পরাণ প্রিয়া - পর্ব ২১ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


নিবিড় ঘুম থেকে উঠলো দুপুরের একটু আগে।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে,প্রিয়তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে সোফায় বসে,শেফালী আপা,এককাপ কফি দিয়ে যাও।
-বাবা আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো। 
-হুম,বল।এসেই তো কথাটা বলতে চেয়েছিস আমিই তো বাঁধা দিয়েছি।আচ্ছা এখন বল।
প্রিয়তা রান্নাঘরে দিকে যেতেই,নিবিড় বললো,তনুসা কাল থেকে এইবাড়িতে থাকবে।
কথাটা শুনেই প্রিয়তা থমকে দাঁড়িয়ে, পিছনে ফিরে নিবিড়ের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। 
-এই বাড়িতে থাকবে মানে?
-আমি ঠিক বলছি।ও কয়েকদিনের জন্য থাকবে তারপর ওর বাবা মায়ের কাছে চলে যাবে আমেরিকায়। 
মোশারফ হোসেন কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বললেন,ঠিক আছে, তবে ওই মেয়ে যেনো আমার ফ্যামিলির ব্যাপার কৌতুহল না দেখায়।কথাটা বলে মোশারফ হোসেন উঠে চলে গেলেন।
নিবিড় প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আমি জানি তুমি আমায় ভুল বুজেছো। কিন্তু ওকে এই বাড়িতে নিয়ে আসছি শুধু তোমার জন্য।আমি জানতে চাই সেদিনের এসএমএসগুলো কে পাটিয়েছে।তনু নাকি অন্য কেউ?

প্রিয়তা করুণ চোখে তাকিয়ে, এইজন্য আপনি আসার পর থেকে আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি? তারমানে আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন শুধু আমি ধরেছি বলে? মনে মনে প্রিয়তা কথাগুলো বলছে আর চোখের পানিকে লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নিবিড়ও কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে,আমি সকালে তোমার সাথে কথা বলিনি কারন আমি কথা বললেই নিজেকে সামলাতে পারতাম না।তুমি জানো প্রিয়তা? এই কয়েকটা দিন তোমাকে না দেখে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।বুকের ভেতর যেনো সব পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিলো।তাই আমি তাড়াতাড়ি তোমার মুখটা দেখার জন্য সব ছেড়ে দেশে চলে এসেছি।আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবেসে ফেলেছি সেটা আমি বুজতেই পারছি।
পুরোটা দিন প্রিয়তা নিবিড়ের সাথে আর একটা কথাও বলেনি।রাত নয়টা নিবিড় রুমে অপেক্ষা করছে প্রিয়তার আসার জন্য।প্রিয়তাকে না দেখে রুম থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে, সে কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে।কালকের কাজগুলো অনেকটা এখুনি করে নিচ্ছে।
নিবিড় উপর থেকে গম্ভীরমুখে তাকিয়ে, প্রিয়তা উপরে উঠে আসো।

প্রিয়তা না শুনার ভাণ করে অন্য দিকে ফিরে আছে।সালমা বেগম প্রিয়তার কাছে গিয়ে,তুই যা নিবিড় ডাকছে।
-ডাকুক।
-ও একটু পর রেগে যাবে।
-রাগ কী শুধু উনি একাই দেখাতে পারে? 
নিবিড় ধমকিয়ে আবার বললো,প্রিয়তা তুমি কানে শুনতে পাও না? আমি কি নিচে নেমে আসবো নাকি তুমি আসবে?
নাদিয়াও  প্রিয়তাকে ইশারা করে উপরে যেতে বললো।প্রিয়তা উপরে আসছে দেখে নিবিড় রুমে এসে নিজের ইজিচেয়ারটায় বসলো।
প্রিয়তা রুমে আসতেই নিবিড় উঠে দরজা বন্ধ করে দিয়ে,সকালে আসার পরও দেখলাম ঠিক ছিলে।দুপুরের পর থেকে কি পাগলা কুকুরে কামড় দিয়েছে? 
কথাগুলো বলতে বলতে নিবিড় সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আর প্রিয়তা পিছনে।
-আ আ আমাকে কু কুকুর কামড়াবে কে কে কেনো? আপনি আমার দিকে এএএএগিয়ে আসবেবেন না।
- বাঁক প্রতিবন্ধি নাকি তুমি?এইরকম তোতলাচ্ছো কেনো?
প্রিয়তা দেওয়ালের সাথে পিঠ লেগে দাঁড়াতেই নিবিড়ও সামনে দাঁড়িয়ে, আরও যাবে? যদি বলো দেওয়াল ভাঙ্গার ব্যবস্থা করি?
প্রিয়তা ডানে বামে মাথা নাড়লো।
নিবিড় শান্ত গলায় বললো, আমি জানি তুমি কেনো এমন করছো,আমি তোমার ভালোর জন্য ওকে এই বাড়িতে নিয়ে আসছি।ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আমি তো শুধু তোমাকে,,,,,, 
-কি আমাকে? 
-আমি তোমাকে,
-হ্যাঁ বলুন?
নিবিড় চুপ করে আছে, নিজের বাহুডোরে মুখ মুছে নিচ্ছে।
আমি জানি আপনি পারবেন না বলতে।কারণ আপনি আমাকে ভালোইবাসেন না। 
কথাটা বলে প্রিয়তা নিবিড়ের হাত সরিয়ে দরজার সামনে এসে খেতে আসুন।আপনার আমাকে কিছু বলতে হবে না।আমি তো কয়েকদিন পর চলেই যাচ্ছি।
প্রিয়তা চলে যেতেই খাটের কিনারায় এসে বসে,মাহিদ কে ফোন দিলো।

পরেরদিন সকাল বেলা প্রিয়তা উঠে দেখে নিবিড় এখনো ইজিচেয়ারে বসেই ঘুমাচ্ছে। নিজের গায়ের চাদরটা নিবিড়ের গায়ে দিয়ে নামাজ আদায় করে নিচে গেলো।
চা বানিয়ে নিয়ে এসে দেখে মোশারফ হোসেন ড্রইংরুমে বসে নিউজ পেপার পড়ছে।
-বাবা আপনার চা।
মোশারফ হোসেন কাপটা নিয়ে,নিবিড় হঠাৎ তনুসাকে নিয়ে আসতে চাইছে কেনো? সে ব্যাপারে কিছু জানিস?
-বাবা তোমার ছেলের এতোটা প্রিয় আমি হয়ে উঠিনি হয়তো, যে সব কথা আমাকে বলবে। আসল কথা কী বাবা? আমি সেই ভাগ্য করে জন্মাইনি যে ভাগ্য আমায় সব দিবে।
-তুই চিন্তা করিস না।নিবিড় দেখবি একদিন সব ঠিক করে নিবে। তোকে ভালোও বাসবে।মারে,,মাঝে মাঝে অপেক্ষার ফল যে মিষ্টি হয়।
প্রিয়তা কিছু বললো না।আস্তে আস্তে সবাই নিচে নেমে এলো। সাথে নিবিড়ও।হাতে একটা ফাইল, রিসাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে, রিসাদ সাহেব আমি আজ অফিসে যাচ্ছি না।আপনি এইটা নিয়ে যাবেন । 
নাদিয়া সামনে এসে দাঁড়িয়ে, হেরে ভাই, তুই এখনো কি রিসাদ সাহেব বলছিস? ওকে ভাইয়া বলে তো ডাকতে পারিস।
তুই ওর এক মাত্র শালা তুই যদি এমন করিস তাহলে বাকীরা সবাই কি করবে বল?
-আপু একটু সময় তো লাগবে।
-আচ্ছা ওকে তোর যখন সময় হবে বলিস। 

সবাই নাশতা শেষ করতেই তনুসা এসে সবাইকে সালাম দিলো।
মোশারফ হোসেন একটু অবাক হলেন।যে মেয়ে সালাম   কি তাই বলতে পারতো না আর সে মেয়েই আজ সালাম দিচ্ছে।
জামা কাপড়ও বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি।
নিবিড় গম্ভীর গলায়, শেফালী আপা আমাদের গেস্ট রুমটা তনুসার জন্য খুলে দাও। জুহি, তনুসাকে নিয়ে যা।

নাদিয়া প্রিয়তার দিকে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো,এইটা আবার কে?
প্রিয়তা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

নিবিড় সালমা বেগমের দিকে তাকিয়ে, মা! তনুসার যেনো কোনো অসম্মান এই বাড়িতে না হয়।আপু তনুসার দিকে খেয়াল রাখিস। 
-ভাই মেয়েটাকে তো আমি চিনলাম না।তোর কি বন্ধু নাকি?
-আপু প্লিজ মায়ের থেকে জেনে নিস।শেফালী আপা আরেক কাপ কফি আমার রুমে পাঠিয়ে দিও।

নিবিড় রুমে এসে দেখে প্রিয়তা নিজের জামা কাপড়গুলো আলমারি থেকে গুছিয়ে ব্যাগে ভরে নিচ্ছে।
-কি হলো কোথায় যাচ্ছো?
-পাশের রুমে।
-তোমার এসব ফালতু ন্যাকামিগুলো আবার শুরু করে দিয়েছো?
-আমি কোনো ন্যাকামি করছি না।আমি সিরিয়াস ভাবেই যাচ্ছি।আপনার তনু এসে গেছে এখন আর আমার কী প্রয়োজন? এখন তো বাড়িতে জায়গা দিয়েছেন দুইদিন পর তো বেড রুমেও নিয়ে আসবেন।তখন তো আমাকে বেরিয়ে যেতে হবে তাই না? এরচেয়ে ভালো আমি এখন থেকে পাশের রুমে চলে যাচ্ছি। 
নিবিড় ধমক দিয়ে,এনাফ!  তুমি কি ভেবেছো রোজ রোজ এসব ড্রামা আমার সহ্য করতে হবে?
যদি এইধরনের কিছু ভেবে থাকো ভাবনাতে পানি ঢেলে জামা কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখো।
নিবিড় ল্যাপটপ নিয়ে চেয়ায়ে বসে পড়লো।

শেফালী কফি নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিবিড় কফিটা হাতে নিয়ে,শেফালী আপা তোমার বড় মেয়ের সামনের মাসে না বিয়ে?
-হ ছোট ভাইজান।আমার তো কয়েকদিন আগেই চইলা যাওন লাগবো।তয় চিন্তা করবেন না, আমার জানা একজনের কয়েকদিনের জন্য দিয়া যামু।
-আমি সে জন্য জিজ্ঞেস করিনি।মেয়ের বিয়ের খরচের কিছু ব্যবস্থা করেছো?
-কিছু ব্যবস্থা হইয়া গেছে। খালু বলছে যাওয়ার সময় উনি কিছু দিবো তাহলেই হইয়া যাইবো।
প্রিয়তা বিছানা  গোছাচ্ছে আর কথাগুলো শুনছে।
নিবিড় মুচকি হেসে,শেফালী আপা বোকার মতো কথা আমি পছন্দ করিনা তুমি জানো।কিছু টাকা কখনো বিয়ে হয় না।
প্রিয়তা এদিকে আসো।
প্রিয়তা কাছে আসতেই,সারাদিন কীভাবে আমার পিছনে পড়া যায় সেই চিন্তাই করো।এখন একটা কাজ করো,শেফালী আপার থেকে হিসাব নিয়ে উনার মেয়ের বিয়ের কত টাকা লাগে মাহিদের থেকে নিয়ে দিও।অন্তত এইকাজটা ঠিক মতো করো।
প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে শেফালীর সাথে বেরিয়ে গেলো।

কয়েকটা দিন কেটে গেলো,নিবিড় আর প্রিয়তার ঝগড়া লেগেই থাকে।তবে এই ঝগড়ার মাঝে দুজন দুজানাকে নিজেদের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। 
-প্রিয়তা, ভাইয়ের মুখ থেকে কিন্তু তুমি এখনো ওই কথাটা বলাতে পারোনি।
প্রিয়তা তরকারি নাড়তে নাড়তে, আপু তুমি তো জানো তোমার ভাই কেমন।
সারাক্ষণ রাক্ষসের মতো গম্ভীরমুখে থাকে,কিছু বলতেই আমার ভয় লাগে।
নাদিয়া আদুরে গলায়, প্রিয়তা তুমি আমার সামনে ভাইকে রাক্ষস বলছো এইটা ঠিক না।হ্যাঁ আমার ভাই মুখ ফুঁটে কিছু বলতে পারে না।তাই বলে,,,,,
- ওকে আপু, স্যরি।
তনুসা ফোন টিপতে টিপতে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে,প্রিয়তা আমার জুসটা আমি এখনো পাইনি।

নাদিয়া এগিয়ে এসে,তনুসা, জুসটা তো তুমি নিয়ে খেতে পারো,দেখছো তো, প্রিয়তা রান্না করছে।শেফালীও চলে গেছে। নিজের বাড়ি মনে করে নিয়ে খাও।
-আপু,ওসব কাজ না আমার জন্য না।নিবিড় বুজে, কোন কাজটা কাকে ভালো মানাবে। 
নাদিয়া কিছু বলার আগেই প্রিয়তা জুস নিয়ে এসে,আপু ছাড়ো এইসব। ও ঠিকি বলেছে।তুমি রুমে যাও। 
-কিন্তু প্রিয়তা,,,
-আপু প্লিজ তুমি যাও।আমি একা সব সামলাতে পারি।
নাদিয়া চলে যেতেই,প্রিয়তা জুসের গ্লাসটা তনুসার হাত থেকে নিয়ে,এইটা তোমার জন্য নয়।তুমি কি ভেবেছো আমাকে যা বলবে আমি তাই করবো? তুমি একটু আগে ঠিকি বলছো নিবিড় ভালো করেই জানে কার জায়গাটা কোথায়।সেজন্য আমি ওর বউ আর তুমি ওর বাড়ির আশ্রিতা।
তনুসা ঝাঁঝালো গলায় বললো,হাউ ডেয়ার ইউ?বলে থাপ্পড় উঠাতেই নিবিড় এসে ধরে, রাগন্বিত চোখে তাকিয়ে, এইটা কি করছিলে তুমি?
-নিবিড় ও আমায় যা নয় তাই বলে যাচ্ছে সে কখন থেকে।আমি নাকি এই বাড়িতে আশ্রিত হয়ে আছি।আরও অনেক কথা।
-তুমি চুপ করো আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করি অন্যের থেকে।আজ যে ভুলটা করতে যাচ্ছো দ্বিতীয়বার ভুলটা যেনো আর না হয়।
নিবিড় জুসের গ্লাসটা তনুসার হাতে দিয়ে উপরে চলে গেলো।প্রিয়তা মুচকি হেসে,আরও প্রমাণ লাগবে?
তনুসা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

নিবিড় রুমে এসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে,আজ আমার জন্মদিন কারোই কি মনে নেই? আপু বাবা, মা কেউ আমায় উইশ করলো না।উল্টো বাড়ি এসে প্রিয়তা আর তনুর এসব দেখে মনটাই নষ্ট করে দিলো। 

নিবিড় উঠে গিয়ে মোশারফ হোসেনের ঘরে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, 
-কিরে কিছু বলবি?
-বাবা আজ কত তারিখ?
-নয় তারিখ। কেনো?
-মা তোমারও মনে নেই?
-কি মনে থাকবে? 
-আজ কত তারিখ? 
-আমরা কি মনে রাখবো? তুই তো আমাদের থেকেও মন ভুলা তোর বাবা একটু আগে বললো নয় তারিখ আর তুই আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছিস?
নিবিড় বিরক্তিকর গলায় ধ্যাৎ বলে চলে গেলো।নাদিয়া আর জুহি সোফায় বসে নেলপলিশ লাগাচ্ছে।
-আপু, জুহি আজকের দিনটা তোদের মনে নেই কারো?
নাদিয়া আঙ্গুলে ফুঁ দিয়ে, কেনো রে আজ কি?
-তুইও?আচ্ছা জুহি তুইও ভুলে গেছিস?
-ভাইয়া আজ কি ভাই দিবস নাকি বোন দিবস? 
নিবিড় কিছু না বলে রুমেই চলে গেলো বিরক্তি নিয়ে।
সবাই অট্র হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে নিবিড়ের অবস্থা দেখে।
মোশারফ হোসেন রুম থেকে বেরিয়ে এসে,প্রিয়তা আমরা সবাই কিন্তু তোমার কথা মতো কাজ করেছি।
-বাবা তুমি বলো তো প্রতি বছর থেকে তোমার ছেলেকে এবার আলাদা লাগেনি?
-সে আর বলতে?ও কখনো নিজে থেকে কিছু বলেনি।এই প্রথম আমার নিবিড় নিজে থেকে চেয়েনিতে চাইছে।এই সবকিছু শুধু তোর জন্য। 
-না বাবা,উনি নিজেকেই পাল্টাতে চাইছেন।আমার ধারণা উনি সবার মাঝে নিজেকে বিলাতে চাইছেন।
আচ্ছা এখন আমরা প্ল্যান অনুযায়ী কাজগুলো করে ফেলি।
নিবিড় সারাটাদিন আর আর রুম থেকে বের হয়নি।রুমটা অন্ধকার করেই বসে আছে।
এইদিকে পুরো ড্রইংরুমে লাইটিং করা হয়েছে বিভিন্ন রঙের। ফুল আর বেলুনে যেনো পুরোটা ড্রইংরুম ফুটিয়ে তোলেছে।
প্রিয়তা জুহিকে বললো জোরে মিউজিক চালিয়ে দিতে।আর বাকী সবাই নিবিড়ের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 
মিউজিক শুনে,নিবিড় চেঁচিয়ে,প্রিয়তা বাড়িতে শুরু হয়েছেটা কি।মিউজিক বন্ধ করো।
নিবিড় কয়েকবার বলার পরও সাঁড়া না পেয়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে বাহিরে আসতেই,উপর থেকে ফুলের পাপড়িগুলো পড়তে লাগলো,আর সবাই একসাথে নিবিড়কে উইশ করলো।নিবিড় কি বলবে বুজতে পারছে না।নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ছিলো। আনন্দে চোখের পানি টলমল করছে।মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।
নাদিয়া নিবিড়ের হাতে একটা ঘড়ি পরিয়ে দিয়ে, তোর সময়টা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে বার বার তুই ঘড়ির দিকে তাকাস।তাই আমি তোকে ঘড়িটা দিলাম যখনি তাকাবি আমার কথা মনে করবি।
নিবিড় বোনকে জড়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে,মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুজালো।
জুহি, দাদী,সালমা বেগম সবাইকে নিয়ে কেক কাটলো নিবিড়। নাদিয়া প্রিয়তাকে এনে নিবিড়ের সাথে দাঁড় করিয়ে,ভাই আগে প্রিয়তাকে খাওয়া। কাল থেকে সব ওই করেছে তোর জন্য।আমরা শুধু ওর কাজে সাহায্য করেছি।নিবিড় প্রিয়তাকে কেক দিতেই প্রিয়তা চোখের পানি মুছে কেক মুখে নিয়ে নিবিড়কেও খাইয়ে দিলো। 
নিবিড় সবাইকে খাইয়ে দিয়ে,তনুসাকে তো দেখছি না।ও কোথায়?
-ও তো বিকালেই বাহিরে গেলো।আজ মনে হয় ফিরবে না।বললো কোনো বন্ধুর বাসায় যাবে।নাদিয়া কথাটা বলে সোফায় বসলো।
-নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে, আমি জানতাম তুমি শুধু আমার টাকাই লাভ করতে আমাকে না।আজ আবাও প্রমাণ হয়ে গেলো।
রাতে প্রিয়তা ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে,নিবিড়কে ফোনে কথা বলতে দেখে, নিজের শোয়ার জায়গা ঠিক করে শুয়ে পড়বে এমন সময় নিবিড় হাত ধরে,ঘুমাবে?
-তাহলে কি করবো? আপনি তো কথা বলছিলেন।
-অপেক্ষা করতে!
-হু।
- থ্যাংকস। 
-কেনো?
-এতো সুন্দর একটা দিন দেওয়ার জন্য।
-কিন্তু আমি তো আপনাকে কোনো উপহার দিতে পারলাম না।আসলে আপনাকে আমি কিই বা দিবো? 
আমার কাছে কিছুই নেই দেবার মতো।যা আছে তাও আপনারই দেওয়া। একটা সম্পর্ক, কতোগুলো মানুষের ভালোবাসা, একটা বিয়ে নামের বন্ধন,সমাজে স্বীকৃতি,দামি শাড়ি,জুয়েলারি, থাকার জায়গা। এবং কি নিজের বেডরুমটাও আমার জন্য আমার মতো করে সাজিয়েছেন,সবি তো আপনার দেওয়া। আপনার জিনিস তো আর আপনাকে দেওয়া যায় না তাই না?
কথাগুলো বলতে বলতে প্রিয়তা নিজের চোখ মুছলো।
নিবিড় প্রিয়তার দুই গাল ধরে নিজের দিকে মুখ করে,তুমি আজ যা আমায় দিয়েছো এরচেয়ে বেশি আমার ফ্যামিলিও আমায় কখনো দেয়নি।আজকের মূহুর্তের কাছে আমার দেওয়া সব তুচ্ছ। আমি ছোটো বেলা থেকে যে পরিস্থিতিতে বড় হয়েছি নিশ্চয়ই তুমি অনেক কিছু জানো।প্রিয়তা আজ আমিই তোমার কাছে বড্ড ঋণী। প্রিয়তার গাল ছেড়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে, আই লাভ ইউ প্রিয়তা।আই লাভ ইউ।
-হু।
-প্রিয়তা আই লাভ ইউ।
-জানিতো আমি।আপনি আমাকে ভালোবাসেন।এইটা এতো বলার কি আছে?
নিবিড় প্রিয়তাকে বুক থেকে উঠিয়ে,এই তুমি কি কানে কম শুনো? তোমাকে আমি আই লাভ ইউ বললাম,আর তুমি বলছো, হু,জানি,শুনি,এইসব কি? এইটার একটা আনসার আছে সেটা তো দিবা।
-না দিবো না।
-কেনো?
-আমার লজ্জা লাগে না বুজি? আপনি তো ছেলে হয়ে বলতে এতোদিন সময় লাগিয়েছেন আমারও তো সময়ের প্রয়োজন তাই না?
নিবিড় কথাটা শুনে হা হা হা করে হাসি দিয়েই যাচ্ছে।আর প্রিয়তা করুণ চোখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় হাসি বন্ধ করে,তুমি মাঝে মাঝে যা বলো,আমি নিজেই বেকুব হয়ে যাই।
প্রিয়তা শান্ত গলায় বললো,আপনি জানেন,আপনি হাসলে আপনাকে কতোটা সুন্দর দেখায়?
প্রিয়তা নিবিড়ের বুকে নিজের মাথা রেখে,এই প্রথম আমি আপনার হাসি দেখেছি।আমি শিওর এইটাই আপনার প্রথম হাসি তাই না? 
নিবিড় প্রিয়তাকে বুকের সাথে মিলিয়ে চুলের বিলি কাটতে কাটতে,হয়তো।তবে তুমি আমাকে এতোটাই হারিয়েছো যে আমি নিজেকেই নিজে ভুলে গেছি, চাঁদের রানী।
-চাঁদের রানী হয় না,বুড়ী হয়।
-তাহলে ঠিক জাগায় এসেই থেমেছি।তুমি তো বুড়িই।আমার ছেয়ে গুনে গুনে তিন মাসের বড়।
-কিহ্ আমি বুড়িতো? ওকে ছাড়ো। তোমার তনুসার কাছে যাও।
নিবিড় প্রিয়তার কথা শুনে প্রিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে,আমার গিফট না দিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
-আমার কাছে কিছু নেই।এইবার নামান বলছি।আমি পড়ে যাবো তো।
-তাই?  আমার উপর দেখছি তোমার ভরসা নেই। ঠিক আছে তাহলে ফেলেই দিই। 
-এই না না।প্লিজ আমি জানি আপনি ছাড়বেন না।
নিবিড় কথাটা শুনে কমল স্বরে প্রিয়তাকে আরও কাছে এগিয়ে এনে নাকের সাথে নাক লাগিয়ে বললো,তাহলে ভয় পাও কেনো?
প্রিয়তা চুপ করে নিবিড়ের চোখেই নিজেকে হারিয়ে নিয়েছে।
হঠাৎ লাইটটা বন্ধ হয়ে যেতেই প্রিয়তা,একি, লাইটটা কে বন্ধ করলো?
নিবিড় কিছু না বলে প্রিয়তাকে খাটে এনে শুয়ে দিয়ে নিজের পুরো শরীরে ভার প্রিয়তার উপর দিয়ে প্রিয়তার কপালে চুমু দিলো।প্রিয়তার ভারী নিশ্বাসে নিবিড় নিজেকে প্রিয়তার মাঝে একটু একটু করে হারাতে লাগলো। প্রিয়তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে,দুজোনার ভালোবাসা মিশে এক আত্মায় বেঁধে নিয়ে ছিলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন