পরাণ প্রিয়া - পর্ব ১৩ - রাবেয়া সুলতানা - ধারাবাহিক গল্প


নতুন বাড়িতে মোশারফ হোসেন আর সালমা বেগম নিবিড়ের দাদীকে নিয়ে সকালেই চলে গেছেন।প্রিয়তা  নিবিড় আর নিজের টুকটাক জিনিস গুছিয়ে নিতে দেরি হয়ে গেলো।
প্রিয়তা ইচ্ছে করেই এই দেরিটা করেছে।নতুন বাড়িতে ওনি ছাড়া পা দিতেই নিজের কাছে অপূর্ণ মনে হবে।ওনি অফিস থেকে নাকি এখানে একবার আসবেন। সেই সুযোগে ওনার সাথেই চলে যাবো।

দুপুরে অফিসে বসে নিবিড় ভাবছে, সকালে আসার সময় ইচ্ছে করেই প্রিয়তাকে শুনিয়ে বলেছিলো অফিস থেকে একবার ওই বাড়িতে যাবে।যাতে প্রিয়তা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে।নতুন বাড়িতে নতুন মানুষকে নিয়ে প্রথম পা রাখতে কার না ভালো লাগে? প্রিয়তা কী আমাকে রেখে বাবার সাথে চলে গেলো?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিবিড় মোশারফ হোসেনকে ফোন দিয়ে,
বাবা আপনারা ঠিক মতো পৌঁছাতে পেরেছেন?
-হে ,,তোমার নতুন বাড়ি আমার ভালো লেগেছে।তবে এই বয়সে সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা বড়ই মুশকিল। 
তোর দাদীও তো পারবে না।
-ডোন্ট ওরি বাবা,,,মাহিদকে পাঠিয়েছি ও আপনাদের  নিচের রুমে সেট করে দিবে।
-হে সেই ভালো।আগের একতলা বাড়িটাও কিন্তু খারাপও ছিলো না।হয়তো তোমার দোতলার বাড়ি থেকে অতটা রাজকীয় নয়।
নিবিড় মোশারফ হোসেনের কথা এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রিয়তার কথাটা কীভাবে বলবে বুজতে পারছে না।
তবুও এক নিশ্বাসে বললো,বাবা প্রিয়তা কী করছে?
-আরে ও তো এখনো আসেইনি।আচ্ছা শুন তুই তো ওই বাড়িতে যাবি।আসার সময় জুহি আর প্রিয়তাকে নিয়ে আসিস।
কথাটা শেষ করতেই নিবিড় আর দেরি করলো না,রিসাদ আমি আজ আর অফিসে আসবো না।আপনি একটু সামলিয়ে নিবেন।
- ওকে স্যার।

নিবিড় এসে বাড়ির ড্রইংরুমে দাঁড়িয়ে দেখে সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে।নিজের রুমে গিয়ে দেখে প্রিয়তা লাল রঙের একটা শাড়ি পরে চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে আছে।খাটের উপর থেকে ব্যাগগুলো নামাতেই হিমসিম খাচ্ছে দেখে নিবিড় এসে হাত বাড়িয়ে ধরে নিচে নামিয়ে দিলো।
-আরে আপনি কখন এলেন?
নিবিড় গম্ভীর গলায় বললো, এখন। আর আপনি এইখানে কি করছেন? সকাল বেলা মায়ের সাথে চলে যাননি কেনো?
প্রিয়তা মনে মনে ভাবছে,কি রাক্ষসরে বাবা।ওনার জন্যই গেলাম না আর ওনিই আমাকে বলে কিনা কেনো যায়নি।আর আমি যে এতো সুন্দর একটা লাল শাড়ি পরেছি সেইদিকে কোনো খেয়াল নেই।থাকবেই বা কেনো ওনার তনুসা তো আর আমি না।
-শাটাপ,তনুসা তোমার মতো এইরকম শাড়ি পরে না যে তাকে নিয়ে মনের মাইক্রোফোনে জোরে জোরে বলতে হবে।
-আপনি কী করে জানলেন আমি মনে মনে কী বলছি? 
-আপনি এতো জোরে জোরে কথা বলেন যে এলাকার সব মানুষই শুনতে পায়।কথাটা বলে নিবিড় রুম থেকে হাসি চেপে রেখে বেরিয়ে গেলো।
আর মনে মনে ভাবছে শাড়িটা আপনাকে আমার মনে রানীর মতো লাগছে।তনুসা এই শাড়ি পড়লে কখনোই এতোটা সুন্দর লাগতো না।
সবগুলো ব্যাগ গাড়িতে উঠিয়ে,জুহি তোর এতো দেরি কেন বলতো?
-ভাবী একা দেখেই আমি থেকে গেলাম।তুমি কখন আসবা না আসবা তাঁর তো ঠিক নেই।
-হু।
জুহি গাড়ির পিছনে বসে পড়লো।প্রিয়তা এসে জুহির সাথে বসার জন্য দরজা খুলতেই,নিবিড় গম্ভীর ভাবে বললো,আপনি কেনো পিছনে বসছেন?
-তাহলে কোথায় বসবো?
-সামনে বসুন।আমি কোনো বাহিরের লোকের ড্রাইভার নয়।বোনের ড্রাইভার হতে রাজি আছি তবে আপনার নয়।
প্রিয়তা উচ্চস্বরে কিছু না বলে বিড়বিড় করতে করতে সামনে গিয়ে বসলো।নিবিড় প্রিয়তার বিড়বিড় দেখে নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে দিলো।

নতুন বাড়িতে এসে সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই,নিবিড়ের দাদী জোরালো গলায় বললো,খাড়াও, খাড়াও।তোমরা দুজনে এই বাড়িতে থাইকা সুখে সংসার করন লাগবো।নিবিড়ের মা যাও তো নতুন বউডারে বরণ কইরা ঘরে তোলো।আরেকখান কথা,নিবিড় দাদা ভাই,ঢুকার সময় বউডারে কোলে লইয়াই ঢুকতে হইবো।
সালমা বেগম এসে প্রিয়তা ডান হাত ধরে আয় মা ঘরে আয়।এইটা তো তোরই ঘর।  

-খাড়াও নিবিড়ের মা।নিয়মকানুন কী ভুইলা গেছো নাকি?নিবিড় মাইয়াডারে কোলে করে নিজের ঘরে নিয়া যাও।কথাটা বলতেই প্রিয়তা নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সে গম্ভীরমুখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি হইলো,কথাকান কানে যায় না? ওরে কোলে লইয়া নিজের ঘরে যাও।
জুহি অট্র হাসি দিয়ে,ওহ্ ভাইয়া,কী রোমান্টিক তাই না? ভাবী তুমি রেডি হও ভাইয়া তোমায় কোলে নিবে।
প্রিয়তা মনে মনে, এই রাক্ষস আমায় কোলে নিবে? জীবনেও,,,,,কথাটা শেষ করতে পারলো না প্রিয়তা,হঠাৎই নিবিড় প্রিয়তাকে কোলে তুলে নিলো।প্রিয়তা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের মুখে।নিবিড় কি সত্যি সত্যিই তাকে কোলে তুলে নিলো? 
নিবিড় ধীরে ধীরে হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে নিয়ে প্রিয়তাকে দাঁড় করালো।
প্রিয়তা এতোক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো।মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নিবিড় কিছু না বলেই,শেফালী আপা, একটু কথা শুনে যাও।
আলমারি থেকে তোয়ালেটা নিয়ে শেফালী আসছে দেখে,আজ তোমার রান্না কর‍তে হবে না।মাহিদ বাহিরের থেকে খাবার নিয়ে আসবে।
তুমি প্রিয়তার ব্যাগগুলো নিয়ে এসে ওর সাথে হেল্প করো।
-ঠিক আছে,আমি এক্ষুণি নিয়ে আসছি।
নিবিড় প্রিয়তা অন্যমনষ্ক হয়ে আছে দেখে,হোয়াট? 
প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে কিছুনা বুজিয়ে একটু একটু করে নিবিড়ের সামনে এগিয়ে এসে,আপনাকে একটু পড়ার সুযোগ দিবেন? 
-মানে? আমি কী বই নাকি আপনি পড়বেন?
-তাঁর ছেয়ে বেশি কিছু।বই পড়লে বুজা যায়,শেখা যায়।কিন্তু আপনাকে বুজতে পারি না।গিরগিটির মতো কখন যে রঙ পাল্টান বুজতেই পারি না।
-কী বলতে চাইছেন আপনি?
-কিছু না।
আপনি গোসল করে নিন।আমি নিচে যাচ্ছি।বাড়িটা একটু ঘুরে দেখি।

নিবিড় কিছু বললো না,ওয়াশরুমে চলে গেলো।
প্রিয়তা এসে জুহিকে নিয়ে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখে সালমা বেগম আর দাদীর কাছে এসে বসলো।
-তোমার নামডা জানি কি?
-প্রিয়তা দাদী।
-নামডা ভালা কিন্তু ওতো শক্ত নামে তোমারে ডাকবার পারুম না।তোমারে আমি পিয়ু বইলা ডাকুম।
প্রিয়তা মুচকি হেসে, আচ্ছা দাদী।
মাহিদ সেইমুহূর্তে সবার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।
শেফালী এগিয়ে গিয়ে মাহিদের হাত থেকে প্যাকেটগুলো নিয়ে,আপনি বসেন।

প্রিয়তা মাহিদের দিকে মুচকি হেসে, মাহিদ সাহেব বসেন।আপনার স্যার গোসল সেরে নিচে নেমে আসবেন।

কেটে গেলো পুরো একটা মাস।নিবিড় আর প্রিয়তার সম্পর্কের একটুও পরিবর্তন নেই সেটাই প্রিয়তার কাছে মনে হচ্ছে।সন্ধার বারান্দায় বসে প্রিয়তা ভাবছে একটা মাস কেটেই গেলো।সময়ের কত তাড়া।কিন্তু মিস্টার নিবিড় একটুও পাল্টালো না।তনুসাকে নিয়ে ওনার সময়টা ঠিক কেটে যায়।এটাই হয়তো আমার প্রাপ্য ছিল। জীবনটা তো সবার একরকম নয়।আর ওনি তো আমায় রক্ষিতা ছাড়া কিছুই ভাবেন না।ওনি আমাকে না ভালোবাসলেও কেনো জানি আমার মন ওনাকেই চায়।চোখ জোড়া বার বার ওনাকেই খুঁজে। কেনো মনে হয় ওনার বুকে একবার মাথা রাখলে দুনিয়ার সমস্ত কষ্ট আমি ভুলে থাকতে পারবো? নিবিড় আপনি কি পারেন না আমাকে একটা বার সুযোগ দিতে? পারেন না একটা বার আমার ভালোবাসাকে তলিয়ে দেখতে?
প্রিয়তা আবার নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে,প্রিয়তা তুই ভালোবাসার কথা কেনো ভাবছিস? নিবিড়ের বাবা মা বোন সবাই কি তোকে কম ভালোবাসে? সব ভুলে দেড় বছর কীভাবে কাটাবি সেই চিন্তাই কর।একটা মাস তো ফেরিয়েই গেলো।

-তনু আমাকে ছাড়ো প্লিজ।প্রিয়তা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
নিবিড়ের কথা শুনে তনুসা নিবিড়কে আরও নিজের কাছে টেনে,বউ এখন তোমার কাছে সব? আমি কিচ্ছু না? 
-শাটাপ তনু।প্রিয়তা আমার স্ত্রী ভুলে গেলে চলবে না।আর আমি ওকে নিজের অজান্তেই কখন যে নিজের ভেবে ফেলেছি তা আমি বুজতেই পারিনি।
-ওই মেয়ের মাঝে কি আছে যা আমার মাঝে নেই।আমিও তোমাকে ভালোবাসি।নিবিড় তুমি যদি চাও আমি এখুনি আমার সব উজাড় করে তোমাকে ভালোবাসবো।প্লিজ নিবিড় তবুও আমাকে ছেড়ে যাও না।
কথাটা বলেই তনুসা নিবিড়কে জড়িয়ে ধরতেই,নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তনুসাকে সরিয়ে,তোমার মাঝে প্রিয়তার তপাৎ কোথায় জানো? নিজের চরিত্রের।প্রিয়তাকে আমি যদি মুখ ফুটেও বলতাম না সে জীবনেও এভাবে রাজি হবে না।যতক্ষণ না আমার ভালোবাসা তাঁর উপর প্রয়োগ করবো।তুমি জানো আজ পর্যন্ত আমার সামনে নিজের উড়নাটাও খুলে না।আর তুমি নিজেকে উজাড় করতে চলে আসছো।
তনু অনেক হয়েছে।প্লিজ আমি আর তোমাকে নিতে পারছি না।

-নিবিড় তুমি এইভাবে আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারো না।তাঁর মানে আমি কি বুজে নিবো নিবিড় ইসলাম মেয়েদের ব্যবহার করে।প্রয়োজন ফুরালে দূরে সরিয়ে দেয়?
-মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ মিস তনুসা।তুমি নিজেও ভালো করে জানো আমি এমন কিছুই করিনি যেটা তোমার ক্ষতি হবে।তোমার  সাথে কখনো আমি বেড শেয়ার করিনি যে আমি তোমাকে ব্যবহার করবো।

কথাটা বলেই নিবিড় নিজের বাড়িতে আসার জন্য পা বাড়াতেই, প্লিজ নিবিড় তুমি আমার কথাটা একবার ভেবে দেখো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
নিবিড় তনুসাকে সরিয়ে গাড়ির সামনে এসে দরজা খুলতেই তনুসা এসে হাত ধরে ফেলে,তুমি আমার চাকরিটা নিয়েছো আমি কিচ্ছু বলেনি।আমাকে তুমি তোমার বিয়ের পর থেকে সময় দাওনি তাও মেনে নিয়েছি।কিন্তু তুমিই চলে যাবে সেটা তো আমি মেনে নিবো না। 

তনুসার কথা শুনে, নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে, তুমি আমাকে ছাড়বে না এমনি এমনি আমিও জানি।পকেট থেকে চেকবই বের করে সাইন করে তনুসার হাতে দিয়ে, টাকার অংকটা বসিয়ে নিও।
নিবিড় আর দেরি করলো না।মুহূর্তেই সেখান থেকে বাড়ি এসে সদর দরজা দাঁড়িয়ে কলিং বেল দিতেই শেফালী এসে দরজা খুলে দিয়েছে।সবাই ড্রইংরুমে বসে থাকলেও নিবিড় কাউকে কিচ্ছু না বলে উপরে উঠে,প্রিয়তা আপনি আছেন এইখানে? 
প্রিয়তা নিবিড়ের কন্ঠ শুনে তড়িঘড়ি করে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এসে,কী ব্যাপার মিস্টার নিবিড়?  আজ এতো তাড়াতাড়ি? 

প্রিয়তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে, এমনি,একা একা কি করছেন বারান্দায়? 
-ভালো লাগছে না তাই বসে ছিলাম।আপনি চেইঞ্জ করে নিন আমি চা নিয়ে আসছি।
প্রিয়তা দরজার সামনে যেতেই, প্রিয়তা!
প্রিয়তা থমকে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে, কিছু বলবেন?
-মন খারাপ? 
প্রিয়তা একটু অবাক হয়ে,মনে মনে ভাবছে, রাক্ষসের হঠাৎ করে কি হলো? আমার মন খারাপ কিনা জিজ্ঞেস করছে?
-আপনার কি জ্বর আসলো নাকি নিবিড় সাহেব?
-আমি ঠিক আছি।বললেন না তো মন খারাপ কিনা? 
প্রিয়াতা হে হে করে হেসে, এইবার বুজেছি,নিশ্চয়ই জ্বীনে ধরেছে তাই না?
-শাটাপ প্রিয়তা।কি ভুল বাল বকে যাচ্ছেন।আমাকে জ্বীনে ধরতে যাবে কেনো? আমি একদম পারফেক্ট। 
আমি আপনাকে বলতে চাইছি আপনার ভালো লাগছিলো না কেনো? বাড়ির জন্য মন খারাপ হচ্ছে? আপনার মায়ের কথা মনে পড়ছে?
-এইতো দেখছি সত্যি সত্যিই জ্বীনে ধরেছে।যে মানুষ বিয়ের পর থেকে একটা দিন দেখলাম না আমার ভালো লাগার কথা জিজ্ঞেস করতে আজ সেই কিনা একদম বাপের বাড়ি চলে গেলো?প্রিয়তা নিজের মাথায় হাত দিয়ে,আমার মাথাটা কেমন জানি ঘুরছে।
নিবিড় বিরক্তিকর গলায়,যান তো যান।আপনার সাথে কথা বলার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে।যে কাজে যাচ্ছিলেন যান।

প্রিয়তা চা বানাতে গিয়েও ভাবনার শেষ নেই।হঠাৎ কি এমন হলো ওনার? যাইহোক তবুও ওনি আমার কথা তো ভেবেছেন।কিন্তু আমার মা বিয়েটা দিয়ে যেনো বিপদ থেকে উদ্ধার হয়ে গেলো।বাবা যতই বলুক না কেনো আমার সাথে যোগাযোগ না করতে তাঁরা তো একবার করে দেখতে পারতো।আমি জানি বাবা কখনোই কিছু বলতো না।এবং কি মিস্টার নিবিড়ও না।প্রিয়তা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে চা নিয়ে উপরে উঠে আসতেই,কিরে মা চা কার জন্য?
-বাবা আপনার ছেলের জন্য।
-আমাকে কি এক কাপ দেওয়া যাবে? 
প্রিয়তা নিজের হাতের কাপ মোশারফ হোসেনকে দিতেই, বস এইখানে।
শেফালী আপা,তোমার ছোটো ভাইজানকে এককাপ চা দিয়ে আসো।
কথাটা বলেই প্রিয়তা বসে, বাবা কিছু বলবেন?
-কথাটা না বললেই ভালো হতো।তবে তবুও কেনো জানি বলতে ইচ্ছে করছে।তোমার একটা বোন আছে না কি জেনো নাম? একটা ছোটো বাচ্চা আছে।
-অনিলা।
-হু অনিলা,,ওর সাথে শপিংমলে দেখা হয়েছে।সালমা আর আমি গিয়েছিলাম মায়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে সেখানে তার সাথে দেখা।প্রথমে আমাকে দেখে সালাম করতেই আমি অবাক হলাম।পরে তোমার পরিচয় দিতেই চিনলাম।আসলে সেদিন কিছুক্ষণ দেখেছিলাম মনে নেই।

শেফালী নিবিড়ের দিকে চা দিতেই,তোমার ভাবী কোথায়?
-ভাইজান ভাবী খালু জানের সাথে কথা বলছে।
-চা এইখানে রেখে যাও।
চা দিয়ে শেফালী আসতেই,শেফালী আপা ওকে বলবে আমি ডাকছি।কথা শেষ করে যেনো তাড়াতাড়ি আসে।

-বাবা, মায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছেন?
-বললো,তোমার মা নাকি এখন তোমার বোন রিয়াকে নিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ইভাও এসে থাকে।
তোমার রিয়ার সাথে কথা হয় না কলেজে গেলে?
-নাহ্ কথাটা বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো প্রিয়তা।
শেফালী উপর থেকে এসে,ভাবী আপনারে ভাইজান ডাকে। 
-আসছি তুমি যাও। 

রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমাতে চলে গেলো।প্রিয়তা প্রতিদিনের মতোই এসে শুয়ে পড়লো। নিবিড় অফিসের কাজ করছে ল্যাপটপে। প্রিয়তা নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়লো টের পায়নি।
নিবিড় প্রিয়তার দিকে বার বার আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে প্রিয়তা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। নিবিড় মুচকি হেসে ল্যাপটপটা রেখে নিজের জায়গা শুয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়তার চুল গুলো মুখের সামনে এসে পড়ে আছে।নিবিড় প্রিয়তার দিকে একটু ঝুঁকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে আছে।ইচ্ছে করছে ঠোঁট গুলো একটুখানি স্পর্শ করতে।প্রিয়তাকে ভাবনাতে রেখেই নিবিড় ঘুমিয়ে পড়লো 

সকাল সকাল প্রিয়তা উঠে নিবিড়ের সব কিছু রেডি করে দিয়ে কলেজে চলে গেলো।নিবিড় ঘুম থেকে উঠছে না দেখে সালমা বেগম এসে নিবিড়কে ডেকে উঠিয়ে,কিরে নিবিড় আজ এতো বেলা অবধি ঘুমাচ্ছিস? শরীর খারাপ?

-কয়েটা বাজে মা?
সালমা বেগম জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে, ১১ টা।প্রিয়তা তোকে ডেকে যায়নি?
-নাহ্। 
ফোন নিয়ে তাকিয়ে দেখে মাহিদ আর রিসাদের অনেক গুলো মিসড কল।
নিবিড়ের মিটিংএর কথা মনে পড়তেই তড়িৎ ভাবে উঠে গিয়ে,রেডি হয়ে কিছু না খেয়েই অফিসে চলে গেলো।
নিবিড়কে দেখে রিসাদ এগিয়ে গিয়ে,স্যার আমি তো ভেবেছিলাম আপনি মিটিংএ আসতেই পারবেন না।থ্যাংক গড আপনি পাঁচ মিনিট আগে এসেছেন।সব ক্লাইড অনেক আগেই এসে গেছে।

নিবিড় সে ব্যাপারে কিছু না বলে, মাহিদ ফাইল গুলো নিয়ে মিটিং রুমে আসো।

একঘন্টা পর নিবিড় মিটিং শেষ করে বেরিয়ে আসতেই,রিসাদ এসে,কংগ্রাচুলেশনস স্যার। প্রজেক্টটা আমরাই পেয়েছি।
নিবিড় মুচকি হেসে,মিস্টার রিসাদ, নিবিড় বিজনেসে কখনো হারতে শিখেনি।মাহিদ আজ আমি আর অফিসে থাকছি না।কাজ ভালো করে বুজে নিয়েছো?
-জ্বি স্যার। 
- ওকে বাই।
নিবিড় গাড়িতে উঠেই ভাবলো প্রিয়তার সাথে দেখা করে ওকে নিয়েই বাসায় যাবে।মেয়েটার উপর সকালের রাগটা নিমিষেই চলে গেছে।আজ খুশির খবরটা প্রিয়তাকে আগে দিতে ইচ্ছে করছে। নিবিড় বিজনেসে হারে না ঠিক কিন্তু আজকের প্রজেক্ট হাতে আমিই পাবো সেটাও ভাবিনি।কারণ আমার থেকেও বড় বিজনেসম্যান সেখানে ছিলো।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই নিবিড় প্রিয়তার কলেজে এসে পৌঁছালো।
হাসি হাসি মুখ নিয়ে কলেজের করিডর দিয়ে হাঁটছে আর যাদের কে চিনে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছে। 

-দেখুন ইশাক ভাই আমি চাই না আপনার কোনো কিছুতে আমি নিজেকে জড়াতে। আমি নিজেই অনেক প্যারার মধ্যে আছি তারউপর আপনার এইসব ভুল বাল কথা আমার মোটেও ভালো লাগে না।

নিবিড় অফিসের দড়জায় এসে হাসি মুখটা হঠাৎই মলিন হয়ে গেলো।
ইশাক হঠাৎই প্রিয়তার হাত জড়িয়ে প্লিজ প্রিয়তা একবার ভেবে দেখো।আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমি এমন কিছু,,,,,,
প্রিয়তা কিছু বলতে যাবে তখনই দরজার দিকে চোখ পড়তেই,আ আ আপনি?

নিবিড়ের এই দৃশ্যটা যেনো চোখেই আটকে গেলো।
চোখ দুটো যেনো ভারী হয়ে আসছে।রাগন্বিত টকটকে লাল দুটো চোখ নিয়ে গম্ভীরমুখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে।কী করছে প্রিয়তা এইসব?তাঁর মানে কী আমি ভুল ছিলাম? নিবিড়ের ভুল কি এতোটাই হয়?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন