__প্রিয়তা এতোদিন ডাক্তার শফিকুল রহমানের অবজারভেশনে ছিলো।দুজন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ সিস্টার প্রিয়তার সাথেই দিয়েছিলো শফিকুল। এতোদিন নিবিড়ের রুমটা যেনো হসপিটালের আই সি ইউর রুম ছিলো।প্রিয়তার জ্ঞান ফিরার পর থেকেই সব আস্তে আস্তে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।মোশারফ হোসেন আর শফিকুল রহমান নিচে বসে কথা বলছেন।
আর নিবিড় এখনো বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয়তার দিকে।আর মনে মনে হাজারো প্রশ্নের মোকাবেলা করছে নিজের সাথেই নিজে।
প্রিয়তা কথা বলতে পারলে যখন পেটের বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন? যখন রিসাদকে মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখবে নিজের চোখের সামনে, তখন? কী ভাবে সামলাবো আমি তাকে? জ্ঞান আসার পর থেকে প্রিয়তা এখনো ভালো করে চোখ খোলেনি।চোখ খুলে যখন একটার পর একটা প্রশ্ন করবে আমি কি উত্তর দিবো?সালমা বেগম আর দাদী এসে পাশে দাঁডাতেই নিবিড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুজে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।যাওয়ার সময় রিসাদের সাথে চোখাচোখি হতেই নিবিড় কিছুক্ষণ গম্ভীরমুখে তাকিয়ে থেকে নিচে চলে গেলো।
শফিকুল রহমান আর মোশারফ হোসেন কফি আর হালকা নাশতা করছেন।নিবিড় শফিকুল রহমানের সামনাসামনি বসে,ও তো এখনো চোখ খোলেনি আংকেল?
শফিকুল মুচকি হেসে,সকালে মাত্র জ্ঞান ফিরলো।তুমি এখনোই এতো অধৈর্য হয়ে যাচ্ছো কেনো?
নিবিড় দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিয়ে,আপনি যদি আমার জাগায় থাকতেন তাহলে বুজতেন।
জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি শুধু এই একটাই মানুষ যাকে আমি হারাতে চাই না।
মোশারফ হোসেন ছেলের কথা শুনে মিটমিট করে হাসছে।তার মানে নিবিড় এতোদিন প্রিয়তার ব্যাপার নিয়ে সবার সাথে অভিনয় করেছিলো? নাকি এখন করছে ডাক্তারের সামনে?
কিন্তু এই চোখ মুখ তো মিথ্যা বলছে না।নিবিড় তো কারণ ছাড়া কথা বলেও না।
মোশারফ হোসেনকে অবাক করে দিয়ে নিবিড় ডাক্তারকে বললো,আমার ডাক্তার শামিনের সাথে কথা হয়েছে বাচ্চাটার ব্যাপারে।
-গ্রেট।সেদিন তো ও ছিলো।
-হ্যাঁ সেজন্যই উনাকে আসতে বলেছি প্রিয়তা সুস্থ হলে।উনি বলেছেন সন্ধ্যায় আসবেন।
-তাহলে খুব ভালোই হয়।আচ্ছা আজ তাহলে আমি আসি।আর হ্যাঁ ও কথা বললেই সাথে সাথে আমাকে কনফার্ম করবেন। কারণ মাঝে মাঝে এইসব রুগী জ্ঞান ফিরার পর মেমোরি লস কিংবা অন্য কোনো সাইড এফেক্ট করে।আপনারা আগে দেখবেন আপনার রুগী সবকিছু ঠিকঠাক বলে কিনা।নাকি উদ্ভট কথাবার্তা বলে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।এইরকম অস্বাভাবিক আচরণ দেখলেই আমায় সাথে সাথে কনফার্ম করবেন।
ডাক্তার কফি শেষ করেই উঠে নিবিড়ের সাথে হ্যান্ডশেক করে চলে গেলেন।
নিবিড় পায়চারী করছে প্রিয়তার ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায়। সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রিয়তা সেই আগের মতোই শুয়ে আছে।তবে মাঝে মাঝে হাত পা নাড়াচ্ছে।
নিবিড় এতেই অনেকটা স্বস্থির নিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে।আগে তো তাও ছিলো না।নিবিড় অপেক্ষা করতে করতে ডাক্তার শারমিন রুমে ঢুকলেন,সাথে জুহিও।
-মিস্টার নিবিড়! কেমন আছেন?
- আপনি ভালো করেই জানেন আমি কেমন থাকতে পারি।
শারমিন হাসলো, তারপর বললো,
-সকালে বললেন আপনার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরেছে,এখন তো মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে।
-হু,,কিন্তু এখনো কারো সাথে কথা বলেনি।
-ডাক্তার শফিক কি বলেছেন?
নিবিড় মুচকি হাসে শফিকুল রহমানের যাওয়ার আগে বলে যাওয়া সব কথাই বলে,নিজের বাবাকে নাম ধরে ডাকছেন উনি মাইন্ড করেন না?
শারমিন আবারও হাসলো।
-কাজের ক্ষেত্রে এমন হয়েই থাকে।আর সবচেয়ে বড় কথা উনি আমাকে মেয়ে বলে স্বীকার করতে একটু নারাজ।আচ্ছা বাদ দিন এসব কথা।
প্রিয়তা আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিবিড়কে দেখতে ফেলো,একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।
-তবে উনি ঠিক বলেছেন এসব রুগী জ্ঞান ফিরলে অস্বাভাবিক আচরণ করে।হয়তো কাছের মানুষদের চিনতেও অসুবিধে হয়।তার উপর উনার বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়েছে।সোজা ভাষায় বলতে গেলে ২৪ মাসের ভিতরে গর্ভ অবস্থায় ভ্রুণের মৃত্যুকেই মিসক্যারেজ বলে।আর এইটা যে কোনো স্বামী স্ত্রীর জন্য হৃদয় বিদারক। এখানে ডাক্তারদের শান্তনা দেওয়ার মতো কিছু থাকে না।আপনি অনেক স্ট্রং তাই হয়তো নিজেকে সামলিয়েছেন।কিন্তু উনি নিজেকে সামলাতে অনেকটা টাইম লেগে যাবে।আর সেই সময় স্ত্রী সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো তার স্বামীর সাপোর্ট। যেটা আপনাকে উনাকে দিয়ে যেতে হবে।এসব রুগীদের ঔষধের থেকে সাপোর্টটাই বেশি কাজে দেয়।কারণ এরা মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে।তখন যদি অপজিটের মানুষটাও খিটখিটে হয় তাহলে ওরা আরও মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।তবে মিস্টার নিবিড় এসব আমি আপনাকে বলার প্রয়োজন বোধ করি না।কারণ আমার চোখে দেখা আপনি শ্রেষ্ঠ স্বামী যে নিজের সবটুকু ভালোবাসা তার স্ত্রীকে উজাড় করে দিয়েছে।আপনার ব্যাপারে আমি অনেক কথায় শুনেছি পেপার কিংবা ম্যাগাজিনে।সব জাগায় আমি যেটা বেশি পেয়েছি সেটা হলো, আপনি রাগী এবং কঠোর প্রকৃতির লোক।
নিবিড় মুচকি হাসে,হয়তো তারা ভুল কিছু লেখিনি।
- আলবাত লিখেছে। আপনার স্ত্রীর প্রতি আপনার যে ভালোবাসা আমি দেখেছি সেখানে এসব ভুল।
নিবিড় কিছু বলতে গিয়েই প্রিয়তার দিকে নজর পড়লো।প্রিয়তা তার দিকে করুন ভাবে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে। নিবিড় এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার একটা হাত ধরেই, বুড়ী! এই বুড়ী, তোমার কখন ঘুম ভেঙ্গেছে? নিবিড় নিজের উপর নিজের খুব রাগ হচ্ছে।প্রিয়তা চোখ খুলে কখন তাকিয়েছে সে কেনো টের পেলো না? না জানি ওর কতটা কষ্ট হয়েছে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে।
জুহি আনন্দে উৎকন্ঠে সবাইকে ডাকতেই সবাই এসে খাটের চারপাশে ঘেরাও করে ফেলেছে।
প্রিয়তা সবাইকে ধীরে ধীরে দেখছে।রিসাদের দিকে তাকাতেই চোখ পড়তেই চোখ বন্ধ করে নিবিড়ের কাছ থেকে হাতটা আস্তে করে সরিয়ে নিলো।
দাদী এসে প্রিয়তার মাথার পাশে বসে,কেমন লাগতাছে পিউ?
প্রিয়তা কিছু না বলে চোখের পাশ দিয়ে পানির স্রোত বেয়ে নামছে।
সালমা বেগম নিজের একটা হাত প্রিয়তার হাতের উপর রেখে, তুই কাঁদছিস কেনো মা? তুই যে কতবড় ভাগ্যে নিয়ে জন্মেছিস তুই জানিস? যে স্বামী তার স্ত্রীর জন্য পৃথিবীটাকেই পাল্টিয়ে দিতে পারে তার মতো ভাগ্যবতী কয়জন আছে?
প্রিয়তা চোখ খুলে নিজে নিজে মাথা উঠিয়ে বসার চেষ্টা করতেই নিবিড় ধরে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো।কতদিন পর প্রিয়তা এইভাবে বসতে চেয়েছে।কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না।শরীরের দূর্বলতার কারণে আবার শুয়ে গেলো।
সালমা বেগম দৌড়ে প্রিয়তার জন্য স্যুপ রান্না করতে গেলেন।এইসময় নরম খাওয়ার দেওয়া উচিত। কতদিন মেয়েটা আমার রান্না খায়নি।আজ তো আর না করতে পারবে না।
নিবিড় প্রিয়তার হাত আবারও টেনে নিজের হাতের সাথে ধরতেই,প্রিয়তা ভয়ে ভয়ে আস্তে করে বললো, আপনি এমন করছেন কেনো? আর আমি এখানে কি করছি? আপনারা কারা?
কথাটা শুনেই নিবিড় বললো,হোয়াট? তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?
-আপনি আমার উপর অযথা রাগ দেখাচ্ছেন কেনো? আমি সত্যিই আপনাকে চিনি না।
-ও মাই গড! নিবিড় এইবার একটু কড়া গলায় বললো, প্রিয়তা ড্রামার একটা সীমা থাকা উচিত। আজ তুমি সেটাও অতিক্রম করছো।
ডাক্তার শারমিন নিবিড়কে শান্ত হতে বলে,আমি দেখছি মিস্টার নিবিড় আপনি উঠুন।
শারমিন প্রিয়তার সামনে বসে মুচকি হেসে,দাদীর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে, উনাকে চিনতে পারছো?
প্রিয়তা মাথা নাড়ালো,সে চিনতে পারছে না।
নিবিড়ের দিকে দেখিয়ে,উনাকেও না?
প্রিয়তা এবারও সেইম মাথা নাড়ালো।
শারমিন উঠে দাঁড়িয়ে, ডাক্তার শফিকুল যা বলে গিয়েছে উনার সেটাই হয়েছে।মিস্টার নিবিড় যাকে বলে মেমোরি লস।
নিবিড় বিশ্বাস করতেই পারছে না শারমিনের কথা।
একটু আগেও তো ওর তাকানো, চোখের পানি দেখে মোটেও তেমন মনে হয়নি।
নির্ঘাত ও নাটক করছে।বুড়ী তুমি যদি থাকো ডালে ডালে আমি পাতায় হলেও থাকি।
- ওকে মিসেস শারমিন।ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে।
-ইয়েস মিস্টার নিবিড়। ভাগ্যের লিখন কেউ খণ্ডাতে পারে না।তবে আজ থেকে আপনার নতুন করে আরেকটা যুদ্ধ শুরু হলো।
নিবিড় কিছু বললো না।প্রিয়তাকে বুজার চেষ্টা করছে।প্রিয়তা নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ থেকে।
শারমিন চলে গেলেন।যাওয়ার সময় কিছু মেডিসিন আর ভালো ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিলেন।
প্রিয়তার উদ্ভট কথাবার্তা যেনো আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে।একটা কথায় বেশিরভাগ রিপিট করছে সেটা হলো আমি বাড়ি যাবো।মায়ের কাছে যাবো।নিবিড় মাহিদকে দিয়ে নুর জাহান বেগমকেও নিয়ে আসলেন, কিন্তু প্রিয়তা নুর জাহান বেগমকে মা বলে স্বীকার করতেই রাজি না।উল্টো সবার সাথে খারাপ আচরণ করে যাচ্ছে।
নিবিড় নিচে এসে সোফায় বসে চিন্তায় মগ্ন হয়ে বসে রইলো।প্রিয়তা এইভাবে কতোদিন? এই মেয়ে নির্ঘাত ঝড়তুফানের সময় জন্ম নিয়েছিলো।না হলে সব সময় একটা না একটা ঝড় বাঁধিয়ে ছাড়বে।
নাদিয়া দৌড়ে এসে,ভাই তুই গিয়ে তোর বউকে সামলা,কারো কোনো কথা শুনছে না।শুধু পাগলামি করছে।তাও আবার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে।
নিবিড় তড়িঘড়ি করে উঠে নিজের রুমে গিয়ে দেখে মায়ের বানানো স্যুপ নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।
গম্ভীরমুখে প্রিয়তার দিকে তাকাতেই সালমা বেগম বললেন,তুই ওকে বকিস না।ও এখন স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।নিবিড় পকেট থেকে হাত বের করে একটু এগিয়ে নিচে থেকে বাটিটা উঠিয়ে ট্রেয়ের উপরে রেখে সালমা বেগমের হাতে ধরিয়ে, সবাই এখন এই রুম থেকে যাও।ওকে আমি দেখে নিচ্ছি।
কথাটা শুনে প্রিয়তা ভয় পেয়ে হাত পা গুটিয়ে খাটের এক কোনায় বসে আছে।
সবাই চলে যেতেই নিবিড় প্রিয়তার একদম কাছে এসে বসে টলমল চোখে তাকিয়ে, বুড়ী আমি তোমার উপর একটুও রাগ করবো না।খুব খুব ভালোবাসবো তোমায়।
প্রিয়তা কথাটা শুনে স্থির হয়ে বসলো,নিবিড় প্রিয়তার স্বাভাবিক ভাবে বসতে দেখে,বুড়ী আমি তো এইবার ঠিক বুজে নিয়েছি,তোমার নাটকটা খুব জমাতে চাইছ তাই না?
কথাটা মুখ ফুটে নিবিড় না বলে প্রিয়তার হাত টেনে নিতেই প্রিয়তা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,আপনি আমার হাত ধরছেন কেনো?
-কারন আমি তোমার হাজবেন্ড।তোমার সবকিছুর অধিকার শুধু আমার।
-আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুজতে পারছি না।আমাকে বাড়ি দিয়ে আসুন না।আপনারা কেনো সবাই আমাকে আটকিয়ে রাখছেন?
-সত্যি তুমি বাড়ি যাবে?
প্রিয়তা আবেগী গলায় বললো, হু!
-ঠিক আছে।তোমায় বাড়ি দিয়ে আসবো।কিন্তু তার আগে তো তোমায় খেতে হবে।সুস্থ হতে হবে তাই না?
প্রিয়তা মাথা নাড়তেই,শেফালীকে ডেকে আবার স্যুপ আনতে বলে প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে করুন চোখে।
-নাহ্ আমার বুড়ী নাটক করছে না।যদি নাটকই করত কোনো কিছুর বায়নাতে হলেও বাচ্চার ব্যাপারটা ঠিক জিজ্ঞেস করে নিতো।কিন্তু ও এতোটাই উন্মাদ যে নিজের বেবির কথাটাও মনে নেই।
নিবিড় দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই চোখের কোনে থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে নিচে পড়লো।
পরেরদিন বিকেল বেলা,প্রিয়তা এখন শারীরিক ভাবে অনেকটাই সুস্থ। কাল রাতে নিবিড় প্রিয়তাকে ঘুম পাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রিয়তা তাকে দেখেনি।
নিবিড় সন্ধ্যায় এসে দেখে প্রিয়তাকে জুহি নিচে নিয়ে এসে বসিয়েছে।জুহি প্রিয়তাকে আগের সব কথা বলছে আর প্রিয়তা খিলখিল করে হাসছে।তবে নিজে থেকে কিছু বলছে না।
নিবিড় চুপ করে উপরে উঠে যেতেই লক্ষ্য করলো রিসাদ উপরের করিডর থেকে প্রিয়তাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছে।
নিবিড় উঠে গিয়ে রিসাদের পিছনে দাঁড়িয়ে, কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না আর সেটার আরেকটা প্রমাণ তুমি।
রিসাদ চমকে পিছনে ফিরে, তুমি!
- হ্যাঁ আমি।তোমার সামনে দিয়েই উঠে এলাম।তুমি এতোটাই মগ্ন ছিলে যে আমাকেই খেয়াল করোনি।
বেশ ভালো লেগেছে আমার।তবে এই মনটা যদি অফিসে কাজে দিতে তাহলে নিবিড় ইসলামের মতো একজন হয়ে যেতে।কথাটা বলেই নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে নিজের রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।
তোয়ালেটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিচে নেমে আসতে আসতে, জুহি! তোর ভাবী সকাল থেকে খেয়েছে?
-না ভাইয়া, ভাবী তো কিছু খেতে চায় না।
জুহি উঠে গিয়ে নিবিড়ের পাশে দাঁড়িয়ে জানো ভাবী দুপুরে কী করেছে?
নিবিড় তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে, কি করেছে?
-রিসাদ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছে!
নিবিড় থমকে গিয়ে,হোয়াট?
- তবে আর বলছি কী? অবশ্য আপু এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনি।ভাবী যে নিজের ইচ্ছে থেকে করেনি আপু বোধহয় বুজেছে।
-হঠাৎ ওকে জড়িয়ে ধরার কারণ কী?
জুহি কিছু বলার আগেই প্রিয়তা দিকে খেয়াল করলো নিবিড়। প্রিয়তা এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে উপরে উঠে রিসাদের রুমের দিকে যাচ্ছে। জুহিকে নিবিড় থামিয়ে, সেইদিকেই তাকিয়ে রইলো।
প্রিয়তা রিসাদের কাছে গিয়ে নাদিয়াকে দেখিয়ে, তুমি ওই বাঝে মেয়েটার সাথে থাকছো কেনো? তুমি তো থাকবে আমার সাথে!
রিসাদ একবার নাদিয়ার দিকে আর একবার প্রিয়তার দিকে তাকাচ্ছে।নাদিয়া চোখ বন্ধ করে আশ্বাস দিলো যাওয়ার জন্য।
নিবিড় এইবার নিজেই উপরে উঠে এলো।কিছু বলতে যাবে তখনি নাদিয়া থামিয়ে,ভাই ওকে কিছু বলিস না।মেয়েটাকে দেখছিস না, কিছুই মনে নেই হয়তো ওর।তুই চিন্তা করছিস কেনো ও যখন রিসাদকে আপনই ভাবে ভাবুক না।তবুও সুস্থ থাকুক।রিসাদ তো আর ওকে খেয়ে ফেলছে না তাই না? রিসাদ তুমি ওকে ওর রুমে দিয়ে আসো।আর দেখো কিছু খাওয়াতে পারো কিনা?
রিসাদ না চাইতেই যেনো চাঁদ হাতে পেয়ে গেছে।চোখেমুখে আনন্দের ঝলক।
নিবিড় প্রচন্ড রাগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে দেয়ালে সজোরে একটা ঘুসি দিলো।ঘুসি দেওয়ার পর খেয়াল করলো দেয়ালের আঘাতে নিবিড়ের আঙ্গুলের পিঠে সামান্য থেঁতলিয়ে গেছে।