রংধনু - পর্ব ৪৩ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


দরজার ওপার থেকে কলিংবেল শুনে এগিয়ে যায় সিয়াম।এখানে বেশ কয়েকজন গেস্ট এসেছে।শ্বশুর শাশুড়ী শালা শালী আরো অনেকেই।সবাই চলে যাবে তবে শ্বশুর শাশুড়ী পার্মানেন্ট থাকবে।বাসায় প্রচুর হৈচৈ।এর মাঝে কলিংবেল কয়েকবার বাজার পর শুনতে পায় সিয়াম।দরজা খুলেই চমকে যায় ও।অপরপাশে সাইমন দাঁড়ানো।সাইমনকে দেখে সিয়াম বলল, 
''কিরে তুই?কবে আসলি জানালিও না।"
সাইমন এগিয়ে এসে বলল,
''কেন জানালে কি আরো আগে বাসা ছাড়ার কথা জানাতে নাকি আরো আগে আসতে?"
সিয়াম কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,
''আসলে তোকে জানাতাম কিন্তু.........."
''প্লিজ ভাই কোন কৈফিয়ৎ শুনতে চাইনা।"
সিয়াম কে সরিয়ে সাইমন ভিতরে ঢুকতে দেখলো নিতু ভাবির বাবা  আর মা টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছেন।ওকে দেখে ভাবির বাবা হেসে বললেন,
''আরে সাইমন তুমি?"
সাইমন দুজনকে ইশারায় সালাম দিয়ে বলল,
'"জি আমার কিছু কাপড়চোপড় ছিলো ওগুলো নিতে এলাম।"
তখনই ভাবির মা বললেন,
''মানেকি কই থাকবে তুমি?এটাই তো তোমার বাসা।"
''না আন্টি এটা ভাইয়ার বাসা।আমি দাদির কাছে থাকবো।"
''কি যে বলোনা।তোমার ভাইয়ের তোমার একই তো।"
সাইমন কিছু বললনা।এদিকে নিতু এসে বলল,
''সাইমন গ্রাম থেকে কবে এলে?"
''দুদিন হলো।"
''ওহ।আসলে তোমাকে জানানোই হয়নি।এত ব্যাস্ততায় মনেই ছিলোনা।"
সাইমন এই মুহূর্তে ভাবির কথা শুনতে চাইছেনা।ওর প্রচুর রাগ লাগছে ভাইয়ের ওপর।সাইমন সেদিক থেকে এসে।ওর কাপড়চোপড় খুঁজতে থাকে।সব রুমে মানুষ।কোথাও ফাঁকা নেই।সাইমন হঠাৎ খেয়াল করলো ভাবির নেশাখোর ভাই মকবুলের পরনে ওর শার্ট প্যান্ট।কিছু বাচ্চা সাইমনের ব্যাগ হাতাচ্ছে।সাইমন ওদের সরিয়ে দেখলো অবস্থা ভালো না।ব্যাগে ওর কাপড়চোপড় ছিলো।সবগুলো মুচড়িয়ে ভরে রাখা।তারওপর বাচ্চাগুলো আঠাজাতীয় কিছু ফেলেছে।সাইমন সেগুলো দেখছিলো তখনই সিয়াম রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বলল,
''সাইমন কথা আছে।"
সাইমন এতক্ষন প্রচন্ড রেগে ছিলো।ভাইয়ের কন্ঠে রাগকে ধরে রাখতে পারেনি ও।চিৎকার করে বলল,
''সমস্যা কি আপনার আর আপনার বৌয়ের?এগুলো কোন ধরনের কথা বার্তা?আমি গ্রামে গেছি আপনি আমার অনুমতি ছাড়া বাসা ভাড়া দিয়ে দিলেন।একবার ও কি প্রয়োজন বোধ করেননি আমাকে জানানোর?আমি আসলে কই থাকবো সেটা আপনার মাথায় ছিলোনা?নিজের বৌয়ের কথা ধরে আর কতো চলবেন?বাড়িটা আপনার একার ছিলো না।সেখানে আমার ও জায়গা ছিলো।সব কথা বাদ আমার কাপড় চোপড় যে আনলেন একটু সামলে রাখতে পারতেননা?অবশ্য যেখানে আমার কেউ নেই আমার কাপড়চোপড়ের সামলানো তো দূরের কথা।আপনার ঐ বদমাশ শালা আমার কাপড়চোপড় পরলো কেন?একবার ও কি আমাকে জানানো দরকার ছিলোনা।মরে তো যাইনি আমি। কল দিলেই পারতেন।"
এদি্কে সাইমনের চিৎকারে ভাবি ওনার মা বাবা আর ভাই দরজায় নক করতে থাকে।সাইমন চিৎকার করে বলল,
''যেতে বলেন আপনার শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের।এদের যেন আমি না দেখি বের হয়ে।"
সিয়াম বলল,
''দেখ ভাই এসব বসে ও সমাধান করা যায়।চিৎকার করিসনা।"
সাইমন রেগে বলল,
''কেন মানসম্মান যাবে আপনার?আপনার বৌকি আপনাকে এতোটুকুও সম্মান দেয় আদৌ?"
সিয়াম কিছুটা রেগে বলল,
''ঠিকমতো কথা বল।কার সাথে কি বলছিস তোর বড় আমি।"
''বড় হয়ে বড়ের মর্যাদা রাখতে শিখেন আগে।"
কথা গুলো বলে দরজা খুলে বেরিয়ে যায় সাইমন।তখন দেখলো নিতু ভাবি ওনার বাবা মা দাঁড়িয়ে ড্রয়িংরুমে।সাইমনের চোখজোড়া একেবারে লাক হয়ে আছে।ওনারা ওকে আটকাতে চেষ্টা করেননি।হঠাৎ মকবুল ওর সামনে এসে বলল, 
''নাও তোমার কাপড়চোপড়।"
সাইমন দেখলো সেগুলো ভাজ করা মকবুলের হাতে।সাইমন রেগে বলল,
''লাগবেনা।ভিক্ষা দিলাম তোকে।"
বলেই বেরিয়ে এলো সাইমন। বেশ শান্তি লাগছে ওর।তবে একটাই কষ্ট সেটা ছিলো ওর ভাই পুরোটাই তার শ্শুর বাড়ির ওর নিজের নয়।সাইমন গাড়িতে বসে সাঁঝকে কল দেয়।কল রিসিভ হতেই অপর পাশ থেকে সাঁঝ বলল,
''বলেন।"
''কই তুমি?"
''পরিক্ষা দিয়ে বের হলাম।"
''তুমি ধানমন্ডির ওজ এ চলে আসো।দেখা করবো।"
সাইমনের কথাগুলো শুনে সাঁঝের মনে হচ্ছিলো সাইমন কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত।সাঁঝ বলল,
''আপনি ঠিক আছেন?"
''তোমাকে যা নললাম করো।তাড়াতাড়ি যাও ওখানে।"
''ওকে বায়।"
সাঁঝ কল কেঁটে রিক্সা নেয় ওজের জন্য।
কিছুক্ষন পর
সাঁঝের পাশে বসে সাইমন।সাঁঝ সাইমনের হাত স্পর্শ করে শান্ত কন্ঠে বলল, 
''কি হয়েছে?"
সাইমন সব খুলে বলল।সাঁঝ পুরো অবাক।ভাই হয়ে এমনটা কিভাবে করতে পারে?সাইমনের কথায় সাঁঝের অনেক খারাপ লাগতে থাকে।ও বলল,
''অন্তত ভাইয়া এমন টা ও না করতে পারতো।"
''সাঁঝ আমার ভাই তেমার ভাইয়ের মতো না।বৌয়ের হাতের পুতুল। ভাবি যেভাবে নাচায় সেভাবে নাচে।"
সাঁঝ কিছু বলতে পারেনা।সাইমনের কাঁধে মাথা রাখে ও।সাইমন হঠাৎ বলল,
''কি খাবে বলো?আমার এসব কথা বলে আমাদের এসময়টা নষ্ট করতে চাইনা।"
সাঁঝ মাথা উঠিয়ে বলল,
''খিদে নেই।একটা খবর আছে।"
সাইমন ভ্রু কুঁচকে সাঁঝের দিকে চেয়ে বলল,
''কি?"
''আমাদের বাকি এক্সামগুলো হচ্ছেনা।টিচার্স স্ট্রাইক সেজন্য।"
''কিসের জন্য স্ট্রাইক করছেন ওনারা?"
''টিচারদের বপতন দেয়না ঠিক মতো।এখন বলল কবে হবে সেটা জানাবে।"
''ওহ।"
ওরা সেখানে অনেকটা সময় কাঁটিয়ে নিজেদের বাসার জন্য বেরিয়ে পড়ে।
.................................এদিকে বিভান বিকেলে ঘরে ফিরে দেখলো পূর্না ওর পুতুল গুলো নিয়ে চুপচাপ বসে।বড় পুতুলটার কোলে বসে পা নাড়ছে আর আরেকটা ছোট্ট পুতুল কোলে বসিয়ে রেখেছে।বিভান ব্যাগটা টেবিলে রেখে মেয়ের সামনে এসে বসে।পূর্না বাবার দিকে হাসে তবে আগের মতো দুষ্টু হাসি নয় খুবই মলিন ছিলো সেই হাসি।বিভান মেয়কে কোলে নিয়ে বলল, 
''কি হলো আম্মু?"
''কিতুনা বাবা।বালো লাগতে না।"
বিভান মেয়েকে জড়িয়ে বলল,
''আমার আম্মু এত চুপচাপ থাকেনা।ভয় পেয়েছো মা?"
পূর্না মাথা ঝাঁকায়।ওর চোখে পানি।বিভান মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বলল,
''সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মু।"
''ওলা না অনেক মেলেতিলো।"
বিভান মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
''ওদের অনেক শাস্তি হবে মা।পুলিশ আঙ্কেলরা অনেক মারবে ওদের।"
পূর্না কিছুই বলেনি।শুধু বাবার বুকে মাথা দিয়ে রেখেছিলো।"
বিভান বেলা কে না পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
''তোমার মা কই?"
''গোতলে।"
''ওহ।তুমি খেয়েছো মা?"
''হুম বাত কেয়েতি।"
বিভান ওকে সামনে এনে বলল,
''ঘুমাবেনা?"
''আতেনা।"
''বাবা ঘুম পাড়িয়ে দেই।দেখবে ভালো লাগছে।"
এদিকে বেলা গোসল সেড়ে এসে দেখলো পূর্না ঘুমিয়ে গেছে।বিভান মেয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছে।বেলা হেসে বলল,
''কখন এলেন?"
''আধঘন্টা হবে।"
''ওহ।ও কখন ঘুমালো।"
''খানিকটাসময় আগেই।"
আপনি ফ্রেশ হন।খাবার লাগিয়ে দিচ্ছি।"
বিভান আচ্ছা বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।বেলা কিচেনে গিয়ে দুজনের খাবার রেডি করে নেয়।বিভান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।দুজনে খেতে বসে।বিভান খেতে খেতে বলল,
''জানো আজ অনেক দিন পর খুব শান্তি লাগছে খেতে।"
''আমার ও তবে..."
বেলা কি যেন বলতে গিয়ে থেমে যায়।বিভান ভ্রু কুঁচকে বেলার দিকে চেয়ে বলল,
''কি হয়েছে?"
''মেয়েটাকে ওরা অনেক মেরেছে।পূর্না অনেক চুপচাপ হয়ে গেছে।ওর পিঠে বুকে মারের দাগ।আমি না আর নিতে পারছিনা ওর কষ্ট।"
''ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ দিয়ে দেবো।আর ওর এখন আমাদের সাপোর্ট দরকার।আমাদের উচিৎ ওকে সময় দেয়া।"
''সেটা আমি দেই বিভান।কিন্তু ও এতো হাসি খুশি ছিলো।এতোটা চুপচাপ হয়ে গেলো কেন?ওর কি দোষ ছিলো বিভান?"
বেলা কাঁদতে শুরু করে।বিভান বলল,
''বেলা সব ঠিক হয়ে যাবে।ও অনেক ছোট।ভয় পেয়েছে খুব।আমরা দুজনে ওকে সময় দেবো এখন।তাহলেই ও আগের মতো হয়ে যাবে।"
বেলা কাঁদতে থাকে।বিভান বেলার হাত ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
''কেঁদে কিছু হবেনা।এখন ওর ওপর আমাদের এ্যাটেনশন বাড়াতে হবে।তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে ওকে ঠিক করবে কেমনে?"
বেলা কান্না থামিয়ে চোখ মুছে নিয়ে বলল,
''আমি করবো বিভান।ওকে অনেক বেশি সময় দেবো।"
''হুম।কাজের লোক তো আছেই ঘরের চিন্তা করোনা।এখন আমাদের দায়িত্ব পূর্না।"
বেলা মাথা ঝাঁকায়।বিভান মৃদু হেসে বেলার কপালে চুমু দিয়ে দুজনে খেতে শুরু করে।
.............................. সেদিন সাইমনের সাথে ঘরে ফিরেই নিজের রুমে আসে সাঁঝ।আজ পুরো শরীর জুড়ে কেমন একটা শান্তি বয়ে যাচ্ছে।তবে পরীক্ষা গুলো হয়ে গেলে আরো ভালো লাগতো।অন্তত নিশ্চিন্ত হতে পারতো।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় সাঁঝ।চোখে ঘুমের জোয়ার নেমে আসছে।ফোন টা কাছ থেকে সরাতে যাবে তখনই সেটা বেজে উঠে তীব্র শব্দ তুলে।সাঁঝ ফোন সামনে এনে দেখলো ওর বান্ধুবী তীথির কল।সাঁঝ কিছুটা অবাক হয়।কারন তীথি শহরে থাকেনা।ও সিরাজগঞ্জ থাকে।হঠাৎ কল দেয়ার মানে কি?সাঁঝ কল রিসিভ করে খাটে এসে বসে।ততক্ষনে লাবনী এসে ওর গায়ের সাথে লেগে বসে।অপরপাশ থেকে তীথি বলছে,
''কেমন আছিস?"
''এইতো। তুই?"
''হুম আলহামদুলিল্লাহ। তুই এইতো কেন?কিছু হইছে?"
''না আসলে পরীক্ষা শুরু হইছিলো তবে সেটা নাকি হবেনা।সেজন্য একটু চিন্তিত।বাসার সবাই কেমন আছে?"
''ভালোই।তোর বাসার কি খবর?আঙ্কেল আন্টি ভাইবোন কেমন আছে?"
''আলহামদুলিল্লাহ। আদনান ভাই জব পেলো তো।"
''কংগ্রাচুলেশনস। কি জব?"
''প্রাইভেট কোম্পানীতে চার্টাটার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট।"
''ভালোই তো।আচ্ছা শোন একটা কথা।"
''কি?"
''তুই সিরাজগঞ্জ আসবি।"
সাঁঝ ভ্রু কুঁচকে লাবনী কে বলল,
''লাবু একটু যা তো।আমার জন্য এক কাপ চা পাঠায় দে।"
লাবনী উঠে বসে বলল,
''পরে এখন না।"
সাঁঝ চোখ গরম করে বলল,
''যা। "
''যাচ্ছি তো।উফ!!!"
কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে যায় লাবনী।তীথি এতক্ষন দুইবোনের কথায় হেসে গড়িয়ে যাচ্ছিলো এখন বলে উঠলো,
''লাবনী বড় হইছে?"
''হু আল্লাহর ওয়াস্তে বড় হইছে।"
''আচ্ছা শোন তুই আয়।আমি তোকে ঘুরে ঘুরে দেখাবো সিরাজগঞ্জ। "
''মানে কি?কেন আসবো?".
''আমার হাজবেন্ড সেনাবাহিনীতে জব করে।একমাসের জন্য গিয়েছে ঐখানে।আমি এখানে পুরো একা।আমার বাবা মা তো ঢাকা।আর ওর বাবা মা নাই তুই জানিস।"
সাঁঝ কিছুটা চিন্তায় পড়ে যায়।বলতে থাকলো,
''বাসায় বাবা আছে।বাবা কখনো রাজি হবেনা।যে রাজি হবার বড় ভাইয়া বিয়ে খেতে গেলো সিরাজগঞ্জে।"
কথাটা শেষ করতেই তীথি বলল,
''আঙ্কেল কে বুঝায় বল।"
সাঁঝ কি যেন ভেবে বলল,
''দেখি কি করা যায়।তোকে পরে জানাচ্ছি। "
''ওকে।"
সাঁঝ কল কেঁটে কি যেন ভাবতে থাকে।হঠাৎ নিশাদের নম্বরে কল দিয়ে বসে ও।রিং হচ্ছে।হঠাৎ কল রিসিভ হলো।অপরপাশ থেকে নিশাদ বলল,
''হ্যা বল।"
''ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছিস?"
''ওয়ালাইকুম আসসালাম,আলহামদুলিল্লাহ। তোরা কেমন আছিস?"
''ভালো।ভাইয়া কি খবর ওখানকার?"
''ভালোই। বললাম হোটেল থাকবো।ইমতিয়াজের মামারা দিবেইনা।জোর করে রেখে দিলো।তুই তো জানিস হৈ হুল্লোড় পছন্দ না আমার।"
''হুম।ভাইয়া একটা কথা।"
''বল।"
''তীথিকে তোর মনে আছে?"
''তোর বান্ধবী সিরাজগঞ্জে বিয়ে হয়েছিলো যার।"
''জি ভাই।ও বলছে ওর হাজবেন্ড সেনাবাহিনীতে জব করে।একমাসের জন্য গেলো কাজে।আমাকে যেতে বলছে ও।"
''তা তুই কি বললি?"
''না করে দিয়েছিলাম কিন্তু আমার না যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।পরীক্ষা ক্যান্সেল হয়ে গেছে।ঘরে থাকতে ও দম বন্ধ লাগছে।তুই রাজি হলে বাবা রাজি হবে।"
নিশাদ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
''কার সাথে আসবি?একা একটা মেয়ে মানুষ।"
''আদনান ভাইয়ের ও তো জব আছে। কুঞ্জন কে নিয়ে আসি?"
''আচ্ছা তবে সাত আট দিন এর বেশি না।ওর কলেজ আছে।"
''ভাইয়া তাহলে আব্বারে রাজি করা প্লিজ "
''ওকে দেখছি।"

!!!!

বারান্দা থেকে ধোঁয়া ছড়ানো গরম কফির মিষ্টিঘ্রান চারিদিক মাতিয়ে তুলছে।পুরো বাড়িতে বিয়ের সাজ রমরম করছে।আজ ভূবন আর ইশিতার সঙ্গীত অনুষ্ঠান।সবাই নানান কাজে ব্যাস্ত।ছোট বাচ্চাদের হৈরৈ আওয়াজ বড় দের কর্মব্যাস্ততা পুরো পরিবেশটাকে আরো বেশি উৎসব মুখর করে তুলেছে।কিন্তু সেদিকে মন নেই নিশাদের। ইমতিয়াজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ও।নিচের এতো শব্দ এতো হাসি খুশি কোনটাই ওর মনযোগ নিতে পারছেনা।নিশাদ নিচে তাকায়।মেয়েরা নাচছে।নিশ্চয়ই রিহার্সেল করছে।সেখানে খেয়াল করলো একজন জোর পূর্বক ইদ্রিকে টেনে নিয়ে এলো।ইদ্রি না করছে তবুও মেয়ে গুলো শুনছেনা।নিশাদ ওদের কথা শুনতে পেলো না।ইদ্রি আজ খুবই অদ্ভুত পোশাকে।বিশেষ করে ভারতীয়রা এমন পোশাক পরে থাকে।ওপরে টপস আর নিচে ছড়ানো স্কার্ট।তবে মানিয়েছে ইদ্রিকে খুব সুন্দর লাগছে।তবে নিশাদ চায় না ইদ্রিকে নিয়ে ভাবতে।ওর অনুভূতি গুলো প্রকাশ পেলে ওর বাঁচা দুঃসাধ্য হয়ে যাবে।ওকে বাঁচতে হবে বাবা মা আর ছোট ভাইবোনদের জন্য।নিশাদ চোখসরিয়ে সামনে তাকায়।দূরের দালান গুলো দেখতে থাকে।ওকে এখানে থাকতে বলেছে ইমতিয়াজের বড় মামা।অনেকটা রিকোয়েস্ট করে রেখেছে ওকে।কিন্তু নিশাদ না পারতে রাজি হয়েছিলো।ও চাইছিলোনা ইদ্রির সামনে থাকতে।কারন মেয়েটা কষ্ট পাবে।আর সেটা ও চায় না।নিশাদের নিজের ও কষ্ট হবে ইদ্রিকে দেখতে চোখের সামনে।কারন ও নিজেকে কষ্টে সামলে নিয়েছিলো।এভাবে দেখা হতে থাকলে দূর্বল হয়ে পড়বে ও।হঠাৎ ইমতিয়াজের কন্ঠস্বরে ও নড়ে উঠে।ইমতিয়াজ অনেকটা সময় যাবৎ খুঁজে যাচ্ছিলো নিশাদকে।বিয়ের আগে ছেলেদের একটা পার্টি হবে।তাই সব বন্ধুরা প্ল্যান করবে।কিন্তু নিশাদকে না পেয়ে ইমতিয়াজ কে পাঠানো হলো।ইমতিয়াজ খুঁজতে খুঁজতে নিজের রুমে এলো।নিশাদের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে খেয়াল করলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিশাদ।ইমতিয়াজ ওর দিকে আসতে আসতে বলল,
''তুই এখানে কেন?কি হইছে?"
সামনে তাকিয়ে নিশাদ।কোন ভাবান্তর নেই ইমতিয়াজের ডাকে।শান্ত গলায় বলল,
''ভালো লাগছেনা।"
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়ায় ইমতিয়াজ।নিশাদের কাঁধে হাত রেখে বলল,
''কি হয়েছে বলবি?এতোটা উদাসীন কখনো দেখিনি তোকে।"
নিশাদ নিজ কন্ঠে অস্থিরতা এনে বলল, 
''দেখ আমি এখানে থাকতে পারবোনা।এতো হৈ-হুল্লোড় ভালো লাগে না আমার।"
''জানি কিন্তু দেখ বড় মামার ভালো লাগতো না যে এতো বড় বাড়ি থাকতে হোটেলে থাকবি তুই।"
'"আমি জানি ভালো লাগতো না।কিন্তু আমার ভালো লাগে
না।"
একটু হাসলো ইমতিয়াজ।সামনে তাকিয়ে বলল,
''নিজের বিয়েতে কি করবি?"
নিশাদ ভ্রু কুঁচকে ইমতিয়াজের দিকে।তারপর কন্ঠে গাম্ভীর্য ভাব এনে বলল,
''তুই জানিস এই কথা আমার ভালো লাগেনা।বারবার কেন বলিস?"
''সরি।বাট আমি কখনো চাইনা আমার বেস্টফ্রেন্ড কষ্ট করে থাকুক।"
''বুঝি।কিন্তু এত হৈচৈ এ আমার মাথা ব্যাথা করে।"
ইমতিয়াজ অস্থির হয়ে নিশাদকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
''তোর মাথা ব্যাথা করছে?"
নিশাদ কিছু বলার আগেই ইমতিয়াজ কাকে যেন কল দিয়ে কফি আনতে বলে।
নিশাদ রেগে বলল,
''ঘরে এতো কাজ।বাড়তি ঝামেলা কেন করিস বুঝি না।"
''ঝামেলার কি হলো?আমার বন্ধুর যেটায় শান্তি পাবে সেটাইতো করবো।আর যারা কাজে ব্যাস্ত তাদের বলিনি।ইদ্রি নিয়ে আসবে।"
ইমতিয়াজের কথায় নিশাদ আর কিছু বলতে পারেনা।বুকটা কেমন করে উঠে।নিশাদ চুপ করে বাহিরে তাকিয়ে থাকে।ইমতিয়াজ অবাক হয়ে বলল,
''সব ঠিক আছে?"
নিশাদ নিজেকে সামলে নেয় বহু কষ্টে।তারপর ধীরে বলল,
''হুম।"
''আচ্ছা বেলা আপা কেমন আছে?ওনাদের ডলটার কি খবর?"
''অনেকদিন কথা হয়নি।বাচ্চাটা খুব হাসি খুশি জানিস।মনেই হয়না এডপ্টেড।বিভান ভাই আপা এতো আদর করে নিজের চোখে না দেখলে বুঝবিনা।"
ইমতিয়াজ মৃদু হেসে বলল,
''মা বাবা এমনই রে।আর যেখানে আপা মা হতে পারেননি  সেখানে ডলটা ওনার জন্য এ্যাঞ্জেল।"
''হুম।আপা অনেক খুশি থাকে।"
''হুম।তুই বিয়ের কথা বললে এমন কেন করিস?"
ইমতিয়াজ দুষ্টু হেসে বলল।নিশাদ আবার ও রাগী চোখে তসকাতেই ইমতিয়াজ বলল,
''আরে মিয়া কথা শোন পুরাটা।তুই কলেজ লাইফে মেয়েদের ক্রাশ ছিলি।সেটাতো মানিস?দিয়ার কথা মনে আছে?ঐযে বড় আপু ছিলো।"
নিশাদ একটু হাসলো তবে কিছু বললনা।ইমতিয়াজ আবার ও বলল,
''জানিস আমাকে একদিন বলে তোমার বেস্টফ্রেন্ডকে বলো আমার সাথে দেখা করতে।"
'''তো তুই কি বললি?"
''আমি বললাম কেন আপু?".
''বলে কি জানিস তোমার বন্ধু তো তাকায় ও না আমাদের দিকে। আমি বাসায় তোমার বন্ধুর কথা বলবো ভেবেছি। তোমার বন্ধু রাজি হলে হয়।আমি ওর বাবুর মা হতে চাই।"
ইমতিয়াজের এমন কথায় নিশাদ বড় চোখ করে তাকায়।কিন্তু ইমতিয়াজ হেসে বলল,
''জানিস কি বললাম আমি?"
নিশাদ রাগী ভাবে বলল,
''নিশ্চয়ই ভালো কিছু বলিসনি।"
''আরে ভালো বলছি।নাহলে রহিম রোববান হয়ে যেতি।"
''মানে?"
''মানে এই যে ওই আপু জানে তোর বাল্য বিবাহ হয়েছিলো তোর বৌ প্রেগন্যান্ট ছিলো তখন।"
নিশাদ রেগে ইমতিয়াজের পিঠে মারতে থাকে।নিশাদ বলছিলো, 
"'শালা তুই বন্ধু না শত্রু হারামি একটা।"
ভাইয়ের কল পেয়ে ইদ্রি একটা সুযোগ পায় কাজিনদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার।ওরা তো ওকে চেঁপে ধরেছিলো নাচার জন্য।কিন্তু ওর মন তো আর সেদিকে নেই।ইদ্রির চোখ তখন ইমতিয়াজের বারান্দায় যেতেই দেখেছিলো নিশাদ তাকিয়ে ওর দিকে।চোখজোড়া ভরে এসেছিলো ওর।এ কেমন অনুভূতি যা ওকে কুঁরেকুরে খাচ্ছে।লোকটাকে এতোটা কেন ভালবেসে ফেলেছে যা ওকে তার থেকে দূরে থাকতে দিচ্ছেনা।ওর তো উচিৎ তাকে ঘৃনা করা কিন্তু কিভাবে? ও ভালবাসে।খুব ভালবাসে।
ইদ্রি কফি বানাতে চলে যায় পাকঘরে।দেখতে পায় ইশিতা আপু এখানে এসে ফিসফিসিয়ে কথা বলছেন।ওকে দেখে মৃদু হেসে বললেন,
''কিছু লাগবে তোর?"
ইদ্রি ম্লান হেসে বলল, 
''না ভাইয়া আর ওর বন্ধুর জন্য কফি বানাবো।ভাইয়া চেয়েছে।"
''ওহ।"
ইশিতা আপু আবার ও কথায় লেগে যায়।ইদ্রি কফি বানিয়ে উপরে চলে আসে ইমতিয়াজের রুমে।দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে গল্প করছে।ইদ্রি কফি নিয়ে বারান্দা আসতেই দুজনে ওর দিকে তাকায়।নিশাদের দিকে চোখ পড়তেই খেয়াল করলো নিশাদ অন্যদিকে সরে গেছে।ইমতিয়াজ হেসে বলল,
''জানিস তোর মিঃ ইঞ্জিনিয়ার কলেজে বড় আপুদের ক্রাশ ছিলো।ছোট মেয়েদের তো ছিলোই।কিন্তু বড় আপুরাও ওকে ছাড়েনি।"
ইদ্রি ম্লান হাসে।ওদিকে নিশাদ গম্ভীর গলায় বলল,
''বাজে কথা বলিসনা।"
ইমতিয়াজ হেসে ইদ্রিকে বলল, 
''যা তুই।"
ইদ্রি নিশাদকে আবার ও দেখে পিছনে ফিরে চলে যায়।ইদ্রি যেতেই নিশাদ সেদিকে তাকিয়ে ইমতিয়াজের দিকে সরে আসে।ব্যাপারটা ইমতিয়াজের কাছে কেমন লাগলে ও নজর দেয়নি।নিশাদ বলল,
''সাঁঝ কল দিয়েছিলো।"
সাঁঝের কথায় ইমতিয়াজের মনে দখীনা হওয়া দোলা দিয়ে গেলো।ইমতিয়াজ নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রন করে বলল,
''সব ঠিক আছে?"
''হ্যা।ও এখানে আসবে ওর ফ্রেন্ডের বাসায়।আমি গিয়ে নিয়ে আসবো রেলস্টেশন থেকে।"
''বান্ধুবীর বাসায় যাওয়ার কি হলো?এখানে আসতে বল।বাসায় বিয়ে হচ্ছে।"
''আরে নাহ।এমনিতেই আমি এলাম।এতো গেঞ্জাম করিসনা।"
''গেঞ্জামের কি হলো?ওকে বল।এখানে যেহেতু আসবে বিয়েটাও এটেন্ড করুক।"
''দরকার নেই।ও তো একাও আসছেনা।কুঞ্জন ও আসবে। "
''সো।খাট রুম দিতে পারবো।তুই তোর ফোন দে আমাকে দে বলছি।"
নিশাদ বু্িরক্তি নিয়ে বলল,
''এমন করছিস কেন?"
''আরে নিশাদ দে আমাকে ফোন।"
নিশাদ চুপচাপ বন্ধুকে ফোন দিতেই ইমতিয়াজ ফোন নিয়ে কল লগে ঢুকে।"
...........................সাঁঝ বাবার অনুমতি পেয়েই খুশিতে আটখানা।বান্ধুবীর সাথে দেখা হবে তারওপর ঘুরাও হবে।কুঞ্জন তো সেই খুশি। ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে পাগল ও।কোথাও যাওয়ার কথা বললেই সবার আগে প্রস্তুত থাকে।সাঁঝ রুমে এসে প্যাকিং করে সাইমনের নম্বরে কল দেয়।কিন্তু কল যেতে পারেনা ততক্ষনে নিশাদের নম্বর থেকে কল আসে।দ্রুত ভাইয়ের কল রিসিভ করে কানে রাখে সাঁঝ।অপরপাশ থেকে অচেনা পুরুষের কন্ঠস্বর শুনে কিছুটা লজ্জা পায় ও।ইমতিয়াজ বলছিলো,
''সাঁঝ আছো?"
কন্ঠ কে পরিষ্কার করে সাঁঝ বলল,
''জি ভাইয়া বলেন।"
সাঁঝের মুখে ভাইয়া শুনে ইমতিয়াজের মন কেমন করে উঠে।কিন্তু এখন কোন রকমের রিয়্যাকশান দেয়া যাবেনা।নিজেকে সামলে বলল,
''তুমি নাকি সিরাজগঞ্জ আসছো?"
''জি বান্ধুবীর বাসায় ভাইয়া।কেন?".
''শুনো বান্ধুবীর বাসায় যাবা তবে ভূবনের বিয়েটাও এ্যাটেন্ড করতে হবে তোমাকে আর কুঞ্জনকে।তোমার বান্ধুবীকে ও নিয়ে এসো।তবে আসতেই হবে।"
সাঁঝ একটু লজ্জা পেয়ে বলল,
''ভাইয়া আমি কিভাবে.......?"
''আরে আমার মামারা খুবই অতিথিপরায়ণ । ওনাদের খুব ভালো লাগবে।আসবে কিন্তু।দরকার হলে আমিই গিয়ে নিয়ে আসবো।"
হলে আমিই গিয়ে নিয়ে আসবো।"
''না ভাইয়া এতো ঝামেলা করবেননা।আমি চোষ্টা করবো।"
''না আসতে হবে।"
হঠাৎ নিশাদের কন্ঠস্বর শুনতে পায় সাঁঝ।নিশাদ বলল,
''দেখ তুই বিয়েতে আসিস।নাহলে ও তোর কথা বলে বলে আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে।"
সাঁঝ হেসে ফেললো।ইমতিয়াজ আবাও বলল,
''ভাইয়ের আবদার তো ফেলতে পারবেনা।"
''আচ্ছা ভাইয়া আল্লাহ বাঁচালে অবশ্যই আসবো।"
''ধন্যবাদ।তা কখন বেরুচ্ছো?"
''কাল সকাল সাতটার ট্রেন।"
''ওহ সাবধানে এসো।"
সাঁঝ কল কেঁটে কিছুক্ষন হেসে নেয়।ইমতিয়াজ ভাই এতো পাগলামী করবে ভাবতে পারেনি ও।সাইমনের নম্বর ডায়াল করে সাঁঝ খাটে এসে বসে।নম্বর ওয়েটিং এ দেখে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোনটা খাটের ওপর রাখে।তারপর চুল আঁচড়াতে শুরু করে।হঠাৎ কুঞ্জন দরজা একটু আলগা করে বলল,
''আসবো?"
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে সাঁঝ বলল,
''আয়।"
কুঞ্জন এসে বোনের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
''আপু একটা কথা বলি?"
''হুম।"
''দুশত টাকা দিবি?"
সাঁঝ চুল আঁচড়ানো বাদ দিয়ে ভাইয়ের দিকে চেয়ে বলল,
''কেন?"
কুঞ্জন মাথা নুইয়ে বলল,
''ফ্লেক্সি করবো।ফোনটা খালি।"
''আমার ফোনে আছে।যা এখন।"
সাঁঝ আবার চুল আঁচড়াতে থাকে।কুঞ্জন আবার বলল,
''দেনা আপু।"
''ছোট ব্যাগটা নিয়ে আয়।"
কুঞ্জন ওয়ারড্রবের ওপর থেকে কালো পার্সটা এনে সাঁঝের হাতে দেয়।সাঁঝ সেখানে দেখলো দুইশত টাকাই আছে।কুঞ্জন বলল, 
''আপু তোর কাছে তো আর নেই।"
''অন্যা ব্যাগে আছে।"
সাঁঝ টাকা বের করে ভাইয়ের হাতে দিয়ে বলল,
''যা তুই।"
কুঞ্জন নুইয়ে  বোনের গালে চুমু খেয়ে বলল,
''থ্যাংক ইউ আপু।"
সাঁঝ মৃদু হেসে জট ছাড়াতে থাকে।কুঞ্জন বেরিয়ে যায়।সাইমনের কল আসে সাঁঝের নম্বরে।ফোন হাতে নিয়ে সাঁঝ দেখলো এর আগে দুবার কল দিয়েছে।কল রিসিভ করতেই সাইমন রেগে,
''কল রিসিভ করোনা কেন তুমি?"
''সবসময় এমন করে কি মজা পান আপনি?"
চেঁচিয়ে উঠে সাঁঝ।সাইমন গম্ভীর কন্ঠে বলল,
''চেঁচাচ্ছো কেন?"
''আপনি কি করছেন?"
''কল দিচ্ছি ধরোনি কেন?ফাজলামী করো?"
''কেন আমার কি ব্যাস্ততা থাকতে পারেনা?আপনার মতো তো আর ওয়েটিং এ ছিলামনা।
সাইমন এবার একটু নরম হয়ে আসে।তারপর বলল,
''অফিসে কথা বলছিলাম।আসলে কেন যে এমন করলাম জানিনা।ভাইয়ার ব্যাপারটা নিয়ে মাথাটা ভীষন আউলে আছে।"
সাঁঝ আবার চিৎকার করতে নিয়ে ও পারেনা।সাইমন নিজেই খুব সমস্যায় আছে।তাই হয়ত এমন করে ফেলেছে।সাঁঝ বলল,
''আচ্ছা আমি কাল সিরাজগঞ্জ যাবো বান্ধুবীর বাসায়।সেখানে ভাইয়ার বন্ধুর বিয়ে।আমি ওখানে ও যেতে পারি।"
''সাইমন কিছুটা ভ্রু কুঁচকে বলল,
''ওখানে কেন যেতে হচ্ছে?"
''আশ্চর্য ভাইয়ার বন্ধু বলেছিলো।"
''যার বিয়ে? "
''না।বেস্টফ্রেন্ড বলেছে।"
''সে বিবাহিত? "
''আরে না।কেন?"
''যেতে হবে না। গেলে বান্ধুবীর বাসায়।"
''আপনি বলবেন আর আমি থেকে যাবো?কেন?"
''ওখানে তোমার যাওয়া ঠিক হবেনা।তাই বললাম।"
''আমার ভাই পারমিশন দিয়েছে।"
''যদি ওখানে তোমাকে হারিয়ে ফেলি?"
সাইমনের কথায় সাঁঝ চমকে উঠে।অবাক করা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
''কি বললেন?"
''কিছুনা।যাও তুমি।"
''না না কি বললেন?আবার বলেন?"
''তোমাকে যদি বিয়ে দেয় ওখানে।দেখো তোমাকে ভীষন ভালবাসি।এমন কিছু মানতে পারবো না।আমার ভাই থেকে ও নেই।তুমিই শুধু আছো।আমি বেঁচে ও মরে যাবো।"
সাঁঝের চোখ ভরে আসে।গলা কাঁপতে থাকে।কান্না জড়িত কন্ঠকে সামলাতে থাকে চোখ বুজে।তারপর ও সামলাতে পারেনি কান্না।ধরে আসা গলায় বলল, 
''এমন কিছু হবেনা।বিলিভ মি।আমি আপনারই থাকবো প্রমিজ।ভাইয়া আমার পারমিশান নেয়া ছাড়া এমন কোন পদক্ষেপ নেবে না।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন