রংধনু - পর্ব ৩১ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


দিল্লির এনসিউআই অডিটরিয়াম এন্ড কনভেনশন সেন্টারে পৌছে গেলো বেলা বিভান।জুলেখা বানু জানিয়ে দিয়েছিলেন ওনার কিছুটা দেরি হবে ওরা যেন বেরিযে যায়।এদিকে বিভানের ও বারবার কল আসছিলো কলিগদের কাছ থেকে।তাই কোন কিছু না ভেবেই বেলাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ও।এখান থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিটের পথ কনভেনশন সেন্টারটি।বিভান ড্রাইভ করার মাঝেই বেলার দিকে তাকায়।বেলা জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে।বিভান জানালাটা খুলে দিলো।বাহিরে বেশ বাতাস হচ্ছিলো।বেলা পাশে তাকায়।কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
''এসি চলছে বিভান।"
''বাহিরের বাতাসটসই বিশুদ্ধ।"
''বাহ এত কালে আপনার হুশ হলো তাহলে?আমার বাহিরের বাতাসটাই পছন্দ।"
বিভান হেসে বেলার হাত নিয়ে স্টিয়ারিং এ রেখে ওর হাতের ওপর হাত রেখে গাড়ি চালাতে শুরু করে।বেলা হাত সরানোর চেষ্টা করলো।বিভান যেন কিছু বুঝতে পারছেনা।গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।বেলা বলল,
''গাড়ি চালানোয় মন দিন।"
বিভান ওর দিকে না তাকিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল,
''গাড়ি তো আমিই চালাচ্ছি।তুমিই বাঁধা দিচ্ছো। সমস্যা কোথায় তোমার?"
''এভাবে হাত ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন সমস্যা হচ্ছেনা?"
''না বেলা।একদমই সমস্যা হচ্ছেনা।বরং খুব ভালোই লাগছে।"
বেলা হেসে কিছুটা এগিয়ে এসে বিভানের কাঁধে মাথা রাখে।বিভান একটু হাসলো।বেলা বলল,
''মাকে নিয়েই আসতে পারতেন।"
''মা বলল তো বাহিরে যাবে।হয়ত সেখান থেকেই পার্টিতে যাবে।আর আমাকে জলদিই পৌছাতে হতো।"
বিভানের কথায় বেলা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, 
''বুঝলাম।শুনুন!!!"
''বলো।"
''আমার না বাংলাদেশে যেতে ভীষন ইচ্ছে হচ্ছে।কতোদিন দেশটাকে দেখিনা আমার মানুষগুলোকে দেখিনা।"
বেলার গলা ভারি হয়ে আসে।বিভান ম্লান হেসে বলল,
''বেলা আমরা যাবো খুব শীঘ্রই তার আগে খুব ভালো একটা খবর আছে তোমার জন্য।"
বেলা মাথা উঠিয়ে বিভানের দিকে তাকিয়ে উৎসাহিত কন্ঠে বলল,
''কি খবর?"
''সেটা হলো খুব শীঘ্রই আমরা ছোট্ট একটা বাবু নিয়ে আসবো।সেটার জন্য আগ্রা যাবো আমরা।"
''এডাপশান!!!!"
বেলার চোখজোড়া উজ্জ্বল হয়ে আসে।ঠোঁটের কোনে লেগে আছে হাসি।বিভান বলল,
''হুম।এতিমখানায় কতো বাবুরা বাবা মায়ের ভালবাসা ছাড়া বড় হচ্ছে।তাদের যদি আমরা সেই ভালবাসা দিতে পারি তাহলে ভালো না বলো?"
কথাটা শেষ করে বেলার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে মাথা ঘুরায় বিভান।বেলা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। এ মুহুর্তে ও খুব কাঁদতে চায় অনেক কাঁদতে চায়।লোকটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চায়।কতোটা ভাল লাগা কাজ করছে সেটা বুঝাতে পারবেনা বেলা। শেষ পর্যন্ত ও মা হবে।মা বলে ডাকবে কেউ ওকে।বিভান বাবা হবে।ওদের অসম্পূর্ণ জীবনটা সম্পূর্ন হবে।বেলাকে চুপ দেখে বিভান বলল,
''কি হলো বেলা রানী আইডিয়া পছন্দ হয়নি?আমার মনে হচ্ছিলো খুশি হবে তুমি।"
বেলা কিছু বলতে পারেনা।বিভানকে জড়িয়ে ধরে ও।বিভান হেসে বলল, 
''বেলা কি হলো?"
বেলার কোন জবাব নেই।বিভান গ্লাসে দেখতে পেলো বেলার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।বিভান গাড়ি থামায় এক কোনায়।তারপর বেলার বাহু স্পর্শ করে বলল, 
''বেলা কাঁদছো কেন?"
''জানেন কতো খুশি লাগছে।আমার এতো বছরের স্বপ্ন পূরন হতে যাচ্ছে বিভান।আমি মা হতে পারবো বিভান।আমার সত্যিই ভীষন খুশি লাগছে।আমি বুঝাতে পারছিনা কেমন লাগছে। মনে হচ্ছে না পেয়ে ও সব পেয়ে গেলাম।"
কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো বেলা।বিভান ওকে সরিয়ে বেলার দিকে ফিরে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
''বেলা আমি ও খুশি তোমার জন্য।বেলা আমার জন্য তুমিই সব।তুমি ভালো থাকলে সব পাওয়া হয়ে যাবে আমার।আমি শুধু চাই তুমি ভাল থাকো।"
বেলা কিছু বলতে পারেনি।মাথাটা এগিয়ে বিভানের কপালের সাথে নিজের কপাল স্পর্শ করে।বিভান মুখ একটু উঁচু করে বেলার কপালে চুমু খেয়ে আবার ও কপাল লাগায় ওর কপালের সাথে।সাড়ে আটটায় ওরা পৌছে গেলো কনভেনশন সেন্টারে।বেলা কে বিভান ইশারা করলো  ওর হাতের ভেতর হাত ঢুকাতে।বেলা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বিভানের হাতের ভেতর হাত ঢুকায়।কনভেনশান সেন্টারে প্রবেশ করতেই একজন এসে বিভানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''ওয়েলকাম মিঃশেখ।আপনার অপেক্ষায় ছিলাম।"
বিভান হেসে বলল,
''সরি মিঃ সেন।রাস্তায় বড্ড ট্রাফিক ছিলো যে পনেরমিনিটের রাস্তায় চল্লিশ মিনিট সময় কেঁটে গেলো।"
লোকটা সরে এসে বলার দিকে তাকিয়ে বলল,
''মিসেস শেখ কেমন আছেন?"
''ভালো।আপনি কেমন আছেন?বৌদি কেমন আছে?"
''ভালো।ও এসেছে তো।চলুন আমার সাথে।"
মিঃ সেন বিভানের বিজনেস পার্টনার।লোকটার বয়স পঞ্চাশের ওপরে কিন্তু চোহারায় তার ছাপ নেই।ওনার স্ত্রী দূর্গা সেন ভীষন ভাল মানুষ।বেলার ভীষন পছন্দ ওনাকে।পার্থ সেন দূর্গা সেনের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
''দূর্গা দেখো কে এসেছে?"
দূর্গা সেন কার সাথে কথা বলছিলেন।স্বামীর ডাকে সামনে তাকিয়ে বেলা আর বিভানকে দেখে হেসে বললেন,
''আরে বিভান দা কেমন আছো?"
''ভালো বৌদি।আপনার কি খবর?"
''এই তো।আরে বেলা বড় হয়ে গেছো।"
ওনার কথায় সবাই হেসে দিলো।বেলা বলল,
''কি যে বলেন বৌদি বুড়িয়ে গেছি। "
''হুম মন্ডু হয়েছো।দা তোমাকে খুব আদর করে তা দেখলেই বুঝা যায়।সুন্দরী হয়ে গেছো।"
বেলা লজ্জা পেয়ে বলল,
''ভাবি থ্যাংক ইউ দিতে পারছিনা সরি।আপনি তো সুন্দর হচ্ছেন আমি কি কিছু বলেছি?"
বলেই বেলা হেসে ফেলে।বেলার কথায় পার্থ সেন হেসপ বললেন,
''দেখলে দূর্গা বৌদি একদম জায়গা মতো মেরে দিলো।"
সবাই হাসতে লাগলো।পার্থ সেন বললেন, 
''মিঃ শেখ চলুন ওখানে অনেকেই অপেক্ষায় আছে চলুন।"
বিভান বেলাকে নিয়ে পার্থ আর দূর্গার সাথে হেঁটে হেঁটে সবার সাথে কথা বলতে থাকে।বেলাকে সবাই বেশ পছন্দই করে।কারন বিভানের স্ত্রী ও আর বেলাকে সবাই ভাল জানে।বিয়ের পর থেকেই বিভানের সাথে এমন অনেক পার্টি এটেন্ড করেছিলো বেলা।তাই মোটামুটি সবার সাথেই বেশ সখ্যতা আছে ওর।এরই মাঝে বন্দনা আখতারকে আসতে দেখা যায় জুলি সমেত।বিভান মাকে দেখে হাসলে ও জুলিকে দেখে নিমিষেই সোই হাসি চলে গিয়ে একরাশ রাগ এসে ভর করে বিভানের চেহারায়।বেলা ও কিছুটা চিন্তিত হয় জুলিকে দেখে।জুলি আর বন্দনা আখতার এর ওর সাথে কথা বলতে বলতে বিভান বেলার দিকে এগিয়ে আসছিলো।বিভানের মুখ শক্ত হয়ে আসতে থাকে।
.....................আজ নিশাদদের বন্ধুমহলে আড্ডা বসেছে।নিশাদ আসতোনা।তবু ও ইমতিয়াজের জোরাজুরিতে আসতে হয়েছে ওকে।ইমতিয়াজ নিশাদের অফিসেই চলে এসেছিলো।নিশাদ বলশ অবাক ইমতিয়াজকে দেখে।ইমতিয়াজ বলছিলো,
''দেখ সব বার ফাজলামি করিস?তোর কি ইচ্ছা হয়না একটু আড্ডা দিতে?চল আমাদের সাথে।"
''আরে কি পাগলামি করছিস কাজ আছে।"
''দেখ মিঞা বেশি কথা বলতে পারুমনা।তোর অফিস এইটা।চল আমার সাথে।নিচে ভূবনের গাড়ি অপেক্ষা করতেছে।"
''গাড়ি!!!কই যাবি তোরা?"
"যমুনা সেতু।চল নিশাদ এখনই বের হমু।"
নিশাদ বন্ধুর জোরাজুরিতে বলল,
''অপেক্ষা কর আমি স্যার থেকে ছুটি নিয়ে আসি।"
''আচ্ছা।"
নিশাদ বেরিয়ে গেলো।কিছুক্ষনের মাঝে নিশাদ এসে বলল,
''চল যাই। "
''হুম আয়।"
ওরা বেরিয়ে পড়লো।ভূবন নিশাদকে দেখে বলল,
''বাহ ইমতিয়াজ তোকে এওয়ার্ড দিতে হবে।শালারে নিয়া আসতে পারলি এট লাস্ট?"
ইমতিয়াজ হেসে নিশাদ কে গুঁতো মেরে বলল,
''আসতোই না জানিস?কতোটা বলে আনলাম।"
নিশাদ হালকা হেসে বলল,
''বুঝিসনা জবটা পেতে কষ্ট হয়েছিলো।তাই ফাঁকি মারতে চাইনা।"
ভিতর থেকে কল্যান বলল,
''সেটাও কথা।শুনলাম ওর বস খুব বেয়াদব টাইপের।আরে বেটার বাড়ি ও কুমিল্লার।"
নিশাদ গাড়িতে বসে বলল,
''সাবধান ভূবন কিন্তু রেগে যাবে।পরে যাওয়া ক্যান্সেল।"
তীর্থ পিছন থেকে বলল,
''হ পরে এ্যাক্সিডেন্ট কইরা দিবো।না ভূবন খুব ভালো তোরা।রাগ করিসনা ভাই।তুই রাগলে আমার মেয়েরা এতিম হয়া যাইবো।"
ভূবন হেসে বলল,
''তোরা এতো গপ করিস আর ফারহান সাহেব ঘুমে অজ্ঞান।"
কল্যান একটু এগিয়ে গিয়ে ফারহানের কানে কাঠি দিয়ে হালকা খোঁচা দিতেই ফারহান ঘুমের মাঝেই বিরক্ত হয়ে বলল,
''উফ কি করতেছোস।"
নিশাদ বলল,
''থাক ঘুমাক।বাদ দে।" 
কল্যান,ভূবন, সৌমিক, তীর্থ আর ফারহান সবাই এককাতারে দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজের পাশ ঘেষে।ওরা অবশ্য এখানে আসার আগেই যমুনা সেতুর থেকে বেশ দূরের ফুড ভিলেজ প্লাসে নেমে খেয়ে নিয়েছিলো।অবশ্য ভূবন খাইয়েছিলো।সেতুতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো ওরা।ভূবন অবশ্য সিগারেট খায়না।ডাক্তার মানুষ তাই এসব থেকে দূরেই থাকে।ওরা নিজেদের স্কুল কলেজ লাইফ কে স্মরন করছিলো।ইমতিয়াজ বলল,
''নিশাদ জানিস ভূবনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।"
নিশাদ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
''কিরে ভূবন সতি নাকি রে?"
ভূবন হেসে মাথা নাড়ায।ইমতিয়াজ বলল,
''ঐ যে আমার কাজিন ইশিতাকে মনে আছে তোর?আমরা যখন টেনে ছিলাম ওর ক্লাশে ফাইভে ভর্তি হয়েছিলো।"
নিশাদ বলল,
''আরে হ্যা।ওর সাথে?"
ভূবন হাসছে তবে কিছু বলছেনা।কল্যান জিজ্ঞেস করলো,
''কিরে বেটা বিয়ে কবে?"
''সামনের মাসের পনের তারিখ।"
''ওহ।বিয়ে কই হচ্ছে তাহলে সিরাজগঞ্জ?"
সিরাজগঞ্জ ইমতিয়াজের নানার বাড়ি।ইমতিয়াজ বলল,
''হ্যারে। "
নিশাদ একটু হাসলো।নিশাদ যতোবারই ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়েছিলো মনে হচ্ছিলো কি যেন বলতে চাইছিলো ইমতিয়াজ।তবে সবার সামনেই হয়ত বলতে পারছেনা।
এদিকে সেদিন ঘরে ফিরতেই বারোটা বেজে গিয়েছিলো ওদের। নিশাদ ঘরে আসার পর দেখলো সাঁঝ লাবনীকে পড়াচ্ছে।বাবা নিশাদকে দেখে হেসে বললেন,
''নিশাদ একটু আয়তো কথা কই।"
নিশাদের বেশ ক্লান্ত লাগছে।ওর আসলে কথা বলার শক্তি ও নেই।তাই বলল,
''আব্বা বেশি দরকারি?"
''হ সাঁঝরে লইয়া।"
বোনের কথা শুনে নিশাদ অনিচ্ছাবশত বাবার পাশে গিয়ে বসে।
ইকরাম রাহমান পান চিবোতে চিবোতে বললেন,
''দেখ সাঁঝরে বিয়া দেওন লাগবো।বয়স হইতাছে তাইনা?ভাবতাছি পোলা দেখুম।এখন তোর নজরে কেউ থাকলে দেখিস তো।"
''আব্বা আমি খুঁজিতো আসলে যে দিনকাল যে কারোর হাতে তো বোনকে দেয়া যায়না।"
''হেইডা ঠিক কইসোস।দেখ তাইলে।তোর ও তো বয়স হইতাছে।বৌ আইলে তোর মায়ের সাইয্য হইবো তাইনা?"
......................এদিকে বিভান বেলাকে নিয়ে যথাসম্ভব জুলির থেকে দূরে থাকতে চাইছে।জুলি বারবার বিভানের পাশ ঘেঁষতে চাইছিলো।বিভান রেগে বন্দনা আখতার কে বলল,
''মা তুমি পরে এসেছো তোমার ভাতিজিকে নিয়ে আসার জন্য না?"
''হুম।ও আসলে কি হয়েছে?"
''মা কাজ টা ভালো হয়নি। ওকে বলো দূরে থাকতে।ওর কারনে আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে আমার কলিগদের সামনে।"
বন্দনা আখতার বেলার দিকে রেগে তাকিয়ে বললেন,
''কেন?বেলা মানা করেছিস ওকে?"
বেলা বেশ অবাক।বিভান বলল,
''মা এখানে বেলা কোথা থেকে আসল।এখন কোন কথা বইলোনা।বাসায় ফিরে কথা হবে।"
বেলা কে নিয়ে বিভান অন্যদিকে চলে যায়।এদিকে বিভানের একজন ফরেইন ক্লায়েন্টের ডাকে বেলাকে দূর্গা বৌদির কাছে ছেড়ে যেতে হয় বিভানের।কনভেনশন সেন্টারের ডাইনিং রুমে ওদের মিটিং ছিলো।বেলা দূর্গার সাথে কথা বলছিলো তখন জুলি আর বন্দনা আখতার এসে দাঁড়ালেন ওর সামনে।দূর্গা হেসে বললেন,
''আরে মিসেস শেখ।কেমন আছেন?"
বন্দনা আখতার হেসে বললেন,
''আছি।তোমার কি খবর দূর্গা?"
''এইতো ভালো।"
বন্দনা আখতার বেলাকে দেখে বললেন,
''আমার সাথে আসো তো বেলা।কথা আছে।"
বেলা দূর্গার দিকে ম্লান হেসে চলে গেলো বন্দনা আখতারের পিছুপিছু।ওরা একটা খালিঘরে এসে দাঁড়ায়।বন্দনা আখতার বললেন,
''দেখো বেলা আমার ছেলের জীবন থেকে প্লিজ চলে যাও তুমি।তোমাকে যতো দেখি আমার গা জ্বালা করে।"
বেলা কিছুটা রেগে বলল,
''মা এসব কথা বলার জন্য বাসা আছে তাইনা?আর যা বলার বিভানকেই বলুন।দেখুন কোন কাজ হয় কিনা?"
কথাটা বলেই বেরিয়ে এসেছিলো বেলা।কিন্তু এর পর যা হলো তা ভাবতেই পারেনি ও।

!!!!

বেলা রুম থেকে বেরিয়েই আসছিলো তখনই বন্দনা আখতার সবাইকে ধরে ধরে বলতে থাকেন আমার ছেলে বিভান আসলে বিয়েই করেনি।বেলা কে এনে জাস্ট ওর সাথে রাতে শোয়।বুঝেনইতো যৌবনের ভুল এখন কি আর তাড়াতে পারে মেয়েটাকে? তাইতো নিজের কসছে রেখে দিয়েছে।ঝিয়ের কাজ ও হলো, রাতের শোয়ার কাজটাও হলো।আরে বিভান তো তাড়াতে পারছেনা।মেয়েটা বারবার ওর টাকা পয়সার জন্য চাপ দিচ্ছে।কি যে খারাপ মেয়েটা।কি যে বলবো? আমি তো একে তাড়াতে পারলে বাঁচি।বন্দনা আখতারের কথা গুলোয় বেলার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে।গলা ভারি হয়ে আসছে।সবাই ওর দিকে কেমন তাকিয়ে আছে।এদিকে জুলির কথাও শুনতে পেলো বেলা। মেয়েটাও সুযোগ পেয়ে নানান বাজে কথা বলছে।বেলা সামনের মানুষ গুলো কে দেখছে।ওরা কেমন কানাকানি করছে একেক জন হাসছে কি বলে যেন।বেলার মুখ বিকৃত হয়ে আসে।এ মুহূর্তে ও কোন বদ্ধ ঘরে বসে চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।জুলির কথা শুনতে পারছে বেলা।জুলি বলছিলো ফুপি যা বলছে সব সত্যি।বিভান ভাইয়ের এই রক্ষিতা মহিলা একদম ভালো না।কি যে বাজে!!বেলা কাঁদতে যাচ্ছিলো তখন ওর কাঁধে কারোর ছোঁয়া পেয়ে নড়ে উঠে  বেলা।দূর্গা পাশে এসে বলল,
''বেলা তোমার শাশুড়ী আর ননদ কি বলছে এসব?ওনাদের মাথা ঠিক আছে?তোমার ননদের কথা বাদই দিলাম।বন্দনা আন্টি এমন কেন বলছেন?ওনার ছেলের সম্পর্কে কি বলছেন এসব?"
বেলা ওনার দিকে আহত দৃষ্টিতে কান্না চাঁপতে চাঁপতে  বলল,
''বৌদি আমি জানিনা।কিছু জানিনা।"
এদিকে বেলা সামনে তাকিয়ে দেখলো বিভান হেঁটে আসছে।ওর চোখের বিস্ময়ের ছায়া।ও বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে।বন্দনা আখতারের কথা শুরুর পর থেকে হালকা ফিসফিস আওয়াজ ছাড়া পুরো পরিবেশটাই নিরব।শুধু জুলি আর ওনার কথা শোনা যাচ্ছে।বিভান আবছা শুনতে পেলো তবে  নিশ্চিত নয় কি বলছে ওর মা। বিভান কাছে আসতেই বন্দনা চুপ করে গেলেন।মায়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বেলার দিকে তাকাতেই দেখলো বেলার অশ্রুতে ভারি হওয়া চোখ আর লাল হওয়া নাক।বিভান এবার কিছু সেকেন্ডের দূরত্বেই ছিলো বেলার থেকে কিন্তু আরো একটু এগুতেই বেলা দৌড়ে সরে গেলো বিভানের সামনে থেকে।কি যেন হয়ে গেলো।বিভান ও বেরিয়ে এলো বেলা কে খুঁজতে আঁধারে মিলিয়ে গেছে বেলা।বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে।বিভান খুঁজতে লাগে বেলাকে তখনই বন্দনা আখতার এসে বললেন,
''কিরে বেরিয়ে এলি যে এই বৃষ্টিতে?"
''মা ও কেন বেরিয়ে গেলো?কি হয়েছে বলো তো?"
''জানিনারে বাবা।তোর বৌ কি করে কিছু বুঝিনা।পার্টিতে চল।"
বিভান অবাক চোখে মায়ের পানে চেয়ে চিৎকার করে  বলল,
''মা কি বলছো?বেলা বেরিয়ে গেছে কান্নারত অবস্থায় আর আমি পার্টি করবো?"
''তাহলে কি বাসায় যাবি?"
''ওকে খুঁজবো।"
বন্দনা আখতার কি মনে করে পার্টিতে ঢুকে গেলেন।বিভানের খুব অবাক লাগলো।বেলা বেরিয়ে গেছে আর মা পার্টি এঞ্জয় করতে গেছে?বিভান চটজলদি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।বেলা কে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।বিভান দারোয়ানকে কল দিয়ে জানালো বেলা গেলে ওকে যেন কল করে জানায়।দারোয়ান সম্মতি জানাতেই বিভান কল কেঁটে দিলো।
এদিকে বেলা বিশমিনিটে বাড়ি পৌছে যায়।গায়ের শাড়ীটা চুপচুপে ভেজা।চোখ মুছে ঘরে ঢুকে যায় বেলা।রুমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে কাঁদতে শুরু করে চিৎকার করে।আর পারছেনা ও।এতোটাদিন যেনতেন ভাবে নিজেকে সামলে নিলে ও আজ পারছেনা বেলা।এভাবে থাকা যায়না আর।ও বাঁচতে পারবেনা আর।বেলা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুমে আসে।তারপর ফোন টা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে আসে।কষ্টটা হয়ত কারোর সাথে শেয়ার করতে পারলে বুকের ভেতরটা অনেকটাই হালকা হবে।এ মুহূর্তে কাকে কল দেবে ও?বেলা বেশি চিন্তা ভাবনা না করে সাঁঝের নম্বরে কল দেয়।এদিকে বেলা কে খুঁজতে খুঁজতে প্রায় পনের মিনিট পার হওয়ার পর বিভান দারোয়ান থেকে কল পায়।সে জানায় বেলা ঘরে ঢুকেছে।বিভান বাসার জন্য রওনা হয়।ঘরে পৌছেই রুমে এসে থমকে যায়।বেলা কার সাথে যেন কেঁদে কেঁদে কথা বলছে।কথা গুলো শুনে মনে হলো বাংলাদেশের কারোর সাথে কথা গুলো হচ্ছে।বেলা বলছিলো,
''সাঁঝ আমি আর পারছিনা।আমি আর নিতে পারছিনা এগুলো।"
অপরপাশ থেকে সাঁঝ ভয় পেয়ে বলল,
''কি হলো আপা কাঁদছিস কেন?"
তারপর বেলা বলল, 
''ওনার দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু সহ্য করে নিয়েছিলাম রে।কিন্তু আজ যা হলো আমি সত্যিই পারছিনা আর।"
''বল না কি হয়েছে?খুব ভয় লাগতেছে।আপা বলনা।"
''বিয়ের পর থেকে মা আমাকে মেনে নিতে পারছেনা রে।এই তেরোটা বছরে আমাকে কম শাস্তি দেয়নি ওনি।আমার গায়ে হাত তুলেছিলো এখানে যেদিন প্রথম আসলাম।অনেক বার গায়ে হাত তুলেছে।আর ওনি তো নিজের বংশধর কে মেরে ফেললোরে।আমার বাচ্চাটাকে ওনিই মেরে ফেললো।সেদিন সিড়ি দিয়ে নামছিলাম।ওনি ও নামছিলো আমার পিছু পিছু।জলদি নামতে বলে অনেক জোরে ধাক্কা দিলো আমি পড়ে গেলাম সিড়ি দিয়ে।এর পর ওনি আমাকে ডাকতে লাগলো আমি বন্ধ্যা।তুই বুঝতে পারছিস তখন আমার কেমন লাগতো?কতো কষ্ট হতো?আমার তো দোষ ছিলোনা।নিজের ভাইজি কে বিভানের সাথে জড়ানোর চেষ্টা করছে ওনি।আমাকে বলে তুমি চলে যাও আমার ছেলের জীবন থেকে।আমি  যখন মানা করলাম।পুরো পার্টিতে বলল আমি ওনার বৌ না।ওনার রক্ষিতা।টাকার জন্য ওনার সাথে থাকি।ওনার সাথে শুই।পুরো পার্টিতে আমাকে অপমান করলো।মরে যাবো আমি।"
বেলা গুমড়ে কেঁদে উঠলো।সাঁঝ ও কাঁদছে।এদিকে বিভানের মনে হচ্ছে ও কি শুনলো এগুলো?ওর হাতপা অবশ মনে হচ্ছে।আর শোনার সাহস টাও পেলোনা বিভান।বুকটা প্রচন্ড ভারি হয়ে আসছে।কোথায় যেন চিনচিন করে তীব্র ব্যাথা হচ্ছে।বিভান বেরিয়ে গেলো সশব্দে দরজা ভিড়িয়ে।বিভানের দরজা লাগানোর শব্দে বেলা পিছনে তাকিয়ে ভাঙ্গা গলায় বলল,
''সাঁঝ কে যেন ছিলো এতক্ষন।যদি ওনি হয়?"
সাঁঝ কান্না জড়িত অভিমানী গলায় বলল,
''আপা আমি বুঝতে পারছিনা তুই কেন বলিসনি ভাইয়াকে এতোটা বছর?আমাদের জানাস নাই কেন?কেন চুপ ছিলি বলতো?নিজের বাচ্চার জন্য হলে ও মুখ খুলতি।আপা খুব ভুল হইছে।বিভান ভাই এখন জানলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে তোর কারনে।তুই ওনাকে কিছু জানাস নাই।বন্দনা আন্টির কারনে ওনি শক পাবেন অনেক।কিন্তু তোর কারনে ওনি কষ্ট পাবেন।কেন বললিনা এতোদিন?কেন এতো সহ্য করলি বল?কেন নিজের মা হওয়ার শক্তি হারালি আপা?শুধু বন্দনা আন্টির জন্য?ছিঃ ওনি কিভাবে পারলো?"
বেলা হঠাৎ বলল,
''সাঁঝ আমি নিচে দেখি আসি ওনি এসেছিলো কিনা।"
''ওকে আপা জানাস।আর ভাই না থাকলে ও জানিয়ে দিবি সব।"
বেলা কিছু না বলে কল কেঁটে রুম থেকে বের হতেই দেখলো বিভান রুমের দিকো এগিয়ে আসছে।বিভানকে বেশ রাগান্বিত মনে হচ্ছে।বেলা কিছু বলতে যাবে বিভান তার আগে ওকে টেনে রুমে এসে দরজা লাগায়।ওর চোখজোড়া বড্ড লাল হয়ে আছে।তবে ক্লান্ত লাগছে চোখ গুলোকে।বেলা বলল,
''বিভান কখন আসলেন আপনি?"
বিভান ওর কথার জবাব দিচ্ছেনা।বেলা ওর কাছে এসে বিভানের হাত ধরে বলল,
''কি হলো?আমার শরীরটা খারাপ লাগছিলো তাই চলে আসলাম।"
বিভান অনেকটাসময় নিয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
''মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করো প্লিজ।আর কতো মিথ্যা কথা বলবে বেলা?"
''বিভান কি বলছেন এসব?আমি কি মিথ্যা বললাম?"
''তুমি কি মিথ্যা বলোনি বলতে পারবে?ইন্ডিয়া আসার পর থেকে এই তের বছর যাবৎ মিথ্যে বলছো।কেন বেলা?কার জন্য?ঐ নারীর জন্য যার মা হবার কোন যোগ্যতা নাই।যে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলছে?বেলা তুমি কেন এমন করলে?কেন জানতে দিলেনা একবারো?"
চিৎকার করে বলছিলো বিভান।বেলা কেঁপে উঠতে থাকলো।ওর চোখজোড়া ভারি হয়ে আসছে।বিভান ওর দিকে এক ধাপ এগিয়ে বলল, 
''বেলা মেরে ফেলেছো আমাকে।তুমিই আর ঐ নারী মিলে আমাকে মেরে ফেলেছো।"
বেলা কাঁদতে কাঁদতে বিভানের হাত জড়িয়ে বলল,
''প্লিজ বিভান!!কথা শুনেন আমি চাইনি মা আর আপনার সম্পর্ক খারাপ হোক।আপনার বাবা নেই আপনার সাথে।আমি চাইনি মাকে ও হারান।"
''বেলা মা আমি অনেক আগেই হারিয়েছি যেদিন আমার সন্তানকে হারিয়েছি।তবে সবই ঘটেছিলো আমার অজান্তে।"
বেলার হাত ছাড়িয়ে বলল বিভান।বেলা বিভানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''মাফ করে দেন প্লিজ।আর কখনো হবেনা।"
বিভানের হাত বেলাকে ধরছেনা।
''আর হওয়ার জন্য বাকি রেখেছো কি?"
প্রানহীন কন্ঠে বলল বিভান।বেলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
''বিভান!!!"
''ঠিকইতো কি বাকি রেখেছো বলো হওয়ার জন্য?সব শেষ বেলা।সন্তানহারা হলাম আমি তোমার জন্য।তোমার না বলার জন্যই আমার বাচ্চা হারিয়েছি।"
বেলা সরে এসে বলল, 
''বিভান কি বললেন?আমার কারনে?"
''তো?তোমার সাথে এমন অন্যায় কন্সিভ করার আগ থেকেই হচ্ছিলো রাইট?"
বেলা কেঁদে মাথা ঝাঁকায়।বিভান ওর কাঁধ চেঁপে ধরে চিৎকার করে বলল,
''তখন কেন জানাওনি?কেন জানতে দাও নি সব কিছু?"
''তখন তো নতুন বিয়ে ছিল।মনে হচ্ছিল ওনি মেনে নিতে সময় নিবেন।"
কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল বেলা।বিভান চিৎকার করে বলল,
''তোমার এই ভাবনার কারনেই আমার বাচ্চা চলে গেছে।"
''বিভান প্লিজ এমন বলবেননা।আমিও খুব কষ্টে ছিলাম সেদিনের পর থেকেই।"
''কষ্টে ছিলা তুমি।তাই আর একবার ও জানানোর চেষ্টা করোনি।প্রত্যেকবার চুপ ছিলা।কেন?বোবা তুমি?কথা বলতে পারতেনা?বেলা আমি কষ্ট পেয়েছি।তোমার থেকে এমনটা আশা করতে পারিনি।"
''বিভান!!!"
বিভান দরজা খুলতেই বেলা কেঁদে বলল,
''প্লিজ শুনেন।"
বিভান ওর দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো।বিভান বেলা আর সাঁঝের কথা শুনে বন্দনা আখতারকে কল দিয়েছিলো ঘরে আসতে।বন্দনা আখতার বলেছিলেন বের হচ্ছেন।কিছুসময় পর ওনি ও চলে এলেন।বিভান ড্রয়িংরুমে বসেছিলো।বন্দনা আখতার নিজ রুমে চলে গেলেন।বিভান কিছু সময় পর উঠে সিড়ির দিকে এগুতে থাকে।ও ভাবছে মা শব্দটা কতো মধুর তাইনা?এমন মা কি হয় আদৌ?মা শব্দটার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে বিভানের।যে মাকে ভালবেসে কাছে রেখেছিলো সেই মা ওর পিঠে এভাবে ছুরিকাঘাত করবে ভাবতে পারেনি বিভান।মায়ের রুমের সামনে দাঁড়ালো বিভান।বন্দনা আখতার ছেলে কে দেখে বললেন,
''বিভান আয় ভিতরে।"
বিভান ভিতরে প্রবেশ করে নিঃশব্দে। বন্দনা আখডার বললেন,
''কিছু বলবি বাবা?"
বিভান শান্ত গলায় বলল,
''কি বলবো?বলার মতো কিছু নেই।শুধু কষ্ট হচ্ছে আমি এতিম হয়ে গেলাম পুরো পুরি।"
''বাবা কি বলছিস এসব?"
''মা বলতে জানেন ঘেন্না লাগছে আমার।আপনাকে মা বললে জানে মায়ের জাতির অপমান হবে।সেটা করতে পারবোনা।কারন আল্লাহ তা'লা মায়েদের অনেক সম্মান দিয়েছেন।তো মিসেস শেখ আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি এই মুহূর্তে।আপনার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।ভালো মানুষের সাথে সম্পর্ক থাকে কোন খুনির সাথে নয়।আসলে আপনি তো মানুষই না।কারন মানুষ হলে অন্তত নিজের সন্তানের দিকটা বিবেচনা করে আমার বাচ্চাটাকে বাঁচতে দিতেন।আপনি তো প্রানী ও না।প্রানীদের ও নিজের সন্তানের জন্য মায়া থাকে।আপনি কি?কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আপনার সাথে।কোন শাস্তি দিবোনা আপনাকে।কারন আমার চলে যাওয়াটা আপনার জন্য সবচেয়ে বড় শাস্তি হবে।"
........................বেলার সাথে কথা শেষ করে সাঁঝ প্রচন্ড কাঁদতে থাকে রুমে বসে।বাবা পাশের রুমে।ও কি করবে?কাকে বলবে?ওর বোন কষ্টে আছে অনেক কষ্টে আছে আপা।ভাই ও নিজের রুমে ঘুম।কাকে জানাবে ও?কি করবে সাঁঝ?হঠাৎ জুলেখা বানুর ডাক পড়লো।ওনি বললেন,
''সাঁঝ আদনান আর নিশাদরে চা কইরা দে।সাঁঝ চোখ মুছে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।চুলায় চায়ের পানি চাঁপিয়ে ফোনের দিকে তাকায়।ফোনটা অনেক সময় যাবৎ কেঁপে উঠছে। সাঁঝ ফোন উল্টো করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।কি করবে ও এখন?ভাইকে জানাতে হবে।কিন্তু বাবা বাসায়।চা বানিয়ে নিশাদের রুমে এলো সাঁঝ।আদনান আর নিশাদ গল্প করছে।দুজনকে চা দিয়ে সাঁঝ ওদের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।আদনান বলল,
''কিছু বলবি?"
সাঁঝ কিছু বলতে পারেনি।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।নিশাদ বলল,
''আদনান দরজা লাগা।সাঁঝ কি হলো কাঁদোস কেন?কে কি বলল?কলেজে যাওয়ার সময় কিছু বলছে কেউ বল না?"
আদনান দরজা লাগানোর পর সাঁঝ কেঁদে বলল,
''ভাইয়া আপা খুব কষ্টে আছে।যা আমরা কখনো জানতে পারিনি বুঝতে পারিনি।আপা অনেক কান্না করতেছে।"
নিশাদ উঠে দাঁড়ায়।ওর মুখে চিন্তার ছাপ।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
''মানে কি?কি হইছে ঠিক মতো বল।আপার কি হইছে?"
সাঁঝ সব খুলে বলল।আদনান আর নিশাদ স্তব্ধ।আদনান বলল, 
''আপা কখনো কিছু জানায় নি।কেন? "
''আমি জানি না।মনে হয় বিভান ভাই ও জেনে গেছে।"
নিশাদ চুপ।ওর চোখের কোন ছলছল করছে।নিশাদ কিছু সময় চুপ থেকে বলল,
''আম্মা যেন না জানে।আমি আপার সাথে পরে কন্টাক্ট করবো।"
''জি ভাইয়া।"
কান্না জড়িত গলায় বলল সাঁঝ।নিশাদ বলল,
''রুমে গেলাম।তুই চোখ মুছে রুমে যা।চিন্তা করিসনা।"
কথা গুলো বলে নিশাদ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন