পরাণ প্রিয়া - পর্ব ৪০ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


নাদিয়া এসে দরজা নক করতেই নিবিড় দরজা খুলে কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা চুলের পানি মুছেতে মুছতে এগিয়ে এসে, আপু কখন এলে?
নাদিয়া প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে,এইমাত্র!  ওয়াও তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে! এই জন্যই বলি ভাইয়া কেনো তোমার প্রতি এতো ফিদা। 
প্রিয়তা মুচকি হেসে,শপিং শেষ করেছো?
- হ্যাঁ অনেক আগেই।তবে আসতে লেট করলাম ইচ্ছে করেই।তোমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
প্রিয়তা মিটমিট করে হাসছে,তারপর বললো,অধরা কোথায় আপু?
-ও ঘুমিয়ে গেছে।আচ্ছা শুনো তুমি ভাইকে নিয়ে খেয়ে নাও।শেফালী আপা এখুনি খাবার দিয়ে যাবে।
আমি তাহলে এখন আসি।
-আপু কাল কী জুহিকে পার্লার থেকে সাজানো হবে?
-দরকার নেই আমি আছি তো।কাল তো আর বিয়ে না! 
-হু,,
নাদিয়া চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নিবিড় ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।পরনে তোয়ালে জড়ানো,আরেকটা তোয়ালে দিয়ে চুলে পানি মুছতে মুছতে প্রিয়তা সামনে এসে দেখে প্রিয়তা হা করেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত নেড়ে,কী? এইভাবে আছো যে?
-দেখছি!
-কী?
-আপনাকে?
-আমাকে?কিন্তু কেনো?
-আপনাকে কতটা সুন্দর দেখাচ্ছে আপনি জানেন? এইমুহূর্তে যে কোনো মেয়ে দেখলেই ক্রাশ খেতো।
-তুমি খেয়েছো?
-সেটা তো অনেক আগেই।
-তাতেই চলবে, আর কোনো মেয়ের দরকার নেই।এখন চোখ অন্যদিকে নাও।
-কেন?
নিবিড় ইচ্ছে করে ন্যাকা স্বরে বললো,আমারও না তোমার মতো লজ্জা লাগে।
প্রিয়তা মুচকি হেসে,সত্যি বলছি, আপনাকে এখন দেখে আমার মনে আবার ধুকপুকানিটা শুরু হয়ে গেলো।আপনি এতো সুন্দর কেনো বলুন তো? আমার খুব হিংসে হয় যখন কোনো মেয়ে আপনার দিকে তাকায়? 
নিবিড় প্রিয়তার কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে এনে,আমারও খুব হিংসে হয় যখন দেখি তোমার দিকে কেউ আড় চোখেও তাকায়।
প্রিয়তা লজ্জা লজ্জা চোখে নিবিড়ের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে, জানেন আগে আমি মনে করতাম আমার কপালটা এতো খারাপ কেনো?  কারো ভালোবাসা আমার ভাগ্যে জুটে না।কিন্তু এখন কী মনে হচ্ছে জানেন? ওইরকম হাজার ভালোবাসা আমি উপেক্ষা করতে পারবো যদি আপনার সামান্য ভালোবাসাও আমার সাথে থাকে।
নিবিড় কথাটা শুনে মুচকি হেসে প্রিয়তার ঘাড় ধরে নিজের কাছে টেনে আনতেই  শেফালী দরজায় দাঁড়িয়ে, ভাইজান আমি কী ভুল সময় আইয়া পরলাম?
নিবিড় হন্তদন্ত করে প্রিয়তাকে ছেড়ে বেলকনিতে চলে গেলো।
শেফালী এসে,ভাবী আমি আরো পরে আহন আছিলো।ভাইজান এহন কী মনে করবো?
-কিচ্ছু মনে করবে না।তুমি খাবার রেখে যাও।
শেফালী আর কথা বাড়ালো না।খাবারের ট্রেটা রেখেই চলে গেলো।
নিবিড় রুমে এসে,চেইঞ্জ করে নিলো।মাহিদের ফোন আসতেই আবার বেলকনিতে গিয়ে, হু বলো?
-স্যার উনি তো সকাল থেকে নাকি খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
-তুমি দেখে আসছো?
-না, ওইখানের লোকে ফোন দিয়েছে।
-নো প্রবলেম মাহিদ,না খেলে মানুষ মারা যায় না।অবশ্য ওর মরাই উচিত। আমার সাথে লড়তে আসছে,,আমার বাচ্চাটাও শেষ করেছে সাথে আমার বোনের জীবনটাও।
মাহিদ চুপ করে আছে ওপাশ থেকে।কি বলবে বুজতে পারছে না।
নিবিড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,ওকে মাহিদ,কাল আমার বাসায় একটা পার্টি আছে মানে জুহির এনগেজড তুমি সেখানে অবশ্যই থাকবা।
- মাহিদ ভারী গলায় বললো,ওকে স্যার আপনি যেমনটা বলবেন।

সকাল থেকে আয়োজনে চারপাশ মুখরিত। সবার চোখে মুখে আনন্দের রেখা থাকলেও জুহি গম্ভীর হয়ে আছে।নিবিড় ড্রইংরুমে বসে কফির কাপে চুমুক দিয়ে নিজের কাজ করছে।
মোশারফ হোসেনের বোনেরা সবাইও আস্তে আস্তে আসতে লাগলো।নিবিড় কাজ করলেও প্রিয়তাকে খুঁজেছে তার মন।প্রিয়তা সবার সাথে জুহির রুমে আড্ডা দিচ্ছে।
আস্তে আস্তে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। নাদিয়া জুহিকে সাজিয়ে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
প্রিয়তা সবুজ রঙের শাড়ি পরেছে।সাজগোজ শেষ করে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কানের দুল পরছে।এমন সময় নিবিড় ফোনে কথা বলতে বলতে রুমের দরজা দিয়ে ঢুকেই প্রিয়তাকে আয়নায় দেখে, হতভম্ব হয়ে আছে।কান থেকে ফোন রেখে চুপ করে গম্ভীর হয়ে সেই জাগায় দাঁড়িয়ে ছিলো।প্রিয়তা পিছনে ফিরে নিবিড়কে দেখেই চমকে, আপনি কখন এলেন? 
নিবিড় কিছু বলছে না।ধীরে ধীরে নেশা লাগানো চোখ জোড়া নিয়ে এগিয়ে আসতেই প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে পিছাতে লাগলো।ড্রেসিংটেবিলের কিনারায় ধাক্কা লেগে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর প্রিয়তা কোনো স্পর্শের অনুভব না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে নিবিড় তার ঘাড়ের দুইপাশ দিয়ে হাত নিয়ে আয়নায় ঠেক দিয়ে একগাল হাসি নিয়ে তাকে দেখছে।
প্রিয়তা চোখ খুলে বোকাবনে গেলো,নিজের উপর নিজের খুব রাগ হচ্ছে।
নিবিড় একটা হাত এনে প্রিয়তার গালে আস্তে আস্তে ছুঁয়ে দিতে দিতে,,তোমার এই লজ্জাটাকে বড্ড বেশিই ভালোবাসি আমি। তখন তোমায় বড্ড মায়াবী লাগে।যখন তুমি চোখ  বন্ধ করে চোখমুখ কুঁচকে ফেলো।তখন তোমার এই লজ্জালজ্জা ভাবখানা আমাকে ঘায়েল করে তোমার আরও কাছে টেনে আনে।
প্রিয়তা ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে, আপনি বেশি বলে ফেলছেন।
-মোটেই না।আমার বুড়ীকে নিয়ে আমি যতই বলি না কেনো কম পড়ে যাবে।নিবিড় আরও কিছু বলতে যাবে তখনি সালমা বেগম এসে,নিবিড়!  নাদিয়া দরজা খুলছেনা।নিবিড় তড়িৎ ভাবে প্রিয়তাকে ছেড়ে পিছনে ফিরে, দরজা খুলছে না মানে?
-আমি কিচ্ছু বুজতে পারছি না।অনেকক্ষণ থেকেই দরজায় নক করেই যাচ্ছি।কিন্তু ওর কোনো সাড়া নেই।
 নিবিড় আর প্রিয়তা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো।নিবিড় কিছুক্ষণ দরজা জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগলো।
প্রিয়তা জোরালো ভাবে বললো,আপনি এককাজ করুন না! দরজাটার ভাঙ্গার ব্যবস্থা করুণ।
নিবিড় ঝাঁঝালো গলায় বললো,তোমার মনে হয়ে এখানে সিনেমার শুটিং চলছে? আমার দুই ধাক্কা দরজা খুলে যাবে?
নিবিড় ফোন হাতে নিলো মাহিদকে ফোন দিয়ে বলবে মিস্ত্রি নিয়ে আসার জন্য।ফোন দেওয়ার আগেই নাদিয়া দরজা খুলে, কিরে ভাই?  কি হয়েছে?
নিবিড় পিছনে ফিরে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সুন্দর করে সেজেগুজে আছে।মনেই হচ্ছে না কোনো কান্না করছিলো।কিন্তু সবাই না বুজলেও নিবিড়ের চোখ যে ফাঁকি দেওয়া যায় না বোন।তোর ভাই তোকে এতোটাই লিখতে পারে যা তুই কল্পনাও করতি পারবি না।
সালমা বেগম কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, তুই আমাকে খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিস।কেনো এতোক্ষণ দরজা খুলছিলি না?
-মা আমি শাড়ী পরছিলাম কী করে দরজা খুলি বলো তো? আর আমি ইয়ারফোন দিয়ে  গান শুনছিলাম তাই 
শুনতে পাইনি।
সালমা বেগম হাসি মুখে বললো,আচ্ছা ঠিক আছে তোর বাবা তোকে ডাকছে। কথাটা বলেই চলে গেলেন।
সাথে প্রিয়তাও।নাদিয়া পা বাড়াতেই নিবিড় পিছন থেকে বললো,নিজেকে লুকাতে চাইছিস তাই না আপু?
কথাটা শুনেই নাদিয়া থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো।
-কিন্তু তুই এইটা জানিস জানিস না সবাই তোকে না পড়তে পারলেও তোর ভাই ঠিকি তোকে পড়ে নিবে? 
কেনো কাঁদছিলি দরজা আটকিয়ে, রিসাদের জন্য?
কথাটা শুনেই নাদিয়া পিছনে ফিরে তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে, ভাই আমি তো সবসময় ভুল করে এসেছি সে ছোটো বেলা থেকে।আর তুই বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে আমার মাথার উপর ছিলি।আজও আমি ভুল করেছি সে তুই আবার আমায় আশ্রয়ের স্থান হলি।আর সেই বোন কী কান্না করতে পারে? আমি নিবিড়ের বোন যার কষ্ট থাকতেই পারে না।
কথাটা বলে নাদিয়া নিবিড়কে জড়িয়ে, আমার যদি কিছু হয়েও যায় তুই অধরাকে দেখিস।
নিবিড় টলটলে চোখে বললো আমি তোর কখনো কিচ্ছু হতে দিবো না।কিচ্ছু না!

নিচে সবাই এসে গেছে।নিবিড় নাদিয়াকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিচে নিয়ে এসে, আপু জুহিকে নিয়ে আয়।
মোশারফ হোসেন এসে, নিবিড় ছেলে পক্ষ তো এখনো এলো না।জুহিকে এনে কী হবে?
-বাবা! ছেলে পক্ষ অনেক আগেই এসেছে।শুধু তোমাদের দেখার ভুল।
-মানে? 
নিবিড় তাকিয়ে জুহিকে দেখতে পেয়ে,এগিয়ে গিয়ে নিজে বাহুডোরে এনে,মন খারাপ?
জুহি কথাটা শুনে অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো করুন চোখে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে, ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।

নিবিড় মুচকি হাসলো,সবার সামনে জুহিকে এনে দাঁড় করিয়া,আপনারা এসেছেন আমি অনেক খুশি হয়েছি।আজ আমার ছোটো বোনের এনগেজমেন্ট এইটা সবাই জানেন।কিন্তু ছেলেটা কে এইটা আমার বাবা মাও জানে না।তবে আমি তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ যে তারা চোখ বুজে আমায় বিশ্বাস করে।আমার বোন, যে কিনা নিজের ভালোবাসাকে ভাইয়ের জন্য জলাঞ্জলি দিয়ে ফেলতে পারে।ভুলে যেতে পারে নিজের মনের ভালোবাসার কথা।
কথাগুলো বলতেই জুহি অবাক হয়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
সবাই অবাক হয়ে আছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।
নিবিড় আবার বলতে লাগলো,মাহিদ এইদিকে আসো,
তুমি আমার কথা ভেবে নিজের ভালোবাসাকে কষ্ট দিচ্ছো এইটার শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।
মাহিদ শান্ত গলায় বললো,স্যার!
-শেটাপ! আমার বোনকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস তোমায় কে দিয়েছে?
মাহিদ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় জুহিকে টেনে মাহিদের সামনে দাঁড় করিয়ে,আমার বোনের জন্য সবসময় আমি বেষ্টটাই বেঁচে নিয়েছি আর আজও আমি ভুল করিনি।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে, আংটিগুলো নিয়ে আসো।হা করে তাকিয়ে কাঁদছো কেনো?
প্রিয়তা আনন্দের অশ্রুগুলো মুছে দৌড়ে উপরে গিয়ে আংটি নিয়ে আবার নিচে নেমে নিবিড়ের হাতে দিলো।
মাহিদের হাতে আংটি দিয়ে,নাও পরিয়ে দাও।
মাহিদ তখনও নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।নিবিড় ঘাড়ে জোরে থাপ্পড় দিয়ে, আরে তুমি কাঁদলে আমার বোন কি করবে?
মাহিদ মাথা উঠিয়ে, স্যার আমি কী আপনাকে জড়িয়ে ধরতে পারি? 
নিবিড় মুখে কিছু না বলে নিজের চোখের পানি মুছে মাহিদকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো।
মোশারফ হোসেন সালমা বেগম এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে নিবিড়কে দুইপাশ থেকে জড়িয়ে কাঁদছে।
নাদিয়া এগিয়ে এসে,অনেক হয়েছে,এবার আংটিবদল হোক। কতক্ষণ সবাই অপেক্ষা করবে?

নিবিড় চোখমুখ মুছে, নাও মাহিদ আংটি পরিয়ে দাও।
মহিদ আংটি পরিয়ে দিতেই নিবিড় জুহিকে ইশারা করলো দ্বিতীয় আংটিটা মাহিদকে পরিয়ে দেওয়ার জন্য।জুহি ও পরিয়ে দিলো।সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে নিলো।

নিবিড় ছাদের দোলনায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে হালকা দুলছে।
প্রিয়তা রুমে এসে নিবিড়কে না দেখে,বুজতে পারলো ছাদে আছে।
প্রিয়তা আস্তে আস্তে উঠে নিবিড়ের পিছনে দাঁড়াতেই, নিবিড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে,তোমার নিবিড় এতোটাও খারাপ নয় বুড়ী।ভালোবাসার মর্ম সে বুজে।
প্রিয়তা পাশে এসে বসে, আপনি কি করে বুজলেন আমি এসেছি?
- অনুভূতি, তুমি আমার আশেপাশে থাকলে আমি বলতে পারি।
প্রিয়তা নিবিড়ের বুকে মাথা দিয়ে,আপনার সাথে একজনম নয় হাজার জনম কাঁটাতে ইচ্ছে করছে।আপনার সাথে থাকলে মানুষ কখনো বিরক্তি হবে না।কারণ আপনাকে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে নতুন করে আবিষ্কার করা যাবে। যাকে আবিষ্কার করা যায় তার কাছে থাকলে কখনো মনেই হবে না এই মানুষটাকে আমার এখন ভালো লাগে না।
আমি সারাজীবন আপনার এইবুকে মাথা রেখে কাটাতে চাই।
নিবিড় প্রিয়তার এলোমেলো কথাগুলো শুনে না হেসে পারলো না।
-আমি তোমার অনুভূতি বুজি বুড়ী, এখন কী বলতে চাও সেটা বলো।
- হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।আচ্ছা আপনি কী করে জানলেন জুহি মাহিদকে ভালোবাসে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন