দুইদিন হয়ে গেলো নাদিয়া এইবাড়িতে এসেছে।অধরাও এই দুইদিনে বাড়ির সবাইকে নিজের করে নিয়েছে।
নাদিয়া ড্রইংরুমে এসে দেখে ডাইনিং টেবিলে সবাই আছে। নিবিড়ের পাশে প্রিয়তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,প্রিয়তা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো।রিসাদ তাড়াতাড়ি এসো।অধরাকে স্কুলে দিয়ে তুমি অফিসে যেও।
নিবিড় প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে, আমার ফাইলগুলো নিয়ে এসো।
কথাটা বলেই নিবিড় উঠে যেতেই মোশারফ হোসেন বললো,কি ব্যাপার খাওয়া শেষ করে যাও।
-বাবা আমার খাওয়া হয়ে গেছে।
রিসাদ এসে দাঁড়াতেই,রিসাদ সাহেব, নয়টায় আমার একটা মিটিং আছে। আপনি অধরাকে দিয়ে চলে আসবেন।
-জ্বি।
সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হতেই , প্রিয়তা রুমে এসে যাক বাবা সবাই খেয়ে নিলো। সকাল সকাল এই এক টেনশন।কিন্তু মিস্টার নিবিড় তো তেমন কিছু খেলেন না।একবার ফোন করে বলবো অফিসে কিছু খেয়ে নিতে?
প্রিয়তা নিজের ফোন নিয়ে ফোন দিতেই নিবিড় ফোন কেটে দিলো।
ওই রাক্ষস ফোন ধরিস না কেন? যাহ্ বাবা আমি এইসব আবার কী বলি?
প্রিয়তা আবার ফোন দিতেই,স্যার ম্যাডাম ফোন দিচ্ছে আপনি কথা বলে নিন।
নিবিড় মিটিং এর সবার দিকে একবার তাকিয়ে প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড!
-ওই তোমার সমস্যা কী?
-কোনো সমস্যা না।কি করছেন আপনি?
- বানর নাচ দেখাচ্ছি।
-ওমা আপনি বানর নাচ দিতে পারেন? যে ভাবে গোমড়া মুখ করে থাকেন দেখেতো মনে হয় না ওসব নাচ নাচতে পারেন।
-জাস্ট শেটাপ।কি সব বোকা বোকা কথা বলছো।তুমি কীভাবে কলেজে চাকরিটা ফেলে আমার মাথায় আসে না।প্রিয়তা তুমি জানো না আমার নয়টায় মিটিং। তারপর কেনো ফোন দিয়েছো? একে তো ফোন দিয়েছো আবার কি সব ভুলবাল কথা শুনাচ্ছো।
-আচ্ছা বাদ দিন।আপনি তো না খেয়ে চলে গেলেন।অফিসে কিছু খেয়ে নিবেন। সে জন্যই ফোন দিলাম।
-হোয়াট? নিবিড় দাঁত খিচিয়ে, তোমার কি মনে হয়ে আমার এখানে বউ আরেকটা আছে? সে আমার জন্য অফিসে রান্না করে? আর মিটিং রেখে তোমার জন্য আমি এখন খাওয়া নিয়ে বসবো?
-ধূর ছাই,আপনাকে যেটাই বলি সেটাতেই সমস্যা।পেট আপনার বুজলেন।আমার কী শুধু শুধু টেনশন করে?
প্রিয়তার কথা শুনে নিবিড় নরম গলায় বললো,আচ্ছা ঠিক আছে, আমি মিটিং শেষ করে বাহিরে খেয়ে নিবো।আমি জানি তুমিও খাওনি এখন গিয়ে খেয়ে নিবে।
প্রিয়তা অবাক হয়ে কিছু বলতেই ভুলে গেলো।এই ফাঁকে নিবিড় ফোন কেটে দিয়ে মিটিংএ আবার যোগ দিলো।
প্রিয়তা ঘোর কাটতেই কি এক আজব মানুষ, কখনো গাঢ় কালো মেঘ আবার কখনো ভোরে আকাশে একফালি সূর্যের মুচকি হাসি। রাক্ষস একটা।হনুমান, কালা বানর।টোমেটো পঁচা,পেয়াজ পঁচা।আর কি বলা যায়? যাইহোক পরে মনে হলে বলবো।
প্রিয়তা শেফালীর সাথে রান্নার জোগাড় করে দিয়ে,রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখে জুহি মন খারাপ করে কলেজ থেকে এসে ড্রইংরুমে বসে আছে।
-কী হলো জুহি,মন খারাপ কেনো?
-ভাবী আমি তো ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি।আজ পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।
-তাতে কী হয়েছে? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি।ফাইনাল ভালো হলেই তো হলো।আমি জানি আমার ননদী একবার খারাপ করেছে কী হয়েছে শেষ কিন্তু তার ভালো হবেই তাই না জুহি?
-জুহি মুচকি হেসে,আচ্ছা ভাবী তুমি সবকিছুকে এতোটা সহজ করে কীভাবে নাও? ভাইয়া কাল বাড়ি ছেড়ে কেনো গেছে কেউ না জানলেও আমি জানি।তবে পরে হয়তো বউকে ছাড়া থেকতে পারছে না দেখে চলে এসেছে।
প্রিয়তা জুহির কান টেনে ধরে,তবেরে,,,, এতো ফাঁকি বাজি করলে পড়া মনে থাকবে?
-ওহ্ ভাবী ছাড়ো, আমি কিন্তু সবাইকে বলে দিবো তুমি আর ভাইয়া ছাদে কি করেছো।
প্রিয়তা জুহির কান ছেড়ে দিয়ে,ওকে দাও।আমিও বলে দিবো আমার ননদী লুকিয়ে লুকিয়ে মাহিদ সাহেব আসলে আড় চোখে তাকায়।
জুহি অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে।
-তাকিয়ে লাভ নেই,তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসেন।মাথার ভেতর যে চিন্তাটা ঢুকেছে ওইটা বের করে পড়ায় মনোযোগ দিন।আপনার ভাইয়া শুনলে কিন্তু এইটার জন্য রেহাই দিবে না।প্রিয়তা আর কিছু বললো না, উপরে উঠে যেতেই নাদিয়া নেমে আসছে।প্রিয়তা মুচকি হেসে আপু অধরা এখনো এলো না?
-না! নিবিড় ফোন দিয়েছে ও আসার সময় নাকি নিয়ে আসবে।
-কিন্তু ওনি তো দুপুরে আসে না।
প্রিয়তা কথাটা বলে শেষ করতেই নাদিয়া সামনে নিচের দিকে তাকিয়ে, ওই তো ভাই এসে গেছে।
কথাটা শুনে প্রিয়তা পিছনে ফিরে অবাক হয়ে নিচে তাকিয়ে, সত্যিই তো।অধরা আগে এসেই মাকে জড়িয়ে ধরেছে।আর নিবিড় ফোনে কথা বলতে বলতে উপরে দিকে উঠে এসেই প্রিয়তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ফোন রেখে দিয়ে সুরু চোখে তাকিয়ে, কী দেখছো এমন করে?
-আপনাকে! না অধরাকে।কতো কিউট একটা বাচ্চা তাই না?
-হুম অনেক কিউট।তোমার মতো তো না।
কথাটা বলে নিবিড় রুমে চলে গেলো।প্রিয়তা পিছন পিছন না গিয়ে আবার নিচে চলে এলো।
নিবিড় চেইঞ্জ করে নিজের ফোনটা টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে প্রিয়তার ফোনে নজর পড়তেই কিছুটা অবাক হলো।এতো গুলো এসএমএস?
দরজার দিকে তাকিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে,এসএমএস গুলো পড়তেই নিবিড় নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
প্রথম এসএমএস,আজ তোমায় অনেক সুন্দর দেখাছিলো।হালকা গোলাপি রঙের শাড়িটা বেশ মানিয়েছে।
দ্বিতীয়,
নিবিড় লোকটা তোমায় কিচ্ছু দিবে না।কিন্তু আমি তোমায় দেবো আমার ভালোবাসা। আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে সাজিয়ে রাখবো।
৩য়, তোমাকে দেখে আমার পুরোনো স্মৃতিগুলো আবার মনে পড়ে গেলো।কারণ আমার ভালোবাসা তো মিথ্যা ছিলো না।কিন্তু তোমার ছলনার কাছে আমার সব হেরে গেছে।কারণ তুমি তো নিবিড়ের মতো টাকা ওয়ালা একজনকেই চেয়েছো তাই না?
নিবিড় আরও কয়েকটা এসএমএস পড়ে ফোনটা খাটের ওপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
প্রিয়তা এসে,আরে আপনি এখনো ফ্রেশ হতে যাননি?
আচ্ছা দুপুরে এতো তাড়াতাড়ি তো আপনি বাসায় আসেন না। আজ হঠাৎ?
নিবিড় কথা বলছে না দেখে,জানেন আজ অধরার আমায় কী বলে? ও নাকি আমাকে খুব,,,,,,, প্রিয়তা আর কিছু বলতে পারলো না।
নিবিড় এক হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে খাটে শুইয়ে প্রিয়তার ঠোঁটে নিজেকে আবদ্ধ করে নিলো।
প্রিয়তা নিজেকে অনেকক্ষণ যাবত ছাড়ানোর চেষ্টা করার পর নিবিড় ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, এখন ভালো লাগে না? মাত্র তো ঠোঁট দুটোকে বন্ধ করলাম এতেই এই অবস্থা?
প্রিয়তা কান্নাজড়িত চোখে, কী করলেন আপনি এইটা? আপনি আসলেই একটা বাজে লোক।
-মিসেস প্রিয়তা আমি বাজে, বদমেজাজী, রাক্ষস। এসব আগে থেকেই। নতুন করে বলার বা শুনার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।
কথাটা বলে প্রিয়তাকে টেনে দাঁড় করে নিজের সামনাসামনি, কিন্তু নিবিড় তার স্ত্রীকে অন্যের হতে দেখলে কখনো সহ্য করবে না।
প্রিয়তা কিছু না বলে কান্না করেই যাচ্ছে।নিবিড় সামান্য ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে, ন্যাকা কান্না বন্ধ করো,আর তোমাকে এই শাড়িটা পরতে যেনো আমি না দেখি।
নিবিড় প্রিয়তার কাছে এগিয়ে এসে কাঁধ দুটো ধরে ঝাঁকিয়ে,দরকার প্রয়োজনে পুরো শপিংমল আমি বাড়িতে বসিয়ে দিবো।কিন্তু তবুও এই শাড়িটা যেনো না দেখি।
প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো কেনো করছেন পাগলের মতো আপনি এইসব? কী করেছি আমি? আপনি আজ যা করলেন আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না।
নিবিড় প্রিয়তাকে কিছু না বলে ধাক্কা দিয়ে খাটের দিকে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা সেখানেই বসে বসে কান্না করছে।নিবিড়ের স্পর্শটা মনে হলেই প্রিয়তার কান্নার গতি আরও বেড়ে যায়।কেনো করলেন আপনি এইরকম? আমি সবসময় ভাবতাম আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করবেন না।সব ছেলেদের মতো আপনি না।আপনি সবার থেকে আলাদা।নিবিড় কখনো মেয়েদের শরীরের উপর,,,,,,
ছিঃ আমার এখন আপনাকে নিয়ে ভাবতেও ইচ্ছে করছে না।
নিবিড় ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে প্রিয়তা সেখানেই দম মেরে বসে আছে।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।
নিবিড় কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে খেতে চলে গেলো।
দুইদিন কেটে গেলো প্রিয়তা একটা কথাও নিবিড়ের সাথে বলেনি।সারাক্ষণ চুপ করেই থাকে।সন্ধ্যায় নিজের রুমে এসে লাইট জ্বালাতেই দেখে রিসাদ বসে আছে।
-তুমি এখানে অন্ধকারে কী করছো?
-আমার প্রশ্নের উত্তর।
-কিসের প্রশ্ন?
-সেদিন এসএমএস করলাম না? তারপর থেকেই তো দেখছি নিরব হয়ে থাকো ব্যাপার কী?
প্রিয়তা অবাক হিয়ে রিসাদকে কিছু না বলে দৌড়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সব এসএমএস আগেই সিন করে রাখা হয়েছে তাই প্রিয়তার চোখে পড়েনি।
প্রিয়তা রিসাদকে কিছু বুজতে না দিয়ে,তুমি কি এখান থেকে যাবে নাকি আমি বাবা মাকে ডেকে সবার সামনে তোমার আসল রূপটা দেখাবো।
রিসাদ মুচকি হেসে, প্রমাণ করবে কীভাবে? কারণ এসএমএস গুলোতো আমি আমার নাম্বার থেকেই দিইনি।আর যদি এইরুমে এসেছি তাও প্রশ্ন আছে,আমি তোমার রুমে আসতেই পারি এতে খারাপ কিছু ভাবার কি আছে?
-রিসাদ দেখো,তোমার ভুল ভাবনাগুলো দূরে সরিয়ে সুন্দর করে একবার ভেবে দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।নাদিয়া আপু তোমাকে কত ভালোবাসে। তারপরেও তোমার কিসের কমতি আছে বলো?
-তোমার কমতি আছে।
-শেটাপ,নিবিড় জানতে পারলে নিজের অবস্থার কথা একবার ভেবে দেখেছো কী হবে?
-নিবিড় তো কখনো জানবেই না।প্রিয়তা নাদুকে আমি ছেড়ে দিলে সমস্যা নেই।তার বড় লোক ভাই আছে।সব সামলে নিবে।কথাটা বলে প্রিয়তার কাছে এগিয়ে আসতেই প্রিয়তা রিসাদের গালে জোরালো ভাবে একটা থাপ্পড় দিয়ে, এটা অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিলো। আপুর যদি কিছু হয়েছে তুমি কি ভাবো ? তুমি পার পেয়ে যাব? তোমাকে আমি আবারও সাবধান করছি এইবাড়ির জামাই হয়ে এসেছো জামাই হয়েই থাকো।