রংধনু - পর্ব ২৩ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


বিভান বেলাকে নিয়ে হাঁটছিলো।বেলার চেহারা বেশ মলিন লাগছে।বিভানের এভাবে স্ত্রীকে ভালো লাগছেনা।বেলা ভীষন চিন্তায় পড়ে গেছে।নিশাদের সাথে কথা বলার পর পরই চিন্তা হতে শুরু করে ওর।ও জানে নিশাদ চুপ থাকার মানুষ নয়।বিভান স্ত্রীর দিকে তাকায়।বেলাকে কথা গুলো কিভাবে জানাবে ও?ও যে ভীষন ভেঙ্গে পড়বে।বিভানের ও বেশ চিন্তা হচ্ছে।না জানে ওখানকার কি খবর?
নিশাদ ও নাকি অসুস্থ হয়ে গেছে।বিভান হঠাৎ থেমে গেলো।বেলার হাতে টান পড়ায় পিছনে তাকায় ও।বেলা ভ্রু কুঁচকে বেলাকে দেখছে।বেলা বলল,

''কি হলো?দাঁড়িয়ে গেলেন যে?"

বিভান নিজেকে সামলায়।নাহ সব স্বাভাবিক হলে বেলাকে জানাবে।বিভান মুখে ম্লান হাসি এনে বলল,

''চলো যাই।"
''হুম।সব ঠিক আছে তো?"
''হুম ঠিক আছে বলেছিলাম তো।"

বেলা মেনে নেয় লোকটার কথা।এদিকে কুঞ্জনের পাশে হুমায়রাকে ছেড়ে সবাই নিশাদের রুমে চলে আসে।লাবনীর কথায় সবাই ভয় পেয়ে গেছিলো।হুমায়রা কে জুলেখা বানু বলল, 

''কুঞ্জনের পাশে থাক।তোর ভাইরে দেইখা আই।"

সাঁঝ আর বাকিরা চলে এলো নিশাদের রুমে।নিশাদের নিস্তেজ আর শীতল।জুলেখা বানু দৌড়ে ছেলের পাশে বসে ওর পিঠে গায়ে  হাত বুলিয়ে কেঁদে বলতে লাগলো,

''সাঁঝ সাঁঝরে আমার আব্বার শরীর এতো ঠান্ডা কেন?"

সাঁঝ বলল,

''আম্মা কিছু হবেনা।চিন্তা কইরোনা।আব্বা ডাক্তার ডাকো তো।"

ইকরাম রাহমান আসি বলে উঠে বেরিয়ে গেলো।সাঁঝ মগে পানি নিয়ে এলো।জুলেখা বানু ছেলের হাত পা পানি দিয়ে মুছে দিচ্ছে সাঁঝ ভাই হাতের পাতা ডলে দিচ্ছে।পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে।কোন খবর নেই।নিশাদের দু গাল ভেজা ছিলো।ডান হাতমুঠ করা।সাঁঝ সে হাতটা খু্ব কষ্টে খুলল।ডাক্তার আসার পর বিভানের আবার ও কল আসে।বেলার থেকে দূরে সরে এসে সাঁঝকে কল দিয়েছে।সাঁঝ চোখ মুছে কল রিসিভ করে।অপরপাশ থেকে বিভান জিজ্ঞেস করে,

''বাসার কি অবস্থা সাঁঝ?"
''ভালো না ভাইয়া।"
''কেন কি হলো?কুঞ্জনের অবস্থা কেমন?"
''ভাইয়া কুঞ্জন বড় ভাইয়া একজন ও ভালো নাই।"
''নিশাদের কি হলো?"
''ভাইয়া কুঞ্জনের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়।কোন খবর নাই।লাবনী এসে বলল ভাইয়াকে ডাকার পর ও উঠে না হাত পা ঠান্ডা একদম।"
''ওহ মাই গড!!ডাক্তার ডাকোনি?"
''আব্বা গেলো আনতে।"

বিভানের কন্ঠে কষ্টের ছোঁয়া পেলো সাঁঝ।বিভান বলল,

''ঠিক হয়ে যাবে।মাকে সাপোর্ট দাও।আদনান আসেনি? "
''না।সামনের সপ্তাহে আসবে।"
''ওহ।আচ্ছা রাখছি।পরে আবার কল দিবো।"
''জি ভাইয়া।"

বিভান কথা শেষ করে বেলা কে এসে বলেছিলো,

'' চলো সামনে গিয়ে হাঁটতে থাকি।জুলির কাজ শেষ হতে দেরি হবে।"

বেলার কন্ঠে অস্থিরতার ছোঁয়া।উঠে দাঁড়িয়ে বিভানের হাত চেঁপে বলল,

''কার সাথে 
''কার সাথে কথা বললেন?সাঁঝ তাইনা?সব ঠিক আছেনা বিভান?"
''সব ঠিক আছে।আমি অন্য জায়গায় কথা বললাম।চলো।"

বেলা বিনা বাক্য ব্যায়ে বিভানের সাথে হাঁটতে থাকে।এদিকে ডাক্তার জানালো অতিরিক্ত টেনশনের কারনে প্রেসার লো ছিলো তার ওপর কুঞ্জনকে মেরে নিজে ও শক পেয়েছিলো।তাই এমন হতে পারে।ওর প্রেশার খুব বেশি লো।ডাক্তার চলে যাওয়ার পর নিশাদকে অজ্ঞান অবস্থায় পানি খাওয়ায় মা।পানি গলায় যেতেই কেশে উঠে ও কিন্তু চোখ খুলেনি।নিশাদের চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে। জুলেখা বানু ছেলের চোখ মুছে কেঁদে কেঁদে বললেন,

''ভাইরে মারলিই কেন নিজে ও অসুস্থ হয়া গেলি কেন আব্বা?"

সাঁঝ কুঞ্জনকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলো।প্রচন্ড জ্বর ওর শরীরে।সাঁঝ ওর মাথার চুল হাতাচ্ছিলো।কুঞ্জন চোখ পিটপিট করে খুলে।সাঁঝ রেগে তাকিয়ে আছে।কুঞ্জন ভয়ে কেঁদে বলল,

''আপু সরি মাফ করে দে ভুল হয়ে গেছে।আমার পুরা শরীর জ্বলতেছে যেন মরিচ লাগায় দিছে কেউ।আমার অনেক কষ্ট হইতেছে আপু।"

সাঁঝের কান্না চলে আসে।জ্বলজ্বলে চোখে বলল,

''সিগারেট কেন ধরতে গেলি?কতো খারাপ একজনের শরীরের জন্য জানোস?মানুষের ফুসফুসের অনেক ক্ষতি করে।"
''খেতে চাইনি।ওরা জোর করে বলল এক টান দে।ঐসময়ে ম্যাম দেখে ফেললো।"
''সমস্যা নাই।সব ঠিক হয়ে যাবে।"
''আপু!!"

সাঁঝ অন্যমনষ্ক ভাবে বলল,

''হুম।"
''ভাইয়া খুব রেগে আছে তাইনা?"
''সে অবস্থাই নাই ভাইয়ার।"
''কেন?"
''অজ্ঞানের মতো হয়ে আছে।প্রেশার অনেক হাই।"
''ভাইয়া যে কেমনে জানলো?"
''কেমনে বলবো?ঘুমা তুই।ভাল হয়ে যাবি দ্রুত।"

এদিকে ইমতিয়াজ অনেকবার কল দিয়েছিলো নিশাদের নম্বরে কিন্তু কেউ ধরেনি।এদিকে বিভান  বেলা আর জুলিকে নিয়ে ফিরে আসে বিকেলে।ওরা লাঞ্চ করে যে যার মতো রেস্ট করছিলো।বেলাকে নিয়ে শুয়ে আছে বিভান।বিভানের সাঁঝকে একবার কল দেয়া অনেক প্রয়োজন।কিন্তু বেলা পাশে কিভাবে কথা বলবে?বিভান হঠাৎ বলল,

''রুমে থাকো আমি নিচ থেকে একটু আসি।"

বেলা অবাক হয়ে ওর হাত ধরে বলল, 

''কই যাবেন?"
''কাজ আছে।বেশিসময় লাগবেনা।তুমি বসো।"
''আচ্ছা জলদি আসবেন।"
''হুম।"

বিভান বেরিয়ে আসে তবে নিচে যায়নি কারন জুলির ওপর বিশ্বাস নেই।বেলাকে একা পেয়ে কি না কি শুনিয়ে দেয়।
তাই রুম থেকে  বেরিয়ে একটু দূরে এসে দাঁড়িয়ে সাঁঝকে কে কল দেয়।সাঁঝ জানায় সবটা।বিভান কথা শেষ করে রুমে ফিরে আসে।বেলাকে বলা দরকার।পরে জানলে বেশি কষ্ট হবে ওর।এখন যেহেতু সব মোটামুটি  নিয়ন্ত্রনে এসেছে বলাই যায়।বিভান বেলার পাশে এসে বসে।তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

''বেলা কিছু কথা ছিলো।তোমাকে  বলা হয়নি তখন।বাহিরে ছিলাম তাই।"
''কি? "

বিভান হালকা গলা পরিষ্কার করে বলল, 

''নিশাদ কুঞ্জনকে মেরেছিলো স্কেল দিয়ে।তারপর নিশাদের প্রেশার লো হয়ে গেছে।"

বেলা আঁৎকে উঠে।ও চিৎকার করে বলল,

''এখন বলছেন আপনি এসব?সাঁঝের সাথে এতোবার কথা বললেন একটাবার ও জানান নাই?"

বিভান বেলাকে জড়িয়ে কাছে এনে বলল,

''তুমি এমনিতেই চিন্তা করছিলে তারওপর বাহিরে ছিলাম আমরা। ওরা ঠিক আছে এখন।চিনৃতার কারন নেই।কিন্তু বেলাকে বুঝানো কঠিন কাঁদতে লাগলো ও।
বিভান অনেক বলে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।এদিকে সাঁঝ রাত বারোটার পর রুমে এসে দেখলো সাইমনের নম্বর থেকে ১০০+ মিসড কল উঠে আছে।সাঁঝ হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় শুয়ে ফোন হাতে নেয়।সাইমন একটা মেসেজ ও পাঠিয়েছিলো।সেটা ছিলো,

''এতো ওয়েট করলাম তোমার।কই ছিলে?বলে যাবার দরকার ছিলোনা?একঘন্টার ওপর দাঁড়ায় অপেক্ষা করলাম।তুমি আসলেইনা।কাল আসো খবর আছে।"

সাঁঝ শুয়ে পড়ে।সেদিনের কথাটার পর ওর কেমন যেন লাগছিলো।লোকটা প্রথমে মজা করলে ও লাস্টে যেভাবে বলল ওর ভালো লাগছিলোনা।কেমন এক অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছিলো।পরদিন শনিবার।সাঁঝ বাসার কাজ করে বিকেলে রিদ্ধিকে পড়াতে যায়।লিফটে ঢুকতেই সাইমনকে দেখেই বেরিয়ে গেলো সাঁঝ।সাইমন ও বেরিয়ে গেলো। দৌড়ে যেতে লাগলো ওর পিছু পিছু।সাঁঝ সিড়ি বেয়ে উঠে যেতে লাগে।সাইমন হঠাৎ ওর ওর হাত টেনে সামনে ফিরায়।সাঁঝ রেগে বলল,

''এভাবে হাত ধরার মানে কি?ছাড়েন।"
''সাঁঝ কি হলো তোমার?এমন অদ্ভুত আচরনের মানে কি?"
''আরে আপনার সাথে সারাদিন কথা বলতে হবে? আপনার সাথেই ঘরে যেতে হবে?আমার ভালো লাগেনা।ছাড়েন আমাকে।"

 সাইমন অবাক।সাঁঝের এমন আচরন আগে দেখেনি ও।সাইমন বলল,

''সাঁঝ কি হয়েছে?কোন ভুল হয়েছে আমার?"
''ভুল হবে কেন আশ্চর্য?আরে আমরা একে অপরকে জাস্ট চিনি।ন
আর কিছুইনা।কিছু নেই।আপনি আমাকে বললেন ড্রপ করে দেবেন।করে দিলেন কয়েকদিন।এরপর আপনি যা তা মজা করেন।সব কিছু নেয়া যায়না।প্লিজ আর সামনে আসবেননা আমার।আমার ফেমিলি আছে ফেমিলি গত প্রবলেম ও আছে।আমাকে প্লিজ আমার অবস্থায় ছেড়ে দিন।"
''সেদিনকার কথাটা নিয়ে রাগ।একটাবার ও জানানোর প্রয়োজন ও বোধ করোনি।ভালো!!আমিই বেশি ক্লোজ হতে চেয়েছিলাম সরি।"

কথা গুলো বলে সাইমন নিচে নেমে গেলো।সাঁঝের চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করে উঠে।ও এতোগুলো কি বলে ফেললো এই লোকটাকে?

!!!!

সেদিন রাতটা নির্ঘুম কেঁটে গিয়েছিলো ইদ্রির।চোখজোড়া বড় ভার লাগছিলো।কোনমতেই চোখ মেলাতে পারছিলোনা ও।খুব কষ্টে শোয়া থেকে উঠে বসে ফোন হাতে নেয়।এ নিয়ে নিশাদকে ২০ বার কল দিয়েছে।আর দিলো না ও।সে ও কল ব্যাক করেনি।ইদ্রি শুনেছে নিশাদ নাকি অসুস্থ।প্রেশার ও অনেক লো।ইদ্রির ভীষন ইচ্ছে হচ্ছে লোকটার পাশে গিয়ে বসে তার মাথার চুলে হাত বুলাতে।ইদ্রি সারাটারাত না ঘুমিয়েই কাঁটিয়ে দিয়েছিলো।পরদিন সকালে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো ইমতিয়াজ রেডি হচ্ছে।কোথায় যেন যাবে?ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ায় ইদ্রি।ইমতিয়াজ চুলে চিরুনী চালাতে চালাতে বলল,
''কিরে?"
''কিছুনা ভাইয়া।কোথাও যাচ্ছিস?"
''হা কেন রে?"
''এমনি।কই যাও?"
''কাজে যাচ্ছি।একটি মিটিং আছে সেখানে।"
''ওহ।"
ইদ্রি আর কিছু বললনা।ওর মনটা কেমন কেমন করছে নিশাদের জন্য। ইমতিয়াজ বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে  ইদ্রি নাস্তা করছিলো।নাস্তা শেষে রুমে এসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। কিন্তু কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা।কিছুক্ষন গান শোনার ও চেষ্টা করেছিলো সফল হয়নি।তাই রেডি হয়ে নেয়।পাশে ধানমন্ডি লেক নামে একটা পার্ক আছে।সেখানে গিয়ে কিছুক্ষন হাঁটলে হয়ত ভালো লাগবে।রেডি হয়ে মাকে বলে বেরিয়ে আসে ইদ্রি।লেকে হাঁটতে থাকে।অসংখ্য কপোত কপোতি বসে আছে জড়াজড়ি করে।ইদ্রির এই ব্যাপার গুলো বাজে লাগে।ভালবাসা দেখা ঘরে গিয়ে দেখা না।বাহিরে এসে লোক দেখানোর কি হলো?ইদ্রি একটা বেঞ্চে এসে বসে। সামনে লেকের পানিকে কি সুন্দর লাগছে।
ইদ্রি ফোনটা বের করে নিশাদের নম্বর দেখে।সে একটাবার ও কল দেয়নি।কেমন আছে কে জানে?যখনই নিশাদকে দেখে বেশ মায়া হয় ওর।লোকটার চেহারাটাই এত মায়াভরা।ইদ্রি আবার ও কল দেয় নিশাদের নম্বরে।
নিশাদ শোয়া অবস্থায় ফোনটা দেখতে পায় ইদ্রির কল।মেয়েটার কাল অনেক গুলো কল এসেছিলো তবে রিসিভ করতে পারেনি ও।নিশাদ ফোনটা উঠিয়ে রিসিভ করতে নেয় কিন্তু এতোটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে যে ফোন টা পড়ে গেলো হাত থেকে।
........................................................................................
সকাল থেকেই বেলার মন ভীষন খারাপ।তেমন কথাই বলেনি বিভানের সাথে।নিশাদের সাথে কথা হয়নি একটা বার ও।কুঞ্জনের সাথে ও কথা হচ্ছেনা আর না হচ্ছে সাঁঝ কিংবা আর কারোর সাথে।
হুমায়রার নম্বরে কল লাগায় বেলা।কল ওয়েটিং আসছে।বেলা ফোন কেঁটে দাঁড়িয়ে থাকে।সাঁঝকে কল দিলে কাজ নেই এখন।ও পড়াতে গেছে।কিছুক্ষন পরই হুমায়রার নম্বর থেকে কল আসে।বেলা কল কেঁটে আবার ও কল দেয়।হুমায়রা ফোন রিসিভ করে।বেলা গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
''কেমন আছিস?"
''এইতো আপা আছি।তোর কি খবর?"
''এই আছি।কুঞ্জন নিশাদ কেমন আছে?নিশাদকে কত কল দিলাম একবার ও কল রিসিভ করলোনা।"
''আপা ভাইয়ার শরীর খুব দূর্বল।হাত উঠিয়ে খেতে পারছেনা।কুঞ্জনের খুব জ্বর।"
''জ্বর এসেগেছে?"
বেলার ভীষন খারাপ লাগতে থাকে।হুমায়রা বলল,
''হ্যা আপা।ভাইয়া অনেক মারছে।রক্ত বের হয়ে গেছিলো শরীর থেকে।"
''কি?"
''জি আপু!!!"
বেলা কেঁদে ফেলে।বিভান সাঁঝ কেউই এতোটা বলেনি।বেলার ভীষন খারপ লাগছে শুনে।হুমায়রা বলল,
''আপা চিন্তা করিস না।ভালো হয়ে যাবে ওরা।কুঞ্জনের সাথে কথা বলবি?"
''দে।কান্নাজড়িত কন্ঠে।"
হুমায়রা ফোনটা কুঞ্জনের কানে ধরিয়ে দিলো।কুঞ্জন বলতে থাকলো,
''আসসালামু আলাইকুম আপা।"
''ওয়ালাইকুম আসসালাম।শরীর কেমন এখন?"
''ভালো না আপা।তোরা কেমন আছিস?"
বেলা খানিকটা রেগে বলল, 
''তোদের এসব শুনলে ভালো থাকা যায়নাকি?বড় হয়েছিস না?বন্ধুরা যা বলে তাই করতে হবে নাকি?ওরা বাথরুম করলে খেয়ে ফেলবি তুই?দেখলি ভাই কতো কষ্ট পেলো।তোকে মেরে ও নিজেও তো ভালো নেই।কেন করলি এমনটা?"
কুঞ্জন কান্না করে দেয়।গুঁমড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
''আপা আমি ভালো হয়ে যাবো।প্লিজ মাফ করে দিস আমাকে।আমি সত্যি বুঝতে পারিনি।"
''হুম।এখন পড়াশুনায় মন দে।ইন্টারে উঠেছিস।পড়াশুনা করতে হবে অনেক।খেয়েছিস?"
''জি আপা।তুই?"
''খাবো।একটু পরে বের হবো তো।নিচে গিয়ে খাবো।"
''ওহ।ভাইয়া কই?"
''ও গোসলে।আচ্ছা কুঞ্জন ভাইয়ার সাথে কথা বলে নিস।এখন ও অবশ্যই রেগে নেই।ঠিক আছে?"
''জি আপা।"
কথা শেষ করে বেলা দাঁড়িয়ে থাকে জানালার দিকে মুখ করে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে বিভান। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলার দিকে তাকায়।তারপর গলা পরিষ্কার করে বলল,
''আজ জুলিকে নাকি একাই পাঠিয়ে দেই।আমরা দুজন একা থাকি।"
বেলা পিছনে না ফিরেই অভিমানী কন্ঠে বলল,
''যে কাজে এসেছেন সেই কাজ করুন।আমার এখন কোন কথা বলতে মন চাইছে না।"
বিভান অবাক।হঠাৎ এমন করছে কেন বেলা।সকালে তো মন খারাপ ছিলো ঠিকই কিন্তু এতো রেগে ছিলো না।এখন ওর কথায় মনে হচ্ছে বিভানের ওপর রেগে ও।বিভান তোয়ালে টা মেলে বেলার পিছে এসে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধের চুল সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে বলল,
''কি হলো আমার বেলারানীর?"
বেলা সরে এসে বলল,
''এখন ঢং দেখাচ্ছেন কেন এতো?ভালোই তো কথা লুকাতে শিখে গেছেন।কাহিনী কি?আমার বোন ও তো কম না।"
বিভান এবার সত্যিই ভীষন অবাক।বেলা কি বলতে চাইছে হঠাৎ।কি কথা লুকালো ও?আর কোন বোনের কথা বলতে চাইছে বেলা?
.....................................................................................
চিটাংগে আজ পঁচিশ দিন হলো।আদনানের শরীরের একটু উন্নতি হয়েছে তবে সকাল থেকে পেটটা আবার ও ব্যাথা করছে।সেটার ব্যাখ্যা নেই ওর কাছে।কারন তেমন কিছুই খায়নি ও।আদনান পেট চেঁপে ধরে বাথরুমে চলে যায়।কাজ সেড়ে রুমে এসে কাজের জন্য রেডি হতে শুরু করে।কাল সাঁঝের সাথে কথা হয়েছিলো ওর।যা শুনলো মন মেজাজ অনেকটাই বিগড়ে আছে।আদনান কখনো সিগারেট ছুঁয়ে ও দেখেনি।আব্বা আর নিশাদ খেলে ও নিজে কখনো ধরে দেখেনি।ও নিজে ও কুঞ্জনের বয়স পেরিয়ে এসেছিলো।এমন বন্ধুদের পাল্লায় ও কখনো পড়তে হয়নি ওকে।আব্বা আম্মা ও নাকি জানেন না।ঘরের পরিস্থিতিতে ওনারা ও কিছু জানতে চাননি।আব্বা ভীষন কষ্ট পাবেন শুনলে তা আদনান জানে।কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক।কুঞ্জন ছোট মানুষ।এ বয়সে সিগারেট ধরা ওকে মানায়না।সব কিছুর একটা বয়স আছে।আদনান রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়।আজ তেমন কাজের চাপ নেই।তবে কম ও নেই।এখন ডাইনিং এ যাচ্ছে নাস্তার জন্য তারপর কাজে যাবে।
.....................................................................................
এদিকে সাঁঝ কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে।মন একদমই ভালো নেই।বাসার এমন পরিস্থিতি তারওপর কারোর অনুপস্থিতি খুব কষ্ট দিচ্ছে ওকে।অজান্তে কাউকে খুব করে চাচ্ছে ও।রিদ্ধিদের বাসার পথে রওনা হলো ও।হাতে বিশটাকা আছে এখন চলে যেতে পারবে।আসার জন্য কোন চিন্তাই করতে হয়না আজকাল।সাইমনই ওকে ড্রপ করে দেয়।রিদ্ধিদের বাসায় পৌছে সিয়াম ভাইয়ের সাথে দেখা হলো সাঁঝের।সিয়াম ওকে দেখেই থামিয়ে বলল,
''কেমন আছো সাঁঝ?"
''আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আপনি?"
''আলহামদুলিল্লাহ। লিফট ভালো হয়ে গেছে কিন্তু নির্ভয়ে উঠতে পারবা।"
সাঁঝ একটু হেসে মাথা নাড়ায়।সিয়াম বলল,
''একদিন বাসায় এসো জমিয়ে কথা বলবো।"
''আসবো ভাইয়া।"
সাঁঝ রিদ্ধিদের বাসায় এসে পড়াতে শুরু করে।পড়ানো শেষে বেরিয়ে আসে ও।সাইমন যেখানে ওর অপেক্ষা করতো সেখানে এসে দাঁড়ায়।হঠাৎ খেয়াল হলো সে আসবেনা।কারন সাঁঝ ভীষন খারাপ ব্যাবহার করেছিলো সেদিন।সাইমন নিজেই বলেছিলো সে আর কখনো আসবেনা।সাঁঝ হাঁটতে থাকে।কেন যেন মনে হচ্ছিলো এই যেন সাইমন আসলো।কিন্তু আসেনি সে।হাঁটতে থাকে আর বারবার পিছে তাকাতে থাকে সাঁঝ।অনেকদিন পর লোকটাকে ছাড়া এসময়ে ঘরে ফিরছে ও।সাঁঝ মন খারাপ করে ঘরে ফিরে আসে।ঘরে ফিরেই নিশাদের রুমে আসে।ও শুয়ে চোখের ওপর হাত দিয়ে রেখেছে।সাঁঝ ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর কপালে হাত রেখে আবার সরিয়ে আনে।তারপর বলল,
''ভাই!!"
নিশাদ হাত সরিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলল,
''বল"
''কেমন লাগছে তোর?"
''এই তো আছি।টিউশন থেকে এলি?"
''জি।"
''যা খেয়ে রেস্ট নে।পরে কথা হবে।"
''তুই খেয়েছিস?"
''হুম।"
সাঁঝ বেরিয়ে এসে রুমে চলে আসে।কাপড় চোপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।
.....................................................................................
এদিকে সেদিন হোটেলের ক্যাফেটেরিয়ায় বিভানের সাথে জুলি লাগালাগি করার চেষ্টা করছিলো।বেলা বিভানের সাথে রেগে আছে তা বুঝতে পেলো জুলি।তাই বিভানকে হঠাৎ বলল,
''বেলা মনে হয় রেগে আছে বিভান।ও হোটেলে থাকুক আজকে।আমরা দুজন যাই।"
বিভান জুলির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বেলার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
''আমার বেলা রানী যতোই রেগে থাকুক না কেন কখনো তোমার সাথে আমাকে ছাড়বেনা।তাইনা বেলা?"
বেলা মাথা উঠিয়ে বিভানের দিকে তাকায়।মুখে দুষ্টমির হাসি লোকটার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন