খাবার শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে রুমে আসার জন্য পা বাড়ায় বেলা।ওর একটাই ভয় যদি বিভান জেগে থাকে।তখনই ওপর থেকে বিভানের ডাক।চিৎকার করে ডাকছে বেলাকে,
''বেলা!!কি হলো কই তুমি?"
বেলা কেঁপে উঠে।কিছু না বলে দাঁড়িয়ে যায় সেখানে।বিভান আবার চিৎকার করলো,
''অপেক্ষা করছি তোমার।আসছো না কেন?"
বেলা এবার বলল,
''লজ্জা নেই আপনার এভাবে চিৎকার করছেন?আসছি আমি।"
বেলা উঠে ধীরে ধীরে হেঁটে রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।হালকা চাপানো দরজা।বিভানকে দেখতে পেলোনা ও।দরজা ঠেলে রুমে ঢুকতেই ওর কোমড় চেঁপে ধরে অনেকটা কাছে টেনে নেয় বিভান। বেলা ভয় পেয়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে বিভান শক্ত করে ধরে বলল,
'"কি হলো ম্যাম?আমি আপনার পার্সোনাল প্রপার্টি চিনতে পারছেননা?"
বেলা বিভানকে ধরে বলল,
''না তেমন কিছু না।আপনি টায়ার্ড। সারাদিন খেঁটে ঘরে ফিরেন।রেস্ট নেয়া উচিৎ।"
''বেলা রাতের সময়টুকুই তোমাকে পাই।সারাক্ষন অফিসেই থাকতে হয়।অন্তত এ সময়টুকু আমাকে দিলেই পারো।"
বেলার মুখ মলিন হয়ে আসে।সেটা খেয়াল করে ওকে জড়িয়ে খাটে এনে বসায় বিভান।তারপর চিবুক ধরে বলল,
''কি হয়েছে?"
বেলা মাথা নেড়ে চুপ করে থাকলো।বিভান আবার বলল,
''ভালো লাগছেনা?"
''না তেমন কিছুনা।এক্চুয়ালি,,,"
''জি বলো।"
বেলা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
''আমি ও চাই আপনার সাথে কিছু সময় কাঁটাতে।আপনাকে কতোটা সময় দেখতে পাইনা।"
বিভানের সুন্দর মুখটা হাসিতে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে।বেলার কোমড়ে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে দিতে বলল,
''বেলা!!! "
বিভানের বুকে মাথা রেখে বলল,
''জি।"
''তোমার জন্য কিছু এনেছিলাম।আজ পরতে হবে।"
''কি বলুন।"
বিভান বেলাকে সরিয়ে আলমারি থেকে একটা বক্স এনে বেলার পায়ের কাছে এসে বসলো।তারপর বেলার একটা পা ওর হাঁটুর ওপর রেখে সেখানে সুন্দর একটু নুপুর পরিয়ে দিলো।বেলা হেসে বলল,
''আপনি যেভাবে বলছিলেন ভাবলাম কি না কি?তের বছর আগের কথা মনে পড়ে গেলো।সেদিন ও তো এমনই একটা নুপুর গিফট করেছিলেন।"
''হুম। পছন্দ হয়েছে?"
''খুব।"
পায়ের নুপুরটিকে ছুঁয়ে বলল বেলা।বিভান এবার বেলার পাশে এসে বসে ওর চিবুক ধরে মুখটা নিজের দিকে নিয়ে আসে।বেলা চোখ বুজে বলল,
''কেন এভাবে কাছে টেনে নেন বলুন তো?এটা জানার পর ও যে কখনো মা হতে পারবোনা আমি।"
এতক্ষন চোখ বুজে বেলাকে কাছে টানছিলো বিভান।বেলার কথা শুনে থেমে গেলো ও।তারপর বেলার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
''আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের সহায় অবশ্যই হোন।আমাদের ও হবে।কোন ডাক্তার বলেনি আমরা মা বাবা হতে পারবোনা।সময় লাগছে আমাদের।ও চলে আসবে।হয়ত ও চাইছে বাবা মা একটু এঞ্জয় করে নিক।আমি আসলে তো সেটা হবেনা।তাইনা?"
দুষ্টু হেসে বলল বিভান।বেলা চোখ বুজে বলল,
''অসভ্য লোক।"
বিভান হো হো করে হেসে উঠে।তারপরও বেলাকে জড়িয়ে নেয় ভালবাসার চাদরে।এদিকে পরদিন নিশাদের নম্বরে একটা মেসেজ আসে ওর বেতন চলে আসছে ওর এ্যাকাউন্টে।নাস্তার টেবিলে বসে মেসেজ টিকে ওপেন করলো।তারপর চা টা খেয়ে উঠে গায়ে শার্ট জড়িয়ে বাবার কাছে এসে বসে।লোকটা অনেকটাই দূর্বল হয়ে গেছে হুমায়রা রুমাল ভিজিয়ে বাবার গা মুছে দিচ্ছে।নিশাদ বাবার কাছে এসে ওনার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
''আব্বা কি খাইতে মন চায় আপনার?"
ইকরাম রহমান চোখ খুলে ছেলের দিকে তাকায়।তারপর একটা হাত এগিয়ে ছেলের মাথা স্পর্শ করে বললেন,
''তোর যেডা মন চায় আন।"
''জি আব্বা আপনি তাহলে নাস্তা খেয়ে নেন।আমি বেতন টা নিয়ে কিছু বাজার ও করে আনি।"
নিশাদ উঠে যায়।তারপর ব্যাংকের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।ব্যাংকটা অতো দূরে নয় তাই হেঁটে রওনা হলো।সেখান থেকে ২৪০০০ টাকা তুলে বাজারে এলো।দু কেজি গরু মাংস আর এক কেজি পোলাউর চাল নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।কোরবানি তে কিছু দিতে পারেনি ফেমিলিকে। আজ অন্তত ঈদের মজাটা পেতে দোষ কি?সাঁঝ টিউশানির জন্য বেরিয়েছিলো সাতটায়।ছুটির দিন তো তাই সকালে পড়িয়ে আসবে ও।রিদ্ধিকে পড়িয়ে ওদের বাসা থেকে বেরিয়ে লিফটে উঠতেই রিদ্ধির মামা সাদেক সাহেবের সাথে দেখা হলো।সাঁঝ একটু হেসে সরে দাঁড়ায়।সাদেক সাঁঝের দিকে একটু সরে এসে বলল,
''বাসা কই আপনাদের?"
''কাঁঠাল বাগান।"
একটু সরে এসে বলল রিদ্ধি।লোকটা আবার ওরদিকে সরে বলল,
''কি করেন আপনি?"
''অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি।"
রিদ্ধি সরে আসে।লোকটা আবার দিকে আসতেই আরেকজন লোক ভিতরে ঢুকলো।সাদেক বলল,
''আপনার দাঁড়াতে প্রবলেম হচ্ছে ম্যাডাম?"
সাঁঝ কিছু না বলে ওয়ালের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ায়।পাশের লোকটা সানগ্লাস পরা।তারপর ও সাঁঝের মনে হলো লোকটা ওকে আর সাদেককে দেখছে।সাদেক হেসে তাকালো সানগ্লাস ওয়ালা লোকটির দিকে।লোকটা হঠাৎ লিফটের রুলস গুলোয় তাকিয়ে বলল,
''এখানে আরেকটা রুলস থাকা উচিৎ ছিলো।"
সাদেক হেসে বলল,
''মনে হচ্ছে সব রুলস আছে।"
''তবে লাগানো দরকার মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য।লিফটে মেয়েদের সাথে ভদ্র ব্যাবহার করুন।"
বলে একটু হাসলো লোকটা।সাঁঝের হাসি আসলে ও মুখ লুকিয়ে নেয়।সাদেকের হাসি ছুঁটে গেলো।লোকটা আবার সাদেককে বলল,
''আপনাকে আগে দেখিনি।"
''বাহির থেকে আসছি বোনের বাসায়।"
''ওহ।তো এখানেই থাকবেন?"
''হ্যা।দুলাভাই তো আছে বাবার মতন।অন্যখানে থাকতে দেয় না।"
লোজটা আবার বলল,
''ভালো।"
লিফট নিচে চলে এলো।সাদেক বেরুনোর পর সাঁঝ বেরিয়ে আসে তারপরই ঐ লোকটা।সাঁঝের ইচ্ছে হচ্ছে লোকটাকে খুব করে ধন্যবাদ জানাবে।কিন্তু সাহস পায়নি।লোকটা বেশ লম্বা।মুখে খোঁচা দাড়ি আছে।গায়ের থেকে খুব সুন্দর একটা ঘ্রান পাচ্ছিলো সাঁঝ পুরো লিফটে।লোকটা সাঁঝের দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো।সাঁঝ বাসে উঠে ঘরের জন্য রওনা হয়।এদিকে নিশাদ নিজ হাতে মাংস রান্না করবে হুমায়রা বসাতে চেয়েছিলো কিন্তু নিশাদের মতো রান্না কেউ করতে পারেনি।বিশেষ করে মাংস।তাই হুমায়রা ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।নিশাদ বড় পাতিলে পুরোটা মেখে নিচ্ছে।লাবনী শসা কাঁটছে।বিভিন্ন ডিজাইন বানাচ্ছে।সেটা দেখে কুঞ্জন বলল,
''শসা ব্যাথা পাচ্ছে আরো আস্তে কাঁট।কোন কাজেরই না।"
লাবনী মুখ উঠিয়ে ভেঁংচি কাঁটতেই আদনান খালি গায়ে বেরিয়ে এসে বলল,
''লাবনী তুই ছুড়ি ধরেছিস কেন?হাত কাঁটবে তোর।"
''না ভাই কাঁটবেনা।তুই বোস নাস্তা দিচ্ছি।"
''তাড়া হুড়া করবিনা আস্তে কাঁট।"
লাবনী কেঁটে উঠে দাঁড়িয়ে কুঞ্জন কে ভেংচি দিয়ে পাকঘরে চলে গেলো।কুঞ্জন বাহির থেকে বলল,
''চুড়েল একটা।"
ভিতর থেকে লাবনী কান্না করে বলল,
''বড় ভাইয়া দেখ৷ না কুঞ্জন ভাইয়া কি করছে?"
নিশাদ চুুলায় মাংস দিয়ে বলল,
''ও বললেই কি তুই হয়ে গেলি না কি গাঁধি?"
লাবনী আদনানের নাস্তা নিয়ে এলো।আদনান বলল,
''ভাই কি করে?"
লাবনী হেসে বলল,
''ভাইয়া মাংস এনেছে।রান্না করছে।"
''ওহ।সাঁঝ কই?ভাইয়া কেন রান্না করছে?"
''আপু টিউশানিতে গেছে।"
''ওহ।তোরা খেয়েছিস?"
''হুম।"
সাঁঝ ঘরে ঢুকেই রুমে গিয়ে দরজা লাগায়।ভীষন ভয় পেয়েছিলো লিফটের ভিতর।ভাগ্যিস লোকটা ঢুকেছিলো নয়ত বাজে কিছু হতে পারতো ওর সাথে।
কাপড় পাল্টে বেরিয়ে আসতেই জুলেখা বানু বলল,
''পোলাউ বসায় দেয় সাঁঝ।তোর ভাইয়ে মাংস চড়ায় দিছে।"
সাঁঝের বেশ ভালো লাগলো।উড়না কোমড়ে বেঁধে পাকঘরে আসতেই দূর্দান্ত ঘ্রান ওর নাকে এসে লাগে।ভাইয়ার রান্না করা মাংস কষে য়াওয়ার আগেই সুগন্ধ ছড়ায়।হুমায়রা মাংস নাড়ছে।সাঁঝ পোলাউয়ের চাল ধুয়ে দিতে দিতে বলল,
''তোর রেজিস্ট্রেশন কালকে না?"
''জি আপু।ভাইয়া টাকা দিছে।"
''হুম।দেখ মন দিয়ে পড়াশুনা কর।তাহলে ভাইয়ার কষ্ট গুলো অনেকটা কমে যাবে।"
সারাবাড়ি পোলাউ আর মাংসের ঘ্রানে মৌ মৌ করছে।লাবনী আর কুঞ্জন খাওয়ার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। বাবাকে উঠিয়ে নিয়ে আসে সাঁঝ আর আদনান।তারপর সবাই বসে যায় খেতে। খাওয়ার মাঝেই জুলেখা বানু কেঁদে উঠে।খেতে পারেননা ওনি।ইকরাম রহমান রেগে তাকায় স্ত্রীর দিকে।জুলেখা বানু উঠে রুমে চলে এলেন।সাঁঝ ও চলে আসে মায়ের পিছু পিছু।
সাঁঝ বলল,
''আম্মা খায় নাও।কি হইছে তোমার?"
''কেমনে খামু কও?আমার মাইয়াডা কি খাইছে ন খাইছে আর আমি পোলাউ খাইতাছি।"
সাঁঝ আবার বলল,
''ভাইয়া শখ করে মাংস রান্না করছে। একটু খাও।আপুরে ভিডিও কল দিয়া দিবো নে। "
''সত্যিই দিবি তো?"
কান্না জড়িত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন জুলেখা বানু।সাঁঝ বলল,
''দিবো এবার চলো তুমি।"
মাকে নিয়ে খাওয়ার টেবিলে এলো সাঁঝ।সবাই মিলে খেয়ে নিলো।
!!!!
ঘরে ফিরে স্ত্রীকে না দেখে বিস্মিত হয় বিভান।নিচে ও পায়নি। হয়ত মায়ের রুমে আছে।আজ একটু জলদি ফিরেছে বিভান। কাজের চাপ অতো ছিলোনা সেজন্যই।দিল্লিতে জন্ম বিভানের।একজন ভারতীয় নাগরিক আর সফল ব্যাবসায়ী।বেশ নাম ডাক ও আছে ওর।শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বেলার অপেক্ষা করছে বিভান হঠাৎ চোখ পড়লো বেলার ফোনে।সেখানে ভিডিও কল উঠে আছে। আগেই বিশটার মতো এসেছিলো।বিভান নম্বর চেক করে দেখলো কল আসছে বাংলাদেশ থেকে।একটু হেসে নেয় পরক্ষনে ভাবলো বেলা কই?এতক্ষন যাবৎ কল আসছে ও ধরেনি তারমানে অনেকসময় পর্যন্ত রুমে নেই ও।বিভান ওয়াশরুমে চলে যায়।ভেবেছে হয়ত বেলা চলে আসবে।কিন্তু পনেরমিনিট গেলো বেলা ফেরেনি।বেলার ফোনটা হাতে নিয়ে বিভান রুম থেকে বেরিয়ে আসে।নিচে এসে এঘর ওঘর খুঁজতে থাকে।কাজের লোকগুলো ওকে দেখে সরে গেছে।অনেকটা সময় পর্যন্ত বেলাকে না পেয়ে বেলার কাজের মেয়ের রনীতা কে জিজ্ঞেস করে,
''ম্যাম কই?"
''ম্যাম ছাদে গেছে।মরিচ বাটে।"
''হোয়াট?"
বিভান রেগে দৌড়ে ছাদে চলে আসে।বেলা ওরদিকে পিঠ দিয়ে বসে মরিচ বাটছে।বিভান ওর পিছে এসে দাঁড়ায়।বেলার চোখজোড়া বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়াচ্ছে।মেয়েটার পিঠে সমস্যা।এভাবে বসে থাকতে পারেনা।ওর পিঠের এমন দুটো হাড় অকেজো যেগুলো বাবু ধারন করতে সাহায্য করে।ডাক্তার ওদের বলেছিলো এমন কোন কাজ বেলা যেন না করে।নাহলে ওদের বাবা মা হওয়ার পসিবিলিটি শেষ হয়ে যাবে। রেগে চিৎকার করে উঠে বিভান। ও বলল,
''কি করছো এগুলো?"
বেলার হাত থেমে যায়।কেঁপে উঠে ও।লোকটা এসময়ে বাসায় কেন?বেলা বলল,
''আপনি চলে এসেছেন?এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে?"
''বেলা আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয়।তুমি কেন করছো এগুলো।ডাক্তার মানা করেছিলো তোমাকে।"
''বেশি না তো।হয়ে গেছে আমার। একটু অপেক্ষা করুন।"
বিভান ওর দু কাঁধ ধরে বলল,
''তুমি এগুলো করছোনা আর।ব্লেন্ডারে বাটা হবে এই সব গুলো। "
''কি যে করেননা।হয়ে গেছে যান প্লিজ।"
কথাটা বলেই চোখের ওপর থেকে চুল সরাতে গিয়ে মরিচ ওয়ালা হাত চোখে লেগে যায় ওর।দুচোখ বুজে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো,
''পানি পানি!!জ্বলে যাচ্ছে!!!
''ইরেসপনসিবল কেমনে হও এতো?"
রেগে বেলা কে কোলে তুলে নেয় বিভান।ওদের দেখে কাজের লোকগুলো কানাকানি করতে থাকে।ড্রয়িংরুম পাস করার সময় বিভান কাজের লোক গুলো কে বলল,
''ছাদের বাকি মরিচগুলো ব্লেন্ডারে পিষে দে।"
বেলাকে রুমে এনে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দেয় বিভান।তারপর জোরে জোরে পানি ঝাপটা দিতে থাকে বেলার চোখে।এবার একটু স্বাভাবিক হলো বেলার চোখ তারপর ও খুলতে পারছেনা।বিভান গেঞ্জীর এককোনা মুখে ঢুকিয়ে গেঞ্জীটা একটু গরম করে বেলার চোখে চেঁপে ধরে।বেলার চোখ একদম লাল হয়ে গেছে।বিভান চোখে ফুঁ দিয়ে বলল,
''জ্বলছে?"
বেলা মাথা নেড়ে বলল,
''না।"
বেলাকে নিয়ে খাটে বসালো বিভান।তারপর মুখটা মুছে দিয়ে আবার রাগান্বীত কন্ঠে বেশ জোরেই বলল,
''বাসায় আবার মরিচ বাটা কবে থেকে খাচ্ছে?"
''আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো ইলিশ মাছ বাটা মরিচ দিয়ে ভুনা করে খেতে।"
বিভান রেগে বলল,
''এগুলো তোমার কাজ?এতো গুলো কাজের লোক থাকতে কেন করতে গেলে?"
''ওদের চুল পড়ে।"
''উফ তুমি আর তোমার কথা বার্তা।ভালো একটা কাপড় পরে নাও।"
বেলা হেসে বলল,
''কেন?কোথাও যাবেন?"
''যাচ্ছো নাকি পরিয়ে দেবো।"
''যাচ্ছি আমি।"
হালকা পিংক কালারের একটা শাড়ী পরে আসে বেলা।চুল গুলো কে খোপায় গুঁজে নিয়েছে ও।কপাল বরবার কালো ছোট্ট একটা টিপ।বিভান বলল,
''এখন লাগছে আমার বৌ।একটু আগে তোমাদের ভাষায় কি যেন বলো কাজের বেটি জরিনা লাগছিলো।"
বেলা হেসে বলল,
''লাগতেই হবে আমি শেখ বাড়ির বৌ।"
আঁচল কোমড়ে গুঁজে দিলো বেলা।বিভান বলল,
''বৌ হতে গিয়ে পিঠের কথা ভুলে গেছো।তোমার বাসা থেকে কল এসেছিলো।"
বেলার মুখ একদম মলিন হয়ে গেলো।বিভান উঠে ল্যাপটপ নিয়ে এসে সেই একই নম্বরে কল দিলো।বেলা বিভানের পাশে এসে বসে।রিং হচ্ছে।বেলার কান্না পাচ্ছে। একমাস পর মানুষ গুলো কে দেখবে ও।ওর নিজের মানুষ গুলো কে।এদিকে সাঁঝ গিয়ে জুলেখা বানুকে ডাকতে লাগলো।আপুকে কল করছিলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছিলো না।আম্মা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।এখন কল এসেছে ওদের বহুল প্রতীক্ষিত কল।রুমে অনেক আগ থেকেই সবাই উপস্থিত।শুধু মাত্র আব্বা ছাড়া।আব্বা জানলে ও সমস্যা আছে।আম্মাকে যখন ডাকছিলো সাঁঝ পাশ থেকে ইকরাম রহমান বললেন,
''একটু আগে শুইলো সমস্যা কি?"
''আব্বা কাজ আছে।আম্মারে লাগবে।"
''পরে এখন না।যা তুই।"
''আব্বা আপনি বুঝবেননা মারে লাগবে।"
শেষমেষ ঘুম ভাঙ্গলো জুলেখা বানুর।মেয়ের দিকে রাগান্বিত চোখে চেয়েছিলেন ইকরাম রহমান কিন্তু কিছু বলেননি।ওরা আদনানের বন্ধু মীজান থেকে ল্যাপটপ ধার এনেছে মডেম সহ।ঘন্টায় একশত টাকা। মা কে নিয়ে রুমে ঢুকতেই কুঞ্জন লাবনীর পিঠে গুতো দিয়ে বলল,
''যা দরজা আটকা।"
''যাবো আরকি?এজন্য এভাবে পিঠে মারতে হয়?বড় ভাইয়া কিছু বলো না ওকে?"
নিশাদ চোখ রাঙ্গাতেই কুঞ্জন নিচে তাকায়।লাবনী দরজা আটকে সাঁঝ আর হুমায়রার মাঝে এসে বসে। আদনান কল রিসিভ করতেই বেলার চেহারা সবার সামনে ভেসে উঠে।বেলা কি বলবে তাই জানে না।গুঁমড়ে কেঁদে উঠে বলল,
''আম্মা!!!"
জুলেখা বানু ও কাঁদতে শুরু করলো মেয়েকে দেখে,
''আমার বেলা কই গেলি তুই?কোন দুরসাগরে গেলি আম্মারে!!!বুকটা ফাঁটে যখনই তোর কথা মনে পড়ে!!!"
লাবনী রীতিমতো হাসতে শুরু করেছে সাথে কুঞ্জন ও।বেচারা বিভান ও লুকিয়ে থাকতে পারেনা।তেমন একটা বুঝতে পারেনা ওদের কথা তারপর যা শুনলো হাসি পাচ্ছে।তারপর ও হাসা যাবে না কারন ওর বেলারানী কাঁদছে।খাটে এসে বসে বিভান।সাথে সাথে সাঁঝ হুমায়রা কাপড় ঠিক করে সালাম দেয় বিভানকে।বিভান সালামের উত্তর দিয়ে বেলাকে স্বাভাবিক করতে থাকে।এদিকে সাঁঝ আর হুমায়রাও মাকে স্বাভাবিক করে।বেলার কান্না থেমেছে তারপর ও চোখ জোড়া টলটল করছে।বেলা সবাইকে দেখে নিচ্ছে।নিশাদ বলল,
''আপা কেমন আছিস?"
''তোদের দেখে ভালো লাগছে।তোরা কেমন আছিস?"
''ভালো।ভাই ভালো আছেন?"
''হুম।তোমাদের দেখে ভালো লাগছে।আসসালামু আলাইকুম মা।ভালো আছেন?"
জুলেখা বানু কান্না জড়িত চোখে বলল,
''ভালো। তুমি কেমন আছো আব্বা?"
বেলা বিভানকে বলল,
''মা ভালো আছে।আপনি কেমন আছেন সেটা জানতে চাইলো?"
''জি মা ভালো।"
লাবনী এসে বলল,
''আপা ভালো আছিস?"
''হ্যা পুচকি তোর কি খবর?"
''এই তো আলহামদুলিল্লাহ। "
বিভান বলল,
''লাবনী বড় হয়ে গেছো অনেক।"
''আপনি ও তো বুড়ো হয়ে গেছেন।"
বিভান হেসে বলল,
''ঠিক বলেছো একদম।"
আদনান বলল,
''সবাই কেমন আছে বাসার?"
বেলা হেসে বলল,
''ভালো আছে।ঈদ কেমন গেলো?"
নিশাদ বলল,
''ভালো আপা।"
বেলা বিভানকে বলল,
''একটু পানি আনবেন প্লিজ?"
বিভান নিচে গেলো পানি আনতে। বেলা বলল,
''গত দুমাসের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলি।সব ঠিক আছে তো?"
নিশাদ বলল,
''আপা জবের আগে টাকা দিয়েছিলি।এখন তো জব হয়ে গেছে।তাই পাঠিয়ে দিয়েছি।"
''এগুলো আমি পাঠিয়েছিলাম।অনলাইন বিজনেসে কিছু টাকা আয় করেছিলাম সেগুলো।বিভান জানেননা বিজনেসের কথা।"
''এতো ঝামেলা করে পাঠাতে হবেনা।আমি করছি তো সব।"
''কেন আমার টাকা নিলে কি ছোট হয়ে যাবি তোরা?"
কিছুটা রেগে গেলো বেলা।নিশাদ চুপ হয়ে গেলো।কারোর সাহায্যে থাকতে চায়না ও।বেলা ওর বড় বোন কিন্তু সে ও তো পরের ঘর করে।অবশ্যই কষ্ট করে টাকা গুলো আয় করেছিলো।বিভান পানি নিয়ে ফিরে এলো।ওদের কথার টপিক পাল্টে গেলো।অনেকটা সময় পর্যন্ত কথা হলো সবার।কথা শেষে আদনান দেড়শ টাকা সহ ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে গেলো বন্ধুকে দেয়ার জন্য।নিশাদ উঠে রুমে চলে এলো।বোন বেলার সাথে ওর সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক এমনকি ওর নির্ভরতার জায়গা ছিলো বেলা এখন ও আছে।তবে আগের মতো কথা হয়না ওদের। কারন বাবা এখন বিভান ভাইকে জামাই হিসেবে মেনে নিতে পারেননি।বাবার অমতে বিয়েটা হয়েছিলো বেলার।নিজেও তো সেদিন বেলার বিপক্ষে চলে গিয়েছিলো।বেলা কে ঘর ছাড়তে হয়েছিলো অপমানিত হয়ে।নিশাদের মনে পড়ে যায় পনের বছর আগের কথা।ওদের একটা সুন্দর সময়ের কথা যখন ওর সবাই একসাথে ছিলো ভালো ছিলো।বেলা চোখ মুছে সরে যায়।কাপড় পাল্টে খাটে এসে বসে।বিভান বলল,
''ঠিক আছো?"
''হুম।বিভান আমার কি অধিকার নেই ওদের সাহায্য করার?"
''অবশ্যই আছে।ওনাদের মেয়ে বড় বোন তুমি।আগে কেন বলোনি?"
''লজ্জা!!লজ্জায় আপনাকে বলতে পারিনি।"
''বেলা তুমি যেমন এই বাসার বৌ আমি ও জামাই ঐ বাসার।আমার ও দায়িত্ব আছে তাদের প্রতি।ওনাদের রাগ ক্ষোভ জায়েজ।যা করেছিলাম সেটা কোন সমাজ মেনে নিতে পারবেনা সহজে।"
''পরিস্থিতিটা কেমন ছিলো।সেটা তো আপনার ধারনায় আছে।"
''হুম তবে সামলে নিতে পারতাম অন্যভাবে।"
বেলা উঠে বলল,
''এখন এসব বলবেননা।আমার ভালো লাগছেনা।"
বিভান চুপ হয়ে যায়।বেলা পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।চোখে ভেসে উঠে ওর সেই জীবনটার কথা।যখন মুক্ত বিহঙ্গের মতোই ছিলো।