মোশারফ হোসেন নাদিয়াকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলেন। কিন্তু এখনো বাড়ি ফিরেননি।নিবিড় সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে নাদিয়ার রুমে গেলো।
রিসাদ অধরাকে ঘুম পাড়িয়ে উঠে দাঁড়াতেই দেখে নিবিড় দরজায় পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।
-তুমি?
- ইয়েস।
নিবিড় ভিতরে এসে দাঁড়িয়ে অধরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,তোমার লড়াই তো আমার সাথে, তাহলে এর মাঝে জুহিকে টানছো কেনো?
রিসাদ একটু অবাক হলো।নিবিড়ের শান্ত গলায় কথাটা শুনে রিসাদ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে,,হঠাৎ এতোটা শান্ত?
-আমি আনসার পাইনি।
রিসাদ কিছু বললো না।
নিবিড় আবার বললো,তোমার বাচ্চাটাকে দেখো! কতো সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে।নিষ্পাপ চেহারা। ওর দিকে তাকিয়েই তো সব ভুলে যেতে পারো।আমি মানছি একটা সময় প্রিয়তার সাথে তোমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।তুমি অপেক্ষা করতে পারোনি তাই হয়নি।কিন্তু আমার বোনটার তো কোনো দোষ ছিলো না।তুমি যদি প্রিয়তাকে ভালোইবাসতে তাহলে ওর জন্য অপেক্ষা করতে পারতে।তার জন্য আজ আমার এতো যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না।প্রিয়তা আর কখনো সুস্থ হবে না।ও এমনি থেকে যাবে।
রিসাদ একটু দ্বিধা গলায় বললো, মানে?
-আজ ডাক্তার আমায় বলেছে,ও আর কখনো সুস্থ হবে না।ওর পুরনো স্মৃতিও মনে পড়বে না।
রিসাদ মনে মনে খুশি হলেও গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে ছিলো নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে।
নিবিড় আবার বললো,তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি শুধু আমার বোনের দিকে তাকিয়ে। আমি চাই বোন আর অধরাকে নিয়ে ভালোভাবে জীবন যাপন করো। প্রিয়তা যেহেতু এই বাড়ি বউ হয়েই গেছে তাহলে পুরোনো কথা ভুলে যাও।
রিসাদ অবাক হয়ে রইলো নিবিড়ের আচরণ দেখে।খুব শান্ত গলায় কথাগুলো বলছে সে।
-তোমাকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার হিসেব দিতে হবে না।ফ্ল্যাট কিনেছো ভালো কথা কোনো একদিন বোনকে নিয়ে সেখানেই থাকবে।আমি অধরাকে আমার বিজনেসের 10% দিবো।তাতে তো আর অসুবিধা থাকছে না।
নিবিড় কথাগুলো বলে অধরার কাছে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।
রুমে এসে প্রিয়তাকে পায়চারী করতে দেখে,কী হয়েছে? জেরীর মতো এমন দৌড়াদৌড়ি করছো কেনো?
-কিহ্! আমাকে দেখে আপনার জেরী মনে হয়?
-তা না তো কী? সারাদিনই তো জেরীর মতো দৌড়াদৌড়িতে থাকো।
- ওকে তাহলে আপনি টম।আপনি যদি টম হন আমার জেরী হতে আপত্তি নেই।
নিবিড় প্রিয়তার কথা শুনে মুচকি হেসে শার্ট খুলে রাখতেই প্রিয়তা দৌড়ে এসে জড়িয়ে, এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন?
- মেডিসিনের একটুখানি ডোজ দিতে গেছি।কাল তুমি পুরোটা ডোজ বাড়িয়ে দিবে।
এইবার ছাড়ো আমার এইভাবে সুড়সুড়ি লাগছে।
-তাই? তাহলে ছাড়বো না।
-কেউ এসে পড়বে বুড়ী ছাড়ো।
-সারাজীবন শুনে এসেছি মেয়েরা এইসব কথা বলে এখন দেখি দিন পাল্টেছে।অবশ্য দেশটাই তো ডিজিটাল।
নিবিড় একটু চোখে মুখে হাসি ফুটিয়ে, বাবা এসেছে হয়তো নিচে দেখা করে আসি।
-আমি জানি বাবা এখনো আসেনি,আপনি পালাতে চাইছেন।
-আমি কি চোর?
-বেশি কিছু।
-মানে?
-আপনি এই প্রিয়তার সবকিছু নিয়ে গেছেন।এখন সাধু সাজা হচ্ছে?
নিবিড় প্রিয়তাকে কোলে উঠিয়ে,তাই? আমি তো জোর করে কিছু করেনি।দুজনের সম্মতিতেই হয়েছে।
-কোলে উঠালেন কেনো?পড়ে যাবো তো!
-আমি কী তোমায় নতুন করে কোলে নিয়েছি?
-না!
-তাহলে?
-আমি জানি আপনি আমায় কেনো কোলে নিয়েছেন!
-কেনো?
-আদর করতে চান তাই।
নিবিড় প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,লোকে বলে মেয়েদের বিয়ের পরে নাকি লজ্জা থাকে না।এখন দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
প্রিয়তা ভারী গলায় বললো,কী করেছি আমি?
নিবিড় প্রিয়তাকে খাটে এনে শুয়ে প্রিয়তার গালে নিজের ঠোঁট লাগিয়ে ভারী নিশ্বাসে বললো,,এই যে আগে আদর করতে বললে লজ্জায় তুমি লাল হয়ে যেতে।আর এখন নিজেই আদরের কথা বলছো।
প্রিয়তা নিবিড়ের আদর মাখা স্পর্শ পেয়ে ভারী নিশ্বাসের সাথে বললো,কেউ চলে আসবে তো।
নিবিড় গম্ভীর গলায় বললো, কেউ আসবে না এখন।
-আমার ভয় করছে।
-কেনো?
এই যে কেউ এসে দেখলে সব প্লান শেষ।
নিবিড় প্রিয়তার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গিয়ে দরজা আটকতে গিয়ে দরজা একটু ভেজে দিতেই জুহি দৌড়ে এসে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
নিবিড় দরজা থেকে হাত ছাড়িয়ে জুহিকে জড়িয়ে, হতভম্ব হয়ে আছে।
প্রিয়তা তাড়াতাড়ি উঠে বসে ওড়নাটা খুঁজে নিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
জুহির কান্নার শব্দ একটু কমে আসতেই নিবিড় জুহিকে
বুক থেকে ছাড়িয়ে সামনে আসা চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে,কী হয়েছে তোর?
জুহি ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে নিজের চোখ মুছে, কিছু হয়নি ভাইয়া।
-তাহলে কাঁদছিস কেনো?বিকেলের ঘটনার জন্য?
জুহি আবার মাথা নাড়লো,না।
-তাহলে?
-ভাইয়া! রিসাদ ভাইয়া বলে আমি নাকি তোমার সৎ বোন। এই জন্যই তুমি আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিলে।
নিবিড় কথাটা শুনে রাগ উঠলেও নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করছে।
-ভাইয়া, ও যাই বলুক না কেনো আমি তো জানি আমার ভাইয়া আমায় কতটা ভালোবাসে।আমি বিয়ের জন্য কাঁদছি না।কাঁদছি তোমার নামে এই কথাটা বললো কি করে।আমার ভাইয়া কখনো নিজের কথা ভাবেনি। সবসময় আমাদের কথাই ভেবেছে।আর সে জাগায় ও বলে আমি নাকি তোমার সৎ বোন কথাটা বলেই জুহি আবার কান্না করছে।
নিবিড় জুহিকে বুকে নিয়ে,ধুর পাগলী"কে কি বললো না বললো সেটা নিয়ে তুই ভাবিস না।রাস্তার লোক সবসময় রাস্তাতেই থাকে।এদেরকে উঠিয়ে এনে বাড়িতে জায়গা দেওয়াটা সবচেয়ে বড় ভুল।আজ রাতটা শুধু ওয়েট কর কাল থেকে নতুন দিন শুরু হবে আমাদের জন্য।
জুহি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখমুখ মুছে, ভাবী নাকি আর সুস্থ হবে না?
-রিসাদ বলেছে?
-হুম।
নিবিড় মুচকি হেসে,রাতটা কেটে যাক।তারপর দেখবি তোর ভাবী একদম সুস্থ। বাবা এসেছে?
-না। এখনি এসে পড়বে।আচ্ছা ভাইয়া! আপু এই রিসাদ ভাইয়াকে কিভাবে সহ্য করে?
-আমরা এখন যেভাবে করি।তবে আপুর ব্যাপার উল্টো। কারণ সে তাকে বিশ্বাস করে।
জুহির প্রিয়তার দিকে চোখ পড়তেই, এগিয়ে এসে প্রিয়তার সামনে বসে,,,ভাবী তুমি এখন আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসো না।জানো আমার খুব খারাপ লাগে।
প্রিয়তার প্রশ্নবোধক চাহনিতেই জুহি বললো,কাল আমার রেজাল্ট দিচ্ছে।সবচেয়ে যার বেশি খুশি হওয়ার কথা সেই তুমিই তো অসুস্থ। সবাই বলে তুমি নাকি এখন বাচ্চাদের মতো।কিচ্ছু বুজো না।
প্রিয়তা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,ইচ্ছে করছে জুহিকে জড়িয়ে ধরতে।একটু আদর করতে ইচ্ছে করছে।কতদিন ওকে আদর করা হয় না।ওর খেয়াল রাখা হয় না।মেয়েটা আমায় বড্ড ভালোবাসে।কথাগুলো ভেবেই প্রিয়তা আড় চোখে তাকালো।সালমা বেগমের ডাক শুনেই জুহি আর নিবিড় নিচে নেমে গেলো।মোশারফ হোসেন এসেছে।নাদিয়া এসে সোফায় বসে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে, ভাগ্যিস আজ ডাক্তার দেখিয়েছে।না হলে হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিলো।ডাক্তার তারপরের আস্বস্ত করতে পারছেন না। বলেছে যে কোনো সময় কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে।
নিবিড় মোশারফ হোসেনের পাশে বসে একটা হাত নিজের হাতে রেখে,বাবা আপনি এতোটাই অসুস্থ বোধ করছেন। কিন্তু আমাকে কিছু জানালেন না?
আমার মনে হচ্ছে আমি আমার ফ্যামিলির থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি।
মোশারফ হোসেন, ছেলের কাঁধে হাত রেখে,তুই ছাড়া আমাদের কে আছে বল? তুই সারাদিন কত ব্যস্ত থাকিস অফিস মিটিং তারপর প্রিয়তাও অসুস্থ। তাই তোকে চাপ দিতে চাই না।
নিবিড় বাবাকে জড়িয়ে মনে মনে ভাবছে,বাবা আমায় ক্ষমা করে দিন। প্রিয়তা খানিকটা সুস্থ জেনেও আপনাকে বলতে পারছি না।প্লিজ বাবা আমায় ক্ষমা করে দিও।
-তুই আমায় নিয়ে চিন্তা করছিস তাই তো? চিন্তা করিস না। আমি সুস্থই আছি।
নিবিড় কথাটা শুনে, কাল আমি ডাক্তারকে ফোন দিবো।আপনি এখন নিয়মিত ডাক্তারের অবজারভেশনে থাকবেন।কথাটা বলেই নিবিড় উপরে চলে গেলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিবিড় মাহিদকে ফোন দিয়েছে অফিসে যাবে না। আর দুপুরের খাবার যেনো তাদের বাড়ি এসেই খায়।
মাহিদও ফোন রেখে নিজের কাজে মন দিলো।
নিবিড় ফ্রেশ হয়ে প্রিয়তার জন্য নাশতা বানিয়েছে নিজের হাতে।ভেজিটেবল স্যুপ আর এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে এসে,রাতে যা শিখিয়েছি মনে আছে?
প্রিয়তা চুল ঠিক করে,হু আছে।
ট্রের দিকে চোখ পড়তেই,আপনি এইগুলো আজ আবার বানিয়েছেন? আমি কিন্তু খাবো না।
-কেনো? আজকের দিনটাই শুধু খাও।কাল থেকে খেতে হবে না।
প্রিয়তা কিছু বললো না,উঠে নিবিড়ের ঘাড়ের দুইপাশে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে, আপনি বিষ এনে দিলেও হাসি মুখে খেতে পারি।কিন্তু তার জন্য শুধু আপনি আপনার ভালোবাসাটা দিলেই হবে।
নিবিড় ঘাড় থেকে হাত ছাড়িয়ে,বেশ কথা শিখেছো।তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।কথাটা বলে নিবিড় অফিসের একটা ফাইল হাতে নিয়ে খুলে দেখছে।
-কাল রাতে আপনি আমাকে আপনার বুকে ঘুমাতে দিলেন না কেনো?
প্রিয়তার কথাটা শুনেই নিবিড় পিছনে ফিরে,আমি তোমাকে এইভাবে চাই না।
প্রিয়তা কাঁদো কাঁদো গলায়, আপনি আমায় চান না মানেটা কী?
নিবিড় ফাইলটা খাটে রেখে, প্রিয়তার কাছে এসে,চাই না মানে তুমি বুজতে পারো না?
সব ঝামেলা মিটিয়ে আমি তোমাকে নিজের করে নিবো।এর আগে না।
কথাটা শুনে প্রিয়তা আর কিছু বললো না।
সকালে ডাক্তার শারমিন এসে রিসাদের সামনেই বলে দিয়েছে প্রিয়তা আর কখনো সুস্থই হবে না।যদিও হয় সময়ের ব্যাপার।
শারমিন কথাগুলো বলে যাওয়ার পর থেকেই রিসাদ মনে মনে উৎপুল্লো হয়ে পড়েছে।নিবিড়ও কায়দা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো মিটিং এর নাম করে।রিসাদ প্রিয়তার রুমে আসতেই প্রিয়তা রিসাদকে দেখে, তুমি এসেছো? এতোক্ষণ কই ছিলে?
রিসাদ হাসি মুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,আমি তো তোমার কাছেই আছি।কিন্তু ওরা তো আমায় আসতে দেয় না।
প্রিয়তা করুণ গলায় বললো, কারা আসতে দেয় না? ওরা জানে না? আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারি না।
-ওই যে নিবিড়! যে তোমাকে সারাক্ষণ আমার কাছ থেকে দূরে রাখতে চায়।
- হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছো।কিন্তু আমি তো এখানে থাকতে চাই না।
-আমিও তো চাই না।
-তাহলে আছো কেনো?
-তুমি এখানে পড়ে আছো তাই তো আমিও যাই না।
-ওওও,,,আমি যাবো!
রিসাদ চমকে উঠে, কোথায় যাবে?
-তোমার সাথে!আমি তোমার সাথে যাবো।
-সত্যি তুমি আমার সাথে যাবে?
- হ্যাঁ আমি যাবো।
-কিন্তু ওই নিবিড় যদি যেতে না দেয়?
-কেনো দিবে না? বলো কেনো দিবে না?
-আরে আস্তে আস্তে এইভাবে চেঁচালে সবাই এসে পড়বে।পরে আমাদের আর যাওয়া হবে না।
প্রিয়তা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে,,,হিসসসস,,,ওরা জেনে যাবে।বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
প্রিয়তা হাসি থামিয়ে গম্ভীরমুখে বললো,ওই ডাইনি তোমায় যেতে দিবে?
-না দিলে জোর করে যাবো।শুনো বিকেলে আমরা এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।তুমি কাউকে কিছু বলবে না ঠিক আছে?
-না আমরা ওই ডাইনিকে বলে যাবো।
-না প্রিয়তা, ওকে বলা যাবে না।
-তাহলে আমি যাবো না।তুমি ওকে না বললে আমি যাবো না।ওকে বলবে তুমি আমার সাথে থাকতে চাও।আমি আর তুমি আজ থেকে একসাথে থাকবো।
কি বলবে তো?
রিসাদ আনন্দে এতোটাই উন্মাদ হয়ে গেছে, প্রিয়তা সুস্থ ভাবে আচরণগুলোকেও তার অসুস্থ মনে হচ্ছে।প্রিয়তাকে পাবার লোভে যেনো তাকে গ্রাস করে নিয়েছে।
প্রিয়তার হাত নিয়ে চুমু খেয়ে, আমি এখুনি সব বলছি।আজ থেকে তুমি আর আমি এক সাথেই থাকবো।আমি কাউকেই ভয় পাই না।তুমি আমার পাশে থাকলে আমি সব করতে পারবো।
রিসাদ আর এক মুহূর্তের জন্যও দাঁড়ালো না।তড়িঘড়ি করে রুমে চলে গেলো।
নাদিয়া! নাদিয়া! কোথায় তুমি?
প্রিয়তা নিবিড়কে ফোন দিয়ে সব বলতেই নিবিড় বাড়ির ভিতরে ঢুকে ড্রইংরুমে অপেক্ষা করছে।
নাদিয়া রিসাদের ডাক শুনে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।কারণ রিসাদ তাকে কখনোই নাদু ছাড়া নাদিয়া বলে ডাকেনি।বিয়ের পর এই প্রথম তাকে নাদিয়া বলছে।নাদিয়ার কাছে রিসাদের এই ডাকটা শুনে মনের ভিতর ঢিপঢিপ শব্দ করছে অজানা ভয়ের।
নাদিয়া অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিসাদের দিকে।
-নাদিয়া আমি তোমার সাথে আর থাকতে চাই না।
নাদিয়া বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে, মানে?
-মানে খুব সোজা। তোমার সাথে আমি আমার পুরোটা জীবনকে বয়ে নিয়ে যেতে পারবো না।
নাদিয়া করুণ গলায় বললো, আমার অপরাধ?
-নাদিয়া আসলে আমি তোমাকে এতো দিন মিথ্যা বলেই আসছি।কিন্তু আজ আর পারছি না।হ্যাঁ তোমাকে আমি ভালোবেসেছি কিন্তু সেটা ক্ষনিকের ছিলো।প্রিয়তাকে আমি তোমারও আগে থেকে ভালোবাসি।এই বাড়িতে এসে যখন নতুন করে প্রিয়তাকে দেখলাম তখন কেনো জানি আমার অস্তিত্বের পুরোটা জুড়েই ও আবারও মিশে গেছে।সেদিন আমি তোমায় মিথ্যা বলেছিলাম তোমাদের কাছে ওকে খারাপ বানানোর জন্য।আমি ভেবেছিলাম ওকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিলে আমি ওকে ফিরে পাবো।কিন্তু নিবিড় ওকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে এনে আমার সব প্লান নষ্ট করে দিয়েছে।প্রিয়তার যে বাচ্চাটা ওটাও সেদিন আমার ভুলের কারণে মিস ক্যারেজ হয়েছে। ওর হাত ধরতে গিয়েছিলাম কিন্তু ও নিজেকে সামলাতে পারেনি।পা পিছলে পড়ে গিয়েছে।তোমার ভাই কিন্তু সবটা জানে।ও আমায় কাল রাতে ক্ষমা করে দিয়েছে।এখন তুমিও আমায় ক্ষমা করে দাও।
নাদিয়া ঢেপঢেপ চোখে তাকিয়ে আছে।রিসাদের একদমে বলা কথাগুলো কানে বারবার রিপিটেড হচ্ছে। হালকা চোখের পাতা ফেললেই পানিগুলো গড়িয়ে নিচে পড়বে।কিন্তু নাদিয়া পলকহীনভাবেই তাকিয়ে রিসাদকে দেখছে।
বুকের ভিতর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উতালপাতাল করছে।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।তবুও রিসাদের কথাগুলো যে তাকে শুনতেই হবে।
কার সাথে এতোটা বছর নিঃসন্দেহে কাটিয়েছে। মানুষকে কী অন্ধ বিশ্বাস করাটা সবচেয়ে বড় ভুল।
রিসাদ কিছুটা সময় নিয়ে আবার বললো,আমি জানি আমার এই কথাগুলো তুমি সহজে মেনে নিতে পারছো না।কিন্তু এটাই সত্যি নাদু।আমি প্রিয়তাকেই ভালোবাসি। ওর জন্য আমি সব করতে পারি সব।
জানো আজ প্রিয়তা আমার সাথে যেতে রাজী হয়েছে।আজ আমি সত্যিই অনেক খুশি।তুমি অধরাকে নিয়ে চিন্তা করো না।তোমার ভাই তো আছেই।তোমার ভাই তো বোনদের জন্য সব বিলিয়েই রেখেছে।
কথাগুলো শুনে নাদিয়া ধপাস করে নিচে বসে পড়লো।
রিসাদ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।নাদু আমি একটা ফ্ল্যাট কিনেছি। আমি আর প্রিয়তা সেখানেই থাকবো।আর আমি ভাবছি কালই আমরা বিয়ে করবো।করবো না কেনো বলো? ও কখনোই সুস্থ হবে না।এখন থেকে তো আমাকেই দেখতে হবে তাই না?
কথাটা শুনেই নাদিয়া কানে হাত দিয়ে,আমি আর শুনতে পারছি না।চুপ করো তুমি।প্লিজ চুপ করো।
নাদিয়ার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে দেখে রিসাদ এগিয়ে গিয়ে ধরতেই নাদিয়া হাত উঠিয়ে রিসাদকে থামতে বলে,হাঁপাতে হাঁপাতে, আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে না।তোমার মতো লোকের ছোঁয়া আমি চাই না।তুমি একটা খুনি। কী করে পারলো আমার ভাই তোমাকে এতো কিছু জেনেও ক্ষমা করতে?
নাদিয়া শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে গেছে,নিশ্বাস নিতে পারছে না।দম বন্ধ হয়ে আসছে।তারপরও রিসাদকে বললো,আমাকে কেনো ঠকালে? আমার মেয়েটার কথা একবার ভাবলে না? প্রিয়তাই তোমার সব হয়ে গেলো?
রিসাদ নাদিয়ার অবস্থা দেখে, কাঁধ ধরে উঠাতে চেষ্টা করছে।
নাদিয়া রিসাদের হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে চেঁচিয়ে বললো, ছাড়ো আমাকে!আমার কাছে একদম আসার চেষ্টা করবে না!
নিবিড় নাদিয়ার চিৎকার শুনে দৌড়ে উপরে গেলো।নাদিয়ার অবস্থা দেখে তড়িৎ ভাবে এসে নাদিয়াকে বুকের সাথে নিয়ে, কী করেছো তুমি এইটা?
তোমাকে আমি বারণ করে ছিলাম আমার বোনকে এসব না বলতে।
বাড়ি সবাই এসে উপস্থিত হতেই রিসাদ হকচকিয়ে গেল। সবাই প্রশ্ন করছে কি হয়েছে? রিসাদ কিছু বলছে না।চুপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। নিবিড় জুহিকে বললো, ডাক্তারকে ফোন দিতে।নাদিয়ার সাড়াশব্দ না পেয়ে নিবিড় নাদিয়াকে ডাকতে লাগলো,আপু, এই আপু! দেখ আমি আছি তো।আপু তুই কথা বলছিস না কেনো?
নিবিড় নাদিয়ার কাঁধ ধরে সামনে দাঁড় করতেই দেখে নাদিয়া অজ্ঞান হয়ে আছে।নিবিড়ের শক্তিতেও সে হেলেদুলে পড়ছে নিবিড়ের গায়ে।নাদিয়ারকে আর দাঁড় করিয়ে না রেখে নিবিড় কোলে নিয়ে খাটে শুয়ে দিলো।