পরাণ প্রিয়া - পর্ব ০৬ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


__বিকেলে প্রিয়তা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে সালমা বেগম দাঁড়িয়ে আছে হাতে দুকাপ চা নিয়ে।

প্রিয়তা সালমা বেগমকে যত দেখছে ততই বিস্মিত হচ্ছে।একটা মানুষ কতটা নিঃস্বার্থ হয় তা সালমা বেগমকে না দেখলে সে কখনো বুজতো না।তার নিজের মাও কখনো এইভাবে তাঁর মন বুজেনি।

-তুমি কী করে জানলে আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে?
প্রিয়তার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে,মা হলে সব জানতে হয়।যেদিন তুই নিজে মা হবি সেদিন বুজবি।
হঠাৎই সালমা বেগম উদ্বিগ্ন গলায় বললো,আচ্ছা প্রিয়তা আমি দাদী হচ্ছি কবে? নিবিড়ের সাথে তোর ভাব ভালোবাসা হয়েছে? 
প্রিয়তাকে চুপ থাকতে দেখে,হয়েছে, হয়েছে না হলে আমার ছেলে কাল সন্ধ্যাই ঘরে ফিরে আসে?
কথাটা বলতেই প্রিয়তার নিবিড়ের সেই জোরাল নিশ্বাসগুলো যেনো এখনো কানের কাছে বাজে।এখনো অনুভব হয়।এই যেনো শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় শিহরিত হয়ে উঠছে।
-ওইভাবে আনমনে হয়ে কী ভাবছিস?
প্রিয়তা চমকে উঠে, কী বলেছো তুমি?
-কিছু না।আমি এখানে কিন্তু একটা কাজেও এসেছি।
-প্রিয়তা হাতের থেকে চায়ের কাপ রেখে,কী কাজ বলো? 
-আজ রাতে আমরা সবাই বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছি।তাই তোকে বলতে এসেছি নিবিড়কে ফোন দিয়ে বল আজ বাড়িতে যেনো তাড়াতাড়ি আসে।
প্রিয়তা আমতা আমতা করে,মা ওনার নাম্বার তো আমার কাছে নেই।
-নেই মানে? আর তুই কী ওনি ওনি করছিস? 
ওনি তাকেই বলে যে তোর আপন ঠিক কিন্তু মনের সব কথা বলা যায় না।আর নিজের স্বামী তো এমন একজন মানুষ যার সাথে দেহ মন একসাথেই বেঁধে ফেলা হয়।স্বামী স্ত্রীর বন্ধন সারাজীবন একে উপরে পায়ের উপর ভর করে চলা।চারটি পাকে একসাথে করে দুইটি পা বানিয়ে জীবনের শেষ অবধি পাড়ি দাওয়া।তুই যেমন একটা পা ছাড়া চলতে পারবি না।চলতে হলে কোনো কিছুর অবলম্বন করতে হয়।স্ত্রীর কাছে স্বামীও ঠিক তেমন।এবং স্বামীর কাছেও তাই।স্বামী স্ত্রী এমন হওয়া উচিত যে কথা কাউকে বলা যায় না সেকথা তাকে র্নিবিধায় বলা যায়।
তোর শ্বশুর যদি আমাকে না বুজতেন আমি কখনো এই সংসার কাটিয়ে উঠতে পারতাম না।
প্রিয়তা সালমা বেগমের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছে।আর ছলছল চোখে তাকিয়ে ভাবছে আমার কপালে এমন একজন মানুষ নেই মা।আজ সকালে যা দেখে আসছি তারপরও কী আর বলবো।আমি এই বাড়িতে এসে কী খারাপ করে ফেললাম? 

বাহ্ বাহ্ বেশ ভালো।আমাকে রেখে মা মেয়ে ঠিক আড্ডা দিচ্ছে।ভাবী তুমিও আমাকে ভুলে গেলে?

জুহির কথা শুনে প্রিয়তা মুচকি হেসে,মা আজ কিন্তু জুহির নামে বিচার আছে।
জুহি অবাক হয়ে,আমি আবার কী করলাম? এসেছি একটু রাগ দেখাবো এখন দেখি উল্টো মামলায় ফেঁসে গেছি।

-মা জানো, জুহি আজকে একটা ছেলেকে চোখ মেরেছে।

-আম্মু এইটা ডাহা মিথ্যা কথা। আরে ওই ছেলে তো আমাকেই উল্টো,,,, 
কথাটা শুনে প্রিয়তা আর সালমা বেগম হা হা হা,,, করে হেসে, প্রিয়তা বললো তোমার পেট থেকে কথা বের করার জন্যই উল্টো বললাম।

-ভাবী তুমি কী করে জানলে তুমি তো সেখানে ছিলে না?

-তোমাদের ইশাক স্যার বলেছিলো।

-ওনি দেখেছেন?

-হু।

মোশারফ হোসেন নিবিড়কে ফোন দিয়েই বাড়িতে নিয়ে আসলেন।
নিবিড় আসার সময় সাথে তনুসাকেও নিয়ে আসলো।
তনুসার রাগ এখন নেই বললেই চলে।নিবিড় বুজিয়ে সুজিয়ে তনুসাকে নিজের মতো করে নিলো।

-হাই আংকেল কেমন আছেন?
-ভালোই থাকি।কিন্তু মাঝে মাঝে তোমাকে দেখলে কেমন জানি লাগে।
-কেমন লাগে আংকেল?
মোশারফ হোসেন সেই কথার উত্তর না দিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে,আজ আমার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে।সেটা তুই আগে থেকেই জানিস।তাহলে আসতে এতো দেরি করলি কেনো?
-বাবা অফিসে কাজের অনেক চাপ।সমস্যা নেই আমি এখুনি রেডি হয়ে আসছি।

মোশারফ হোসেন আর কিছু বললেন না।হাতে থাকা বইয়ের দিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। 

-স্যার তাহলে আমি কী চলে যাবো?
-না,তুমিও আমাদের সাথে যাবে তনুসা।
কথাটা শুনে মোশারফ হোসেন, ও যাবে কেনো? বিয়েতে গিয়ে ও কী অফিসের কাজ করবে নাকি?

-বাবা আপনি ভুল বুজছেন।তনুসা তো আমাদের পরিবারেরই একজন তাই না? 
-না একজন নয়।ও শুধু তোর পিএ।অফিসের ঝামেলা অফিসেই রেখে আসবি বাড়িতে নয়।
কথাটা গম্ভীর হয়ে বলে মোশারফ হোসেন উঠে নিজে রেডি হতে গেলেন।

নিবিড় শান্ত গলায় বললো, প্লিজ তনু কিছু মনে করো না।বাবা এইরকম। যাকে পছন্দ করে না তাকে সোজাসাপ্টা কথা বলে।তুমি এইখানে বসো আমি এখুনি আসছি।

-বউয়ের আঁচলের নিচে যাচ্ছো আমাকে এইখানে রেখে?কিন্তু মহারানী তো রুম থেকে বেরিয়ে আসলো না।
-দেখো তুমি ভুল বুজছো।মেয়েটা অনেক ভালো।হয়তো বয়স বেশি কিন্তু দেখতে তা একদম মনে হয় না।
-বাহ্ নিবিড়, তুমি তো দেখছি বউয়ের গুনো গান ভালোই করতে পারো।
-উহু তনু,তোমার এইসব সন্দেহের বাতিক দূর করো।পারলে জুহির কাছে বসো আমি এখুনি আসছি।

নিবিড় রুমে গিয়ে প্রিয়তাকে না দেখে নিজের মতো করে রেডি হয়ে নিলো।
ভালোই হয়েছে মেয়েটা রুমে নেই।কালকের কথাটা মনে হলেই কেমন অস্বস্তি লাগে।কিন্তু এইভাবে কতদিন চলবে? তনু কখনোই এইভাবে মেনে নিবে না।আজ অনেক কষ্ট হয়েছে ওকে বুজাতে।কিন্তু রোজ রোজ এইভাবে বুজানো সম্ভব নয়।
নিবিড় ড্রইংরুমে এসে তনুসাকে না দেখে, তনু,,,,,,
বলতেই সালমা বেগম প্রিয়তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে,নিবিড়! 
নিবিড় অবাক হয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখের পলক পড়লেই যেনো হারিয়ে যাবে। এই যেনো,সুবাসিনী। নিবিড়ের দিকে সালমা বেগম তাকিয়ে  মুচকি মুচকি হাসছে। প্রিয়তা লজ্জায়  যেনো নিবিড়ের দিকে তাকাতে পারছে না।
নিবিড় নিজের অজান্তেই বলে উঠলো,পুরো সুবাসিনী, সুবাসিত অপ্সরী। 

সালমা বেগম আর নিজের হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না হা হা হা করে হাসি দিতেই নিবিড় চমকে উঠে, মা!

-নিবিড় তুই কী এই জগতে আছিস? নাকি প্রিয়তার মাঝে হারিয়েছিস?তোর মা কিন্তু সাজিয়েছে।
নিবিড় সালমা বেগমের কথা ভ্যাবাচেকা খেয়ে, মা তুমি কি যাতা বকো।প্রিয়তা কিন্তু এমনিই সুন্দর তাই না?

-আমি ঠিকি বকছি।এখন চল রাতে ভালো করে দেখে নিস।জুহি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়। এমনিতেই দেরি হয়ে গেলো আমার মেয়েটাকে সাজাতে সাজাতে।

তনুসা জুহির ঘর থেকে এসে, নিবিড়ের দিকে একবার তাকিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকালো।

-আরে প্রিয়তা তুমি কখন এলে?
-এইতো আন্টি কিছুক্ষণ। 
-তাহলে আমাদের সাথেই চলো।
তনুসা কিছু বললো না।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে কেমন আছেন ম্যাম?
আমি তনুসা।স্যারের পিএ।
প্রিয়তা কথাটা শুনেই নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে তাহলে আমি কী ভুল ভেবেছি? ধ্যাৎ আমি কিসব আজে বাজে ভেবে বসে আছি।প্রিয়তা মুচকি হেসে,আমি প্রিয়তা।বাবার ছেলের বউ,জুহির ভাবী,মায়ের মেয়ে।
কথাটা শুনে নিবিড় প্রিয়তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে তনুসা চলো।মা আমি যাচ্ছি। তোমরা আসো।

বিয়ে বাড়িতে এসে মোশারফ হোসেন আনন্দে চোখ মুখ জ্বলজ্বল করছে।বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে প্রিয়তাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন।অবশ্য কয়েকটা দিন পর নিজেই তিনি একটা পার্টি দিবেন প্রিয়তার জন্য।
-নিবিড় প্রিয়তার হাত ধরে ওকে নিয়ে আয়। সালমা চলো।
কথাটা শুনে নিবিড় থমকে গিয়ে বাবা আপনি কী বলছেন?  হাত ধরবো মানে?
মোশারফ হোসেন ধমকিয়ে,কেনো তোর লজ্জা করছে? মেয়েটা নতুন এখানে।হাত ধরে হাঁটলে তোর সমস্যা কী।
নিবিড় মুচকি হেসে,না বাবা এমনি বললাম। প্রিয়তা কই তোমার হাতটা দাও।
প্রিয়তা কথাটা শুনে থ হয়ে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে হাত টেনে নিয়ে, তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেনো? আমি তোমার স্বামী আর তুমি আমাকেই লজ্জা পাচ্ছো?

কথাটা বলতেই তনুসা রাগন্বিত চোখে তাকিয়ে, স্যার আমার যেতে হবে।মা ফোন করেছে। 

নিবিড় তনুসার ব্যাপারটা বুজে, তনুসা আমি তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবো তুমি এখন ভিতরে আসো।

তনুসা কিছু বলার আগেই, ঠিক আছে তনুসা তোমার মা যেহেতু ফোন করেছে আমাদের গাড়িটা নিয়ে যাও।
নিবিড় আর কোনো কথা নয় তোমরা ভিতরে যাও।আমি তনুসাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন