মেঘের খামে অনুভূতি (পর্ব ১০)


তানিয়া রাত থেকে কেমন পাগলামি করছেন। ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতে চাইছেন। স্পৃহাকে ডাকছেন। তোহা মায়ের এমন পাগলামি দেখে ভয় পেয়ে গেছে। হঠাৎ মায়ের কি হলো তা সে বুঝতে পারছে না। 
'মা এমন করছো কেন তুমি? ও মা তুমি এমন করো না। তুমি দেখবে আপু ফিরে আসবে। আপুর কিছু হবে না।'
'স্পৃহা এসেছে? আমার স্পৃহাকে তোরা পেয়েছিস? কোথায় আমার মেয়ে? স্পৃহা! আমার মা কোথায় তুই।'
তানিয়া কাঁদছে দেখে তোহাও এবার কাঁদতে লাগলো। কেউ তানিয়াকে কিছু বলে সান্ত্বনা দিতে পারছে না। সবার মনই এখন তানিয়ার মত পাগলামি করছে। জয় খালামণির মাথা বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,
'খালামণি স্পৃহা ঠিকঠাক বাড়ি ফিরে আসবে। আমাদের স্পৃহার কিছু হবে না। তুমি শান্ত হও। খালামণি কেন এমন পাগলামি করছো? দেখো না তোমাকে কাঁদতে দেখে তোহাও কাঁদছে।'
তানিয়া জয়ের শার্ট খামচে ধরে বলল,
'তুই তো জানিস আমার মেয়েটা কেমন। স্পৃহা কতটা ভীতু তা তো তোর থেকে ভালো কেউ জানে না। ও একা একা বাড়ি থেকে বের হতে চায় না। বেশি মানুষের সামনে যেতে পারে না। ও এখন কোথায় আছে? কি অবস্থায় আছে? কাদের সাথে আছে আমার মেয়েটা? জয় তুই আমার স্পৃহাকে এনে দে না বাবা। আমি তোর কাছে হাত জোর করছি। তুই আমার মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।'
জয় খালামণিকে শান্ত করতে পারছে না। তানিয়ার সাথে সাথে তোহা,মেহেরুন, মারিয়া সবাই কাঁদছে। 
মেহেরুনের বোনের মেয়েকে কাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতেও বাসায় ফিরেনি। এই খবর প্রতিবেশীদের মুখে মুখে ঘুরছে। সকাল হবার আগেই সবাই মেহেরুনের বাড়ির সামনে ভীড় মজায়। ভার্সিটিতে পড়ুয়া একটা মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না এটা যেন একটা মজার ঘটনা। কেউ বিশ্বাসই করতে চাইছে না স্পৃহাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে। সবাই ভাবছে স্পৃহা পালিয়ে গেছে। 
'মেয়েটাকে দেখতে কত সহজসরল মনে হয়েছে না ভাবী। এখন দেখেন কান্ড,খালা,খালু,বাবা,মা'র মুখে চুনকালি মেখে কীভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল।'
'কি আর বলবো ভাবী। এরা তো সত্য করে কিছু বলছেও না। দেখেন কাহিনী বানিয়েছে। তাদের মেয়েকে নাকি কেউ কিডন্যাপ করেছে। আপনিই বলুন না ভাবী,কিডন্যাপ করলে কি ফোন করবে না? টাকা চাইবে না? কই এসব কিছু হয়েছে? '
'আরে মেয়ে এমন একটা কাজ করেছে। লজ্জায় ওরা কিছু বলতেও পারছে না। আবার লুকিয়েও রাখতে পারছে না।'
'মেহেরুন বোনঝিকে নিয়ে কত বড়াই-ই না করতো। এই মেয়ে কারো সামনে যায় না, কারো সাথে কথা বলে না। একা একা থাকে শান্তশিষ্ট মেয়ে।'
'হুম এখন তো দেখতেই পারছি কেমন শান্তশিষ্ট মেয়ে। নিজে কোথাও গিয়ে লুকিয়ে আছে। আর এদিকে মা বেচারি কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে আছে।'
'সত্যিই মেহেরুনের বোনের জন্য কষ্ট হচ্ছে। বেচারি এমন মেয়ে পেটে ধরেছে। আর মেহেরুন মেয়েটাকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছিল। এবার মজা দেখুক।' 

নূপুর আয়নার সামনে বসে আছে। বড় ভাবী তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে আর কী কী যেন বলছে। নূপুরের কানে বড় ভাবীর একটা কথাও ঢুকছে না। সে জীবনের কথা ভাবছে। 
'এই শোনো না। জীবন এদিকে তাকাবে তুমি? '
নূপুর জীবনের কানের কাছে চিল্লিয়ে বলল কথাটা। জীবন কানে হাত দিয়ে বলল,
'আহ কানের বারোটা বাজিয়ে দিলে তো।'
'তুমি আমার কথা শুনছিলে না। আমি কি করবো? '
'আচ্ছা বলো কি বলবে? '
'আচ্ছা বলো কি বলবে না। তুমি আগে ফোনটা পকেটে রাখো।'
নূপুরকে পাশে বসিয়ে জীবন ফোন নিয়ে পড়ে আছে। আর তা দেখেই নুপূর রেগে যাচ্ছে। 
'আমি তোমার পাশে বসে আছি। আর তুমি তখন থেকে ফোনের ভেতর ঢুকে আছো। কি আছে এই ফোনে? তখন থেকে কি দেখছো দেখি একটু। না আমিও দেখি ফোনের ভেতরে কি এমন জিনিস আছে যা গার্লফ্রেন্ড থেকেও বড়।'
নূপুর জীবনের ফোন নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলে জীবন ফোন পকেটে ভরে সোজা হয়ে বসে বলল,
'আরে বাদ দাও তো এসব। তুমি বলো কি বলবে।'
'না বাদ দিব কেন? আমি যাই তুমি ফোন নিয়ে থাকো।'
জীবন নূপুরের হাত ধরে বলল,
'ওরে আমার বাবুর আম্মু রে। এতো রাগলে হয় নাকি? বলো না জান কি বলবে।'
'আচ্ছা আমরা বিয়ের শপিং কোথায় থেকে করবো? বিয়ের দিন শাড়ি পরবো নাকি লেহেঙ্গা? আর একটা কথা, বিয়ে কোথায় হবে? বাড়িতে নাকি কমিনিউটি সেন্টারে?'
জীবন নূপুরের দিকে তাকিয়ে অবাক হবার ভাব করে বলল,
'ওরে ব্যস! তুমিও বিয়ের কথা ভাবো তাহলে?'
নূপুর রাগী মুখ করে চেয়ে বলল,
'মানে? কি বলতে চাইছো তুমি? আমি বিয়ের কথা ভাবী না? কোনদিনও বিয়ে করবো না আমি? বিয়ে করার ইচ্ছে নেই তবুও শুধু শুধু প্রেম করছি। এটাই বলতে চাইছো তো।'
'আরে আমি তা বলেছি নাকি?'
'না তুমি তা বলোনি। ঘোড়ার ডিম বলেছো তুমি। তুমি যখন এমনটাই ভাবো তাহলে আমিও তোমাকে আর বিয়েই করবো না।'
নূপুর উঠে চলে যাচ্ছে। জীবন পেছন পেছন তাকে ডাকছে, 
'নূপুর,,,এই নূপুর,,, আরে বৌ,,,ও বৌ,,,এইযে বাবুর আম্মু একটু দাঁড়ান না প্লিজ। এতো রাগ করলে আমার সাথে সংসার করবে কীভাবে?'
নূপুরের চোখ বেয়ে পানি পরছে। নূপুরকে কাঁদতে দেখে মেঝ ভাবী বলল,
'একি! এখনও বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো না। আর আমাদের মেয়ে এখনই কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলছে।'
বড় ভাবী মেঝ ভাবীকে ধমক দিয়ে বলল,
'চুপ করো তো। বিয়ে ঠিক হতে হয় না। বিয়ের কথা উঠলেই সব মেয়েদের মন খারাপ হয়। আমাদের নূপুরেরও হচ্ছে।'
বড় ভাবী নূপুরের দিকে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। মেঝ ভাবীকে ভাইয়া ডেকেছে বলে সে চলে গেল। নূপুর ভাবীর দিকে তাকালো। তার হাত ধরে বলল,
'ভাবী তোমরা আমার সাথে কেন এমন করছো? আর কেউ না জানুক তুমি তো সবটা জানো। তুমিও আমার সাথে সবার মতই করছো।'
'চুপ কর বোন। ওসব কথা ভুলেও মুখে আনিস না। শুধু মুখে কেন মনেও আনিস না। তোর ভাইদের তুই জানিস। ওরা কি কি করতে পারে তাও জানিস। ওরা এসব জানলে ছেলেটাকে বাঁচতে দিবে না।'
নূপুর ভাবীকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। নিজের মনের অবস্থা সে কাউকে বুঝাতে পারছে না। একমাত্র ভাবীই তাকে বুঝতো। আজ ভাবীও এমন কথা বলছে। 

জীবন স্পৃহাকে নিয়ে জয়দের বাসায় এসেছে। এখানে এসে বাড়ির সামনে বেশ ভীড় দেখতে পেলো। ওরা ভেতরে আসার সময় সবাই কিভাবে চোখ বড় বড় করে ওদের দিকে তাকাচ্ছিল। কেউ কেউ তো ফিসফিস করে কিসব বলছিলও। বাড়ির মেইন দরজার কাছে আসতেই সবার আগে স্পৃহার চোখ তার মায়ের উপর গেল। মারিয়া হঠাৎ জীবনের সাথে স্পৃহাকে দেখে চিৎকার করে বলল,
'মা,খালামণি, জয় দেখ স্পৃহা এসেছে। তোহা দেখ তোর বোন এসেছে।'
স্পৃহাকে দেখে মারিয়া ছুটে এলো। তানিয়া উঠে আসার শক্তি পাচ্ছে না। স্পৃহা তার মায়ের কাছে ছুটে এলো। এক রাতে মায়ের অবস্থা এ কি হয়েছে। মা'কে এমন লাগছে কেন? স্পৃহা মা'কে জড়িয়ে ধরলো।
'মা কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন লাগছে কেন? মা তুমি ঠিক আছো?'
তানিয়া স্পৃহার মুখে অজস্র চুমু দিতে লাগলো। গালে কপালে হাতে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। 
'তুই কোথায় ছিলি মা? আমাদের ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলি তুই? আমি কত ভয় পেয়েছি জানিস তুই? কে তোকে নিয়ে গিয়েছিল? কীভাবে ফিরে এলি তুই?'
সবাই স্পৃহাকে ঘিরে ধরেছে। জয় জীবনের কাছে এগিয়ে এলো।
'জীবন তুই স্পৃহাকে কোথায় পেলি? ও তোর সাথে কীভাবে? '
'সে অনেক কাহিনী দোস্ত। তুই আগে স্পৃহাকে নিয়ে ভেতরে যা। ওকে একটু রেস্ট নিতে দে। তারপর সবকিছু বলছি।'
'তোরা ঠিক আছিস তো? স্পৃহার কিছু হয়নি? '
'আমরা একদম ঠিক আছি। আর স্পৃহার কিছু হলে তোরা দেখতে পেতি না? স্পৃহাও তো আমার সাথেই পুরোপুরি ঠিক আছে।'
সবাই স্পৃহাকে ভেতরে নিয়ে গেল। স্পৃহা গোসল সেরে চেঞ্জ করে নিয়েছে। তানিয়া স্পৃহার হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। মেহেরুন নিজের হাতে স্পৃহাকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। মারিয়া তোহা স্পৃহার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। জীবন ওদের সবাইকে সবটা খুলে বললো। স্পৃহাকে ছেলে গুলো কীভাবে তুলে নিয়ে গেছে, কোথায় নিয়ে গেছে। আর জীবনকেও কীভাবে নিয়ে গেছে। আর জীবন কীভাবে স্পৃহাকে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। সবটা শুনে সবাই অবাক হয়ে আছে। সামান্য একটা ঘটনার জন্য ছেলে গুলো এতো বড় কান্ড করলো। ওদেরকে এভাবে ছেড়ে দেয়া যাবে না। সব ক'টাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। ওদেরকে জেলে না পাঠালে এরা শুধরাবে না। স্পৃহার বাবা পলাশ জীবনের হাত ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, 
'শুধু ধন্যবাদ দিলে তোমাকে ছোট করা হবে। তুমি আমার মেয়ের জন্য যা করেছো তাতে আমার সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিলেও তোমার ঋণ শোধ হবে না। তুমি শুধু আমার মেয়েকে না, আমাদের দু'টো পরিবারকে বাঁচিয়ে নিয়েছো। স্পৃহার কিছু হলে আমরা কেউই ভালো থাকতে পারতাম না। স্পৃহা আমাদের সবার জীবন। তুমি আমাদের জীবন বাঁচিয়েছ। এর জন্য আমরা সবাই তোমার কাছে ঋণী থাকবো। '
জীবন উনার হাত ধরে বলল,
'এভাবে বলবেন না আঙ্কেল। আমার জায়গায় জয় থাকলে কি এমনটা করতো না? তখন কি আপনারা ওকে ধন্যবাদ দিতেন? আমি যা করেছি, মানুষ হিসেবে তা আমার দায়িত্ব ছিল। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি।'
জয় বলল,
'তোকেও তো টায়ার্ড লাগছে। তুমি আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। তারপর নাহয় বাড়ি যাবি।'
'না রে। রাতে বাসায় ফিরিনি। বড় আম্মু টেনশন করবে। এখন আমি যাই। তোরা স্পৃহার সাথে থাক। ও খুব ভয় পেয়েছে। নিজের চোখে কখনো তো এসব দেখেনি।'
জয় জীবনকে এগিয়ে দিতে আসলো। গেটের কাছে এসে জীবনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
'তোকে থ্যাংক্স দিব না দোস্ত। তুই সত্যিই একজন প্রকৃত মানুষ। আর একজন প্রকৃত বন্ধু। আমি খুব লাকি যে,তোকে আমার বন্ধু হিসেবে পেয়েছি। তুই একটা মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছিস। ওর ইজ্জত বাঁচিয়েছিস। ওর পুরো পরিবারকে বাঁচিয়েছিস। তোকে নিয়ে আমার প্রাউড ফিল হচ্ছে রে।'
'আরে ছাড় তো। এতো ইমোশনাল হতে হবে না। এখন সব ঠিক আছে। তুই টেনশন নিস না।'
জীবন বড় আব্বুর বাসায় গেল না। তার ফ্ল্যাটে চলে এসেছে। এই অবস্থায় ওখানে গেলে শুধু শুধু বড় আম্মু টেনশন করবে। জীবন রুমে এসেই ওয়াশরুমে চলে গেল। পুরোটা রাত জঙ্গলে কাটিয়েছে। শরীরটা কেমন কাদা মাখা, কাদা মাখা লাগছে। গোসল সেরে বের হয়ে জীবন টাওয়েল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। মাথায় এখনো অনেকটা ব্যথা আছে। একবার ডক্টরের কাছে যাবে কিনা তা ভাবছে। খিদেও পেয়েছে ভীষণ। কিন্তু এখন রান্না করে খাওয়ার মুড একদম নেই। জীবন ফ্রিজ থেকে একটা আপেল আর জুস নিয়ে রুমে চলে এলো। কাল সারারাত একটুও ঘুমায় নি। স্পৃহা তার কাঁধে পড়ে ঘুমিয়েছে আর সে স্পৃহাকে পাহারা দিয়েছে। ভোরের দিকে যাও দুমিনিটের জন্য চোখটা লেগে গিয়েছিল। তখন আরেকটা বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। এখন আর জীবন চোখ খোলা রাখতে পারছে না। গোসল করায় শরীর ফুরফুরা লাগছে। আর চোখে রাজ্যের ঘুম চেপে এসেছে। জীবন কিছু না ভেবে উপুড় হয়ে বেডে শুয়ে পরলো।

স্পৃহাকে কেউ আর কিছুই জিজ্ঞেস করে নি। তাকে রেস্ট নেওয়ার জন্য রুমে দিয়ে গেছে। দরজা লাগিয়ে ঘর অন্ধকার করে স্পৃহা শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ করলেই স্পৃহা জীবনকে দেখতে পাচ্ছে। জীবন তার মাথায়,তার ভাবনায়, তার কল্পনায়, তার চিন্তায় চেপে বসেছে। স্পৃহা দু'হাতে কান চেপে ধরে উঠে বসলো। চোখ বন্ধ করে বলল,
'আমি উনার কথা ভাবতে চাই না। চোখের সামনে উনার মুখ দেখতে চাই না। আর উনার কথাও শুনতে চাই না। গতরাতটা আমার কাছে শুধুই একটা স্বপ্ন। এর থেকে বেশি আর কিছুই না। আমার জায়গায় যেকোনো মেয়ে হলেও উনি এটাই করতেন। এটার জন্য আমার প্রতি উনার অন্য কোনো ফিলিংস নেই। উনার গার্লফ্রেন্ড আছে। আর আমিও আমার পৃথিবীতে ভালো আছি। চাই না উনার কথা ভাবতে। চাই না আমি।'
স্পৃহা কথাগুলো বলেও তার চোখের সামনে জীবনকে দেখতে পারছে। জীবন তার হাত ধরে দৌড়াচ্ছে। তার মুখ চেপে ধরে গাছের আড়ালে লুকিয়ে আছে। শক্ত করে তার হাত ধরে রেখেছে। তার কাঁধে মাথা রেখে শুতে দিচ্ছে। 
'কেন ভাবছি উনার কথা? কেন ভাবছি এসব? উনি কি আমাকে নিয়ে এসব ভাবছেন? উনি তো যাবার আগে আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি। "স্পৃহা আমি যাচ্ছি, তুমি সাবধানে থেকো" এই কথাটা বললে কি উনার অনেক ক্ষতি হয়ে যেত?'
স্পৃহা চোখ বেয়ে গাল গড়িয়ে পানি পরছে। সে কাঁদছে। এই প্রথম একটা ছেলের কথা ভেবে স্পৃহার চোখ দিয়ে পানি পরছে। তবে কি স্পৃহা জীবনকে ভালোবেসে ফেলেছে? এটাকেই কি ভালোবাসা বলে?
'ভালোবাসা কাকে বলে আমি জানি না। কখন কারো জন্যে এমনটা ফিল করিনি। কিন্তু আজ উনার জন্য আমি এমনটা ফিল করছি। এটাকে কি ভালোবাসা বলে? যদি এটাকে ভালোবাসা বলে, তাহলে হ্যা আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু আমার এই ভালোবাসা শুধুই আমার। উনার কাছে আমার এই ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। কারণ উনি তো অন্য একজনকে ভালোবাসেন।' 
স্পৃহা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস, যা মানুষকে হাসায় আবার কাঁদায়। দুঃখ দেয় আবার সুখও দেয়। ভালোবাসার মানে একেক জনের কাছে একেক রকম। স্পৃহা কাছে এখন ভালোবাসার মানে,কখনো নিজের করে না পাওয়া, ধরাছোঁয়ার বাইরে এমন কিছু। 

জীবনের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। আজ এতক্ষণ ঘুমিয়েছে সে ভেবেই অবাক হচ্ছে। 
'পুরো একটা দিন ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলাম? এতো ঘুম আমার চোখে কোত্থেকে এলো?'
জীবন উঠে বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলো। ঘুমের কারণে দুপুরে খাওয়া হয়নি। জেগে এখন ক্ষিদেয় পেট চু চু করছে। খেতে হলে এখন রান্না করতে হবে। 
'ধুর এখন রান্না করতে পারবো না। বাইরে থেকে খেয়ে নিব। আর নয়তো বড় আম্মুর কাছে চলে যাব।'
জীবন আবার রুমে এসে টিশার্ট পড়ে নিলো। ট্রাউজার চেঞ্জ না করেই এলো চুলে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল। গাড়িতে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে নূপুরের কথা মনে হলো। নূপুরের কথা এতক্ষণ জীবনের মাথাতেই ছিল না। কাল সন্ধ্যায় ওকে বাসায় নামিয়ে দেয়ার পর থেকে আর কথা হয়নি। হবে কি করে? জীবনের ঐ ফোনটা তো ওরা নিয়ে নিয়েছে। ওটাই হয়তো নূপুর অনেক কল করেছে। জীবন নূপুরের নাম্বারে ট্রাই করলো। ফোন অফ আসছে। 

মারিয়া এসে দরজায় নক করে স্পৃহাকে ডাকলো,
'স্পৃহা? '
ভেতর থেকে স্পৃহা বলল,
'আপু আসো।'
মারিয়া ভেতরে গিয়ে স্পৃহার পাশে বসলো। স্পৃহা মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে। মারিয়া বলল,
'ঘুম হয়েছে? '
'হুম।'
'আগেও দু'বার এসে দেখে গেছি। তুই ঘুমোচ্ছিলি।'
'ডাকলে না কেন?'
'আরাম করে ঘুমাচ্ছিলি তাই আর ডাকি নি। এখন ঠিক আছিস তুই?'
'হুম।'
মারিয়া স্পৃহার হাত ধরে বলল,
'আমাকে ক্ষমা করে দিস রে। আমার জন্যই তোর সাথে এতকিছু হয়ে গেল। না সেদিন তুই আমার সাথে যেতি। আর না এসব হতো। ছেলে গুলোও তোকে চিনত না। আর এসবও হতো না।'
'আপু কেন এসব বলছো? তুমি আমি কেউ জানতাম নাকি এমন কিছু হবে? আর তাছাড়া আমি তো এখন ঠিক আছি। তোমাদের সাথে আছি। আমার কিছুই হয়নি।'
'যদি হয়ে যেত? জীবন যদি তোর কাছে না পৌঁছুত তখন? আমার তো ভেবেই বুক কেঁপে উঠছে। আমরা পুলিশের কাছেও গিয়েছিলাম। তখন আমি ভাবতেও পারিনি ঐ ছেলে দু'টা এসব করেছে। দেখিস তুই ওদের যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কেউ ছাড় পাবে না।'
'থাক না আপু। এখন এসব কথা বাদ দাও। আমি ওসব মনে রাখতে চাই না। আমি এখন তোমাদের মাঝে আছি। এখন ওসব বাজে কথা ভাবতে চাই না।'
'আচ্ছা। ওসব কথা মনে রাখতেও হবে না। জীবন তোর অনেক খেয়াল রেখেছে তাই না?'
মারিয়ার শেষের কথাটা শুনে স্পৃহা অন্যমনস্ক হয়ে গেল। মারিয়া ঠিকই তা লক্ষ করেছে। ওখান থেকে ফেরার পর স্পৃহা অন্য ভাবে জীবনের দিকে তাকাচ্ছিল। তার তাকানোয় হয়তো ভালোবাসা ছিল। কেউ এটা না দেখলেও মারিয়া দেখেছে। জীবন চলে যাবার পর স্পৃহার যেন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। 
'স্পৃহা! '
'হুম আপু।'
'তুই কি জীবন ছেলেটাকে পছন্দ করতে শুরু করেছিস?'
মারিয়া স্পৃহার মুখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল। স্পৃহা মারিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল,
'আপু তুমি যে কি বলো না। সব উল্টাপাল্টা কথা তোমার মাথায় আসে।'
স্পৃহা উঠে যেতে নিয়ে কথাটা বললে মারিয়া তার হাত ধরে তার সামনে বসিয়ে দিয়ে বলল,
'আমার চোখে চোখ না রেখে পালিয়ে যাচ্ছিল কেন? তুই কি ভেবেছিস আমি বুঝতে পারবো না? এতটাই বোকা ভেবেছিস আমাকে? তুই জীবনকে পছন্দ করিস। শুধু পছন্দ না ভালোও বাসিস। একটা ছেলে যদি কোনো মেয়েকে বাঁচায়, তার ইজ্জত রক্ষা করে। তাহলে সেই মেয়েটা ছেলেটাকে সম্মান করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তোর মনে জীবনের জন্য এর থেকেও বেশি কিছু আছে। তুই ওকে ভালোবেসে ফেলেছিস। ভালোবাসা পাপ না। তবুও কেন তুই আমার থেকে লোকাচ্ছিস?'
স্পৃহা ছলছল চোখে মারিয়ার দিকে চেয়ে বলল,
'আমি ভালোবাসলে কি হবে আপু? উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না। উনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন। গার্লফ্রেন্ড আছে উনার।'
'তোকে এসব কে বলল?'
'আমি জানি। দেখেছি আমি উনার গার্লফ্রেন্ডকে। দু'জনকে এক সাথে খুব ভালো মানায়।'
মারিয়া অবাক হয়ে স্পৃহার দিকে চেয়ে রইলো। কিছু বলতে পারলো না। 

জীবন সন্ধ্যার আগে আগে বড় আব্বুর বাসায় চলে এসেছে। রাতে আর তাকে বড় আম্মু বের হতে দেয়নি। জীবনও আর জোর করে বের হয়নি। রাতে খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পরেছে। জীবন শুয়ে শুয়ে স্পৃহার কথা ভাবছে। স্পৃহাকে রেখে আসার পর থেকে তার সাথে আর দেখা হয়নি। কথাও না। আসার আগেও জীবন ভদ্রতা করে কিছু বলে আসেনি। মেয়েটা অনেক ভয় পেয়েছিল। ওর শুকনো মুখ দেখে কেমন মায়া হচ্ছিল।
'স্পৃহার সাথে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। ভীতু মেয়েটা এখন কেমন আছে? স্বাভাবিক হতে পেরেছে, নাকি এখনো ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে? '
স্পৃহার ঘুম ভাঙানোর জন্য জীবন যখন বলেছিল "ওরা আমাদের ধরে ফেলেছে " তখন স্পৃহার মুখটা দেখার মত ছিল। একদম চুপসে গিয়েছিল। জীবন চোখ বন্ধ করে তখনকার দৃশ্য মনে করে হাসলো। 
তারপর পুরো একটা দিন পার হয়ে গেল। নূপুরের ফোন এখনো অফ। জীবন আজ অফিসে যেতে পারেনি। নূপুরের জন্য তার টেনশন হচ্ছে। জীবন ডিসাইট করে নিয়েছে আজ রাতে নূপুরদের বাসায় যাবে। কিন্তু রাতে বড় আম্মুর হাতে গরম পানি পড়ে হাত অনেকটা পুড়ে যায়। জীবন বড় আম্মুকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটাছুটি করে আর নূপুরদের বাসায় যেতে পারেনি। 

ঠিক পরের দিন সকালে জীবন নূপুরের খুঁজে ওদের বাসায় এসে হাজির হয়। জীবনের মুখে নূপুরের নাম শুনেই ওর বড় ভাই চিৎকার চেচাঁমেচি লাগিয়ে দেয়।
'দেখুন আমি কোনো পাড়ার ফুটকো লাভার না। আপনার বোনকে বদনাম করার জন্য এখানে এসেছি তাও না। আমি নূপুরকে ভালোবাসি। আর নূপুরও আমাকে ভালোবাসে। আমরা অনেক দিন ধরেই দু'জন দু'জনকে চিনি। আজ আমি আপনাদের কাছে নূপুরকে চাইতে এসেছি। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।'
নূপুরের বড় ভাই তেড়ে এসে বলল,
'কি বললি তুই? আবার বল তো শুনি। আমার বোন তোকে ভালোবাসে? মিথ্যা বলার জায়গা পাস না। নূপুর কাউকে ভালোবাসে না।'
'আপনি বললেই তো আর সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে না। নূপুর আমাকে ভালোবাসে এটাই সত্য। আপনি ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন। ও আমাকে চিনে কিনা।'
'তোর তো সাহস কম না বাড়ি এসে আমার বোনকে নিয়ে এসব বলছিস।'
নূপুরের বড় ভাই জীবনের মুখে এক ঘুষি লাগিয়ে দিলো। জীবন সোফায় গিয়ে পরলে উনি আবার জীবনের কলার টেনে ধরে তুলে আনলেন। 
'আমার বোন যদি তোকে ভালোবাসতো তাহলে ও বিয়ের জন্য কেন রাজি হতো? কেন অন্য একটা ছেলের সাথে এনগেজমেন্ট করতো?'
জীবন উনার মুখের কথা বিশ্বাস করতে পারলো না। নূপুর তাকে ধোঁকা দিবে এটা হতেই পারে না। নিশ্চয়ই উনি মিথ্যা বলছেন। জীবন বললো, 
'আমি বিশ্বাস করি না। নূপুর অন্য কাউকে বিয়ের করার জন্য রাজি হতে পারে না। আপনি মিথ্যা বলছেন। '
বাইরের এতো চেচাঁমেচি শুনে নূপুর বেরিয়ে এলো। জীবনকে সামনে দেখে নূপুর কিছু বলতে পারছে না। জীবন এখানে কি করছে? আর তার ভাই ওর কলার ধরে রেখেছে কেন? জীবন কি তাহলে সবাইকে সব কিছু বলে দিয়েছে। নূপুরকে দেখে জীবন বলল,
'নূপুর তোমার ভাই এসব কি বলছে? তুমি নাকি এনগেজমেন্ট করে নিয়েছো? তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করবে? আমাকে তুমি ভালোবাসো না?'
নূপুর একবার ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার জীবনের দিকে তাকাচ্ছে। নূপুরের ভাই বলল,
'তুই একে চিনিস? ভালোবাসিস একে? ও যা বলছে তা কি সত্য? '
নূপুরকে চুপ থাকতে দেখে জীবন বলল,
'বলছো না কেন তুমি আমাকে ভালোবাসো।তোমার ভাইকে সত্যিটা বলো।'
নূপুরের ভাবী এসে নূপুরের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
'এই ছেলে পাগল তুমি? উল্টাপাল্টা এসব কি বলছো? নূপুর তোমাকে চিনলে ওর ভাইদের কাছ থেকে লুকাবে কেন?'
জীবন অসহায় ভাবে নূপুরের দিকে তাকিয়ে রইলো। নূপুর ভাবীর দিকে তাকালে ভাবী চোখ ইশারা করলো। আবার তার ভাইয়ের চিৎকার শুনে নূপুর বলে উঠলো, 
'আমি ওকে ভালোবাসি না ভাইয়া। ও মিথ্যা বলছে। আমি ওকে শুধু দু'তিন দিন রাস্তায় দেখেছি। ভালো করে তো আমরা কখনো কথাও বলিনি। তাহলে আমি ওকে ভালোবাসবো কীভাবে?'
নূপুরের কথা শুনে জীবনের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। আগের দিনও তো ওরা দেখা করেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এক সাথে থেকেছে। মাঝখানে দু'দিনের ব্যবধানে নূপুর এখন বলছে ও জীবনকে ভালোবাসে না। ওর সাথে ভালো করে কথাও বলে নি। জীবনের সাথে সত্যিই কি এসব ঘটছে নাকি সে বাজে স্বপ্ন দেখছে? নূপুরের ভাই বলল,
'শুনেছিস আমার বোন কি বলেছে। ও তোকে চিনে না। ভালোবাসার কথা তো বাদই দিলাম। এখন তোকে বলছি ভদ্র ভাবে ভালোই ভালোই বেরিয়ে যা। নয়তো তোর কপালে,,, 
উনি কথা শেষ করার আগেই জীবন নূপুরের কাছে গিয়ে ওকে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,
'কি বলছো তুমি এসব? আমাকে তুমি ভালোবাসো না? চেনো না আমাকে? আমাদের এতদিনের ভালোবাসাকে তুমি অস্বীকার করছো? মিথ্যা প্রমাণ করতে চাইছো আমাদের সম্পর্কটাকে?'
নূপুরের চোখ বেয়ে পানি পরছে। সে কিছু বলছে না। জীবন আরো কিছু বলতে যাবে। কিন্তু পেছন থেকে নূপুরের ভাই এসে তাকে আবার ঘুষি মেরে ফেলে দিলো। জীবন উঠে দাঁড়িয়ে উনার কলার চেপে ধরে বলল,
'হাত আমিও তুলতে পারি। কিন্তু আপনি নূপুরের বড় ভাই। আর আমার থেকেও বয়সে বড়। তাই কিছু করছি না। আমি চলে যাব তার আগে নূপুরের সাথে আমার কিছু কথা আছে।'
জীবন উনাকে ছেড়ে নূপুরের কাছে গেল। শান্ত স্বরে বলল,
'কেন তুমি এমনটা বলছো? কাকে ভয় পাচ্ছো আমাকে বলো। কেউ কি তোমাকে ভয় দেখিয়েছে। কেন তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো না?'
নূপুর চুপ করে আছে। জীবন এবার চেঁচিয়ে বলল,
'চুপ করে থাকবে না। কথা বলো। কে তোমাকে কি বলেছে আমাকে বলো। আমি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাব। কাউকে ভয় পাই না আমি। তোমার ভাইদেরও না।'
নূপুরের ভাই রেগে এসে জীবনের সামনে দাঁড়াল। জীবন উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলে নূপুর বলল,
'আপনার সাহস কি করে হয় আমার ভাইয়ের গায়ে হাত দেয়ার? আমি আপনাকে ভালোবাসি না। ভালো করে চিনিও না। তবুও আপনি আমাদের বাসায় এসে অভদ্রতা করছেন। আমার ভাইয়ের সাথে মারপিট করছেন। এতক্ষণ সব সহ্য করেছি। এখন আর না। বেরিয়ে যান আপনি এখান থেকে। আরেকবার আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুললে খুব খারাপ হয়ে যাবে আপনার জন্য। আমি পুলিশে যাব। আপনার নামে মামলা করবো। গুন্ডামি করার জায়গা পান না। বের হন এবাড়ি থেকে।'
নূপুরের কথাগুলো শুনে জীবন কি বলবে বুঝতে পারছে না। নূপুর এসব বলেছে এটাও বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু সে নিজের কানে নূপুরের সব কথা শুনেছে। নিজের চোখে নূপুরের এই রূপ দেখছে। জীবন আর কিছু বললো না। বের হয়ে গেল এখান থেকে। ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে সে নূপুরের বলা কথা ভাবতে লাগলো। 

স্পৃহাকে তার বাবা মা সাথে করে চট্টগ্রাম নিয়ে যাচ্ছে। তানিয়া তার মেয়েকে আর এখানে রাখবে না। এখানের মানুষের কথা স্পৃহা সহ্য করতে পারবে না। এখানে থাকলে ওরা স্পৃহাকে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দিবে না। দু'দিন স্পৃহা রুমেই ছিল। রুম থেকে বের হয়নি। বাড়ির বাইরেও যায়নি। আজ সকালে স্পৃহা বাইরে বের হলে মহল্লার মানুষ তার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছিল। কয়েকজন তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিসব বলাবলি করেছিল।
'দেখ দেখ এতো বড় একটা কান্ড করেছে অথচ চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুই করে নি। কিচ্ছু জানে না, বুঝে না।'
'লজ্জা শরমের মাথা খেলে এমনই হয়। পুরো একটা রাত অচেনা একটা ছেলের সাথে বাড়ির বাইরে কাটিয়ে এসেছে। কেমন বাবা মা? এতকিছুর পরও মেয়েকে ঘরে তুলে নিয়েছে। কলঙ্কের আর কি বাকি আছে? ঐ ছেলেটার সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে না কেন?'
'জানি না বাবা। আমার মেয়ে এমন কাজ করলে ওকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতাম। পালিয়ে গিয়েছিলি ভালো কথা আবার ফিরে এলি কেন? ফিরে এসেও কি সুন্দর গল্প জুড়ে দিয়েছে। তাকে নাকি কিডন্যাপ করা হয়েছিল।'
'মানুষকে বোকা ভাবে এরা। মনে করেছে আমরা কিছু বুঝতে পারবো না। মেহেরুন এই জন্যই বোনের মেয়েকে এখানে এনেছিল। বাপ মা'র কথা না ভাবতি নিজের খালা খালুর কথা তো ভাবতে পারতি। সমাজে ওদের নাক কান কাটালি কেন?'
এসব কথা স্পৃহা আর শুনতে পারছিল না। সে দৌঁড়ে বাসায় এসে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখে। সবাই অনেক ডাকার পরেও দরজা খুলে না। মেহেরুন কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তানিয়াও মনে মনে এই ভয়ই পাচ্ছিল। তাই সে ঠিক করেছে ঢাকা আর আসবে না। চট্টগ্রামে নিজেদের বাড়িতেই থাকবে। তোহা ব্যাগ গোছাচ্ছে। স্পৃহা আজ একেবারে জন্য এখান থেকে চলে যাবে। আর কখনও আসবে না এখানে। জয় খালামণিকে বাধা দিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে তারও কিছু করার নেই। এখন যা ঘটছে সব কিছুই তাদের হাতের বাইরে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন