ভোর সাড়ে চারটায় বিভানের নম্বরে কল আসে থানার সেই ইন্সপেক্টরের নম্বর থেকে।বিভান উঠেছিলো অযু করবার জন্য।ফোনের শব্দ শুনে অযু করে বেরিয়ে আসে।তারপর ভিজা হাত মুছে ফোন হাতে নিয়ে চমকে উঠে বিভান।থানার থেকে কল এসেছে দেখে উত্তেজনায় বুক ধড়ফড় করতে শুরু করে।এদিকে বেলা ও ঘুমে আচ্ছন্ন।ওকে ডাকতে হবে।বিভান ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে আসে।পরে এসে বেলা কে ডাকা যাবে।বারান্দায় এসে দাঁড়ায় বিভান।এখনো কোন কোন মসজিদ থেকে মধুর আওয়াজ তুলে ফজরের আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।বিভানের ভীষন ভয় লাগছে।ওর মেয়েটা ঠিক আছে তো?অপরপাশ থেকে ইন্সপেক্টরের কথা শুনতে পায় বিভান।ওনি বলছিলেন,
''আপনি এক্ষুনি থানায় আসুন।"
''জি আমার মেয়ে কই?"
''আমরা ষাটটা বাচ্চা পেয়েছি।ঐখানকার একটা মেয়ে বাবুর সাথে আপনার মেয়ের মিল পেয়েছি।খুব কাঁদছিলো।কথা বলাতে পারিনি আমরা।ঐখানকার সবার চেয়ে ছোট ও।আপনি জলদি এসে নিয়ে যান।"
''জি আমি নামাজ পড়েই আসছি।ওর খেয়াল রাখেন।"
''জি অবশ্যই।"
কল কেঁটে ফোনটা সামনে আনে বিভান।উত্তেজনায় বুক কাঁপছে।ওর বাচ্চাটা কাঁদছে।বিভানের বলতে ইচ্ছে হচ্ছে মা কাঁদেনা বাবা চলে আসছি।বিভান দ্রুত পদে রুমে এসে বেলাকে ধীরে ডাকতে শুরু করে।বেলা দূর্বল চোখজোড়া খুলে বিভানের দিকে তাকায়।চোখের কোনে পানি পানি জমে আছে বেলার।বিভান চোখ মুছে বলল,
''বেলা রানী উঠো নামাজ পড়বো একসাথে।"
বিভানের মুখে স্নিগ্ধ হাসি।বেলার চোখজোড়ায় অশ্রু ভারি হয়ে এলো।ও কম্পিত কন্ঠে বলল,
''বিভান কয়টা বাজে?"
''চারটা পয়তাল্লিশ।উঠো তুমি।"
বেলা উঠে চোখ মুছে নেয়।তারপর বাথরুমে চলে যায় অজু করতে।বিভানের তর সইছেনা।মেয়েকে কোলে নিয়ে বুকে জাপটে ধরলে শান্তি লাগবে।বেলা বেরিয়ে এসে দুজনের জায়নামাজ বিছিয়ে নেয়।দুজনে নামাজ পড়ে উঠতেই বিভান পাঞ্জাবি গায়ে ফোন পকেটে নিয়ে বেলাকে বলল,
''ঘুমিও না এখন আমি আসছি।"
বেলা চমকে উঠে।এসময়ে কই যাচ্ছে সে?বেলা বিভানের হাত জড়িয়ে বলল,
''কই যান?"
''বেলা আমাদের ঘরের আলো আবার ফিরে এসেছে।দোয়া করতে থাকো।যেন সহিসালামতে ফিরে আসতে পারি।"
বেলা কেঁদে ফেলে।বলতে শুরু করলো,
''পূর্নাকে পেয়েছে?"
বিভান মুচকি হেসে বলল,
''পেয়ে গেছে।ও থানায় আছে এখন।আমি যাচ্ছি।"
বেলা কিছু বললনা আর।বিভান চলে গেলো।বেলা নামাজের জায়গায় বসে মোনাজাত ধরলো।চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু গড়াতে শুরু করে।বিভান গাড়িতে বসে থানার জন্য যেতে শুরু করে।বেলা চেহারায় আজ আবার ও পূর্নতার অশ্রু ছিলো।বিভানের চোখের কোনা ও ভোরে এসেছিলো।হাতের পিঠ দিয়ে সেটা মুছে নেয়।বেলার কান্না ভরা মুখটা আজ খুব ভালো লাগছিলো। আজ ওর বেলারানী অনেক খুশি।বিভান ভাবছে ওকে দেখে পূর্না কতোটা খুশি হবে?বিভানের কেমন লাগছে সেটা বুঝানো যাবেনা।থানায় এসে পৌছে যায় পনের মিনিটের মধ্যেই।গাড়ি থেকে বেরিয়ে থানায় ঢুকতে দেখলো আলাদা একটা অনেক গুলো বাচ্চার আওয়াজ।বিভান সেদিকে না গিয়ে ইন্সপেক্টরের রুমে প্রবেশ করলো।ওনার সামনের চেয়ারে পূর্নার মতো একটা বাবু বসে আছে।ইন্সপেক্টর বিভানকে দেখে কিছু বলতে গেলে বিভান ইশারা করে কিছু যেন না বলে।পূর্না সম্ভবত কোন চকলেট খাওয়ায় ব্যাস্ত।পা নাড়ছে।বিভান আস্তে করে গিয়ে পূর্নার পিছন থেকে ওকে কোলে তুলে নেয়।পূর্না চমকে উঠে।বিভান মেয়েকে কোলে নিয়ে সামনে না ফিরিয়ে বলল,
''আমার আম্মাটা কি করে? "
পূর্না কেঁপে উঠে পিছনে তাকিয়ে কিছু বলতে পারেনা।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বিভানের গলা জড়িয়ে ওর কাঁধে মাথা রাখে।বিভানের গলা ধরে আসে।মেয়েকে বুকে জাপটে ধরে নিজেও কেঁদে দেয়।পূর্না কাঁদতে কাঁদতপ ছোট্ট গলায় কি যেন বলছিল।বিভান বলল,
''আম্মু বাবা আসছি তো।কাঁদেনা মা।"
পূর্না কাঁদতে থাকে।
বিভান আবার বলল,
''এই যে আম্মু আমরা বাসায় যাবো এখন।কাঁদেনা আব্বা।"
ইন্সপেক্টরের সামনে বসে বিভান।পূর্না এখনো বিভানের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে।ইন্সপেক্টরের চোখজোড়াও ভরে এসেছিলো।চশমার ফাঁক দিয়ে চোখমুছে বলল,
''বাপ কা বেটি।"
বিভান মৃদু হাসলো।তারপর বলল,
''সব বাচ্চাদের পেয়েছেন?"
''হ্যা তবে ওরা হাত থেকে বেরিয়ে গেছে।এখন রাজস্থান যাচ্ছে।রাজস্থানের থানায় জানিয়ে দিয়েছি আমরা।ওদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেবেনা ধরে ফেলবে।আমার ছয়জন সঙ্গী আহত তিনজন মারা গেছেন।"
বিভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
''আসলেই খারাপ লাগলো।ওদের প্যারেন্টসরা কই?"
''ওনাদের কল দেয়া হয়েছে।তবে কয়েটা বাচ্চা অন্যান্য জায়গা থেকে এসেছে।ওদের আমরা পৌছে দেবো।আপনার মেয়েটাই সবার ছোট ছিলো।"
বিভান মেয়েকে আরেকটু শক্ত করে বুকে চেঁপে বলল,
''আসি তাহলে।"
''সাবধানে থাকবেন মিঃ বিভান।মেয়েটা কওন্তু ভীষন মিষ্টি।"
বিভান মৃদু হেসে বেরিয়ে আসে।গাড়ির সিটে মেয়েকে বসিয়ে পাশের ড্রাইভিংসিটে বসে পড়ে বিভান।পূর্না দুহাতে মুখ ডলে কাঁদছে।বিভান বসে মেয়েকে কোলে নিয়ে অনেক গুলো চুমু দিয়ে বলল,
''আম্মু বাবা চলে এসেছিতো।এতো কাঁদতে হয়না মা।"
পূর্না কাঁদতে কাঁদতে বলল,
''ওলা বালো না।কুব মেলেতে।আমাল অনেক কত্ত হয়েতে।আমাকে কিত্তু কেতে দেয়নি।দানো লুমটা অনেক অন্দকাল তিলো।আমাল বয় পেয়েতিলো।"
বিভান মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বলল,
''বাসায় যাচ্ছি আমরা।সব ঠিক হয়ে যাবে মা।তোমার মা তোমার অপেক্ষা করছে।"
পূর্না কাঁদো কন্ঠে বলতে লাগলো সিতে বসবো না।তোমাল কোলে গুমাবো।"
বভান হেসে মেয়েকে কোলে বসিয়ে বুকের দিকে মুখ করিয়ে।পূর্না বাবার বুকের সাথে লেগে বসে থাকে।
................................সেদিন রাত বারোটায় সিরাজগঞ্জে ইমতিয়াজের নানার বাড়ি পৌছে যায় নিশাদরা।নিশাদ ইমতিয়াজকে বলল,
''দেখ জাস্ট আজকের রাতটা। আমি কিন্তু এখানে থাকবোনা।আলাদা কোথাও থাকার জায়গা করে দিতে পারিস কিনা দেখ।"
ইমতিয়াজ জবাবে হেসে বলল,
''আচ্ছা ঠিক আছে।এখন ভিতরে আয় সবাই হয়ত এখনো জেগে আছে।"
নিশাদ হেঁটে হেঁটে ইমতিয়াজের সাথে ভিতরে প্রবেশ করে।ওর অন্যান্য বন্ধুরা পাশেই ভূবনের ফুপুর বাড়িতে থেকে গেছে।ওখানে শোবার জায়গা কম।তাই নিশাদ থাকতে পারেনি সেখানে।
ইমতিয়াজ কলিংবেল বাজাতেই একজন বয়স্কমহিলা এসে দরজা খুলে দেয়।ইমতিয়াজ ওনার পা ধরে সালাম করে ওনাকে জড়িয়ে বলল,
''নানু কেমন আছেন?"
বুড়ি ইমতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে বলল,
''খুব ভালা।তোর কি খবর ইমতু?"
''হ্যা নানু ভালো।"
ততক্ষনে মামা মামী আর কাজিনরা অনেকেই জড়ো হয়ে গেছে।নানু ইমতিয়াজ কে জিজ্ঞেস করেন,
''এডা কে? বন্ধুনি তোর?"
''হ্যা নানু ও নিশাদ।"
তারপর নিশাদের দিকে চেয়ে ইমতিয়াজ বলল,
''নিশাদ আমার নানু হাজেরা খাতুন।"
নিশাদ ওনাকে সালাম দিয়ে বলল,
''ভালো আছেন নানু?"
ওনি নিশাদকে ছুঁয়ে বলল,
''ভালো আছি।তোমার কি খবর মনা?"
''এইতো নানু আলহামদুলিল্লাহ। "
ইমতিয়াজ নিশাদকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।মামা মামীদের সাথে পরিচিত হতে থাকে নিশাদ।তবে ওর চোখ জোড়া কাকে যেন খুঁজতে থাকে।
নিশাদ কে দেখে পাঁচ ছয়টা মেয়ে হাসতে থাকে।তারমধ্যে আরেকটা মেয়ে নিশাদকে দেখে যেন একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলো।বারবার চুল ঠিক করে মিটিমিটি হেসে কি যেন বুঝাতে চাচ্ছিলো।ওরা সবাই বেশ সুন্দরী।ইমতিয়াজ নিশাদকে কানে কানে বলেছিলো দেখ কোন বোনকে ভালো লাগে কিনা? তাহলে একেবারে বিয়ে করিয়ে ঢাকা যাবো।জবাবে নিশাদ গরম চোখে তাকাতেই ইমতিয়াজ হেসে বলল,
''আরে তোর যোগ্য আমার অনেক কাজিন আছে।জাস্ট মজা করে বললাম।"
নিশাদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সামনে তাকায়।ওদের সোফায় বসতে দেয়া হয়েছে।ওদের সামনে বড় মামা আর মেজ মামা এসে বসেছেন।দুভাই ঘুম থেকে উঠে এসেছেন তা ওনাদের চেহারায় ফুঁটে উঠে।বড় মামা বলতে লাগলেন,
''তো কোন কষ্ট হয়নি তো ইমতিয়াজ? "
ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে বলল,
''না মামা। আমার বন্ধু ভূবনের গাড়িতে আসছি।"
''ওহ।তো নিশাদ কি করতেছো?"
নিশাদ ম্লান হেসে বলল,
''আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছি।"
মাঝ থেকে মেজ মামা বললেন,
''বিয়ে শাদি করেছো কিছু?ইমতিয়াজকে কবে থেকে বলছি বিয়ে কর বিয়ে কর।কানেই নেয়না।তুমি তো বুঝাতে পারো তোমার বন্ধুকে।"
ইমতিয়াজ হো হো করে হেসে উঠে মামার কথায়।বলতে লাগলো,
''মামা আঙ্কেল আন্টিকে ওকে নিয়ে সেম সমস্যায়।আঙ্কেল কাল আমাকে কল দিয়ে বলল ওকে বিয়ে করায় নিতে এখান থেকে।"
কথা গুলো বলে নিশাদের দিকে তাকায় ইমতিয়াজ।নিশাদ ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।"
ইমতিয়াজ বড় মামার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল,
''ইদ্রির কি খবর মামা?"
মামা বললেন,
''তোদের বাসার থেকে একটু ভালো। ইভাদের সাথে মার্কেটে ছিলো সারাক্ষন,যাবেইনা।পরে তোর মা জোর করে পাঠালো।"
নিশাদ এতক্ষন ওনাদের কথা শুনছিলো।ওর মনটা কেমন যেন করে উঠে।মামীরা এসে ওদের খেতে বসতে বলল।নিশাদ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছিলো তখন ওর চোখে পড়ে একটা রুমের দিকে।ইদ্রি খাটে বসে কিছু মেয়ের সাথে হেসে গল্প করছে।নিশাদ আরেকটু মন দিয়ে দেখতে নিচ্ছিলো তখন ইমতিয়াজ সামনে থেকে বলল,
''কিরে চল নিচে।"
নিশাদ জলদি সরে আসে সেখান থেকে।সেদিনের মতো ওরা খেয়ে দেয় ঘুমিয়ে যায়।ইমতিয়াজের সাথে নিশাদ ঘুমোতে চলে যায়।ওদের ঠিক সামনের রুমটায় ইদ্রি আছে।
নিশাদের চোখে একফোঁটা ঘুম ও ভর করতে পারেনি সারারাত।প্রচন্ড অস্থিরতায় কেঁটে গেছে সারাটারাত।
..............................খাটে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আদনান। পাশে বসে লাবনী আর কুঞ্জন গনিত করছে।আদনান আধো চোখ খুলে দুজনকে দেখে নেয়।তারপর গম্ভীর আওয়াজে বলল,
''কিরে শেষ হয়নি?"
লাবনী বলল,
''ভাইয়া আর দুটো বাকি।"
''আচ্ছা জলদি কর।"
কুঞ্জন বলে উঠে,
''ভাই আমার হয়ে গেছে।"
আদনান উঠে বসে কুঞ্জনের খাতা নিয়ে বলল,
''কাউয়ার ঠ্যাঙ্গের মতো লেখা আর ভালো হইলো না তাইনা?"
লাবনী হেসে ফেলল মৃদু শব্দ করে।কুঞ্জন চোখের কোনা দিয়ে রেগে তাকায় ওর দিকে।দুজনের খাতা চেক করে আদনান বলল,
''যা তোরা।অনেক রাত হলো ঘুমা গিয়ে।লাবু ভাইয়ার জন্য লেবু চা পাঠাস।"
লাবনী যেতে যেতে বলল,
''জি ভাইয়া।"
আদনান আবার শোয়।ওর মুখে মৃদু হাসি।আজ বিকেলের কথা মনে পড়তেই ভীষন লজ্জায় আর অন্যরকম আনন্দে বুকটা ভরে আসে।আজ যখন ও নিজের কেবিনে ছিলো।লাঞ্চটাইমে বেরিয়ে দেখে প্রিয়াশা একা বসে কাজ করছে।আদনান কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
''লাঞ্চ করবেননা?"
আদনানের কথায় প্রিয়াশা কিছুটা চমকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।তারপর বলল,
''স্যার আমার খিদে নেই।"
''ওহ।তো আপনাদের কাল দশমী না?ছুটি পাননাই? "
হঠাৎ প্রিয়াশার মুখ কালো হয়ে আসে।ও কিছুটা থমধরা গলায় বলল,
''না স্যার ছুটি নেইনি।"
''মানে কি আপনাদের পুজা আছে।"
''স্যার বাসায় গিয়ে বাকিটা করি।"
''আপনার ধর্মের সবাই ছুটি পেয়েছে।"
প্রিয়াশা কিছু বললনা।আদনান কিছুক্ষন কি যেন চিন্তা করে বলল,
''চলুন।"
প্রিয়াশা অবাক হয়ে তাকায় আদনানের দিকে।বলল,
''কই স্যার?"
''লাঞ্চ করবো বাহিরে আর খানিকটা গল্প ও করা যাবে।"
''স্যার কাজ বাকি আছে।"
লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল প্রিয়াশা।আদনান মৃদু হেসে বলল,
''মাঝে মাঝে বিনোদনের ও প্রয়োজন পড়ে।"
প্রিয়াশার মনে বিস্ময়ের শেষ নেই।তবে ও ভীষন ক্ষুধার্ত।তাছাড়া টাকাও নেই।তাই ইতস্তত করছিলো।কিন্তু শেষমেষ আদনান ওকে জোর করে নিয়ে যায়।রিক্সায় উঠছে ওরা।সিটটা অতো বড় নয়।যার কারনে আদনানের হাতের সাথে প্রিয়াশার হাত না চাইতে ও বাড়ি খাচ্ছিলো।প্রিয়াশা লজ্জায় পড়ে যায়।আদনান একটু হাসলে ও প্রিয়াশাকে বলল,
''আপনার কষ্ট হচ্ছে না তো?"
''আরে নাহ কি যে বলেন।"
''তা দশমীতে তো বিসর্জন দিবে তোমাদের মাকে।"
''জি।"
''ওহ।"
প্রিয়াশা হেসে বলল,
''আমার না বেশ মজা লাগে।যখন ওনাকে পানিতে ফেলে দেয়া হয় পানি গুলো ছিটিয়ে এসে গায়ে লাগে। তখন ভালো লাগে।"
আদনান হেসে প্রিয়াশার পিছনে হাত রাখে কারন ভীষন বাজে রাস্তা।রিক্সা ঝাকাচ্ছে খুব।"
প্রিয়াশার পিঠে আদনানের হাতের ছোঁয়া লাগতেই পাশে আদনানের দিকে তাকায়।লোকটার চোখজোড়া বড় সুন্দর।চোখজোড়ার প্রেমে পড়ে গেলো ও তবে এই প্রেম কি কেউ মানবে?আর সে কি ওকে ভালবাসবে?ওদের ধর্ম আলাদা।ওদের সমাজ আলাদা যা কখনো আদনানকে দেবেনা ওকে ভালবাসতে।আর ওনিই বা কেন ওকে ভালবাসবে?ওনি সুন্দর ভালো জব করেন।অনেক ভালো মেয়ে আসবে তবে প্রিয়াশার বুক বন্ধ হয়ে আসতে চায় এসব ভেবে।
!!!!
ঘুমন্ত মেয়ের মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলো বেলা।আজ যেন আবার ও পরিপূর্ন ও।মেয়েটাকে হারিয়ে যেন মনে হচ্ছিলো ও কিভাবে থাকবে?মেয়েটাকে ভীষন ভালবেসে ফেলেছে।চোখের আড়াল হলেই বুকটা কেমন করে উঠে বেলার।যেন ওর সর্বশক্তি পূর্নাতেই।বেলার মনে পড়ে যায় মায়ের কথা।বেলা একবার মায়ের কোলে মাথা রেখে রেডিও তে আইয়ুব বাচ্চুর মা কতোদিন দেখিনা তোমায় গানটা শুনছিলো।একপর্যায়ে চোখ ভরে এসেছিলো ওর।জুলেখা বানু ওর কান্না দেখে বলছিলো,
''এহনই কানতাছোস?সত্যিই কারের মইরা গেলে কি করবি?"
বেলা উঠে মাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলো,
''আম্মা এসব কইয়োনা তো।ভয় লাগে।তোমার কছু হইবো ভাবতেই পারিনা।"
জুলেখা বানু মেয়ের মাথার পিছে হাত দিয়ে বলেন,
''যাইতে তো অইবোই তাইনা।আইছি যখন যামুই উপরওয়ালার ডাক পড়লে।মানুষ তো আইয়েই দুইদিনের লাইগ্যা আল্লাহর এবাদত করনের লাইগ্যা।আমরা তো ফোলাফাইন মানুষ কইরতে কইরতেই সময় কাঁটাই ফালছি।আল্লাহরে কি জবাব দেমু।"
কথা গুলো বলে কিছুক্ষন থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললেন,
''আল্লাহ মাফ কইরা দিও।"
বেলা অভিমানী কন্ঠে বলল,
''আম্মা যখন যাওয়ার সময় আইবো যাইবা।কিন্তু এগুলা কইওনা।"
জুলেখা বানু মেয়েকে জড়িয়ে বললেন,
''মারে মা এমনই অয়রে।মায় অইলো মাইয়াগোর একটা শক্তি।মায় তাকলে মাইয়ারা শক্তি লইয়া সব করতে পারে।তুই যহন মা অইবিনা আমার কথা মনে পড়বো তোর।দেইখবি আম্মার কথাই ঠিক।"
বেলার চোখের কোনে আবার ও পানি জমে আসে।চোখের কোনা মুছে একটু শুয়ে মেয়ের গালে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
''মা আমি তোকে খুব ভালবাসি।তুই তো আমার জান সোনা।তোকে ছাড়া কি করতাম ভাবতেই ভয় লাগে।তোকে নিয়ে বাহিরে যেতে ও ভয় লাগে এখন।মেয়েকে দেখে মনটা আবার ও ভালো হয়ে যায়।মেয়েটার সাথে এখনো ওর কথা হয়নি।আসার সময় যে ঘুমিয়েছে আর জাগেনি।যেন কতোদিনের ঘুম।বেলা অপেক্ষা করছে মেয়ের ঘুম ভাঙ্গার।গায়ে কোন জামা কাপড় রাখেনি ও।পিঠে মারের দাগ ফুলে ফুলে আছে।জায়গায় জায়গায় লাল হয়ে গেছে।বেলা সেগুলোয় মলম লাগিয়ে দিয়েছিলো।ওর শরীর শিউরে উঠে বারবার এগুলো দেখলে।বিভান মেয়েকে দিয়ে ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে অফিসে গেলো।মেয়ের পাশে শুয়ে বেলা ফোন হাতে নেয়।বোরিং সময় যাচ্ছে।মেয়েটা উঠলে মন্দ হতো না।গল্প করতে পারতো।বিভানকে অনলাইন দেখা যাচ্ছে।বেলা দুষ্টু হেসে মেসেজ দিলো,
''কাজ ছেড়ে অনলাইনে কি?কারোর সাথে চ্যাটিং করছেন বুঝি?সাথে অবাক ইমোজি।
মেসেজ করতেই সিন।বিভান টাইপ করছে।বেলা ফোনটা রেখে মেয়েকে বুকে তুলে নিয়ে আবার ও ফোন হাতে নেয়।মেয়ে হাত পা ছড়িয়ে বেলার বুকে ঘুমাচ্ছে।বিভান লিখলো,
''করলে করবো আরকি।ঘরে বৌ আর বাহিরে........সাথে হাসির ইমোজি।"
বেলা রেগে কল দিলো বিভানকে।ধীরে ধীরে বলল,
''কি হলো?কি লিখলেন ওটা?"
বিভান ভ্যাবাচেঁকা খেয়ে বলল,
''কোথায় কি বললাম?আমি তো কাজ করছি।জানোই তো সব কাজ অনলাইনে হয়।"
বেলা এবারএকটু নরম হয়ে বলল,
''ওহ।"
''বিশ্বাস করতে পারছিলেনা বেলা রানী?"
বেলা নিজেকে শান্ত করে বলল,
''আরে নাহ।বিশ্বাস কেন করবোনা?আসলে আমি বুঝতে পারিনি হঠাৎ কি হয়ে গেলো।"
বিভান হেসে উঠলো শব্দ করে।লোকটার হাসির শব্দ বড় মধুর।আর সেই শব্দে বেলার বুকের অস্থিরতার বৃদ্ধি পায়।হাসি থামিয়ে বিভান বলল,
''আমি খুব তৃষ্ণার্ত বেলা। "
বেলা অবাক হয়ে বলল,
''পানি পান করুন।পানি ডেস্কে নেই?"
বিভান কিছুটা গম্ভীর গলায় বলল,
''পানি না।আমার অন্য কিছু চাই।"
খানিকটা ভ্রু কুঁচকালো বেলা।তৃষ্ণা লেগেছে তারমানে পানি লাগার কথা কিন্তু অন্য কিছু কি খাবে সে?বেলা জিজ্ঞেস করলো,
''তাহলে?"
''আমার তো তোমাকে চাই।সামনে থাকলে খেয়ে নিতাম তোমায়।তোমার শরীরের ঘ্রান গুলো নিশ্বাসে ভরে নুতাম বেলা।"
বেলার বুকটা কেমন করে উঠে।লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলল,
''কাজ ছেড়ে অসভ্যতা করা হচ্ছে?"
''তুমি জানো চৌদ্দ বছর পর ও তোমার এই লজ্জামাখা হাসি আমার ভীষন ভালো লাগে বেলা।তা মেয়ে কি করে?খেয়েছে কিছু?"
''সেই যে ঘুমালো উঠেনি।"
''উঠাওনি?"
''কতো ডাকলাম।নড়েচড়ে আবার ঘুম।"
''ওহ।উঠলে খাইয়ে দিও।আজ জলদি এসে যাবো।ভাল লাগছেনা।এসেই তোমাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যাবো।"
''এসব বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে কাজ করেন।"
বিভান আরো কিছু বলতে নিচ্ছিলো বেলা কল কেঁটে মেয়েতে মন দিলো।ঘুমের মাঝে হঠাৎ কেঁদে উঠেছে পূর্না।বেলার বুকে শুয়ে নড়তে চাইছে।বেলা মেয়েকে ধরে উঠে বসে ওকে বুকে চেঁপে বলল,
''কি হইছে মা?"
''মালে না মালে না।ব্যাতা পাই।"
বেলার কান্না চলে আসে।বাচ্চাটা এখন ও ঐগুলো ভাবছে।বেলা মেয়েকে একটু উঁচু করে ওর গালে চুমু দিয়ে বলল,
''এই যে আম্মু এই যে।মা তো বাবা।কি হইছে আম্মা?"
পূর্না এতক্ষনে চোখ খুলে মাকে দেখে আর সামলাতে পারেনি নিজেকে।বেলার গলা জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করে।বেলা ও কেঁদে ফেলে।পূর্না বলছিলো,
''মা দানো ওলা আমাতে কুব মেলেতে।আমাল পিতে পায়ে,বুকে।আমাল বুকে পালা দিয়ে দলেতে।একানে এতেতিলাম দে।ওলা আমাতে কেতে দেয়নি।আমাল তুল তেনে দলে তিতা পাতা কাওয়া দিতিলো।"
বেলা গুঁমড়ে কেঁদে উঠে।মানুষ এতোটা নির্দয় কি করে হয়?এতোটুকু বাবুর সাথে এমনটা করতে বুক কাঁপেনি ওদের?মেয়েকে আরো অনেকগুলো চুমু দিয়ে বেলা বলল,
''চলো মুখ ধোয়ায় দিয়ে তোমাকে খেতে দেই।"
পূর্না মায়ের গলা ছাড়তে চায়না।ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।বেলা ঐ অবস্থায় ওকে বাথরুমে নিয়ে যায়।
........................সকাল থেকে ইদ্রির মাঝে বেশ চাঞ্চল্যকর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।এখানে এসেছিলো ওর পাঁচ মাস বয়সের সময়।তারপর তো অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিলো।তারপর এবার এলো।ও আসার পর থেকে সবার কাছে নীরব হয়ে ধরা পড়েছিলো।তবে যখন ছোট মামীর কাছ থেকে নিশাদ আর ইমতিয়াজের কথা শুনেছে মেয়েটা কেমন যেন শুরু করলো।বারবার পাকঘরে যাচ্ছে।ওদের কি নাস্তা দেবে তা জিজ্ঞেস করে করে কাজের লোকগুলোকে পাগল করে দিয়েছে।তাদের ধোয়া কাপ গুলো আবার ও ধুয়েছে।সবার প্রায় নাস্তা করা শেষ।ইমতিয়াজ আর নিশাদ বাকি।ওরা বেশ টায়ার্ড তাই কেউ ডাকেনি।ইদ্রির সহ্য হচ্ছেনা। লোকটা কে একপলক দেখলে ও ওর যেন শান্তি।অনেকটা সময় ধরে অপেক্ষা করে আর পারলো না।নানির পাশে এসে বসে জড়িয়ে ধরে ওনাকে।নানি কাঁপন ধরা হাতে সোয়াটার বুনছে।এই বয়সে মাশাল্লাহ ভালোই পারেন।নাতনী কে দেখে আদুরে কন্ঠে বললেন,
''কি গো ইদ্রি।আইজ এতো ভালবাসা আমার জন্য?"
ইদ্রি কিছুটা অভিমান করে বলল,
''কেন নানু?তোমাকে কি ভালবাসিনা আমি?"
''বাসোস তো।এতোদিন তো এমন করস নাই।আইজ কি হইলো?"
''এমনি।আজ মন টা ভালো।"
''তয় মন ভালার কারন কি?"
ইদ্রি দাদির থেকে সরে এসে একটু হেসে বলল,
''জানিনা।"
নাতনীর এমন পাগলাটে আচার-আচরনে ওনি অবাক।ইদ্রিকে ঢাকা থেকে আসার পর থেকে কেউ না দেখলে ও ওনি ঠিকই দেখেছিলেন কতোটা মন মরা থাকতো ইদ্রি।সবার সাথে হাসলেও ঠিকই আড়াল পেয়ে চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রু মুছে নিতে ভুলে যেতো না।আর আজ ওনার সেই নাতনী খুব খুশি।আর কারন যেই হোকনা কেন ওনার ভালোই লাগছে।ইদ্রিকে কাছে টেনে ওর গালে পান মাখানো ঠোঁটজোড়া দিয়ে চুমু খেয়ে বললেন,
''তুই যেকারনেই খুশি থাক তোর এভাবে দেখতেই ভালো লাগে বুঝছোস নি?"
ইদ্রি মৃদু হেসে দাদির সোয়েটার বোনা দেখতে থাকে।বড় মামী পাকঘর থেকে বলতে বলতে বেরুচ্ছিলেন,
''ছেলে গুলো এখনও ওঠেনি। ওদের নাস্তা না দিয়ে রান্না ও বসাতে পারছিনা।"
তখন মৃদুল ভাইয়া বড় মামার ছেলে বললেন,
''মা ভাইয়ার বন্ধুকে উঠতে দেখেছিলাম অনেক আগে।ইমতিয়াজ ভাই উঠছেননা দেখে ওনি নামছেননা।হয়ত আনইজি ফিল করছেন।"
বড় মামী আবার ও বলতে লাগলেন,
''ওকে ডাকিসনি?"
''ডাকলাম।বলে ইমতিয়াজ উঠুক।"
মামী মাথা নেড়ে বললেন,
''ওকে নিয় আয়।ছেলে উঠলো আর এখনো খেলোনা।যা নিয়ে আয়। "
মৃদুল ভাইয়া ব্যাস্ততা দেখিয়ে বলতে লাগলেন,
''মা তুমি ইদ্রিকে পাঠিয়ে দাওনা।ওর ভাই তো ঘুমিয়ে।"
মামী রেগে বললেন,
''তুই গেলে সমস্যাটাকি হ্য?ইদ্রি মেয়ে মানুষ।সেখানে ইমতিয়াজের বন্ধুটাও আছে।"
''তো কি হলো মা?ওনি ও তো ওর ভাইয়ের মতো।"
বড় মামী এবার রেগে গিয়ে জোরে বললেন,
''তুই গেলে কি দুনিয়া উল্টে যাবে বদমাশ ছেলে।এতক্ষন ধরে তর্ক করছিস তোর দেরি হচ্ছেনা?যা বললাম।"
মৃদুল ভাইয়া কিছু না বলে চলে গেলেন ওদের ডাকতে।ইদ্রির কেন যেন মনে হতে থাকে নিশাদ এখন নামবে।তারপর ওদের চোখাচোখি হবে।ইদ্রির ইচ্ছে হবে লজ্জায় মরে যেতে।ইদ্রির তাকে দেখতে অনেক ইচ্ছে করছে কিন্তু তার সাথে চোখ মেলাতে গিয়ে ওকে ভীষন অস্বস্তিতে পড়তে হবে সেটা ঠিক।লোকটাকে দেখলে সেদিনকার কথা মনে পড়ে যাবে ওর।তখন কি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে ও?ইদ্রি শুনতে পেলো নিশাদের কন্ঠস্বর।ওরা এদিকে এগিয়ে আসছে। ইদ্রি উঠে সোফার পিছে লুকিয়ে গেলো।তারপর নিশাদকে দেখার চোষ্টা করতে থাকে।নিশাদ নীল রং এর টিশার্ট পরে আছে সাথে জিন্সপ্যান্ট।তাকে বেশ লাগছে নীল বর্নে।ইদ্রি খেয়াল করলো নিশাদ আশপাশ তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে।কিছুক্ষন খুঁজে না পেয়ে ইমতিয়াজ ভাইয়ার কথায় মন দিলো।বড় মামী ওদের নাস্তা দিয়ে বলতে লাগলেন,
''ইমতু অন্তত ওর জন্য আগেই উঠতি।ছেলেটা উঠে বসেছিলো।খায়নি কিছু।"
ইমতিয়াজ কিছু বলার আগে নিশাদ বলল,
''না আন্টি সমস্যা নেই।আমি অফিসের কাজ করছিলাম।"
''তারপরও বাবা তুমি প্রথম এলে। আর দেরি করে খাচ্ছো।"
''সমস্যা নেই আন্টি।সবাই খেয়েছে?"
''হ্যা বাবা।"
খাওয়ার শেষ করে নিশাদ আর ইমতিয়াজ ড্রয়িংরুমের দিকে আসতে দেখে ইদ্রি দৌড়ে পাকঘরে গেলো।নিশাদ অবাক নানুকে সোয়েটার বুনতে দেখে।অনেক বয়স হয়েছে ওনার।এই বয়সেও সোয়েটার বুনেন ওনি মাশাল্লাহ।ইমতিয়াজ নানুকে বলল,
''ইদ্রি কই নানু?কাল ও দেখলাম না আজ ও দেখিনি।"
নানু সোয়েটার বুনতে বুনতে বলছিলেন,
''এতক্ষন এখানেই ছিলো।একটু আগেই চলে গেলো দেখলাম।"
নিশাদ পাশে তাকিয়ে পাকঘরে ইদ্রিকে আবছা দেখতে পায়।ইদ্রি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মামীর পাশে।
...............................সাইমনের সকালটা শুরু হলো সাঁঝকে ভেবে ভেবে।রাতে যখন কাজ করছিলো অফিসের তখন মনে হচ্ছিলো পিছে কেউ দাঁড়িয়ে।সাইমনে পিছে তাকাতেই চমকে গেলো।সাঁঝ দাঁড়িয়ে ওর পিছনে সাদা শাড়ী পরে।হাতে একটা ট্রে ছিলো।সেখানে একটা মগে কফি রাখা।সাঁঝ ওর দিকে এগিয়ে এসে বলল,
''কফিটা নাও।ভালো লাগবে।"
সাইমন অবাক সাঁঝকে দেখে।আজ একদম ওর বৌ লাগছে মেয়েটাকে।দুহাতে সোনালী চুড়ি কানে কানের দুল।সাইমন কেমন যেন একটা ঘোরে চলে গেলো।কি দেখছে ও?সাঁঝ আলতো হাতে ওর চুল টেনে দিচ্ছে ঘাড় চেঁপে দিচ্ছে।সাইমনের অজানা শান্তি লাগছে।সাইমন হঠাৎ সাঁঝের হাত ছুঁইয়ে ওকে সামনে এনে বলল,
''তুমি সত্যি আসছো?"
সাঁঝ একটু হেসে বলল,
''আসবোনা কেন?বিয়ে হয়েছে আমাদের।এখন তো এখানেই থাকবো তোমার সাথে।"
সাইমন অনেকটা অবাক হয়।বিয়ে কখন হলো ওদের? ও উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
''বিয়ে হয়েছে?"
''হ্যা।কেন ভুলে গেলেন?"
বলেই সাঁঝ সাইমনের বুকে মুখ লুকায়।সাইমন বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে।হঠাৎ খেয়াল করলো মিতুলের ডাক।উঠে বসে সাইমন। কি সব কল্পনা করছিলো ও?তবে এতোটুকু বুঝতে পারছে সাঁঝকে ওর দরকার।শোয়া থেকে উঠে বসে ফোনের কল লগ চেক করে সাইমন।সাঁঝের কল আসেনি।আজ তো ওর পরীক্ষা। আসবেই বা কি করে?সাইমন উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।আজ ভাইয়ের বাসায় গিয়ে কথা বলে নিজের কাপড় চোপড় নিয়ে আসবে।আর ঐ মহিলাকে ও কথা শুনাবে ও।তবে মহিলাকে বলে লাভ কি যেখান নিজের ভাই ওর সাথে এমন করলো।
সাইমন নাস্তা সেড়ে নিয়ে বেরিয়ে যায়।আগে অফিস যাবে।সেখানে কাজ সেড়ে বনশ্রী গিয়ে কাপড়চোপড় আনা যাবে।তবে সাঁঝকে এ মুহূর্তে ওর ভীষন দেখতে মন চাইছে।কাল রাতের শাড়ীটায় ভীষন ভালো লাগছিলো।একেবারে ওর বৌ।সাইমন বাস্তবে সাঁঝ কে এই সাজে দেখতে চায়।ওকে বাহুডোরে বন্দী করে রাত্রি যাপন করতে চায়।তবে ওকে অপেক্ষা করতে হবে।শুনেছে ওর বড় ভাই বন্ধুর বিয়েতে গেলো সিরাজগঞ্জ।সেখান থেকে ফিরে এলেই না হয় দাদি কে নিয়ে যাবে।