পরাণ প্রিয়া - পর্ব ৩৪ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


রিসাদ রুমে আসতেই প্রিয়তা উঠে খাটে বসে পড়লো।রিসাদ পাশে এসে দাঁড়াতেই, বসো! তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো?আমি তোমার সাথে শুধু গল্প করবো।বসো বসো।

রিসাদ পাশে বসতেই,জানো এখানের কেউ ভালো না।শুধু তুমি ছাড়া।তুমি আমাকে একবারও বকে দাওনি।
নিবিড় দরজায় দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীরমুখে ।রাগে যেনো তার শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।অন্য কেউ হলে আজ তার কি অবস্থা করতো নিবিড় নিজেই ভাবতে পারছে না।

জুহি এসে নিবিড়ের পাশে দাঁড়াতেই,ওর খাবারগুলো নিয়ে আয়।
-কিন্তু ভাইয়া,ভাবী খাবে বলে মনে হচ্ছে না।
-তোকে আনতে বলছি নিয়ে আয়।
নিবিড় রুমের ভিতরে এসে, রিসাদ তুমি যাও।ওকে আমি সামলে নিচ্ছি।
রিসাদ গম্ভীর হয়ে উঠে দাঁড়াতেই প্রিয়তা হাত ধরে টেনে বসিয়ে, না তুমি যাবে না।ও বাজে লোক।আমাকে বকা দেয়। প্লিজ তুমি যেও না।তুমি কত্তো ভালো।

-হোয়াট! আমি বাজে লোক?প্রিয়তা এবার বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।অনেক সহ্য করেছি আর না।
প্রিয়তার হাত টেনে বসিয়ে,চুপ করে বসো।সারাদিন কিছু খাওনি। এখন চুপ করে খেয়ে নিবে।
জুহি খাবার ট্রে নিয়ে আসতেই, আমি খাবো না।
এই কথার সুযোগ নিয়েই রিসাদ বললো আমি খাইয়ে দিই? 
নিবিড় রাগন্বিত লাল চোখে রিসাদের দিকে তাকাতেই, আসলে ও খাইতে চাইছে না দেখেই বললাম।
নিবিড় কিছু বলতে যাবে এমন সময় প্রিয়তা লাফিয়ে উঠে,সত্যিই তুমি আমায় খাইয়ে দিবে? ঠিক আছে আমি তোমার হাতেই খাবো।
নিবিড় ঝাঁঝালো গম্ভীরগলায় বললো,প্রিয়তা! 
প্রিয়তা এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে, আপনি খুব খারাপ। এই জন্যই তো আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই না।
নিবিড় প্রিয়তাকে বসিয়ে, রিসাদ তুমি এইখান থেকে যাও।
রিসাদ জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে।এতো সুন্দর সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলো না।নেক্সট টাইম নিবিড়ের ধমক সে আর শুনবে না।প্রিয়তা এখন থেকে তার।সে যাই বলে তাই শুনে।সারাজীবন এভাবে থাকলে তো কথাই নেই।
যেই করেই হোক সময় বুজে ওকে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে হবে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই রিসাদ নাদিয়ার সাথে ধাক্কা লেগে,কি ব্যাপার অন্যমনস্ক হয়ে কী ভাবছো?
-ক ক কই কিছু না তো!
মাত্র তো দেখলাম।প্রিয়তার কথা? তুমি চিন্তা করো না ওকে নিয়ে।নিবিড় দেখবে সব ঠিক করে নিবে।আমার ভাইয়ের উপর আমার বিশ্বাস আছে।
প্লিজ রিসাদ তুমি প্রিয়তার ব্যবহারে কিছু মনে করো না।মেয়েটা তো অসুস্থ তাই হয়তো তোমার সাথে এমন করছে।
-আরে না না! কিছু মনে করার কি আছে।শুধু আমার নাদু বুজলেই হলো।

নিবিড় দরজা লাগিয়ে এসে প্রিয়তাকে নিজের সামনে বসিয়ে,তুমি এইসব শুরু করেছোটা কী? যার জন্য এতো কিছু তুমি তার সাথেই কিনা,,, রাবিস কোথাকার। 
- এ্যা য়া য়া য়া ! 
-এখানে কান্নার কি আছে? 
-আপনি আমায় বকছেন কেনো? 
-উউউউউম,, আমায় বকছেন কেনো? যত ঝামেলা বাজিয়ে রাখবে তার উপর ওনাকে কিছু বলাও যাবে না।অনেক ভালো কাজ করেছেন ওকে জড়িয়ে ধরে,এখন খেয়ে নাও।
-না আমি খাবো না।আমি ওর হাতে খাবো।
-এখন কিন্তু মাইর খাবা।
-এ্যা এ্যায়ায়ায়ায়ায়া। 
-আবার শুরু করছো? এখন কিন্তু আমার রাগ কন্ট্রোল করতে আর পারবো না।এরচেয়ে প্লিজ খেয়ে নাও।
তোমার জন্য এতোদিন অফিস মিটিং সব বাদ দিয়েছিলাম।আজ সারাদিন অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম।প্লিজ লক্ষ্মী মেয়ের মতো খেয়ে নাও।আমি একটু রেস্ট নিবো।
কথাটা বলতেই প্রিয়তা হা করে বসে আছে।
প্রিয়তাকে হা করতে দেখে নিবিড় মুচকি হেসে,আমি তো হাত দিয়ে খাওয়াতে পারবো না।চামচ দিয়ে খাইয়ে দিই?
প্রিয়তা তাকিয়ে দেখলো আঙ্গুলের পিঠগুলো থেঁতলিয়ে আছে।দেয়ালে জোরে ঘুসি দেওয়ার কারণেই এই অবস্থা হয়েছে।নিবিড় রাগলে কখনোই নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে না।
নিবিড় একটু ভাত মুখে দিতেই প্রিয়তার চোখ যেনো টলমল করছে।এই বুজি পড়ে যাবে। কিন্তু নিজেকে সামিলিয়ে নিলো।লুকিয়ে নিলো নিজের চোখে আসা পানি।
নিবিড় প্রিয়তাকে খাইয়ে প্লেটগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে, এতোক্ষণ তো খাবে না খাবে না বলছিলে এখন তো সব খেয়ে নিলে।তাহলে পেটে ক্ষুধা রেখে মুখে না না বলার কারণ কী বুড়ী? 

প্রিয়তা কিছু বললো না।চুপ করে বসে রইলো।
নিবিড় এসে খাটে বসে,তুমি এককাজ করো জুহির কাছে গিয়ে গল্প করতে পারো,ওর  এখন পরীক্ষা শেষ। 
তার মাঝে আমি একটু রেস্ট নিয়ে নিই।অফিসের অনেকগুলো ফাইল জমা পড়ে গেছে।অবশ্য তোমাকে এখন এইসব বললেও তো বুজবা না।
আমিই জুহিমে ডেকে দিচ্ছি।
নিবিড় জুহিকে ডাকতেই, প্রিয়তা বললো, আমি ওর কাছে যাবো না।
-কেনো?
-আমি এখানে থাকবো। 
-আমি তো ঘুমাবো,তুমি কতক্ষণ একা একা বসে থাকবা?
কথাটা বলেই নিবিড় উঠে দাঁড়াতেই প্রিয়তা শুয়ে,আমি ঘুমাবো।
-তাহলে মেডিসিন খেয়েই ঘুমাও।
প্রিয়তা ঘুমাচ্ছে,নিবিড় শুয়ে থাকলেও ঘুম আসছে না।প্রিয়তা রিসাদের সাথে এভাবে মিশতে থাকলে রিসাদ সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকবে।কিন্তু ওকে বুজিয়েই বা লাভ কি? যার দুনিয়ায়র কোনো কিছুরই জ্ঞান নেই এখন। জ্ঞান ছিলো না তখন না যতটা টেনশন ছিলো এখন তার দ্বিগুণ হয়েছে।তবে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে জ্ঞান থাকলে বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করে করে আরও অসুস্থ হয়ে যেতো।

রাতে সবাই খেতে বসেছে।জুহি নিবিড়কে ডাকতে এসে দেখে নিবিড় ইজিচেয়ারে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।আর প্রিয়তা ঘুমাচ্ছে।
-ভাইয়া আসবো?
-এসেই তো পড়েছিস!
-আসলে আমি ভাবলাম তুমি ঘুমাচ্ছিলে।
-ভেবেছিলাম ঘুমাবো।কিন্তু ঘুম আসসছে না দেখেই ভাবলাম অফিসের ফেলে রাখা কাজগুলো সেরে নিই।
-ভাবী তো ঘুমাচ্ছে।রাত উঠে তো তোমাকে জ্বালিয়ে ছাড়বে।
কথাটা শুনে নিবিড় জুহির দিকে গম্ভীর হয়ে তাকালো।
আর ভাবলো আগে এইধরনের কথাবার্তা বাচ্চাদের জন্য বলতো আর এখন তার বুড়িকেই বলা হচ্ছে। হয়তো তাদের বাচ্চাটা থাকলেও নিবিড় প্রিয়তাকে ঠিক এইভাবেই বলতো, ওকে ঘুম পাড়িয়েছো কেনো।রাতে ও ঘুমাবে না।ব্লা ব্লা,,,
-ভাইয়া, চুপ করে আছো যে।বাবা তোমায় খেতে ডাকছে তো।
-তুই যা আমি আসছি।
নিবিড় নিচে যেতেই প্রিয়তা এর মাঝেই ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে গেলো।রিসাদের পাশে গিয়ে বসে,তুমি তখন আমাকে ফেলে চলে এলে কেনো? 
রিসাদ ধীরে ধীরে বললো,আমি তো আসতে চাইনি।ও বললো দেখেই তো চলে এলাম।
-ও বলবে তুমি চলে আসবে কেনো? আমি বলেছি?
-আচ্ছা ঠিক আছে ভুল হয়েছে আর কখনো হবে না।
-তাহলে কানে ধরো? 
রিসাদ এক হাত দিয়ে কানে ধরে এইতো ধরলাম।
-না হয়নি।
-তাহলে? 
-দুই হাতে ধরো।
আর ওইখানটায় গিয়ে দাঁড়াও।কানে ধরে দুইশো বার তোমায় উঠবস করতে হবে। 
এতোক্ষণ নিবিড় খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কথাটা শুনে ভালোই লাগছে। মুখে হাত দিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকালো।একে একে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।নাদিয়া মন খারাপ করে,প্রিয়তা ওর খুব কষ্ট হবে। তুমি এইটা না দিয়ে অন্য শাস্তি দাও।
এই ডাইনি তুমি চুপ করো।আমি তো ওকে বলছি তোমার গায়ে লাগছে কেনো? 
প্রিয়তা রিসাদের দিকে তাকিয়ে, দেখো না ও আমায় বকছে তুমি কিছু বলবে না?
-আমি কখন তোমায় বকলাম? ওকে রিসাদ তুমি দুইশো বার উঠবস কর।
-নাদু কী বলছো? দুইশো বার! 
-কিচ্ছু হবে না।সামান্য ব্যাপারই তো।না হলে ও আরও রেগে যাবে।
রিসাদ মনে মনে ভাবলো,যদি কান ধরে রাগ ভাঙ্গানো যায় তাহলে সারারাত তো আমার কাছেই থাকবে।ওহ্ ভাবতেই ভালো লাগছে।
-ওকে প্রিয়তা কান ধরলে তোমার রাগ ভাঙ্গবে?
তাহলে আমি ধরবো।
সবাই খাওয়া শেষ করে সোফায় বসলো।আর রিসাদ সবার সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে। 
নিবিড় নিজের হাসিটাকে চাপিয়ে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকালো।এতোটা স্বাভাবিক ও এখনো আছে কি করে? আজ যদি সুস্থ থাকতো তাহলে ওর হাসি কখনোই চাপিয়ে রাখতে পারতাম না।অকারণে হাসির জন্য আমার বুড়ী সারাক্ষণ বকা খেতো আমার কাছে।আর আজ হাসির দৃশ্য সামনে রেখেও কতটা বাচ্চা সুলভ। 
 
-কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছো? উঠবস করো।
রিসাদ নিরুপায় হয়ে উঠবস করতে লাগলো,আর জুহি গুনতে।জুহি গুনতে একশো এর কাছাকাছি। 
একশো শেষ করেই রিসাদ হাঁপিয়ে উঠেছে।প্রিয়তা এইবার মাপ করে দাও।আর কখনো তোমায় ছেড়ে যাবো না।
-না না।থামলে আরও একশো বার দিতে হবে।
কথাটা শুনেই রিসাদ না থেমেই উঠবস করে দুইশো বার পুরো করে,ধপাস করে ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লো।পুরো শরীর এতোটাই ব্যাথা করছে যে নড়তেও কষ্ট হচ্ছে।

নিবিড় শেফালীকে ডেকে কফি দিতে বললো।
মোশারফ হোসেন আর সালমা বেগম মিটমিট করে হাসতে হাসতে নিজেদের রুমে চলে গেলো ঘুমাতে।দাদীও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে চলে গেলো।তিনি কাল সকাল সকাল বাড়ি চলে যাবেন তাই আর বসে থাকলেন না।তাড়াতাড়ি ঘুমাবেন বলেই চলে গেলেন।
প্রিয়তা গিয়ে রিসাদের পাশে বসে, আর ভুল করো না।
রিসাদ হাঁপাতে হাঁপাতে মাথা নেড়ে না বুজালো।
নাদিয়া উঠে এসে, রিসাদ চলো এইবার রুমে।তোমার ঘুমাতে হবে তো।আমি পায়ে মলম লাগিয়ে দিবো।ব্যাথাটা দেখবে অনেক কমে যাবে।
 -নাদু তুমি যাও।দেখছো না ও আমায় ছাড়া থাকতে পারছে না।ওকে ঘুম পাড়িয়েই যাবো।
কথাটা শুনে,না তুমি ওই রাক্ষসীর সাথেই যাও।না হলে আবার কান ধরিয়ে রাখবো।কাল থেকে তুমি আমাকে ঘুম পাড়িও। আজ আমি একা একা ঘুমাতে পারবো।

নাদিয়া রিসাদকে উঠিয়ে আস্তে আস্তে নিজেদের রুমে নিয়ে গেলো।
নিবিড় কফি খেয়ে শেষ করে প্রিয়তার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে, চল ঘুমাবে।এইভাবে ফ্লোরে বসে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
-আমি যাবো না।
-কেনো! রিসাদের কাছে যাবে?
-না,আমি সিঁড়ি বেয়ে যাবো না।আমি ওই বুড়ীটার সাথেই ঘুমাবো।
-বুড়ী! বুড়ীটা কে?
জুহি এগিয়ে এসে, ভাইয়া!  ভাবী মনে হয় দাদীর কথায় বলছে।
-আচ্ছা,এখন চলো।
-বললাম তো আমি হেঁটে যাবো না।
নিবিড় কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে,প্রিয়তাকে হঠাৎই কোলে তুলে নিলো।

জুহি মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আর নিবিড় প্রিয়তাকে কোলে নিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।কিন্তু চোখ জোড়া প্রিয়তার চোখেই আটকিয়ে রেখেছে।প্রিয়তা নিবিড়কে পলকহীন চোখে দেখছে।রুমের ভিতর আসতেই,তুমি দেখছি জাতে মাতাল তালে ঠিক।ঠিক কায়দা করে রিসাদকে রুমে পাঠিয়ে আমার সাথেই রুমে এলে? 
-আমি পাগল? নামান আমাকে? আমি পাগল না? 
-আরে আমি পাগল কখন বললাম?
-নামান বলছি!
নিবিড় নামিয়ে দিতেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে সবকিছু ভাঙ্গচুর করতে করতে আমি পাগল? আমাকে পাগল বলা হচ্ছে? সব শেষ করে দিবো।
নিবিড় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, এগিয়ে প্রিয়তাকে থামিয়ে নিজের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে, এমন করে না বুড়ী।প্লিজ শান্ত হও।আমি আর কখনো এসব বলবো না।জানি না আমার মন কেনো বার বার বলছে তুমি দিব্যি সুস্থ। আমার সাথে নাটক করছো।আবার তোমার এসব দেখলে মনে হয় তুমি সত্যি সত্যিই অস্বাভাবিক। 
তোমাকে এইভাবে দেখলে যে আমার কষ্ট হয়।কতদিন তোমাকে আমি ভালোভাবে কাছে পাই না।মনের কষ্টগুলো বলতে পারি না।তুমি তো জানো, তোমাকে ছাড়া আমি কারো সাথেই ভালো করে কথা বলতে পারি না।তোমাকে ছাড়া আমি যে খুব অসহায়। তুমি সুস্থ হয়ে আমার কাছে ফিরে আসো।দেখবে আমি তোমায় অনেক আদর করবো। 
কথাগুলো বলতেই নিবিড়ের চোখে যেনো বর্ষাকালের নদীর মতো পানিতে টইটম্বুর হয়ে আছে।
লাল টকটকে চোখ জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। কতদিন মন ভরে ঘুমানো হয় না।কারণ প্রিয়তাকে বুকে না নিয়ে ঘুমালে নিবিড়ের ঘুমই হয় না। 
নিবিড় আদর কথাটা বলতেই, প্রিয়তা নিবিড়ের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে, আমি আদর খাবো।
প্রিয়তার কথা শুনে নিবিড় চমকে উঠে, আদর!
- হ্যাঁ আদর।আপনিই তো বললেন।
-কিন্তু বুড়ী আদর খাওয়ার কথা কখন বললাম? আদর করবো বলেছি।
-না আমি আদর খাবো।
-বুড়ী আদর খাওয়ার জিনিস নয়। 
-না হলে আমি খাবো।
নিবিড় বিরক্তিকর গলায় বললো, প্লিজ বুজার তো চেষ্টা করো।আদর করা যায় এইটা কোনো খাবার জিনিস নয়।এইটা একজন আরেকজন,,,, 
-হু,,তাহলে আপনি আমায় আদর করুন।
-হোয়াট? 
- হ্যাঁ। আপনি আমায় আদর করুন।
- ওহ্ বুড়ী, তুমি এখন অসুস্থ। তুমি যখন সজ্ঞানে থাকবা তখন করবো।আমি চাই না অচেতন অবস্থায় আমাদের মাঝে খারাপ কিছু হোক।তুমি সুস্থ হও তখন তুমি চাইতে হবে না, তখন আমি নিজেই তোমাকে আদর করবো।
-না না আমি কিছুই শুনতে চাই না, আমি আদর চাই চাই।
নিবিড় প্রিয়তার কপালে একটা চুমু দিয়ে, হয়েছে?
-না হয়নি।
-তাহলে?
- এইটা আদর নয়।আমি আদর চাই।
-তুমি এইরাতে কি যে শুরু করলে? আমাকেই পাগল বানিয়ে ছাড়বে।
প্রিয়তাকে এনে শুয়ে দিয়ে, নিবিড় লাইট বন্ধ করে এসে নিজেই শুয়ে এইবার ঘুমাও।কাল সকালে তোমায় অনেক আদর করবো।
প্রিয়তা ঝাপসা অন্ধকারে মুখে হাসি ফুটিয়ে, পাশ ফিরে ঘুমাতেই নিবিড় আস্তে করে টেনে নিজের বুকে মাঝে এনে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো।কতোদিন পর শান্তিতে ঘুমাতে যাচ্ছে নিবিড়। এইবুকে প্রিয়তা না থাকলে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগে।আজ মনে হচ্ছে নিবিড় পুরোই পরিপূর্ণ। এই নিবিড়ের জীবনে প্রিয়তা ছাড়া যে কোনো অস্তিত্ব নেই নিবিড়ের এখন তাই মনে হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন