প্রিয়দের কাল্পনিক সাক্ষাৎ - পর্ব ০২ - নৌশিন আহমেদ রোদেলা - ধারাবাহিক গল্প


স্টাডি রুমে আরাম কেদারায় বসে বই পড়ছে ফাহিম। টেবিলের ওপর কয়েক বাণ্ডিল পরীক্ষার খাতা। ক্যাপ খোলা একটা দুটো লাল কলম, এখানে ওখানে ছড়ানো। তারপাশেই ঝকঝকে সাদা চায়ের কাপ। ফাহিম গম্ভীর মুখে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। নাকের ডগায় রাখা রিডিং গ্লাসে সুন্দর মানিয়েছে তাকে। চোখ-মুখের গাম্ভীর্য চেহারায় একটা শিক্ষক শিক্ষক ভাব ফুটিয়ে তুলেছে। ফাহিমের অখন্ড মনোযোগকে খন্ডবিখন্ড করে দরজার কড়া নড়ল। 

' আপনার মতো বিবেকবর্জিত মানুষ যে পৃথিবীতে দুটো নেই, তা কি আপনি জানেন?' 

ফাহিম মুখ তুলে তাকাল। দরজা আগলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া। কপালে বিরক্তিদায়ক ভাঁজ। চোখে-মুখে অসন্তুষ্টি। ফাহিম রিডিং গ্লাসটা খোলে রাখল টেবিলে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,

' এখনও ঘুমাও নি?' 

রিয়া জবাব দিল না। রাগে সর্বাঙ্গ জ্বালা করছে তার। রিয়া ভারী শরীর নিয়ে কয়েক পা এগিয়ে এল। ফাহিম তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়াল। রিয়ার ডানহাতটা ধরে তাকে চেয়ারে বসতে সাহায্য করল। রিয়া গমগমে কন্ঠে বলল,

' একদম ছুঁবেন না আমায়। অন্যের হাজবেন্ডরা প্রেগনেন্ট ওয়াইফদের দুই মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল করে না। আর আপনি? সেই যে সন্ধ্যায় স্টাডি রুমে ঢুকেছেন আর খবর নেই। বই পেয়ে বউ নাম ব্যক্তিটাকেই ভুলে গিয়েছেন মনে হচ্ছে।'

ফাহিম হাসার চেষ্টা করে বলল,

' আমি ভাবলাম তুমি ঘুমোচ্ছ।' 

' ভাবলেন! কেন ভাবলেন আপনি? আর আমি ঘুমালেই বা আপনাকে নিরুদ্দেশ হতে হবে কেন? আমি ঘুমালেও আপনি আমার পাশে বসে থাকবেন। আমি যদি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বিছানা থেকে পড়ে যাই?' 

ফাহিম অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল। ঘুমালেও পাশে বসে থাকতে হবে? কি আশ্চর্য! বউ প্রেগনেন্ট বলে কি হাজবেন্ডের নিজস্ব কোনো সময় থাকবে না? বসে বসে বউয়ের বিছানা থেকে পড়ে যাওয়া আটকাতে হবে? ফাহিমের মস্তিষ্ক উত্তর দিল, হ্যাঁ হবে। ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়ার দিকে তাকাল। মেয়েটা কয়েকদিনেই কেমন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তার বাচ্চা বউ আর বাচ্চার মার মাঝে তেমন একটা মিল নেই। না থাকুক। মিল থাকতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। ফাহিম রিয়ার ডানহাতটা নিজের দু'হাতের মাঝে নিয়ে বলল,

' ঘুমোতে চলো।' 

রিয়া অনড় বসে রইল। ফাহিম কপাল কুঁচকে বলল,

' কি হলো? চলো। আমি তোমার সাথেই ঘুমাব, চলো।' 

এবারও কোনরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাল না রিয়া। ফাহিম এবার বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকাল। সন্ধ্যা থেকে ভার্সিটির খাতা কেটে মাথাটা ধপধপ করছে তার। রাতদুপুরে রিয়ার এই পাগলামো অসহ্য ঠেকছে। ফাহিম আলতোভাবে বলল,

' কি সমস্যা?' 

রিয়া মুখ কাঁচুমাচু করে ফাহিমের দিকে তাকাল। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে টেবিলের ওপর রাখা পেপারওয়েটের দিকে তাকিয়ে রইল, জবাব দিল না। ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়ার পাশে চেয়ার টেনে বসল। কন্ঠটা যথাসম্ভব আদুরে করার চেষ্টা করে বলল,

' আমাদের রিয়ামণির কি হলো? রিয়ামণির কি মন খারাপ? ' 

রিয়া চকিতে তাকাল। চেহারায় চাপা উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,

' আয়ান ভাইয়ারা সিলেট যাচ্ছে?' 

' হ্যাঁ যাচ্ছে।' 

' ঢাকায় আসবে?' 

' বোঝা যাচ্ছে না। মার সাথে দেখা করতে আসতে পারে কিন্তু এক-দু'দিনের বেশি থাকবে না। কেন বল তো?' 

রিয়া উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,

' চলুন না আমরাও যাই।' 

ফাহিম কপাল কুঁচকে বলল,

' সরি? কোথায় যাব?' 

' কোথায় আবার? সিলেট।' 

ফাহিম যেন আকাশ থেকে পড়ল৷ অবাক হয়ে বলল,

' সিলেট মানে? পাগল নাকি? চলো তো, ঘুমাবে চলো।'

রিয়া মুখ ফুলিয়ে বলল,

' যাব না। আগে বলুন সিলেট নিয়ে যাবেন। আমাদের বিয়ের পর একবারও হানিমুনে নিয়ে গিয়েছেন আমায়?' 

' তাই বলে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হানিমুনে যাবে? জীবনে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হানিমুনে যেতে দেখেছ কাউকে? মানুষ অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সুযোগ খুঁজতে হানিমুনের প্ল্যান করে আর তুমি কিনা?' 

' একদম বাহানা দেবেন না। নিয়ে যাবেন কিনা বলুন। নয়তো আমি ভাইয়াকে বলে আজকেই বাড়ি চলে যাব। আপনি একটুও ভালোবাসেন না আমায়। সিম্পল সিলেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য এতো বাহানা! থাকব না আমি।' 

ফাহিম হতাশ গলায় বলল,

' নিয়ে যাব না, সেটা তো বলি নি বউ। আগে বেবি আসুক। তারপর তিনজন একসাথে যাব। প্রয়োজন হলে আসার সময় আরেকজনকে ক্যারি করে আনব। সমস্যা তো নেই। কিন্তু এখন নয়।' 

রিয়া চোখ-মুখ কালো করে বসে রইল। বর্ষাকালের আবহাওয়ার মতো হঠাৎই একগুচ্ছ কালো মেঘ এসে হানা দিল তার চোখে। ফাহিম সেই গভীর চোখদুটোতে চোখ রেখে তৃতীয় বারের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে বুঝে ফেলল, শেষ রক্ষা হবে না। শেষ পর্যন্ত যে ভার্সিটি থেকে ইমার্জেন্সি ছুটি নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা বউকে বগলদাবা করে সিলেট ছুটতে হবে তা তো কতদিনের জানা তার । এই মেয়েটাকে কখনই কিছু বুঝাতে পারে না ফাহিম। বিয়ের আগেও না। বিয়ের পর তো আরো না। 

_______________________

বিছানায় বসে মোজা পরছে শুভ্র। তার পাশেই বাবাকে অনুকরণ করে মোজা পরায় ব্যস্ত শুভ্রতা। মাঝে মাঝেই সচেতন চোখে বাবার পায়ের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর আবারও নিজের কাজে মন দিচ্ছে। চোখমুখ বাবার থেকেও গম্ভীর, থমথমে। শুভ্র মোজা পরা শেষ করে জুতো পরল। শুভ্রতাও পরল। শুভ্র ডানহাতের কব্জির ওপর থাকা ঘড়িটা দেখে নিয়ে চেঁচিয়ে ডাকল,

' রোদ? তুমি কি আমার সাথে বের হবে?' 

শুভ্রতা বাবাকে অনুকরণ করে প্রথমে ডানহাতের দিকে তাকাল। তারপর চেঁচিয়ে বলল,

' আম্মু? তুমি কি আমাল সাতে বেল হবে?' 

মেয়ের কথায় হেসে ফেলল শুভ্র। বাবার হাসি দেখে শুভ্রতাও খিলখিল করে হেসে উঠল। বাবা-মেয়ের হাসির মাঝেই দরজায় এসে দাঁড়াল রোদ। পরনে কালো শাড়ি। চোখে গাঢ় কাজল। কথা বলার সময় টকটকে লাল ঠোঁটজোড়া কেঁপে কেঁপে উঠছে। শুভ্র সেদিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। বলল,

' বাপরে! ভয়ানক লাগছে। একদম রসগোল্লা।' 

শুভ্রতা বাবার মতো চোখ টেপার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। একচোখ বন্ধ করতে গিয়ে দুই চোখই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কি বিপদ! মেয়ের অবস্থা দেখে শুভ্রর হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাওয়ার জোগার। রোদ কোনরকম হাসি চেপে বলল,

' নিচে সাহেল চাচ্চু এসেছে, মা। সাথে সাদাফ ভাইয়াও এসেছে। তোমাকে খুঁজছে। ছুটে যাও।' 

কথাটা শেষ হতেই ফুড়ুৎ করে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল শুভ্রতা। বড় বড় চোখ মেলে বলল,

' চাচু চক্কেত এনেছে?' 

' হ্যাঁ, এনেছে তো।' 

এই সংবাদ পাওয়ার পর শুভ্রতার আর দাঁড়িয়ে থাকা চলে না। দাঁড়িয়ে অবশ্য সে থাকলও না। উল্কার বেগে দরজা পেরিয়ে নিচে ছুটে গেল। শুভ্র এবার ঠোঁট কামড়ে উঠে দাঁড়াল। মৃদু শিষ বাজিয়ে রোদের ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল। অদ্ভুত চোখে আগাগোড়া নিরক্ষণ করতেই ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ল রোদ,

' কি হচ্ছে?' 

শুভ্র হাসল। ডানচোখটা টিপে দিয়ে বলল,

' ইভটিজিং হচ্ছে। সুন্দরী মেয়েদের দেখে ইভটিজিং করতে হয়, জানো না?' 

রোদ ভাব নিয়ে বলল,

' ফুটুন। আমার বরকে তো চিনেন না। হি ইজ আ সুপারম্যান। এক ঘুষি দিবে আর চোখ-মুখ নাই হয়ে যাবে। সো সাবধান।' 

শুভ্র অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

' তাই নাকি?' 

কথাটা শেষ করেই দু'হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,

' সামনে এমন জ্বলন্ত সুন্দরী দাঁড়িয়ে থাকলে দু'একটা চোখ-নাক উড়ে গেলেও ক্ষতি নেই। সুন্দরীর স্পর্শ পাওয়া যাবে আর সর্বনাশ হবে না, তা কি হয়? আই উইশ আজ আমার সর্বনাশ হোক।' 

রোদ হেসে ফেলল। শুভ্র খানিকটা চেপে এসে ঘন হয়ে দাঁড়াতেই দরজার বাইরে থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো,

' আস্তাগফিরুল্লাহ! ভাই? কি করছিস?' 

অভ্রর কন্ঠে বিদ্যুৎ বেগে সরে দাঁড়াল দু'জনে। রোদ লজ্জায় লাল হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরাল। লজ্জা আর অস্বস্তিতে বোকার মতো হাসি পাচ্ছে তার। শুভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

' ভাইয়া! তোকে যে কবে আমি গুম করে দেব তা কেবল আল্লাহ মা'বুদ জানে। বিশ্বাস কর, একমাত্র বউমণির মুখের দিকে তাকিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছি।' 

অভ্র দাঁত বের করে হাসল। বলল,

' সেইম টু ইউ ভাই। একমাত্র আমার বোনটির মুখের দিকে তাকিয়ে মুখবুজে আছি। নয়ত আমার শালিকার সাথে রংঢং করার অপরাধে তোর গর্দান যেত।' 

শুভ্র ঘাড় কাত করে বলল,

' তোর এখানে কি চাই?' 

' নিচে খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি হচ্ছে। ডাকতে এসেছি। কিন্তু তুই যে এখানে আমার একমাত্র শালিকার সাথে ইভটিজিং ফিফটিজিং করে ফেলছিস, কে জানত? মেয়েটাকে একা পেয়ে এতো দুঃসাহস? মিস.শালিকা? চলে এসো।' 

রোদ ঠোঁট চেপে হেসে অভ্রর পিছু নিল। শুভ্র পেছন পেছন আসতে আসতে বলল,

' ভাইয়া? শোধ নিব শোধ। অপেক্ষা।' 

অভ্র ভারি দুঃখী গলায় বলল,

' ভাইরে! অপেক্ষা টপেক্ষার প্রয়োজন নেই। ছেলে দুটো হয়েছে দুনিয়ার বেয়াদব। কিছু হওয়ার চান্স টান্সই নাই। শোধ নিতে হলে বহুত পেরেশানি করতে হবে তোকে। প্রথমে প্রাইভেসি দিতে হবে তারপর শোধ। চেষ্টা করে দেখতে পারিস। আমি মাইন্ড করব না।'

খাবার টেবিলে বসে আছে সাহেল। তার পাশে নাবিলাসহ বাচ্চাকাচ্চা সব। সাহেল রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তেই সিঁড়ির দিকে তাকাল। সিঁড়ির এক কোণায় কালো শাড়িতে মোড়া লাজুক রোদকে চোখে পড়তেই বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠল। সোহাল চমকে উঠে নাবিলার দিকে চোখ ফিরালো। ফিসফিস করে বলল,

' এই নাবু?'

নাবিলা বেখেয়ালি ভঙ্গিতে জবাব দিল,

' হু?' 

সাহেল গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,

' তওবার দোয়াটা মনে করিয়ে দাও তো। এই মুহুর্তে কিছুতেই মনে পড়ছে না।' 

নাবিলা অবাক হয়ে বলল,

' হঠাৎ তওবার দোয়া প্রয়োজন পড়ল কেন তোমার?' 

সাহেল অধৈর্য কন্ঠে বলল,

' একজন মুসলিম হিসেবে সবসময় তওবার দোয়া মনে রাখা উচিত। আর আমার জন্য তো ডাবল ফরজ। আজ সারাদিন এই দোয়াটাই প্রয়োজন পড়বে আমায়। প্রশ্ন না করে বলো তো!' 

নাবিলা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল। কিছু বুঝতে না পেরে মৃদু গলায় বলল,

' আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি জা...' 

সাহেল মাথা নেড়ে বলল,

' ওহ হ্যাঁ। মনে পড়েছে। মনে পড়েছে। থেংকিউ সুইটহার্ট। তোমাকে একটা চুমু দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখানে দেওয়া যাবে না। পরে মনে করে দেবে, ওকে?'

নাবিলা যেন এবার আকাশ থেকে পড়ল। কিছুক্ষণ সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,

' আমার মনে হচ্ছে তুমি একটু অদ্ভুত বিহেভ করছ।' 

সাহেল বিরবির করে তওবার দোয়া আওড়াচ্ছিল। শেষবারের মতো দোয়া পাঠ শেষ করে হাসার চেষ্টা করল। বলল,

' আমারও তাই মনে হচ্ছে।' 

সাহেল-নাবিলার কথার মাঝেই টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল রোদ-শুভ্র। শুভ্র সাহেলের কাঁধ ঝাঁকিয়ে উপ্লুত গলায় বলল,

' কি অবস্থা, দোস্ত?' 

রোদ সামনের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

' সাহেল ভাইয়া, নাবিলা আপু কেমন আছেন?' 

সাহেল রুটির টুকরোটা মুখে পুড়তে পুড়তে বলল,

' আমি গ্র্যান্ড। তবে নাবিলার নাকে ব্যথা।' 

রোদ অবাক হয়ে বলল, 

' নাকে ব্যথা?' 

নাবিলা হাসল। সাহেলের বাহুতে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বলল,

' আরে ধুর! ওর কথা বিশ্বাস করো? ফাজলামো করছে।' 

ওদের হালকা আলাপ-আলোচনায় হঠাৎই গুরুগম্ভীর প্রসঙ্গ টানল অভ্র। ভাবুক গলায় বলল,

' তুমি কি কালই সিলেট যাচ্ছ সাহেল? আমাকেও কি যেতে হবে সাথে?' 

সাহেল কয়েক ঢোক পানি খেল। গ্লাসটা নামিয়ে রেখে বলল,

' যাওয়া তো উচিত। যারা যারা শেয়ারে আছে সবার উপস্থিতিই কাম্য। ব্যাটা তো সুবিধার না।' 

শুভ্র কপাল কুঁচকে বলল,

' হঠাৎ সিলেট কেন?' 

' তোকে সেদিন একটা ফাইল মেইল করলাম না? পরশু ওটার ফাইনাল মিটিং। তুই যাবি?' 

শুভ্র তৎক্ষনাৎ জবাব দিল,

' নাহ্। ভার্সিটিতে কাজ আছে। তাছাড়া অফিসেও যেতে হবে। তোরা যা।' 

সাহেল ফোঁড়ন কেটে বলল,

' আসল কথা হলো বউ ছাড়া তোর চলছে না। সোজাসাপ্টা বল মিয়া। বুঝি বুঝি, সবই বুঝি।' 

শুভ্র হাসল। সাহেল আবারও বলল,

' তুই চাইলে বউও নিতে পারিস। আমরা বরং একটা ফ্যামিলি ট্যুর দিতে পারি। বাচ্চাদেরও চা বাগান দেখা হয়ে যাবে। আর তোর এক্সট্রা হানিমুন।' 

শুভ্র এবার নিজের পায়ে হাত দিল। রাগী স্বরে বলল,

' জুতো না খাইতে চাইলে চুপ যা। আমার এক্সট্রা মানে কি? নিজের সুপ্ত ইচ্ছে আমার ওপর চাপাস কেন? শালা বাটপার!' 

শুভ্র-সাহেলের কথায় হেসে ফেলল সবাই। নাবিলা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,

' সাহেল কিন্তু খারাপ বলে নি। এই শুভ্র? চল না যাই।' 

শুভ্র ততক্ষণে খাবারে মনোযোগী হয়েছে। প্লেটের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,

' না রে। হবে না। এই সপ্তাহটা ভীষণ ব্যস্ততায় কাটবে।' 

নাবিলা মুখ ফুলিয়ে বলল,

' আরে চলই না। দু'দিনেরই তো ব্যাপার। সিলেট কত সুন্দর জানিস? এই রোদ?ওকে বলো না একটু।'

শুভ্রর মধ্যে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কোনো লক্ষ্মণ দেখা গেল না। রোদ মৃদু গলায় বলল,

' শুনুন না? চলুন না যাই।' 

শুভ্র গম্ভীর মুখে বলল,

' কাজ আছে। অন্য একদিন নিয়ে যাব।' 

রোদ এবার অদ্ভুত এক কাজ করল। টেবিলের নিচে থাকা শুভ্রর বাম হাতটা খপ করে ধরে ফেলল। হঠাৎ রোদের স্পর্শে বিষম খেল শুভ্র। অবাক চোখে রোদের দিকে তাকাল। রোদ চোখ-মুখ যথাসম্ভব আদুরে করার চেষ্টা করে বলল,

' প্লিজ। প্লিজ...' 

সাহেল প্লেটের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। শুভ্র সর্বদা নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকলেও রোদের সামনে তা চলে না। রোদের সব আবদার তার কাছে ভয়ানক রকম গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসেবে শুভ্রর রাজি হয়ে যাওয়ার কথা। হলোও তাই। আগেপিছে না ভেবেই ফট করেই জবাব দিল শুভ্র,

' আচ্ছা।' 

সাথে সাথেই খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠল পুরো খাবার টেবিল। আদ্র-রোদ্র সিলেট যাওয়া নিয়ে হৈ-হুল্লোড় বাঁধিয়ে দিল। রুহির হাতে দু' চারটা চড়-থাপ্পড় খাওয়ার পর তাদের এই এক্সাইটমেন্টে খানিক ভাটা পড়ল। সাদাফের চোখে-মুখে কোনো ভাবাবোগ দেখা গেল না। রুটি ছেঁড়ায় ব্যস্ত শুভ্রতা সবার আনন্দের মূল কারণটা বুঝতে পারল কি-না তা ঠিক বুঝা গেল না।
.
.
.
চলবে......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp