মেঘের খামে অনুভূতি (পর্ব ০২)


সামনে থেকে দু'টো ছেলে স্পৃহার দিকে এগিয়ে আসছে। ছেলে দু'টোকে আগেও কোথায় যেন স্পৃহা দেখেছে। কিন্তু এখন মনে করতে পারছে না ঠিক কোথায় দেখেছিল। স্পৃহা যতই পিছনে যাচ্ছে ছেলে দু'টো ততই এগিয়ে আসছে। একটা ছেলে স্পৃহার কাছাকাছি এগিয়ে এলো। ছেলেটা স্পৃহার পেটের দিকে হাত এগিয়ে নিয়ে আসছে। স্পৃহা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। এই বুঝি ছেলেটা তাকে ছুঁয়ে ফেললো। স্পৃহা দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে পারছে না। তার পা যেন মাটির সাথে মিশে আছে। চিৎকার করতে পারছে না তার ঠোঁট যেন আটকে আছে। অন্য ছেলেটা স্পৃহার অবস্থা দেখে হাসছে। আর স্পৃহার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা তার শাড়ির আঁচল ধরে টান দিবে এমন সময় পেছন থেকে একটা ছেলে এসে এই ছেলেটাকে জোরে একটা ঘুসি লাগিয়ে দিল। ঘুসি খেয়ে ছেলেটা মাটিতে উলটে পড়েছে। তার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। হিরোর মত এসে যেই ছেলেটা ভিলেন দু'টোর হাত থেকে স্পৃহাকে বাঁচিয়েছে এখন সে-ই ভিলেনের মত বাঁকা হাসি দিয়ে স্পৃহার দিকে এগিয়ে আসছে। স্পৃহা কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেটা স্পৃহার শাড়ির আঁচল ধরে ফেললো। এক টান দিয়ে স্পৃহাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে শাড়ি সরিয়ে তার পেটে হাত রেখে ঠিক আগের মতই ভিলেনদের মত বাঁকা হাসি হেসে বলল,
' এইযে মিস এতো সুন্দর পেট দেখিয়ে বেড়ালে ছেলেরা তো পাগল হবেই। ওদের হাত থেকে তো আমি বাঁচিয়েছি। কিন্তু আমার হাত থেকে আজ তোমাকে কে বাঁচাবে সুন্দরী?'
কথাটা বলেই ছেলেটা শব্দ করে হাসতে লাগলো। ঠিক যেমন ভিলেনরা হাসে। 
' হা হা হা হি হি হি'
সাথে সাথে ছেলেটার চোখ লাল হয়ে গেল। মাথায় দু'টো শিং উঠে এলো। মুখের দু'পাশের চোখা দাঁত দু'টো লম্বা হয়ে গেল। 
'নায়য়য়য়য়া'
স্পৃহা লাফ দিয়ে উঠে বসেছে। হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে চারপাশে ভালো করে দেখতে লাগলো। নিজেকে রুমে দেখে স্পৃহা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। 
' নাহ! এতক্ষণ তাহলে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? এসব যা যা দেখেছি সব স্বপ্ন ছিল? ঐ দুটো ছেলে আর বাইক ওয়ালা ঐ ছেলে সবাই স্বপ্নে এসেছিল?
ওহ আল্লাহ! এসব আমার সাথে কী হচ্ছে? এমন ভয়ঙ্কর স্বপ্ন তো আমি আমার পুরো জীবনে দেখিনি। আজ হঠাৎ করে এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম? কী হচ্ছে এসব? কাল থেকে কী ঘটছে আমার সাথে?'
স্পৃহার চিৎকার শুনে মারিয়া ওয়াশরুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে এলো। হাত হাতে ব্রাশ। মুখের চারপাশে টুথপেস্ট লেগে আছে। বোঝাই যাচ্ছে স্পৃহার চিৎকারে মারিয়াও কম ভয় পায়নি। মারিয়া বলল,
' কি হলো তোর? হঠাৎ এভাবে চিৎকার করলি কেন? দেখ তোর চিৎকার শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছে। মাত্রই ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়েছি। ব্রাশ মুখে নিতে যাব আর এমন সময়ই তুই চিৎকার করলি। দেখ টুথপেস্ট আমার মুখে লেগে কি অবস্থা হয়েছে।'
স্পৃহার হাত পা এখনও কাঁপছে। সে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও পারছে না। মারিয়া স্পৃহার অবস্থা দেখে বুঝলো স্পৃহা সত্যি সত্যিই অনেক ভয় পেয়েছে। মারিয়া স্পৃহার হাত ধরে তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
' কি দেখে ভয় পেয়েছিস বল তো? রুমে টিকটিকি দেখেছিস? কিন্তু টিকটিকি দেখবি কোত্থেকে? তুই আসবি শুনে বাবা সেদিনই রুমে ঔষধ স্প্রে করালো। সব টিকটিকি মরে সাফ হয়ে গেছে। তাহলে কিজন্য ভয় পেয়েছিস বল।'
স্পৃহা মারিয়াকে তার স্বপ্নের কথা বলতে পারলো না। এমন একটা স্বপ্নের কথা কীভাবেই বা বলবে সে। নিজেরও তো লজ্জা। সে কেন এমন উদ্ভট স্বপ্ন দেখলো। তাও এই সাতসকালে। 
' কি হলো বল কিছু।'
' মারিয়াপু স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছি।'
' কিহ! এতো বড় মেয়ে এখনো স্বপ্ন দেখে এভাবে চিৎকার করিস? স্পৃহা তুই বড় হবি কবে? কি এমন দুঃস্বপ্ন দেখেছিস যে, এতটা ভয় পেয়ে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলেছিস।' 
' স্বপ্নের কথা এখন মনে নেই আপু। ভুলে গেছি।'
মারিয়া বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলল,
' তুইও না স্পৃহা! শুধু শুধু আমার লেট করিয়ে দিলি। আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে। ডিউটি আছে। এতক্ষণে আমি রেডি হয়ে যেতাম। শুধু তোর জন্য এখনো দাঁত ব্রাশই করতে পারলাম না।'
মারিয়া আবার ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। স্পৃহা পেছন থেকে বলল,
' সরি মারিয়াপু।'
স্পৃহা মনে মনে ভাবছে, 
' ওই ছেলেটা তো কাল আমার জন্য ফাইট করেছে। তাহলে আজ স্বপ্নে ও আমার সাথে এমন করলো কেন? ভালো ছেলেটাকে স্বপ্নে আমি ভিলেন বানিয়ে দিলাম। এই স্বপ্নের কোনো মানে হয়? কিন্তু স্বপ্ন তো স্বপ্নই। স্বপ্নের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ আছে নাকি?'

নূপুরের কলে জীবনের ঘুম ভাঙে। কখন থেকে ফোন বাজছে। এই সকালবেলা নূপুর ছাড়া আর কেউ তাকে কল করবে না। এটা ভেবেই জীবন হুড়মুড়িয়ে উঠে ফোন হাতে নিল। ফোন কানে নিয়ে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে নূপুর বলতে শুরু করল,
' প্লিজ জীবন রাগ করবে না। আমি জানি আমি খুব বড় অপরাধ করেছি। আমার এমনটা করা একদম ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করবো বলো? আমার হাতে কোনো উপায় ছিল না। কাল তোমার সাথে দেখা করবো বলে কথা দিয়েও দেখা করিনি। সত্যি বলছি, আমি আসতে চেয়েছিলাম। আসার অনেক চেষ্টাও করেছি। কিন্তু আমার কপাল! কিছুতেই কাল বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। উল্টো আরও বাবা মা ভাইয়াদের সাথে চাচার বাড়িতে চলে যেত হলো। সারাটি দিন ওখানেই আটকা পড়ে ছিলাম। রাতে বাসায় ফিরে তোমাকে কল করবো এমন সময় দেখি ফোনের ব্যাটারি ডেড। ফোন চার্জে বসিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বলতেই পারবো না। সকালে উঠে ফোন হাতে নিয়েই তোমাকে কল করলাম। জানি রেগে আছো হয়তো কথাও বলবে না। তবুও সরি জান।'
এই মেয়েটার দম না নিয়ে একটানা কথা বলে যাওয়ার অভ্যাসটাই জীবনকে ওর প্রতি দুর্বল করেছে। দিন দিন এই দুর্বলতা যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মেয়ে কীভাবে একটানা এতো কথা বলতে পারে। কথা বলার মাঝে শ্বাস নেওয়ার জন্যও একটু থামে না। কথা বলতেই থাকে। যেকোন ছেলে এ মেয়ের কথার প্রেমে পড়ে যাবে। জীবনের বিশ্বাস কোনো ছেলে যদি একবার নূপুরের কথা শুনে তাহলে সে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। জীবন বলল,
' আমি তোমার উপর রাগ করে নেই। আর না রাগ করে ছিলাম। কাল সারাদিন তোমার খোঁজ না পেয়ে, তোমাকে নিয়ে শুধু একটু চিন্তিত ছিলাম। ভেবেছিলাম তোমার কিছু হয়নি তো? আজ তোমার কন্ঠ শুনতে পেয়েছি। এখন আর কোনো চিন্তা নেই।'
' সত্যি বলছো তুমি আমার উপর রাগ করোনি?'
' একটুও রাগ করিনি।'
' সত্যি? '
' হুম তিন সত্যি।'
' আচ্ছা তাহলে এখন উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আমরা আজ দেখা করব। কাল ঘুরতে পারিনি তো কি হয়েছে। আজ সারাদিন ঘুরবো। রেস্টুরেন্টে এক সাথে খাব। অনেক রাত করে বাসায় ফিরব।'
' হুম। কিন্তু তোমার বাসায় কোনো প্রবলেম হবে না তো? '
' আরে না। বাসায় আমি সবাইকে ম্যানেজ করে নিব। এই নিয়ে তোমাকে টেনশন নিতে হবে না। তুমি নিশ্চয়ই এখনো বেডেই আছো? তাড়াতাড়ি ওঠো। ফ্রেশ হয়ে নাও জলদি। আমি এখন রাখছি। তুমি বের হবার আগে আমাকে কল করে নিবে।'
' আচ্ছা। '

খাবার টেবিলে স্পৃহা বলল,
' খালামণি আমি আজ বাসায় চলে যাব।'
মেহেরুন খাওয়া বন্ধ করে স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বললেন,
' আজ চলে যাবি? সে-কী! এবারে এসে তো এক সপ্তাহও থাকলি না। চলে যাবি কেন?'
' এমনি খালামণি। আমার বাড়ি ছাড়া থাকতে আর ভালো লাগছে না। আম্মু আব্বু তোহার কথা খুব মনে পড়ছে।'
জাহিদ আহমেদ হেসে বললেন, 
' আল্লাহই জানেন পলাশ এই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে কীভাবে থাকবে? স্পৃহা তো শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দু'দিনও থাকতে পারবে না। চলে আসার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিবে।'
মেহেরুন স্বামীর কথায় তেতে উঠলেন। বললেন, 
' আহ! তুমি চুপ করো তো। কোথায় কি বলতে হয় কিছুই জানো না। তোমার যতসব আজাইরা কথা।'
জাহিদ আহমেদের খাওয়া শেষ তিনি উঠতে উঠতে বললেন, 
' আর ক'টা দিন থেকে যেও স্পৃহা। আজ যাবার কোনো দরকার নেই। '
মারিয়াও বলল,
' সত্যিই স্পৃহা আর ক'টা দিন থেকে যা। আমি তোকে আরো অনেক জায়গা ঘুরিয়ে দেখাব। প্রথম স্যালারি পেয়ে সবাইকে নিয়ে বাইরে খেতে যাব।'
মেহেরুন স্পৃহার কথা মানতে পারলেন না। তিনি জয়কে চুপচাপ খেতে দেখে বললেন,
' এই তুই কিছু করিস নি তো?
জয় বিষম খেয়ে বলল,
' আমি? আমাকে বলছো?'
' নিশ্চয়ই তুই ওকে কিছু বলেছিস। তাই ও চলে যেতে চাইছে। সত্যি করে বল তুই স্পৃহার সাথে আবার কি করেছিস? ও হঠাৎ করে বাড়ি যেতে চাইছে বল?'
' বিশ্বাস করো মা। এবার এই ভেবলিকে আমি কিচ্ছু বলিনি। গড প্রমিজ। ওর সাথে আমি কিছুই করিনি। এবার না আমার কাছে টিকটিকি আছে, না তেলাপোকা আর না সাপ। কিছুই নেই আমার কাছে সত্যি বলছি।'
মারিয়া বলল,
' বললেই হলো তুই কিছু করিস নি। আমি শিওর তুই-ই কিছু একটা করেছিস।'
' আমি কি করবো রে বাবা! স্পৃহা তো সামনেই আছে। তোমরা ওকেই জিজ্ঞেস করে নাও না।'
জয় স্পৃহার দিকে ইশারা করে বলল,
' এই ভেবলি বল না। আমি কি তোর সাথে কিছু করেছি? তোকে ভয় দেখিয়েছি? নাকি তোকে বকেছি?'
স্পৃহা বলল,
' খালামণি, মারিয়াপু জয় ভাইয়া কিছুই করেনি। আমি নিজে থেকেই চলে যেতে চাচ্ছি।'
মারিয়া জয়কে ফাসানোর সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে বলল,
' এবারও স্পৃহা জয়কে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা কথা বলছে। মা তোমার মনে আছে গতবার জয় রাবারের সাপ দেখিয়ে ওকে ভয় দেখিয়েছিল। আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম পরে স্পৃহা কি বলেছিল? ও নাকি এমনি ভয় পেয়েছে।'
জয় মারিয়া উপর ক্ষেপে গিয়ে বলল,
' আমার কথা, স্পৃহার কথা কারো কথাই তো তোর বিশ্বাস হবে না। অবিশ্বাসী মহিলা একটা। তোর যখন এতই অবিশ্বাস তাহলে এই নে আমি তোর মাথায় হাত রেখে বলছি।'
জয় মারিয়ার মাথায় হাত রাখতে গেলে মারিয়া সরে গিয়ে বলল,
' আমি এতো তাড়াতাড়ি আল্লাহর পেয়ারী হতে চাই না। মা বিশ্বাস করছে না, তুই মা'র মাথায় হাত রেখে বল তাহলেই হবে।'
জয় মেহেরুন এর মাথা হাত রাখতে গেলে মেহেরুন চোখ পাকিয়ে তাকাল। জয় বলল,
' ধুর ছাতা। তোমরা কেউ দেখছি আমাকে বিশ্বাস করো না। কিন্তু এবার আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা আমি তাহলে স্পৃহার মাথায় হাত রেখে কসম কেটে বলছি। আমি কিচ্ছু করিনি। কিচ্ছু না। আমি এবার সম্পূর্ণ নির্দোষ।'
মেহেরুন ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন,
' আমি তোকে আমার বোনের মেয়ের মিথ্যা কসম কাটতে দিব না।'
জয় স্পৃহার মাথায় হাত রেখেও সরিয়ে নিল। নিজের মাথায় হাত রেখে বলল,
' না থাক। স্পৃহার কসম কাটলাম না। আমার নিজের কসম কেটে বলছি আমি কিছু করিনি। এইবার ঠিক আছে তো?'
মারিয়া বলল,
' হুম।'
' বিশ্বাস হয়েছে তো তোমাদের?'
মেহেরুন বললেন,
'হয়েছে। হয়েছে।'
জয় উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
' এই বাড়িতে আমার কি পজিশন রে বাবা! মা বাবা বোন কেউ আমার কথা একফোঁটাও বিশ্বাস করে না। তোমাদেরকে সত্যি কথা বিশ্বাস করানোর জন্যেও নিজের কসম কাটতে হয়। কি দিনই না যাচ্ছে আমার! সবই কপাল।'
জয় চলে গেল। মেহেরুন জানালেন স্পৃহার সাথে উনিও বোনের বাসায় যাবেন।এটা শুনে মারিয়া বলল,
' তুমি চলে গেলে বাসা সামলাবে কে? ঘরের কাজ, রান্নাবান্না করবে কে? সারাদিন হসপিটালে থেকে এসে আমি বাসায় বাবা আর জয়ের প্যাচপ্যাচ শুনতে পারবো না। আর না পারব নিজে রান্না করতে।' 
' তুই রান্না করতে যাবি কেন? মুনিয়ার মা এসে রান্না করে দিয়ে যাবে। সে-ই ঘরের কাজও করে দিয়ে যাবে।'
' তাহলে তো হলোই। কিন্তু তুমি আবার কতদিনের জন্য যাচ্ছ?'
' দেখি ক'বছরের জন্য যেতে পারি। তুই চিন্তা করিস না। আমার সংসার তোকে দেখতে হবে না। তুই শ্বশুড়বাড়িতে গিয়ে শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ,দেবর ওদের করে খাওয়াস। আমাকে তোর করে খাওয়াতে হবে না। আমি তো তোর নিজের মা না।'
' প্রথমত আমি এখন জব করছি, বিয়ের পরেও করবো। সো আমি সারাদিন বাইরে কাজ করে এসে ঘরে কাজ করতে পারব না। আর দ্বিতীয়ত আমার শ্বশুড়বাড়িতে শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, ননদ এসব কেউ থাকবে না। আমার স্বামী থাকবে এতিম।তাই তার আত্মীয় স্বজনও কেউ থাকবে না।'
মারিয়া মুখ ফসকে কথাগুলো বলে ফেলেছে। মেহেরুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। মারিয়া কি বললো এটা। তার স্বামী এতিম থাকবে মানে? সে আগে থেকে কীভাবে জানে তার স্বামী এতিম থাকবে? তার মানে এই না তো...
মারিয়া মায়ের এই দৃষ্টির সামনে আর বসে থাকতে পারছে না। সে কোনোরকমে পালিয়ে গিয়ে বাঁচল। 
.
.
নূপুর মাথা থেকে স্কার্ফ খুলে তা হাত ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে বাইকে বসতে বসতে বলল,
' তাড়াতাড়ি চলো। তাড়াতাড়ি।'
জীবন হেলমেট পড়ে বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
' তুমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছ নাকি? '
' হুম। এখন তোমাকে নিয়ে সোজা কাজী অফিসে যাব। আমরা বিয়ে করে এখান থেকে দূরে কোথাও চলে যাব। সেখানে গিয়ে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করবো।'
জীবন নূপুরের কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠে পেছনে ফিরে বলল,
' মানে? তুমি সত্যি বলছো? আমরা আজ বিয়ে করবো?'
নূপুর হেসে ফেলে বলল,
' মিস্টার জীবন আপনি দেখছি বিয়ে করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন।'
' দাঁড়িয়ে থাকবো না? এভাবে লুকিয়ে চুকিয়ে ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা করতে ভালো লাগে নাকি? দিনে ত্রিশ মিনিটও তো তোমার সাথে কাটাতে পারি না। তুমি আমার সাথে কোথাও গেলেও সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকো। ফেরার জন্য তাড়া দিতে থাকো। বিয়ে করে ফেললে অন্তত ভয়ে ভয়ে দেখা করতে হবে না। তখন আমি মনের ইচ্ছা মত বৌকে বাইকের পেছনে বসিয়ে সারা শহরে ঘুরতে পারবো।'
' আরে পাগল আমি বাসা থেকে পালিয়ে আসিনি। সবাইকে বলেই বের হয়েছি। বলেছি আমি ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি ফিরতে রাত হবে। আর তুমি তো জানো আমি বাবা ভাইয়াদের অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করতে পারব না। আর কোনো দিন পালিয়েও যাব না। ভাইয়ারা কষ্ট পাবে এমন কোনো কাজ আমি করবো না।'
নূপুরের কথা শুনে জীবনের মন খারাপ হলেও সে তা নূপুরকে বুঝতে দিল না। জীবন জানে নূপুর কখনো তার পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বিয়ে করবে না। তার ভাইয়ারা যদি বলে এই ছেলেকে তুই ভুলে যা তাহলে তার শত কষ্ট হলেও সে জীবনকে ভুলে যাবে। সম্পর্কের প্রথম দিকেই নূপুর জানিয়ে দিয়েছে সে কখনো জীবনের জন্য তার পরিবার ছাড়তে পারবে না। পরিবার যদি ওদের মেনে নেয় তাহলে বিয়ে করবে। আর মেনে না নিলে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে দু'জনই জীবনে এগিয়ে যাবে। জীবন কখনও 
নূপুরকে ভুলে যেতে পারবে না। নূপুরও হয়তো পারবে না। নূপুরের চোখের আড়ালে দীর্ঘশ্বাস চেপে জীবন বলল,
'হুম। তুমি এভাবে স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে এসেছ তো তাই কথাটা বললাম।'
' বুঝতে পেরেছি মিস্টার। তুমি মনে হয় ভুলে গেছ, এটা আমাদের এলাকা। এখানে যদি কেউ আমাকে কোনো ছেলের সাথে দেখে নেয়,তাহলেই হলো। সোজা ভাইয়াদের কানে গিয়ে পৌঁছুবে। তাই রিস্ক নিলাম না। এবার চলো তো। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।'

জয় এসে মেহেরুন আর স্পৃহাকে বাসে তুলে দিয়ে গেল। যাবার আগে স্পৃহার মাথায় হাত রেখে বলল,
' এই ভেবলি মা'র সাথে আবার চলে আসবি। ওখানে বেশিদিন থাকতে হবে না। তোকে ছাড়া আমাদের বাসা একদম খালি খালি লাগে। তুই তো জানিসই আমরা তোকে কতটা মিস করি?'
' জানি ভাইয়া। আমি তোমাদের ছেড়ে বাসায় বেশিদিন থাকতে পারি নাকি? আঙ্কেল নয়তো তুমি গিয়ে তো আবার নিয়েই আসো।'
' হুম তুই যে আমাদের সবার জান। আমাদের বাড়ির প্রান। তাই ভাবছি এবার তোকে আমাদের এখানের ভার্সিটিতে এডমিশন করাব। তাতে তোর এখানে থাকাটা পারমানেন্ট হয়ে যাবে।'
বাস চলতে শুরু করলেও জয় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। স্পৃহা জানালার পাশের সীটে বসেছে। বাইরের ঠান্ডা বাতাস এসে তার সারা শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে। নিজেকে এখন কেমন হালকা লাগছে। স্পৃহা এখানে আরো কিছু দিন থাকতো। কিন্তু কালকের ঐ ঘটনা, আর আজকের এই স্বপ্ন দেখার পর আর এখানে থাকতে পারলো না। ঐ ছেলেটা যেভাবে স্পৃহার মাথার ভেতর ঢুকে বসে আছে। এখানে থাকলে সে আরো পাগল হয়ে যেত। তার থেকে ভালো বাসায় চলে যাওয়া। এখান থেকে দূরে গেলে হয়তো সবকিছু ভুলে যাবে। স্পৃহার চোখ লেগে গেছিল। হঠাৎ গাড়ির হনের বিকট আওয়াজে চোখ খুলে গেল। স্পৃহা বলল,
' কি হয়েছে খালামণি? '
' জ্যামে আটকা পড়েছি। না জানি কখন এই জ্যাম ছুটে? দেখ না সামনে গাড়ির লাইন লেগে আছে। কতগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। উফ! এই অসহ্য রাস্তাঘাট আর অসহ্য জ্যাম।'
স্পৃহা জানালা দিয়ে মুখ বের করে সামনে দেখার চেষ্টা করলো। সত্যিই অনেক জ্যাম। এখান থেকে ছুটতে কম করে হলেও এক ঘন্টা তো লাগবেই। এক ঘন্টার আগে ছুটতে পারলে ওটা ভাগ্য। স্পৃহা হাত ব্যাগ খুলে তার ইয়ারফোন খুঁজতে লাগলো। এভাবে শুধু শুধু বসে থাকা যাবে না। তার থেকে ভালো গান শুনে সময় কাটানো যাক। ব্যাগে কয়েকটা গল্প উপন্যাসের বই থাকলে ভালো হতো। গল্পের বই পড়ে অনায়াসে এক দুই ঘন্টা পার করে দেওয়া যেত। কিন্তু স্পৃহার দুর্ভাগ্য ব্যাগে শুধু গল্পের বই কেন, কোনো বই-ই নেই। পরের বার থেকে সাথে বই রাখতে হবে। অন্তত এমন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বাড়ি থেকে বের হবার সময় মনে করে সাথে বই নিবে। স্পৃহা ইয়ারফোন কানে গুঁজে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালে হঠাৎ তার চোখ বাইকে বসা একটা ছেলের উপর আটকে গেল।
' ওই ছেলেটা এখানে কোথায় থেকে এলো? আমি ঠিক দেখছি তো? নাকি পুরোটাই আমার চোখের দেখার ভুল? '

' তোমাকে বলেছিলাম এই রোড দিয়ে যেতে হবে না। এখানে অনেক জ্যাম হয়। এখন দেখলে তো আমার কথাই সত্যিই হলো। এবার এখানেই আটকা পড়ে বসে থাকি। কোথাও যেতে হবে না। তারপর আমি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যাব।'
' আরে বাবা আমি জানতাম নাকি আজ এতো জ্যাম হবে। জানলে কি এখান দিয়ে আসতাম? ইচ্ছে করে জ্যামে আটকে রোদে পোড়ার আমরাও এতো সখ নেই। '
' সখ নেই পরেও তো এখান দিয়েই এলে। এখন বুঝো মজা। রোদের মধ্যে এক দুই ঘন্টা বসে থাকো।'
' আমি একা বসে থাকব নাকি? তুমিও তো আমার সাথে বসে থাকবে। দু'জন মিলে একসাথে রোদ পোহাব।' 
' ধ্যাত,তোমার সাথে কোথাও বের হলেই ঝামেলায় পড়তে হয়। এই তুমি কি ঝামেলা মাথায় নিয়ে জন্মেছিলে? যেখানে যাবে সেখানে কোনো না কোনো ঝামেলা বাঁধাবেই।'
জীবন নূপুরের কথায় তেমন কিছু বলছে না। কারণ সে জানে নূপুর এখন রেগে যাচ্ছে। এখন জীবন কিছু বললে আরো রেগে যাবে। হয়তো মাঝরাস্তা থেকে ফিরে যাবে। নূপুর পেছনে বসে বকবক করে যাচ্ছে। জীবন হেলমেটে দু'হাত দিয়ে তবলা বাজানোর মত করছে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। এখান থেকে বের হওয়া যাবে কিনা তা দেখছে। 
' দেখো তো নূপুর বাইক পেছনে ঘোরানো যাবে কিনা? একটু ফাঁকা ফোকা জায়গা থাকলেই হবে। আমরা চিপাচাপা দিয়ে চলে যেতে পারব। তাই না বলো।'
' সামনে পেছনে ডানে বামে পিঁপড়া যাবার মত জায়গাও নেই। আর তুমি বাইক নিয়ে যাবার ধান্দায় আছো। তুমি এখন একটা কাজই করতে পারবো। বাইক আকাশে উড়িয়ে নিয়ে এখান থেকে বের হতে পারবো।'
' হুমমম, আমি সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যান হলে ভালো হতো। তাহলে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে জ্যামে আটকে থাকতে হতো না। আমার কাছে ওদের মত পাওয়ার না থাকায় আজ তোমার এতো কষ্ট।'
জীবন শেষের কথাটা মুখ কালো করে, মন খারাপের ভাব করে বলল। আর তা দেখে নূপুর খিলখিল করে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতেই নূপুর বলল,
' বাঁচা গেল তোমার কাছে ওসব পাওয়ার নেই। থাকলে না জানি পাওয়ারের উল্টাপাল্টা ব্যবহার করে কোন ঝামেলা বাঁধাতে। আল্লাহ তোমার থেকে আমাদের বাঁচাল।'
জীবন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,
' যাক তুমি হাসলে তাহলে। আমি তো ভেবেছিলাম এবার আমাদের সিরিয়াস একটা ঝগড়া বাঁধবে। এতক্ষণ খুব ভয়ে ছিলাম। তুমি হাসলে এটা দেখে সব ভয় কেটে গেল।'
' আমি তো জানি তুমি আমাকে হাসানোর জন্য এসব উদ্ভট উদ্ভট কথা বলো। যদিও তোমার কথাগুলো তেমন মজার ছিল না। তবুও তুমি আমাকে হাসানোর জন্য এতো কষ্ট করছো দেখে হেসে ফেললাম।'
এখনও জ্যাম ছুটছে না। দু'জন অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। প্রায় ত্রিশ মিনিট হয়ে গেছে। এখনও জ্যাম ছোটার নাম নেই। গরমে ঘেমে সবাই অস্থির হয়ে উঠেছে। অনেকে সিএনজি, রিকশা ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। গাড়ির ভেতর এসির মধ্যে যারা বসে আছে তাদের কথা বলা যাচ্ছে না। তবে বাদবাকি সবার বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। নূপুর শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখে বাতাস করার চেষ্টা করছে। তবে এভাবে কোনো লাভ হচ্ছে না। এই অসহ্য গরমে শাড়ির আঁচলের বাতাস কাজে দিচ্ছে না। নূপুর হঠাৎ শাড়ির দিকে তাকিয়ে নড়েচড়ে বসে বলল,
' জীবন! '
' হুম বলো।'
' অ্যাই আমি যে আজ শাড়ি পরেছি তা কি তুমি দেখেছ?'
জীবন কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে দেখেনি নূপুর কি পড়ে এসেছে। আসার পর থেকেও একবার তাকায় নি। জীবন আমতা আমতা করে বলল,
' হ্যা মানে দেখব না কেন? দেখেছি তো।'
' এই মিথ্যুক! একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে না। আমি খুব ভাল করে জানি তুমি আমাকে দেখোনি। তবুও কেন মিথ্যা বলছো হুম? এতক্ষণে একবারও আমার দিকে ভালো করে তাকাও নি। তুমি কি করে জানবে আমি শাড়ি পরেছি নাকি সেলোয়ার?'
' আরে না! মিথ্যে না সত্যি বলছি। আমি...'
জীবনকে থামিয়ে দিয়ে নূপুর বলল,
' আচ্ছা তাহলে বলো তো আমার পরনের শাড়ির রঙ কি? এই একদম পেছনে তাকাবে না। আমার দিকে না তাকিয়ে বলো দেখি কেমন পারো।'
জীবন বলতে পারছে না। সে আমতা আমতা করছে। 
' লাল! না লাল না। লাল রঙ তো তোমার পছন্দ না। সবুজ! না তা-ও না। সবুজ রঙের ড্রেস তোমার কাছে পাতা পাতা মনে হয়। সবুজ রঙ পরলে নিজেকে গাছ গাছ লাগে। হলুদ? আচ্ছা তুমি হলুদ... '
নূপুর জীবনের পিঠে এলোপাথাড়ি ঘুসি দিতে দিতে বলল,
' অসভ্য! লাল,সবুজ, হলুদ কোনোটাই না আমি নীল রঙের শাড়ি পড়ে আছি। তুমি কী বলো তো? আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড। আমাকে পাশে নিয়ে বসে আছো অথচ এটা বলতে পারছো না, আমি কী রঙের শাড়ি পড়ে আছি? তুমি বয়ফ্রেন্ড সমাজের কলঙ্ক। পৃথিবীর সকল বয়ফ্রেন্ডের মান ডুবালে তুমি।'
' হয়েছে তো জান। আর বলো না। আমি তো তোমারই বয়ফ্রেন্ড। তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারছো? তুমি জানো না, তুমি আমার সাথে থাকলে আমার চারপাশের খেয়াল থাকে না। আমার চোখ দু'টো তো তোর ঐ মায়াবী মুখের উপরই আটকে থাকে।'
' হুম খুব পারছি। হয়েছে তোমার পাম দেয়া। অসভ্য একটা। '
নূপুর শরীর নাড়িয়ে শব্দ করে হাসছে। জীবন মুগ্ধ হয়ে তার হাসির শব্দ শুনছে। চারপাশে কি হচ্ছে তা আর এখন তাদের খেয়াল নেই। নিজের গার্লফ্রেন্ডকে পাশে রেখেও হঠাৎ করে জীবনের অন্য একটা মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল। হয়তো নূপুরের মুখে বারবার শাড়ির কথা শুনেই মনে হয়েছে। জীবন মনে মনে ভাবছে, 
' না চাইতেও ঐদিনের শাড়ি পড়া মেয়েটার কথা আমার কেন বারবার মনে পড়ে যায়। ছেলে দু'টা মেয়েটার সাথে অসভ্যতা করেছে। আর আমি তাদেরকে শিক্ষা দিয়েছি ব্যস। ওই মেয়েটার জায়গায় অন্য যেকোনো মেয়ে থাকলেও আমি এমনটাই করতাম। কিন্তু তাহলে এখন কেন ওকে মাথা থেকে বের করতে পারছি না? ঐ ঘটনাটা মনে পরলে আমার ছেলে দু'টোর উপর এতো রাগ হয় কেন?'

স্পৃহা পুরোটা সময় ধরে ওদের দু'জনকে লক্ষ করছিল।
' মেয়েটা কি কিউট। নীল শাড়িতে কি সুন্দর দেখাচ্ছে। হাসিটাও ভারি মিষ্টি। প্রাণ খুলে হেসে হেসে হাত নাড়িয়ে কথা বলছে। মেয়েটা মনে হয় ঐ ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড। দু'জনকে বেশ মানিয়েছে।'
হঠাৎ স্পৃহার মন খারাপ লাগতে লাগলো। মেয়েটিকে দেখে কি তার খারাপ হচ্ছে? সে এই মেয়েটার মত বয়ফ্রেন্ডের বাইকের পেছনে চেপে বসতে পারে না। শাড়ি পড়ে চুল খোলা রেখে বাইরে যেতে পারে না। আর না পারে মন খুলে সবার সাথে কথা বলতে। সে চাইলেও সবার সাথে মিশতে পারে না। হড়বড় করে এতো এতো কথা বলতে তার অস্বস্তি হয়। ছেলেটার পাশে বসে থাকা মেয়েটাই কি তার মন খারাপের কারণ? স্পৃহা সরু চোখে জীবনের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো, 
' ঐদিন তো আমাকে খুব বলছিল, পাঁচ ফুট মেয়ের এগারো বারো হাত লম্বা শাড়িতেও পেট বেরিয়ে থাকে। এখন যে নিজের গার্লফ্রেন্ডের পেট বেরিয়ে আছে তা কি চোখে দেখা যাচ্ছে না? মেয়েদেরই নাকি দোষ। এমন ড্রেসআপ করে বের হয় বলেই ছেলেরা ডিস্টার্ব করে। এখন যে নিজের গার্লফ্রেন্ড এমন ড্রেসআপ করেছে। আর উনি নিজে মেয়েটাকে নিয়ে এভাবে বাইরে বের হয়েছে। এখন কি ছেলেরা ডিস্টার্ব করবে না? সব ছেলেরাই একরকম। অন্য মেয়েদের বেলাতেই তাদের যত চাপা আর যত জ্ঞানের কথা। নিজের গার্লফ্রেন্ডের বেলায় চুপসে যায়। তখন মুখে কোনো কথাই থাকে না।' 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন