সকালের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো বেলার উজ্জ্বল শ্যামলা কাঁধে লেগে যে আলোর ঝলকানি দিলো।বেলা আর বিভান দুজনকেই আদর করে আলো সূর্যের এই আলো।সবসময়কার মতো সাতটায় ঘুমভাঙ্গে বেলার।পাশে তাকিয়ে বিভানকে দেখতে পায় ও।তার বুকের ওপর বেলা শুয়ে আছে।বেলা উঠে বসতে গেলে হাতে টান লাগে ওর।পাশে তাকিয়ে দেখে বেলা। বিভান হেসে বেলাকে বুকে টেনে নেয়।বেলা বিভানের বুকে পড়তেই ওর বেলার কিছু চুল কপালের ওপর চলে আসে।বিভান বেলার চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
''বাহ সারারাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ম্যাডামের কই যাওয়া হচ্ছে এখন?"
বেলার মুখে দুষ্টুমির হাসি।ও বলল,
''এই তেরোটা বছরে যদি এতোটুকু ও না করতে পারি তাহলে আর কিসের বৌ হলাম?"
''হুম তাই নাকি?আসো তাহলে আরেক্টু...........
নেশা ধরানো কন্ঠে কথাট বলে বিভান বেলাকে টেনে নিয়ে ওর গলায় ঠোঁট ছোঁয়াতে যেতেই বেলা বিভানের বুকে হাত চেঁপে ধরতেই বিভান আর আগাতে পারেনা।বেলা হেসে বলল,
''একদম না।উঠে ফ্রেশ হন।আমার কাজ আছে।"
''বেলা প্লিজ না করোনা।"
বেলাকে আরেকটু টেনে নেয়।বেলা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
''যান গিয়ে ফ্রেশ হন।আমি নাস্তা রেডি করি।"
বিভান উঠে এসে বেলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে নাক ডুবায়।ঘুমন্ত গলায় বলল,
''বেলা শুনো।"
''হুম।"
''আজকে না ইলিশ মাছের চচ্চড়ী করো প্লিজ।"
''ওকে।বাট আপনি কবে থেকে খান।"
কিছুটা অবাক ভঙ্গিতে বিভানের দিকে তাকিয়ে বলল বেলা।বিভান ওর গালে ঠোঁট বুলিয়ে বলল,
''আরে কাল সকালে অফিসে যাওয়ার পথে অনেক সুন্দর সুন্দর মাছ দেখতে পেলাম যে।আমার না খুব খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো।"
''ওকে।তো নিয়ে এসেন।ভালো দেখে মাছ আনবেন।যাতে ডিম না থাকে।"
''ওকে।শুনো ঝাল কম দিও।আর হ্যা মরিচ বাটতে বসে যেওনা।পরে সারারাত ঘুমাতে পারবানা হাত জ্বলে জ্বলে বলে।"
''আচ্ছা।"
বেলা হেসে ফেলে।বিভান বেলাকে ছেড়ে আলমারির দিকে এগিয়ে এসে পিছে ফিরে বলল,
''গাইনেকোলজিস্ট রুমানা খন্দকার আজ যেতে বলেছিলেন।"
গাইনিকলোজিস্টের নাম শুনে বেলা বিভানের দিকে তাকায়।বিভান বলল,
''বিকেলে আমরা যাবো ওকে?"
''আচ্ছা।"
বেলার মনে যেন আশার আলো জেগে উঠে।বিভান বেলার দিকে তাকিয়ে বুঝলো বেলার মনে ওর কথাটা কতোটা প্রভাব ফেলেছে।বেলার চোখের কোনে জ্বলজ্বল অশ্রুগুলো ওর ভেতরের অস্থিরতা আর চিন্তা কে জানান দিচ্ছে।বেলার চোখ ভারি হয়ে আসছে।বারবার ঢোক গিলছে।হাত থেকে কাথাটা পড়ে গেলো।বিভান হেঁটে ওর দিকে এগিয়ে এসে বেলাকপ নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
''চিন্তা করোনা।যা হবে ভালোর জন্যই হবে।"
''আমার খুব ভয় করছে না জানি ওনি কেন যেতে বলেছেন?"
''হয়ত কোন উপায় খুঁজে পেয়েছেন।"
''তাই যেন হয়।"
বেলাকে টেনে নেয় বুকে বিভান।ওর চুল হাতিয়ে দিতে থাকলো আলতো করে।
নাস্তা সেড়ে বিভান বেরিয়ে যায় মাছ আনতে।বেলা ব্লেন্ডারে কিছু মরিচ পিষে নেয়।বন্দনা আখতার সিড়ি বেয়ে নামার সময় ব্লেন্ডারের আওয়াজ পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে নিচে নেমে আসে।তারপর রেগে বলল,
''কোন ধরনের অভিনয় চলছে এসব?"
''অভিনয় কোথায় দেখলেন? মরিচ পিষা হচ্ছে।আপনার ছেলে ইলিশ চচ্চড়ি খাবে।"
শান্ত সুরে বলল বেলা।ওনি রেগে বললেন,
''ভালোই তর্ক শিখেছিস।দেখি তোর এই তর্কের ঝাঁঝ কতদিন থাকে।"
বেলা ম্লান হেসে বাঁটা মরিচগুলো বাটিতে বেড়ে নেয়।কিছুক্ষনের মাঝেই বিভান চলে আসে।তবে মায়ের সাথে এখন ও কথা হয়নি ওর সেদিনের পর থেকে।বন্দনা আখতার ও ছেলেকে তেমন ঘাঁটাননি।বিভান এসে বেলার কাছে মাছ দিয়ে বলল,
''কাঁটিয়ে এনেছি একেবারে।তুমি জলদি বসাও। "
''জি।"
বিভান বন্দনা আখতারের দিকে একবার তাকিয়ে বেলার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
''শুনো তাড়াতাড়ি রান্না করে নিও।বের হতে হবে কিন্তু।"
''জি।"
বিভান উপরে চলে যেতেই বন্দনা আখতার ও ভেংচি কেঁটে চলে গেলেন নিজের রুমে।
.................বিকেলে হুমায়রা রেডি হয়ে নেয়।আজ একটু সেজেছে ও।আজ ওর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেখে লাবনী বলল,
''বসহ একেবারে গোলাপ ফুল লাগছে আপু।কই যাস? "
''তোকে সব বলতে হবে?"
রেগে চোখে কাজল লাগাতে থাকে হুমায়রা।লাবনী বলল,
''খারাপ কিছু বলেছি।বাহ আজকালকার মহিলাদের প্রশংসা ও করতে নেই।একদম জ্বলে উঠে।"
''কই জ্বলে উঠলাম?সব জায়গায় এতো নাক গালাস কেন?যা বললাম।"
''জানি তো ডেটে যাচ্ছো। সবাই কে বলে দিবো।"
হুমায়রা এবার রেগে গেলে ও নিজেকে সামলে নেয়।কারন রাগের মাথায় কি না কি বলে দেয় কে জানে?শান্ত গলায় হুমায়রা বলল,
''আরে নাহ আজ মুনতাহার জন্মদিন। সেখানেই যাচ্ছি।"
''ওহ।আমার জন্য কিছু আনবিনা আপু?"
''কি খাবি বল?"
একটু হেসে জিজ্ঞেস করে হুমায়রা।লাবনী বলল,
''যাপাস তাই নিয়ে আসবি।"
''ওকে।"
হুমায়রা সাজ কম্পলিট করে বলল,
''আসি তাহলে।"
স্টারকাবাবে এসে বসলো হুমায়রা।আগে হৃদয় ঋেলেটার সাথে তেমন দেখা হয়নি ওর।কিভাবে বুঝবে কে জানে।অবশ্য আইডিতে ছেলের ছবি দেয়া ছিলো তবুও।চিন্তা হচ্ছে হুমায়রার।হঠাৎ ও দেখে দরজা খুলে ঢুকলো কালো শার্ট পরিহিত একটা ছেলে।উজ্জ্বল শ্যামলা।চুল গুলোর এক কোনা হালকা গোল্ডেন কালার করা।মুখে হাসি।দেখতে বেশ ছেলেটা।হাতের শার্ট গুঁটাতে গুঁটাতে হুমায়রার কাছে এসে বলল,
''কি চিনতে পারোনি?"
হুমায়রা বেশ অবাক।তারপর ও ধারনা করে বলল,
''আপনি হৃদয়?"
''জি ম্যাম।"
বলেই হুমায়রার পাশের চেয়ারে বসলো ছেলেটা।
হুমায়রা মুচকি হেসে বলল,
''আসলেই চিনতে পারিনি।"
ছেলেটা রসিকতায় হেসে বলল,
''ভালোইতো আনলিমিটেড রোম্যান্সের পরদিন সকালে বলবে আপনি কে গো আপনাকে তো চিনতেই পারলামনা।"
প্রথম দেখায় রোম্যান্সের কথায় প্রচন্ড অবাক হুমায়রা ভ্রু কুঁচকে তাকায় হৃদয়ের দিকে।হৃদয় ওর চাহনি দেখে বলল,
''কিরে সিরিয়াস হয়ে গেলা নাকি?বোকা মেয়ে মজা করছিলাম আমি।"
বলেই হেসে ফেলে হৃদয়।হুমায়রা ও যেন সস্তি পেয়ে হাসতে শুরু করে।হাসি থামিয়ে হৃদয় জানতে চাইলো,
''বলো কি খাবে?"
''কিছুনা।"
কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল হুমায়রা।হৃদয় বলল,
''তা কি হয়?আমাদের ফাস্ট দেখা হলো আর কিঋুই খাবেনা তুমি?"
হুমায়রা আমতা আমতা করছিলো।হৃদয় ওয়েটারকে ডেকে,
''খাসির পায়া আর দুটো পরটা।"
''জি স্যার আর কিছু?"
''আগে এগুলো দাও।পরে আবার বলছি।"
''জি স্যার ধন্যবাদ।"
ওয়েটার চলে গেলো।স্টারকাবাবে দুজনে খাসির পায়ার ঝোল আর রুমালী রুটি খেলো।আর দুটো ফালুদাও।সেখান থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলো ধানমন্ডি লেকের পথে।এখান থেকে অবশ্য একদমই কাছে লেক।তাও হৃদয় বারবারই বলছিলো রিক্সা নেবে কিনা।কিন্তু হুমায়রা মানা করে দিলো।নতুন দেখা হওয়ার পর এভাবে রিক্সায় পাশাপাশি বসতে কেমন যেন লজ্জা লাগছিলো হুমায়রার।হৃদয় সেটা বুঝতে পেরে হাঁটতে শুরু করে লেকের পথে।
..................এদিকে সাঁঝ রিদ্ধিকে পড়াচ্ছিলো।পড়ানোর মাঝেই দেয়াল ঘড়িটায় একবার চোখ বুলায় ও।রিদ্ধি সাঁঝের তাড়া দেখে বলল,
''কোথাও যাবে আপু?"
''আরে না। পড়ো তুমি।"
''ওকে।"
রিদ্ধির পড়া শেষ হতেই সাড়ে পাঁচটার বেশি বেজে গেলো। সাইমন বলেছিলো পাঁচটায় নিচে এসে ওর অপেক্ষা করতে।না জানি সে কতোটা রেগে আছে।সাঁঝ নিচে নেমে দেখলো সাইমন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে।মুখে কিছুটা গম্ভীরতার ছোঁয়া।সাঁঝ বলল,
''রিদ্ধি কে পড়াতে দেরি হয়ে গেলো।অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলেন বুঝি?"
''আরে নাহ।আমি বুঝেছিলাম তোমার ওকে পড়াতে দেরি হচ্ছে।"
''ধন্যবাদ।"
সাইমন গাড়ির দরজা খুলে সাঁঝকে বসতে দিয়ে নিজে ও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।সাঁঝ সাইমনের দিকে চেয়ে একটু হাসলো।সাইমন বলল,
''গাড়ি এ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে।প্লিজ এখন হেসোনা।"
''আমি হাসলে গাড়ি কেন এক্সিডেন্ট হবে আজব?"
''তোমার হাসি দেখে কখন আবার গাড়ি চালানো রেখে তোমাকে দেখতে শুরু করি।তখনতো এ্যাক্সিডেন্ট হবেই তাইনা?"
''বুঝলাম আর পাম মারতে হবেনা।জলদি চলুন ঘরে ও ফিরতে হবে।"
''হুম।চলো।"
......................এদিকে সেদিন সন্ধ্যায় নিশাদ ঘরে ফিরে এসে লাবনী কে বলল,
''তোর আদনান ভাইয়া কই?"
''ভাইয়া রুমে।ডাকবো?"
''ডাকতে হবেনারে আমিই যাচ্ছি।"
লাবনী জুলেখা বানুর কাছে চলে গেলো।নিশাদ আদনানের রুমে চলে আসে।আদনান পেপারে জবের খোঁজ করছে।নিশাদ বলল,
''আদনান একটা কথা আছে তোর সাথে।"
পেপার থেকে মাথা উঠিয়ে ভাইকে দেখে আদনান বলল,
''জি ভাইয়া বল।"
নিশাদ আদনানের পাশে এসে খাটে বসে বলল,
''একটা জবের কথা বলতাম।"
''জি ভাইয়া বলনা।"
''মোহাম্মদ পুরে ভালো একটা কোম্পানীর খোঁজ পেয়েছিলাম।বেতন ও ভালো।কাল গিয়ে ইন্টারভিউ টা দিয়ে আয়।"
''কখন ইন্টারভিউ?"
''সকাল এগারোটায়।"
''ওকে।তুই এ্যাড্রেসটা দিস।আমি চলে যাবো।"
''তোকে আমি দিয়ে দিবো খাওয়ার পর।একটু কাজ আছে আমার।"
''জি ভাইয়া।"
নিশাদ বেরিয়ে এসে রুমে গিয়ে বসে অফিসের কাহ করতে বসে। হঠাৎ ইমতিয়াজের কল এলো ওর ফোনে।নিশাদ ইমতিয়াজের নম্বর দেখে চিন্তায় পড়ে যায়।ইমতিয়াজ কেন কল করলো হঠাৎ।কল রিসিভ করে কাজ মন দেয় নিশাদ।ইমতিয়াজ অপরপাশ থেকে বলল,
''তুই ঠিক আছিস?"
''হুম।কেন?"
''আজ আসলি না যে পড়াতে?"
নিশাদ কিছুটা চিন্তা করে বলল,
''দোস্ত ওকে না কোন একটা কম্পিউটার ক্লাশে ভতি করা। "
''কেন?হঠাৎ এভাবে কেন বলছিস?তুই তোর ছোট বোনকে কম্পিউটার শিখাবি এতে আবার এতো কিসের কথা?"
ছোট বোনের কথায় নিশাদের বুকটা কেমন যেন করে উঠে।নিজেকে সামলে বলল,
''আরে নাহ সেটা না।ওখানে ও ভালো মতো শিখতে পারবে।"
''কেন ও তো তোর কাছেই ভাল মতো শিখছিলো।"
''আসলে আমি ওকে পড়াতে পারবোনারে।"
''কেন?"
''সময় কূলাতে পারছিনা।"
''তুই তো আগে বলিসনি নাহলে জোর করতাম না।আসলে কি হয়েছে বলতো?"
''এটাই।অফিসে একটু চাপ আছে তো।"
''আচ্ছা।তবে তোর কথায় আমার কেমন যেন লাগছে।যাই হোক বাসায় আসবি।"
''ওকে।বায়।"
নিশাদ ফোন কেঁটে কাজে মন দেয়।তবে বুকের ভেতর এক অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে যা কেউকে দেখাবার মতো নয়।
!!!!
সকালের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো বেলার উজ্জ্বল শ্যামলা কাঁধে লেগে যে আলোর ঝলকানি দিলো।বেলা আর বিভান দুজনকেই আদর করে আলো সূর্যের এই আলো।সবসময়কার মতো সাতটায় ঘুমভাঙ্গে বেলার।পাশে তাকিয়ে বিভানকে দেখতে পায় ও।তার বুকের ওপর বেলা শুয়ে আছে।বেলা উঠে বসতে গেলে হাতে টান লাগে ওর।পাশে তাকিয়ে দেখে বেলা। বিভান হেসে বেলাকে বুকে টেনে নেয়।বেলা বিভানের বুকে পড়তেই ওর বেলার কিছু চুল কপালের ওপর চলে আসে।বিভান বেলার চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
''বাহ সারারাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ম্যাডামের কই যাওয়া হচ্ছে এখন?"
বেলার মুখে দুষ্টুমির হাসি।ও বলল,
''এই তেরোটা বছরে যদি এতোটুকু ও না করতে পারি তাহলে আর কিসের বৌ হলাম?"
''হুম তাই নাকি?আসো তাহলে আরেক্টু...........
নেশা ধরানো কন্ঠে কথাট বলে বিভান বেলাকে টেনে নিয়ে ওর গলায় ঠোঁট ছোঁয়াতে যেতেই বেলা বিভানের বুকে হাত চেঁপে ধরতেই বিভান আর আগাতে পারেনা।বেলা হেসে বলল,
''একদম না।উঠে ফ্রেশ হন।আমার কাজ আছে।"
''বেলা প্লিজ না করোনা।"
বেলাকে আরেকটু টেনে নেয়।বেলা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
''যান গিয়ে ফ্রেশ হন।আমি নাস্তা রেডি করি।"
বিভান উঠে এসে বেলাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে নাক ডুবায়।ঘুমন্ত গলায় বলল,
''বেলা শুনো।"
''হুম।"
''আজকে না ইলিশ মাছের চচ্চড়ী করো প্লিজ।"
''ওকে।বাট আপনি কবে থেকে খান।"
কিছুটা অবাক ভঙ্গিতে বিভানের দিকে তাকিয়ে বলল বেলা।বিভান ওর গালে ঠোঁট বুলিয়ে বলল,
''আরে কাল সকালে অফিসে যাওয়ার পথে অনেক সুন্দর সুন্দর মাছ দেখতে পেলাম যে।আমার না খুব খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো।"
''ওকে।তো নিয়ে এসেন।ভালো দেখে মাছ আনবেন।যাতে ডিম না থাকে।"
''ওকে।শুনো ঝাল কম দিও।আর হ্যা মরিচ বাটতে বসে যেওনা।পরে সারারাত ঘুমাতে পারবানা হাত জ্বলে জ্বলে বলে।"
''আচ্ছা।"
বেলা হেসে ফেলে।বিভান বেলাকে ছেড়ে আলমারির দিকে এগিয়ে এসে পিছে ফিরে বলল,
''গাইনেকোলজিস্ট রুমানা খন্দকার আজ যেতে বলেছিলেন।"
গাইনিকলোজিস্টের নাম শুনে বেলা বিভানের দিকে তাকায়।বিভান বলল,
''বিকেলে আমরা যাবো ওকে?"
''আচ্ছা।"
বেলার মনে যেন আশার আলো জেগে উঠে।বিভান বেলার দিকে তাকিয়ে বুঝলো বেলার মনে ওর কথাটা কতোটা প্রভাব ফেলেছে।বেলার চোখের কোনে জ্বলজ্বল অশ্রুগুলো ওর ভেতরের অস্থিরতা আর চিন্তা কে জানান দিচ্ছে।বেলার চোখ ভারি হয়ে আসছে।বারবার ঢোক গিলছে।হাত থেকে কাথাটা পড়ে গেলো।বিভান হেঁটে ওর দিকে এগিয়ে এসে বেলাকপ নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
''চিন্তা করোনা।যা হবে ভালোর জন্যই হবে।"
''আমার খুব ভয় করছে না জানি ওনি কেন যেতে বলেছেন?"
''হয়ত কোন উপায় খুঁজে পেয়েছেন।"
''তাই যেন হয়।"
বেলাকে টেনে নেয় বুকে বিভান।ওর চুল হাতিয়ে দিতে থাকলো আলতো করে।
নাস্তা সেড়ে বিভান বেরিয়ে যায় মাছ আনতে।বেলা ব্লেন্ডারে কিছু মরিচ পিষে নেয়।বন্দনা আখতার সিড়ি বেয়ে নামার সময় ব্লেন্ডারের আওয়াজ পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে নিচে নেমে আসে।তারপর রেগে বলল,
''কোন ধরনের অভিনয় চলছে এসব?"
''অভিনয় কোথায় দেখলেন? মরিচ পিষা হচ্ছে।আপনার ছেলে ইলিশ চচ্চড়ি খাবে।"
শান্ত সুরে বলল বেলা।ওনি রেগে বললেন,
''ভালোই তর্ক শিখেছিস।দেখি তোর এই তর্কের ঝাঁঝ কতদিন থাকে।"
বেলা ম্লান হেসে বাঁটা মরিচগুলো বাটিতে বেড়ে নেয়।কিছুক্ষনের মাঝেই বিভান চলে আসে।তবে মায়ের সাথে এখন ও কথা হয়নি ওর সেদিনের পর থেকে।বন্দনা আখতার ও ছেলেকে তেমন ঘাঁটাননি।বিভান এসে বেলার কাছে মাছ দিয়ে বলল,
''কাঁটিয়ে এনেছি একেবারে।তুমি জলদি বসাও। "
''জি।"
বিভান বন্দনা আখতারের দিকে একবার তাকিয়ে বেলার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
''শুনো তাড়াতাড়ি রান্না করে নিও।বের হতে হবে কিন্তু।"
''জি।"
বিভান উপরে চলে যেতেই বন্দনা আখতার ও ভেংচি কেঁটে চলে গেলেন নিজের রুমে।
.................বিকেলে হুমায়রা রেডি হয়ে নেয়।আজ একটু সেজেছে ও।আজ ওর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দেখে লাবনী বলল,
''বসহ একেবারে গোলাপ ফুল লাগছে আপু।কই যাস? "
''তোকে সব বলতে হবে?"
রেগে চোখে কাজল লাগাতে থাকে হুমায়রা।লাবনী বলল,
''খারাপ কিছু বলেছি।বাহ আজকালকার মহিলাদের প্রশংসা ও করতে নেই।একদম জ্বলে উঠে।"
''কই জ্বলে উঠলাম?সব জায়গায় এতো নাক গালাস কেন?যা বললাম।"
''জানি তো ডেটে যাচ্ছো। সবাই কে বলে দিবো।"
হুমায়রা এবার রেগে গেলে ও নিজেকে সামলে নেয়।কারন রাগের মাথায় কি না কি বলে দেয় কে জানে?শান্ত গলায় হুমায়রা বলল,
''আরে নাহ আজ মুনতাহার জন্মদিন। সেখানেই যাচ্ছি।"
''ওহ।আমার জন্য কিছু আনবিনা আপু?"
''কি খাবি বল?"
একটু হেসে জিজ্ঞেস করে হুমায়রা।লাবনী বলল,
''যাপাস তাই নিয়ে আসবি।"
''ওকে।"
হুমায়রা সাজ কম্পলিট করে বলল,
''আসি তাহলে।"
স্টারকাবাবে এসে বসলো হুমায়রা।আগে হৃদয় ঋেলেটার সাথে তেমন দেখা হয়নি ওর।কিভাবে বুঝবে কে জানে।অবশ্য আইডিতে ছেলের ছবি দেয়া ছিলো তবুও।চিন্তা হচ্ছে হুমায়রার।হঠাৎ ও দেখে দরজা খুলে ঢুকলো কালো শার্ট পরিহিত একটা ছেলে।উজ্জ্বল শ্যামলা।চুল গুলোর এক কোনা হালকা গোল্ডেন কালার করা।মুখে হাসি।দেখতে বেশ ছেলেটা।হাতের শার্ট গুঁটাতে গুঁটাতে হুমায়রার কাছে এসে বলল,
''কি চিনতে পারোনি?"
হুমায়রা বেশ অবাক।তারপর ও ধারনা করে বলল,
''আপনি হৃদয়?"
''জি ম্যাম।"
বলেই হুমায়রার পাশের চেয়ারে বসলো ছেলেটা।
হুমায়রা মুচকি হেসে বলল,
''আসলেই চিনতে পারিনি।"
ছেলেটা রসিকতায় হেসে বলল,
''ভালোইতো আনলিমিটেড রোম্যান্সের পরদিন সকালে বলবে আপনি কে গো আপনাকে তো চিনতেই পারলামনা।"
প্রথম দেখায় রোম্যান্সের কথায় প্রচন্ড অবাক হুমায়রা ভ্রু কুঁচকে তাকায় হৃদয়ের দিকে।হৃদয় ওর চাহনি দেখে বলল,
''কিরে সিরিয়াস হয়ে গেলা নাকি?বোকা মেয়ে মজা করছিলাম আমি।"
বলেই হেসে ফেলে হৃদয়।হুমায়রা ও যেন সস্তি পেয়ে হাসতে শুরু করে।হাসি থামিয়ে হৃদয় জানতে চাইলো,
''বলো কি খাবে?"
''কিছুনা।"
কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল হুমায়রা।হৃদয় বলল,
''তা কি হয়?আমাদের ফাস্ট দেখা হলো আর কিঋুই খাবেনা তুমি?"
হুমায়রা আমতা আমতা করছিলো।হৃদয় ওয়েটারকে ডেকে,
''খাসির পায়া আর দুটো পরটা।"
''জি স্যার আর কিছু?"
''আগে এগুলো দাও।পরে আবার বলছি।"
''জি স্যার ধন্যবাদ।"
ওয়েটার চলে গেলো।স্টারকাবাবে দুজনে খাসির পায়ার ঝোল আর রুমালী রুটি খেলো।আর দুটো ফালুদাও।সেখান থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলো ধানমন্ডি লেকের পথে।এখান থেকে অবশ্য একদমই কাছে লেক।তাও হৃদয় বারবারই বলছিলো রিক্সা নেবে কিনা।কিন্তু হুমায়রা মানা করে দিলো।নতুন দেখা হওয়ার পর এভাবে রিক্সায় পাশাপাশি বসতে কেমন যেন লজ্জা লাগছিলো হুমায়রার।হৃদয় সেটা বুঝতে পেরে হাঁটতে শুরু করে লেকের পথে।
..................এদিকে সাঁঝ রিদ্ধিকে পড়াচ্ছিলো।পড়ানোর মাঝেই দেয়াল ঘড়িটায় একবার চোখ বুলায় ও।রিদ্ধি সাঁঝের তাড়া দেখে বলল,
''কোথাও যাবে আপু?"
''আরে না। পড়ো তুমি।"
''ওকে।"
রিদ্ধির পড়া শেষ হতেই সাড়ে পাঁচটার বেশি বেজে গেলো। সাইমন বলেছিলো পাঁচটায় নিচে এসে ওর অপেক্ষা করতে।না জানি সে কতোটা রেগে আছে।সাঁঝ নিচে নেমে দেখলো সাইমন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে।মুখে কিছুটা গম্ভীরতার ছোঁয়া।সাঁঝ বলল,
''রিদ্ধি কে পড়াতে দেরি হয়ে গেলো।অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলেন বুঝি?"
''আরে নাহ।আমি বুঝেছিলাম তোমার ওকে পড়াতে দেরি হচ্ছে।"
''ধন্যবাদ।"
সাইমন গাড়ির দরজা খুলে সাঁঝকে বসতে দিয়ে নিজে ও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।সাঁঝ সাইমনের দিকে চেয়ে একটু হাসলো।সাইমন বলল,
''গাড়ি এ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে।প্লিজ এখন হেসোনা।"
''আমি হাসলে গাড়ি কেন এক্সিডেন্ট হবে আজব?"
''তোমার হাসি দেখে কখন আবার গাড়ি চালানো রেখে তোমাকে দেখতে শুরু করি।তখনতো এ্যাক্সিডেন্ট হবেই তাইনা?"
''বুঝলাম আর পাম মারতে হবেনা।জলদি চলুন ঘরে ও ফিরতে হবে।"
''হুম।চলো।"
......................এদিকে সেদিন সন্ধ্যায় নিশাদ ঘরে ফিরে এসে লাবনী কে বলল,
''তোর আদনান ভাইয়া কই?"
''ভাইয়া রুমে।ডাকবো?"
''ডাকতে হবেনারে আমিই যাচ্ছি।"
লাবনী জুলেখা বানুর কাছে চলে গেলো।নিশাদ আদনানের রুমে চলে আসে।আদনান পেপারে জবের খোঁজ করছে।নিশাদ বলল,
''আদনান একটা কথা আছে তোর সাথে।"
পেপার থেকে মাথা উঠিয়ে ভাইকে দেখে আদনান বলল,
''জি ভাইয়া বল।"
নিশাদ আদনানের পাশে এসে খাটে বসে বলল,
''একটা জবের কথা বলতাম।"
''জি ভাইয়া বলনা।"
''মোহাম্মদ পুরে ভালো একটা কোম্পানীর খোঁজ পেয়েছিলাম।বেতন ও ভালো।কাল গিয়ে ইন্টারভিউ টা দিয়ে আয়।"
''কখন ইন্টারভিউ?"
''সকাল এগারোটায়।"
''ওকে।তুই এ্যাড্রেসটা দিস।আমি চলে যাবো।"
''তোকে আমি দিয়ে দিবো খাওয়ার পর।একটু কাজ আছে আমার।"
''জি ভাইয়া।"
নিশাদ বেরিয়ে এসে রুমে গিয়ে বসে অফিসের কাহ করতে বসে। হঠাৎ ইমতিয়াজের কল এলো ওর ফোনে।নিশাদ ইমতিয়াজের নম্বর দেখে চিন্তায় পড়ে যায়।ইমতিয়াজ কেন কল করলো হঠাৎ।কল রিসিভ করে কাজ মন দেয় নিশাদ।ইমতিয়াজ অপরপাশ থেকে বলল,
''তুই ঠিক আছিস?"
''হুম।কেন?"
''আজ আসলি না যে পড়াতে?"
নিশাদ কিছুটা চিন্তা করে বলল,
''দোস্ত ওকে না কোন একটা কম্পিউটার ক্লাশে ভতি করা। "
''কেন?হঠাৎ এভাবে কেন বলছিস?তুই তোর ছোট বোনকে কম্পিউটার শিখাবি এতে আবার এতো কিসের কথা?"
ছোট বোনের কথায় নিশাদের বুকটা কেমন যেন করে উঠে।নিজেকে সামলে বলল,
''আরে নাহ সেটা না।ওখানে ও ভালো মতো শিখতে পারবে।"
''কেন ও তো তোর কাছেই ভাল মতো শিখছিলো।"
''আসলে আমি ওকে পড়াতে পারবোনারে।"
''কেন?"
''সময় কূলাতে পারছিনা।"
''তুই তো আগে বলিসনি নাহলে জোর করতাম না।আসলে কি হয়েছে বলতো?"
''এটাই।অফিসে একটু চাপ আছে তো।"
''আচ্ছা।তবে তোর কথায় আমার কেমন যেন লাগছে।যাই হোক বাসায় আসবি।"
''ওকে।বায়।"
নিশাদ ফোন কেঁটে কাজে মন দেয়।তবে বুকের ভেতর এক অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে যা কেউকে দেখাবার মতো নয়।