রংধনু - পর্ব ৪৪ - তাবাসসুম রিয়ানা - ধারাবাহিক গল্প


বিল্ডিংয়ের বাহিরের রঙ্গীন জ্বলজ্বলে বোর্ডটির দিকে চেয়ে আছে ইদ্রি।কিছুসময় আগেই গোসল সেড়ে এসেছে ও।লম্বা চুল গুলো বেয়ে পানি পড়ে ওর জামার পিছের কিছুটা অংশ ভিজে গেছে।ওর ভেজা চোখজোড়া আরো ভিজে আসছে।ঠোঁটের কোনে ম্লান হাসি।বোর্ডটটিতে খুব সুন্দর করে ইংরেজিতে লেখা ইশতিয়াক মাহবুব ওয়েডস টু ইশিতা ফেরদৌসী।ইদ্রির মনে হচ্ছিলো সেখানে লিখা নিশাদ রাহমান ওয়েডস টু ইদ্রি।ব্যাপারটা কতোটা চমৎকার হতো সেটার অন্ত নেই।ইদ্রি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাশে তাকিয়েই নিশাদকে দেখে চোখ বড় করে ফেলে।চারিদিক একদমই থমকে গেছে।ইদ্রি সেদিক থেকে চোখ সরাতে পারছেনা আর না পারছে নিশাদ।দুজনে একে অপরকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখছে।নিশাদের পরনে কালো পাঞ্জাবী সাদা পায়জামা আর ইদ্রির পরনে লাল আর নীল ঘাগড়া চোলি।ওপরের টপসটার নিচে কিছুটা পেট বেরিয়ে গেছে।ইদ্রি নিশাদ একে অপরকে দেখার মাঝেই কিছুটা সময় কেঁটে যায়।দুজনের হৃদয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে।ইদ্রির ছিলো শুধু নিশাদকে পাওয়া।নিশাদকে অনেকটাই কাছে পাওয়া।তার ঘ্রানে মেতে থাকা।তার সাথে থাকা।আর নিশাদের ছিলো ইদ্রি কে পাওয়া কিন্তু ভয় ছিলো ওদের দুজনের সামাজিক অবস্থান।যেখানে ইদ্রি গাড়ি ছাড়া বের হয়না সেখানে ওকে রিক্সা ভাড়া ট্যাক্সি ভাড়া দিতেই হাজার চিন্তা করতে হয়।যেখানে ইদ্রি গরমে এসি ছাড়ে সেখানে নিশাদকে ফ্যান ছাড়তে গেলে ও বিদ্যুত বিলের কথা ভাবতে হয়।নিশাদ হঠাৎ চোখ নামিয়ে নিয়ে সামনে তাকায়।ইদ্রির বুকটা কেঁপে উঠে।লোকটাকে পাবেনা কথাটা মনে আনতে ও পারেনা।কিন্তু সে কেন বুঝেনা?কেন মানেনা ইদ্রি তাকে ভালবাসে তাকে চায়।শুধু নিজের কথায় আটকে আছে।হঠাৎ সৈয়দা বেগম কোথা থেকে যেন ছুঁটে এসে ইদ্রির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন,
''এখানে কি করিস?ভূবনরা চলে আসবে একটু পর।যা গিয়ে সেজে নেয়।"
মায়ের এমন অকস্মাৎ আগমনে কিছু টা কেঁপে উঠে ইদ্রি।পাশ ফিরে আবার ও নিশাদকে দেখার চেষ্টা করে। তবে সে সেখানে ছিলোনা।মন খারাপ করে মায়ের দিকে তাকায় ইদ্রি।সৈয়দা বেগম বললেন, 
''কিরে যাহ।আমার শাড়ী ও তো তোকে ঠিক করতে হবে চল।"
''জি।"
সৈয়দা বেগম মেয়েকে টেনে ভিতরে চলে গেলেন।ভূবনরা এসে যায় সাতটা পয়ত্রিশ মিনিটে।ভূবনকে দেখে ইশিতার মনের অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করতে থাকে।এইতো কলেজের প্রেম ছিলো ওদের।ভার্সিটি পেরিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছে ওরা।এখন বহুল প্রতিক্ষীত সময়টি ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।ইশিতাকে আজ ভীষন সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।এমনিতেই ভীষন সুন্দর ও।তবে আজ খুব সুন্দর লাগছে।ভূবন এসেই বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলো।তবে ওর নজর খুঁজছে ইশিতাকে।কখন দেখবে ও মেয়েটাকে।ভবনের এমন তাকাতাকি লক্ষ্য করে কল্যান একটু জোরেই বলল,
''ওওওও ইশিতা ভাবি কই তুমি?জলদি চলে এসো।নয়তো ভুবনের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।"
কল্যানের এমন কথায় ভূবন রেগে তাকায় ওর দিকে। সবাই হাসছে।ইমতিয়াজ বলল,
''আজ কিন্তু ভীষন সুন্দর লাগছে ইশিতাকে।আবার নজর দিয়ে খেয়ে নিস না।"
ভূবন প্রচন্ড লজ্জা পেয়ে বলল,
''তোরা এমন শুরু করলি কেন?টপিক পাল্টা।"
নিশাদ ওদের মাঝে থেকে ও ছিলোনা।ওর নজর সিঁড়িতে।বারবার আড়চোখে দেখে যাচ্ছিলো।ইমতিয়াজ হঠাৎ নিশাদের চাহনিতে খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
''কিরে কি দেখিস?কিছু লাগবে?"
নিশাদ মাথা নাড়লো।চোখ সরিয়ে নিলো বন্ধুদের দিকে।খানিক্ষন বাদেই ইদ্রি আর বাকি বোনেরা মিলে ইশি তাকে নামিয়ে আনে।ভূবনের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে উঠে ইশিতাকে দেখে।নিশাদ কল্যান ইমতিয়াজ তীর্থ সবাই মিলে ভূবন কে স্টেজের দিকে আনতে থাকে।ইশিতাকে স্টেজে বসিয়ে ইদ্রি সরে আসে।তবে নিশাদের নজর এড়াতে পারেনি।নিশাদ খেয়াল করলো ইদ্রিকে খুব সুন্দর লাগছে।ভূবন কে স্টেজে বসিয়ে দেয় ইশিতার পাশে। নিশাদ সরে আসে একটু।ওর থেকে খানিকটা দূরত্বে ইদ্রি।ইদ্রির বোনেরা নাচলো।।ইদ্রিকে জোর করছিলো নাচার জন্য কিন্তু ইদ্রি রাজি হলো না।তীর্থ কল্যান ইমতিয়াজ ওরা ও বেশ মজা করলো।নাচার এক পর্যায়ে বন্ধুরা গিয়ে ইশিতা আর ভূবনকে স্টেজ থেকে নামিয়ে আনে।নিশাদ আর ইদ্রিকে ও টেনে নেয় ভিড়ে।সবাই নাচছে।ইদ্রি বেরুতে ও পারছেনা।হঠাৎ স্কার্ট পাড়া দিয়ে পড়ে যেতে নিলে ওর বাহু ধরে মামলায় নিশাদ।ইদ্রি পিছনে ফিরে নিশাদকে দেখে অনেকটাই অবাক।লোকটা ওকে বাঁচিয়ে দিলো।নিশাদ কোন কথা ছাড়া ওকে ভিড় থেকে বের করিয়ে আনে।নিজেও বেরিয়ে এসে কোথায় যেন চলে যায়।রাত একটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে।ইদ্রি আর থাকতে পারলোনা।আসলে কখনোই এমন বিয়েতে আসেনি ও।বারোটায় মাকে বলে খেয়ে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটতে থাকে ইদ্রি।রুমে যাওয়ার সময় ইমতিয়াজের রুমটা সামনেই পড়ে।ইদ্রি রুমে একটু নজর দিলো।রুমের ভিতর ড্রিম লাইট জ্বলছে।সেই আলোয় নিশাদের নগ্ন শরীর দেখতে পায় ও।সে ঘুমে বিভোর।ইদ্রি একটু এগুলো।এখন যদি ও লোকটাকে ছুঁয়ে দেয় ব্যাপারটা কি বাজে দেখাবে খুব?ওর তো ভীষন ইচ্ছে করছে তাকে স্পর্শ করতে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহস আর হলোনা।দূর থেকে ইমতিয়াজ কে আসতে দেখে ইদ্রি রুমে দৌড়ে গেলো।ইমতিয়াজ অনেকটাই অবাক।কি হলো?বোনটার এখানে কেন দাঁড়িয়েছিল। আর ওকে দেখে কেনইবা এমন দৌড় দিলো।আজ একটা ব্যাপার না চাইতে ও অবাক করেছে ওকে।আজ একটা ব্যাপার না চাইতে ও অবাক করেছে ওকে।নিশাদ ইদ্রির চাহনি।আজ অনেকবারই খেয়াল করেছিলো নিশাদ ইদ্রিকে দেখলে তাকিয়ে থাকে। তবে তাকিয়ে থাকাটা সমস্যা নয়।সমস্যা হলো ইদ্রির বার বার চোখ সরিয়ে নেয়।আড়ালে নিশাদকে দেখা।নিশাদ আর ওর কথা না বলা।ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে ওর।তবে যাই হোক নিশাদ ভীষন ভালো ছেলে।ও কখনো কিছু করবেনা।তবু ও কিন্তু থেকে যায়।ইমতিয়াজ নিজেকে সামলিয়ে বোনের রুমে এসে দেখলো ইদ্রি মেকাপ তুলছে।আয়নায় ভাইকে দেখে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরলো ইদ্রি।তারপর ধীরে বলল,
''কিছু লাগবে ভাইয়া?"
মৃদু হেসে মাথা নাড়ে ইমতিয়াজ।বলল,
''না কিছুনা। খেয়েছিস?"
''হ্যা।"
ইমতিয়াজ যেতে যেতে বলছিলো,
'' নিশাদটা না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলো।"
''খায়নি?"
হঠাৎ জিজ্ঞেস করে উঠে ইদ্রি।ইমতিয়াজ পিছনে ফিরে বলল,
''নাহ।"
ইদ্রি শান্ত স্বরে বলল,
''ওহ।"
''তুই থাক।ওকে ডেকে নিয়ে যাই।"
ইদ্রি কিছু বললনা।ইমতিয়াজ বেরিয়ে গেলো।নিজের রুমে এসে আলো জ্বালায় ইমতিয়াজ।নিশাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওকে স্পর্শ করে হালকা ঝাঁকিয়ে ডাকতে থাকে।নিশাদ আড়মোড়া ভেঙে চোখজোড়া আধো খুলে বলল,
''কি?"
''না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিস যে?"
''ভালো লাগছেনা।তোরা খেয়ে নে প্লিজ।"
''নিশাদ এমন করিস না আয়।সবাই তোর কথা জিজ্ঞেস করছে।"
নিশাদ মানা করতে পারেনা আর।শোয়া থেকে উঠে কাপড় চোপড় পরে নিচে নেমে যায় ইমতিয়াজের সাথে।
.................................এদিকে পরদিন সকালে সাঁঝ আর কুঞ্জন বেরিয়ে পড়ে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে।আদনান ওদের বাসে উঠিয়ে দিয়ে শুকনো কিছু খাবার আর পানি দিয়ে চলে গেলো।সাঁঝ আর কুঞ্জন বসে পড়ে।জানালার পাশে বসে আছে সাঁঝ।চোখে মুখে মলিনতার ছায়া।ফোনে গেমস খেলছে কুঞ্জন।খেলার মাঝেই বোনের দিকে চোখ পড়ে ওপর।এমন আগে কখনো দেখেনি বোনকে।কি হলো বোনের?কুঞ্জন ফোন অফ করে সাঁঝের দিকে চেয়ে বলল,
''কি হয়েছে আপু?"
সাঁঝ সেভাবে থেকেই বলল,
''কিছু নারে।
''তুই এমন মন খারাপ খারাপ করে বসে আছিস।"
''ভালো লাগছেনা।"
কুঞ্জন বলল,
''বুঝিনা তোদের মিনিটে মিনিটে কেন এতো মন খারাপ হয়?হুমু আপুর ও মন খারাপের কোন সময় সময় নাই।অযথা মন খারাপ করে আর খালি ধমকায়।"
ভাইয়ের কথায় হেসে ফেলে সাঁঝ।কুঞ্জনের গাল টেনে বলল,
''ও কেন রাগে?"
''জানি না তো।"
''ওহ।"
সাাঁঝ আবার জানালার পাশে ফিরলো।সাইমনের ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা ওর কাছে বেশ অদ্ভুত।সাইমন কি ইমতিয়াজ ভাইয়ের সাথে সাঁঝের জন্য ভয় পাচ্ছে?সাঁঝ কখনো ওনাকে নিয়ে উল্টো কিছু ভাবেনি।বড় ভাইয়ার ফ্রেন্ড মানে তো ভাই।
সাঁঝ বুঝে উঠতে পারেনা কি হচ্ছে? সাইমনের কথা গুলো ওকে অস্থির করে তুলছে।ঘন্টাখানেক বাসে অতিক্রম করার পর সিরাজগঞ্জ পৌছে যায় সাঁঝ কুঞ্জন।বাস থেকে নেমেই কুঁঞ্জন চেঁচিয়ে উঠলো,
''ভাইয়া!!!"
সাঁঝ ওর ব্যাগ নিয়ে নেমে আসে বাস থেকে।নিশাদের সাথে ইমতিয়াজ ও এসেছে।সাঁঝ ইমতিয়াজ কে দেখে কিছুটা লজ্জা পায় অকারনেই।নিশাদ ভাইবোনকে দেখে হেসে বলল,
''কেমন আছিস?"
সাঁঝ মৃদু হেসে বলল,
''আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।"
ইমতিয়াজ কুঞ্জনের চুল নাড়া দিয়ে বলল, 
''হায় চ্যাম্প!!!কি খবর?"
কুঞ্জন অবাক।ও আঠারো বয়সী এক তরুন।আর ওকে বলছে চ্যাম্প।মানে বাচ্চা ভাবছে।না এতো অপমান।তারপরও হেসে বলল,
''ভালো ভাইয়া।আপনি?"
''ভালো।তা সাঁঝ কোন সমস্যা হয়নি তো আসতে?"
সাঁঝ মাথা নাড়ে।ইমতিয়াজ বলল,
''গাড়িতে উঠো।রোদ পড়েছে বেশ।এভাবে কথা বলা যাবেনা।"
নিশাদ পিছনের প্যাসেঞ্জার সিটে বসলো পাশে সাঁঝ।আর সামনে ইমতিয়াজ আর কুঞ্জন। 
ইমতিয়াজ সামনের গ্লাসটা সাঁঝের দিকে একটু নামিয়ে নেয়।অন্তত কথা বলার ফাঁকে ওকে দেখার ব্যাপারটা মন্দ হবেনা।ভেবেই ইমতিয়াজ মৃদু হাসে।তীথিদের বাসা ইমতিয়াজের নানা বাড়ি থেকে আধা ঘন্টার দুরত্বে।নিশাদ ভাই বোনকে নামিয়ে দিয়ে নিজে ও নেমে এসে বলল,
''কাল ভূবনের হুলুদ পরদিন বিয়ে।বিকেলে তোকে নিতে আসবো।তীথি কে নিয়ে রেডি থাকিস।"
''ভাইয়া ও যদি রাজি না হয়?"
''রাজি করাস। নাহলে তোর আসাটা ভালো দেখা বেনা।বান্ধুবীর বাসায় গিয়ে ওকে ছাড়া বিয়ে খাচ্ছিস কেমন না?"
''হুম।"
''আচ্ছা আসি।কুঞ্জন সাঁঝের খেয়াল রাখিস।তোরা দুজন ঘরে গিয়ে গোসল করবি।"
কুঞ্জন চেঁচিয়ে বলল,
''ওকে ভাইয়া।"
নিশাদ আর ইমতিয়াজ চলে যেতেই তীথি নিচে নেমে এলো।

!!!!

সারা বাড়িময় বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ।ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দৌড়াদৌড়ি করছে।বড়র বাচ্চাদের থামিয়ে যাচ্ছে।কি একটা অবস্থা বারবার বলে যাচ্ছে ভূবনের মা ইসরাত খন্দকার।দুপুর তিনটা।ইশতিয়াক মাহবুব ভূবনের গায়ে হলুদ।হলুদ পাঞ্জাবী পরে রুমে ঘোরাঘুরি করছে ও।বন্ধুরা এখনো আসেনি।ভাবতেই রাগ লাগছে।জানোয়ার গুলা।ভূবন কল দিচ্ছিলো। কেউই ধরছেনা।ইমতিয়াজের কল লেগে গেলো শেষ মেষ।ভূবন রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলল,
''কই মরেছিস?ফোন ধরিস না কেন?"
''আরেহ মেয়ে মানুষদের চিনিস না।এখনো রেডি হচ্ছে।নিশাদের ভাই আর বোন আসছে।ওরা ও রেডি হচ্ছে।"
''তাহলে তোরা কি রেডি হওয়া দেখছিস?"
''আরে নাহ।ভাবছি ওরা যদি না চিনে?"
''বাজে বকিস না।তোরা চলে আয়।কাব্য তীর্থ ফারহান কোনটাকেই দেখছিনা সকাল হতে।"
ইমতিয়াজ একটু হেসে বলল,
''চিন্তা করিসনা এসে যাবে।তুই রেডি হয়েছিস?"
''হুম।পায়জামা দলা। ইস্ত্রী ও করতে পারিনা।কেউ ফ্রী না।"
''তার মানে নাঙ্গু পাঙ্গু হয়ে ঘুরছিস?দোস্ত ছবি দেনা।আপলোড দিমু। ক্যাপশন থাকবে হ্যাস ট্যাগ হলুদ ছোঁয়া হ্যাস ট্যাগ নাঙ্গু পাঙ্গু মিঃ ইশতিয়াক মাহবুব আর নাহলে ইশিতাকে হোয়াটস্যাপ করে দিবো ইদ্রির নম্বর থেকে।"
কথাটা শেষ করেই জোরে হেসে ফেললো ইমতিয়াজ।পাশ থেকে নিশাদের হাসি শুনতে পেলো ভূবন।নিশাদ ইমতিয়াজকে বলছিলো,
''হারামি কোথাকার।"
ভূবন রেগে বলল, 
''তোরা হাসতে থাক।আমি ভাবছি কিভাবে কি করবো?"
ইমতিয়াজ হাসি থামিয়ে বলল,
''চলে আসবে ওরা।ডোন্ট ওয়ারি।"
'তোরা চলে আয় জলদি।"
কথা শেষ করে ইমতিয়াজ নিশাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
''বেশ রাগ দেখলাম।তোরা জলদি চলে যা।"
কাব্য বলল,
''দাঁড়া হয়েই গেছে প্রায়।জাস্ট কালার করাই বাকি।আজ শালার হলুদ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।"
তীর্থ বলল,
''ওপরে লেখে দেয় নাঙ্গু পাঙ্গু,ভূবন মিঞার হলুদ ছোঁয়া।"
নিশাদ অস্ফুট শব্দ করে বলল,
''বেশি হয়ে যাবে।যাই করেছিস এনাফ।"
কাজ ফারহান প্ল্যাকার্ডের চারিদিকে লেইস লাগাচ্ছে।কাজের মাঝে ওরা গল্প করাও ছাড়েনা।এদিকে সাঁঝ শাড়ী  পরিয়ে দিচ্ছে ইদ্রিকে।ইদ্রি সাঁঝকে পেয়ে ভীষন খুশি।সাঁঝ আর কুঞ্জন সকালেই এসে গেছে।বাসার কিছু কাজে সাঁঝ অনেকটা সাহায্য করেছিলো।বাড়ির সবাই ওর কাজে অনেকটাই খুশি।সাঁঝ যেখানে যাচ্ছিলো ইমতিয়াজ ও সেখানে ঘুরছিলো ওকে এটা সেটা এগিয়ে দেয়ার ছলে।সাঁঝ যখন হলুূদ বাটতে বসেছিলো তখন পিছন থেকে ইমতিয়াজ হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছিলো।ও আগ থেকেই হাত পাখা নিয়ে তৈরি।আগে যারা বেঁটে ছিলো সবাইকে বাতাস করেছে যখন শুনেছিলো সাঁঝ ও বাটবে।সাঁঝ বাটার মাঝে বলছিলো,
'' ভাইয়া বাতাস করতে হবেনা। "
জবাবে ইমতিয়াজ বলছিলো, 
''গেস্টদের সেবা করা ভালো কাজ।তুমি আমাদের এখানে এসে কতো কাজ করেছো তারওপর আবার হলুদ বাটছো।আমি এতোটুকুতো করতেই পারি।"
জবাবে সাঁঝ হাসছিলো মৃদু।হঠাৎ কুঞ্জন কোথা থেকে নিশাদের ফোনে ভিডিও অন করে হাজির।বোনের সামনে ক্যামেরা ধরে বলছিলো,
''একটু বিশেষ ঘোষনা।সবাই দেখুন সুন্দরী কাজের বেটি হলুদ বেটে নিজের চুল ও গাল হলুূদ করে ফেলছে।"
কুঞ্জনের কথায় সবাই হেসে ফেলে।ইমতিয়াজ একটু উঁবু হয়ে সাঁঝের গালে জমা হয়ে থাকা হলুদ গুলো মুছে দেয়।ইমতিয়াজের ছোঁয়ায় সাঁঝ চমকে উঠে ওর দিকে তাকাতেই ইমতিয়াজ হাত সরিয়ে বলল,
''গালে লেগেছিলো অনেকটা। তাই মুছে দিলাম।"
জবাবে সাঁঝ কিছু না বলে মৃদু হাসে।সাঁঝের সেই হাসি ইমতিয়াজের হৃদয়কে অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলেছিলো।মামীরা বললেন,
''ইমতু বৌয়ের ও কিন্তু এভাবে খেয়াল রাখতে হবে।"
জবাবে ইমতিয়াজ হেসে বলছিলো, 
''সেজন্যই প্র্যাকটিস চলছে।"
সাঁঝ বেশ লজ্জা পেলো।ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে পালাতে।
ওদের কথার মাঝে নানু বললেন,
''প্র্যাকটিস করতে করতে ওকেই বৌ বানিয়ে নিস না।"
সাঁঝ এবার বসে থাকতে পারলোনা।চটজলদি বেঁটে উঠে তৎখনাৎ চলে গেলো।
কাব্য তীর্থ ফারহান আসার পর ইমতিয়াজ সাঁঝের পিছু ছাড়ে।ইমতিয়াজকে এমন করতে দেখে ফারহান ওকে আড়ালে বলছিলো, 
''কি বস উদ্দেশ্য কি?"
''তেমন কিছুইনা।"
''সাঁঝের পিছু ঘুরছিলি যে?"
''এমনি। কেন?"
''না বলছিলাম মেয়েটা বেশ।লম্বা ফর্সা সব দিক থেকেই।"
ইমতিয়াজ কিছুই বলেনি তবে ওর হাসিই বলে দিয়েছিলো সহস্র রঙ্গীন অনুভূতির কথা।ইদ্রির কুচিতে সেফ্টিপিন মারছিলো সাঁঝ।ইদ্রি বলল,
''আপু একটা প্রশ্ন করি?"
সাঁঝ উপরে তাকিয়ে হেসে বলল,
''বলো।"
''আপু কাউকে কখনো ভালবেসেছেন?"
সাঁঝ কিছুটা অবাক হয়।এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কেন করছে ইদ্রি।ওদের এনিয়ে দুবার দেখা হয়েছে।সাঁঝকে অবাক হতে দেখে ইদ্রি বলল,
''আপু আপনি জানেন আমার বোন নেই।তাই আপনাকে করা।"
''কেন কাউকে ভালবাসো?"
সাঁঝ হেসে ইদ্রির আঁচল ঠিক করতে থাকে।ইদ্রি কিছু বলতে পারেনা।সাঁঝ ওর গাল টেনে দিয়ে বলল, 
''পিচ্চি এখন পড়াশুনায় মন দাও।প্রেমের কথা ভেবোনা।"
ইদ্রি মলিন চেহারায় সম্মতি জানায়।সাঁঝ ওর চিবুক নেড়ে বেরিয়ে একটা মেয়েকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
''আমার সাথে একটা ছেলে এসেছিলো কুঞ্জন নাম।দেখেছো ওকে?"
মেয়েটা জবাবে বলল,
''ওনাকে দেখলাম ছাদে কতোগুলো মেয়ের সাথে গল্প করছে।"
সাঁঝ হেসে বলল,
''ওকে দেখলে বইলো আমি ডেকেছি।"
''আচ্ছা।"
মেয়েটা চলে গেলো।সাঁঝ আবার ইদ্রির রুমে প্রবেশ করে।ইদ্রি একটা শাড়ী ধরে সাঁঝের দিকে।লাল শাড়ী।সব মেয়েরাই লাল শাড়ী পরেছে।তবে সাঁঝের টা আলাদা।সাঁঝ শাড়ী পরে একটু সেঁজে নেয়।চুল খোঁপা করে সেখানে দুটো ফুল লাগিয়ে নেয়।ইদ্রি সাঁঝ কে দেখে বলল,
''আপু আজ কয়েকটা ছেলে তোমাকে দেখে পাগল হবে।কতো সুন্দর লাগছে।"
সাঁঝ লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলল,
''খুব পেঁকে গেছো।আন্টিকে বলবো বিয়ে দিয়ে দিতে।"
বিয়ের কথা শুনে ইদ্রির বুকে ঢোল বাজতে থাকে।কেমন ভারি হয়ে আসে ওর মাথা।নিশাদ আর ইমতিয়াজ পাঞ্জাবী পরে নিচে নেমে আসে।দুজন কথা বলছিলো তখনই সাঁঝ আর ইদ্রি দুটো ডালা নিয়ে নেমে আসে।নিশাদ আর ইমতিয়াজ দুজনে সাঁঝ আর ইদ্রিকে দেখে অবাক।নিশাদ আর চোখ ফেরাতে পারেনা ইদ্রির থেকে।খোলা চুল লাল শাড়ী ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক হাতে লাল রেশমী চুড়ি সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে।এদিকে ইমতিয়াজ সাঁঝের থেকে চোখ সরিয়ে নিশাদের দিকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু নিশাদের নজর ইদ্রির দিকে থেমে গেলো।সাঁঝ আর ইদ্রি ওদের কাছে এসে দাঁড়ায়। নিশাদ চোখ সরিয়ে বোনের দিকে তাকায়।সাঁঝ বলল,
''ভাইয়া এখানে জামাইয়ের শেরওয়ানি আর বাকি জিনিস পত্র।আর ইদ্রির ওটায় আন্টি কি যেন রেখেছিলেন।"
ইমতিয়াজ না দেখে বলল,
''হ্যা হ্যা সব ঠিক আছে বের হও।"
কুঞ্জন ও এসে হাজির।নিশাদ বলল,
''কই ছিলি এতক্ষন? কতক্ষন ধরে ডাকছি।"
কুঞ্জন হেসে বলল,
''ভাইয়া ছাদে ছিলাম।ভালো লাগছিলোনা।"
কথা বার্তা শেষ করে বেরিয়ে পড়ে ওরা।রাস্তায় একটু হেঁটপ সামনে এগুলেই ভূবনদের বাসা।তাই অযথা গাড়ি নিলোনা ওরা।ভূবনকে আজ রাজপুত্র লাগছে বর বেশে।নিশাদ ইমতিয়াজ গিয়েই বন্ধুদের সাথে যোগ দিলো।ইদ্রি সাঁঝ গল্প করছিলো।গেস্ট সব আসার পর শুরু হলো হলুদের কার্যক্রম।মুরব্বিরা হলুূদ লাগানোর পর সব বন্ধুরা ভূবনের পাশে বসে চারজনে হাতে হলুদ নিয়ে একসাথে ওর মুখে হলুদ মাখতে শুরু করে।সবাই হাসতে শুরু করে।ইমতিয়াজ সেই মুহূর্তে সেলফি তুলে নেয়।তারপর চারজনে ভূবনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজেদের হাতের প্ল্যাকার্ড গুলো তুলে ধরে।সেখানে ছিলো ভূবনের জন্য বন্ধুদের হৃদয় ভোলানো কিছু বানী।ভূবন সেগুলো দেখে কিছু বলতে পারলোনা।চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠেছিলো ওর।হলুদের অনুষ্ঠান চলা কালীন ইদ্রি নিশাদ একে অপরকে দেখছিলো বারবার।নিশাদ ইদ্রির চোখে ধরা পড়তে না চেয়ে ও অনেকবার ধরা পড়েছিলো।একটা শিল্পী এনেছিলো ওরা গান গাওয়ার জন্য।মেয়পটা অনেক ভালো গায়।সাঁঝ মেয়েটার হাতে একটা গানের নাম লিখে ধরিয়ে দেয়।মেয়েটা গাইতে শুরু করে সাঁঝের বলে দেয়া গান।

Kehna hi kya yeh nain ek anjaan se jo mile
Chalne lage mohabbat ke jaise yeh silsile
Armaan naye aise dil mein khile,
Jinko kabhi main naa jaanoon
Voh humse, hum unse kabhi naa mile,
Kaise mile dil naa jaanoon
Ab kya kare, kya naam le,
Kaise unhe main pukaaroon

Kehna hi kya yeh nain ek anjaan se jo mile...................
গানটার সময়ে নিশাদ ইদ্রি দুজনের হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো একে অপরকে ঘিরে।সে অনুভূতি এতোটাই গভীর যে কেউ নিজেকে হারিয়ে ফেলবে।
.

.....................রাত নয়টা। সাইমন ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে।আজ কাল বড্ড একা লাগে।এক দিকে ভাইয়ের এমন আচরনে খারাপ লাগা তারওপর সাঁঝের অনুপস্থিতিতে একাকীত্ব।সাঁঝ থাকলো ওর সাথে দেখা করলে ও ভালো লাগতো ওর।ল্যাপটপ অফ করে উঠে দাঁড়াশ সাইমন।দাদি ডাকছিলেন অনেকটা সময় ধরে।সাইমন ভাবছে এসে নাহয় সাঁঝকে কল দিবে।
রুম থেকে বেরিয়ে দাদির রুমে আসে সাইমন।দাদি বসে আছেন খাটের ওপর। ওনার সামনে অনেকগুলো গয়নার বাক্স।সাইমন কে দেখে মায়াবী হাসি দিলেন দাদি। সাইমন জিজ্ঞাস করলো,
''কিছু বলবে দাদী?
দাদি সাইমনকে আদর করে সামনে বসিয়ে বললেন,
''দেখ কি পছন্দ হয় তোর?"
সাইমন অবাক হয়ে বলল,
''দাদি আমাকে কেন দেখাচ্ছো?"
''তোর দাদু মরে যাওয়ার আগে তোদের বৌয়ের জন্য রেখে গেছিলো।তার দুই আদরের নাতীর জন্য।তাই এগুলো তোর বৌয়ের জন্য।দেখতো সাঁঝের জন্য পছন্দ হয় কিনা?"
সাইমন খুশি হয়ে বলল,
''দাদি তোমার সাঁঝকে ভালো লেগেছে?"
''খুব ভালো লাগছে আমার সাইমন দাদুর জন্য।"
''তাহলে ওরা ঢাকায় ফিরলে ওদের বাসায় যাবে?"
''অবশ্যই যাবো।যেদিন বলবি সেদিন যাবো।"
সাইমন খুশিতে দাদিকে জড়িয়ে ধরলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন