ইমতিয়াজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ইদ্রি।ভাইয়ের দরজা বন্ধ।কিছুসময় আগে ডেকেছিলো ভাইয়া কি বলার জন্য যেন।এখন দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।একবার নক করেছিলো ইদ্রি তবে পরে আর করার সাহস পায়নি। ভাই যদি রাগ করে।কিছুক্ষণের মাঝেই দরজা খুলে ইমতিয়াজ। ইদ্রিকে দেখে বলল,
''ভিতরে আয়।"
ইদ্রি মাথা ঝাঁকিয়ে রুমে ঢুকে।খাটের ওপর ল্যাপটপে আলো জ্বলছে।ইদ্রির সামনে দিয়ে হেঁটে ইমতিয়াজ ফ্লোরে বসে খাটের ওপরে রাখা ল্যাপটপটা সামনে টেনে নিতেই ইদ্রি অবাক।সামনের স্ক্রীনে নিশাদ ইদ্রিকে দেখে অবাক।ইদ্রি সেদিকে তাকাতে পারলোনা আর।ভাইকে বলতে লাগলো,
''কিছু লাগতো?"
ইমতিয়াজ হেসে নিশাদ ইদ্রি দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
''এটা ভারি অন্যায়।"
ইদ্রি নিশাদ দুজনেই অবাক দৃষ্টি ছুড়ে দিলো ইমতিয়াজের দিকে।নিশাদ বলল,
''কি অন্যায় দোস্ত?"
ইমতিয়াজ হেসে বলল,
''অন্যায় নয় তো কি বল?একমাত্র ছোটবোন আমার কাছে কতো আবদার করে।এটা লাগবে ওটা লাগবে।কিন্তু যখন যখন নিজের প্রেমিকের কথা এলো সব আবদার হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।না খাওয়ালে ও কোন কমপ্লেইন থাকবেনা।যেভাবে রাখবে সেভাবে থাকবে।বাহ বৈষম্য হয়ে গেলো না ভাইয়ের সাথে?কিরে ইদ্রি?"
ইদ্রি লজ্জা মাটির সাথে মিশে যেতে থাকে তারমানে ভাই ওদের দেখে ফেলেছিলো। এদিকে নিশাদ আর কিছু বলতে পারলোনা।ইমতিয়াজ দুজনের অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে ফেললো।
...................................সময় আপন নিয়মে আবর্তন করতে থাকে..আবর্তনের সাথে জীবনে আসে কিছু বিবর্তন হাসি কান্না পাওয়া না পাওয়ার গল্প....তবুও প্রাণ পাখিটি যতদিন দেহে থাকে মানুষ ছুটে চলে..
প্রোমোশনের পর থেকে নিশাদের ব্যাস্ততা বেড়েছে অনেক..আগে অফিস শেষে ইদ্রির সাথে দেখা করার সুযোগ যাই পেতো এখন হয়ে উঠেনা..কিন্তু সারাদিন মেসেজে আদান প্রদান চলে ওদের..বিশেষ করে নামাজের আর খাবারের ব্যাপারে ইদ্রির রেগুলার এলার্মিং মেসেজ আসতেই থাকে..একদিন তো ইদ্রি রেগে বলেই দিয়েছিলো,
''আপনার যদি খাওয়ার সময় নাইই থাকে তাহলে আপনার অফিসে আমিই চলে আসবো। "
নিশাদ শব্দ করে হেসে ফেললো। হাসি নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করতে করতে বলছিলো,
''কেন?খাওয়াবে নিজের হাতে?"
''সেটাই করবো।আপনি খাওয়ার সময় পাননা তাহলে তো আসতেই হবে।"
''কি হয়ে আসবে ডল?আমার বৌ??"
নিশাদের কথায় ইদ্রির রাগ যেন গলে যায়।সেই সাথে সুন্দর চেহারায় জমা হয় লাজরাঙ্গা এক ছটাক রং।
আজকাল ব্যাপারগুলোতে নিশাদ নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার করছে...ধীরে ধীরে পিচ্চি প্রেমিকাটি তাকে আরো পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে...বড় দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছে তার এই বার্বি ডল টি।এদিকে ইমতিয়াজ বোনকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে পড়াশোনায় গাফিলতি হলে সোজা প্রেম বাতিল..!!!সেই ভয়ে ইদ্রি নিজেও প্রেম আর পড়াশোনা সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে...।
ডিসেম্বর মাস.. ইয়ার এন্ডে এসে ইমতিয়াজ, নিশাদ, সাঁঝ,, সাইমন,আদনান সবাই অফিসে বাৎসরিক হিসাব নিকাশ সামলাতে চরম ব্যাস্ত.দম ফেলার সময় নেই করোর ....এতো ব্যাস্ততার মাঝেও সাইমন নিশাদকে ফোন করে জানিয়েছিল ওর দাদির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার কথা.. নিশাদ নাকচ করেনি বরং খুশি হয়েছে..তবে একটু সময় চেয়েছিলো।বাসার কিছু জিনিস পরিবর্তন করে তবেই দাদিকে আনতে চায় ও..বড় বোনটার বিয়েতে কিছুই করতে পারেনি সেই কষ্ট সাঁঝের বিয়েতে কিছুটা লাঘব করতে চায়.. সমস্যা হলো আজকাল বেলাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা খুব একটা..ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল নিশাদ এসব বিষয়ে... কিন্তু ও বাড়ি ফেরে রাত দশটায় ..তখন নিজেও ক্লান্ত থাকে বেলাও ব্যাস্ত থাকে স্বামী সন্তান নিয়ে..
এই মুহূর্তে সবথেকে জটিল অবস্থায় আছে আদনান..সেদিনের পর থেকে প্রিয়াশা ওকে সম্পূর্ণ এভয়েড করে চলছে...আদনান যেই মেয়ের সাথেই যাই করুক কোন হেলদোল নেই তার...সে কাজ ছাড়া অন্য প্রয়োজনে কথা বলার সুযোগও দেয়না আদনানকে..অফিসের ব্যাস্ততার কারনে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার সুযোগটাও পাচ্ছে না আদনান..কিন্তু ভিতরে একটা চিনচিনে ব্যাথা ওকে খুব যন্ত্রনা দিচ্ছে যা ও লুকিয়ে বেড়াচ্ছে.. তবুও ধরা খেল আজ রাতে নিশাদের কাছে....
আগামীকাল শুক্রবার...বাসার জন্য কিছু নতুন পর্দা আর অন্যান্য জিনিস কিনতে যাবার কথা ওর আর নিশাদের.. খাবারের পর বারান্দায় আপন মনে দাঁড়িয়ে প্রিয়াশার কথা ভাবছিল আদনান...পাশ থেকে হুট করে ভাইয়ের ভরাট কন্ঠ শুনতে পেল আদনান।যতো কষ্টেই থাকুক না কেন এই কন্ঠটা ওর পুরো হৃদয় শীতল করতে যথেষ্ঠ।পাশে তাকিয়ে স্মিত হাসে আদনান।নিশাদ বলল,
"কি রে কি হইছে তোর??? এত উদাস হয়ে গেলি কেন আজকাল..সবাইকে ফাঁকি দিলেও আমাকে দিতে পারবিনা.. বুঝিস তো।"
আদনানের ভেতর টা কেঁপে উঠে।না নিজের আবেগকে প্রকাশ করে ভাইয়ের হাত ধরা খেয়ে যায়।ও ধরা খেতে চায়না।বড় লজ্জা পেতে হবে ওকে।আদনান বিচলিত কন্ঠে বলল
"না না ভাই..উদাস না...আসলে বড় আপার সাথে আর দেখা হলোনা তেরটা বছর এদিকে সাঁঝটাও চলে যাবে.কেমন জানি খালি খালি লাগতেছে..."
''ঝগড়াই করতি সারাদিন।আর এখন ও যাওয়ার আগেই মিস করতে শুরু করলি?"
আদনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
''ভাই ভালবাসাটা কোন অংশেই কম নেই।"
নিশাদ ভরসার হাসি দিয়ে ভাইয়ের কাঁধে হাত ছুঁইয়ে বলল,
"সমস্যা নাই এরপর তোর জন্য বউ নিয়ে আসবো.. খালি খালি লাগা পালাবে জানালা দিয়ে..."
...বলেই জোরে জোরে হাসতে থাকে নিশাদ....আসলে ওর উদ্দেশ্য আদনানের মন ভালো করা..
কিন্তু হলো হিতে বিপরীত..আদনানের মনে হলো "ওর বিয়ে..!!"সেটা কি আদৌ সম্ভব..প্রিয়াশা ছাড়া আর কাউকে আজকাল সে ভাবতেও পারেনা আর তাদের ধর্মটাই ভিন্ন...কোনদিন কি সম্ভব আদনানের পক্ষে সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করা ওকে ছাড়া....!
বিষন্নতা চেপে ও নিশাদকে বললো
"লাইনে তুই আগে..আমার পিছে লাগছিস কেন....আগে নিজে কোরবানি হয়ে যা.. সবাইরে ভাগায় নিজে মজা নিবি নাকি.. এহ...!!!!!!"
নিজের বিয়ের কথা শুনে থতমত খায় নিশাদ..ওই পিচ্চি মেয়েটা আসবে বড় বউ হয়ে এ বাড়ির...!! ভাবতেই কিছুটা লজ্জা পেলো..তবুও সেও নিজের অনুভূতি লুকিয়ে বলে উঠলো
"সে দেখা যাবে পরে...আপাতত ঘুমাতে চল...কাল অনেক কাজ আছে...বাড়ি গোছাতে হবে...সামনের সপ্তাহে সাইমনের দাদি আসবে..শুক্রবার ছাড়া সময় পাইনা বাড়িতে কাজে হেল্প করার......নিজেরই খারাপ লাগে.."
"আচ্ছা ভাইয়া..ঠিক বলছোস...ঠিক আছে আমি যাইতেছি..তুই যা.."
"তাড়াতাড়ি যা..." বলে নিশাদ চলে গেল..সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও ঘুমাতে গেলো আদনান।
............................হুমায়রা আজকাল হৃদয়ের সাথে দেখাও করতে পারছেনা।দুজনে দূরে থেকে হৃদয়ের অসহ্য যন্ত্রনা সহ্য করে যাচ্ছে।হঠাৎ সাঁঝের বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাসায় কাজের চাপ অনেকাংশে বেড়ে গেছে।হুমায়রা আজকাক মনে মনে বড় সাহস পায়।সাঁঝ আপার যেহেতু প্রেম বিয়েতে পরিপূর্ণতা পাচ্ছে সেখানে ওর বিয়েটাও পরিপূর্ণতা পেতে পারে।নিশাদ ভাইকে বুঝালে ভাই নিশ্চয়ই মেনে যাবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বইয়ে কলম চালাচ্ছিলো হুমায়রা।এ্যাকাউনিটিং করতে আজকাল অশান্তি লাগে।একবার সাঁঝের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর নাহলে হৃদয়কে বলবে ওদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে।বিয়েটা হয়ে গেলে পড়াশুনার জন্য কেউ আর চাপ ও দেবেনা।হুমায়রা নিজে নিজে হাসছিলো।আচমকা লাবনী রুমে প্রবেশ করে বলল,
''পেডিকিউর করবো তুই করবি আপু?"
লাবনীর কথায় ফোঁড়ন কাঁটলো হুমায়রা। বলল,
''এহহ যে চেহারা ওনি পেডিকিওর করবে।যাহ সামনে থেকে।"
লাবনী গাল ভেঙ্গচি দিয়ে বলল,
''ফকিন্নি কোথাকার.........."
বলেই লাবনী দৌড়ে চলে গেলো।হুমায়রা পিছু নিচ্ছিলো কিন্তু সামনে ইকরাম রাহমান আসতেই থেমে গিয়ে রুমে এসে বই নিয়ে বসলো।হঠাৎ মনে হলো ফোনটা বাজছে।রিসিভ করে ফিসফিস করে বলল,
''হ্যা হৃদয় কেমন আছো তুমি?"
''ভাল বেবি।তুমি?"
''ভালোই।কই তুমি?"
''সজীবের সাথে বাহিরে কেন?"
''এমনি।আচ্ছা শুনো হৃদয়।"
''বলো সোনা।
''আমরা কিন্তু আপুর বিয়ের পর বিয়ে করবো।"
কিছুটসময়ের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে যায় সব।হুমায়রা কিছুটা শঙ্কিত স্বরে বলল,
''কিছু বলো। "
''বিয়ে!!হ্যা বিয়ে করবো তো অবশ্যই করবো।তোমার বোনের বিয়ের পর আমরাও করবো বিয়ে।"
''সত্যি বলছো তো??"
''অবশ্যই জান। আচ্ছা শুনো পরে কথা বলছি।একটা কল এসেছে।"
''আচ্ছা সবাধানে থেকো।বায়।"
''বায় বেবি।লাভ ইউ। "
হুমায়রা কল কেঁটে মৃদু হেসে অঙ্ক কষায় মন দেয়।
!!!!
শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার জোগাড় আজকাল।অন্যসময় থেকে আজকাল একটু বেশিই ঠান্ডা পড়ছে।সপ্তাহ গড়িয়ে আরেকটা বৃহস্পতিবার রাত আজ।রাত বললে ভুল হবে।রাত নয় সময়টা যেন বেশ উৎসবমুখর হয়ে পড়েছে।ঘরটাকে আজ চিনতে পারবে কিনা এ নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো লাবনী।তবে মনের ভিতর ভীষন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে ওর।নতুন জিনিসপত্র আসবাবপত্র গুলো ওদের বাসাটিকে আরো চমকপ্রদ করে তুলবে। তবে মনের মাঝে যখনই উঁকি দেয় সাঁঝের বিদায়ের কথা তখনই মনটা ভীষন খারাপ হয় সাঁঝের।কান্না পায় অন্তত আপু ওকে বুঝার চেষ্টা করে যেখানে হুমায়রা আপু ভালো ব্যাবহার করেনা।ভাইয়ারা তো বেশির ভাগ সময় বাহিরে থাকে।সাঁঝ আপুর সাথে কিছুটা সময় কাঁটাতে পারতো যা কিছুদিনের মাঝে শেষ হয়ে যাবে। কথা গুলো ভাবতেই অজান্তে কেঁদে ফেলে লাবনী।হঠাৎ কুঞ্জন কোথা থেকে যেন ওর মাথায় চাটি মেরে বলল,
''কাজ কাম নাই তোর?যা কাজ কর।
''তোকে তো। বড় ভাইয়া!!!!"
কুঞ্জন দৌড়ে বেরিয়ে গেলো ওর কথা না শুনে।লাবনী ও দৌড়ে গেলো ভাইয়ের পিছু।
ইকরাম রহমানের বাড়িতে সবাই আজ মহা ব্যাস্ত ....গত সপ্তাহে কিনে আনা জিনিস দিয়ে নিশাদ আর আদনান মিলে পুরো বাসার চেহারাই যেন পাল্টে ফেলেছে...সমগ্র বাসার পর্দা চেঞ্জ, ড্রইং রুমে নতুন শোপিস আর শোকেজ ,ঝাড়বাতি...ডাইনিং টেবিলে নতুন প্লেট বাটি, সাঁঝের আর বাবা মায়ের ঘরেও নতুন চাদর সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আজ এ বাড়িতে বোধহয় অনুষ্ঠানই হবে ছোটখাটো একটা..মেইন দরজার সামনে দুপাশে ছোট্ট টবে দুটো গাছ দরজার উপরে লাগানো কিছু শোপিস পুরো বাসাটাকে ভিতরে বাইরে সম্পূর্ণ যেন পাল্টে দিয়েছে ....জুলেখা বানু, ইকরাম রহমান, সাঁঝকে এসবে হাত দিতেও দেয়নি...বাকি ভাইবোন মিলে পুরো বাসাটাকে গুছিয়ে ফেলেছে.....সাঁঝ অনেকবার চেয়েছিল ওদের সাহায্য করতে কিন্তু নিশাদের চোখ রাঙানি দেখে আর এগোয়নি..পুরো বাসাতে একটা উৎসবমুখর হৈহুল্লোড়ের মাঝে একজনের মন খুব খারাপ এই মুহূর্তে.. সেটা হলো আদনান..এমন না যে ও খুশি না সাঁঝের জন্য কিন্তু তবুও মনের আঙিনায় কারো জন্য ছটফট করেই যাচ্ছে সে....ড্রয়িং রুম গুছানো শেষে প্রচন্ড ক্লান্তি আর হতাশা নিয়ে সোফায় বসে পড়লো আদনান মুখে দুহাত দিয়ে.. ওর ঠিক পাশেই কর্নারে দাঁড়িয়ে এক হাতে ফোন টিপে হাসিমুখে মেসেজ চালাচ্ছিল নিশাদ...
"কবে যে আমার ডলটাকে আনবো আমার বউ করে এ বাড়িতে"
"এখনই চলে আসি??এক কাপড়ে বিয়ে করে ফেলেন..সমস্যা আছে??
"মাইর দিবো ফালতু কথা বললে..আমার বেস্টফ্রেন্ডের ইজ্জত নষ্ট করে কিছু করলে মাইর খাবা আমারই হাতে"
"আচ্ছা তাই না?...ভাইয়া আগে না আমি আগে আপনার কাছে শুনি তো??"
"তোমার ভাইয়া আগে ..সেজন্যই তো সেদিন ছাদে ......আচ্ছা বাদ দাও.. শোন কাল তো কেবল সাঁঝকে দেখতে আসবে পরে প্রোগ্রামের ডেট ফিক্সড হলে দাওয়াত দিবো কেমন??"
"বুঝেছি বুঝেছি কথা ঘুরানো হচ্ছে না?"
হুট্ করে পাশ থেকে লাবনী ডেকে উঠল "নিশাদ ভাইয়া এদিকে আসোনা.."
"হ্যা আসছি.."
বলেই ভিতরে ছুটলো নিশাদ...
এতক্ষন ধরে একই বাসায় একই ঘরে বসে এক ভাই কষ্টে যন্ত্রনায় মনে মনে ছটফট করছিল অন্য ভাই প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে মিটিমিটি হাসছিল.. এত কাছে থাকা স্বত্তেও কেউ টের পেলোনা কার মনে কি ছিল...নিয়তি এমন কেন?? একই সময়ে কাউকে চরম হাসায় আবার কাউকে চরম কষ্ট দেয়...কেন সবাই একসাথে সুখী হতে পারে না.....?"
............................আজ বাসায় ও খুব ভালো রান্না করা হয়েছে।নিশাদ নিজ হাতে খিচুড়ী বসিয়েছিলো।সাঁঝ অবশ্য সাহায্য করতে চেয়েছিলো ভাইয়ের কিন্তু নিশাদ ওকে আসতে দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সাঁঝ সালাদ কেঁটে নেয়।কুঞ্জন বাহিরে চলে গেলো আদনানের দেয়া টাকা নিয়ে।দোকান থেকে কোক আর আটটা আইস্ক্রীম নিয়ে এলো।হুমায়রা এরুম ওরুম হাঁটাহাঁটি করছি।আদনান বলল,
''হুমু যা একটু হেল্প কর আম্মাকে।"
হুমায়রা ভাইয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,
''আমার পড়া আছে।"
বলেই রুমের দরজা লাগালো।আদনান কিছু টা রেগে গেলে ও চুপচাপ ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। জুলেখা বানু ভর্তা বাটছেন।নিশাদ একটু খিচুড়ী নিয়ে আদনানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
''লবন হয়েছে কিনা দেখতো?"
আদনান খিচুড়ি মুখে নিয়ে সন্তুষ্টির শব্দ করে বলল,
''পার্ফেক্ট ভাই।"
নিশাদ মৃদু হেসে খিচুড়ীর ছবি তুলে ইদ্রিকে পাঠিয়ে দিলো মেসেঞ্জারে।লিখে দিলো আমি রান্না করেছি।"
সাথে সাথে ইদ্রির দেয়া অবাক ইমোজি।লিখে পাঠালো বাহ চমৎকার হয়েছে দেখতে।"
নিশাদ হেসে ফোন অফ করে চুলার আঁচ কমালো।সেদিন রাতের ভোজের পর সবাই আইস্ক্রীম খেয়ে নেয় একসাথে।রাতে ঘুমুতে আসে সাঁঝে।আজকাল সময় গুলো কে স্বপ্নের মতো লাগছে ওর।সাইমন কে কিছুদিনের মাঝে পেয়ে যাবে ও ভাবতেই বুক ভরে শান্তির নিশ্বাস টেনে নেয় সাঁঝ।হঠাৎ ফোনের দিকে তাকিয়ে সাঁঝ মৃদু হাসে।সাইমনের মেসেজ এসেছে।মেসেজ ওপেন করে সাঁঝ দেখলো সাইমনের মেসেজটি।
''কাল দুর্দান্ত এক সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য।আই হোপ তোমার ভালো লাগবে।গুড নাইট সুইট ড্রিমস।"
সাঁঝ উত্তর দিলো,
''গভীর আগ্রহে অপেক্ষায় আপনার সারপ্রাইজের জন্য।নিশ্চয়ই আমার জন্য খুব কল্যান কর হবে।শুভরাত্রি।"
সাথে সাইমনের মেসেজ এলো।ভালবাসি সাঁঝবতী।"
সাঁঝ বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়।সারাদিনে কাজ না করে ও শরীরে কেমন এক অজানা ক্লান্তি ভর করেছে।দেহমনে অদ্ভুত শ্রান্তি।চোখজোড়া ভার হয়ে এলো গভীর নিদ্রায়।তবে ওর প্রেমময়ী মন দেখতে শুরু করলো একটা সুখের সংসারের স্বপ্ন ওর আর সাইমনের সংসার।
..................................ঘড়ির কাঁটাগুলো শব্দ করে চলছে।গভীর রাত কোন সাড়াশব্দ নেই। ঝিঁঝিপোকার ডাক শোনা যাচ্ছে।গভীর মায়া জড়িয়ে ডাকছে তারা।রংধনু নিবাসে কেউই জেগে নেই।বাসার পিছনের পরিত্যাক্ত বাড়িটি জ্বলজ্বল করছে।সেদিকে তাকিয়ে আছে হুমায়রা। নালাটি বড় ময়লা হয়ে গেছে।পরিষ্কার করা হয়না বললেই চলে।বাহিরে বেশ শীত।বারান্দার ছোট ছিদ্র গুলো দিয়ে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস ওকে শিহরিত করছে বারবার।তারইমাঝে ফোন বেজে উঠলো ওর।ফোনটাকে হাসি মুখে রিসিভ করে কানে ধরে হুমায়রা।আজ রাতে হৃদয় বলেছিলো কল দিবে সবাই ঘুমিয়ে যাবার পর।তাই হুমায়রা জেগে আছে।ফোন রিসিভ করে মিনমিনিয়ে বলল,
''হ্যা হৃদয় বলো। "
''হায় বেবি কেমন আছো জান?"
''ভালো।তুমি কেমন আছো?তোমার কথা গুলো কেমন যেন শোনা যাচ্ছে।"
''আরে বেবি তোমার কন্ঠের নেশায় একদম মাতাল আমি। কবে যে তোমাকে নিজের বেডে আদর করতে পারবো।"
হুমায়রার কেমন যেন লাগলো।বলে উঠলো,
"এভাবে কেন বলছো?"
''ফান বেবি।ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।হঠাৎ মনে হলো তোমাকে কল দেয়া হয়নি তাই জেগে গেলাম।"
''ঘুমাতে।পরেও কথা হতে পারতো।"
''না বেবি ঘুম হতোনা।মাঝ রাতে ভেঙ্গে যেতো।"
হুমায়রা কিছুটা লজ্জা পেয়ে মৃদু হাসলো।তারপর হঠাৎ ওর মুখ কালো হয়ো গেলো।বলতে লাগলো,
''বড় ভাইয়া পড়াশুনার জন্য শুধু বকে।সাঁঝ আপু লাবনী কুঞ্জন ওরা ভাইয়ের বাধ্য। ওরা ভাইয়ের কথাশুনে একটুও বেয়াদবী করেনা কিন্তু আমার পড়তে ইচ্ছে হয়না। আরে ভাই জোর জবরদস্তি না্কি?যখন মন চাইবে পড়তে বসবো।আর ভালো লাগেনা পড়াশুনা। বেলা আপা পালিয়ে বিয়ে করেছিলো। আমার পড়তে মন চায়না।তোমার সাথে সংসার করতে ইচ্ছা করে।আপুর বিয়ের পর আমরাও বিয়ে করবো। তুমি অন্তত আমাকে ভালোবুঝো ভালোবাসো।আমি তোমার সাথে থাকতে চাই জান।
আপার মতো পালাতে ইচ্ছা করে তোমার সাথে।। দূরে কোথাও "
হুমায়রার এমন রামছাগলের মতো বোকামি পানা দেখে হৃদয় ভাবলো
"এই মাল বাগে আনা খুব সোজা।। একে তুড়ি বাজালেই পাওয়া যাবে তারপর ইচ্ছামতো!!! আহ আর ভাবতে পারলো না হৃদয়।। জেগে উঠলো ভিতরের পৌশবিক পাষন্ড জেদ রাগ।ইশ কবে যে হাতে পাবে এই লোভনীয় শিকারী !! ভেবেই শিউরে উঠলো এক উঠতি বয়সী কাপুরুষ।