাড়িতে বসলে দমআটকে মরে যাবো।"
সাইমন বেশ অবাক।সাঁঝের গলা ভাঙ্গা।কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছিলো কাঁদতে চায় ও।সাইমন বলল,
''কি হয়েছে?বাসায় কোন সমস্যা?"
''কিছ বলতে পারবোনা।প্লিজ চলুন।"
''দাঁড়াও গাড়িটা লক করে নেই।"
সাইমন গাড়ি লক করে সাঁঝ কে নিয়ে হাঁটতে থাকে।সারা রাস্তায় সাঁঝ চুপ ছিলো।চোখের কোনা ভিজে আছে ওর।হাঁটতে হাঁটতে একটা পার্কে চলে আসে ওরা।সাইমন বলল,
''চলো বসি একটু।"
সাঁঝ চুপচাপ বসে পড়লো।সাইমন ওর হাত ধরে বলল, 
''কি হয়েছে আমাকে বলো?কেঁদেছো কেন?"
''কি বলব?কিছু বলার মতোনা।আচ্ছা পরিবারের অমতে বিয়ে করলে খুব কষ্ট পেতে হয় কি?"
''কে বলল?তবে কেউ পায় আবার কেউ মানিয়ে ও নেয়।হঠাৎ এমন প্রশ্ন? "
''কিছু না।আমার ভালো লাগছেনা।"
সাইমন কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ বলল,
''তোমার জন্য কিছু এনেছিলাম নিশ্চয়ই একটু হলে ও মনটা ভালো হবে।
সাঁঝ অবাক সাইমনের দিকে চেয়ে বলল,
''কি?"
''চোখ বন্ধ করো।"
সাঁঝ বিরক্ত হয়ে চোখ বুজে নেয়।সাইমন হেসে একটা ছোট্ট লাল বক্স বের করে সাঁঝের হাতে রেখে দেয়।তারপর বলল,
''চোখ খুলো।"
সাঁঝ চোখ খুলে জিজ্ঞেস করলো,
''এটা কি?"
''খুলে দেখো।"
সাঁঝ বক্সটা খুলে দেখলো সাদা পাথরের একটা ডায়মন্ড রিং।সাঁঝের চেহারার রং একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।মুখে নেমে এলো কালো মেঘের ছায়া।

!!!!

 ''আপা আমার চাকরী হয়ে গেছে।"
অপর পাশ থেকে বেলার গুঁমড়ে কান্নার শব্দ পেলো আদনান।কিছুটা সময়ের জন্য চুপ হয়ে গেলো আদনান।কাল রাতে বোনের সাথে যা হয়েছিলো তা অনেক বড় ধাক্কা ছিলো বোন আর স্বামীর জন্য।আদনানের চোখের কোনা ভিজে উঠতে শার্টের হাতা দিয়ে মুছে বলল, 
''আপা কাঁদিসনা প্লিজ।"
বেলা চোখ মুছে ভেঙ্গে যাওয়া কন্ঠে বলল,
''কংগ্রাচুলেশানস ভাই।অনেক সফল হ তুই।"
আদনান হাসলো। খুশির হাসি ছিলো ওর মুখে।বেলা বলল,
''কই এখন? "
''আমি অফিসে আপা।ওনারা ডেকে ছিলো কিছু কাজ বুঝানোর জন্য।কাল থেকে জয়েনিং ডেট।"
''ওহ।পোস্ট কি?"
''চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট।"
''মাশাল্লাহ।"
''মন দিয়ে কাজ করবি।বাসায় জানাইছিস?"
''না আপা।আগে তোকেই জানালাম।বাসায় সবাইকে মিষ্টি দিয়ে সারপ্রাইজ দিবো।"
বেলা ম্লান হেসে বলল,
''আচ্ছা ঠিক আছে।"
''তোরা কই এখন?ভাই কই?"
''ওনি অফিসে।আমরা ওনার দিল্লির একটা ফ্ল্যাটে আছি।"
''ওহ।আপা ভাই অনেক কষ্ট পাইছে।ওনার দিকে খেয়াল রাখবি।"
বেলা কিছু বলতে পারেনা।ওর গলা ধরে আসে।নিঃশব্দে কান্না করে দেয়।আদনান ধরে আসা গলায় বলল,
''ওই পাগলি বোন কাঁদবিনা।সব ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের সবার দোয়া আছে।"
বেলা কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,
''আদনান আমার রান্না চুলায়।পরে কথা হচ্ছে।আর শুন সাবধানে চলা ফেরা করবি।আর শুন তোকে কিছু টাকা পাঠালাম।সবার জন্য মার্কেটিং করিস।আব্বা জাননে তুই তোর টাকা দিয়ে দিচ্ছিস।আমার কথা না জানে যেন।"
''আপা জানবেনা।তুই টাকা পাঠালি কেন?"
''দেখ আমার ফেমেলিকে দিচ্ছি অন্য কাউকে না।চাকরী পেয়েছিস বলে নিশাদের মতো করবিনা।টাকা টা ফেরত না দিয়ে যা বললাম তাই করবি।আর শোন দুটো ফোন পাঠিয়েছিলা। এখানের কুরিয়ারে কিছু সমস্যা থাকার কারনে যায়নি।এখন ওরা বলল চলে যাবে দু একদিনের মধ্যে।কালো আর সিলভার কালারের ফোন।তোর যেটা ভালো লাগবে নিস। আর নিশাদকে দিয়ে দিস।"
''আপা পাগল তুই? কি করতেছিস?"
''এতো কথা বলিসনা।এর আগে যা পাঠাতাম সব ফেরত দিতিস।এগুলো আমার জমানো টাকা থেকে দিচ্ছি।"
''আপা জমায় রাখ না।এভাবে খরচ করিস না।"
''আদনান তুই সামনে থাকলে তোকে মারতাম আমি।যা বলছি কর।ফোন কাট কাজ আছে।"
''ওকে আপা।থ্যাংক ইউ সব কিছুর জন্য।"
বেলা কেঁটে দেয়।আদনান পাশে তাকায়।প্রিয়াশা মেয়েটার দেখা পাচ্ছেনা।ওর কি জব হয়নি?আদনান আরো কিছুটা সময় বসে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকে।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বাসার জন্য রওনা হয়।রাস্তায় যমুনা ব্যাংকের সামনে এসে দাঁড়ায়।সেখানে নিজের এ্যাকাউন্টে বেলার পাঠানো ষাট হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়ে মিষ্টির দোকানে আসে।তারপর সেখান থেকে বেশ কিছু মিষ্টি নিয়ে ঘরে ফেরত আসে।বাসায় আব্বা আম্মা ছাড়া কেউ নেই।সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে ব্যাস্ত।হঠাৎ আদনানের ফোনে কল আসে।আদনান ফোন বের করতে দেখলো লাবনীর স্কুলের আয়ার নম্বর।আদনান কিছুটা চিন্তিত হয়ে কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে লাবনী কেঁদে উঠে।আদনান বলল,
''কিরে বাবু কাঁদিস কেন? "
লাবনী নাক টানতে টানতে বলল,
''ভাইয়া আমাকে বাসায় নিয়ে যা।"
বলেই কেঁদে ফেলে লাবনী।আদনান থমকে গেলো।এভাবে কাঁদছে কেন মেয়েটা?আদনান আবার জিজ্ঞেস করলো,
''কি হলো বাবু?কি হইছে?"
''ভাই প্লিজ আসো।"
''কুঞ্জন কই?"
''আগে আয় প্লিজ।"
''ওকে।কাঁদিসনা এক্ষুনি আসছি।"
আদনান মিষ্টি ফ্রিজে রেখে বেরিয়ে আসে।সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে লাবনীর স্কুলের উদ্দেশ্যে।আদনানের ভয় লাগছে।কি হলো?কুঞ্জন কোথায়?লাবনী কেন কাঁদছিলো?আদনান চিৎকার করে বলল,
''এই মিঞা জলদি চালাও।"
আদনানের কথায় মনে হয় খানিকটা বিরক্ত হলো সলিমুল্লাহ। তারপর ও কন্ঠকে স্বাভাবিক করে বলল,
''স্যার হুনেন আমার কথায় গাড়ি স্পীড বাড়াইবোনা।"
''হুম।আসলে আমার খুব তাড়া।ছোট বোনটা স্কুলে। কেমন আছে কে জানে?"
''ঐদিকে শফিকউল্লাহর পোলা অনেক উপদ্রব করতাছে হুনছেননি?"
''সভাপতি শফিকউল্লাহ না?"
''হা।উনার ফোলা কলেজের মাইয়াগোরে বিরক্ত করে খারাপ কাম ও করে মাইয়াগোর লগে।"
আদনানের বুকটা ছ্যাত করে উঠে।লাবনী ঠিক আছে তো?আদনানের বোনের কাছে খুব জলদি পৌছাতে হবে।পনেরমিনিটের মাঝে আদনান পৌছে গেলো লাবনীর স্কুলে।গেটের সামনে গাড়ি থামতেই আদনান গাড়ি থেকে নেমে বলল,
''মামা আপনি একটু দাঁড়ান আমি আবার যাবো।"
''আইচ্ছা।"
আদনান স্কুলের ভেতর ঢুকে দেখে লাবনী একটা বেঞ্চে বসে কাঁদছে।পাশে আয়া বসে ওর চোখমুছে দিচ্ছে আর কি যেন বলছে।আদনান দৌড়ে লাবনীর সামনে দাঁড়ায়।লাবনী উপরে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারেনা।আদনান কে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে।আদনান বোনের মাথায় হাত রেখে বলল , 
''বাবু কি হইছে তোর?"
''ভাইয়া বাসায় চল প্লিজ।"
''বলবি তো কি হলো তোর?খালা কি হইছে ওর?আর আমার ভাই কুঞ্জন কই?"
নুরজাহান বেগম দাঁড়িয়ে বললেন, 
''কুঞ্জনদের ডিবেট ক্লাশের লাইগা গভমেন্ট বয়েজে নিয়া গেছে।আর সভাপতির পোলায় ওরে উল্টাপাল্টা কথা কইছে।"
আদনানের বুক নিমিষে বন্ধ হয়ে আসতে থাকে।বোনকে বলল,
''বাবু চল বাসায়।"
লাবনী ভাইয়ের সাথে হাঁটতে থাকে।কাঁদতে পারছেনা লাবনী।বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।গাড়িতে উঠে বোনকে জড়িয়ে বসে থাকে আদনান।লাবনী ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদছিলো।আদনান বলল, 
''ভাইকে কল দিছিলি?"
''না।ভাইয়ার অফিস তাই দেইনাই।"
ক্রন্দনরত কন্ঠে বলল লাবনী।আদনান বলল,
''কি বলছে ছেলেটা ভাইয়াকে বল।"
লাবনী কিছুটা সরে আসে।মাথা নিচু করে নেয়।কান নাক লাল হয়ে আছে ওর।আদনান বুঝতে পারে বোন লজ্জা পাচ্ছে।আদনান ওকে বুকে জড়িয়ে বলল,
''বলতে হবেনা।সাঁঝকে বলিস আর ছেলেটাকে দেখিয়ে দিস।মেরে শরীরের হাড্ডি ভেঙ্গে দিবো।আমার  বোনের দিকে নজর দেয়া না?"
লাবনী না পারতে হেসে ফেলে কান্নার মাঝেই।আদনান হেসে বলল,
''দেখলি কেমন হাসালাম।চিনিয়ে দিবি কিন্তু।"
''জি ভাইয়া।"
''একটা খবর দিবো তোকে।"
লাবনী ভাইয়ের দিকে তাকায়।কেন যেন মনে হচ্ছে ভাই খুশি।লাবনী জানতে চাইলো,
''কি ভাইয়া?"
''আমার জব হয়ে গেছে।"
লাবনীর মুখ হাসিতে ভরে গেলো।হেসে বলল,
''সত্যি ভাইয়া?"
''একদম সত্যি।কাল থেকে অফিস যাবো।"
''বাসার সবাই জানে?"
''উহুম।শুধু আপা আর তুই জানিস।"
লাবনী ভাইকে জড়িয়ে বলল,
''ভাইয়া এবার গিফট লাগবে আমার।"
''আরে আমি জব পেলাম তুই কেন গিফট চাস?"
হেসে জানতে চাইলো আদনান।লাবনী রেগে যাওয়ার অভিনয় করে বলল,
''তুই জব পেয়েছিস আমাকে ট্রিট দিবিনা?"
''আচ্ছা কি চাস?"
''যা চাইবো দিবিতো?"
''হুম অবশ্যই।আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দিবো।"
''আচ্ছা চিন্তা করে বলবো।"
''ওকে।"
..............................সাইমন সাঁঝের চিন্তিত চেহারা দেখে কিছুটা ভয় পেতে থাকে।সাঁঝের কি ভালো লাগেনি ব্যাপারটা?ওকি সাইমনকে পেতে চায়না?এমন হাজারো চিন্তার আনাগোনা সাইমনের মনে।সাইমন জানতে চাইলো, 
''সাঁঝ কি হলো?কিছু বলো?আমি কি খুব তাড়াহুড়া করছি।"
সাঁঝ ম্লান হাসে।তারপর আংটিটা বক্স থেকে বের করে বলল,
''আমি পরি?"
''হুম পরো তোমার জন্যই তো।"
সাঁঝ হেসে নিজের আঙ্গুলে পরে চেক করে লাগে কিনা।সাইমন আবার ও জিজ্ঞেস করলো,
''বললেনা যে?"
আংটি থেকে চোখ সরিয়ে সাইমনের দিকে তাকায়।সাঁঝের চুল গুলো ওর কপালের কাছে এসে আছে।সাঁঝের চোখ গুলো আজ বিষাদময়।তবুও ভীষন মায়াবী।নাকটা অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে।মৃদু কন্ঠে সাঁঝ প্রশ্ন করে,
''কি বলবো?"
''ঐ যে আমি কি খুব তাড়াহুড়া করছি আমাদের সম্পর্কে?"
সাঁঝ মাথা নেড়ে মৃদু কন্ঠে বলল,
''না।"
সাইমন হেসে আংটিটা নিয়ে সাঁঝের অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিলো।সাঁঝের চোখের কোনা ভিজে আসে।সাইমন হেসে বলল,
''মনে হচ্ছে আংটিটা তৈরি হয়ে ছিলো তোমার জন্যই।মানিয়েছে।"
সাঁঝ মৃদু হাসে।সাইমন সাঁঝের দিকে কিছুসময় তাকিয়ে বলল,
''তুমি কি আমাদের রিলেশন নিয়ে কোনভাবে ইনসিকিউর ফিল করছো?"
সাঁঝ মাথা নাড়ে।সাইমন হেসে সাঁঝের হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
''শুনো যে যাই করুক বা বলুক আমি তোমাকে ছেড়ো যাবোনা।সবসময় তোমার সাথেই থাকবো সব অবস্থাতেই।"
সাঁঝের চোখজোড়া ছলছল করে উঠে।ও গলা ধরা অবস্থায় বলল,
''আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি সাইমন।এতোদিন বুঝতেই পারছিলাম না কিন্তু আজ বলছি ভালবাসি আপনাকে।"
সাইমন সাঁঝের গাল স্পর্শ করে বলল,
''আই লাভ ইউ টু আমার সাঁঝমনি।"
সাঁঝ মুচকি হেসে সাইমনের আরেকটু কাছ ঘেঁষে বসে।সাইমন কানে কানে বলল,
''একটু চুমু খাই?"
সাঁঝ চোখবড় করে তাকায় সাইমনের দিকে।লোকটা কেমন দাঁত বের করে হাসছে।সাঁঝ অভিমানীস্বরে বলল,
''অসভ্য কোথাকার।"
সাইমন হো হো করে হেসে দেয়।সাঁঝ ও হেসে ফেলে।সাইমন হঠাৎ সিরিয়াস মুডে বলল,
''দেখো তোমাকে ছাড়া আমার বেডরুম অপূর্ন আমার ঘর অপূর্ন।সেগুলো পূরন করে দিবে?বিয়ে করবে?"
........................এদিকে ইকরাম রাহমানের পরিবারে খুশির বন্যা বইছে।আদনান মিষ্টি মুখ করালো সবাইকে।নিশাদ ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিলো অনেকটাসময় পর্যন্ত।সাঁঝ মজা করে বলছিলো,
''বুড়ো বয়সে শেষমেষ চাকরীটা পেয়েই গেলি?"
আদনান রেগে বলল,
''হুম পেলাম তো।তুই খুঁজে দিয়েছিস না?"
সাঁজ হেসে ফেললো।আর রাগাতে চাইলোনা ভাইটাকে।আজ কতো খুশি আদনান।সাঁঝ দৌড়ে পাকঘরে এলো।ওর পিছু পিছু লাবনী আর হুমায়রা।সাঁঝ আসার পর থেকেই খেয়াল করছিলো লাবনীর মুখ কালো।সুজি নাড়তে নাড়তে সাঁঝ জিজ্ঞেস করলো,
''মন খারাপ?"
''জি আপু আজকে না ভয় পেয়েছিলাম খুব।"
সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে বোনের দিকে চেয়ে বলল,
''কি হলো?"
''আপু সভাপতির ছেলে আজকে স্কুলে আসছিলো কি ভাষন দেয়ার জন্য।আসার পর থেকেই আমাকে খুব বাজে ইঙ্গিত করছিলো।আমার শরীরের দিকে তাকিয়ে তার বন্ধুদের সাথে কি যেন বলছিলো।আপু আমার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করছিলো।বলছিলাম না দেখে আমার শুরীরে উরু তে চিমটি কেঁটে ছিলো।"
সাঁঝের হাত থেমে যায়।গা কাঁপতে শুরু করে।বোনকে ধরে বলল,
''কুঞ্জন কই ছিলো?"
''ভাইয়া ডিবেট ক্লাশের জন্য গভমেন্ট বয়জে গিয়েছিলো।"
সাঁঝের চোখে পানি চলে আসে।হুমায়রার চোখ ও বড় হয়ে যায়।চিন্তায় পড়ে যায় ও।সাঁঝ বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''শুন ভয় পাসনা।আমাদের ভাইয়ারা আছেনা?আমাদের বাবা আছে।ছায়া আছে।তুই চিন্তা করবিনা বোন কিছু হবেনা।"
এদিকে নিশাদ ঠিক করে ও কাল থেকে ইদ্রিকে পড়াতে যাবে।বিছানায় বসে একটা বই পড়ছিলো নিশাদ।ঠিক তখন আদনান রুমে এসে বলল,
''ভাই কথা ছিলো।"
নিশাদ বই থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
''বল।"
আদনান ভাইয়ের পাশে বসে বলল,
''আপা ষাট হাজার টাকা পাঠিয়েছে।বলল সবার জন্য জামা কিনতে।"
''তুই নিলি কেন?"
''ভাই আপা বাসার বড় মেয়ে।সো আপা দিতেই পারে তাইনা?"
''সেটা না।আপা জব এখন আর করেনা।ভাই দিলে ও টাকা পায় তাইনা?"
''হুম।আপা বলল জমানো টাকা।"
''ওহ বুঝলাম।তা কাল কয়টায় অফিস?"
''দশটায় থাকবো ঐখানে।"
''ওহ ভালো।তা নতুন কিছু শার্ট প্যান্ট কোট কিনে নিস।"
''জি ভাইয়া।ভাই আপা দুটো ফোন পাঠিয়েছে।বলল তোকে আর আমাকে নিতে।"
নিশাদ হেসে বলল,
''আপা পাগল হয়ে গেছে।এতো ঝামেলায় এসব কিনলো কবে?"
''বলল অনেক দিন আগে পাঠাতো।কিন্তু ওদের কুরিয়ার সার্ভিসে কিছু সমস্যা চলছিলো।"
''ওহ।আচ্ছা তুই নিয়ে আসিস তাহলে টাইম করে।"
''আচ্ছা।ভাইয়া!!"
''আবার কি?"
আদনান লাবনীর কথাটা পুরো বলল।নিশাদ চিন্তা ভরা মুখে বলল,
''তোকে কিছু বলেনি?"
''না সাঁঝ কে বলবে বলল।"
''ওকে কুঞ্জনের ওপর ছেড়ে দেয়া যায়না।আমাদের কাউকে যেতে হতো।"
''আমিই যাবো।আমার অফিস দশটায় তো।চলে যাবো ওখান থেকে।"
নিশাদ মাথা নেড়ে বলল,
''উহুম।নতুন চাকরী হেলামী করিসনা।আমি যাওয়ার সময়ে দিয়ে আসবো।"
''ওকে।ভাইয়া আমি তাহলে রুমে গেলাম ওকে?"
''যাহ।"
....................সন্ধ্যা সাতটায় ঘরে ফেরে বিভান।গায়ের শার্টটা ভিজে গেছে একদম।বেলা দরজা খুলতেই বিভানের মলিন চেহারা দেখে মাথা নিচু করে সরে গেলো।বিভান কোন কথাবার্তা ছাড়াই রুমে চলে গেলো।বেলা রুমে এসে কাপড় চোপড় বের করতে যেতেই বিভান আলমারি থেকে ফতুয়া আর ট্রাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।বেলা মন খারাপ করে পাকঘরে এসে খাবার গরম করতে থাকে।এই বাসাটা অতো বড় না ওটার মতো।সাতটা রুমের একটা সুন্দর ফ্ল্যাট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন